নাগরাজ,পর্ব -ঃ৪

নাগরাজ,পর্ব -ঃ৪
writer:Sukhi Akther

সন্ধ্যা বেলা বসে আছে সবাই। তখন কোথায় থেকে এক বৃদ্ধ লোক বাড়িতে আসে। লোকটার গায়ে ময়লা কাপড় এই গুলো এতই ময়লা যে জামা কাপড় গুলোর জন্য বৃদ্ধ লোকটি পাগলের মতো লাগছে ।শরীল ও বেশ দুর্বল দেখে বুঝা যাচ্ছে। লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটছেন তিনি কাউকে কিছু না বলে বারান্দায় বসে পড়লেন।
-তোমরা কিছু মনে করো না অনেক দূর থেকে আসছি
তোমাদের অনুমতি ছাড়াই তোমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়েছি।এই সন্ধ্যা বেলায় আমি চোখে তেমন ভালো দেখতে পাই না। আজকের রাত টা যদি তোমরা তোমাদের বাড়িতে থাকতে দিতে অনেক বড় উপকার হতো মা।(বৃদ্ধ লোকটি)
– এই বাড়িতে আপনাকে থাকার জায়গা দেয়া যাবে না।
আপনি বরং অন্য কারোর কাছে সাহায্য চান। যদি কিছু টাকা পয়সা লাগে আমি দিয়ে দিতে পারি। (সামীর)
-আমার সাহায্য লাগবে না বাবা। শুধু রাত টা এখানে থাকতে দাও। সকাল হলে আমি চলে যাবো বাড়ি ছেড়ে। (বৃদ্ধ লোকটি)
-আজ না হয় উনি আমাদের বাড়িতে থাক এক রাতের ব্যাপার কোনো সমস্যা হবে না(লাবন্যের মা)
-আপনি আমার কথা বুঝতে পারছেন না কেনো?
লাবন্যের এই অবস্থায় বাড়িতে অপরিচিত কাউকে রাখা ঠিক হবে না।(সামীর)
-আমার কথা আপনার এতো না ভাবলেও চলবে।
তাছাড়া আমার যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়ে গেছে। (লাবন্য)
-তুই কেনো ঘর থেকে বের হতে গেলি?(লাবন্যের মা)
-আমি ঘরে বসে থাকলে তো তোমাদের সুবিধা যা ইচ্ছে করতে পারো। আমি থাকলে তোমাদের কাজে বাঁধা হয়ে দাঁড়াই।(লাবন্য)
-বড়দের সাথে কি করে কথা বলতে হয় তুমি ভুলে যাচ্ছো?আমরা যা করছি তোমার ভালোর জন্য করছি।(সামীর)
-তোমরা থাম! আমার জন্য তোমরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করো না। আমি চলে যাবো।
দেখি কোথাও একটু থাকার জায়গা পাই কিনা?(বৃদ্ধ লোকটি)
-আপনি কোথাও যাবেন না।আমি আপনাকে থাকতে দিবো এই বাড়িতে। (লাবন্য)
লাবন্য না হয়ে এখন যদি অন্য কেউ সামীরের কথার অবাধ্য হতো তাহলে বিষ দাতঁ গুলো বের করে কয়েকটা ছোবল দিয়ে দিতো। বৃদ্ধ লোকটি সামীরের দিকে তাকিয়ে আছে। সামীর ভাবতে লাগলো লোকটা কি সামীরের আসল পরিচয় জেনে গেছে? যদি নাই জানবে তাহলে বার বার কেনো এমন করে দেখছে? এই লোককে এই বাড়িতে রাখা যাবে না যত তারাতাড়ি সম্ভব বের করে দিতে হবে।
লাবন্য একটা রুমে লোকটাকে থাকতে দিলো। বৃদ্ধ লোকটি খাটে বসে লাবন্যের হাত টা ধরলো। হঠাৎ করে লাবন্যের হাত ধরাতে কিছু টা ভয় পেয়ে যায় সে।
-ছেলেটি নিশ্চয় তোমার স্বামী?(বৃদ্ধ লোকটি)
-হুম। স্বামী না ছাই। আস্তো একটা সাপ (মনে মনে বলছে লাবন্য)
-তুমি কি কিছু বললে মা?(বৃদ্ধ লোকটি)
-কই না তো। আপনি বরং রেস্ট নেন।
আমি আপনার খাবার টা পাঠিয়ে দিচ্ছি। (লাবন্য)
-এটা সব সময় তোমার কাছে রাখবে । বিপদে আপদে এক মাএ আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে।কেউ তোমাকে তোমার বিপদে সাহায্য না করলেও তিনি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবে।(বৃদ্ধ লোকটি)
-লাবন্য আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে যায়। লোকটা অন্য কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু তিনি কেনো কথা টা না বলেন নি। চোখ যা বলতে চাচ্ছে মুখ দিয়ে তিনি তা বলছেন না। সামীর কেনো লোকটা কে বাড়িতে থাকতে দিতে চাইছে না?লোকটা কেনো বার বার সামীর কে দেখছিলো?উনি কি কিছু বুঝতে পারছে?আমার এক বার একা উনার সাথে কথা বলা দরকার যদি আমাকে কোনো সাহায্য করতে পারে।(লাবন্য)
.
কিছু একটা উপর থেকে নিচে পরে যাওয়ার শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায় লাবন্যের। রুমের লাইট অন করে দেখে সব ঠিক আছে তাহলে শব্দ হলো কোথায়?বাহিরে গিয়ে একবার দেখবে?না এতো রাতে আর যাই হোক বাহিরে যাওয়া ঠিক হবে না।হঠাৎ চিৎকার লাবন্যের কানে আসলো এখন বিছানায় বসে থাকতে লাবন্যের একদম ইচ্ছে করছে না। চিৎকার টা কোথায় থেকে আসছে বুঝার চেষ্টা করছে লাবন্য। শব্দ টা সে স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে আচ্ছা এমন নয় তো চিৎকার টা বৃদ্ধ লোকটি দিয়েছে? আমার এতোক্ষণ কেনো মনে হলো না?
লাবন্য ভালে করে জানে সামীর আর সামীরের সাথের সাপেরা যতোই ভয়ংকর হোক না কেনো এখন কেউ তার কোনো ক্ষতি করবে না।
অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। বার বার লাইট জ্বালানোর চেষ্টা করছে কিন্তু লাইট জ্বলছে না। লাবন্যের মা আর সামীর আসার পর অনেক কষ্টে রুমের লাইট অন হয়েছে। নিচে পরে আছে বৃদ্ধ লোকটির রক্তাক্ত শরীল। সারা ঘর রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে কেউ খেয়াল করেনি তারা রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আছে। লোকটি লাবন্য কে ইশারা দিচ্ছে উনার কাছে যাওয়ার জন্য।
-তোর বড় বিপদ মা। তোর সন্তানই তোর জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে। মানুষ আর সাপের মিলনের কারনে তোর সন্তান মানুষ রূপে জন্ম নিবে কিন্তু সে যে কোনো সময় তার রূপ পরিবর্তন করে সাপ হয়ে যেতে পারবে।এই সামীর তোর বংশের আর কিছু বলার আগেই মারা যায় লোকটি।
.

