নাগরাজ,পর্ব -ঃ২,৩
Writer:Sukhi Akther
পর্ব-২
বাড়ির সবাই ছেলেটার লাশের সামনে দাড়িয়ে আছে।
কেউ কিছু বুঝতে পারছে না কি করে কাজের ছেলে রহিত দক্ষিণ দিকের ক্ষেতে গিয়েছিল। লাবন্যের বাবার স্পষ্ট মনে আছে তিনি রহিত কে সিড়ির কাছের ঘরটায় শুতে দেখেছিলেন।তিনি ছোটবেলা থেকে রহিত কে চিনতেন আর যাই হোক রাতে ঘুমের মধ্যে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় চলে যাওয়ার অভ্যাস নাই।এমন না যে রহিত নেশা করতো তাহলে এতো রাতে সে কি করে ঐ জায়গায় গেলো?
সকালে যদি করিম মিয়া না বলতো যে রহিত কে পাশের গ্রামের দক্ষিণ দিকের ক্ষেতে পড়ে থাকতে দেখেছেন।করিম মিয়া মনে করেছে রহিত হয়তো মজা করে শুয়ে আছে তাই তিনি রহিত কে না ডেকে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। সকালে একে একে সবাই ঘুম থেকে ওঠে গিয়েছিল কিন্তু রহিত এখন ও ঘুম থেকে উঠে নি। বড় আশ্চর্য কান্ড যেখানে এতো বছর ধরে রহিত নিজে আগে উঠে বাড়ির সবাই কে ডেকে তোলতো।লাবন্যের বাবা প্রপ্রথম মনে করেছিলো রহিত হয়তো আজ অসুস্থ তাই হয়তো সকালে ঘুম থেকে উঠে নি।তিনি কাল রাতেও রহিত কে সুস্থ দেখেছেন রাতের মধ্যে এমন কি হলো যে রহিত এখনও ঘর থেকে বের হচ্ছে না?
বেলা যতো বাড়ছে লাবন্যের বাবার চিন্তা ততো বেশি বাড়ছে।তিনি রহিত কে বাড়ি এবং পুরো গ্রাম খোঁজে কোথাও পান নি।যখন নিজে দক্ষিণ দিকের ক্ষেতে গিয়ে রহিতের গায়ে স্পর্শ করে দেখেন রহিত সারা শরীল নীল রং ধারণ করেছে।মাথায় হাত দিতেই এক মুঠো চুল উঠে এলো।রহিত বাড়ির কাজের ছেলে হলেও কখনো তাকে কাজের ছেলে মনে করেন নি লাবন্যের বাবা।
সবাই ধরাধরি করে রহিতের লাশ টা বাড়ি নিয়ে আসলো। লাবন্যের বাবা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন এই ছোট থাকতে ছেলেটা তার বাড়িতে আসছে আজ এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাচ্ছে লাশ হয়ে।
সবার কাছে রহিতের মৃত্যুর বিষয় টা নিয়ে আলোচনা করতে পারছে না লাবন্যের বাবা।ঘরে নতুন জামাই সে যদি ভয় পেয়ে বসে নাগ ছোবল মেরে রহিত কে মেরেছে। সারা শরীলে বিন্দুমাএ রক্ত হয়তো রাখে নি। লাবন্য কাল থেকে কিসব উল্টা পাল্টা কথা বলে যাচ্ছে সে যদি এখন সবার সামনে সামীর কে সাপ বলতে শুরু করে আমার মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে। তাছাড়া গ্রামের মানুষজন সামীরের সাথে আমাদের কে গ্রাম ছাড়া করে ছাড়বে।
লাবন্য এমন কেনো করছে কিছুই আমার মাথায় আসে না। সামীর কি করে সাপ হবে?এক বার সাপ এক বার মানুষ হবেই বা কেনো?যদি সামীর সাপ হয়ে থাকে তাহলে লাবন্য কে কেনো বিয়ে করতে যাবে?লাবন্য ছাড়া আরো অনেক মেয়ে আছে গ্রামে।হাজারটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
মানলাম এক সময় শান্তর সাথে লাবন্যের রিলেশন ছিলো তাই বলে লাবন্য এখন সামীরের নামে মিথ্যা কথা বলবে?লাবন্য এসব কথা শুনলে সামীরের বাবা মা কখনো লাবন্য কে কখনো তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে না।
রহিতের লাশটা দাফন করার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে বাড়ির সবাই। লাবন্য বাবা কিছু না বললেও লাবন্য পুরো বিষয় টা বুঝতে পারছে। এই কাজ সামীর অথবা তার সাথের কেউ করেছে কিন্তু কেনো?এসব করে কি লাভ সামীরের?আনমনে ভাবছে লাবন্য। পিঠে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে ওঠে লাবন্য।
-কে?
