গল্প:অপ্রকাশিত ভালোবাসা,পর্ব:৭+৮
লিখা: আইরিন সুলতানা
পর্ব:৭
হিয়ার স্কুল ছুটির সময় রায়হান হিয়াকে নিতে হিয়ার স্কুলে আসে। স্কুলের সামনে এসে দেখে হিয়া রাস্তায় দারিয়ে একটা ছেলের সাথে কথা বলছে সেটা দেখে রায়হানের রাগ উঠে যায়। 😡😡 ও গিয়ে হিয়ার হাত ধরে একপ্রকার টেনে সেখান থেকে নিয়ে চলে আসলো……
হিয়া: উফ ভাইয়ু হাত ছাড়ো খুব ব্যাথা লাগছে হাতে। 😭😭 ( রায়হান এতো শক্ত করে ধরেছে যে হিয়া ব্যাথায় কান্না করছে)
রায়হান: কান্না করছিস কেনো হিয়া অনেক বেশি ব্যাথা পেয়েছিস তাই না। কান্না থামা তুর কান্না যে আমার সহ্য হচ্ছেনা কান্না থামা প্লিজ। ( হিয়ার চোখে পানি দেখে হুস আসে আর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাত লাল হয়ে গেছে)
হিয়া: তুমি খুব পচা আমাকে ব্যাথা দিয়েছ আমাকে হাত খুব জালা করছে। 😭😭
রায়হান: আমি কি করবো তুই ঐ ছেলের সাথে কথা বলছিস দেখে আমার খুব রাগ উঠে গিয়েছিল। তুরে স্কুলে পরতে পাঠাইছে ছেলেদের সাথে কথা বলতে না। বুঝতে পেরেছিস। ( রায়হান নিজেও জানেনা কেনো রাগ উঠেছিল হিয়ার সাথে ছেলেটাকে দেখে )
হিয়া: আরে ঐ ভাইয়াটা আমাকে ডেকে কথা বলছিল আমি ইচ্ছে করে কথা বলেছি নাকি। 😒😒
রায়হান: আচ্ছা ভুল হয়ে গিয়েছে এবার মাফ করে দিন আর বাসায় চলুন। সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের। 😊😊
হিয়া: আচ্ছা চলো । ☺☺
হিয়া রায়হান বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে মি. শরিফ এবং সেলিনার সাথে আড্ডায় মেতে উঠে…..
মি. শরিফ: রায়হান রেজাল্ট জানালে না কেনো আমাকে। ( গম্ভীর হয়ে )
রায়হান: ইয়ে মানে আব্বু মাথায় ছিলনা 😰😰
মামনি: তুর রেজাল্ট দিয়েছে আজকে😲😲 রেজাল্ট কেমন হয়েছে 😰😰
হিয়া: আরে মামনি টেনশন করতেছো কেনো ভাইয়ু সব সময় সবার আগে থাকে আর এবারো থাকবে সো চিল 😁😁
মি. শরিফ: আমার হিয়া মামনি একদম ঠিক বলেছে আমার ছেলে কখনো পেছনে পরতে পারেনা। ( চোখে আনন্দের হাসি )
সেলিনা: সত্যি 😃😃 ( মুখে আনন্দের হাসি চোখে পানি )
রায়হান: আহ মা খুশির দিনেও কান্না করবে তুমি। তুমি জানোনা তোমার চোখের পানি আমার সহ্য হয় না। ( মা কে জরিয়ে ধরে )
সেলিনা: আমার লক্ষি ছেলে।
এভাবেই কেটে গেলো কয়েকটা বছর……..
হিয়া এখন কলেজে পড়ে। আগের থেকে বাচ্চামি টা বেড়েছে বয়সের সাথে সাথে আরো বাচ্চামি টাও জেনো বাড়ছে হিয়ার। বাসায় থাকলে সারা বাসা মাতিয়ে রাখে হিয়া। রায়হান এখন অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র। সে এখন বুঝতে শিখেছে হিয়াকে ছাড়া তার চলবেনা। হিয়াকে সে সব সময় আগলে আগলে রাখে। প্রতিরাতে হিয়াকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা রায়হানের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। প্রতিরাতে হিয়াকে নিয়ে সপ্নচাড়ন করে সে।
একদিন রাতে…….