লাবন্য হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে লোকটার দেয়া তাবিজ টা তার হাতে নাই কিন্তু রাতে সে নিজে তাবিজ টা হাতে পড়েছিলো তাহলে তাবিজ তার হাত থেকে কে খোলে নিলো?বৃদ্ধ লোকটিকে বা কেনো মারলো?শুধু মাএ সামীরের আসল পরিচয় জেনে গেছে বলে?রাতে এই কথাটা বলার জন্য হয়তো আমার হাত টা ধরেছিলো কিন্তু আমি নিজেই বুঝতে পারলাম না।আজ আমার জন্য লোকটা মারা গেলো। সামীর তো রুমে ছিলো তাহলে কে মেরেছে?আমার জন্যই আমার বাবা বিছানায় পরে আছে। লাবন্য অবাক লাগছে লাবন্য মা এতো গুলো কথা শুনার পরও উনার একটু খারাপ লাগছে না?লাবন্যের এটা ভেবে কষ্ট লাগছে তার গর্ভে জন্ম নিচ্ছে ভয়ংকর এক মানব শিশু। লাবন্যের মা আর সামীর যে যার রুমে গিয়ে আবার ঘুমিয়ে গিয়েছে।
সকালে পুলিশ বাড়িতে এসে লাশ টা নিয়ে যায়। সামীরও যায় পুলিশের সাথে কারণ এই বাড়িতে একটা খুন হয়েছে তারা কেউ খুনের সাথে জড়িত না প্রমান ছাড়া কেউ এই কথা বিশ্বাস করবে না। লাবন্য ভালো করে জানে সামীরের বিরুদ্ধে কোনো প্রমান না পেয়ে একটু পরে সামীর কে ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে পুলিশ। রহিত আর বাকিদের কে সাপে ছোবল দিয়ে মারলেও বৃদ্ধ লোকটি কে সাপে ছোবল কিংবা কোনো আঘাত করেনি বরং টিনের চালের বেড়া এক পার্ট খুলে তার পেটে ঢুকে গিয়েছিলো।হয়তো কোনো কারণে এক পার্ট খুলে গিয়ে তার উপর পড়ে যায় এটা একটা দুর্ঘটনায় মাএ। কিন্তু আসলে তো তেমন কিছু হয়নি সত্যি টা কখনো মানুষ জানতে পারবে না কি করে মারা গেছে লোকটি।একটার পর একটা খুন করে যাচ্ছে এরা কিন্তু কেউ কিছু করতে পারছেনা এদের।
সন্ধ্যায় সামীর ঠিকই বাড়ি চলে আসে। কেউ কারোর সাথে তেমন কোনো কথা বলছে না সবাই চুপচাপ।
সকাল থেকে লাবন্য তার মা কে বার বার বলছে তার শরীল টা ভালো না সে ডাক্তারের কাছে যেতে চায় কিন্তু লাবন্যের মা সামীরের মতো বার বারই না করে দিচ্ছে।
লাবন্যের মা ও সামীরের ইশারায় চলছে তা তার আচরণে ঠিক বুঝা যাচ্ছে।
কিন্তু লাবন্য ও নাছোড়বান্দা সে ডাক্তারের কাছে যাবে।
বাড়ি থেকে বের হতে যাবে সামীর লাবন্যের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।
-তুমি নিশ্চয় তোমার বাবার লাশ দেখতে চাও না?
আমি কি কি করতে পারি তোমাকে সবটা খুলে বলতে হবে না আশা করি?নিজের মা কে স্বাভাবিক সুস্থ দেখতে ভালো লাগছে না?তুমি কি ভেবেছো আমি কিছু জানি না তুমি কেনো হসপিটালে যেতে চাইছো?আমার সন্তান কে মেরে ফেলতে তাই তো?তাহলে মন দিয়ে শুনে রাখো আমার সন্তানের কিছুই হবে না যে আমার পথে এসে দাঁড়াবে তার মৃত্যু অনিবার্য। দরকার হলে এখানে একটার পর একটা মানুষ কে আমি খুন করবো (সামীর)

