অতঃপর প্রণয়,পর্ব:৬,৭
অরিত্রিকা আহানা
পর্ব:৬
বিয়ের পরের দিনের পরদিনই আয়াজ চলে গেলো।দুপক্ষের মেহমানে ভর্তি পুরো বাসা!ইরিনের মনে হচ্ছে সে যদি আয়াজের মত কাজের দোহাই দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারতো তাহলে খুব ভালো হত!এদের অত্যাচার থেকে রেহাই পাওয়া যেত।রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পর্যন্ত পারে না এদের জন্য,চিৎকার চেঁচামেচিতে বাড়ি উঠিয়ে ফেলছে।
তারপর প্রায় দুইমাস যাবত পরীক্ষা চললো ইরিনের।এবার অনেক পরিশ্রম করেছে সে।পরীক্ষা শেষেও বিরতি নেই।ভর্তি পরীক্ষার জন্য আগের চেয়ে দ্বিগুন পরিশ্রম করতে হচ্ছে।সময় কোন দিক দিয়ে কেটে যায় টেরই পায় না।তবে মাঝে মাঝে অবসর পেলে বিয়ের ছবিগুলো দেখে আর হাসে!আয়াজের বিভিন্ন ভাবে পোজ দিয়ে তোলা ছবি।হলুদে মজা করতে না পারলেও বিয়েতে একেবারে জমিয়ে দিয়েছে!নাচানাচি থেকে শুরু করে লুডু খেলা পর্যন্ত সব করে ফেলেছেন!আর ইরিন? আয়াজ যেই কয়দিন ছিলো সেই কয়দিন বইয়ে মুখ গুঁজে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিয়েছে সে কিন্তু মাথায় কিছু ঢোকাতে পারে নি।
আজকে সকাল থেকে ভীষণ টেনশনে আছে ইরিন।তার এইচএসসির রেজাল্ট বেরোবে।যোহরের নামাজের বিছানায় বসে আছে সে।এখন বাজে দেড়টা,দুইটায় রেজাল্ট বেরোবে।মায়মুনা বেগম মেয়ের অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেছেন,মেয়ে যদি ফেইল করে বসে?..বিয়ে দেবেন কি করে?লজ্জায় তো উনার মাথা কাটা যাবে।আয়াজের মতো ভালো একটা ছেলের সাথে বিয়ে হবে,মেয়েকে শিক্ষিত হওয়া দরকার।
ইরিন রেজাল্টের জন্য মেসেজ পাঠিয়ে বসে আছে।হাত পা কাঁপছে ওর।এখনো রিপ্লাই আসে নি।একমিনিট এর ভেতর মেসেজ টিউন বেজে উঠলো।আল্লাহ আল্লাহ করে মেসেজ ওপেন করলো।
রেজাল্ট দেখে পাক্কা তিরিশ সেকেন্ডের মত হ্যাং মেরে বসে ছিলো!তারপর পুরো বাসা কাঁপিয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো।ওর চিৎকারে মায়মুনা বেগম ভয় পেয়ে গেছেন,ছুটে এলেন মেয়ের কাছে।মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,”রেজাল্ট কি আসছে মা?..চিৎকার দিলি কেন?..খারাপ কিছু?”
ইরিন মায়ের গলা জড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠে বলল,”আমি এ প্লাস পেয়ে গেছি আম্মা।”
বলতে বলতে কেঁদে ফেললো সে।ঠিক তখন ওর ফোনে আবারও মেসেজ টোন বেজে উঠলো।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো টেলিটক থেকে মাত্র মেসেজ এসেছে।তাহলে কি সে স্বপ্ন দেখছিলো এতক্ষন?..হায় আল্লাহ!দিবাস্বপ্ন?এটা কি করে হয়?
নাহ!আবার দেখলো রেজাল্ট ঠিকই আছে। তাহলে প্রথম মেসেজটা পাঠালো কে?ও ফোন হাতে নিয়ে সেই নাম্বারে কল করলো,কিন্তু রিসিভ হলো না।
মায়মুনা বেগম সন্দিগ্ধ গলায় বললেন,
—“কাকে ফোন করছিস?রেজাল্ট কি ভুল এসেছে?”
—“রেজাল্ট ভুল হবে কেন?আমি নিজে মিলিয়ে দেখেছি আমার রোল নাম্বার রেজিট্রেশন নাম্বার, এই যে দেখো?”
মায়মুনা বেগমের দিকে ফোন বাড়িয়ে দিলো সে।মায়মুনা বেগম নিশ্চিন্ত হয়ে বললেন,”তাহলে ফোন করলি কাকে?”
