অপ্রকাশিত ভালোবাসা,পর্বঃ ১৩+১৪

অপ্রকাশিত ভালোবাসা,পর্বঃ ১৩+১৪
আইরিন সুলতানা
পর্বঃ ১৩

আজকে কথার বিয়ে চারিদিকে হই হুল্লরে মেতে উঠেছে বাড়িটা। মুরুব্বিড়া সবাই কথাকে দোয়া দিয়ে যাচ্ছে। আমি,লাভলি,তামান্না,জান্নাত কথা একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম তখন কথার কয়েকজন ভাবি আসলো রুমে এসে বলল..
যাক অবশেষে আমাদের কথারানি বিদেয় হচ্ছে কি বলো সবাই। (বাকি ভাবিদের উদ্দেশ্য করে বলল ১ম ভাবি)
কিরে কথা এতো নার্ভাস হচ্ছিস কেনো। তোর পছন্দের মানুষের সাথেই তো বিয়ে হচ্ছে। (২য় ভাবি)
কই নার্ভাস হচ্ছি ভাবি। আমি তো ফুল মাস্তি তে আছি। (কথা)
বিয়ের পর তো কথা আমাদের ভুলেই যাবে জামাইয়ের ভালোবাসা পেয়ে। (১ম ভাবি)
কি শুরু করলে তোমরা যাও বের হও আমার রুম থেকে। (কথা)
আমরা শুরু করলেই দোস তাই না শশুর বাড়ি যাও তখন বর শুরু করবে।(২য় ভাবি)
আরে ভাবিরা বর না করলে কে করবে বলো। এই সময়টা তোমাদের জিবনে এসেছিল তোমরাই তো ভালো জানো কথার থেকে। বলবে নাকি কি হয়েছিল। (আমি ভাবিদের চোখ মেরে বললাম)
হিয়া অনেক পেকেছিস মামা বাড়িতে থেকে তাই না। (আমার কান টেনে বলল ১ম ভাবি)
ভাবি কান ছাড়ো ব্যাথা পাচ্ছি আমি আর দুষ্টুমি করবোনা কান ছাড়ো লক্ষি ভাবি। (আমি)
কান ধরাতে লক্ষি ভাবি হয়ে গেলো বাহ খুব ভালো। (২য়য় ভাবি)
উফ যাও তো তোমরা আমি আমাদের বিয়ের কনে কে সাজাই না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। আর তোমাদের যে কাজ করতে বলেছি সেটা কমপ্লিট করো জলদি যাও। (তামান্নাদের উদ্দেশ্য করে বললাম)
আচ্ছা তুমি সাজানো শেষ করে দেখে যেও কাজ কেমন হলো আমরা যাই। (ইশিতা)

আমি কথা কে সাজাতে লেগে পড়লাম লাল রঙ্গের লেহেঙ্গার সাথে সোনালি রঙ্গের ম্যাচিং উড়না লেহেঙ্গার মধ্যে সোনালি স্টোনের কাজ। ব্রাইডাল মেকআপ, সোজা সিথি করে মাথায় টিকলি দিয়ে চুল গুলো খোপা করে খোপায় বেলি ফুলের মালা দিলাম, সাথে ভারি গহনা ঠোটে গাড়ো লাল লিপস্টিক,দুহাতে লাল চুড়ি,কানে বড় ঝুমকো, গলায় ফুলের মালা ব্যস আমাদের বিয়ের কনে রেডি।

