কায়নাত,পর্বঃ১২শেষপর্ব

কায়নাত,পর্বঃ১২শেষপর্ব
লেখিকাঃ টিউলিপ রহমান

আমরা তাকিয়ে দেখি সে আর কেও না আহনাফ! হ্যাঁ আহনাফ এসেছে। কিন্তু কি করতে এসেছে। সবই তো ঠিক হচ্ছিলো।তাহলে?? এখন ও কি করতে এসছে? আহনাফ এসে ঠিক ইবাদতের পাশেই বসেছে। বসেই আমাকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে একটা মিডিয়াম সাইজের প্যাকেট হাতে ধরিয়ে বলল
— শুনলাম তুমি খুব অসুস্থ তাই দেখতে এসেছি।
–হ্যাঁ এইতো, এখন একটু ভালো লাগছে।(আমি)
— তা কি হয়েছিল?হাতে, মাথায় দেখি ব্যান্ডেজ!

আমি একটু চমকে ইবাদতের দিকে তাকালাম। তারপর ইবাদত বলল
–না তেমন সিরিয়াস কিছু না শরীরটা দুর্বল। সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে ব্যাথা পেয়েছে।
আমিও সায় দিয়ে বললাম
— হ্যাঁ, এটাই।তা প্যাকেটে কি আছে?
–খুলেই দেখো কি না প্লিজ ?? ( হাসি দিয়ে) (আহনাফ)

তারপর খুলে দেখি অনেকগুলো ক্যাটবেরী চকলেট। আমি সেগুলো দেখে হেসে দিলাম আর বললাম
— এগুলোর কি দরকার ছিল।
–না, ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি আনবো। পরে মনে হলো এই জিনিসটা ছোট বড় প্রায় সবাই পছন্দ করে তাই আনলাম। ফল আনতে পারতাম কিন্তু তুমি কি লাইক করো বা ডিসলাইক করো সেটা তো আমি জানিই না, তাই এগুলো তোমার জন্য । ( আহনাফ হেসে)
— ও, ধন্যবাদ। (হেসে)(আমি)

ইবাদত পাশে মাথা নিচু করে চুপ করে বসে আছে।আমার ওকে দেখে একটু মন খারাপ হলো। ইবাদত আর আহনাফ পাশাপাশি বসে আছে। দেখতে কিন্তু কেও কারো চেয়ে কম নয়। যে কোনো মেয়েই কনফিউস হয়ে যাবে কাকে ভালোবাসবে।সে দলে আমিও পরি। তারপর আহনাফ আমাকে বলছে

— কায়নাত! তোমার সাথে আমার একটু জরুরী কথা আছে, বলা যাবে কি?
এটা শুনেই আমার কলিজায় মোচড় দিল, ও শুধু আমার সাথে দেখা করতে আসেনি, ওর প্রশ্নের উত্তর নিতে এসেছে।আমি বললাম
–হ্যাঁ অবশ্যই বলুন!
— না এভাবে না, একটু একা কথা বলতে চাচ্ছিলাম।
ইবাদত পাশ থেকে বলছে
–আচ্ছা, কায়নাত তাহলে আমি আসি।
— আবার কখন আসবে?( আমি)
–আসবো, ইনশাআল্লাহ, প্রয়োজন হলে আমাকে খবর দিও। বলে চলে গেল।

তারপর আহনাফ বলল
— তারপর তুমি আমার ব্যাপারে কি চিন্তা করলে?
–কোনটা?
— ঐ যে সেদিন বলেছিলাম না! তুমি কি আমাকে পছন্দ করো কি না?
–ও, আমি আসলে এগুলো নিয়ে চিন্তা করার সময় পাই নি।
— আমি কিন্তু বাবা মা কে তোমার কথা বলে দিয়েছি। তারা তোমাকে দেখতে আসবে।
–কি বলেছেন?
–বাবা মা আমার জন্য মেয়ে দেখছে, আমি তাদের তোমার কথা বলেছি। (মাথা নিচু করে হেসে বলছে)

আমি মনে মনে বলছি আল্লাহ এ কোন বিপদে পড়লাম। ইবাদতের সাথে দেখা হওয়ার আগে হলে আমি না চিন্তা করেই হ্যাঁ বলে দিতাম, কিন্তু এখন সেই অবস্হাও নেই। দোষ তো আমারই, আমিই সেধে সেধে তার কাছে গিয়েছিলাম। হেসে কথা বলেছি,ইবাদত কে জেলাস করার জন্য উনার সাথে ছবি তুলেছি আর উনি ভেবেছে আমি উনাকে পছন্দ করি। আহনাফ যে সুদর্শন একজন পুরুষ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ….