অপরিচিত নাম্বারটা কার ইরিন জানে না।মিথ্যে বলল সে,
—“আমার এক বান্ধবীকে।ওর রেজাল্ট জানার জন্য!
—“ফোন ধরে নি?”
—“উহু!…এখন তুমি সোজা হয়ে দাঁড়াও তো আমি সালাম করবো।আব্বা কোথায়?”
মায়মুনা বেগম মেয়ের মাথায় চুমু খেয়ে বললেন,”তোর আব্বা মসজিদে।”
রাতের বেলা আবার সেই অপরিচিত নাম্বারে ডায়াল করলো ইরিন।দুবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো।ইরিন বিনয়ী কন্ঠে সালাম দিয়ে বলল,
—“এই নাম্বার থেকে দুপুরে আমার ফোনে মেসেজ এসেছে!”
—“হ্যাঁ তো?”
—“আয়াজ ভাই আপনি?”
—“হ্যাঁ আমি। রেজাল্ট পেয়ে ভাবলাম তোকে মেসেজ পাঠিয়ে দেই।”
ইরিনের কি যে খুশি লাগছে সে বলে বোঝাতে পারবে না।আবার দুঃখও লাগছে আয়াজ তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে না কেন?
—“তুই কি আর কিছু বলবি?”
—“না।”
—“তাহলে রাখি।”
—“শুনুন?”
—“আবার কি?”
—“আপনি কিছু বলবেন না?”
—“আমি আর কি বলবো? ভালো রেজাল্ট করেছিস ভালো কথা।ভর্তি পরীক্ষার জন্য মন দিয়ে পড়াশোনা কর।আসল চ্যালেঞ্জ ঐখানে।ভালো রেজাল্ট করে কোথাও চান্স না পেলে সেই রেজাল্টের কোন মূল্য থাকবে না।সুতরাং ঢিলেমি করলে চলবে না।প্রত্যেকটা মুহূর্ত কাজে লাগাতে হবে।ঠিক আছে?”
—“ঠিক আছে।”
—“রাখি আমি।খোদা হাফেজ!”
—“খোদা হাফেজ।”
ইরিন ফোন রেখে চুপ করে রইলো।ঠিকই বলেছে আয়াজ ভালো রেজাল্ট করে ভর্তি পরীক্ষায় কোথাও চান্স না পেলে মান ইজ্জত শেষ।এবার থেকে আরো অনেক বেশি করে পড়াশোনা করতে হবে তাকে।সবাই নিশ্চই অনেক আশা করে আছে তার ওপর।
অবশেষে জান লাগিয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা ফল ইরিন পেলো, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধা তালিকায় সাতানব্বই তম হয়েছে সে।পুরো এপার্টমেন্টে খুশির রোল পড়ে গেছে।ইরিনের বাবা পুরো মহল্লার লোকজনকে মিষ্টি খাইয়েছেন।উনার মেয়ে যে এত প্রতিভাবান উনি জানতেনই না।মায়মুনা বেগম স্থির করে ফেলেছেন,মেয়ে যতদূর পড়তে চায় পড়বে।মেয়ের অমতে বিয়েশাদী দেবেন না।এত ভালো রেজাল্ট করেছে ভাবতেই উনার বুকটা ভরে যাচ্ছে।
রেজাল্ট বেরোনোর সপ্তাহ খানেক পর আয়াজ বাসায় এলো।ইদানীং তার ভীষণ ব্যস্ত সময় যাচ্ছে।প্রিলিতে চান্স পেয়ে গেছে সে,বাকি আছে রিটেন আর ভাইবা।ব্যস্ততার জন্য এই কয়েকমাসের মাঝখানে মাত্র একদিন এসেছিলো,তাও সোহেলির অসুস্থতার কথা শুনে,এছাড়া আর কোন ছুটি পায় নি।
বিকেল বেলা ছাদে উঠলো ইরিন।আয়াজকে দেখে চমকে গেলো।দিনদিন কি আরো সুন্দর হয়ে যাচ্ছে নাকি মানুষটা?..আর এভাবে কেন এসেছে? ডাক্তার মানুষ!পরনে একটা শর্টস আর টিশার্ট।কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে।মনে হচ্ছে সদ্য যৌবনে পদার্পণ করা টগবগে তরুণ!আয়াজ ওকে দেখতে পায় নি।
ইরিন ছাদের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।এতদিন বাদে আয়াজের সাথে দেখা,সে নিশ্চই ইরিনের রেজাল্টের খবর পেয়েছে?