আমি কথাকে আয়নার দিকে ফিরালাম…..
আয়নায় যে মেয়েটাকে দেখছিস সে হচ্ছে আমার বন্ধু আমার কলিজা আমার বোন কথা জানিস এই মেয়েটার উপর আমি সেই ছোট বেলা থেকে ক্রাশিত। আমি ছেলে হলে তুরে নিয়ে পালিয়ে যাইতাম। (কানের পেছনে কাজল দিয়ে দিলাম)
যাতে কারো নজর না লাগে আমার কলিজার উপর শোন কথা আজ থেকে তুর অনেক দায়িত্ব আজ থেকে তুই কারো বউ কারো বউমা কারো ভাবি তাই এমন কিছু করবিনা যাতে করে তুর অসম্মান হয়। একটা মেয়ে বিয়ের আগে পর্যন্ত কারো মেয়ে. বোন. বান্ধবি সব থাকে তবে বিয়ের পর তার বর তার সবচেয়ে বড় পরিচয়। এমন কোনো কাজ করবিনা যাতে আয়ান ভাইয়ার সম্মান নষ্ট হয় সবার সাথে মানিয়ে নিবি। কি পারবিনা তুই। (আমি)
হুম তুর মতো বন্ধু আর আয়ানের মতো বর পাশে থাকলে আমি সব পারবো। কিন্তু তুই আমাকে কথা দে আমার বিয়ে হচ্ছে বলে তুই আমাকে পর করে দিবিনা কখনো। (ছলছল চোখ নিয়ে বলল কথা আর একটু হলেই জেনো কেদে দিবে)।
এই পাগলী একদম কাদবি না ঐ চোখ থেকে একফোঁটা পানি পরলে তুরে আমি রান্না করে কাক কে খেতে দিবো বলে দিলাম অনেক কষ্ট করে সাজিয়েছি আপনাকে হুম।(আমি)
হিয়ায়ায়ায়া (ফিক করে হেসে দিয়ে) তুই পালটাবি না তাই না। (কথা)
না আমি সারাজীবন এমন থাকবো। তুই চুপটি করে বসে থাক খবরদার আয়ান ভাইয়ার কল ধরেছিস তো। আমিমি বাহির টা দেখে আসি। (আমি)

আমি কথার রুম থেকে চলে আসলাম। তারপর আমার রুমে গিয়ে দেখে আসলাম যেভাবে চেয়েছি সেভাবে ইশিতারা কাজটা করতে পেরেছে কিনা। হ্যা সব একদম পারফেক্ট। তাই সবাই কে বললাম তৈরি হয়ে নিতে। একটু পর বরযাত্রী চলে আসবে। সবাই আমার রুম থেকে যাওয়ার পর আমি ভাইয়ু কে কল দিলাম কয়েকবার রিং হয়ার পর ভাইয়ু কল রিসিভ করলো…
আসসালামু আলাইকুম। ভালো আছো। (আমি)
ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি তুই কেমন আছিস। (রায়হান)
আলহামদুলিল্লাহ। মামু মামনি কেমন আছেন।(আমি)
সবাই ভালো আছেন। বিয়ে বাড়িতে গিয়ে আর আমাদের মনে নেই তাই না ফোন দিলে ধরবে না নিজেও ফোন করবে না। (রায়হান)
সরি ভাইয়ু আসলে অনেক ব্যস্ত ছিলাম। কনে সাজানোর দায়িত্ব আমাকে দেয়া হইছিল সাথে স্টেজ সাজানো। (আমি)
বাহ বা ভালোই তো । আচ্ছা খেয়েছিস কিছু। (রায়হান)
হ্যা খেয়েছি। তুমি কি কোথাও যাচ্ছ নাকি। গাড়িতে আছো বলে মনে হচ্ছে। (আমি)
হ্যা আমার বন্ধুর ভাই এর বিয়ে সেখানে যাচ্ছি। আচ্ছা তুই গিয়ে রেডি হয়ে নে। গাড়িতে কথা বলতে অসুবিধে হচ্ছে আমি বাসায় গিয়ে কল করবো তুরে। (রায়হান)
ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেজ (আমি)
আল্লাহ হাফেজ।(রায়হান

ভাইয়ুর সাথে কথা শেষ করে শাওয়ার নিলাম তারপর কালো একটা শাড়ি পরে হালকা সাজ দিলাম, চোখে আইলাইনার কাজল, কপালে ছোট একটা কালো টিপ, দুহাতে পাথরের চুড়ি, ঠোটে ম্যাট রেড লিপস্টিক, চুল গুলো একসাইডে সিথি করে ছেড়ে দিলাম। আমার সাজ কমপ্লিট।

