মায়াজাল (ভৌতিক গল্প),পর্ব-৫
লামিয়া আক্তার রিয়া
ইমু,সামু আর লিয়া স্কুলে এসেই হেডস্যারের রুমে গেলো।স্যার ওদের দেখে চমকে গেলো।
হেডস্যার: আপনারা? আজকে এসেছেন!!
ইমু: কেনো?আসবোনা?
স্যার: না মানে শুনলাম আজকে নাকি আপনাদের একজনের লাশ পাওয়া গিয়েছে।উমা ম্যাডামের।
ইমু: হুম।তবে আমাদের কাছে দায়িত্বটাই প্রধান।আচ্ছা আজকে আরেকজন যে স্যার আছে উনি এসেছেন?
স্যার: হুম। মতিন স্যার।
ইমু: ডাকুন পরিচিত হই।
হেডস্যার একজন কর্মচারিকে পাঠালেন মতিন স্যারকে ডাকতে।মতিন পান খেতে খেতে হেডস্যারের রুমে ঢুকলো।
মতিন: কি স্যার?ডেকেছেন কেন?
স্যার: মতিন স্যার এরা নতুন স্কুলে যোগ দিয়েছেন।পরিচিত হতেই ডেকেছি।
মতিন: এরা?(ইমুদের দেখিয়ে) একজন নাকি মরছে?কি দরকার মাইয়াগো এত কাহিনি করা?কে কইছে ওই ভুতের বাড়ি থাকতে?কোনো শিক্ষা নাই।
ইমু: শিক্ষা আছে বলেই হেডস্যারের রুমে পারমিশন নিয়ে ঢুকি এবং ভদ্রতার সাথে কথাও বলি।আপনিতো খুব শিক্ষিত।কিন্তু এটা বোধহয় শিখতে ভুলে গিয়েছেন।(মুচকি হাসি দিয়ে)
মতিন: আরে স্যারে তো আমার চেয়ে ছোটো।
ইমু: পদটা আপনার চেয়ে বড়।
মতিন: মাইয়া বেশিই কথা কও তুম-
ইমু: আপনি।আপনি করে বলুন। আমি আর আপনি দুজনেই এই স্কুলের টিচার।তাছাড়া আপনার সাথে আমাদের এমন কোনো সম্পর্ক নেই যে তুমি করে বলবেন।
ইমুর কথায় কিছুক্ষনের জন্য মতিনের মুখ থমথমে হয়ে গেলেও সাথে সাথে পান খাওয়া লালদাঁতগুলো বের করে হাসলো।
মতিন: মাইয়ার বয়সি তো।
ইমু: আমি যতটুকু জানি আপনি এখানে পার্মানেন্ট টিচার না।সরকার থেকে আপনাকে পার্মানেন্ট করা হয়নি।কিন্তু আমি পার্মানেন্ট এবং আগেও ২টা স্কুলে পড়িয়েছি।তাছাড়া আপনার চেয়ে উচ্চপদেই আছি।যাকগে বাদ দিন।আর যেহেতু আপনি একজন শিক্ষক তাই ভদ্রভাবে কথা বলুন।আপনি নাকি বাচ্চাদের ঠিকভাবে পড়ান না?
মতিন: কে বললো?পড়াইতো।
ইমু: শুনলামতো অনেককিছুই।
মতিন: ওই শয়তান পোলাগুলায় বলছে না?
ইমু: আল্লাহ্ মানুষকে শয়তান বলতে বারন করেছেন।আর যেই বলুক মিথ্যে বলেনি তা আমি খোজ নিয়ে জেনেছি।এখন যদি আমি বলি কে বলেছে তাহলে অন্য বাচ্চাদের মতো আপনি তাকেও গায়েব করে দেবেন তাইনা?
ইমুর কথায় উপস্থিত সবাই চমকে গেলো।মতিন মিয়া বিস্ফোরিত চোখে ইমুর দিকে তাকালো।
হেডস্যার: কি বলছেন মেডাম?গায়েব মানে?
