অতলস্পর্শ,পার্ট_০২

অতলস্পর্শ,পার্ট_০২
জান্নাতুল বিথী

বাবা আমাকে সেই কখন থেকে ডাকছে।কিন্তু তাতে আমার কোনো রকমের হেলদোল নেই।আমি আমার মতো করে মোবাইল টিপতেছি।এই মুহূর্তে কুশান ভাইয়ার সামনে যাওয়ার মতো ইচ্ছা আমার নেই।শুধু শুধু আমাকে এখন অপমান করবে তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে।আর তার সাথে যদি একবার আমার ভাই জানে তাহলে তো হলোই।হঠাৎ ভাইয়ার ডাকে আমার হুশ আসে।ভাইয়া ডাকছে তার মানে সে এখনআমার রুমের দিকে আসবে।ভাইয়া রুমে এসে যদি দেখে আমি শুয়ে শুয়ে মোবাইল দেখি আর তাদের ডাকের সাড়া দেই না তাহলে আজ আমার খবর করে ফেলবে।কি করবো কি করবো ভাবতে ভাবতেই মাথায় আইডিয়া আসলো।ভাইয়া জানে কোন কাজে থাকলে আমি তাদের ডাকের সাড়া দেই না।আইডিয়াটা মাথায় আসতেই আমি মুচকি হেসে এক লাফে উঠে গিয়ে টেবিলে বসে পড়তে থাকি।যদিও এখন পড়ার সময় না তারপরো পড়তে বসেছি আমি।এমন সময় ভাইয়া আবার ডাক দেয় আমার রুমের সামনে দাড়িয়ে..

“জিহু ওই জিহু কই তুই।”(জিদান)

আমি কিছুটা বিরক্তি ভাব নিয়ে বলি..

“উফফফ ভাইয়া সমস্যা কি একটু কি শান্তি মতো পড়তেও দিবে না নাকি।??”

আমার কথা শুনে ভাইয়া টাস্কি খেয়ে যায়।তারপর কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে..

“এই টাইমে তোর কিসের পড়া হুমম।মজা করছ আমার সাথে।??”

ভাইয়ার কথা শুনে এবার আমার কিছুটা ভয় কাজ করে।যাই হোক না কেনো আমার বড় ভাই।তার সাথে সব সময় হাসি ঠাট্টা করলেও ভাইয়া সব ব্যাপারে মজা করা টা একদম পছন্দ করে না।তার কথা হলো মজা করার সময় প্রান খুলে মজা করবে আর কাজ করার সময় মন উজাড় করে কাজ করবে।ভাইয়া বেশির ভাগ সময়ই ব্যস্ত থাকে তাই আমি তাকে ব্যস্তকুমার বলে ডাকি।..

“ভাইয়া আমি তোমার সাথে মজা কেনো করতে যাবো। আমি একটা ইম্পরট্যান্ট অংক করতেছি।মিতু করে দিতে বলছে তাই।”

মিতুর দোষ দিয়ে দিলাম।এবার কি হয় তাই দেখার পালা।ভাইয়া এবার অনেকটা নরম গলায় বলে..

“জিহু ম্যাথ টা পরে করলে হয় না।বের হয়ে দেখ কে আসছে।??”

“আহা যার সাথে দেখা করার ভয়ে এতো অভিনয় করছি এখন তার সাথেই দেখা করতে বলছে হুহহহহ বয়েই গেছে।”

বিরবির করে কথাটা বলে থামি।এবার অনেকটা জোরে বলে উঠি..

“ভাইয়া একটা ইম্পরট্যান্ট ম্যাথ করতেছি আমি।এই মুহূর্তে মুর্শিদাবাদের নবাব সিরাজ উদদোলা আসলেও তো আমি যাবো না আর তুমি আসছো কোথাকার কাকে নিয়ে।প্লিজ একটু শান্তি মতো ম্যাথ টা করতে দিবে।?”

কথাটা বলেই জিব দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে নেই।অনেক জোরে কথাটা বলছি।যদি কুশান ভাইয়া শুনে তাহলে আমার আস্ত রাখবে না।আমার মনে পড়ে যায় ছোট বেলার কথা।

যখন আমার বয়স ৮ বছর তখন একদিন আমি আর আমার সাথে একটা মেয়ে একটা ছেলে ছিলো।যদিও এখন তাদের নাম আমার মনে পড়ছে না।যাইহোক তাদের দুজনের সাথে কথা বলার সময় এক ফাকে আমি অনেক জোরে ছেলেটার সাথে কথা বলি।ছেলেটা সহ সবাই সেখানে চমকে উঠে।সেখানে কুশান ভাইয়াও ছিলো।ভাইয়া রেগে গিয়ে এসে আমার হাত ধরে টেনে তার রুমে নিয়ে যায়।দরজা বন্ধ করে আমার সামনে হাটুগেড়ে বসে বলে..

“তুই এতো জোরে কথা বললি কেনো.???”

পরিস্থিতি খারাপ দেখে আমি নিচের দিকে তাকিয়ে থাকি।আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে ভাইয়া আরো রেগে যায়।আমাকে ধমক দিয়ে বলে..