দরজার দিকে ঘুরতেই দেখি জয় দরজায় হেলান দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি জয়ের কাছে গিয়ে জয়কে ডাকলাম…
জয়। (আমি)
(চুপ)
এই জয় (আমি)
এখনো চুপ
ঐ হারামি। (খানিকটা চিল্লিয়ে বললাম। জয় কানে হাত দিয়ে আমার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো)
চিল্লাইয়া বাড়ি মাথায় তুলার প্ল্যান করছিস।(জয়)
তো কি করমু তুই তো ভাবনায় বিভোর হইয়া ছিলি। (আমি)
তাই বলে এভাবে চিল্লায় মানুষ। By the রাস্তা এমন কইরা সাজছিস কেন। (রাগি চোখে)
আমি সাজলে তুর কি আমার কলিজার বিয়া আমি সাজমু না এইটা কেমনে হয়। আর তুই কি কম সাজছিস নাকি আমারে আইছে বলতে। হুহ (আমি)
আচ্ছা চল বরযাত্রী কাছাকাছি চলে এসেছে গেইটের বাকি সাজ টা সেরে ফেলি। (জয়)
চল।

আমি জয় তামান্না ইশিতা লাভলি আরো কয়েকজন মিলে গেইটের বাকি সাজ টা শেষ করলাম। এখন শুধু অপেক্ষা বর আসার। কিছুক্ষণ পড়েই বরযাত্রী চলে আসলো আমরা মুরুব্বিদের ভিতরে পাঠিয়ে দিয়ে গেইটে দাড়ালাম।
কি দুলাভাই কেমন আছেন।(আমি)
আপনাদের দুলাভাই কে ভিতরে নিয়ে যান তাহলে দুলাভাই অনেক ভালো থাকবে।(একটা ছেলে)
দুলাভাই কে ভিতরে ঢুকতে হলে যে আমাদের শালা শালিকাদের মন জয় করতে হবে। (আমি)
আরে বেয়ান মন জয় করার জন্য আমরা আছি তো। (আয়ানের মামাতো ভাই)
আপনাদের লাগবেনা আমাদের কি লাগবে আর কতো লাগবে সেটা দুলাভাই জানে তাই না দুলাভাই।(তামান্না)
আচ্ছা সব আগে থেকেই সেটিং করে নিয়েছেন তাহলে। (রবিন)
এতো কিছু জানিনা ভাই আমাদের বোন নিতে হলে আমাদের আবদার পুরন করতে হবেই। (আমি)
আর যদি আপনাদের বোন না নেই। (আয়ানের বন্ধু)
তাহলে এখান থেকেই ফিরে জান। তবে ভিতরে যেতে হলে আমাদের আবদার পুরন করুন ১৫ হাজার টাকা দিন আর ভিতরে জান। (ইশিতা)
এতো টাকা কি আপনারা সবাই আয়ানের কাছে রেখে এসেছিলেন। (আয়ানের বন্ধু)
আয়ান ভাইয়া আজকে কথাকে সেই লাগতেছে উফ আমি ছেলে হইলে তোমার জন্য ফেলে রাখতাম না অনেক আগেই কথা কে নিয়ে পালিয়ে যেতাম। এবার তুমি ভাবো কতক্ষন এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে। টাকা দিতে যতো দেড়ি করবে তোমার বিয়ে হতেও ততো দেড়ি হবে।(আমি)
তাই নাকি মিস হিয়া আমার ভাই কে পাম্প দিয়ে টাকা নেয়ার ধান্দা করছেন। (পেছন থেকে রায়হান)
আমি তো অবাক ভাইয়ু এখানে কিভাবে। মি. রায়হান আপনি কি ভুলে যাচ্ছেন আমি কে। (আমি)
হিয়া আর কতো দাড় করিয়ে রাখবি ভিতরে যেতে দে না। (আবির)
টাকা দাও ভিতরে যাও। (আমি)
এভাবে অনেক্ষন লড়াই করে ১০ হাজার টাকা আদায় করে বর কে স্টেজে নিয়ে বসালাম। বরের পাশে ইশিতা তামান্না ইরা আর লাভলি কে বসিয়ে আমি চলে আসলাম। কিছুদুর যেতেই জয় সামনে পড়লো জয়কে ডেকে বললাম সব মেহমান কে শরবত দিতে হবে আমাকে হেল্প করার জন্য। তারপর আমি আর জয় মেহমানদের শরবত দিলাম। তখন আবির ভাইয়া আমাকে ডাকলো আমি জয়কে বললাম বাকিটা করে নিতে আমি আবির ভাইয়ার কাছে গেলাম…