ইমু: এই স্কুলটা আপনার আন্ডারে আছে।আর আপনার নাকের ডগা দিয়ে প্রতিনিয়ত কি হচ্ছে আপনি তার খেয়ালই রাখেন না মিস্টার জমিল?
স্যার: আমি কিছুই জানিনা।তবে কয়েকমাস পরপর বাচ্চারা চলে যায়।আমিতো ভেবেছি পরিবার থেকেই আসতে দেয়না।
ইমু: যেয়ে খোঁজ নিয়েছেন?
ইমুর কথায় জমিল ইসলাম মাথা নিচু করলো।
ইমু: তো মিস্টার মতিন?এবার কি বলবেন?
মতিন: দেখেন মেডাম,আমি এসব জানিনা।আমিতো চাকরি কইরা পেট চালাই।এসব আমি জানমু কেমনে?
ইমু: বাচ্চাদের সাথে এই ভাষায় কথা বলা যাবেনা।
মতিন: সরি মেডাম।আমি এখন থেকে খেয়াল রাখবো।এখন উঠছি। ৩য় শ্রেনির ক্লাস আছে।
ইমু: হুম আসুন।
মতিন মিয়া চলে যেতেই সবাই ইমুর দিকে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকালো।
লিয়া: তুই এতকিছু কিভাবে জানলি?তুই তো আমাদের সাথেই ছিলি।
ইমু: (দরজার দিকে তাকিয়ে) কালকে বাচ্চাদের কাছেই জেনেছি।তবে মতিন সাহেব ততটাও ভদ্র না যা উনি দেখান।কোনো কিছুতো আছে যা আমরা দেখতে পাচ্ছিনা।আই হোপ মিস্টার জমিল আমাকে সাহায্য করবেন?
জমিল: অবশ্যই ম্যাম। আমি সবসময় আপনার সাহায্য করবো যতটুকু পারি।কিন্তু মতিন সাহেবের বিরুদ্ধে কোনো-
ইমু: না না আমি শুধু আন্দাজ করেছি।তবে মনে হচ্ছে ঠিক দিকেই যাচ্ছি।এখনই ওনাকে কিছু বলতে হবেনা।
জমিল: আচ্ছা।আমি আছি আপনার পাশে।
ইমু: ধন্যবাদ।
জমিল: আচ্ছা কালকে কি হয়েছে বলুনতো?উমা ম্যামের এইঅবস্থা হলো কিভাবে?
সামু: আরে ও ভুত ভুত করে বের হয়ে গেলো চাচার সাথে-
ইমু: আসলে ওর এখানকার পরিবেশ ভালোলাগেনি তাই রাতেই রওনা দিয়েছিলো গাজিপুরের উদ্দেশ্যে।এখন রাতে কিভাবে কি হলো তা আমরা জানিনা।
জমিল: কিন্তু সুমাইয়া ম্যাম যে ভুত আর চাচার কথা বললো?
লিয়া: আসলে সবাইতো বলে বাড়িটা ভৌতিক তাই আর চাচা মানে ওখানের কেয়ারটেকারের কথা বলেছে।
জমিল: ও আচ্ছা।
ইমু: এবার উঠি।আজকে তো হাফক্লাস।আমাদের মনেহয় দুটো করে ক্লাস আছে।
জমিল: জ্বী।
ইমু: ওকে স্যার আসছি।আসসালামুআলাইকুম।
জমিল: ওয়ালাইকুমআসসালাম।
হেডস্যারের রুম থেকে বের হয়েই লিয়া আর ইমুর কাছে ঝাড়ি খেলো সামু।
ইমু: তোকে কে বলেছে চাচা আর ভুতের কথা তুলতে?
সামু: সত্যিই তো বলছিলাম।
লিয়া: তোকে কেউ বলেছে ওনাকে সত্যি বল?কেন বুঝতে পারছিস না এখানে কাউকেই আমরা এত সহজে বিশ্বাস করতে পারবোনা।
সামু: কি করবো তাহলে আমরা?উমার মতো কি আমরাও মরবো নাকি?
