অনুভূতিরা শীর্ষে 💗,পর্ব_১৪,১৫

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗,পর্ব_১৪,১৫
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব_১৪

আইসক্রিম দেখে আমার মাথা ঠিক নেই। সাদাদ ভাই এসে পাশে দাঁড়িয়ে এক ধ্যানে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আমিতো আইসক্রিমের দিকে তাকিয়ে আছি। আসলেই বেশিই ঠান্ডা পড়েছে যা খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারছি। কিন্তু আইসক্রিম তো খেতেই হবে। আমি সাদাদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,

–আপনি কোন ফ্লেবারের আইসক্রিম খাবেন?

সাদাদ ভাই দুইহাত ঘষে বললেন,

–এই ঠান্ডায় আইসক্রিম খেলে আমাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না, আইসক্রিম কন্যা!

আমি ভ্রু কুঁচকে হেসে দিলাম। হাতে আইসক্রিম নিয়ে বললাম,

–কথাটা বেশ বললেন! আইসক্রিম কন্যা! আমাকে বেশিরভাগ মানুষ আইসক্রিম পাগলী বলে কিন্তু আপনিতো ইউনিক কিছু বানিয়ে দিলেন!

সাদাদ ভাই আমার কথায় হেসে দিলো। ঠান্ডায় উনার গোলাপি ঠোঁট সাদা হতে শুরু করেছে। হায়! হায়! উনি আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললেন,

–আচ্ছা বুঝলাম না চকলেট আর বাটার স্কচ দুইটা দুই প্রান্তের ফ্লেবার! এই দুইটাকে মিক্স করে কিভাবে খাও?
আমি বেশ ভাব নিয়ে বললাম,

–আমি ইউনিক! হিহি!
উনিও হেসে দিলেন। বিড়বিড় করে বললেন,
–আসলেই তুমি ইউনিক! অসাধারণ!

উনার বলা অসাধারণ কথাটা শুনে আমার হঠাৎই তাহসান আর কনার ছিপ নৌকো গানটা মনে পড়ে গেলো। তাই আনমনেই আইসক্রিম খেতে খেতেই গাইতে শুরু করলাম,

“আমি অতি সাধারণ
অনিন্দ্য কিছু নই..
তোমার দেখার চোখটাই অবাক
তাই এমন মনে হয়..
অদ্ভুত এই ভুলগুলো
চোখের তারার ফুলগুলো..
উদাস হাওয়ায় উড়ে আনমনা..

তোমার ছিপ নৌকোয় যাবে
সেই ‘অন্য মেয়ে’
তুমিও আড়াল রেখোনা..
তোমার ছিপ নৌকোয় যাবে
সেই ‘অন্য মেয়ে’
লাজুক লিরিক আর কল্পনা..”

সাদাদ ভাইয়ের হাত তালিতে আমার হুশ ফিরলো। এতোক্ষন গানের তালে খেয়ালই ছিলো না! জিহবায় কামড় দিয়ে উনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি মিষ্টি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর অনবরত হাত তালি দিচ্ছে আস্তে আস্তে। আমি লাজুক হেসে বলতে নিলাম,

–আসলে….

উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,

–আমি জানি তোমার এতো ভালো একটা অভ্যাস আছে!

আমি অন্যদিকে তাকিয়ে হেসে দিলাম। আমি এক হাতে একটা কোন আর অন্য হাতে চকলেট আর বাটার স্কচ এর মিক্স আইসক্রিম নিয়ে আছি ফোনটা সাদাদ ভাইয়ের কাছেই রেখেছি। হঠাৎ একটা আননোন নাম্বারে কল এলো আমার ফোনে। সাদাদ ভাই আমাকে দেখালো। আমি দেখে বললাম,

–এই নাম্বার আমার চেনা নয়! আর এতো রাতে তো কারো আমাকে ফোন দেওয়ার কথা নয়!

সাদাদ ভাই একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

–কলটা আমি রিসিভ করতে পারি!

