অনুভূতিরা শীর্ষে 💗,পর্ব_১২,১৩

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗,পর্ব_১২,১৩
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব_১২

যাও একটু একটু এই সাদাদ নামক ব্যাক্তিটাকে কম ভয় পেতে শুরু করলাম উনিতো রীতিমত আমাকে এসে আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে যে আমি ওনাকে ভয় পাই! সাদাদ ভাই আবারও বললেন,
–কি? বলো! এভোয়েড কেন করছো?

এবার বেশ সাহস জুগিয়ে বললাম,

–কালকে যা ধমকানো ধমকিয়েছেন তারপর আপনাকে এভোয়েড করবো না তো কি আপনার কোলে চড়ে ঘুড়বো?

উনি আমার উত্তরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। পরক্ষনে বাঁকা হেসে বললেন,

–আমার কিন্তু আপত্তি নেই! চড়বে নাকি কোলে?

আমি মুখ কুঁচকে বললাম,

–ছিঃ!

উনি এবার বেশ সিরিয়াসভাবে বললেন,

–তোমার সাহায্য চাই!

আমি অবাক চোখে ওনার দিকে তাকালাম। আমার সাহায্য উনি চায়? বিষয়টা গোলমেলে। উনি হয়তো আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরেছেন তাই আবার বলল,

–আজ একটু আমার সাথে বাইরে যাবে? খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।

আমি একটু ভয় পেলাম। আমার সাথে কি কথা? কালকের ওই বিষয়টার জন্য আবার আমাকে শাস্তি দিবে না তো? কিন্তু ওখানে তো আমার দোষ ছিলো না। কিন্তু উনি তো আমাকেই দোষী মনে করেন! আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,

–আপনি কালকের বিষয় নিয়ে কথা বলবেন তাইনা। কিন্তু বিশ্বাস করুন উনি সত্যিই আমার সাথে মিসবিহেভ করছিলেন। আমি এতোটা হ্যারাস কখনো হইনি। আমি আপনাকে প্রুভ ও দেখাতে পারি। এই দেখুন!

বলেই হাতটা এগিয়ে দিলাম। আমার হাতে আঙুলের কালশিটে দাগ দেখে কেমন যেন আতকে উঠলেন। পরক্ষনে উনার চোখ দুটো ক্রমান্বয় লাল হতে লাগলো। উনি আলতোভাবে আমার হাতটা ধরলেন। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি উনার হাতটা হালকা হালকা কাঁপছে। আমার ও তেমন খেয়াল ছিলো না। উনি হাতটা যখন ধরলো আমি ব্যাথাকাতুর শব্দ করতেই হাতটা ঘুরিয়ে দেখলেন কেটে যাওয়ার দাগ। কালকেই চুড়ি ভেঙে কাঁচ ঢুকে যাওয়ার ফলে এই দাগটা। এখনো কাঁচা! উনি চমকে বললেন,

–হাত কাটলো কিভাবে?

আমি আমতাআমতা করতে লাগলাম।

–আসলে ওটা একটা এক্সিডেন্ট। কাল চুড়ি খুলতে গিয়ে ভেঙে ঢুকে গেছে।

উনি তৎক্ষণাত আফসোসের সুরে বললেন,

–আহ! আমারই ভুল! কেন যে কাঁচের চুড়ি দিতে গেলাম!

আমি চমকে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

–আপনি দিয়েছেন মানে?

উনি থতমত খেয়ে আমার হাতটা ছেড়ে বললেন,

–কিছুনা! তুমি তৈরি হয়ে থেকো। এমনিতেও তো রুবাইয়ার সাথে তুমি যাচ্ছো। আমাদের বাড়িতে গিয়েই তোমাকে নিয়ে বের হবো। কিন্তু ভুলেও কাউকে বলবে না, ঠিক আছে?