কিছু লাগবে তোমার ভাইয়া। (আমি)
না এসব বাদ দিয়ে বল তুই এখানে কি করিস।(আবির)
আমার বন্ধুর বিয়ে আর আমি থাকবো না তা কি করে হয় বলো। তাছাড়া এটা আমার নিজের গ্রাম। (আমি)
আচ্ছা তাই বল আমরা তুরে এখানে দেখে পুরা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।(আবির)
ভাইয়ু কই তাকে দেখছিনা যে। (আমি)
হবে কোথাও এদিকেই। বনু তোকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। (আবির)
তোমার তার থেকেও বেশি বুঝি। (আমি)
সে আর তুই কি এক নাকি।(আবির)
তিতুপাখি তোরে চাচী ডাকছে। (জয়)
আবির ভাইয়া এ হচ্ছে জয় আমার ছোট বেলার খেলার সাথী। আরর জয় এ হচ্ছে আমার আবির ভাইয়া। (আমি)
Hi ভাইয়া…. ভালো আছেন।(জয়)
আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো। (আবির)
তোমরা কথা বলো আমি আন্টিমনি কেনো ডাকে শুনে আসি।(আমি)

আমি বাসায় যেতে নিলে কে জেনো আমার হাত ধরে টেনে একটা রুমে নিয়ে গেলো। তারপর কি হলো আগামী পর্বে জানবেন। 😊😊