আমি কিছু না ভেবেই মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলে দিলাম। উনি কিছুক্ষণ নাম্বারের দিকে তাকিয়ে কলটা রিসিভ করে কানে ধরলেন। খেয়াল করলাম উনি কিছুই বলছেন না শুধু কানে ধরে রেখেছেন! আমি কিছু বলব তার আগেই আঙুল দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরলেন। আমিও চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। খেয়াল করলাম উনার চোখ আবার লাল হয়ে উঠছে। দাঁতে দাঁত চেপে ধরছেন বারবার। হঠাৎ ফোনটা কান থেকে নামিয়ে কেঁটে দিলেন আর পারলে ফোনটা আছাড় মেরে ভাঙে কিন্তু আমি চিৎকার করে বললাম,

–আমার ফোন!

উনি ফোনটা আমার হাতে ধরিয়ে হাত থেকে একটা আইসক্রিম নিয়ে খেতে শুরু করলেন। দুই মিনিটে আইসক্রিমটা খেয়ে শেষ করলেন। কিছুক্ষণ পর আমাকে শান্ত গলায় বললেন,

–এই নাম্বার থেকে আর কখনো ফোন এসেছিল?

আমি মাথা ডানে বামে ফিরিয়ে না বললাম। উনি আবার হাত দিয়ে ঠোঁটটা ঘষে কয়েকবার শ্বাস ছাড়লেন। আমি বেশ কৌতুহল নিয়ে বললাম,

–কে ফোন করেছিল?

উনি উনার আগুন ধরানো চোখ দুটো দিয়ে আমার দিকে তাকাতেই বেশ ভয় পেয়ে গেলাম। উনি উনার ফোন থেকে কাকে যেন ফোন করে বললেন,

–একটা নাম্বার পাঠিয়েছি! যে করে হোক কালকে আমার সামনে হাজির করবি! এট এনি কস্ট!

আমি এবার আসলেই বেশ ভয় পেলাম। কে ফোন করেছিল? আর এমন কি বলল যার জন্য উনি এতো রেগে গেছেন? এই তো বেশ ভালো ছিলেন। আমি আর কিছু বলার সাহস পেলাম না। হঠাৎ আমার মনে হলো আমি কিছু ভুলে গেছি! বেশ জোরেই বলে উঠলাম,

–আরে আমি তো ভুলেই গেছি!

সাদাদ ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

–কি ভুলে গেছো?

আমি বেশ করুনভাবে বললাম,

–আপনাদের গেস্ট রুমে আমার চকলেট বক্সটা রয়ে গেছে! কেউ যদি চকলেট গুলো নিয়ে যায়?

আমার কথা শুনে উনি কতক্ষণ কপাল চাপড়িয়ে বললেন,

–যেভাবে চিৎকার করলা ভেবেছি কি না কি হয়ে গেছে! আজব মেয়ে তুমি! আমি এখানে উনাকে নিয়ে টেনশনে মরে যাচ্ছি আর উনি চকলেট নিয়ে পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি বাসায় চলো! প্রচুর ঠান্ডা লাগছে আমার!

আমি দ্রুত মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলে উনার সাথে তাড়াতাড়ি চলছি! আসলে গাড়ি থেকে বেশ দূরে চলে এসেছিলাম এখন আবার গাড়ির কাছে যাচ্ছি। আসলেই ঠান্ডায় উনি রীতিমত কাঁপছে। আমি আমার চাদরটা উনাকে পড়িয়ে দিলাম! উনার যা অবস্থা দেখে আমার অনেক খারাপ লাগলো। তার উপর মেজাজ দেখিয়ে আইসক্রিম খেলো! আজব পাবলিক! উনি আমাকে কি মানা করবে! পারলে আমাকে ঝাঁপটে ধরে! উনার এতো ঠান্ডা লাগছে! আমার হাত ধরে রীতিমত দৌড়াতে শুরু করলেন! তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছ পৌছানোর জন্য। আমিও উনার সাথে সাথেই চলতে লাগলাম। গাড়িতে বসে উনি নিজেকে গরম করার জন্য হাতে হাত ঘষতে শুরু করলো। উনার নাক লাল হয়ে গেছে। উনি ড্রাইভ কিভাবে করবে ভেবেই মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর উনি নরমাল হলেন। কিন্তু নাক মুখ লাল হয়ে গেছে। আমি জানালার গ্লাসগুলো উঠিয়ে দিতে বললাম। উনিও তাই করলেন। আমাকে চাদরটা ফেরত দিতে চেয়েছিলেন আমি নিই নি।

–চাদরটা আমার থেকে বেশি আপনার প্রয়োজন! আমি বাসায় গিয়ে নিয়ে নিবো। এটাকে আপাতত মাথায় পেচিয়ে নিন! ঠান্ডা কম লাগবে!