-একটা রাত আমার সাথে কাটালে এখনও তুমি আমার স্পর্শ বুঝতে পারো না লাবন্য? (সামীর)
-আপনি এখানে?আমি তো ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছিলাম।তাহলে আপনি কি করে আমার ঘরে প্রবেশ করেছেন?
-তুমি ভুল ভাবছো লাবন্য।
তুমি নিজেই দরজা খোলা রেখেছো। ভালো করে মনে করে দেখো,হাসি মুখ করে বললো (সামীর)
-লাবন্য তাকিয়ে দেখে ঘরের দরজা খোলা।
কিন্তু লাবন্যের স্পষ্ট মনে আছে সে দরজা লাগিয়ে ছিলো।
-এতো চিন্তা করতে হবে না তো।
এখন তুমি অসুস্থ রেষ্ট নাও। নাকি ভয় করছে?আমি তোমার পাশে থাকবো?(সামীর)
-না বলে চেঁচিয়ে ওঠে লাবন্য।
লাবন্যের চিৎকার শুনে দৌড়ে ঘরে আসে লাবন্য মা।
লাবন্য বিছানায় বসে আছে। লাবন্য ঘিরে সামীর বসে আছে। এই মুহুর্তে এখানে এসে বেশ লজ্জায় পড়ে গেলেন লাবন্যের মা।কিন্তু লাবন্য যে ভাবে চিৎকার দিলো না এসে কোনো উপায় ছিলো না।তিনি তো আর জানতেন না যে লাবন্য সামীরের সাথে আছে।
লাবন্যের মা কে দেখে সামীর বিছানা ছেড়ে ওঠে যায়। যেখানে যায় হয় শ্বশুর আর নাহয় শাশুড়ী থাকে নতুন জামাই বউ যে কিছু টা সময় কাটাতে চায় সেদিকে তাদের কোনো খেয়াল আছে?
-তুমি বসো বাবা।
লাবন্য হঠাৎ এতো জোরে চিৎকার দিবে কে জানতো
তুমি লাবন্যের পাশে আছো জানলে কখনো আসতাম না আমি এখানে।বুঝতে পারছোই তো সকালের রহিতের ঘটনা সবার মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। (লাবন্যের মা)
-সমস্যা নাই। আমি চলে যাচ্ছি আপনি বরং লাবন্যের পাশে থাকেন।আমি বাড়ির ঐ দিকে গিয়ে দেখি দাফনের কাজ কতো টুকু হলো। (সামীর)
-তুমি নতুন মানুষ তোমার কোথাও যাওয়া লাগবে না।
কোথায় আবার নতুন বিপদ শুরু হয় তার চেয়ে ভালো তুমি লাবন্যের পাশে বসো।(লাবন্যের মা)
-তোমরা সবাই যাও।আমি একা থাকতে পারবো।
আমার সাথে কাউকে থাকতে হবে না।
-হুহ কাল রাতের মতো আজও হয়তো ভয় পেয়ে এই বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথায় চলে যাওয়ার প্লেন আছে? (সামীর)
-চুপ কর তো তুই লাবন্য। আমারে এবার শান্তিতে থাকতে দেয়।
সামীর তুৃমি লাবন্যের ঘরে থেকো তো বাবা।আমাদের কারোর কোনো কথা তো শুনে না এখন যদি তোমার কথা শুনে। (লাবন্যের মা)
-আপনি চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে।
রাতে সবাই খেতে বসেছে।লাবন্য আসতে চায় নি সবাী জোরাজুরিতে আসলো। সবাই চুপচাপ হয়ে গেছে রহিতের ঘটনার পর থেকে।
-শুনলাম মাগরিবের সময় নাকি দুই বছরের এক বাচ্চারে সাপে ছোবল দিয়েছে। গলার কাছে ভয়ংকর ভাবে কাটা ছিদ্র করা ছিলো।তবে এটা অন্য সাপে করেছে(লাবন্যের বাবা)
-সামীরের মুখ টা লাল হয়ে যাচ্ছে। কে বলেছে তাতে এখানে আসতে?এসেছে তো আবার এক জন কে মেরে চলে গেছে। (সামীর)