–কায়নাত কি ভাবছ?
— না, কিছু না।
–আচ্ছা, চিন্তা করো না, যা হবে আমাদের ভালোর জন্যই হবে। তুমি কি চাও আমি বুঝে গিয়েছি।আর বলতে হবে না। ( মুচকি হেসে)আচ্ছা ঠিকাছে তুমি রেস্ট করো আমি তোমাকে ফোন করবো, তাহলে এখন আসি?
তখনই মা চা নিয়ে আসলো। আহনাফ মার পা ছুঁয়ে সালাম করলো। মা খুব খুশি হয়ে গেল। বাবাও এসে দাঁড়ালেন। আহনাফ বাবারও পা ছুঁয়ে সালাম করলো। তারা খুব খুশি হলেন। কিন্তু এগুলো শুরু হলো কি! আমি এখনতো এগুলো চাই না, তাহলে??

বাবা, মা দুজনই আহনাফের সাথে কথা বলছে। এক পর্যায়ে আহনাফ বলেই ফেলল
— মা, বাবা আপনাদের সাথে কথা বলতে চান, আপনাদের যদি কোনো আপত্তি না থাকে, তাহলে আগামীকালই আসতে বলবো?
— মানে আপত্তি কেনো থাকবে কোন বিষয়ে ? ( বাবা)
–জী আসলে, আমার আর কায়নাতের ব্যাপারে!
–ও, আচ্ছা, কিন্তু আমরা একটু নিজেরা কথা বলে তারপর বাবা তোমাকে জানাই? ( বাবা)
পিছন থেকে দাদী বলছে
— আবার কি কথা বলার বাকী আছে! মেয়ে বড় হইছে বিয়ে দিতে হবে না? তাছাড়া এই ছেলে আমাদের খুব পছন্দ হইছে। তুই মানা করিস না, ওদের কালই আসতে বলে দে। পছন্দ হলে আংটি পরিয়ে যাবে। এক কাজে দুই কাজ হবে, অসুস্থ মেয়েকেও দেখা হবে আবার বিয়ের কথাবার্তাও পাকাপাকি হবে, কি বলো বৌমা?
–জী, আম্মা।

আমি হা করে শুধু তাদের কথোপকথনই শুনলাম। মানে আমার ইচ্ছার কোনো দাম নেই? আমাকে জিজ্ঞেস করবে না আমার কোনো পছন্দ আছে কি নেই? বা আমি তাকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে চাই কি না!

আহনাফ সবার কাছে বিদায় নিয়ে চলে গেল। আমি মাকে বললাম
— মা আমি এক্ষুনি বিয়ে করতে চাই না! আমাকে একটু ভাবতে দাও।
পাশ থেকে দাদী বলল
–এত ভাবাভাবির কি আছে। বড় হয়েছে বিয়ে করতে হবে। তাছাড়া ভুতে ধরা মেয়েকে যে বিয়ে করতে চাচ্ছে তাই তো তোমার সাত কপালের ভাগ্য! কি মেয়ে রে বাবা! এত কিছু হলো তাও মাথায় একটু বুদ্ধি হলো না!

দাদীর কথাগুলো গায়ে কাঁটার মত লাগলো। আমার কপালে কি কখনো সুখ জুটবে না?এখন আমি কি করবো? কিভাবে বুঝাবো যে আমি ইবাদত কে মন দিয়ে ফেলেছি? বাবা মা কি কখনো আমাদের ভালোবাসা মেনে নিবে? কিভাবে বলবো যে ও একটা জ্বীন?