রায়হান ছাদে সিগারেট হাতে দাড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে কি জেনো ভাবছে এক মনে সিগারেটে ফু দিবে এমন সময় পেছন থেকে তার প্রেয়সীর ডাক শুনে সিগারেট তা নিচে ফেলে দেয়। হিয়া রায়হানের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে……
হিয়া: সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস করলে কবে থেকে। 😒😒
রায়হান: কই নাতো সিগারেট কেনো খাবো আমি। ( জোর পুর্বক হেসে)
হিয়া: আমি নিজে দেখেছি আমার দেখা কি ভুল?? ( মন খারাপ করে )
রায়হান: না। আসলে সরি একটা বিষয় নিয়ে আপসেট ছিলাম তাই। 😞😞
হিয়া: ভাইয়ু কি হয়েছে তোমার কি নিয়ে টেনশন করছো বলো আমাকে। ( রায়হানের গালে হাত দিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে )
রায়হান: জানিস আমি একজনে খুব ভালোবাসি খুব খুব খুব ভালোবাসি কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে সে হয়তো আমাকে ভালোবাসে না। জানিস তাকে একটু সময় না দেখলে আমি মনে শান্তি পাই না। আমি খুব ভালোবাসি রে তাকে। ( হিয়াকে জরিয়ে ধরে কান্না করছে আর বলছে)
হিয়া: সে বুঝবে ভাইয়ু তুমি তাকে নিজের মনের কথা জানিয়ে দাও। তোমাকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখতে পারবো না আমি। 😞😞
অনেকক্ষণ পর রায়হান শান্ত হলো হিয়া রায়হান বুঝিয়ে রুমে নিয়ে গেলো….
হিয়া: এবার চুপটি করে ঘুমাও আমি মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছি।
রায়হান বাদ্ধ ছেলের মতো হিয়ার কথা মেনে শুয়ে পড়ল। একসময় ঘুমিয়ে গেলো রায়হান। হিয়া রায়হানের মুখের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল……
চলবে……….
অপ্রকাশিত ভালোবাসা
আইরিন সুলতানা
পর্বঃ ৮
হিয়া রায়হানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর একটু আগে কি হলো সেটা ভাবছে……..
ভাইয়ু যা বলল সব কি সত্যি? না এসব সত্যি হতে পারেনা। ভাইয়ুর কথা সত্যি হলে আমি বাচবো কিভাবে। আমিও যে অনেক ভালোবাসি তোমাকে ভাইয়ু। তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত ভালো থাকবো না আমি। আল্লাহ প্লিজ ভাইয়ু কে আমার থেকে কেড়ে নিও না। ( রায়হানের মুখের দিকে তাকিয়ে) এ আমি কি ভাবছি স্বার্থপরের মতো শুধু নিজের ভালোবাসার কথা চিন্তা করছি। আর ভাইয়ু যে কাউকে ভালোবাসে ভাইয়ু তার ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে থাকতে পারবে না এটা কেনো মাথায় আসলো না আমার। ( রায়হানের কপালে একটা চুমু দিয়ে ) ভাইয়ু তুমি ভালো থাকো তোমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে। তুমি ভালো থাকলেই আমি খুশি। তোমার ভালোবাসার জন্য আমি সব করতে রাজি আছি। শুধু তোমাকে ভালো থাকতে হবে। তোমার মুখের এই মধুময় হাসি টা না হয় আমি আমার ভালোবাসা বলে মেনে নিবো। অনেক ভালোবাসি তোমাকে।
হিয়া নিজের রুমে চলে যায় সারারাত এপাশ ওপাশ করেই কেটে যায় ঘুম আর হয় না হিয়ার। নিজের কষ্ট টাকে কান্নার মাধ্যমে বিলিন করে দেয়। ভোড়ের দিকে হিয়ার চোখ লেগে আসে।
সকাল ৮ টা………
রায়হান ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে ডাইনিং টেবিলে আসে….