রাত আনুমানিক সাড়ে তিনটা লাবন্যের সারা শরীল কাঁপতে শুরু করেছে এতো শীত কেনো লাগছে?চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে একটা মস্ত বড় সাপ তাকে পেঁচিয়ে রেখেছে। রাতে লাবন্য ঘুৃমিয়ে যাওয়ার পরে লাবন্যের মা তার রুমে চলে যায়।সামীর আর লাবন্য কে রুমে দিয়ে।
চলবে…
নাগরাজ
পর্ব -ঃ৩
Writer:Sukhi Akther
লাবন্য কে ভয় পেতে দেখে সামীর মানুষ রূপ ধারণ করে।লাবন্য যা ভেবেছিলো তাই সত্যি সামীর আসলে একটা সাপ।তার সাথে থাকা প্রতিটা মানুষই সাপ।একটা সাপের সাথে সংসার করতে হবে তাকে এটা ভেবে লাবন্যের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অন্য কেউ কেনো সামীরের আসল রূপ দেখতে পারছে না শুধু লাবন্য কেনো দেখতে পাচ্ছে? লাবন্যের কোনো ক্ষতি কেনো করছেনা সামীর?কি তার উদ্দেশ্য? এতো মানুষ থাকতে সামীর কেনো লাবন্য কে বিয়ে করতে গেলো?
হাজার প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
-আপনি আসলে কোনো মানুষ না।
একটা সাপ হয়ে কেনো আমার জীবন টা নষ্ট করতে চলে আসছেন?
-তোমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য না।
সত্যি টা যেহেতু তুমি যেনে গেছো তাহলে চুপ করে থাকাই সবার জন্য মঙ্গল। কারন আমার আসল রূপ শুধু মাএ তুমি দেখেছো।যে আমাকে দেখে ফেলে তার মৃত্যু অনিবার্য। আমার কাজ শেষ হয়ে গেলে আমি নিজে চলে যাবো এখান থেকে। (সামীর)
-তার মানে আপনি নিজের সার্থ আদায় করার জন্য আমাকে ব্যব্যবহার করছেন?
-বললাম তো আমি তোমার কোনো কথার জবাব দিতে বাধ্য না।তুমি চুপচাপ ঘুমাও। (সামীর)
দরজা খোলে ঘর থেকে বের হয়ে যায় সামীর।
লাবন্য ঠায় বসে রয়েছে বিছানায়।সামীর কি বলে গেলো? কি এমন উদ্দেশ্য থাকতে পারে একজন সাপ হয়ে মানুষের সাথে সংসার করতে চলে এসেছে?
সকালে ফজরের নামাজ পড়ে বারান্দায় লাবন্যের বাবার পাশে বসে আছে লাবন্য। চারদিকে বাতাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। গাছপালা সব ভেঙে যাওয়ার উপক্রম। বৃষ্টি শুরু হয়েছে কমার কোনো নাম গন্ধ নাই।
-তুই এখানে সামীর কোথায় লাবন্য? (লাবন্যের বাবা)
-জানিনা বলে লাবন্যের বাবার পাশে থেকে উঠে যায় লাবন্য।
এই সামীর নামক সাপটা তার জীবন টাকে নরক বানিয়ে দিয়েছে। যেখানে গেছে না আসলে হয়। তোমরা কেউ তো আর জানো না সামীরের আসল পরিচয়। জানলে তোমরা ও তার মৃত্যু কামনা করতে।
লাবন্য তার মায়ের কাছে গিয়ে দেখে সামীর তার মায়ের কাছে বসে আছে। লাবন্যের মা আর সামীরের মধ্যে ভালো একটা সম্পর্ক ঘরে উঠেছে। লাবন্য কে দেখে একটা মুচকি হাসি দেয় সামীর।লাবন্য কাউকে কিছু বলতে পারছেনা আবার সামীর কে দেখতে ও পারছে না।
-কি রে তুই দাঁড়িয়ে কেনো?