বেশ কিছুক্ষন আমাদের মধ্যে নিরবতা ছিলো। নিরবতা ভেঙে আমিই বললাম,

–বাসায় গিয়ে সবার আগে গরম পানি খেয়ে নিবেন। রুমে তো হিটার আছে তাই না?

আমার বেশ চিন্তা হচ্ছে উনার জন্য! উনার ঠোঁট ফ্যাকাসে হয়ে আসছে! তার জন্য কথাও বলতে পারছেন না। আমি যা বলছি তার হ্যাঁ হু করে উত্তর দিচ্ছেন। কি যে হবে!
,
,
,
চলবে…………..❤️

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব_১৫

আমরা এক সাথেই বাসায় পৌছালাম। বাসায় গিয়ে দেখি সবাই ঘুম! এমনকি কাজের মানুষ কলিও ঘুমে। কিন্তু এদিকে সাদাদ এর কাঁপাকাঁপি এতো বেড়ে গিয়েছে যে আমার খুব খারাপ লাগছে সাদাদকে এভাবে ছেড়ে ঘুমোতে যেতে। সাদাদ নিজের রুমে গিয়ে হিটার ছেড়ে দিয়েছে। আমি মনের সাথে একপ্রকার যুদ্ধ করে রান্নাঘরে চলে গেলাম। যদিও আমাদের বাইরে ডিনার করে আসার কথা কিন্তু সাদাদের অবস্থার জন্য তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসতে হলো। আমি রান্নাঘরে গিয়ে দশ মিনিটের মতো চরকির মতো ঘুরলাম। সব দেখে নিয়ে নুডুলসের একটা প্যাকেট সাথেই স্যুপ পেয়েছি। কোন মতে স্যুপি নুডুলস রান্না করে আস্তে আস্তে সাদাদের রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম। দরজাটা বাম হাত দিয়ে একটু ঠেলতেই দেখি সাদাদ সাদা টাওয়ালটা জড়িয়ে খাটে বসে আছে। চুলগুলো ভিজা দেখে আমি রেগে গেলাম। মানে এটা কোন কথা! এমনিতে ঠান্ডা লাগিয়েছে! কে বলছিলো আইসক্রিম খেতে! তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকেই সাদাদকে ঝাড়ি দিয়ে বললাম,
–আপনি এই ঠান্ডায় কেন গোসল করেছেন? একে তো ঠান্ডায় কাঁপছিলেন আর বাসায় এসেই গোসল করে ফেললেন? নিজের কি একটু খেয়াল রাখা যায় না?

হাতে ট্রে সহই বাম হাত দিয়ে নিজের কপালে হালকা চাপড়ে অসহায় স্বরে বললাম,
–এর জন্য কিনা আমি এতো কষ্ট করে নুডুলস রান্না করেছি! হায় খোদা!

সাদাদকিছু বলার সুযোগ পাচ্ছে না। কিন্তু সাদাদ মুগ্ধ হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

সাদাদ মনে মনে তার সুবাহর এই চঞ্চল মুখটা দেখতে সে শত ঝাড়ি খেতে প্রস্তুত! সাদাদ একটা হাঁচি দিতেই আমার হুশ এলো। তাড়াতাড়ি নুডুলসের বাটিটা এগিয়ে দেই সাদাদ এর কাছে।
–তাড়াতাড়ি এটা খেয়ে নিন। আমি চুলায় চায়ের পানি বসিয়েছি। এটা খেতে খেতে আমি চট করে আদা চা নিয়ে আসবো দেখবেন আপনার আর ঠান্ডা লাগবে না।

সাদাদ মুচকি হাসি দিল। আমি এগিয়ে দরজার কাছে পৌছালাম তখনই সাদাদ বলে উঠলো,
–সুবাহ! তুমি সবসময় এমনই থেকো প্লিজ!