ইমু: আজকে অপেক্ষা কর।কালকে রাতে আমবশ্যা।আর পরশু আমার জন্মদিন যেটা কালকে রাত ১২টার পর শুরু হবে।এখন এই অনুভবটা কে সেটাও জানতে হবে।আশা করি কালকে রাতেই সবটা জানতে পারবো।
সামু: ইমু আমার ভয় করছে।খারাপ কিছু হবেনাতো?
ইমু: ভাগ্যে যা আছে তাই হবে সামু।চল জলদি ক্লাস করিয়ে বাসায় যাই।আবার পুলিশ কখন আসবে বলা যায়না।আমাদের দরকার হতে পারে।
লিয়া: হুম চল।আর সামু এখন একদম স্বাভাবিক থাকবি।নিজেকে সবসময় নিজেই প্রোটেক্ট করার চেষ্টা করবি।আমি জানি তুই পারবি।
সামু: হুম।
সামু মাথা নেরে নিজের ক্লাসের দিকে গেলো।ইমু আর লিয়াও নিজেদের ক্লাসে গেলো।ক্লাস শেষে ওরা বাসায় যেয়ে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরলো।ইদ্রিস মিয়াকে বলে গেলো বিকেলের আগেই যেনো উঠিয়ে দেয়।বিকেলে ইদ্রিস মিয়া ওদের উঠিয়ে দিলে ওরা ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো।
🍀🍀🍀🍀🍀
আদ্রের কীর্তিপাশায় পৌছুতে বিকেল হয়ে গেলো।যেহেতু আগে থানা পরে তাই প্রথমেই আদ্র থানায় গেলো।
আদ্র: মিস্টার নাসিম?
নাসিম: মিস্টার সাফওয়ান?প্লিজ কাম।নাইস টু মিট ইউ।বসুন।এই লাবিব(কন্সটেবল)চা বিস্কিটের ব্যবস্থা করো।
আদ্র: (বসে) থ্যাংক্স।এবার বলুনতো সবটা।
নাসিম: মোবাইলেতো সবটা বলেছিই।তবে তখন অনুমান করেছিলাম এটা রেপের কিন্তু এখন সিওর।
আদ্র: লাশটা দেখা যাবে?
নাসিম: আসলে এখন ওখানে যেয়ে সবটা দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।আপনাকে সন্ধ্যার আগেই জমিদারবাড়ি ঢুকতে হবে।সন্ধ্যার পরে ওই বাড়ি থেকে কেউ বের হয়না আর না কেউ ওই বাড়ির আশেপাশে যায়।
আদ্র: তারমানে সবাই এই জমিদারবাড়ির ভুতে বিশ্বাসী? হাউ ফানি মিস্টার নাসিম।
লাবিব: ফানি না স্যার।সবটাই সত্যি।(চা নিয়ে এসে) স্যার যেতে যেতে কেনো ওই ভুতের বাড়িতেই উঠলেন?
আদ্র: হোয়াট ননসেন্স।পুলিশরা এসব বললে সাধারন জনগন কি বলবে?
লাবিব: স্যার সবটাই বুঝবেন।যদিও ওই বাড়িতে যেতে দেয়ার ইচ্ছে নেই তবে আপনার সবটা জানতে ওখানেই যেতে হবে।এবার খেয়েনিন স্যার। আপনাকে বাসায় পৌছে দিয়ে সন্ধ্যার আগেই চলে আসবো।
আদ্র ছোট একটা নিশ্বাস ফেললো।
আদ্র: আচ্ছা।নাসিম সাহেব?
নাসিম: জ্বী?
আদ্র: কেসটার ফাইলতো রেডি করা আছে তাইনা?
নাসিম: হ্যা।
আদ্র: আপনি কালকে আসবেন থানায়?
