মায়াজাল (ভৌতিক গল্প),পর্ব-৭
লামিয়া আক্তার রিয়া
গভীর রাত।সবাই সবার রুমে ঘুমিয়ে আছে।হঠাৎ কিছুর খটখট শব্দে ইমুর ঘুম ভেঙে যায়।ইমু বুঝতে পারলো কালকে রাতের মতো আজকেও সে আসছে।ইমু উঠে দরজার সামনে দাড়ালো।
যা ভেবেছে তাই।দরজার নিচে ছায়া দেখা যাচ্ছে।কিন্তু ছায়াটা ইমুর দরজার সামনে না দাড়িয়ে আদ্রের রুমের দিকে গেলো।ইমু চিন্তায় আছে।দরজা খুলে দেখবে সত্যিই এটা কে?নাকি অপেক্ষা করবে?যদি আদ্রের কোনো ক্ষতি হয়?ইমু দরজার সামনেই কান পেতে দাড়িয়ে রইলো।
———————
আদ্র দরজায় কারো ধাক্কানোর শব্দে ঘুম থেকে উঠে গেলো।ঘুমঘুম চোখে দরজার কাছে যেতেই ইমুর কথা মনে পরলো।
আদ্র: কে?
ওপাশ থেকে কোনো কথা আসছেনা।শুধু দরজা ধাক্কাচ্ছে কেউ।
আদ্র: আরে কে?এতরাতে দরজা ধাক্কানোর মানে কি?ঘুমাতে দিনতো।যা কথা বলার কাল সকালে বলবেন।
দরজা ধাক্কানো তবুও থামলোনা।আদ্র এবার বিরক্ত হলো।কিন্তু ইমু বারবার দরজা খুলতে বারন করেছে তাই ইচ্ছে থাকা সত্বেও আদ্র দরজা খুলবেনা।বাধ্য হয়ে সে ইমুকে কল করলো।
————
দরজার সামনেই দাড়িয়ে আছে ইমু।টেবিলের ওপর থেকে মোবাইলে আলো জ্বলতে দেখে এগিয়ে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো আদ্র কল দিয়েছে।
ইমু: হ্যালো?
আদ্র: ইমু আমি আদ্র।
ইমু: জ্বী নাম দেখেছি।কোনো সমস্যা?
আদ্র: দরজায় কেউ ধাক্কাচ্ছে।
ইমু: খুলবেন না।যাই হোক দরজা খুলবেন না।
আদ্র: বাট আমি দেখতে চাই এটা কে।
ইমু: খুব ভুল না হলে এটা তাসমির।
আদ্র: ইউ মিন তাসমির চৌধুরি?জমিদার বাড়ির ছেলে? যে আপনাকে কালকে রাতে মৃন্ময়ি বলেছিলো?
ইমু: জ্বী।
আদ্র: লাইনে থাকুন।আমি দেখছি।
ইমু: প্লিজ দরজা খুলবেননা।
আদ্র: আরে আরে খুলবোনা।কথা বলবো শুধু।আমি অনুভব হলে বড় ভাইয়ের সাথে তো কথা বলতেই পারি।
আদ্রের কথায় দুষ্টুমি প্রকাশ পেলো।ইমু কিছু বললোনা।আদ্র মোবাইল হাতেই দরজার সামনে এগিয়ে গেলো।
আদ্র: ভাই?তুই দরজা ধাক্কাচ্ছিস তাইনা?
আদ্রের কথায় দরজা ধাক্কানো বন্ধ হয়ে গেলো।
আদ্র: কিরে কথা বলতে পারিসনা?কথা বল?
এবার ওপাশ থেকে পুরুষালি কন্ঠ পাওয়া গেলো।
: দরজা খোল অনু।
আদ্র: তারমানে তুই সত্যিই আমার ভাই?এসব করে কি পাচ্ছিস তুই?
এবার ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ পাওয়া গেলো।
: হ্যা আমিই তোর ভাই।জমিদার কাহনাফের ছেলে কাসেমের বড়নাতি তাসমির চৌধুরি।আমি তোকে খুন করতে এসেছি।
আদ্র: আমি তোর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি?
তাসমির: গতবারের মতো এবারও তুই মৃন্ময়িকে আমার থেকে কেরে নিতে এসেছিস।মৃন্ময়ি শুধু আমার।(হিংস্রভাবে)
আদ্র: এখানে মৃন্ময়ি কোথায়?
