অনুভূতিরা শীর্ষে 💗,পর্ব_১৬,১৭

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗,পর্ব_১৬,১৭
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব_১৬

আমি উনার পিছে পিছে হাঁটছি! আমার এক বদ অভ্যাস আছে, হাঁটার সময় সামনে তাকিয়ে হাঁটি না নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটি! আজ আবারও সাদাদ ভাইয়ের পিঠের সাথে আমার কপাল, নাকমুখের সংঘর্ষ হলো। উনি এমন কোন আগাম বার্তা না দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে যা হওয়ার তাইই তো হবে!
নাক মুখ কুঁচকে উনার দিকে তাকাতেই উনি এক ঝটকায় আমার বাহু ধরে পাশের দেয়ালে ঠেকিয়ে ধরলেন। আমি আকস্মিকতায় পুরো দমে অবাক! অবাক চোখে উনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বেশ ভয় পেলাম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি এদিকটায় কেউ নেই বললেই চলে! আমি নিচে তাকাতে তাকাতে এসেছি বলে খেয়ালই করি নি আমাকে উনি কোথায় নিয়ে এসেছেন! আমি উনার দিকে চোখ তুলে তাকাতেই দেখি উনি কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে! বিষয়টা আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে উনি আমার থেকে ঠিক পাঁচ আঙুল দূরে দাঁড়িয়ে আছে। আমার দুইপাশ থেকে উনি দুই হাত দিয়ে দেয়ালে ঠেক দিয়ে দাড়িয়েছেন। আমার দিক ঝুকে কিন্তু কোনরকম স্পর্শ লাগে নি। কিন্তু উনি যে আমার এতো কাছে তাতেই জান বেরিয়ে যাচ্ছে আমার। উনি অসম্ভব শান্ত গলায় আমাকে বললেন,

–তুমি কি আসলেই বুঝো না নাকি না বুঝার ভান করো?

আমি তব্দা খেয়ে গেলাম। আমি কি বুঝিনা? কি না বুঝার ভান করি? আমি আমতাআমতা করে বললাম,

–আমি কি বুঝিনা? কি না বুঝারর ভান করি? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না আপনি কি বুঝাতে চাইছেন ভাইয়া?

উনি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একটু থেমে আবার বললেন,

–এই যে ভাইয়া ডেকে কানের পোকা মেরে ফেলো! এটা থেকে মুক্তি চাই!

আমি বেশ ভাবলেশহীন ভাবে বললাম,

–এমা! সেকি? তাহলে আমি আপনাকে কি বলে ডাকবো? আপনি তো আমার থেকে কত সিনিয়র! ইভেন আপুর থেকেও! শুধু ভাইয়ার থেকে ছোট!

সাদাদ ভাই অসহায় ভাবে আমার দিকে তাকালেন। উনি পারলে এক্ষুনি নিজের কপাল দেয়ালে ঠুকতেন! উনি উনার হাত দেয়ালের সাথে আরো জোরে চেপে আমাকে বললেন,

–এডাল্ট মেয়ে হয়ে এই আজাইরা এক্সকিউজ কিভাবে দাও? কালকে যে প্রপোজ করলাম তার উত্তর দাও আমাকে! অবশ্য তুমি না করলেও তোমার সেই আমাকেই বিয়ে করতে হবে!

আমি বেশ অবাক হয়ে বললাম,

–না করলে কি সিনেমার মতো তুলে নিয়ে বা জোর করে বিয়ে করবেন?

উনি বাঁকা হেসে বললেন,

–কখনোই না! জোর জবর্দস্তি রাজনীতিতে খাটে! বউয়ের ক্ষেত্রে না! এমনিতেই বাংলাদেশে আইন প্রণয়ন হয়েছে বউয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নাকি স্পর্শও করা যাবে না। তাই তোমার ক্ষেত্রে নো জবর্দস্তি!

আমি সরু চোখে বললাম,

–তাহলে কিভাবে আপনি আমাকে নিজের করবেন?