-হা হা সন্তানের জন্য খুব কষ্ট লাগছে আপনার?যখন দিনের পর দিন মানুষের বাচ্চা গুলোকে মেরে ফেলেছেন তখন এক বার ও ভেবে দেখেছিলেন? ঐ বাচ্চা গুলোর মা বাবা কি নিয়ে বাঁচবে তাদের সন্তান কে হারিয়ে? (লাবন্য)
-আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি আমি তোমার কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে বাধ্য না। আমি যা বলছি তা মেনে চলো তাতে তোমার মঙ্গল। (সামীর)
-আমার আর কি ক্ষতি করার বাকি রেখেছেন? আমার বাবার এমন অবস্থা করে তারপরও তো আপনার শান্তি হয় নাই। আমার মাকে আপনার মায়া জালে বন্দি করে নিয়েছেন। আমার মা হয়ে ও সে এখন আপনার বলা বুলি সারাদিন বলতে থাকে । (লাবন্য)

লাবন্যের মা লাবন্য কে দুটো চর মেরে ঘরে নিয়ে গেলো
মেয়ের এমন সাহস দেখে তিনি অবাক।
-তোর বাপ কোনো দিন বলতে পারবেনা আমি তার অবাধ্য হয়েছি আর তুই কথায় কথায় জামাইয়ের সাথে ঝগড়া করছিস। (লাবন্যের মা)
-মা তুমি চুপ করো তোমাদের কারোর কথা আমার ভালো লাগে না। (লাবন্য)
যতো দিন যাচ্ছে লাবন্যের মনে ভয় হতে শুরু করেছে। আমার নিজের সন্তানই আমার ক্ষতির কারন হবে?তাহলে বাকি মানুষ গুলো কে নিশ্চয়ই সে ছেড়ে দিবে না?আর কিছু ভাবতে পারছেনা। কে জানতো সকাল হতেই আরো ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে গ্রামের মানুষদের জন্য।
নদীর পাড়ে দুটো মানুষের লাশ পড়ে রয়েছে। সারা শরীল নীল রং ধারণ করেছে। রাতে তারা নৌকায় ঘুমিয়ে পড়েছিলো।সবাই ভয়ে আছে কাকে আবার সাপের হাতে নিজের জীবন দিতে হয়।
.
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here