নাসিম: হুম আসবো।তখন সবটা আপনার হাতে তুলে দিবো।
আদ্র: ওকে তাহলে এখন আসছি।চলুন লাবিব সাহেব।
লাবিব: চলুন স্যার।
লাবিব আদ্রের ট্রলি নিয়ে জিপে উঠলো।আদ্রও লাবিবের পেছনে জিপে উঠলো।লাবিব গাড়ি চালাতে লাগলো।
আদ্র: এবার বলুনতো লাবিব জমিদারবাড়ির ব্যাপারটা কি?
লাবিব: আসলে স্যার এটা কয়েকশ বছরের পুরোনো জমিদারবাড়ি।( এটা গল্পের স্বার্থে) জমিদার কাহানাফ এই জমিদারবাড়িটা নির্মান করান।তিনি খুব দয়ালু আর নিষ্ঠাবান জমিদার ছিলেন।এরপরের খবর জানিনা।তবে যতটুকু শুনেছি ওই বাড়ির দুইছেলে আর এক বউকে খুন করা হয় বা তারা কোনোভাবে মারা যায়।জমিদারবাড়িতেও কোনোভাবে আগুন লেগে যায়।যদিও চারপাশের লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলে কিন্তু কেউ বেঁচে ছিলোনা।যদিও এখন জমিদারবাড়ি রিপেয়ার করে নতুন করা হয়েছে।
আদ্র: কে করেছে?
লাবিব: কয়েকবছর আগে একজন লোক এসে বললো তিনি নাকি ওইবাড়ির চাকর ছিলো।যদিও বিশ্বাস করা হয়নি কিন্তু খোঁজখবর নিয়ে ওনাকে আর ওনার স্ত্রীকে ওই বাড়ি দেখাশুনার কাজ দেয়া হয়।দুই/তিন বছর আগে ওনার স্ত্রী মারা যায়।তারপর থেকে একাই আছে।
আদ্র: হুম বুঝলাম।ভিষন ইন্টারেস্টিং।
লাবিব: তবে যাই করেন স্যার রাতে বাইরে বের হবেননা প্লিজ।একজন কন্সটেবল না আপনার ছোট ভাই হিসেবে বলছি ভাবতে পারেন।
আদ্র: বাহ্ তাহলে এখানে ছোটভাই পেলাম।এখানে কার সাথে আছো?
লাবিব: একাই।বাবা মা অনেকআগেই মারা গিয়েছে।মামার কাছে ছিলাম।কিন্তু এখানে একাই আছি।বাসা থানা থেকে ১৫/২০ মিনিট দূরেই।
আদ্র: আচ্ছা।জমিদারবাড়ি যেতে কতক্ষন লাগবে?
লাবিব: এইতো আর ১০ মিনিটের মতো।আপনার জন্য কালকে সকালেই একটা গাড়ি পাঠিয়ে দিবো।না না আমিই এসে সকালে নিয়ে যাবো।আপনিই কালকে গাড়ি নিয়ে আসবেন।আপনি পারেন তো গাড়ি চালাতে?নয়তো ড্রাইভার-
আদ্র: আরে আরে এত চিন্তা করতে হবেনা।তুমি ড্রাইভ করো।সন্ধ্যা কিন্তু হয়ে এলো বলে।
লাবিব: ওইযে জমিদারবাড়ির উচু মিনারটা দেখা যাচ্ছে।
আদ্র তাকিয়ে দেখলো একটা সোনালী রঙের মিনার দেখাচ্ছে।আদ্র মোহিতো হয়ে চেয়ে রইলো।
লাবিব: স্যার?এসে গেছি।
আদ্র: হ্যা? ওহ্ হ্যা নামো।ব্যাগটা-
লাবিব: আমি নিচ্ছি।চলুন।
আদ্র লাবিবের সাথে জমিদারবাড়ি ঢুকলো।আদ্রের কাছে বাড়িটা খুব সুন্দর মনে হচ্ছে।সবকিছু ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে।খুব আপন মনে হচ্ছে সব।আদ্র বাড়িতে ঢুকেই সামনে তাকিয়ে দাড়িয়ে গেলো।
আদ্র: তুমি?
চলবে………..