আমি দ্রুত মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বললাম। উনি চলে যাচ্ছেন। কিন্তু পরক্ষনে আমার মাথায় এলো উনি কাউকে বলতে কেন মানা করলো? আচ্ছা উনি আমাকে মেরে টেরে ফেলবে না তো? কিন্তু কেন মারবে আমি তো কিছু করি নি। আচ্ছা উনি আমাকে নিয়ে যাবেনই বা কোথায়? এতো এতো প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আবার মনে হলো আমার তো একা থাকাটা সেফ না। তাই দ্রুত সাদাদ ভাইয়ের পিছু পিছু যেতে লাগলাম।

.
আমিও আপুর সাথেই যাবো কিন্তু তাও আজ বোনের জন্য এতো এতো কান্না পাচ্ছে যা বুঝানো যাবে না। আমার আবার এক সমস্যা আছে! কান্নার সময় কিভাবে যেন ঠোঁট উলটে যায়। আজও তার ব্যাতিক্রম নয়। আপু আম্মু বাবাকে ধরে কান্না করছে কিন্তু আমার কান্না দেখে সবাই হেসে দিল। এটা কোন কথা? আমি কান্না করছি দুঃখের ঠেলায় আর এরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। আপুও হাসছে! আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,

–যার জন্য আমি কান্না করি সেই দাঁত কেলিয়ে হাসছে। হুহ! আমি আর কান্নাই করবো না। আমার মেকআপ ও নষ্ট হওয়ার চান্স নেই।

এই কথার পর সেখানে হাসির রোল পড়ে গেলো। এমনকি গোমড়া মুখো সাদাদ রহমান সাদও মুচকি হাসছে ঠোঁট চেপে!

.
আপুর সাথে তার শ্বশুরবাড়ি পৌছালাম। বাড়িটা মূলত সাদাদ ভাইদের কিন্তু সাদাদ ভাইয়ের ফুপা মারা যাওয়ার পর সাদাদ ভাইয়ের বাবা তার বোন আর ভাগ্নে কে এখানে এনে রেখেছেন। ছোটবেলা থেকেই আরফান ভাইয়া আর সাদাদ ভাই এক সাথে মানুষ হয়েছে। এদিকে মা হারা সাদাদ আর সাদিয়াও ফুপুকে পেয়ে যথেষ্ট খুশি কিন্তু ফুপি মহিলা লোক বেশি সুবিধার না। আসলে ওনার নেচারটাই কেমন যেন! আমরা দুই বোন কিন্তু আপুকে সে চোখে হারায় আর আমাকে দুই চোক্ষে দেখতে পারে না। আল্লাহই জানে কারণটা কি? বাড়ির মূল ফটকে পা রাখতেই সবার হইচই শুরু হয়ে গেল। এমনকি পা মচকা নিয়ে সাদিয়া আপুও বসে নেই। সে ও এদিক সেদিক সামলাচ্ছে। আমি আপুর সাথেই দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বুঝতে পারছি না সাদাদ ভাই কেন দাঁড়িয়ে আছে? একবার খেয়াল করলাম সাদিয়া আপু কিছু একটা ইশারা করলেন তারপর থেকেই উনি খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছে এখানে। আপুকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে গিয়ে আগে কিসব রীতি পালন করলেন। এইসব রীতি ঢাকা শহরে দেখা যায় না বললেই চলে। কিন্তু আপুর শাশুড়ির ইচ্ছে তাই এগুলো পালন করলো। আমিও আপুর সাথে এই বাড়িতে প্রবেশ করলাম। বাড়িটা ডুপ্লেক্স বাড়ি। একদম নিজস্ব, ভাড়া দেয় না। উপর নিচ এতো রুম সবগুলোই তাদের। বাড়ির পাশে রাস্তা দিয়ে পিছনে গ্যারেজ। বাড়িটার আশেপাশে সুন্দর বাগান আছে। যদিও এইগুলো লক্ষ্য করেছি সকাল বেলা। রাতেও খুব সুন্দর দেখা যায়। লাইটিং করা তাই।

সবাই আপুকে নিয়ে ব্যস্ত। আমিও বসে বসে সব দেখছি। হঠাৎ খেয়াল করলাম সাদিয়া আপু পা দিয়ে ঠিক ভাবে হাটতে পারছে না তবুও কাজ করছে। আমার ভীষন খারাপ লাগলো। আমি এগিয়ে গিয়ে আপুকে বললাম,

–আপু!

সাদিয়া আপু ফিরে আমাকে দেখতে পেয়ে মুচকি হেসে বলল,

-কিছু দরকার সুবহা?

আমি হালকা মন খারাপ করে বললাম,

–তোমার পায়ের ব্যাথা কতটুকু আছে?

আপু হঠাৎ পায়ের দিকে লক্ষ্য করে বলল,

-ও কিছু না ঠিক হয়ে যাবে।

আমি একটা শ্বাস ফেলে বললাম,

–স্প্রে টা কোথায়?