উনার কথা শুনে কেমন যেন একটা লাগলো। পরক্ষনে মনে পড়লো আমি বিখ্যাত সাদাদ ভাইয়ের সামনে এতো কিছু বলে দিলাম তাও বিনা বাধায়? ভয়ার্ত চোখে একবার পিছন ফিরে সাদাদ ভাইয়ের দিকে তাকাতেই দেখি সে এক চোখ টিপ দিয়ে হাসলো। আমি লজ্জাতে তাড়াতাড়ি পিছন ফিরে রান্নাঘরের দিকে দৌড় দিলাম।

.
আমার বেশ লজ্জা লাগছিল কিন্তু তাও হাতে আদা চা নিয়ে চললাম তার রুমের দিকে। গিয়ে দেখি বিছানা শুয়ে শুয়ে ফোন স্ক্রল করছে। আমাকে দেখে উঠে আসন করে বসলো। বারবার হাঁচি দিচ্ছে! আমার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে চুমুক দিয়ে ভ্রু উচিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি মনে মনে ভাবছি উনি আমার দিকে এচাবে কেন তাকালো? আমি তো আদা চা খুব ভালোই বানাই! মানে খাওয়ার যোগ্য হয় আরকি! তাহলে এভাবে তাকানোর মানে কি? আমি ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকিয়ে আছি! উনি আমার দিকে তাকিয়েই হেসে দিয়ে বললেন,

–উম্মম্মম্ম…..টেস্টি!

আমি লাজুক হাসলাম। উনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই বারবার কাপে চুমুক দিচ্ছেন। আমার এবার অনেকটা লজ্জা লাগলো। কোনমতে তুতলে বললাম,

–আমি আসছি! আপনি ঘুমিয়ে পড়েন প্লিজ!

বলে পিছনে ঘুরতেই উনি আমাকে ডাক দিলেন।

–তুমি কিছু খেয়েছো? আর প্লিজ তুমিও এক কাপ চা খেয়ে নাও! নয়তো প্রচুর ঠান্ডা লেগে যাবে।

আমি পিছনে ফিরে বললাম,

–এখন কিছু খাবো না, আমার পেট ভরাই আছে। আর চা খেয়ে নিব! আপনি রেস্ট করুন।

বলেই আমি আমার রুমে চলে এলাম।

.
সকাল সকাল উঠেই দেখি বাসায় সবার হইচই চলছে। মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিলো যে আজ আপুর বউভাত! তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এখন আমার প্রথম কাজ আপুকে খোঁজা। বেরিয়ে খুঁজতে খুঁজতে আপুর রুমের সামনে এসে দেখি ঘর তো নয় যেন গোঁয়াল ঘর! হাহা! দুই জন কাজের লোক এসে রুমটা পরিষ্কার করছে! মনে হচ্ছে রাতে এখানে যুদ্ধ হয়েছিল। আমি রুমের দিকে তাকিয়ে হাসছিলাম এর মধ্যেই আমার নাম ধরে ডাকলো সাদাদ ভাই! আমি চমকে পিছন ফিরতেই দেখি উনার ঠোঁটে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে রেখেছে। আমি ঢোক গিলে কিছু বলবো তার আগেই উনি আমাকে বললেন,

–এভাবে মানুষের হয়ে যাওয়া বাসরে নজর দিতে নেই! এই সময়টা তোমারও আসবে!

বলেই উনি হাসলেন! ছিঃ ছিঃ! কি নির্লজ্জ! আর বুঝিনা যত লজ্জাকর পরিস্থিতি আছে আমি তার সামনেই কেন পড়ি? কি আর করার! লজ্জায় মাথা নিচু করে তৎক্ষণাত ওই স্থান ত্যাগ করলাম আমি! ড্রয়িংরুমে এসে দেখি আপুকে ঘিরে কম হলেও দশজন মেয়ে বসে আছে, কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মুখ ভঙ্গি দেখে বুঝা গেলো এরা আপুকে লাগামছাড়া প্রশ্ন করছে! আর আমার রুবাপু! লজ্জায় লাল তো হয়েই গেছে, এখন এমন অবস্থা যে যেকোন সময় কান্না করে দিবে। আমার এতো হাসি পাচ্ছে। ইচ্ছে করছে আমিও আপুকে একটু নাস্তানাবুদ করি কিন্তু না এই সাদাদ ভাইয়ের কোন ভরসা নেই! দেখা যাবে কারো কথা না শুনে উনি শুধু আমার কথা শুনেই আমাকে লজ্জা দিবেন। তাই আস্তে আস্তে করে আপুর কাছে গেলাম। অনেকেই আমাকে ঠিক মতো চেনে না তাই আমাকেও তাদের দলে টানতে চাইলো। এর মধ্যে একটা মেয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
-এই নতুন ভাবী! বলোনা গো তোমায় ভাইয়া কেমন সোহাগ করলো।

আমার চোখ বড় বড় হয়ে এলো এটা কেমন প্রশ্ন? সাথে বেশ বিরক্তও লাগলো! তাই উত্তরটা আমিই দিলাম!

