মায়াজাল (ভৌতিক গল্প),পর্ব-৬

মায়াজাল (ভৌতিক গল্প),পর্ব-৬
লামিয়া আক্তার রিয়া

আদ্র: তুমি?এখানে?

আদ্র ইমুকে সামনে দেখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।ইমুও অবাক।

লাবিব: স্যার?আপনি ওনাকে(ইমু) চেনেন?

আদ্র: এ্যা?আভ না না‌।কিন্তু পরিচিত লাগছে।সরি তুমি করে বলেছি তাই।কিন্তু আমি কি আপনাকে চিনি?

ইমু: জানিনা।আমারও মনে হচ্ছে আমি আপনাকে কোথাও দেখেছি।কিন্তু কোথায়?

লাবিব: স্যার প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো।ম্যাম(ইমুকে) আপনিতো এখানেই আছেন।ইনিই আমাদের থানার নতুন ওসি।আপনি সবটা দেখিয়ে দিন।আর ইদ্রিস মিয়াকেও বলবেন ওনার খেয়াল রাখতে।আমি এখন যাই।সন্ধ্যার আগেই এই এরিয়া ছাড়তে হবে।স্যার আসছি।কোনো সমস্যা হলে কল দিবেন।

আদ্র: হুম।এসো।(লাবিব চলে গেলো)

ইমু: ভেতরে আসুন।ইদ্রিস চাচা কোথায় আপনি?

ইদ্রিস: এইতো‌ মা আইয়া-

ইদ্রিস চাচা থমকে গেলো আদ্রকে দেখে।

ইমু: ইনি ইদ্রিস চাচা।এই‌বাড়ির কেয়ারটেকার।চাচা ওনাকে ‌ওনার রুমে নিয়ে যাও।

ইদ্রিস:হ্যা?

ইমু: চাচা?(কিছুটা জোরে)

ইদ্রিস: হ মা যাইতাছি।আহেন স্যার।ব্যাগ আমারে দেন।

আদ্র: না না আমিই নিতে পারবো।আপনি রুমটা দেখিয়ে দিন।

ইদ্রিস: আহেন আমার ‌লগে।

ইমু: চাচা রান্না কতদূর?

ইদ্রিস: চুলায় দিছি মা।সাহেবরে রুম দেখাইয়া‌ দেখতাছি।

ইমু: আচ্ছা আপনি যান।আমি‌ দেখছি।

ইদ্রিস: এ মা‌ না না তোমার হাত লাগান লাগবোনা।

ইমু: মা বলেন আবার না করছেন?আজকে যত তারাতারি সম্ভব সব কাজ শেষ করতে হবে।আপনি ওনাকে রুমটা দেখিয়ে‌দিন।আমি‌ এদিকটা দেখছি।

ইদ্রিস: আইচ্ছা মা।

ইমু রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো আর ইদ্রিস মিয়াও আদ্রকে ঘরে নিয়ে‌ গেলো।

আদ্র: আপনি এখানে কয়বছর ধরে আছেন?

ইদ্রিস: আছি স্যার অনেক বছর ধইরা।

আদ্র: কালকে কে খুনটা হলো তার ব্যাপারে কি জানেন?

ইদ্রিস: (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) এই বাড়িতে যে অতৃপ্ত আত্মা আছে সেই এগুলা করতাছে।

আদ্র: এসব শুনিয়েই সবাইকে ভয় দেখাচ্ছেন?

ইদ্রিস: থাকেন আপনেও সব বুঝবেন।

আদ্র: ওই চারজন মেয়ের মধ্যেকার সম্পর্ক কেমন ছিলো?

ইদ্রিস: বইনের মতোই ছিলো।উমা মার মইরা যাওয়ার খবর পাইয়া তিনজনেই অনেক‌ কষ্ট পাইছে।সামুমা আর লিয়া মায় তো কানছেও।

আদ্র: নিচে যাকে দেখলাম-

ইদ্রিস: ওইটা ইমু মা।স্যার আপনে কি গোসল করবেন?

আদ্র: হুম।গরম পানি হবে?

ইদ্রিস: আপনে ১০টা মিনিট খারান আমি নিয়া আইতাছি।বাথরুম ওইযে পাশেই।

আদ্র: আচ্ছা নিয়ে আসুন।বাকি কথা খাবার টেবিলে সবার সাথে হবে।

ইদ্রিস: আইচ্ছা।

ইদ্রিস চলে যেতেই আদ্র জামাকপড় গুছিয়ে মাকে কল করে আসার খবর দিলো।ইদ্রিস মিয়া গরম পানি এনে দেবার পর গোসলে চলেগেলো।

—————–

ইমু রান্না শেষ করেই রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে এলো।লিয়া আর সামুও চলে এসেছে।ইদ্রিস মিয়া খাবার বাড়ছে।

লিয়া: আজকের খাবারের গন্ধটা পরিচিত।

সামু: হুম।ইমু তুই রান্না করেছিস?