ছাদে উঠে চুপচাপ গিয়ে রেলিং এর ধার ঘেষে বসলো সে।সাথে সাথেই আয়াজ ধমকে উঠলো।
—“বাদরের মত ঝুলে বসেছিস কেন?তুই কোনদিন মানুষ হবি না তাই না?..এখনো দাঁড়িয়ে আছে।..নাম!”
ইরিনের দৃষ্টি ওর ফর্সা পায়ের মিশকালো লোমগুলোর দিকে,গোড়ালির ওপর থেকে হাটুর সামান্য নিচ পর্যন্ত! উফফ!..হার্ট এটাক করে ফেলবে সে।এভাবে শর্টস পরে ছাদে উঠার কি দরকার?..দেখানোর জন্য?
—“এই নামতে বলেছি না তোকে?..নাম!”
ইরিন নেমে গেলো।কোন প্রতিউত্তর দিলো না।আয়াজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে আছে।ইরিনের মনে মনে আনন্দ হচ্ছে।আয়াজের এর কাছে সরে এসে বলল,”কবে এসেছেন?”
—“তুই জানিস না?”
—“আমি জানবো কি করে?”
—“তুতুরীকে চকলেট দিয়েছিলি কেন?”
ইরিন শুকনো ঢোক গিলল।তুতুরীকে বলেছিলো আয়াজ ছাদে এলে সে যেন ইরিনকে চুপিচুপি এসে বলে যায়।কিন্তু তুতুরী সে কথা আবার আয়াজকে বলে দিয়েছে।ইরিন লাজুক ভাবে হাসল।বাচ্চা মেয়েটাকে বলাটাই ওর উচিৎ হয় নি।আমতা আমতা করে বলল,
—“আসলে আপনার সাথে জরুরী আলাপ ছিলো।আপনি ব্যস্ত মানুষ তাই তুতুরী কে বলেছিলাম আপনি ছাদে এলে যাতে আমাকে ইনফর্ম করে।”
—“ছাদে ইনফর্ম করার দরকার কি?বাসায় গেলি না কেন?”
মেহরিন বিড়বিড় করে বলল,”বিয়ের আগে শ্বশুরবাড়ি বেশি যাওয়া ভালো না।” কিন্তু শব্দ করে বলল,
—“আমি তো আপনাদের বাসায় যাবো না।আপনার সাথে না আমার ঝগড়া হয়েছিলো?”
—“নাটক করছিস? ঠাস করে একটা মারবো!ফাজিল!”
ইরিন আশাহত হলো।আয়াজ তো সেই আগের মতই ব্যবহার করছে।সে কি ইরিনের ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাওয়ার খবরটা জানে না?
—“আচ্ছা বাদ দিন।আপনার বান্ধবী শিলা কেমন আছে?..ঐ যে যাকে আপনি আপনার রেজাল্টের দিন নীল একটা জামদানী গিফট করেছিলেন।”
—“ওর বিয়ে হয়ে গেছে।হাজবেন্ডের সাথে কানাডা চলে গেছে।”
ইরিন শুকনো কন্ঠে বলল,”ওহ!”
—“তুই ওর কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন?”
—“এমনিতেই, উনি ঢামেক এর ছাত্রী না?”
—হ্যাঁ।তো?”
—“কিছু না।”
আয়াজ আবারও ফোনে মনযোগ দিলো।ইরিনের বিরক্ত লাগছে।আয়াজকে ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে।ইরিনের রেজাল্ট নিয়ে একটা কথাও বলছে না সে?ইরিন উশখুশ করে বলল,
—“আমি ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেয়েছি আয়াজ ভাই।”
—“শুনেছি।বাসায় আসার পর ভাবী বলেছে।”
—“সাতানব্বই তম হয়েছি।”
—“হুম।”
—“কি হুম?..আপনি কি আমার কথা শুনেছেন?..আমি সাতানব্বই তম হয়েছি।”
—“শুনেছি।”
—“না শোনেন নি।এত ভালো একটা কথা বললাম আপনাকে আপনি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন?”
আয়াজ বিরক্ত গলায় বলল,”তো আমি কি করবো মাথায় তুলে নাচবো তোকে?…আজব!এতবার বলার কি আছে?
—“আমি মাত্র দুবার বলেছি।”
—“তোর দুবার বলাটাই আমার দুশোবার বলার চেয়ে বেশি বিরক্ত লেগেছে।”
—“আপনি এত রেগে যাচ্ছেন কেন?”
