নাগরাজ,পর্ব-ঃ৬ শেষ

নাগরাজ,পর্ব-ঃ৬ শেষ
Writer:Sukhi Akther

চারদিকের বাতাস টা ভারী হয়ে গেছে । শেষ বারের মতো একবার চোখ খুলে চারপাশ টা দেখে নিতে খুব ইচ্ছে করছে লাবন্যের।কিন্তু চোখ খুলে তাকাবে যে তার শক্তিটুকু নাই। মন্ত্র উচ্চারণের শব্দ ভেশে আসছে লাবন্যের কানে।গলা বরাবর নিয়ে গেছে তলোয়ার টা শত হোক নিজের রক্তের লাবন্য তাকে এত সহজে বলী দিতে পারছেনা ১ম সাধু ব্যক্তিটি।চোখ বন্ধ করে সয়তান কে স্মরণ করে গলায় তলোয়ার লাগাতেই তার হাত কেউ ধরে ফেলে।
-তুমি এটা কি করে করতে যাচ্ছো বাবা?
শেষ পর্যন্ত তুমি লাবন্য কে বলী দিতে আসছো?
তুমি আমাকে কি কথা দিয়েছিলে? তুমি নিজে আমাকে কথা দিয়েছো তুৃমি লাবন্যের কোন ক্ষতি করবে না তাই আমি তোমাকে এখানে আসতে দিয়েছিলাম।(কাইফ)
-তুই আমার কাজে বাঁধা দিতে আসতে গেলি কেন?
তুই ভুলে গেলি তোর বাবা নিজের স্বার্থের জন্য কতোটা ভয়ংকর হতে পারে? নিজের ভালো চাইলে তুই ফিরে যা কাইফ।(১ম সাধু ব্যক্তিটি)
-সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে আর দেরি করা যাবে না। যা করার এক্ষুণি করতে হবে।(২য় সাধু ব্যক্তিটি)
-আপনি চুপ করুন তো। আপনার জন্য আজ আমার বাবা নিজের ভাইয়ের মেয়ে কে বলী দিতে চলে আসছে।
সবার আগে আপনাকে পুলিশে দেয়া উচিৎ। (কাইফ)
কাইফ লাবন্য কে শোয়া থেকে তুলে নিলো। কাইফের বাবা কাইফকে কয়েকটা চর মেরে দিলো। আজ যখন তার এতো বছরের সাধনা পূরণ হতে চলছে তখন তার নিজের ছেলেই পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আগুনের ধোঁয়া অসহ্য লাগছে লাবন্যের কাছে। কাইফ আগুনের কুন্ডলী কাছে থাকা কলসি থেকে কয়েক কলসি পানি আগুনে কুন্ডলীর মধ্যে ঢেলে দিয়েছে। কাইফের বাবার লোকেরা তাদের কাজের জন্য পানি এনে রেখেছিলো কে জানতো এই পানিই তাদের সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।কাইফকে কয়েক জন ধরে ফেলে।
-আজ শুধু লাবন্য কে বলী দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই যখন লাবন্য কে বাঁচিয়ে দিলি। তখন লাবন্যের জায়গায় তোকে বলী দিবো কাইফ। লাবন্য কে মারলে তোর কষ্ট হবে তাই না? এর আগে যখন মারতে গিয়েছিলাম তখন তুই লাবন্যের মা বাবাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলি। আজ তোর এই বিপদে কে সাহায্য করবে শুনি? খুব তো ভালোবাসা দেখাতে লাবন্য কে বাঁচাতে এতো দূর ছুটে আসলি। লাবন্য তোর জন্য থেমে নেই সে সংসার করে এখন নাগরাজ কে জন্ম দিতে যাচ্ছে। এই সেই নাগরাজ যে কিনা আমাদের সবাই কে শেষ করে নিজে সব কিছুর মালিক হবে।তুই যখন নিজের বাবার কথা না ভেবে লাবন্য কে বাঁচাতে চলে আসলি তাহলে আজ শুধু লাবন্য না তুই নিজেও আমার শএু। আমি আমার এত দিনের সাধনা শেষ হতে দিবো না আগে তোকে তারপর লাবন্য কে।(১ম সাধু ব্যক্তিটি)
-বাহ, তোমার কাছে নিজের ছেলের থেকেও বেশি মূল্যবান হলো শক্তি। আমি মরে যাবো আমার কোন কষ্ট নাই কিন্তু তোমার মতো মানুষের হাতে মরতে হবে এটা ভেবে কষ্ট হচ্ছে।(কাইফ)
-তুই দাঁড়িয়ে কি দেখছিস? দে দে এর গলা টা মাথা থেকে আলগা করে দে।আমার খায় আমার পরে আবার আমার শএুর পক্ষ নিয়ে আমার কাজে বাঁধা দেয়।এরে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।(১ম সাধু ব্যক্তিটি)
-আমি এখনি করছি।(২য় সাধু ব্যক্তিটি)
কাইফের গলায় ছুড়িটা লাগাতেই রক্ত পড়তে শুরু করেছে। লাবন্য নিস্তেজ শরীর টা নিচে পরে আছে। মুহূর্তের মধ্যে চারদিকে বাতাসের শব্দ বেড়ে গেছে। সাপ আর সাধুদের মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে। চারদিক টা পুলিশ ঘিরে রেখেছে কিন্তু তারা বাতাসের শব্দ শোনা ছাড়া আর কিছু বুঝতে পারছে না।কি হচ্ছে এখানে?