উনি ঠোঁটে হাসি বজায় রেখে বললেন,

–ভাংচি দেবো! তোমার সবগুলো প্রপোজালে ভাংচি দিবো!

আমি মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম,

–ছেলে হয়ে আপনি ভাংচি দিবেন? কি আজব!

উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,

–কেন কোথায় লেখা আছে ছেলেরা ভাংচি দিতে পারবে না?

আমি উনার প্রশ্নকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করে বললাম,

–আচ্ছা আপনি আমাকে প্রপোজ কখন করলেন?

উনি বললেন,

–কালকেই তো রেস্টুরেন্ট এ!

আমি অবাক হয়ে বললাম,

–ওটা প্রপোজ করা ছিল? এভাবে?

উনি আমতাআমতা করে বললেন,

–তুমি একবার রাজি হও আমি বিয়ের পর প্রতিদিন নতুন নতুন ভাবে তোমাকে প্রপোজ করবো! বাট বিয়ের আগে একদম না!

আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম,

–কেন? বিয়ের আগে করলে কি সমস্যা?

উনি আমার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বললেন,

–কারন তোমাকে প্রপোজ করলে আমরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড হয়ে যাবো! আর তখন তোমাকে যদি কাছে পেতে ইচ্ছে করে তো নিজেকে সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে আর না তুমি আমাকে মানা করবে! তাই বিয়ের আগে নো প্রপোজ! আমার অনুভূতি বুঝে নাও! এরা এখন আর আমার কন্ট্রোলে নেই!

আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি! হঠাৎ করে উনার ফোন আসতেই উনি এক হাত দিয়ে ফোন ধরে কথা বলতে শুরু করলেন। ওপাশ থেকে কি যেন শুনে উনি বললেন,

–গুড! আমি আসছি!

উনি আবার আমার দিকে তাকালেন। আমি এবার বেশ ইতস্তত করে বললাম,

–সরুন! আমি যাবো!

উনি বললেন,

–আগে আমার কথা শেষ হবে তার পর তুমি যেতে পারবে!

উনি কিছু বলতে যাবেন তার আগেই উনার হাতের নিচ থেকে বেরিয়ে বেশ কিছুদূর চলে গেলাম। পিছে ফিরতেই দেখি উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,

–আমার কথা শেষ হয় নি সুবাহ!

আমি বেশ জোরেই বললাম,

–আপনাকে না সাদিয়া আপু ডেকেছে! ভুলে গেছেন?

.
সাদিয়ার রুমে আসতেই সাদাদ বিছানায় বসে পড়লো। সাদিয়া ড্রেসিংটেবিলে বসে সাজুগুজু করছিলো। সাদাদকে দেখে হেসে দিল। সাদাদ তার দিকে তাকাতেই দেখে সাদাদের মুখটা বাচ্চাদের মতো ফুলিয়ে রেখেছে। সাদিয়া হেসে বলল,

-কি হইছে ভাইজান? এইরাম মুখ ফুলাইয়া রাখছোস ক্যা?

সাদাদ আরো বিরক্ত হলো। বোনকে বলল,

–দি! তুই এই কি ভাষায় কথা বলছিস? তোকে মানা করছি না?

সাদিয়া হেসে বলল,

–আমি তো ইচ্ছে করেই বলি! আচ্ছা বল এবার কি কারনে এভাবে মুখ ফুলিয়ে রাখছিস?

সাদাদ অসহায়ভাবে বলল,

–দি! ও এতো দুষ্টু কেন?

সাদিয়া অবাক হয়ে বলল,

-কে?

সাদাদ আড়চোখে বোনের দিকে তাকিয়ে বলল,

–আমার একজনই উনি আছে! তাকে সামলাতেই জান যায়!

সাদিয়া এবার ভালোমতো বুঝলো সাদাদের ও কে! আবার হেসে বলল,

-কারন সে তোর হবু বউ! তোর একটু ধাচও যদি না থাকে তাহলে কি হয় নাকি?