–আরে আপু! তুমি ভাবীর মুখে শুনলে তো আর ফিল পাবা না! তাই তোমার বাসর পর্যন্ত তো অপেক্ষা করতে হবে নাকি! নির্লজ্জের মতো আরেকজনের মুখ থেকে শোনাটা নেহাতই বেহায়াপনা ছাড়া কিছু বলতে পারছি না!

আপুটা আমার দিকে ক্ষিপ্ত চোখে তাকালো! আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আপুকে বললাম,

–চল আমার সাথে!

আপুও উঠে দাঁড়ালো। দুইজনের রুমের দিকে হাঁটা দিলাম। যাওয়ার পথে শুনি ওই আপুটা রাগী গলায় বলছে,

-কি অসভ্য মেয়েরে বাবা! বড়দের সাথে কথা বলতেও জানে না! কি শিক্ষা এর?

আমি এবার চটে গেলাম। কিছু বলবো তার আগেই আপু বলল,

-আমার বোনের যথেষ্ট সুশিক্ষা রয়েছে। আমি নতুন বউ বলে কিছু বলছি না। সকাল থেকে আমাকে তোমরা হেয় করে চলেছো! আমি কিছুই বলি নি! তখন থেকে এমন সব কথা বলছো যেন পারলে আমার বেডরুমে ঢুকে যাও! তাও কিছু বলি নি! তাই বলে আমার বোনকে ভুল করেও অপমান করতে এসো না, আমি কিছু না বললেও এ বাড়িতে ওর পক্ষে বলার মানুষের অভাব নেই!

বলেই আপু আমার হাত ধরে রুমে নিয়ে এলো। রুমে এসে মাথা থেকে শাড়ির আচলটা সরিয়ে রাগে ফুসফুস করছে। আর আমি মিটমিট করে হাসছি! এই আমার আপু! নিজের অপমানে চুপ থাকলেও ওর জন্য কখনো কেউ আমাকে কিছু বলতে পারে না। ছোট থেকে একদম নিজের কোলে আগলে রেখেছে আমাকে।

হুম! আমার আপু!
আমি পিছন থেকে আপুকে জড়িয়ে ধরলাম। আপুও হেসে দিলো। আমি আপুকে ঝাপটে ধরে বললাম,
–ইশ! তোমার যে কেন কোন দেবর নেই! আমার আফসোস হয়! তোমার দেবর থাকলে আমি নিশ্চিত তার গলায় ঝুলে যেতাম। তোমার কাছে থাকার জন্য!

আপু পিছনে ফিরে আমাকে ধরে বলল,

-আছে তো! ভাসুর আছে! কেন? সাদাদকে বিয়ে কর তাহলেই তো হয়ে যায়। এমনিতেও কি হ্যান্ডসাম সে! মেয়েরা তো পুরো ফিদা তার প্রতি!

আপুর কথায় বেশ লজ্জা পেলাম! এখন আপুকে কি করে বলি উনার ভাসুর আমাকে কাল রাতে বিয়ের জন্য প্রপোজাল দিয়েছে? আমি কথা ঘুড়াতে বললাম,

–এই আপু তুমি কি সফট হয়ে গেছো গো! এইসব কি ভাইয়ার থেরাপির কামাল?

আপু লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলো। আমার বাহুতে চাপড় মেরে বলল,

-দুষ্টু! ওখান থেকে এখানে এনেছিস তোর এই অসভ্য কথা শুনানোর জন্য?

আমি হাহা করে হেসে দিলাম। আপু বেশ লজ্জা পাচ্ছে!