আপু হেসে বলল,

-আরে ঠিক হয়ে যাবে তুমি টেনশন করো না। যাও ওখানে বসো গিয়ে।

আমিও নাছোড়বান্দা। আপুকে টেনে একটা সোফায় বসিয়ে দিলাম। একটা পিচ্চিকে বললাম ফার্স্টএইড বক্সটা নিয়ে আসতে। ছেলেটা এক দৌড়ে নিয়ে এলো। আমি বক্স খুঁজে ওষুধটা পেলাম না। পরক্ষনে মনে পড়লো আমার কাছেই তো জেলটা আছে। ব্যাগ থেকে ক্লোফেনাক জেলটা নিয়ে আপুর পায়ে মালিশ করে দিলাম। আশ্চর্যজনক হলেও আপু পায়ের ব্যাথাটা তৎক্ষণাত কম হলো। আপু বারবার মানা করছিল কিন্তু যখন দেখলো ব্যাথাটা যথেষ্ট কমে এসেছে, নিজেই অবাক হয়ে বলল,

-কি জাদু আছে গো সুবহা তোমার হাতে? ব্যাথাটা অনেকটা কমে গেছে।

আমি মুচকি হেসে বললাম,

–পায়ে ব্যাথা পেলে কখনো দৌড়ঝাপ করবে না। রেস্ট করবে, দেখবে পায়ে ব্যাথা ভালো হয়ে যাবে। আর এই দেখো সোজা ডিরেকশনে পা মালিশ করতে হয়। তার উলটো হলে পায়ের ব্যাথা কমার বদলে আরো বেড়ে যাবে তাই এটাও একটা ভালো টেকনিক।

আপু হেসে দিলেন। কিন্তু রুবাপুর শাশুড়ি আমাকে দেখে মুখ ভেংচিয়ে বলল,

-ঢং যত! হুহ!

আমি আর কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। একেতো এখানকার মেহমান আর দ্বিতীয়ত উনি আপুর শাশুড়ি তাই চেয়েও কিছু বলতে পারলাম না।

.
অনেকক্ষন ধরে সাদাদ ভাইকে দেখলাম না। উনি হয়তো ভুলেই গেছে আমাকে যেন কোথায় নিয়ে যাবেন। মনে মনে খুশি হয়েছিলাম যে ভালোই হলো উনি ভুলে গেছেন। এমনিতেও এই রাজনীতিবিদদের আমি ভুলক্রমেও বিশ্বাস করি না। এতোদিন তো এড়িয়ে চলতাম কিন্তু এখন তো তাও সম্ভব হবে না। আল্লাহ! বাঁচাইয়ো। কিন্তু ভাগ্য বলেও একটা জিনিস আছে যেটা বরাবরই আমার খারাপ। হঠাৎ ফোনে মেসেজ আসলো,
” চুপ করে বাইরের গেটে চলে আসো। আমি আছি এখানে! -সাদাদ”

হাহ! উনি কোথায় আমাকে সরি বলে রিকুয়েস্ট করবে তা না। ক্ষমতা দেখাচ্ছে! যেতে বলল নাকি থ্রেট দিলো সেটা বোধগম্য হলো না।
,
,
,
চলবে……………….❤️