আস্তে আস্তে বাতাস কিছু টা কমে গেছে। পুলিশ ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখে লাবন্য, কাইফ সহ আরো কয়েকজন মাটিতে পড়ে আছে কিন্তু বাকিরা মুহুর্তের মধ্যে কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো? চারদিকে খুঁজে কাউকে না পেয়ে।
লাবন্য আর কাইফ কে হসপিটালে নিয়ে যায় পুলিশ।
আর বাকি যারা পরে ছিলো তারা সবাই মৃত।
.
লাবন্যের শরীরের কন্ডিশন ভালো নয়। যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়েছে লাবন্য কে লাবন্যের মা মেয়ের এমন অবস্থা দেখে পাগল প্রায় হয়ে গেছেন। দীর্ঘ এক ঘন্টা পর ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়েছেন বাচ্চার চিৎকারে মুখরিত হচ্ছে অপারেশন থিয়েটার।বিদুৎ আচমকা যাওয়া আসা শুরু করেছে। লাবন্যের এখনও জ্ঞান ফিরে আসেনি।সামীর ও বাকিরা লাবন্যের ছেলেকে দেখার জন্য পাগল হয়ে আছে। এক জন নার্স বাচ্চাটাকে সামীরের কোলে দিবে এমন সময় নার্স খেয়াল করে দেখে সাদা তোয়ালে পেচানো একটা সাপ।
নার্স চিৎকার দিয়ে সরে যায় বাচ্চাটা আবার তার আসল রূপে আসে। সামীর ঠিক সময় যদি না ধরতো তাহলে বাচ্চাটা নিচে পরে যেতো। যদিও সামীর জানে শূন্যে ভেসে থাকার মতো শক্তি তার ছেলের আছে।
সামীর লাবন্যের কাছে বাচ্চাটাকে নিয়ে রাখলো।
আজ থেকে লাবন্যের ছেলের নাম লাবীব ।আমাদের বংশের উওরাধিকারী নাগরাজ। আমাদের আর কোনো চিন্তা রইলো না বাবা আমাদের এতো দিনের সপ্ন আজ পূরণ হয়েছে। (সামীর)
-না সামীর! তোমার ভাবনা সত্যি নয়। আমাদের লাবীব এখনও পুরুপুরি ভাবে শক্তি অর্জন করেনি।আমাদের শএু এখনও বেঁচে আছে তাকে মারতে পারলেই লাবীব নাগমনি আর নাগরাজ্যের মালিক হবে। (সামীরের বাবা)
-কি করে মারবে লাবীব আমাদের শএুকে?(সামীর)
-সময় হলে আমি সব লাবীব কে বুঝিয়ে দিবো আপাতত লাবন্য কে আমাদের আর কোনো দরকার নাই। লাবন্য বাবা আজ থেকে সুস্থ হয়ে যাবে।আমাদের মায়া তার শরীর থেকে কেটে যাবে। (সামীরের বাবা)
-লাবন্য কে এই অবস্থা রেখে চলে যাবো আমরা?