সাদাদ অসহায় ভাবে তাকালো! যা দেখে সাদিয়া আবার হেসে দিল।

.
বউভাতের জন্য সবাই সেন্টারে পৌছে গেছে। রাত পর্যন্ত এখানে অনুষ্ঠান চলবে! আমি আপুর সাথেই সাজুগুজু করে চলে এসেছি! এসে সবচেয়ে বেশি অবাক হলাম কারন আজ আমি একটা রয়াল ব্লু কালারের লেহেঙ্গা পড়েছি আর সাদাদ সাহেব! উনিও রয়াল ব্লু কালারের একটা পাঞ্জাবি গায়ে জড়িয়েছেন। উনার এই উজ্জ্বল শ্যামা গায়ের রংএ পাঞ্জাবিটা বেশ মানিয়েছে। উনাকে ফর্সা বলা চলে কিন্তু ধবধবে নয়। তাই বেশিই এট্রেক্টিভ লাগে দেখতে! নায়কদের মতো সিক্স প্যাক নেই তবুও যা দেখতে মাশাল্লাহ! আসলে উনার এটিটিউট দেখেই মেয়েরা ফিদা! আর অপ্রিয় হলেও সত্য উনি আমার উপর ফিদা! হ্যাঁ কখনো নিজের মুখে বলেননি কিন্তু তার প্রতিটা কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। আর এটাও সত্য আমি উনাকে বেশ পছন্দ করি যদিও মুখে হয়তো কোনকালেই আমি বলতে পারবো না। উনার থেকে ভয়টা কেমন যে চলে গেল।
নাহ! এই লোকটাকে আমি কিছুতেই ইগনোর করতে পারবো না। আজ তাকে বলেই দেবো।

অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়! সবাই আনন্দ উল্লাসে ব্যস্ত! কিন্তু শান্তি নেই রুবায়েত এর মনে ও কিছুতেই সাদিয়ার পাশে আসিফকে মেনে নিতে পারছে না। শুধু শুধু চিপকাচ্ছে সে। সাদিয়া ওকে কিছু বলছে না দেখে আরো বেশি ক্ষেপে গেলো ও। হঠাৎ খেয়াল করলো আসিফ সাদিয়াকে নিয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে! রুবায়েত তার পাশে থাকা মানুষগুলোকে সাইড কাটিয়ে সাদিয়ার পিছু চলল। কেন যেন মনে হচ্ছে কিছু একটা বিপদ ঘটবে!

.
কতক্ষন ধরে এই সাদাদকে খুঁজে চলেছি কিন্তু মশাইয়ের দেখা নেই! আজব! যখন পাত্তা দেই না তখন ঠিই ধেই ধেই করে সামনে হাজির হয় কিন্তু এখন তার দেখাও পাওয়া যাচ্ছে না। খুঁজতে খুঁজতে স্টেজের বিপরীত দিকে যাচ্ছি হঠাৎই পিছনে থেকে বলে উঠলো,

–আমাকে খুঁজছো সুবাহ?

আচমকা কথা বলায় বেশ ভয় পেলাম। পিছনে ফিরে দুই কদম পিছিয়ে এলাম। এই সাদাদ নামক ব্যাক্তিটা থেকে আমি যতই ভয় কমাতে চাই না কেন মনের মাঝে উনিই সবচেয়ে বড় ভয়! এতক্ষন মনে মনে কত ঠিক করছিলাম যে উনাকে বলে দিবো যে আমিও উনাকে পছন্দ করি কিন্তু উনি সামনে আসায় পেটের কথা গলায় আটকে আছে! কি করি।

–আসলে…আমি..আপ..নাকে খুঁজছিলাম!

উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,

–কেন?

আমি একটা ঢোক গিলে বললাম,

–আপনাকে কিছু বলার ছিলো!

উনি এবার মুচকি হাসলেন। হাসি মুখেই বললেন,

–তো বলো!