ব্রেকফাস্ট করে আরফান ভাইয়াকে খুঁজে চলেছি প্রায় আধাঘন্টা! উনাকে খুঁজতে খুঁজতে এটাই ভুলে যাচ্ছি যে উনাকে খুঁজার কারনটা কি! হায় আল্লাহ! খুঁজতে খুঁজতে বেখেয়ালিতে ধুপ করে ধাক্কা খেতেই কপালে হাত দিয়ে দেখি সামনে সাদাদ ভাই! উনি উনার বুকে হাত দিয়ে ডলছে! ব্যাথা পেয়েছে মনে হয়! আমাকে তাড়াহুড়োয় দেখে বলল,

–এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছো?

আমি আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বললাম,

–খুঁজছি! আরফান ভাইয়াকে!

সাদাদ ভাই ভ্রু কুঁচকে বিড়বিড় করে বললেন,

–যাকে খুঁজা উচিত তাকে খুঁজা বাদ দিয়ে উনি আরফানকে খুঁজছে! কি কপাল! উনার এই বিড়বিড় করা কথা স্পষ্ট আমার কানে এলো। অর্থ ঠিকমতো না বুঝেই বললাম,

–অন্য কাউকে কেন খুঁজবো? আমার তো আরফান ভাইয়াকেই দরকার!

উনি আবার ভ্রু কুঁচকালেন।

–কেন? কেন? আরফানকে কেন দরকার?

আমি এবার আড়চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

–আসলেই তো কি দরকারে যেন এসেছি? ইশ! দেখেছেন আপনার জন্য আমি ভুলেই গেলাম কিসের জন্য আমি আরফান ভাইয়াকে খুঁজছি!

উনি আমাকে কিছু বলবেন তার আগেই আরফান ভাইয়া এসে সাদাদ ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-ভাই সাদাদ তুই এখানে! একটু আপুর কাছে যা তো আপু তোকে ডেকেছে!

সাদাদ ভাই আরফান ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

–তোর শালি তোকে খুঁজেছে!

আরফান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-খুঁজেছিলে শালিকা?

আমি মনে করার মতো করে বললাম,

–কি যেন? ওহ হ্যাঁ মনে পড়েছে আপুর কি যেন আপনার কাছে আছে সেটা আমাকে দিন আপু পড়বে! চেন না আংটি যেন?

আরফান ভাইয়া ও মনে করে বললেন,

-হ্যাঁ ওর চেনটা আমার কাছে আচ্ছা আমি যেয়ে দিয়ে দিচ্ছি!

আমি ভাইয়াকে মানা করে বললাম,

–আপনার যেতে হবে না আমিই দিয়ে দিব! আমাকে দিন।

ভাইয়া ইতস্তত করে বললেন,

-আরে শালিকা এতো কষ্ট করতে হবে না আমিই দিয়ে দিচ্ছি!

আমি আবার বাদ সেধে বললাম,

–আরে কষ্ট কেন হবে? আমি দিয়ে দিব সমস্যা নেই!

আরফান ভাইয়া অসহায়ভাবে সাদাদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ইশারায় কিছু বললেন! সাদাদ ভাই এতোক্ষন মুচকি মুচকি হাসছিলেন কিন্তু আরফান ভাইয়ের কান্ড দেখে একটু শব্দ করে হেসে দিলেন! তারপর আরফান ভাইয়ার কানে কানে ফিসফিস করে বললেন,

–যেই মেয়েকে আমি আমার ফিলিংসই বুঝাতে পারি না সেখানে তোরটা বৃথা!

যদিও কথাটা আমার কান পর্যন্ত পৌছায় নি। কিন্তু খেয়াল করলাম কথাটা শোনার পরপরই উনি আরো অসহায় ভাবে সাদাদ ভাইয়ের দিকে তাকালেন। সাদাদ ভাই মুচকি হেসে আমাকে বলল,

–আরে আরফান বলল তো ও দিয়ে দিবে। তুমি আমার সাথে আসো ইম্পরট্যান্ট কথা আছে তোমার সাথে!

আমি কিছু বলবো তার আগে উনি আবার বললেন,

–আরফান তুই ভাবীকে জিনিস দিয়ে আয়! দেরি করিস না, আবার সেন্টারে তাড়াতাড়ি যেতে হবে। আর সুবাহ তুমি আমার সাথে আসো।

আমি আবার কিছু বলবো তার মধ্যেই দেখি আরফান ভাই হাওয়া হয়ে গেছে। আর আমি সাদাদ ভাইয়ের পিছু পিছু চলছি!
,
,
,
চলবে…………….❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here