লাবীব সে লাবন্য কে ছাড়া থাকবে?(সামীর)
-লাবীবের জন্ম হয়েছে নাগরাজ্যে থাকার জন্য। মানুষের গর্ভে লাবীবের জন্ম হলেও সে আমাদের মতো সাপ। তার শরীরের আমাদের রক্ত বইছে। লাবীব কে লাবন্যের কাছে থেকে আমরা কখনো আলাদা করতে পারবো না যদি লাবীব লাবন্যের কাছে আসতে চায়।কিন্তু আমি কখনো চাইনা লাবীব লাবন্যের কাছে আসুক।(সামীরের বাবা)
-আমি এতো দিন ধরে দুধ কলা দিয়ে সাপ পুষে আসছি।
তোমরা সবাই আসলে সাপ।আমার মেয়ের জীবন টাকে নষ্ট করে দিয়েছো তোমরা।আমার স্বামী কে অসুস্থ বানিয়ে বিছানায় ফেলে রেখেছো।আমাকে এতো দিন তোমাদের মায়া জালে বন্দি করে রেখেছিলে যাতে আমি তোমাদের পথে বাঁধা দিতে না পারি।কেনো আমরা লাবন্য কথা বিশ্বাস করলাম না তাহলে আজ আমার মেয়ের জীবন টা নষ্ট হতো না।(লাবন্যের মা)
-লাবন্য ঠিকই আছে তাকে ভালো দেখে বিয়ে দিয়ে দিবে।
তাছাড়া কাইফ লাবন্য কে এখনো ভালেবাসে সে লাবন্য কে বিয়ে করতে চায়। এটা তো লাবন্যের সৌভাগ্য যে এতো কিছু জানার পরও কাইফ লাবন্য কে বিয়ে করতে চায়।(সামীরের বাবা)
-বাবা তুমি কি বলছো ভেবে বলছো কি?
লাবন্যের সাথে কাইফের বিয়ে কখনো হতে পারে না।(সামীর)
-সামীর তুমি ভুলে যাচ্ছো তুমি সাপ আর লাবন্য মানুষ।
কিছু দিনের জন্য তোমরা স্বামী স্ত্রী হলেও সারা জীবন এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কখনো সম্ভব না। তুমি এখনই এখান থেকে চলে যাবে এটা আমার আদেশ। লাবীব আপাতত আমার সাথে থাকবে। আমরা খুব শীগ্রই নাগরাজ্যে ফিরে যাবো।(সামীরের বাবা)
মুহুর্তের মধ্যে সামীর, সামীরের বাবা,লাবীব অদৃশ্য হয়ে গেছে। লাবন্যের মা লাবন্যের পাশে বসে আছে। কাইফ কে লাবন্যের রুমে দিয়ে গেছে। গলা অনেকটা কেঁটে গেছে। লাবন্যের জ্ঞান ফিরে আসছে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে লাবন্য মা, আর কাইফ ছাড়া আর কেউ নাই।
পেটে হাত দিয়ে বুঝতে পারছে তার সন্তান অনেক আগে পৃথিবীতে চলে এসেছে কিন্তু সে কোথায়? সামীর কে দেখা যাচ্ছে না কেনো?এদিক ঐদিক বার বার তাকাচ্ছে লাবন্য।
-লাবীব কে সামীরের বাবা নিয়ে গেছে লাবন্য। (লাবন্যের মা)
-লাবীব?(লাবন্য)
-তোর ছেলে লাবীব।আমাদের ভুল হয়েছে তোর কথা বিশ্বাস না করা।আমাদের জন্য তোর জীবন টা নষ্ট হলো।
-চলে গেছে? আমাকে এক বার ও আমার ছেলেকে ছুঁয়ে দেখতে দিলো না?(লাবন্য)
-যে চলে গেছে তার জন্য কেনো কষ্ট পাচ্ছো লাবন্য?
তুমি আমি আমরা হাজার চেষ্টা করলেও তাকে ধরে রাখতে পারবো না।আমরা কি আগের সব কিছু ভুলে সংসার করতে পারি না?আমি জানি আমার বাবা যা করেছে তা অন্যায় সে তার পাপের শাস্তি ঠিক পাবে দেখে নিও।(কাইফ)
-কাইফ ঠিক বলেছে লাবন্য। সামীর আর তার সন্তান কে তোর অতীত মনে করে ভুলে যা মা। আজ আমাদের জীবন থেকে নয় আমাদের এলাকা ভয়ংকর নাগদের হাত থেকে মুক্ত হলো।(লাবন্যের বাবা)
-বাবা তুমি! (লাবন্য)
-আমি ঠিক হয়ে গেছি আশ্চর্য লাগছে না?