রাতে আমি বাবা মায়ের বিছানায় শুয়েছি, বাবা আর মা নিচে ফ্লোরিং করে শুয়েছে।ছোটবেলা থেকেই আমার সব রকমের আরাম আয়েশের ব্যবস্থা করেছে তারা। আহনাফকে পেয়ে তারা খুশি। আমি তাদের এই খুশি ছিনিয়ে নিতে পারি না। তারা আমার জন্য কত কষ্ট সহ্য করেছে তার বিনিময়ে আমার এই বিয়েটে রাজি হওয়াটা অতি নগন্য। কিন্তু ইবাদত! ওকে আমি কি করে ভুলে যাবো? ও ওর জীবন দিয়ে আমার প্রান বাঁচিয়েছে।হে আল্লাহ! আপনি আমাকে সাহায্য করুন, এখন আমি কি করবো! এগুলো চিন্তা করছিলাম আর পাশ থেকে মা উঠে বলল
— কিরে মা, ঘুম আসে না? ভয় করছে?
আমি চোখের পানি লুকিয়ে মুছে বললাম
–না মা, ঘুম আসছে না। একটু হাঁটাহাঁটি করি? শুয়ে শুয়ে আমার শরীর ব্যাথা হয়ে গিয়েছে!
— কোথায় হাঁটাহাঁটি করবে?
–একটু হেঁটে ডাইনিং এ যাই?
— হুজুর তো এখনো ঘর বন্ধ করেনি যদি কোনো সমস্যা হয়?
–কিছু হবে না মা, ভাইয়ার বন্ধু তো সবগুলো শয়তানকে মেরে ফেলেছে, যাই না একটু?
— তোর বাবা জানতে পারলে রাগ হবে।
–বাবা জানবে না, আমি চুপিচুপি যাবো আর আসবো। প্লিজ মা!
— আচ্ছা যাও, তাড়াতাড়ি চলে এসো আর খবরদার তোমার রুমে যাবে না, মনে থাকবে?
–হুম।

বলে আমি ধীরে ধীরে হেঁটে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।ভাইয়ার রুমে আলো জ্বলছে না, মানে ভাইয়া ঘুমোচ্ছে। আমি ভাইয়ার রুমে উকি দিয়ে দেখি হ্যাঁ ভাইয়া গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ইবাদতের সাথে আমার জরুরী কথা আছে কিন্তু ওকে কিভাবে ডাকবো? ও বলেছিল মনে মনে ওর নাম নিলেই চলে আসবে। আমি এখানে যদি ওকে ডেকে কথা বলি তাহলে বাসার সবাই টের যেয়ে যাবে যে আমি ওকে আগে থেকেই চিনি! তাছাড়া দাদী, ফুফু টের পেলে পুরো ঘর মাথায় তুলে ছাড়বে ।আচ্ছা আমি এক কাজ করি, আমি আমার রুমে গিয়ে ইবাদতকে ডাকি, তাহলে ওর সাথে নিরিবিলিতে কথা বলা যাবে।আমি ধীর পায়ে আমার রুমে চলে গেলাম। রুমটা একদম বিদ্ধস্থ হয়ে আছে।সব কিছু ওলটপালট। আমার গল্পের বই গুলো ছেড়া অবস্থায় মেঝেতে পরে আছে। চারদিকে রক্ত শুকিয়ে জমাট বেঁধে আছে। পঁচা একটা আঁশটে গন্ধ আসছে। মনে মনে ভাবছি এখানে আসা কি ঠিক হলো? কেমন যেনো গা ছমছম করছে। না আসলে ইবাদতের সাথে কথা বলবো কি করে? আমি একটা পাগল, ভয়ের কি আছে, ইবাদত তো সব গুলো বদজ্বীনকেই মেরে ফেলেছে। এখন এখানে ভয়ের কিছুই নেই। আমি বরং মনে মনে ইবাদতকে ডাকি।তখনই চোখ বন্ধ করে ইবাদতের চেহারাটা মনে করছি আর ওর নাম ধরে ডাকছি।কিছুক্ষণ পর পাখির ডানার ঝাপটার শব্দ শুনে ভয় পেয়ে গেলাম। রাতে কি পাখি উড়ে? রুমের জানালায় কেমন দুইটা বড় ডানার ছায়া পরেছে, এটা দেখে আমার গলা শুকিয়ে গেল। ইবাদতের পাখা আছে কি নেই আমি জানি না। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একটা মানুষ দাড়িয়ে আছে যার দুই টা বড় বড় ডানা আছে। জিনিসটা কি বা কে? আমি একটু শব্দ করে বললাম
— কে ইবাদত? এটা কি তুমি?
কোনো উত্তর পেলাম না! আবার বললাম
–প্লিজ ইবাদত কথা বলো আমার ভয় হচ্ছে।
এখনো কোনো উত্তর পেলাম না।
এইবার আমার খবর হয়ে গেল। আমার আর বুঝতে বাকি নেই সেখানে কি সমস্যা দাড়িয়ে আছে। ভয়ে আমার হাত পা জমে গেল। ব্যাথার কারনে তাড়াতাড়ি চলতেও পারছি না। সেধে কোন বিপদ আবার ঘাড়ে নিয়ে আসলাম আল্লাহ ভালো জানেন।ইবাদত আমার ডাকে সাড়া দেয় না কেনো? এইভাবে যখনই ওকে আমি ডাকি আর সব জ্বীনই সাড়া দেয় শুধু ও ছাড়া। ডানাওয়ালা ছায়াটাকে দেখে মনে হচ্ছে আমার কাছেই আসছে। এই জ্বীন জাতিকে দেখে দেখে এখন আমার এক রকমের সহ্য হয়ে গিয়েছে, শুধু পারিনা তাদের শক্তির কাছে। কারন আল্লাহ তাদের অদৃশ্য শক্তি দিয়ে দিয়েছে তা না হলে আমিও এক দুই হাত দেখিয়ে দিতাম।ইবাদতের সাথে যখন বিয়ে হবে তখন আমি ওর রাজ্যের রানী হয়ে সবগুলোকে দেখে ছাড়বো কিন্তু আল্লাহ তুমি এই যাত্রায় আমাকে রক্ষা করো। এখন যদি আবার কিছু হয় তাহলে বাবা ভীষণ রাগ করবে। তাছাড়া মাও কষ্ট পাবে কারন তাকে আমি বলেছিলাম যে এই রুমে আমি আসবো না।