—“রাগবো না তো কি করবো?…শো অফ করছিস কেন?.. চান্স পেয়েছিস ভালো কথা,এখানেই তো সব শেষ নয়? আগে পাশ করে বেরো।এখনই নাচানাচি করছিস কেন?এত সহজ না মেডিকেল লাইফ!
ইরিনের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।শিক্ষা হয়ে গেছে ওর।আয়াজ বিরক্ত কন্ঠে বলল,
—-“তুই কি বলতে এসেছিস বলে বিদায় হ।”
ইরিন জবাব দিলো না,হাঁটা ধরলো।নিজেকে কি ভাবে আয়াজ?সে কি আরবের খোরমা খেজুর? নায়ক সালমান খান? নাকি ওমার বোরকান আল গালা? ইরিন আর কখনো তার সাথে কথা বলবে না।নিজের মত থাকবে সে, আয়াজ থাকুক তার ভাব নিয়ে।ওকে ফিরে যেতে দেখে তড়িৎগতিতে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো আয়াজ।ইরিনকে এভাবে বলা ঠিক হয় নি তার।ইরিনের সাথে ঝগড়া করতে করতে সব কিছু নিয়ে ঝগড়া করার অভ্যেস হয়ে গেছে তার।কিন্তু এইমুহূর্তে ইরিনকে এভাবে হার্ট করা একদমই উচিৎ নয় নি।নরম কন্ঠে বলল,
—“যাচ্ছিস কেন?”
—“কি বলতে এসেছিলাম ভুলে গেছি।”
আয়াজ দুষ্টু হেসে বলল,
—“ভুলে গেছিস?এত ভুলে যাস কেন তুই?..তোর কি ডিসোসিয়েটিভ অ্যামনেশিয়া?..ওড়না পড়তে ভুলে যাস,চেইঞ্জ করার সময় দরজা বন্ধ করতে ভুলে যাস,কি বলতে এসেছিস সেটা ভুলে যাস!মন কোথায় থাকে?”
তবে ইরিনের রাগ পড়লো না।নাকমুখ লাল করে বলল,
—“অ্যামনেশিয়া কি না জানি না,তবে বুঝেন তো গাধাটাইপ স্টুডেন্ট ব্রেইন অতো শার্প না,তাই সব ভুলে যাই।”
—“আমি কখন বললাম তুই গাধা টাইপ স্টুডেন্ট?”
—“আপনি সরুন আমার সামনে থেকে।আমি নিচে নামবো।”
—“না,এখন তুই নামতে পারবি না।হুট করে আমাকে একটা কথা বলে ব্লেইম করে দিলি।উইদআউট এক্সপ্লেনেশন তো তুই চলে যেতে পারবি না।”
ইরিন হাত জোড় করে মাফ চাইবার ভঙ্গি করে বলল,
—“আমি সরি আয়াজ ভাই,আমার ভুল হয়ে গেছে।আমি আর কখনো এমন বেফাঁস কথা বলবো না।এবারের মত মাফ করে দিন।”
ওর সূক্ষ্ম তিরস্কারটা ধরতে আয়াজের সময় লাগলো না।ইরিনের রাগের পরিমানটা আন্দাজ করে ফেললো।মুচকি হেসে বলল,
—“আচ্ছা যা সরি।”
—“আমি আপনাকে কিছু বলেছি?”
ইরিন আবার হাঁটা ধরলো।আয়াজ আবার তার পথ আটকে দাঁড়িয়ে বলল,
—“সরি বললাম তো।”
—“আপনি আমার সামনে থেকে সরুন।”
—“না।আগে বল তুই সরি এক্সেপ্ট করেছিস?”
—“না করি নি।আমি কষ্ট পেলে তারপর তো সরি এক্সেপ্ট করবো? আপনি আমার কে যে আমি আপনার কথায় কষ্ট পাবো?”
—“ইরিন?”
—“ইয়েস।ইউ আর নাথিং টু মি।”
আয়াজের মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেলো।ইরিন কি বদলে যাচ্ছে? আগে তো এমন ছিলো না? তার সাথে অনেক ঝগড়া হয়েছে আয়াজের কিন্তু এমন কথা তো আগে কখনো সে বলে নি? তাহলে? বিয়েতে হ্যাঁ বলে কি কোন ভুল করেছে আয়াজ? ইরিন যদি রাজী না হয়?দীর্ঘশ্বাস ফেললো আয়াজ।হতে পারে!ইরিনের জগৎ আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে।ছোটবেলার মত আয়াজের সাথে পাগলামি দুষ্টুমি তার নাও ভালো লাগতে পারে।মলিন মুখে বলল,
—“সব সময় উলটো বুঝিস কেন তুই আমাকে? আমি কি তোর খারাপ চাই?”