Good Morning ( রায়হান)
Good Morning একা কেনো আজ হিয়া কি ঘুম থেকে উঠেনি এখনো । ( মি. শরিফ)
হিয়ার মাথা ব্যাথা করছে তাই এখন খাবেনা। তোমরা নাস্তা শুরু করো। হিয়ার নাস্তা আমি পরে গিয়ে দিয়ে আসবো । ( মামনি)
কলেজ যাবেনা নাকি পরে পরে ঘুমাচ্ছে বাহানা দিয়ে। ( রায়হান একটু রেগে বলল কারন হিয়া কলেজ না যাওয়ার জন্য অনেক বাহানা করে)
নাহ মেয়েটার শরির আজকে সত্যি খারাপ মনে হলো। মুখ টা ফ্যাকাসে হয়ে আছে। ( মামনি)
আমি একটু গিয়ে দেখে আসি কি হয়েছে ম্যাডামের। (রায়হান)
একদম না তুই আমার মেয়েটাকে বিরক্ত করবি না এখন চুপ চাপ নাস্তা শেষ করে রুমে যা। ( মি. শরিফ)
আচ্ছা। (রায়হান)
নাস্তা শেষ করে যে যার মতো বের হয়ে গেলো। মি. শরিফ গেলো স্কুলে। মামনি দুপুরের রান্নার ব্যবস্থা করার জন্য। আর রায়হান গেলো হিয়ার রুমে হিয়াকে দেখতে…
হিয়া এতো ঘুমালে চলে বল তো খাবার খেতে হবেনা। উঠে পড় এবার আর ঘুমাতে হবেনা এখন। ( রায়হান হিয়াকে টেনে ঘুম থেকে তুলে)
উফ ভাইয়ু আমার ভালোলাগছেনা তুমি যাও না প্লিজ আমাকে ঘুমাতে দাও একটু। ( ঘুম ঘুম কন্ঠে হিয়া বলল)
একটু ও না নাস্তা করে এসে আবার ঘুমাস এখন আগে নাস্তা করবি আয় আজকে আমি নিজের হাতে খায়িয়ে দিবো তুকে। ( ব্রাশে পেষ্ট লাগিয়ে এনে) যা ব্রাশ করে আয় গিয়ে নইলে কিন্তু আজ সারাদিন কথা বলবো না। (রায়হান)
খাবার নিয়ে এসো আমি ফ্রেস হয়ে আসছি। ( ব্রাশ হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় হিয়া)
কিছুক্ষন পর রায়হান খাবার নিয়ে এসে হিয়াকে খায়িয়ে দেয় তারপর হিয়াকে ঘুম পারিয়ে দিয়ে নিজের কাজে চলে যায়।
দুপুরবেলা হিয়া ঘুম থেকে উঠে নিচে যায়….
মামনি ব্যাথার স্প্রে টা কোথায় আছে গো। (হিয়া)
রায়হানের রুমের ড্রয়ারে আছে কেনো তুর মাথা ব্যাথা কি এখনো কমেনি। (মামনি)
নাহ একটু করছে। আর শুনো আমাদের গ্রামে আমার একটা বান্ধবি আছে না কথা নাম ছিল যে। (হিয়া)
হুম কথার কি হয়েছে হটাৎ আজ কথার ব্যাপার আমাকে বলছিস আগে তো বিশেষ কিছু ছাড়া বলতি না কোনো সিরিয়াস ব্যাপার নাকি। ( মামনি)
আরে তেমন কিছুই না কথার বিয়ে ৩দিন পর আর সে বায়না ধরেছে আমাকে হলুদে থাকতেই হবে তুমি কি বলো যাবো নাকি যাবোনা। (হিয়া)
যাবি না কেনো পাগলি। তুর বান্ধবির বিয়েতে তুই যাবি না এটা কেমন কথা বল। আমি তুর মামু কে বলে দিবো আজ রাতে ঠিক আছে এবার ব্যাগ গুছিয়ে নে। (মামনি)
মামনি তুমি অনেক ভালো। আচ্ছা শুনো আজ আব্বু আসবে আমি রাতের রান্না টা করতে চাই তুমি আমাকে সাহায্য করবে তো। (হিয়া)
না সব আবদার শুনবো কিন্তু রান্নাঘরের পাশে ও জেনো তোমাকে না দেখি আমি। (মামনি)
মামনি প্লিজ আব্বু আর মামুর জন্য একদিন রান্না করি আমি প্লিজ প্লিজ প্লিজ মামনি। ( হিয়া)
তুই রান্না ঘরে গেলে তুর মামু চিল্লিয়ে বাড়ি মাথায় তুলবে আমি এসবে নেই বাবা। (মামনি)
না কিছু হবেনা মামুকে যা বলার আমি নাহয় বলবো। একদিন ই তো প্লিজ। (হিয়া)
আচ্ছা যা মন চায় কর। আমি রুমে যাই একটু। (মামনি)
আচ্ছা। (হিয়া)
সন্ধেবেলা________________________
চলবে……..