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗
লেখনিতে সুমাইয়া_ইসলাম মিম
পর্ব_১৩
.
আমার কাছে কেন যেন রাতটা বড্ড স্নিগ্ধ লাগছে। একদম শুভ্র শীতের রাত! চারিপাশে বেশ ঠান্ডা পড়েছে। কিন্তু এই রাতটা উপভোগ করার বদলে আমি ভয়েই বেশি আছি। মন আর মস্তিষ্ক আমাকে খুবই দোটানায় ফেলে দিচ্ছে। তবুও না চাইতেও মনের কথা শুনে বেরিয়ে এলাম। এ বাড়িতে এসেই জামা বদলে নিয়েছিলাম। দরজা দিয়ে বের হতেই দেখলাম বাইরে বেশ কুয়াশা পড়েছে। পড়ারই কথা! কিন্তু ঢাকা শহরে এমন কুয়াশা খুব কমই দেখা যায়। গায়ে একটা শাল জড়িয়ে হাঁটা ধরলাম। আমাকে আসতে দেখে দারোয়ান আংকেল কোন শব্দ ছাড়াই গেট খুলে দিলো। আমিও বেরিয়ে দেখি সাদাদ ভাই গাড়ির ভিতরে বসে আছেন। জানালা দিয়ে বললেন আমাকে ভিতরে বসতে। কেন যেন আমিও চুপচাপ বসে গেলাম। উনি আমাকে সিটবেল্ট লাগাতে বললেন। আমিও ভদ্র মেয়ের মতো উনার সকল কথাই মানছি। উনি খুব ধীরে ধীরেই ড্রাইভ করতে লাগলেন। খেয়াল করলাম উনি গায়ে একটা মোটা জ্যাকেট জড়িয়ে আছেন। উনার এতো শীত! বেশ খানিকক্ষণ পর একটা ফাঁকা জায়গায় উনি গাড়িটা থামালেন। আমার কেমন যেন ভয় লাগছিল। এটাই স্বাভাবিক! আমি একা একটা মেয়ে! উনি যতই চেনা হোক না কেন তাও এভাবে আমার উনার সাথে আসাটা বোধহয় উচিত হয়নি! মনে মনে নিজেকেই এর জন্য ধিক্কার জানালাম। ভয়ের চটে আমার হাত রীতিমত কাঁপছে। আজ আপুর বাসর রাত তাই তাকে কিছু না জানিয়েই চলে আসাটা উচিত হয় নি আমার। সাদাদ ভাই গাড়ি থেকে বেড়িয়ে আমাকে নামতে বললেন। আমি একবার উনার দিকে তাকিয়ে আস্তে করে নেমে গেলাম। বেশ দূরত্ব রেখে চলছি উনার সাথে। আমি খেয়াল করলাম উনি কোনভাবেই আমার হাতটা ধরারও ট্রাই করছেন না, আমার থেকে তিনকদম আগে আগে চলছেন কিন্তু বারবার পিছন ফিরে তাকাচ্ছেন। হঠাৎ খেয়াল করলাম একটা ক্যাফে শপে এসেছি আমরা। উনি দরজা খুলে আমাকে আগে যেতে বললেন। আমিও উনার কথামত ভিতরে চলে গেলাম। একটা চেয়ার টেনে বসেছি। আমার হাতে শুধু আমার ফোনটা। প্রায় দুই মিনিট পর সাদাদ ভাই এসে আমার ঠিক অপজিটে বসেছেন। আমি বারবার অস্বস্তিতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। আসলে রিসেপশনের ওখানে একটা লোক বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে! সাদাদ ভাই বিষয়টা লক্ষ্য করে উঠে গেলেন। তার ঠিক এক মিনিটের মাথায় উনি আবার এসে বসে গেলেন। আমার নজর নিচের দিকে কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি সাদাদ ভাই আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। হঠাৎ উনি সোজা হয়ে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
–বি নরমাল সুবহা! আমি কখনো কোন মেয়ের সু্যোগ নিই না। আর আমার সাথে থাকতে তোমার কোন প্রকার ক্ষতি আমি হতে দিবো না। আর ওই ছেলেটা ভুলেও আর কোন মেয়ের দিকে উল্টাপাল্টা নজরে তাকাবে না। সো তুমি নরমাল হও আগে।

উনার কথা শুনে যথেষ্ট রিলিফ ফিল করলাম। সত্যিই উনি কখনোই কোন প্রকার বাজে ইংগিত করে নি। আমি উনার দিকে তাকিয়ে একটু কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,

–আপনি কি সাহায্য চান আমার থেকে?

উনি মুচকি হাসলেন। তারপর বললেন,

–সুবহা! আই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ!

আমার চোখ বড় হয়ে গেল অবাক হওয়ার কারনে। কি বলছেন এইসব উনি?
উনি আমাকে অবাক করে বললেন,

–তোমার আর আমার বিয়েকে কেন্দ্র করে আমার সবচেয়ে প্রিয় দুইটা মানুষের সুখ দুঃখ জড়িয়ে আছে। প্লিজ সুবহা মানা করো না। বিয়ের পর যত ইচ্ছা তুমি আমার থেকে টাইম পাবে। কোনদিন তোমার স্বাধীনতায় আমি হস্তক্ষেপ করবো না। তার বদলে শুধু তোমার একটু এটেনশন চাইবো। তুমি খুব ভালো করেই জানো আসিফের নজর তোমার উপর! তাই তোমাকে নিয়ে আমি রিস্ক নিতে পারবো না। প্লিজ আমাকে বিয়ে করো। সবটা বাস্তবতা দিয়ে ভেবে দেখো। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি!