আমি অসহায়ের মতো উনার দিকে তাকিয়ে আছি! আসলে ভাবছি কথাটা বলব কিভাবে?
,
,
,
চলবে……………..❤️

অনুভূতিরা শীর্ষে 💗
লেখনিতে_সুমাইয়া ইসলাম মিম
পর্ব_১৭

–“আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি!”

চোখ বুজে এক নিশ্বাসে বলে দিলাম। কোন আওয়াজ না পেয়ে একটু একটু করে চোখ খুলে দেখি সামনে কেউ নেই! মানে কি? এতো কষ্ট করে কাকে কনফেস করলাম? আশেপাশে তাকিয়েও খুঁজে পেলাম না সাদাদ কে! খুব বেশিই কষ্ট পেলাম। কেন? দুই মিনিট ধৈর্য্য ধরে কি আমার কথা শোনা যেত না? নাহ! তা যাবে কেন? এক তপ্ত শ্বাস ফেলে ওই স্থান ত্যাগ করলাম। সেই থেকেই চেয়েও মুখে হাসি আনতে পারছি না! যার জন্য যেই দেখছে সেই জিজ্ঞাসা করছে কি হয়েছে আমার! অন্যমনস্ক হয়ে বসে ছিলাম একটা চেয়ারে তখন আম্মু এসে বলল,
-সুবাহ? কি হয়েছে তোমার? এরকম মুখ ফুলিয়ে কেন রেখেছো?

আমি আম্মুকে পেয়ে কেমন যেন গলে গেলাম।

–আম্মু জানো! আসলে…….

আমাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে আম্মু বলল,
-মানুষ কত কথা বলছে তোমাকে নিয়ে! শুনেছো? আমাদের সম্মান একেবারে শেষ করে দিবে দেখছি? এক বোনের সুনাম শুনছি তো অন্য বোনের বদনাম!

আমি অবাক হয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি! যেখানে নিজের আম্মু আমাকে কোন পাত্তা দেয় না, সেখানে অন্যের ছেলের পাত্তা তো আশাই করি না। ছলছল চোখ নিয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি। চোখের কোনে যে পানির কণার ভীর রয়েছে তারা যেকোন সময় নোটিফিকেশন না দিয়েই গড়িয়ে পড়বে বলে আশংকা করা যায় আর সাথে জন্মালো একরাশ অভিমান। তাই আম্মুকে তাড়াতাড়ি বললাম,

–চিন্তা করবেন না। আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি! যাতে কেউ আর কোন কথা আপনাকে বা আপনাদের না বলতে পারে! দুঃখিত আমার জন্য আপনার সম্মানে আঁচ আসলো!

বলে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করি নি। দৌড়ে সেন্টার থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছি। নাহ! আর পারছি না কান্না আটকাতে! চোখের পানি গুলো আজ বড্ড অবাধ্য হয়ে আছে!

.
সুবাহ চলে যেতেই সুবাহর আম্মু ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। সাদাদ আড়াল থেকে সামনে এসে সুবাহর আম্মুর কাঁধে হাত দিলো। সাদাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সুবাহর আম্মু কেঁদে ফেললেন। সাদাদ হাটু গেড়ে তার সামনে বসে পড়লো। দুহাতে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,

–এটা কিন্তু ঠিক না! এভাবে আমাকে অপরাধী বানাই দিবা?

সুবাহর আম্মু সাদাদের দিকে তাকিয়ে বলল,

-এই প্রথম আমি আমার মেয়েটার সাথে এত খারাপ আচরণ করেছি! খুব কষ্ট পেয়েছে আমার বাচ্চাটা!

সাদাদ মুচকি হেসে বলল,

–কান্না করো না প্লিজ! আমিও তো ওকে এভোয়েড করেছি! আজ যে আমি কত খুশি হয়েছি আমি বলে বোঝাতে পারবো না। ইচ্ছে হচ্ছিল জড়িয়ে ধ….