চলবে……….
অপ্রকাশিত ভালোবাসা
আইরিন সুলতানা
পর্বঃ ১৪

বাসায় যেতেই কে জেনো আমার হাত ধরে একটা অন্ধকার ঘরে নিয়ে গেলো। আমি সেই মানুষটাকে এখনো দেখি নি। রুমে নিয়েই আমাকে দেয়ালের সাথে দার করিয়ে আমার একদম কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে। সেই মানুষটার নিশ্বাস আমার মুখে এসে বাড়ি খাচ্ছে প্রতি মুহূর্ত। আমার আরো একটু কাছে এসে আমাকে বলল..
এভাবে সেজেছিস কেনো বান্ধবীর বিয়েতে এভাবে সাজার কি আছে। (রায়হান)
এ ম নি ত এ ই। (কন্ঠ শুনে বুঝতে পেরেছি অপরিচত মানুষটা আমার ভাইয়ু। ভাইয়ু এতো কাছে আসাতে আমার নিশশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। কথা টাও ঠিক করে বলতে পারছি না।)
ঐ ছেলেটা কে হয় তুর। সারাক্ষন তুর পাশে পাশে থাকে কেনো বল। (রায়হান)
একটু দূরে সরে দাড়াও তারপর বলছি। (আমি)
আমার কথা টা শুনে ভাইয়ু একটু দূরে সরে দাঁড়ায়। এতোক্ষিন মনে হচ্ছে প্রান ফিরে পেয়েছি। আমি বললাম..
ও হচ্ছে জয়। আমার ছোটবেলার খেলার সাথী। এতোদিন দেশের বাহিরে ছিল তাই তুমি আগে দেখোনি। (আমি)
ও বাসায় কবে যাবি। (রায়হান)
কাল যাবো আজ বাড়ি গিয়ে আম্মুর সাথে দেখা করবো ভাবছি। (আমি)
ওবাড়িতে যাওয়ার দরকার নেই। তুরে দেখলেই সবাই আবার খারাপ ব্যবহার করবে আজকে আমার সাথে বাসায় চলে আয়।(রায়হান)
নাহ আম্মুকে দেখতে ইচ্ছে করছে আম্মুর কোলে ঘুমাতে ইচ্ছে করছে। (আমি)
আচ্ছা কাল সময়মত বাসায় চলে আসিস আর ফুপ্পিমনির কাছে গিয়ে আমাকে কল করিস।(রায়হান)
আচ্ছা। (আমি)
ভাইয়ু রুম থেকে চলে যায়। আমি ওখানেই চুপ করে কিছুক্ষণ বসে থাকি। ভাইয়ু আমার এতো কাছে এসেছে আজকে এটা ভাবতেই পারছি না। আচ্ছা ভাইয়ু তো অন্য কাউকে ভালোবাসে তাহলে আমার পাশে কেউ থাকলে সেটা সজ্য করতে পারেনা কেনো। উফ হিয়া তুই কি ভুলে গেছিস ভাইয়ু তুকে বোন ভাবে তাই এরকম করে। হিয়া অনেক কাজ পরে আছে কাজে লেগে পর নইলে অনেক দেড়ি হয়ে যাবে। আমি আন্টিমনির কাছে চলে গেলাম। আন্টিমনির সাথে কথা বলে কনে বিদায়ে কিছু নিয়ম আছে সেসব গোছিয়ে দিলাম।

কথা আর আয়ানের বিয়ে হয়ে গেলো অনেক হইচই করে এবার বিদায়ের মুহূর্ত। বিদায়ের মুহূতে কথা তার বাবার বুকে গিয়ে অনেক কান্না করছে কেউ পারছেনা কথা কে সামলাতে। বিদায়ের মুহূর্তে প্রত্যেকটা মেয়ের অনেক কষ্ট হয়। আপন মানুষ জনকে ছেড়ে একটা নতুন সংসারে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার লড়াই শুরু হয়। নতুন পরিবেশ নতুন মানুষ নতুন পরিবার কেমন হবে জানেনা কথা। তাই তার খুব ভয় করছে সে তো চায় না তার বাবা মা কে ছেড়ে যেতে। কিন্তু মেয়েদের যে যেতেই হবে। এটাই তো বহুকালব্যাপী চলে এসেছে আর চলবেও।
_________________________________________

কথা কে বিদায় দিয়ে আমি আর জয় বেড়িয়ে পরলাম আমার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
তিতুপাখি এখনো কি সবাই তুরে অবহেলা করে।(জয়)
হুম। তবে তাদের অবহেলা টা জায়েজ আছে। (আমি)
শুন আমি ওসব কুসংস্কারে বিশ্বাসি না তাই তুই এসব অন্য কাউকে বুঝা গিয়ে।(জয়)
আচ্ছা বাদ দে এসব তুর কথা বল। (আমি)
আমার কথা আর কি বলবো। ফাইনাল পরিক্ষার পর কলেজ অফ তাই বাংলাদেশ চলে এলাম। (জয়)
পড়াশোনা কেমন করছিস। (আমি)
ভালোই তবে তুরে খুব মিস করি সাথে আমাদের ছোটবেলা। (জয়)
ঠিক বলেছিস। মনে আছে তুই একটু ভুল করলেই আমি তুরে কামড়ে দিতাম। আর তুই আমাকে বকলে সোজা গিয়ে মিমির কাছে বিচার দিতাম।(আমি)
মনে থাকবেনা আবার। সব মনে আছে।(জয়)