আমার মুখ দিয়ে কোন কথাই আসছে না। উনি আমাকে ভালোবাসে কথাটা শুনে আমার বিরক্ত হওয়া উচিত ছিল কিন্তু তার বদলে কেন যেন আমার খুব ভালো লেগেছে। আজ উনার প্রত্যেকটা কথায় আমি কেন যেন ভরসা খুঁজে পাচ্ছি। উনার প্রতি ভয়টা উনি নিজ হাতেই কাটিয়ে দিলেন। তবুও এভাবে হুট করে কি আর সবটা হয়! আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম,

–আমি জানি না এই মুহূর্তে আমার ঠিক কি বলা উচিত! কিন্তু এভাবে হুট করেই তো আর সম্পর্ক হয়ে যায় না। হ্যাঁ আমি ভাববো। আর আমি সবচেয়ে আগে চাইবো সাদিয়া আপুর জীবনটা আপনি আগে বাঁচান। আপু খুব বড় বিপদে আছে।

সাদাদ ভাই কিছুক্ষন ভেবে বললেন,

–ওকে নিয়ে আমার সবার আগে চিন্তা! আমার মায়ের ভূমিকা পালন করেছে ও। কিন্তু তুমিও আমার জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমি তোমাকেও বাদ দিতে পারবো না। আর সেদিনের ব্যবহারের জন্য আমি সত্যি অনুতপ্ত। না চাইতেও ওই ব্যবহারটা করতে হয়েছে।

উনার ব্যবহারে আমি বুঝতে পারছি উনি আসলেই অনুতপ্ত। আমি কথা ঘুরিয়ে বললাম,
–একটা কথা বলবো?

উনি আমার দিকে একটা কফি এগিয়ে দিয়ে বললেন,

–একটা কেন হাজারটা বলো। আই এম হেয়ার ফর ইউ!

আমি হালকা হেসে কফিতে চুমুক দিলাম। স্বাদটা বেশ ভালো! কিন্তু তবুও মুখটা তিক্ততায় জড়িয়ে গেলো। কাপটা হাত থেকে নামিয়ে টেবিলের উপরে রাখলাম।
একটা শ্বাস ফেলে নিজেকে প্রস্তুত করে বললাম,
–আসলে কথাটা আপনি কিভাবে নিবেন ঠিক বুঝতে পারছি না। আবার না বলেও থাকতে পারছি না।

সাদাদ ভাই আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন,

–নির্দ্বিধায় বলো।

আমি নিচের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলাম,

–আসলে আমার ভাইয়া সাদিয়া আপুকে ভালোবাসে।

আমার কথা শুনে অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়েছে। আমি উনার চোখের দিকে একবার তাকিয়ে আবার বললাম,
–ভাইয়া জানে না যে আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। এই প্রথম আমি কোন মেয়ের জন্য ভাইয়াকে ভাবতে দেখেছি। অনুষ্ঠানের অধিকাংশ সময় ভাইয়া আপুর দিকে তাকিয়ে ছিল এমনকি ভাইয়া তার মনের কথা আমাকে বলেছে! কিন্তু যখন জানতে পারি আপুর বিয়ে ঠিক, আমার মনটা বেজায় খারাপ ছিল কিন্তু মন থেকে চেয়েছি আপু খুশি থাকুক! তাতে যদি ভাইয়া একটু কষ্ট পায় তো পাক! কিন্তু ওইদিনই আপুর ফিয়োন্সে আমার হ…হাত ধরে এ…তো বা..জে কথা বলবে আমি ভা..বতে পারি নি।

আমার গলা দিয়ে স্বর বের হচ্ছে না। থেকে থেকে ঢোক গিলছি। চোখের উপর ভাসছে ওই কথাগুলো। হঠাৎ কাপ ভাঙার আওয়াজে সামনে তাকাতেই দেখি সাদাদ ভাইয়ের হাতে কাপটা মেঝেতে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে। মূলত উনিই কাপটা আছাড় মেরে ভেঙেছেন। উনার চোখ আবার লাল হয়ে উঠছে। আমার এবার অনেক বেশি ভয় হতে লাগলো। উনি আমার দিকে তাকাতেই আমি নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি শান্ত গলায় বললেন,
–লুক এট মি সুবহা! তোমার এই স্বভাবটা কবে যাবে? বলেছি না যখন আমার সাথে থাকবে সবসময় আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবে।