ইমু: হুম।

লিয়া: তুই‌ আবার কষ্ট করে-

ইমু: মন ভালো ছিলোনা তাই।চাচা?

ইদ্রিস: কও মা।

ইমু: ওই পুলিশ অফিসার এখানেই খাবেন তো?

ইদ্রিস: হ মা।

ইমু: যেয়ে ডেকে আনো।সবাই একসাথে খেয়ে যে যার রুমে চলে যাবে।

লিয়া: তুই আমাদের রুমেই‌ থাকনা।

ইমু: না লিয়া।আমি চাইনা আমার জন্য আর তোরা বিপদে পরিস।চাচা আপনি ওনাকে ডেকে আনুন।

ইদ্রিস: যাইতাছি মা।

ইমু খাবার বেরে নিলো।ইদ্রিস চাচাও আদ্রকে নিয়ে এলো।আদ্র ওদের সাথেই খেতে বসলো।

আদ্র: হাই এভরিওয়ান।আমি সাফওয়ান আদ্র।

সামু: হাই আমি সুমাইয়া।

লিয়া: তানহা আনাম লিয়া।লিয়া বলতে পারেন।

আদ্র: আপনি?

ইমু: ফাবিহা ইমরোজ।

আদ্র: অনেক বড় নাম।চাচার কাছ থেকে শুনলাম ইমু,সামু আর লিয়া।এই নামে ডাকলে সমস্যা আছে?

সামু: না না কোনো সমস্যা নেই।

আদ্র: তাহলে এই নামেই ডাকবো।আমাকে আদ্র বলে ডাকতে পারেন।আচ্ছা ইনি(ইদ্রিসকে দেখিয়ে) বলছেন এখানে নাকি ভূত আছে?আপনাদের বান্ধবীকে নাকি ভূতেই মেরেছে?

সামু: হ্যা।কালকে রাতেতো দরজায়-

ইমু: মিস্টার আদ্র আপনিতো আজকেই এলেন।খেয়ে রেস্ট নিন।আর রাতে রুমের বাইরে বের হবেন না।আর কিছু আপাততো না জানলেও হবে।

আদ্র: কৌতুহল বরাবরই বেশি আমার।তাছাড়া পুলিশে কর্মরত আছি আর এই কেসটা আমিই হ্যান্ডেল করবো।তাই সবটাতো আমায় জানতেই হবে মিস ইমু।

ইমু একবার আদ্রের দিকে তাকিয়ে ইদ্রিস চাচার দিকে তাকালো।

ইদ্রিস: স্যার শোনেন-

আদ্র: আদ্র,আদ্র বলে ডাকুন চাচা।আর তুমি করেই ‌বলুন।

ইদ্রিস: আদ্র বাবা তুমি পুলিশ আর শহর দিয়া আইছো তাই এগুলা বিশ্বাস করবানা তা জানি।কিন্তু আমাগো বিশ্বাসের উপরে সব থাকেনা।

আদ্র: আমি বুঝতে পারছি চাচা আমি আপনাদের মাঝে নতুন তাই সবটা বলতে অস্বস্থি হচ্ছে।এটা স্বাভাবিক।কিন্তু সব সত্যি বললে আমার সুবিধা হবে।আর আপনারা যদি কিছু না করেন তাহলে আপনাদেরও সমস্যায় পরতে হবেনা।

ইমু: আপনি তাহলে আমাদের সন্দেহ করছেন তাইতো?

আদ্র: মনে অনেককিছুই আসছে।আচ্ছা এবার বলুন মিস‌ সামু কালকে রাতে কি?আর মিস ইমু,আমায় ‌বিশ্বাস করতে পারেন।

সামু ঢোক গিলে ইমুর দিকে তাকালো।ইমু ইশারায় সম্মতি দিতেই সামু রাতের ঘটনা আদ্রকে খুলে বললো।

আদ্র: তারমানে আপনারা সত্যিই কালকে অশরীরির দেখা পেয়েছেন।আর ওই অশরীরির কথা অনয়যায়ি মৃন্ময়ি আপনি(ইমু)?

ইমু: আমি এখনো বিষয়টা বুঝতে পারছিনা।

আদ্র: আচ্ছা চাচা আপনি বলুনতো এই মৃন্ময়ি আর অনুভবের কেসটা কি?

ইদ্রিস: বাবা এখন যদি বলি ইমু না মৃন্ময়ি আর তুমি অনুভব তা কি বিশ্বাস করবা?

খাওয়ার মধ্যেই ইদ্রিসের কথা শুনে আদ্রের হেচকি উঠে গেলো।ইমি দ্রুত ওকে পানি দিলো।আদ্র পানি খেয়ে স্বাভাবিক হলো।

আদ্র: আপনি কি কোনোভাবে পূনর্জন্মের কথা বলছেন?