ইরিন জবাব দিলো না।আয়াজ সামনে থেকে সরে গিয়ে বলল,
—” ঠিক আছে যা তোর যেখানে মন চায় যা।”
ইরিন কিছুক্ষন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো।তারপর চুপচাপ নেমে গেলো।ফিরেও তাকালো না।
আয়াজ বিষন্ন দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে!।মন খারাপের বৃষ্টি!
.
.
চলবে
অতঃপর প্রণয়
অরিত্রিকা আহানা
পর্ব:৭
দুপুরের দিকে মায়মুনা বেগম ঘরের দরজা বন্ধ করে শুয়ে আছেন।উনার প্রেশার বেড়ে গেছেন,সকালে উনি ইরিনের গালে সটাং করে চড় বসিয়ে দিয়েছেন।ওকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে উনি হয়রান হয়ে গেছিলেন,শেষে আর রাগ সামলাতে পারেন নি।ইরিন কিছুতেই ভর্তি হতে যাবে না।এদিকে আজকে লাস্ট ডেইট।অথচ সে গোঁ ধরেছে মেডিকেলে পড়বে না।ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে জুওলজি পেয়েছে,ওটা নিয়েই পড়বে।হঠাৎ করে ওর এমন মতিভ্রম হলো কেন সবাই বুঝতে পারছে না।আয়াজের বাবা হেলাল সাহেব নিজে এসে বুঝিয়ে গেছেন,তবুও তার সিদ্ধান্ত বদল হলো না।
ঘড়িতে কাটায় কাটায় আড়াইটা বাজে। কলিংবেল বেজে উঠলো।তার সাথে একবার নকও হলো। ইরিন দরজা খুলতে গেলো।মায়মুনা বেগম ঘর আটকে বসে আছেন।উনি বেরোবেন না।
আয়াজকে দেখে ইরিন চমকালো না।তার কেন জানি মনে হয়েছিলো আয়াজ আসবে!ওকে ঝাড়ি মেরে বলবে কি পাগলামি শুরু করেছিস তুই? হ্যাঁ! ক্লান্ত,বিধ্বস্ত চেহারা নিয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আয়াজ।কোন রকম ভনিতা ছাড়াই বলল,
—“রেডি হয়ে আয়।”
—“কেন?…আমি এখন কোথাও যাবো না।”
—“আমার মেজাজ খারাপ করিস না ইরিন!যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়।”
ইরিন রেডি হতে চলে গেলো।ফিরে এসে দেখলো আয়াজ সোফায় বসে আছে।
—“রেডি?”
ইরিন হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
গাড়ি নিলো না আয়াজ।রিক্সা আগেই ঠিক করে রেখেছিলো।বাসার নিচে দাঁড় করিয়ে উপরে উঠে এসেছে সে।ইরিনকে নিয়ে রিক্সায় উঠে বসলো।ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে এসে রিক্সা থামলো।রিক্সা থেকে নেমে রাস্তা পার হওয়ার সময় ইরিনের ডান হাত চেপে ধরে রাস্তা পার করলো।ইরিনের লজ্জা লাগছে।এতবড় মেয়েকে কেউ ধরে ধরে রাস্তা পার করায়? ফিসফিস করে বলল,
—“আমার হাত ছাড়ুন আয়াজ ভাই।আমি রাস্তা পার হতে পারবো।”
আয়াজ ছাড়লো না।এমনকি ইরিনের কথার জবাবে কোন কথা বললো না।গেটের সামনে এসে হাত ছেড়ে দিলো।তারপর দুজনে একসঙ্গে ভেতরে ঢুকলো।
ভালোলাগা,আবেগ,আনন্দ,লজ্জা সবমিলিয়ে অদ্ভুত এক উত্তেজনা চলছে ইরিনের ভেতর।আয়াজের পাশে রিক্সায় বসে আছে সে। ভর্তি শেষ।বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফার্স্ট ইয়ার স্টুডেন্ট ইরিন।
আয়াজ থমথমে গলায় বলল,
—“আমার আটহাজার সাতশো টাকা আমাকে ফেরত দিয়ে দিবি।”
—“দেবো না।”
—“দিবি না মানে?”