সুবাহর আম্মু তাকাতেই সাদাদ মেকি হাসি দিয়ে বলল,

–ওইভাবে তাকাও কেন হবু শাশুড়ি আম্মু! আমার বউই তো হবে!

সুবাহর আম্মু ফিক করে হেসে দিল। সাদাদের বাহুতে হালকা চাপড় মেরে বলল,

-পাজি ছেলে একটা!

সাদাদ একটা শ্বাস ফেলে বলল,

–তোমার মেয়েকে সব খুশি দেবো ইনশাল্লাহ। আজ যে কষ্ট সে পেয়েছে আর কখনো পাবে না। বরং অনেক বড় সারপ্রাইজ ওর জন্য অপেক্ষা করছে।

হঠাৎ সুবাহর আম্মু বলল,

-সাদাদ মেয়েটা তো একাই বেরিয়ে গেলো!

সাদাদ তার শাশুড়িকে আশ্বাস দিয়ে বলল,

–এগুলা এই হবু জামাতার উপর ছেড়ে দাও না শাশুড়ি আম্মু!

.
রুবায়েত সাদিয়ার পিছু গিয়ে দেখে আসিফ সাদিয়াকে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে গেছে! যা দেখে তার চোখটা অটোমেটিক বড় হয়ে গেলো। রুবায়েত ভাবতেও পারে নি সাদিয়া এমন করতে পারে! এমন নয় যে সে সাদিয়ার বিষয়ে কিছু জানে না! যাকে ভালোবাসে তার সকল খোঁজখবর নেওয়া হয়ে গেছে রুবায়েত এর! এবং সে যখন আসিফকে সুবাহর সাথে দেখেছে তার পর থেকে সে বিষয়টা নিয়ে খুব ভেবেছে। এবার একটু সময়টাকে পিছিয়ে বলি আসল বিষয়টা!

.
সেদিন সুবাহর পিছনে শুধু সাদাদ নয় রুবায়েতও এসেছিল। সে এরকম দেখে আসিফকে মারতে চেয়েছিল! কিন্তু সাদাদ তার হাত ধরে আটকে দেয়! আর সাদিয়ার বিষয় বলে! সাদিয়ার বিয়ের কথা শুনে রুবায়েত কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে ছিল, তখন সাদাদ নিজেও জানতো না রুবায়েত তার বোনকে পাগলের মতো ভালোবাসে। কিন্তু আসিফকে এইরকম দেখে সেও ধাক্কা খেয়েছিল আর তার সুবাহর সাথে সে এই ব্যবহার কিছুতেই মানতে পারছিল না তাই রাগে তার চোখ লাল হয়ে এসেছিল! নিজেকে খুব কষ্টে সামলেছিল। কিন্তু এর শাস্তি সে আসিফকে অবশ্যই দিবে। কিন্তু তার আগে সে আসিফের আসল রুপটা সাদিয়ার সামনে আনতে চায় যাতে সাদিয়া কোনভাবে সাদাদকে ভুল না বুঝে! আর সবক্ষেত্রে মাথা গরম করলে চলে না, একটু মাথা ঘামাতে হয়! কিন্তু সুবাহর মুখ থেকে রুবায়েত এর কথা শুনে এর জন্যই সাদাদ অবাক হয়েছিল সাথে অনেক খুশি! সুবাহকে সন্দেহ করার মতো নিচু মন মানসিকতা সাদাদের নেই। সেই থেকে রুবায়েতও চেয়েছিল সাদিয়ার থেকে দূরে থাকতে কিন্তু এই অবাধ্য মন তা মানতে একদমই নারাজ!