আমি আস্তে আস্তে উনার দিকে তাকালাম।আমি মনে করেছি উনি হয়তো ভাইয়ার কথাটা শুনে রিয়েক্ট করেছেন কিন্তু আমি ভুল। উনি দুহাতে নিজের মুখটা আবদ্ধ করে একটা শ্বাস ছাড়লেন। তারপর একটা হাসি দিয়ে বললেন,
–খুব বড় উপকার হলো। তুমি না চাইতেও আমার অনেক বেশি সাহায্য করে দাও। এই সপ্তাহে রুবায়েত ভাইয়ার সাথে সাদিয়া আপুর বিয়ে হবে। কিন্তু আপাতত কথাটা তোমার আর আমার মাঝে থাকবে। আপুকে আগে মানাতে হবে। ও আসিফকে খুব বেশিই ভালোবাসে। কিন্তু ওই জানোয়ার তার উপযুক্ত নয়! ওর জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ বাকি আছে।

খেয়াল করলাম কথা বলতে বলতেই উনার চোখ গুলো আবার লাল হয়ে গেছে। আমি মাথা দুলিয়ে সম্মতি প্রকাশ করলাম। অতঃপর উনি কফির বিল পরিশোধ করে দুজনেই বাইরে এলাম।
ফোনের স্ক্রিনে দেখতে পেলাম রাত প্রায় ১২ টা ছুঁই ছুঁই। প্রচুর ঠান্ডা লাগছে। তবুও এই শান্ত পরিবেশে ইচ্ছে হলো একটু হাঁটার। আমি সাদাদ ভাইয়ের দিকে তাকাতেই উনি বললেন,
–একটু হাঁটবে আমার সাথে? আসলে এই শান্ত প্রকৃতিতে প্রিয় মানুষকে সাথে নিয়ে হাঁটার লোভটা সামলাতে পারছি না!

আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম। আমি উনার প্রিয় মানুষ? কেন যেন উনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে গেল! এভাবে সাথে হাঁটার জন্যও কেউ পারমিশন চায় নাকি? আমি মুচকি হেসে বললাম,
–এমনি এমনি হাঁটবো না!

উনি ভ্রু কুঞ্চিত কুঁচকিয়ে বলল,

–মানে?

আমি আবার হালকা হেসে বললাম,

–মানে আমাকে আইসক্রিম খাওয়াতে হবে। তাও চকলেট আর বাটার স্কচ ফ্লেবার মিক্স!

উনি ভ্রুজোড়া আরো কুঁচকে বলল,

–আইসক্রিম? এই ঠান্ডায়? তাও রাতে? ইম্পসিবল!

কথার তালে তালে মাথাও ডানে বামে ফিরাচ্ছেন। আমি ঠোঁট ফুলিয়ে বললাম,

–কেন পসিবল নয়?

এক কথায় উনি উত্তর দিলেন,

–তোমার ঠান্ডা লেগে যাবে। এমনিই বাচ্চা মানুষ!

আমি কোমরে হাত দিয়ে বললাম,

–হাহ! এই বাচ্চা মানুষকে কিছুক্ষণ আগে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সময় মনে ছিল না?

সাদাদ ভাই হেসে উঠলেন! সাথে সাথে বললেন,
–বিয়ে বিয়ের জায়গায়! আর আইসক্রিম খাওয়া অন্য জায়গায়! দুইটাই ডিফারেন্ট!

আমিও নাছোড়বান্দা! আইসক্রিম খাবো মানে খাবোই! এবার বেশ ঝগড়ুটে ভাবে বললাম,
–হয় আইসক্রিম দিন নয়তো আপনার মাথা খাবো! আপনি আমায় চিনেন না! হুহ!

সাদাদ ভাই আমার আচরণে অবাক হয়ে গেছেন। এই আচরণটাই উনি আমার থেকে প্রত্যাশা করে কিন্তু কোন না কোন কারণে উনি আমার ভীতু রুপের সাথেই বেশি পরিচিত। যেমনটা আমি উনার রাগী রুপের সাথে পরিচিত! কিন্তু পার্থক্য হলো আমার ভয়টা উনার জন্য হলেও উনার রাগটা আমার জন্য নয়!

বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটা আইসক্রিম এর গাড়ি দেখতে পেলাম। আহ! শান্তি! আমি বেশ চওড়া একটা হাসি দিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

–দেখেছেন? আল্লাহই আমার জন্য আইসক্রিম এর গাড়ি পাঠিয়েছে!

বলেই গাড়িটার কাছে দৌড় দিলাম। উনি পিছন থেকে বললেন,

–হ্যাঁ উছিলাটা আমি!
,
,
,
চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here