“কি হলো কথা বল।??”

আমার সারা শরীর কেপে উঠে।তাও ভাইয়ার দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছি না।নিচের দিকে তাকিয়েই বলি…

“ভুল হয়ে গেছে আর এমন হবে না।”

এ কথা শুনে ভাইয়া উঠে দাড়িয়ে যায় আর বিছানার এক কোণে আরাম করে গিয়ে বসে বলে..

“১০০ বার কানে ধরে উঠবস কর।তাহলেই তোকে ক্ষমা করবো।”

ভাইয়ার কথা শুনে এবার আমার প্রায় কান্না আসছে।কাদো কাদো ফেস করে তাকে বলি…

“ভাইয়া আমি এখনো কত্তো ছোট তুমি আমাকে এভাবে কষ্ট দিবে।আর হবে না বললাম তো।”

“দেখ জিহু আমি তোর এতো কথা শুনতে চাই না।যা করতে বলছি ঠিক তাই কর।অন্যথায় তোকে আমি কি শাস্থি দেবো তুই কল্পনাও করতে পারবি না।”

শেষে উপায় না পেয়ে কানে ধরা লাগছে।১০০ বারের মধ্যে একবারও মাফ করে নাই।কতো নিষ্ঠুর সে।শাস্থি শেষ হতেই সে নিজে এসেই আবার আমার পায়ে তেল মালিশ করে দিছে।এই শাস্থির পরে ৩ দিন আমি তার সাথে কোনো কথা বলি নাই।ভাইয়া অনেক বার সরি বলছে। আমাকে চকলেট কিনে দিছে।কতো ভাবে রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু আমি ততো আমিই।শেষে ভাইয়া উপায় না পেয়ে আমাকে আবার ধমক দেয়।আর বলে যদি তার সাথে কথা না বলি তাহলে আরো বড় শাস্থি দিবে।ছোট বেলার কথাটা মনে পড়তেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।কুশান ভাইয়া ছোট বেলা থেকেই আমাকে অনেক শাষন করতো আর আদরও করতো।

জিদান লিভিংরুমে আসতেই দেখে কুশান সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে মোবাইল স্কোল করতেছে।এতক্ষন তার মা বাবা ছিলো।কিন্তু এখন কেউ নেই।মা হয়তো কিচেনে আর বাবা রুমে নয়তো বাহিরে গেছে।জিদান কুশানের দিকে এগিয়ে এসে বলে..

“কুশান চল বাইরে যাই জিহু আসবে না।পড়তে বসছে এখন।পড়তে বসলে সে একদিকে আর দুনিয়া আরেক দিকে।”

জিদানের কথা শুনে কুশান উঠে দাড়ায়।মোবাইল প্যান্ট এর পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে বলে..

“তোর বোন মনে হচ্ছে কথা বলছে একটু বেশিই জোরে তাই না।??”

কুশানের কথা শুনে জিদান আমতা আমতা করে বলে..

“আসলে পড়ার সময় ডিস্টার্ব করছি তো তাই এতো জোরে চিৎকার করছে।”

কুশান আর কোনো কথা না বলে চলে আসে ওই বাড়ি থেকে।অনেক রাগ লাগে তার।যাকে একটি বার দেখার জন্য ছুটে গেলো সেই কিনা তার সামনে আসে নাই।কিন্তু নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করে বাসায় চলে আসে সে।বাড়িতে ঢুকতেই তার মা বলে..

“কিরে কুশান কই ছিলি বাবা.???”

“চাচ্ছুর সাথে দেখা করতে গেছি মা।”

তার মা আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই কুশান সেই স্থান ত্যাগ করে।

জৈষ্ঠ মাসের প্রথম দিকে।তীব্র গরমে চারদিকে গমগমে ভাব।গ্রামাঞ্চল হলে হয়তোবা এতো গরম পড়তো না।কোলাহল যুক্ত এই শহরে সব কিছুর পরিমানই বেশি।তেমনি গরমটা যেনো একটু বেশিই।চারদিকে ভ্যাপসা গরমে কুশান পাগল প্রায়।যখন সে আমেরিয়ায় ছিলো কখন এতো গরম ছিলো না।অবশ্যই এটা বাংলাদেশ বলে কথা।মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হলো কুশান।তাওয়াল হাতে নিয়ে বেলকনিতে যেতেই তার চোখে পড়ে একটা মেয়েকে।নীল থ্রি-পিছ পরা চুল গুলো সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হইছে।ওড়নার একটা অংশ ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে।কিন্তু তার সেই দিকে কোনো হেলদোল নেই।সে তো ফোনে কথা বলতেই ব্যস্ত।কুশানের ঠিক বিপরীত দিকে ফিরে মেয়েটা দাড়িয়ে।তার ফোনে কথা বলার স্টাইল দেখে কুশান আরও মুগ্ধ হয়ে যায়।হাত নাড়িয়ে মৃদু স্বরে কথা বলছে।যদিও কথা গুলো ঠিক কি বলছে তা কুশান জানে না।সেদিকে তাকিয়ে কুশান আনমনেই বলে উঠে…

“নীলপরী।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here