বর্তমানে রুবায়েত অগ্নিচোখে তাকিয়ে আছে সাদিয়া আর আসিফ এর দিকে! আর সাদিয়ার চোখ নিচের দিকে! কেন যেন সে রুবায়েত এর চোখের দিক্ব তাকাতে পারছে না। আর আসিফ একা একা রুবায়েতকে যা নয় তাই বলছে! সে তো আর জানে না রুবায়েত কে! তাহলে হয়তো এতগুলো কথা সে ভয়েও বলতো না। রুবায়েত আর সহ্য করতে পারলো না। ধুমাধুম মারতে লাগলো আসিফকে! রাগটা যেন ক্রমশ বাড়তেই লাগলো। বেশি রাগ লাগছে সাদিয়ার উপর! এক নজরে তার দিকে তাকিয়ে আছে! আজ যেভাবে আসিফ তার সাথে জোরজবরদস্তি করছিল যেকোন একটা অঘটন ঘটে যেত যদি না রুবায়েত আসতো!

রুবায়েত আসিফকে এমনভাবে মারছে যে মনে হয় না ছয় মাসে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবে! আরো আর্মিদের মার! সাদিয়া অবস্থা বেগতিক দেখে ছুটে এসে ছাড়াতে নেয় আর বলে,

-ছেড়ে দিন আসিফকে! মরে যাবে তো! প্লিজ ছেড়ে দিন!

সব ঠিক ছিল কিন্তু সাদিয়ার চোখে পানি দেখে রুবায়েত আরো ক্ষেপে গেলো। আসিফকে ছেড়ে সাদিয়ার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল। রুবায়েত রীতিমত রাগে কাঁপছে। চিৎকার করে বলল,

-ছিঃ! তুমি এতোটা চিপ মেয়ে ভাবতেই ঘেন্না লাগছে! ও তোমাকে ডাকলো আর তুমি নাচতে নাচতে চলে এলে!

সাদিয়া কান্নারত অবস্থায় কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল,

-ও আমার ফিয়োন্সে তাই মানা করতে পারি নি!

রুবায়েত গলার স্বর দ্বিগুণ বাড়িয়ে বলল,

-বাহ! কি সুন্দর কথা! তা দেখবেন আপনার ফিয়োন্সে কি করে বেড়ায়?

রুবায়েত কথা বলতে বলতেই ফোন থেকে কিছু ক্লিপস বের করলো। ক্রাইম এজেন্সি থেকে লোক ঠিক করে আসিফ এর সব বায়োডাটা বের করেছে সে এই ক্লিপস গুলোর মধ্যে দেখা যায় কোনটায় কালো টাকা লেনদেন, কোনটায় মেয়েদের সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায়! সাদিয়া দুই কদম পিছিয়ে গেল ভিডিও দেখে! রুবায়েত সাদাদকে ফোন দিয়ে ডাকলো। সাদাদ এক প্রকার দৌড়ে সেখানে পৌছালো। একে একে সব খুলে বলল তাকে। সাদাদ কাউকে ফোন করে বলল আসিফকে নিয়ে যেতে। সাদাদের কথা মতো পাঁচ মিনিট পর দুইজন লোক এসে আসিফকে নিয়ে গেল, তারা খুব ভালো করেই জানে আসিফকে কোথায় নিয়ে যেতে হবে।

.
মুখ শক্ত করে বসে আছে রুবায়েত! তার ঠিক সামনে কান্নারত অবস্থায় আছে সাদিয়া! সে কিছুতেই বিয়ে করতে চাচ্ছে না। রুবায়েত এক ধমক তাকে দিয়েছে! ধমকের স্বরে কেঁপে উঠেছিল সে। সাদাদ তার বোনকে আলাদা নিয়ে গিয়ে বলেছিল,

–দি! আজ আমার জন্য হলেও এই বিয়েটা কর! তোর কাছে হাত জোর করছি! আমি রুবায়েত ভাইয়ের কাছে ঋনি! একটা সুযোগ আছে ঋনটা শোধ করার! দি প্লিজ!

অবশেষে সাদিয়াও তার ভাইয়ের কথামতো বিয়েতে রাজি হলো। রুবায়েত এর সঙ্গে আজই তার কাবিন হবে। অনুষ্ঠান পরে। সেই কান্নারত অবস্থাতেই রুবায়েত আর সাদিয়া বিয়েটা হয়ে যায়!
,
,
,
চলবে…………..❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here