নাগরাজ,পর্ব-ঃ৫
Writer:Sukhi Akther
যতো দিন যাচ্ছে গ্রামে সাপের উদ্ভব বাড়ছে।লাবন্যের শরীর আরো খারাপ হতে যাচ্ছে। কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছে সে?তার জন্য কতো গুলো নিরপরাধ মানুষ মারা গেছে। হয়তো তার কারনে ভবিষ্যতে আরো ভয়ংকর কিছু ঘটতে চলেছে। সে মরে গেলেই কি সব কিছু আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে যাবে? তার বাবা কি আগের মতো সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে?গ্রামের মানুষ গুলো কি সব কিছু ভুলে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে?তার একজনের মৃত্যুর জন্য যদি এত গুলো মানুষ বেঁচে যায় তাহলে শত কষ্ট হলেও সে তার জীবন দিয়ে দিতে পারবে।
.
সময় যত যাচ্ছে পরিস্থিতি আগের থেকেও খারাপ হয়ে গেছে। মানুষ রাতে তো দূর দিনের বেলায় ও বাড়ি থেকে বের হতে চায় না কি করে বা হবে যে যায় সে লাশ হয়ে যায়।মানুষ শত চেষ্টা করেও একটা ভালো ওঝা কে কেউ গ্রামে নিয়ে আসতে পারে না।
লাবন্য এখন আর আগের মতো কারোর সাথে কথা বলতে যায় না সব সময় অন্ধকার ঘরে থাকতে পছন্দ করে। হাত পা দুটো বেঁধে রাখা হয়েছে কখন আবার দেখা যাবে নিজেই হাতে ছুরি চালিয়ে দিয়েছে। এখন আর লাবন্য কে বিশ্বাস করতে পারে না সামীর।মেয়েটা দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছে । ঐ দিন সামীর যদি ঠিক সময় না আসতো তাহলে লাবন্যের লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলে থাকতে দেখা যেতো। তার সাথে সামীরের এতো দিনের সপ্ন সব শেষ হয়ে যেতো।কি করে একটা মানুষ এমন কান্ড জ্ঞানহীন মানুষের মতো কাজ করতে পারে?
তাহলে কি লাবন্য ঐ বৃদ্ধ লোকটির কথা গুলো এখনও বিশ্বাস করে বসে আছে? এতো চেষ্টা করেও শেষে লাবন্য সত্যি টা জেনে গেলো? আমার আর একটু সচেতন থাকার দরকার ছিল তাহলে সত্যি টা লাবন্য এত সহজে জানতে পারতো না।
আর তো মাএ কিছু দিন তারপর পৃথিবীতে আসতে চলছে আমাদের নাগরাজ যে আমার শএুদের হত্যার পাশাপাশি নাগরাজ্য উওরাধিকার পাবে সে।
মধ্য রাতে দরজা ভেঙে লাবন্য কে নিয়ে যায় কালো কাপড়ে ঢাকা কয়েক জন মানুষ।
লাবন্যের চোখ খুলতেই সে দেখতে পায় তার হাত পা বাঁধা।চারদিকের নিরবতা বিরাজ করছে। একজন আগুনের কুন্ডলীর সামনে বসে কিসব মন্ত্র উচ্চারণ করছে। তার পাশে আরো কয়েক জন দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সবার মুখে হাসি । হাসবেনা কেনো এতো সহজে লাবন্য কে খুঁজে পাবে সেটা তাদের কল্পনার বাহিরে ছিলো।তাদের শএুর খোঁজ তাদের কে আর কষ্ট করে পেতে হলো না বরং শএুই তার সন্ধান তাদের কে জানিয়ে দিলো।
.
সামীর বাড়িতে এসে দেখে লাবন্যের মা দরজার কাছে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। এতো রাতে এই ভাবে দরজার কাছে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন কেনো? সামীরের হঠাৎ মনে হলো আচ্ছা লাবন্যের কোন ক্ষতি হয়নি তো?
রুমে গিয়ে দেখে পুরু বিছানা এলোমেলো নিচে লাবন্যের হাতের কাচের চুড়ি গুলো পড়ে আছে। লাবন্য কে যখন ওরা ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন লাবন্য যেতে না চাওয়ার কারণে ওরা এক পর্যায়ে লাবন্য কে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়।শক্ত করে হাতে ধরার কারণে কাঁচের চুড়ি গুলো ভেঙে গিয়েছিলো।
অনেকক্ষণ ধরে খুঁজে কোথাও লাবন্য কে না পেয়ে সামীর প্রায় পাগলের মতো হয়ে গেছে আর তো মাএ কিছু দিন তারপর তার এতো দিনের কষ্ট সফল হতে চলেছিলো। কিন্তু আজ সামীর কি করে এতো বড় ভুল করলো?লাবন্য কে বাড়িতে একা রেখে যাওয়া মোটেও ঠিক হয়নি। এখন কোথায় খুঁজবে লাবন্য কে?
সবার আগে লাবন্যের মার জ্ঞান ফেরা দরকার তাহলে জানতে পারবে বাড়িতে আসলে কি হয়েছিলো?এতো কিছু থাকতে লাবন্য কে কেনো ধরে নিয়ে গেলো?
কয়েকবার লাবন্যের মায়ের মুখে পানি দিতেই জ্ঞান ফিরে আসে লাবন্যের মার।
-লাবন্য! আমার মেয়েটাকে ওরা মেরে ফেলবে সামীর।
মা হয়ে নিজের মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি. (লাবন্যের মা)
-কে মেরে ফেলবে লাবন্য কে?
কেনো মারবে?কি এমন উদ্দেশ্য থাকতে পারে?