ছায়াটা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে আর আমি এক পা পা করে পিছিয়ে যাচ্ছি কিন্তু কেনো যেনো দৌড়ে পালাচ্ছি না তা আমি নিজেও জানি না। ভয়ে দুই হাত দিয়ে চোখ ঢেকে দাড়িয়ে আছি আর তখন ইবাদত এসে বলল
— তুমি এখানে কেনো এসেছো? তোমাকে না বারন করেছি ঐ ঘর থেকে বের হতে?

তখনই সেই ছায়াটা একটা কাকের আকার ধারন করে উড়ে গেল। কিছুক্ষণ আগে ছায়াটা স্পষ্ট ছিল না কিন্তু এখন দেখতে পেলাম সেটা একটা বড় কাক। আমি হাত সরিয়ে ওকে দেখে জড়িয়ে ধরলাম তারপর বললাম

–আমি জানতাম তুমি আমার ডাকে সাড়া দিবেই।
— এখানে এতো রাতে কেনো এসেছো?যদি কিছু হতো? তুমি তো এখনো সেফ না! হুজুর এসে ঘর বন্ধ করলেই তুমি চলাফেরা করতে পারবে। তুমি জানো ঐ টা কি ছিল?
–না, জানি না তো ঐটা কি ছিল? তুমি না সব মেরে ফেলেছো?
ইবাদত মনে মনে বলল( ওকে বলার দরকার নেই তাহলে শুধু শুধু ভয় পাবে, এমনেই জীবনে বড় একটা ধাক্কা পেয়েছে)
— নাহ কিছু না, একটা কাক ছিল। যাক বাদ দেও তুমি এত রাতে কেনো এখানে?
–কি করবো বলো, তোমার সাথে কথা ছিল।
— হুম, বলো, কি?
–বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে, আহনাফের সাথে।
— ভালো তো, আহনাফ খুব ভালো ছেলে। বিয়েটা করে ফেলো।
— তোমার মাথা ঠিক আছে তো? আমি তোমাকে ভালোবাসি। বিয়ে করলে তোমাকেই করবো।
— এটা তো কখনই সম্ভব না। মানুষ আর জ্বীনের কখনো মিলন ঘটেনি, ঘটবেও না। তাই যেখানে বিয়ে ঠিক হয়েছে সেখানেই করে ফেলো। এমন ভালো পাত্র সবসময় পাওয়া যায় না।
–আমি এত কিছু জানি না। শুধু তোমাকে চাই।
— তোমার বাবা মার কথাটাও কিন্তু চিন্তা করতে হবে। তারা তোমার বিয়ে নিয়ে কতটা খুশি তুমি কি দেখোনি?
–কিন্তু?
— কোনো কিন্তু নেই, তোমার আমার কোনো ভবিষ্যৎ নেই। আহনাফই তোমার জন্য বেস্ট।এখন যাও রুমে চলে যাও তোমার মা জেগে আছে।বলে ও চলে গেল।