এবার ওপাশ থেকে তাসমির উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।
তাসমির: এই তোর ভালোবাসা?গতবার তো কতো বলতি মৃন্ময়িকে তুই ভালোবাসিস।এবার কি হলো?যাক ভালোই হয়েছে।এবার মৃন্ময়িকে আমি নিজের করে নেবো।ওর গর্ভে যে সন্তান আসবে তাকে বলি দিয়ে আমি নিজের শরীর পাবো।রাজ করবো পুরো পৃথিবি।তারপর স্বশরীরে মৃন্ময়ির নরম শরীর আদরে মুরে দিবো।আহ্ কি শান্তি।
আদ্রের সাথেসাথে মোবাইলের ওপাশে থাকা ইমুও সবটাই শুনছে।তাসমিরের কথা বলার ভঙ্গিতে আদ্র ও ইমু দুজনেই ঘৃণায় মুখ কুচকালো।দুজনের ইচ্ছে করছে এই মূহুর্তে তাসমিরকে খুন করতে।কিন্তু তা পারবেনা বলে দুজনেই ভেতরে ভেতরে রাগে জ্বলছে।
আদ্র: তুই নিজের ক্ষমতার জন্য নিজের সন্তানকে বলি দিবি?
তাসমির: না না শুধু ক্ষমতা না।এখনতো আমি অন্যের শরীরে আছি।তবে কতদিন এভাবে ভালোলাগে বল?যতবার মৃন্ময়িকে নিজের সামনে দেখি ততবার আমার ওকে নিজের করার কামনা জাগ্রত হয়।ইস্ শাড়িতে কি আবেদনময়ী লাগেরে ওকে।তুইতো শাড়িতে এই জন্মে এখনো ওকে দেখিসনি।তখন মনে হয় ওর ভেতরে ডুবে যাই।
আদ্র: কিন্তু আমার কাছে কি তোর?আমিতো মৃন্ময়িকে চিনিনা।
তাসমির: তুই যদি বাঁচতে চাস তাহলে কালকে দিনের মধ্যেই জমিদারবাড়ি থেকে চলে যাবি।কালকে আমাবশ্যা।রাতের শেষ প্রহরে আমি মৃন্ময়িকে নিজের করে নিবো।তারপর জন্ম নেবে আমাদের সন্তান।
আদ্র: মৃন্ময়িই কেন?অন্যকোনো মেয়ে হলে কি হবে?
তাসমির: মৃন্ময়ি সাধারন কেউ না।ও নিজের সতিত্ব রক্ষায় গতবার নিজের জীবন দিয়েছে।নিজেকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।(শুধু গল্প হিসেবেই নিবেন।এটা কাউকে আত্নহত্যায় প্ররোচিত করছে না।)কিন্তু সেই আগুন পুরো প্রাসাদে ছড়িয়ে আমিও মারা গেলাম।
আদ্র: তোর কথামতো আমি অনুভব।আমিই ছিলাম মৃন্ময়ির স্বামী।তাহলে তখন আমি কোথায় ছিলাম?
তাসমির: তোকে আমিই খুন করেছিলাম।(মন খারাপের ভান করে)বিশ্বাস কর ভাই তোকে আমি মারতে চাইনি।কি করতাম বল?আমিই তো প্রথমে মৃন্ময়িকে দেখেছি।যদিও মালির মেয়ে এর আগে কখনো কোনো পুরুষের সামনে আসতোনা।কিন্তু সেদিন–
ফ্ল্যাসব্যাক——
তাসমিরের মন ভালো নেই।কালকে একটা মেয়েকেও পায়নি।কোনোভাবে তার দাদা তার মেয়েদের প্রতি নেশাটা টের পেয়ে গিয়েছে।তাই কালকে রাতে তাকে রুমে আটকে রেখেছে।বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি।সকালে তাসমিরের মা তাসলিমা ছেলেকে রুম থেকে বের করে।মন ভালো করতে তাসমির বাগানে হাটতে আসে।
——-
মালির মেয়ে মৃন্ময়ির সাধ জেগেছে পদ্মপুকুরে গোসল করার।কি সুন্দর টলটলে পানি।মাকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে জমিদারবাড়ির কর্তী অর্থাৎ কাসেম চৌধুরির স্ত্রী নাসিমার কাছে নিজের ইচ্ছে প্রকাশ করলো।নাসিমার প্রিয় ছিলো মৃম্ময়ি তাই বলামাত্রই তিনি মৃন্ময়িকে গোসলের অনুমতি দিলেন।মৃন্ময়িও হাসিমুখে গোসলে চলে গেলো।সে জানতোনা এই গোসলই তার জীবনের কাল হবে।সেদিন মৃন্ময়ি মনের সুখে গান গেয়ে গেয়ে পুকুরে গোসল করছে।সাথে তার সই তাহা।সে জানে বাগানের গভিরে এই পুকুরে কোনো পুরুষ আসেনা।তাই সে নিশ্চিন্ত ছিলো।