মায়ের কাছে বসতে এখন আর ইচ্ছে করে না?(লাবন্যের মা)
-তোমরা গল্প করো আমি বরং যাই।
মাথাটা ধরেছে তোমাদের সাথে আড্ডা দিতে ইচ্ছে করছে না।
-আমাকে দেখে লাবন্য থাকতে চাচ্ছে না। আমি বরং যাই পরে সময় করে আপনার সাথে কথা বলা যাবে (সামীর)
-মা সামীর আসলে একটা সাপ বলার আগেই লাবন্য দেখতে পায় তার মায়ের পিছনে একটা সাপ বসে আছে।
লাবন্য সাপ বলে চিৎকার দিতেই লাবন্য মা সরে যায়।লাবন্যের বাবা সারা ঘর খোঁজে কোনো সাপ পায় নি।পাবে না কি করে সাপটা তো সামীরের অদৃশ্য এক মায়ায় সৃষ্টি। যা শুধু মাএ লাবন্য ছাড়া আর কেউ দেখবে না।লাবন্য কে ভয় পেতে দেখে লাবন্যের বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি বড় কোনো ওঝার কাছে যাবেন।তিনি হয়তো এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।
সামীর বেশ বুঝতে পারছে এই বাড়িতে কোনো ওঝা আসা মানে সামীরের আসল পরিচয় সবার সামনে বের হয়ে আসা। পর পর দুটো খুনের রহস্য বের হয়ে আসা।যে করে হোক এই বাড়িতে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা। তা নাহলে এতো দিনের তিলে তিলে করা পরিকল্পনা ব্যস্তে যাবে।
-আমার এক পরিচিত ওঝা আছে। আপনি বললে আমি লাবন্যের বিষয় টা নিয়ে উনার সাথে কথা বলতে পারি।(সামীর)
-তাহলে তুৃমি দেখো। মেয়েটা দিন দিন পাগলের মতো আচরণ করছে।(লাবন্যের বাবা)
-না বাবা তুমি বরং যাও।সামীর তো এলাকায় নতুন রাস্তা ঘাট তেমন চিনে না তুমি যাও বাবা।
সামীর ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লাবন্যের দিকে।সামীরের চোখই বলে দিচ্ছে কি বলতে চাচ্ছে সামীর।লাবন্য ইচ্ছে করে বলছে যাতে করে সবাই সত্যি টা জেনে যায়।কিন্তু সামীর এতো সহজে তার প্লেন নষ্ট হতে দিবে না।কাউকে বাঁচতে দিবে না । এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা প্রতিশোধ নেয়ার।
-তুমি কোনো চিন্তা করো না তো সব ঠিক চলছে।
লাবন্য গর্বে জন্ম নিবে আমাদের নাগরাজ। যে কিনা পরিচালনা করবে আমাদের নাগরাজ্য। (সামীর)
-আমাদের এতো দিনের সাধনা নষ্ট হলে নাগরাজ্য আর নাগমনি কোনোটাই আমাদের হাতে থাকবে না।আমার শক্তি ধীরে ধীরে ক্ষয় হতে যাচ্ছে। তোমাদের প্রথম মিলনের পর থেকে তোমার শক্তি কিছু টা তোমার সন্তানের মধ্যে চলে গেছে।