ইদ্রিস: হ বাবা।

আদ্র: আপনি মজার মানুষ চাচা।

ইদ্রিস: আমি সত্যিই কইতাছি।

সবাই বিস্ফোরিত চোখে ইদ্রিস চাচার দিকে তাকিয়ে আছে।লিয়া আর সামু একবার ইমু পর আদ্রের দিকে আর একবার ইদ্রিস চাচার দিকে তাকাচ্ছে।এবার আদ্র রেগে গেলো।

আদ্র: ফাইজলামির আর জায়গা পান না?পুলিশের সাথে ফাইজলামি?আমার তো আগেই সন্দেহ হচ্ছিলো আপনাকে।ভদ্রতা বসতো চুপ ছিলাম আমি।এখন যেই অনুভবের ক্যারেক্টার খুজে পাচ্ছেন না সেই আমাকেই অনুভব বানিয়ে দিলেন?আর আপনারা মিস ইমু লিয়া আর সামু?আপনারা এসব টলারেড করছেন?শিক্ষিত হয়েও এইযুগে এসব মানছেন?হাউ ফানি ইয়ার।

ইদ্রিস: আমি কহনো মিছা কথা কইনা।কাইল আমাবশ্যা।তহন-

আদ্র: শাট আপ।আই সে শাট আপ(চিৎকার করে)।আর একটা কথা বললে এখানেই শুট করে দিবো।

ইমু: সরি টু সে বাট এখন আপনি যেটা করছেন সেটা ঠিক হচ্ছেনা মিস্টার আদ্র।

আদ্র: ওহ্ রিয়েলি?তাহলে আপনি এখন আমায় বিশ্বাস করতে বলছেন আপনি মৃন্ময়ি আর আমি অনুভব? উই আর হাজবেন্ড ওয়াইফ?তাহলে চলুন আজকে থেকেই একসাথে থাকি?আমি জানি আমি সুন্দর হ্যান্ডসাম বাট এভাবে ফাসাবেন?নির্লজ্জতার শেষ নেই?

ইমু: ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট আদ্র।আপনি আমাকে অপমান করতে পারেন না।আপনার কোনো রাইট নেই।আর আপনার চেয়ে অনেক ভালোভালো ছেলের কাছে বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছি আমি বাট করিনি।তাই নিজেকে হিরো ভাবা বন্ধ করুন।এটাকে আত্মহংকার বলে।

আদ্র: আপনি আমায় শেখাবেন –

লিয়া: চুউউপ(জোরে)। চুপ করো তোমরা।এটা ঝগড়ার সময় না।দেখুন আদ্র ইদ্রিস চাচা যা বলছে তা যে আমরা সবটা বিশ্বাস করছি তা না।তবে কালকে আমাবশ্যার রাত তাই যখন চাচা বলেছে কালকে সবটা জানতে পারবো তখন আমাদের অপেক্ষা করা উচিৎ।আর ভুলে যাবেন না বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।তাই আমাদের এখন এসব নিয়ে তর্ক না করে ঠান্ডা মাথায় সবটা কিভাবে সমাধান করবো তা ভাবা উচিৎ।

লিয়ার কথায় ইমু আর আদ্র শান্ত হয়ে গেলো।সবাই চুপচাপ খাওয়া শেষ করলো।

আদ্র: আ’ম সরি মিস ইমু।আসলে আমি‌ নরমালি রাগ করিনা বিশ্বাস করুন।কিন্তু এসব উদ্ভট কথা কাহিনি শুনে রাগ উঠে গিয়েছিলো।আর চাচা আপনাকেও সরি বলছি।আপনি আমার বড় তাই‌ এভাবে কথা বলা উচিৎ হয়নি।

ইদ্রিস: আমি কিছু মনে করিনাই‌ বাবা।তোমরা বরং কাজ শেষ কইরা ঘরে যাও।আমি তোমাগো রুমেই পানি দিয়া আইতাছি।

আদ্র: আচ্ছা চাচা।(ইদ্রিস চলে গেলো)ইমু?আমি সত্যিই দুংখিত।

ইমু: আ’ম সরি অলসো।আমারো এভাবে রিয়্যাক্ট করা উচিৎ হয়নি।তবে সেইফটির জন্যই বলছি রাতে রুমের বাইরে বের হবেন না।

আদ্র: তাহলে কোনো সমস্যা হলে বলবো কিভাবে?

সামু আপনি বরং ইমুর মোবাইল‌ নাম্বারটা নিয়ে রাখুন।আপনার পাশের রুমই ওর।

আদ্র: ভালো বুদ্ধি।

আদ্র আর ইমু একে অন্যের নাম্বার নিয়ে রুমের দিকে পা বারালো।রাতে……

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here