—“দেবো না মানে দেবো না।”
—“তোদের গুষ্ঠিসুদ্ধ সবাই বাটপার নাকি?..তোর বোন সেদিন আমার ভাইয়ের পকেট থেকে সাড়ে নয় হাজার টাকা সরিয়েছে।ভাইয়াকে দেখলাম প্যানপ্যান করছে!এটা তো রীতিমত ডাকাতি!তোরা ডাকাতের বংশধর?
ইরিন চোখ পাকালো।আয়াজ সমঝোতার ভঙ্গিতে হাত নাড়িয়ে বলল,
—“যাইহোক আমার টাকা আমাকে ফেরত দিবি।”
—“আচ্ছা দেবো।কিন্তু ভর্তি তো আটহাজার চারশো আপনি বাকি তিনশো টাকা বেশি চাইলেন কেন?”
—“গাড়িভাড়া কি তোর শ্রদ্ধেয় আব্বাজান দিয়েছে?”
—“কিপ্টা!”
—“কি কিপ্টা?”
—“আপনি একটা কিপ্টুস!”
—“তুই তো বিরাট নির্লজ্জ রে ইরিন!…আমি যে এত কষ্ট করে তোকে ভর্তি করিয়েছি তোর সেই কৃতজ্ঞতা বোধ পর্যন্ত নেই।…ডিউটি করতে করতে দম ফেলার সুযোগ পাই না,তাও তোর জন্য জানমাটি করে আসতে হলো।…তুই টাকার হিসেব করছিস?”
—“আমি কি আপনাকে আসতে বলেছি?”
—“তুই বললে আমি আসতাম?..তোর শ্রদ্ধেয় আম্মাজান ফোন দিয়ে কান্না জুড়ে দিলেন!তোকে ঠিক করার দায়িত্ব তো উনি আমার ওপরই দিয়েছেন,তাই বাধ্য হয়ে আসতে হলো।”
—“আম্মা আপনাকে ফোন দিয়েছে?”
—“জ্বি দিয়েছে।আপনার শ্রদ্ধেয় আব্বাজানও দিয়েছে।”
ইরিন আবারও আশাহত হলো।আয়াজের ক্লান্ত লাগছে।এই নির্বোধ মেয়েটার জন্য টানা আঠারো ঘন্টা ডিউটি শেষে খেতে পর্যন্ত পারে নি সে।মায়মুনা বেগমের কাছ থেকে সব শুনে ওর মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো।বোকা মেয়েটা যে তার ওপর জেদ করেই মেডিকেলে পড়বে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটুকু বুঝতে ওর অসুবিধে হলো না।অনেক দৌড়ঝাঁপ করে ছুটি নিয়ে ইরিনকে ভর্তি করাতে এসেছে সে।খাওয়ার সময় টুকু পর্যন্ত পায় নি। এখন খিদেয় ওর পেট চোঁ!চোঁ! করছে।রাস্তার পাশে একটা হোটেলের সামনে রিক্সা থামালো।
আয়াজ খাচ্ছে,ইরিন নিচু গলায় বলল,
—“আপনি এমন রাক্ষসের মত খাচ্ছেন কেন আয়াজ ভাই?..আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে কতদিনের অভূক্ত আপনি।জেলখানার কয়েদিদের মত খাবারের ওপর হামলে পড়েছেন!
একটুখানি হাসলো ইরিন।আয়াজ খাওয়া বন্ধ করলো না।চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,”আমার হাত খালি নেই,তা না হলে এইমুহূর্তে তুই আমার হাতে ঠাটিয়ে দুটো চড় খেতি।”
ইরিন আবারও হাসলো।আয়াজ খেতে খেতে বলল,
—“বিল তুই দিবি!”
ইরিন ভেংচি কাটলো।অসভ্য লোকটা নিজে নিজেই খেয়ে চলেছে, ওকে একটাবার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করে নি খাবে কিনা!এখন আবার বলছে বিল ওকে দিতে হবে!!
—“আমি কেন দেবো? খাচ্ছেন তো আপনি..তাছাড়া আমি টাকা আনি নি।”
—“কেন দিবি মানে? তোকে নিয়ে যে বেগার খাটলাম?তার কোন দাম নেই?..টাকা না থাকলে পরে দিবি।”
—“তারমানে আপনি মজুরী চাচ্ছেন? পারিশ্রমিক?”