আড্ডা দিতে দিতে আমি আমার বাড়ির সামনে চলে আসলাম। আমি বাড়িতে আসবো কেউ জানেনা এমনকি আব্বিজান ও না শুধু ভাইয়ুকে বলেছিলাম। আব্বিজান জানলে আমাকে আসতে বারন করতো। বাড়ির সামনে দারাতেই আমার চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পড়তে থাকে। ৬ বছর পর আজকে আমি আমার বাড়িতে এসেছি নিজের বাড়িতে ৬ বছর পর আসা আমার। চোখের পানি মুছে বাড়িতে প্রবেশ করলাম। বাগানে দাদা দাদি বসে আছে আম্মু কে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। আমি গিয়ে দাদা কে সালাম করতে নিলাম তিনি আমাকে দেখেই পা পিছিয়ে নিলেন আর গম্ভীর মুখে বললেন..
তুমি এ বাড়িতে কি করছ।(দাদা)
আজকের দিনটা থাকতে এসেছি। থাকতে দিবেনা আমাকে দাদু।(আমি)
তুমি আমাকে দাদু ডাকবে না। কাল চলে যাবে মনে থাকে জেনো। (এটা বলেই তিনি চলে গেলেন)
দাদি কে সালাম করতে গেলে তিনিও পা সরিয়ে নিয়ে বললেন… অপয়া অলক্ষি মেয়ে আবার কেনো আমাদের সংসারে এসেছিস আমাদের এতো বড় সর্বনাশ করে মন ভরেনি আবার চলে আসলি। কাল বিকালের আগে আমার বাড়ি থেকে চলে যাবি তুই।
জয় কিছু বলতে নিলে আমি জয়কে চুপ করিয়ে দিলাম। জয়ের এক হাত শক্ত করে ধরে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলাম কান্না আটকানোর। কিন্তু পারলাম না আমার চোখ আমার বিরুদ্ধেই যাচ্ছে। কান্না চাপিয়ে জয় কে নিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করলাম আম্মু আমাকে দেখে রান্নাঘর থেকে ছুটে আসলেন আর আমাকে তার বুকে জরিয়ে নিলেন।
হিয়া কেমন আছিস তুই। কতোদিন পর তোকে দেখলাম।(আম্মু)
ভালো আছি আম্মু আপনি কেমন আছেন। (আমি)
হুম ভালো। জানিয়ে এলিনা যে। দাদা দাদু কিছু বলেছে তুকে। (আম্মু)
নাহ কেউ কিছু বলেনি আমাকে।(আমি)
বাহ হিয়া তুই তো খুব ভালো মিথ্যে বলতে শিখেছিস। একটু আগেও দাদা দাদি তুরে অনেক অপমান করেছে। আর এখন তুই বলছিস কেউ কিছু বলেনি।(জয়)
হিয়া জয় যা বলছে তা কি সত্যি। (আম্মু)
তোমার মেয়ে কি বলবে সে তো ছোট থেকেই এমন। (জয়)
বাদ দাও তো আম্মু। আমি একটু রেস্ট নিতে চাই আমাকে রুম দেখিয়ে দাও। (আমি)
তোমার রুম তোমারি আছে গিয়ে বিশ্রাম নে যা। (আম্মি)