ঐ দিন রাতে যখন আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই।বাজার শেষে বাড়ি ফিরে আসবো এমন সময় সামীর কে দেখি জমিদার বাড়ির পিছনের দিকটায় যাচ্ছে। আমি ভাবলাম সামীর তো এলাকায় নতুন ভুল করে হয়তো ঐদিকে যাচ্ছে। আমি গিয়ে দেখি সামীর একা না আর এক জন আছে তারা দুজন কথা শেষ করে আবার সাপের রূপ ধারণ করেছে। আমি কি করবো কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না সামীর বাড়ির দিকে চলে আসছে দেখে আমি বাড়ির দিকে আসবো এমন সময় দেখি সামীরের বাবা বিশাল এক সাপের আকৃতি ধারণ করেছে। তারপর আর কিছু মনে নেই। যারা তাদের আসল রূপ দেখে ফেলেছে তাদের সবাই কে মেরে ফেলেছে। (লাবন্যের বাবা)
-রহিত কিভাবে মারা গিয়েছিল? সামীর মেরেছিলো নিশ্চয়ই ?
-হয়তো রহিত জেনে গিয়েছিলো তাদের আসল রূপ তাই তাকেও মেরে ফেলা হয়েছে। (কাইফ)
.
.
২ বছর পর
ঘুমিয়ে আছে সালমান মিয়া । ঘর থেকে বিশাক্ত নীল ধোঁয়া বের হচ্ছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। চোখ খুলে তাকালো সে একি দেখছে সে তার ঘরে এতো সাপ?
ধম বন্ধ হয়ে আসছে সালমানের। একটা সাপ পেঁচিয়ে ধরেছে সালমান কে। একটার পর একটা ছোবল দিয়ে যাচ্ছে। সালমান বেশ বুঝতে পারছে তার সময় শেষ এতো এতো সাপ কে মেরেছে সে। শেষ পর্যন্ত নাগরাজ কে ছলনা করে মেরে ফেলেছিল।আজ এত মন্ত্র কোনো কাজে আসছে না সালমানের।কাজে আসবেই বা কি করে লাবীবের জন্মাই সালমান নামক ভয়ংকর এই সয়তান তান্ত্রিক কে শেষ করার জন্য। সারা শরীর বিষে নীল হয়ে গেছে। সালমানের শরীরটাকে টেনে দুই টুকরা করে ফেলেছে। লাবীব তার মুখে সালমানের অর্ধেক টা শরীর নিয়ে নেয়।মুহুর্তের মধ্যে বাড়ির সব কিছু ছাই হয়ে যায়।লাবীব, সামীর,বাকিরা নাগরাজ্যের দিকে রওনা দেয়।কিসের এক অদ্ভুত মায়া লাবীব কে যেতে দিচ্ছে না না।মুহুর্তের মধ্যে লাবীব অদৃশ্য হয়ে কোথায় যেনো চলে গেছে।
-লাবীব.(সামীরের বাবা)
-বাবা লাবীব কে যেতে দাও। আমাকে তুমি আটকিয়ে রাখতে পারবে কিন্তু লাবীব কে না।
লাবীব কি করে লাবন্য কে ভুলে যাবে? লাবীব একটা সাপ যেমন এটা সত্যি ঠিক তেমনি এটা সত্যি লাবন্যের গর্ভে লাবীবের জন্ম। (সামীর)
.
বারান্দার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে লাবন্য।মেঘলা আকাশ বৃষ্টি হবে মনে হচ্ছে। তার সাথে কেনো এমন হলো? কতো সুন্দর হতে পারতো তার জীবন টা।কাইফ লাবন্য কে সব সময় সুখের মধ্যে রাখতে চায়। কোনো কিছুর অভাব বুঝতে দেয়নি কখনো। লাবন্য মা বাবাও বেশ ভালো আছে। লাবন্যের একটা মেয়ে হয়েছে। সবাই ব্যস্ত তাকে নিয়ে। শুধু ভালো নাই লাবন্য সব কিছু থাকার পরও কিছু একটার শূন্যতা অনুভব করে লাবন্য। হঠাৎ মনে হলো কেউ তাকে দেখছে। পিছনে ফিরে কাউকে দেখতে না পেয়ে রুমে গিয়ে পুষ্পকে কুলে নিয়ে বসে আছে। পুষ্পের মধ্যে নিজের সকল দুঃখ আড়াল করতে চায় লাবন্য। কেউ একজন দূর থেকে দেখে ফিরে যায় নিজের রাজ্যের দিকে।দূর থেকে নাহয় ভালোবেসে যাবে লাবন্য কে।সব সময় ভালো থাকুক আমাদের ভালোবাসার মানুষ গুলো।
_____________সমাপ্ত ____________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here