-এতো মেয়ে থাকতে আমরা কেনো লাবন্য কে খোঁজে নিয়েছি?আমরা তো অন্য কাউকে আমাদের কাজে ব্যবহার করতে পারতাম তাহলে?(সামীর)
-না অন্য কাউকে দিয়ে কখনো হবে না।
আমাদের লক্ষে পৌঁছাতে হলে লাবন্য কে দরকার। আমার পক্ষে প্রতিদিন এসে তোমাকে বলে যাওয়া সম্ভব না।যা করার তোমার নিজের বুদ্ধি দিয়ে করতে হবে।কোনো অবস্থা তে আমাদের আসল উদ্দেশ্য কাউকে বুঝতে দেয়া যাবে না।
দিন দিন তুমি লাবন্য প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছো। ভুলে যাচ্ছো কেনো লাবন্য মানুষ আর তুমি সাপ।সাপ যেমন সুযোগ বুঝে মানুষ কে ছোবল দিতে জানে ঠিক তেমন মানুষ ও সাপের বিষ দাতঁ ভেঙে দিতে জানে সব সময় কথা টা মনে রাখবে।
সকাল থেকে লাবন্যের বাবা কে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাতে বের হয়ে গেছে একটু পরে আসবে বলে রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে এখন সন্ধ্যা হয়ে যাবে এখন ও বাড়ি ফিরেনি লাবন্যের বাবা।সব জায়গায় খোঁজা হয়েছে কেউ কোথাও যেতে দেখেনি।লাবন্যের মা সকাল থেকে কান্নাকাটি শুরু করেছে। লাবন্যের বাবা এতো ছোট নয় যে সে হারিয়ে যাবে। কিন্তু তাকে খোঁজে না পাওয়ার রহস্য কিছু বুঝতে পারছে না কেউ। লাবন্যের কেনো জানি মনে হচ্ছে এসবের পেছনে সামীরের হাত আছে।
সামীরের দিকে তাকাতেই সামীর রুম থেকে বের হয়ে যায়। সারা বাড়ি খোঁজে সামীর কে এখন কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।
রাতে কয়েক জন লোক বাড়ি দিয়ে যায় লাবন্যের বাবা কে। লাবন্যের বাবা কথা বলার মতো অবস্থায় নাই তিনি।
দুই দিনে লাবন্যের বাবা কে দেখে চিনা যাচ্ছে না তার চেহারার কারনে।ডান দিকের হাত হতে অর্ধেক মুখ প্যারালাইজড হয়ে গেছে। হসপিটালের সিঁড়ির কাছে পড়ে থাকতে দেখে হসপিটালের লোকজন পুলিশকে জানায়।পুলিশ সব খোঁজ নিয়ে লাবন্যের বাবাকে বাড়িতে পাঠায়।কেনো লাবন্য বাবা স্ট্রোক করলো? কে তাকে হসপিটালে রেখে গেলো?মানলাম অতিরিক্ত চিন্তার ফলে লাবন্যের বাবা স্ট্রোক করেছে কিন্তু যেখানে তিনি নিজে বলেছেন একটু পরে বাড়িতে ফিরে আসবেন সেখানে এতো দূরে এসে কেনোই বা স্ট্রোক করবেন?কি এমন ঘটেছিলো যে আজ লাবন্যের বাবার আজ এই অবস্থা? কে দায়ী এসবের জন্য? সামীর কি করেছে এসব? কিন্তু সামীর তো সারাক্ষণ বাড়িতে ছিলো তাহলে কে?