আয়াজ খাওয়া থামিয়ে দিলো।ইরিন হাসছে।আয়াজের রাগী রাগী মুখ দেখেও কোনভাবেই থামছে না তার হাসি।আয়াজ আচমকা ইরিনের মুখের ভেতর আস্ত লেগপিস ঢুকিয়ে দিয়ে বলল,”বেয়াদপি করতে না করেছি না?..হাস!এবার ভালো করে হাস!হাত পা ছড়িয়ে হাস!গড়িয়ে গড়িয়ে হাস!তোর যেভাবে মন চায় সেভাবে হাস!”
হাসি থামিয়ে ইরিন কাঁদোকাঁদো চেহারা নিয়ে আয়াজের দিকে তাকালো!আয়াজ নামক জল্লাদটার সাথে মজা করার শাস্তি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে সে।আশেপাশের লোকজন সবাই হাঁ করে ওর দিকে চেয়ে আছে,আর ভাবছে বেচারী!..অসহায়!
তবে আয়াজকে শিক্ষা দেওয়ার ভালো একটা ফন্দি আটলো মনে মনে।মাংসের টুকরোটা মুখে নিয়ে বসে রইলো চুপচাপ। আয়াজ টেনে ওর গাল থেকে লেগপিসটা বের করতে চাইলো।কিন্তু শক্ত করে কামড়ে ধরে বসে আছে সে।ফেলছেও না গিলছেও না।
—“এই তুই খাবি? আমি কিন্তু এটাতে মুখ দিয়েছি!
ইরিন ফেললো না।আগের মতই বসে রইলো।
—“আজব!মুখে ধরে রেখেছিস কেন?..হয় খা!..নয়ত ফেলে দে!”
—-“আম্মার ম্মমুড়ে ঢুকিয়েছিল্লেন গেনো?”
ইরিনের এই কথার মানে হচ্ছে ‘আপনি আমার মুখে ঢুকিয়েছেন কেন?’ কিন্তু মাংসের টুকরোটা মুখের ভিতর থাকায় তার কথার কিছুই বুঝে নি আয়াজ।সরু চোখে তার দিকে চেয়ে রইলো।
—“তুই মুড়ে গুড়ে কি বলছিস এসব?”
ইরিন জবাব না দিয়ে মাংসটা চিবানো শুরু করে দিলো।আয়াজের মুখের ওপর এবার বিরাট আকারের একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন ঝুলে উঠেছে,এর মানে হচ্ছে,”আমার চিবানো মাংস তুই খাচ্ছিস কি করে?”
ইরিন হাসলো,আগের মতই আয়াজের আধখাওয়া মাংসটা খেতে খেতে বলল,”দারুণ টেস্টি!”
—“আস্তে খা!..মুখের চারপাশে লেগে যাচ্ছে তো!”
এই বলে সে পকেট থেকে রুমাল বের করে ইরিনের দিকে বাড়িয়ে দিলো,”মুখ মোছ!”
—“মুছিয়ে দিন।”
—“ঢং করবি না।..নে ধর!”
ইরিন ঠোঁট ফুলিয়ে রুমালটা নিয়ে মুখ মুছলো।সে তো ভুলেই গেছে এই মানুষটা বেরসিক,নিরস,জঘন্য রকমের মানুষ।এর কাছে কিছু আশা করাটাই বোকামি।
খাওয়া শেষে দুজনে বেরিয়ে আবার রিক্সায় উঠলো।আয়াজ বিরক্ত গলায় বলল,”তুই আমাকে আরো আশিটাকা বেশি দিবি।”
—“কেন?”
—“আমার নতুন রুমাল তুই নষ্ট করেছিস তাই।”
ইরিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে বলল,”আর কি কি বাদ আছে মি.আয়াজ রহমান!আমাকে নিতে আসার জন্য আপনি যেই শার্ট,প্যান্ট পরে এসেছেন তার দাম বাকি কেন?সেগুলোর কথাও বলুন?আমি দিয়ে দেবো!আপনার সব টাকা আমি দিয়ে দেবো..চাইলে আন্ডারওয়্যারের দামও দিয়ে দেবো।”
——-“এই কি বিড়বিড় করছিস তুই?”
ইরিন চুপ মেরে গেলো।ভাগ্যিস আয়াজ শুনতে পায় নি!পেলে হয়ত সত্যি সত্যি আন্ডারওয়্যারের দাম ধরে বসতো!ছি!ছি!
ভর্তি হয়েছে এসেছে মাসখানেকের বেশি হয়ে গেছে।ভর্তি হয়ে আসার পর থেকে অলস সময় কেটেছে ইরিনের।
এখন রাত দুটা,ইরিন বারান্দায় এসে দাঁড়ালো।কালকে ওর অরিয়েন্টেশন ক্লাস,নতুন জীবন শুরু করবে।হালকা টেনশন হচ্ছে, আসলে ঠিক টেনশন না উত্তেজনা।নতুন ক্যারিয়ার!জীবনের নতুন দিক!