তাছাড়া আপনি বা এতো জোর দিয়ে কি করে বলছেন এসব?(সামীর)
-কারন শুধু মাএ এদের হাত থেকে বাঁচাতে নিজেদের সব কিছু ছেড়ে লাবন্য কে নিয়ে পালিয়ে এসেছিলাম।
আজ আমার মেয়েকে ওরা নিয়ে গেছে হয়তো এতক্ষণে আমার লাবন্য কে মেরে ফেলেছে।আমার তো একটাই মেয়ে আজ ওর কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বেঁচে থাকবো?(লাবন্যের মা)
-আমাকে সবটা খুলে বলেন তা নাহলে আমি কিছু করতে পারবো না।আপনার থেকে এখন লাবন্য কে আমার বেশি প্রয়োজন। আমার সন্তানের মা হতে চলেছে সে।(সামীর)
-সামীর কে লাবন্যের ছোট বেলা থেকে বড় হওয়ার ঘটনা সব খুলে বললো লাবন্যের মা।সামীর এখন বেশ ভালো করে বুঝতে পারছে কেনো লাবন্য কে সামীরের এতো প্রয়োজন।
এখন সামীর কি করবে বুঝতে পারছে না। তার শক্তি আগের থেকে অনেক কমে গেছে। যা আছে তা দিয়ে কখনো লাবন্য কে তাদের কাছে থেকে নিয়ে আসতে পারবেনা।এখন তার সঙ্গীদের সাহায্য দরকার যারা তার এই বিপদে কাজে আসবে।
.
.
লাবন্য মাথা টা কেমন যেনো করছে, চোখ গুলো ঝাপসা হয়ে আসছে।একটু পর পর কিসের পানি যেনো ছিটিয়ে দিচ্ছে এরা। পানি লাবন্যের শরীরে পড়তেই মনে হয় কেউ তার শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। একজন হাতে একটা বড় তলোয়ার নিয়ে লাবন্যের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। আস্তে আস্তে বাকিরা ও লাবন্যের কাছে চলে আসে। মধ্য বয়স্ক ব্যক্তিটি লাবন্যের কপালে লাল একটা তিলক একে দিলো।
-হা হা হা আজ কে বাঁচাবে তোকে?
আঠারো বছর ধরে তোকে খুঁজে চলছি আর তুই এখানে লুকিয়ে রয়েছিস। মনে করেছিলি আমরা কিছু বুঝতে পারবো না? তোর ছেলে নাকি আমাদের কে খুন করবে?আসতে বলো তোমার ছেলেকে সে তোমার গর্ভে থেকে আমাদের কে শেষ করবে?তার আগে যদি এখন আমি তোমার ছেলেসহ তোমাকে ওপারে পাঠিয়ে দেই?(১ম সাধু ব্যক্তি)
-এতো কথা বলার দরকার নাই। আগে আমাদের কাজ শেষ করতে হবে। তারপর আমরা দুজন ওমর হয়ে যাবো।আজ থেকে আঠারো বছর আগে যা করতে পারিনি আজ সেই অসমাপ্ত কাজ কে সমাপ্ত করতে চাই। (২য় সাধু ব্যক্তিটি)
-মরার আগে সত্যি টা লাবন্যের জানা উচিৎ কেনো তাকে মারা হচ্ছে? কেনো তাকে আজ মরতে হবে?
তোমার জানতে ইচ্ছে করছে না লাবন্য? (১ম সাধু ব্যক্তিটি)
-লাবন্য শুধু মাথাটা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
চোখ খুলে কারোর দিকে তাকাতে পারছেনা সে।এতো দিন মরে যাওয়ার চেষ্টা করেও পারেনি আর আজ কেনো জানি বাঁচতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে। হয়তো আজই লাবন্যের শেষ দিন।
-তুই আমার নিজের ভাইয়ের মেয়ে হওয়ার সত্বেও তোকে মেরে ফেলতে হবে। কেনো জানিস?কারন তোর গর্ভে জন্ম নেয়া ছেলেটির আমাদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে।তোর বাবা সব সময় আমাকে কালো জাদু করতে বাঁধা দিতো তাই সরে আসতে চেয়েছিলাম আমি। কিন্তুু জাদুর নেশা আমাকে ছাড়েনি। তাই বাধ্য হয়ে লুকিয়ে কালো জাদু শিখতে থাকি। ভেবেছিলাম নাগরাজ কে বশ্য করে আমরা নাগলোক পরিচালনা করবো কিন্তু নাগরাজ সে আমাদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করবেনা। বার বার বলার পরও যখন সে রাজি হচ্ছিল না তখন তাকে এইরকম আগুনে কুন্ডলী তে ফেলে পুড়িয়ে মেরেছিলাম।মনে করেছিলাম সমস্যা ঐখানে শেষ হয়েছে কিন্তু না আমার বংশের কেউ আমার শএু কে তার গর্ভে জন্ম দিবে। সে আমাদের মেরে নাগরাজ্য আর নাগমনি দুটো সে তার দখলে নিয়ে যাবে। সেই মেয়েটি আর কেউ নয় সে ছিলি তুই নিজে।তখনই তোকে মেরে ফেলতাম আমার ভাই বেইমানী করে পালিয়ে গেলো তোকে নিয়ে। আজ কে বাঁচাবে তোকে?(২য় সাধু ব্যক্তিটি)
-একজন মানুষ এতো নিচে নামতে পারে? লাবন্যের দুচোখ ঝাপসা হয়ে গেছে সময় ফুরিয়ে আসছে।
একজন তলোয়ার টা লাবন্যের গলা বরাবর নিয়ে আসছে। এখন শুধু সয়তানের নামে বলী দিবে গলা থেকে মাথাটা আলাদা হয়ে গেলেই কাজ শেষ।
চলবে