লাবন্য তার বাবার কাছে যেতেই লাবন্যের বাবার মুখটা ভয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। বার বার লাবন্য কে সরে যেতে বলছে কিন্তু কেউ লাবন্যের বাবার কথা শুনতে পাচ্ছে না।লাবন্য তার বাবার হাত টা ধরতেই অন্য হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে লাবন্যের বাবা লাবন্যের মা কে।লাবন্য কিছু বুঝতে পারছে না কেনো লাবন্যের বাবা লাবন্য কে দেখে ভয় পাচ্ছে? নিজের মেয়ে কেও আজ তিনি ভয় পাচ্ছে যাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসতো এক সময়।লাবন্যের জন্য কি না করেছে তিনি?দিনের পর দিন এতো পরিশ্রম করেছে নিজে না খেয়ে নিজের সন্তানের জন্য রেখে দিতো।নিজের সুখের কথা চিন্তা না করে মেয়ের কথা ভাবতো।আজ সেই বাবাই তাকে দূরে থেলে দিচ্ছে। লাবন্য তো আর জানে না লাবন্যের বাবা শুধু লাবন্য কে দেখছে না তার সাথে ভয়ংকর কিছু আছে যা তিনি কাউকে বলতে পারছেন না।
-তুই যা তোর রুমে। তুই বাড়িতে আসতে না আসতে রহিম মারা গেলো। আজ তোর বাবা অসুস্থ হলো।
তোর জন্য আমার সব শেষ হয়ে গেলো।(লাবন্যের মা)
-লাবন্য কিছু না বলে কাঁদতে কাঁদতে নিজের ঘরে চলে যায়।
সামীর লাবন্যের বাবার পাশে বসে হাসতে। এই হাসি এক তৃপ্তির হাসি।
কয়দিন ধরে লাবন্যের মা লাবন্যের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। কিছু বলতে হলে সামীর কে বলে দেয় লাবন্য কে বলতে।লাবন্যের মা বাবার সাথে লাবন্যের সম্পর্ক টা নষ্ট হলেও সামীরের সাথে লাবন্যের মা বাবার সম্পর্ক টা ঠিক ঠাক আছে বরং আগের থেকে আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
লাবন্যের এখন কি করা উচিৎ কি করলে পরিস্থিতি আগের মতো হবে বুঝতে পারছে না লাবন্য। সামীর কে এতোটা বিশ্বাস করা মোটেও ঠিক হচ্ছে না লাবন্যের মায়ের।লাবন্যের বাবা সব সময় একটা ভয়ের মধ্যে থাকে।
মধ্য রাতে যখন সবাই ঘুমে তখন হঠাৎ লাবন্য লক্ষ করে সামীর তার পাশে নাই। দরজা ভিতর দিয়ে বন্ধ করা।লাবন্য তো ভুলে গিয়েছে সামীর আসলে কোনো মানুষ নয় সে চাইলে দরজা বন্ধ থাকলেও ঘরে ঢুকতে পারে আবার বেরিয়ে যেতে পারে।ঘরের জানালা টা ধীরে ধীরে খোলে লাবন্য বাহিরে দুটো ছায়া দেখা যাচ্ছে। একটা নাহয় সামীর কিন্তু আর একজন কে?কেনোই বা লাবন্যের পরিবারটা কে নষ্ট করে দিতে চাচ্ছে তারা? সামীর কে জিজ্ঞেস করলে সামীর কিছু বলবে না সেটা লাবন্য বেশ বুঝতে পারছে। যা করার লাবন্য কে করতে হবে কিন্তু সামীর যদি বুঝে যায় লাবন্যের উদ্দেশ্য তখন যদি লাবন্যের মায়ের কোনো ক্ষতি করে বসে।সেই দিন যদি সামীরের বাড়ি থেকে পালিয়ে না আসতো তাহলে আজ তার বাবার এই অবস্থা কখনো হতো না। পালিয়ে এসে কি হলো?দিনের পর দিন একটা সাপের সাথে সংসার করতে হচ্ছে তাকে।তার জন্য এই বাড়ির লোকগুলো একটার পর একটা বিপদে পড়ছে।
গ্রামে একটার পর একটা মানুষ মারা যাচ্ছে। পশু পাখি গুলা বাঁচতে পারছেনা তাদের হাতে থেকে।
লাবন্য বুঝতে পারছে তার মধ্যে আর একটা প্রানের স্পন্দন বেড়ে উঠছে।লাবন্যের মা এতো দিন ধরে লাবন্য কে দেখতে না পারলেও এখন লাবন্য কে চোখে হারায়। লাবন্যের বাবা এখন আর লাবন্য কে দেখে ভয় পায় না।
লাবন্য কেনো জানি ভয় হচ্ছে এটা কোনো বড় ধরনের ঝড়ের লক্ষন নয় তো?সামীর আগের মতো হুটহাট করে রাতে বাড়ির বাহিরে যায় না।
.
.
চলবে