আয়াজদের বারান্দায় ছায়া দেখা যাচ্ছে।কেউ বসে আছে মনে হচ্ছে।আয়াজ তো নেই,তাহলে কে বসে আছে?
ইরিন আবার তাকালো।নেই।একটু পর আবার দেখলো।বিরক্ত লাগছে।কি হচ্ছে এসব তার সাথে?সারাদিন আয়াজকে ভেবে ভেবে মাথাটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে,রাতদুপুরেও জ্বালাতন!
হঠাৎ আয়াজের ডাক শুনেই চমকে উঠলো।
—“হরিণ?”
ইরিন জবাব দিলো না।ওর দৃষ্টিভ্রম এর সাথে কি শ্রুতিভ্রমও হচ্ছে ?..সিউর না।রুমে ঢুকে যাবে?যদি সত্যি সত্যি আয়াজ হয়?
আয়াজ ফোনের টর্চ অন করে ওদের বারান্দায় আলো ধরলো।আলোটা ঠিক ইরিনের চোখ বরাবর এসে পড়েছে,হাত দিয়ে আলো ঢাকার চেষ্টা করলো সে।
—“এত রাতে বারান্দায় কি করিস?তোর না কালকে ক্লাস?”
—“আপনি?”
—“হ্যাঁ আমি।”
—“আপনি সত্যি সত্যি?”
—“আশ্চর্য!..আমিই তো!”
—“আপনি কবে এসেছেন?”
—“আজকে সন্ধ্যায়।”
ইরিনের মন খারাপ হয়ে গেলো।কত আশা করে রেখেছিলো কালকে হস্পিটালে গিয়ে ও আয়াজের সাথে দেখা করবে,ওর মেডিকেল লাইফের প্রথম দিন বলে কথা।কিন্তু আয়াজ তো বাসায় চলে এসেছে।
—“থাকবেন নাকি?”
—“দুদিন আছি।”
ইরিন নিরস গলায় বলল,”ওহ!”
আয়াজ ওকে মৃদু গলায় ধমক দিয়ে বলল,
—“তুই এত রাতে চুল ছেড়ে দিয়ে বারান্দায় কি করিস?…চুল বাধ!”
ইরিন হাতখোঁপা করে চুল বেধে ফেললো।
—“ঘুম আসছে না।”
—“অলস লোকের ঘুম কম হয়।তুই তো অকর্মার ঢেঁকি,তাই তোর ঘুম কম হয়।অবশ্য মেডিকেল লাইফে রাত জাগতে পারাটা ভালো অভ্যেস। ঘুম যত কম যেতে পারবি ততই মঙ্গল।রাত জেগে পড়াশোনা করা যায়।তবে তোর ব্যাপার আলাদা,তুই তো বিশ্বফাঁকিবাজ!”
—“আপনিও তো রাতে ঘুমান না?..গুনগুন করে গান গান আর কফি খান?”
আয়াজ হাঁ করে ওর দিকে চেয়ে আছে।তারপর বলল,”সে তো অনেক রাতের দিকে।তুই রাত জেগে আমাকে পাহারা দিস?”
ইরিন ঠোঁট কামড়ালো।তারপর বলল,”পাহারা দেবো কেন?প্রায়ই আপনাকে দেখি তাই।”
—“যা শুয়ে পড়!সকালে তো তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।”
ইরিন চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো।আজকে সারারাত আয়াজের সাথে গল্প করতে ইচ্ছে করছে তার।
—“দাঁড়িয়ে আছিস কেন?তোকে যেতে বললাম না?”
ইরিন ভেতরে ঢুকে গেলো,কারন যতক্ষণ না ইরিন ভেতরে ঢুকবে ততক্ষণ আয়াজ চিল্লাচিল্লি করেই যাবে,তার চেয়ে ভেতরে ঢুকে যাওয়াই ভালো।
রুমে ঢুকে ইরিন কাঁথা মুড়ি দিয়ে চোখ বন্ধ করলো।আয়াজ গুনগুন করছে,ইরিনের মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর সুর ওর কানে বাজচ্ছে।আয়াজ ভাই সিংগার হলেই পারতো!একটু রোমান্টিকও হতে পারতো!..আহ্!আফসোস।
.
.
চলবে