আমি আমার রুমে গেলাম। বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই চোখে একরাশ ঘুম এসে ভর করলো। ঘুম থেকে উঠে দেখি চারিদিক অন্ধকারাচ্ছন্ন। মোবাইলো সময় দেখলাম ৮ টার মতো বাজে। তারমানে আমি অনেক্ষন ঘুমিয়েছি। হাত মুখ ধুয়ে বের হতেই পাশের রুমে আমার দাদি ফুপ্পি কে চিল্লিয়ে কি জেনো বলছে। আম্মুর রুমের দিকে যেতে যেতে শুনলাম দাদি ফুপ্পি কে বলছে..
কাল পর্যন্ত সজ্য। কর কাল বিকেলে চলে যাবে। (দাদি)
ঐ অপয়া অলক্ষি মেয়েটাকে জায়গা দিয়েছ কেনো তুমি ঐ মেয়ের জন্য আমি আমার মেয়েকে হারিয়েছি। (ফুপ্পি)
শান্ত হ মা আমি দেখছি কি করা যায়। (দাদি)
আমি আম্মুর রুমের দিকে যেতে নিলেই দাদি এসে আমাকে যাচ্ছে তাই বলে যায় এটা নতুন না ছোট থেকেই দাদার বাড়ির সবার অবহেলা অনাদরে বড় হয়েছি আমি। আমার ভুল কি আমি জানিনা তবে দাদি বলে আমি অপয়া অলক্ষি আমার জন্মের কিছুদিন পর নাকি ফুপ্পির বড় মেয়ে মারা যায়। তাই ফুপাজি ফুপ্পি কে আমাদের বাড়িতে রেখে যায়। আর নিয়ে যায় নি। সেই থেকে পরিবারের সবার কাছে আমি অপয়া। আমি আম্মুর কোলে সুয়ে আছি কান্না কিছুতেই দমিয়ে রাখতে পারলাম না। আল্লাহ কেনো আমার সাথে এরকম করেন। আমি জন্ম নেয়াটাকি আমার অপরাধ যে আমার কপালে দাদা দাদির ভালোবাসা জুটবে না। এই ১৮ টা বছরে এমন কোনো দিন নেই যে আমার দাদা দাদি আমাকে অভিশাপ দেয় নি। আমার কি ইচ্ছে করেনা সবার মতো আমাকেও আমার দাদা দাদি অনেক আদর করুক ভালোবাসুক। এসব ভাবছি আর আর কান্না করছি।

হিয়া আর কান্না করিস না। অনেক্ষন ধরে কান্না করছিস এভাবে কাদলে অসুস্থ হয়ে যাবি তুই প্লিজ লক্ষি মা আমার কান্না থামা।(আম্মু)
না আম্মু আমি অলক্ষি অপয়া আমি। (আমি)
এভাবে বলে না মা রায়হান কতো বার কল দিয়েছে জানিস। দেখ এখন কল দিয়েছে নে কথা বল আমার কাজ আছে আমি বাহিরে যাই।(আম্মু)
আমি নিজেকে শান্ত করে কল ধরলাম আমার কান্না শুনলে ভাইয়ু এখনি চলে আসবে।
হ্যালো হিয়া কল ধরছিলি না কেন এতোক্ষন। (রায়হান)
ভাইয়ু ঘুমিয়ে ছিলাম।(আমি)
হিয়া কি হয়েছে তুর। তুর গলা ভারি লাগছে। তুই কান্না করছিস কেনো।(রায়হান)
ঘুম থেকে উঠলাম তো তাই এমন শুনাচ্ছে। (আমি)
৫ মিনিট পর কল দিতেছি ফোন টা হাতে রাখবি। (রায়হান)

রায়হান হিয়াকে কিছু না বলতে দিয়েই ফোন কেটে জয় কে ফোন দেয়। বিয়ের অনুষ্ঠানেই আবির জয়ের নাম্বার নিয়ে নিয়েছিল। জয়কে ফোন দিয়ে সব শুনে রায়হানের রাগ সপ্তম আসমানে উঠে যায়। রায়হান আবার হিয়াকে কল দেয়।
৩০ মিনিট সময় দিলাম তুরে ব্যাগ গুছিয়ে নিজে রেডি হয়ে থাক। (রায়হান)
এবারো হিয়া কিছু বলতে পারলো না রায়হান কল কেটে দিয়েছে। হিয়া রায়হানের কথা মত সব গুছিয়ে নিলো। ৪৫ মিনিট পর রায়হান বাইক নিয়ে হিয়াদের বাসায় আসেসে বাইক থেকে নেমে সোজা হিয়ার দাদার রুমে যায় রায়হান..

To be continue………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here