————
তাসমির বাগানে হাটছে আর ভাবছে আজ রাতে মেয়ে ছাড়া কিভাবে থাকবে।হঠাৎই কারো মিষ্টি কন্ঠে তাসমিরের ধ্যান ভেঙে গেলো।কন্ঠস্বর অনুসরণ করে সামনের দিকে এগিয়ে গেলো তাসমির।হাটতে হাটতে পুকুরের কাছাকাছি চলে এলো।ঝোপের আড়াল থেকে পুকুরের দিকে তাকাতেই সে স্তব্ধ হয়ে গেলো।সামনে দুই নারীমূর্তি স্নানরতো।তারা হেসে হেসে কথা বলছে।
তাসমির: এরা কারা?বাগানে পরী এসেছে?কিন্তু দিনের বেলা পরী?তবে যাই হোক অপূর্ব তাদের রূপ।সৌন্দর্য ঠিকরে পরছে।ভেজা শরীরে শরীরের ভাজ দেখে মাথা ঠিক রাখা কষ্টকর।
তাসমির নিজেকে আড়ালে রেখেই কিছুটা এগিয়ে গেলো ওদের কথা শোনার জন্য।
তাহা: সই আজ অনেক আনন্দ হচ্ছেরে।
মৃন্ময়ি: ঠিক বলেছিস।মা রাজিই হচ্ছিলোনা।
তাহা: তোকে সবাই কতো ভালোবাসে।রানিমাকে বলার সাথে সাথে সে রাজি হয়ে গেলো। তোকে গোসলের জন্য অনুমতি দিয়ে দিলো।
মৃন্ময়ি: তারা আমায় অনেক ভালোবাসেরে।ভিষন ভালো মানুষ তারা।
তাহা: তবে যাই বলিস তোকে কিন্তু আজ বহুগুন বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে।চোখ ধন্য আমার।
মৃন্ময়ি: ধুর কি যা তা বলিস।
তাহা: সত্যিরে।কেউ দেখলে নির্ঘাত প্রেমে পরবে।
মৃন্ময়ি: কেউ দেখবেনা।এদিকটায় কেউ আসেনা।
তাহা: তুই সবার সামনে আসিসনা কেন?
মৃন্ময়ি: আমি চাইনা আমার স্বামী ব্যাতিত অন্যকোনো পুরুষ আমার সৌন্দর্য দেখুক।
তাহা: জানিস এ বাড়ির বড়নাতি নাকি মেয়ের নেশায় থাকে।খুব খারাপ।
মৃন্ময়ি: বলিস কি?বাড়ির প্রত্যেকে কতো ভালো।
তাহা : ভালো না ছাই।জমিদারের বড় ছেলেতো ক্ষমতা দখলের ধান্ধায় আছে।তার স্ত্রীও তেমন।আর ছেলেটাও চরিত্রহীন।কোনো মেয়েকে পছন্দ হলে নাকি তাকে ভোগ না করা পর্যন্ত শান্ত হয়না।
মৃন্ময়ি: এজন্যই না আমাকে বের হতে বারন করে।
তাহা: তুই তো এমনিতেই বের হোসনা।
মৃন্ময়ি: তুই এসব জানিস কিভাবে?
তাহা: আরে আমার বাবা জামিদারবাড়ি পরিষ্কারের কাজ করে তা জানিসনা?সেই মাকে বলেছে।আর মা আমাকে।
মৃন্ময়ি: কি খারাপ অবস্থা।আচ্ছা চল উঠি এবার।বাসায় যেতে দেড়ি হলে মা চিন্তা করবে।
তাহা: চল।
তাসমির সবকথা শুনে রাগে গাছ চেপে ধরেছে।ইচ্ছে করছে এখনি তাহাকে গলা চিপে মেরে ফেলতে।কিন্তু মৃন্ময়ি পুকুর থেকে উঠতেই তাসমিরের চোখ চকচক করে উঠলো।লোলুপ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো সে মৃন্ময়ির ভেজা শরীরের দিকে।
তাসমির: নাহ্ তোমাকে একদিনের জন্য না,সারাজীবনের জন্য আমার সঙ্গি বানাবো।প্রতিরাতে তোমার নেশায় হারাবো।খুব শীঘ্রই আব্বাকে বলতে হবে।
মৃন্ময়ি চলে যেতেই তাসমিরও বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।বাড়ি এসেই তাসমিরের মাথায় যেনো বাজ পরলো।
চলবে…………..