আমার খুব অভিমান হলোওর উপর । ও সবসময়ই নিজের খেয়াল খুশি মত কাজ করে। আমার কথা চিন্তাও করে না। আমার ভালবাসার কোন দামই দেয় না ? কি আশ্চর্য! আমি রুমে চলে আসলাম।এসে দেখি আসলেই মা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। খুব মন খারাপ হচ্ছে।তারপর এসে শুয়ে পরলাম।

সকালে উঠে দেখি বাড়িতে কেমন উৎসব উৎসব একটা ভাব। হুজুর এসে সব ঘরে আযান দিয়ে, একটা করে দরজায় পেরেক গেঁথে ঘর বন্ধ করছেন। মা এসে আমাকে বলল
–তাড়াতাড়ি গোসলটা সেরে আসো,তোমাকে তৈরী করতে হবে। আহনাফের বাবা মা আসবে দুপুরেই। কথা পাকাপাকি হলে আজই তোমার বিয়ে। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। আজ আমার মেয়ের বিয়ে!

বলে আমার কপালে একটা চুমু খেলেন। আমার অন্তরটা ছিড়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে মরে যাই। তখনই দেখলাম বাবার হাস্যোজ্জ্বল চেহারা। কিভাবে আমি এদের মনে কষ্ট দিবো? পারবো না তাদের কষ্ট দিতে। তখনই দাদী এলেন সঙ্গে একটা খুব সুন্দরী মেয়েকে নিয়ে। মেয়েটিকে আমার পাশে বসিয়ে বলছে
— কায়া? তোমার ফুপাতো বোন, শিউলি! সুন্দর না?
আমি মাথা নেড়ে বললাম — হ্যাঁ
— তোমার বিয়া খাইতে আসছে। (পাশে থাকা ফুফুকে বলছে — দেখছো আমাদের শিউলি কিন্তু কায়নাতের থেকেও সুন্দরী, ভালো হইছে না ওকে আনাইছি? দেখবি তুইও সুন্দর, পয়সাওয়ালা মাইয়ার জামাই পাবি কায়ার মত। বলে তদের কি হাসি )

এদের এইসব দেখেই আমার একেবারে গা জ্বলে যায়। আমি উঠে গোসলটা সেরে আসলাম। মা খুব সুন্দর একটা মেজেন্ডা রঙের বেনারসি শাড়ি বের করেছেন সঙ্গে অনেক গহনা। দাদী, ফুফু এগুলো দেখে হিংসায় মরে যাচ্ছে। তাদের পাত্তা না দিয়ে আমি মাকে বললাম
— মা আমাকে একটু ভাত খাইয়ে দিবে, খুব ক্ষিদে পেয়েছে। যদি বিয়ে হয়েই যায় তাহলে আর কোনো দিন এভাবে তো খেতে পারবো না। বলেই মা কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম। মাও আমার সাথে কেঁদেই যাচ্ছে। তারপর আমাকে নিজ হাতে ভাত খাইয়ে দিয়ে সাজিয়ে দিল। আয়নায় দেখলাম, নিজেকে একদম রাজরানীর মত লাগছে। আহনাফের পরিবার এই এলাকার খুব প্রভাবশালী পরিবার। শুনেছি ওরা জমিদারের বংশধর। টাকাপয়সা, ধনদৌলতের কোনো অভাব নেই। আসলেই এটা হয়তো আমার সাত কপালের ভাগ্য। কিন্তু ইবাদত! ইবাদত আমার সাথে এটা কি করলো? ও কিভাবে পারলো আমার সাথে এমন করতে ? বলতে না বলতেই দেখি সে চোখের সামনে হাজির। ওকে দেখে আমার হার্টবিট বেড়ে গেল।ওর হাতে একগুচ্ছ লাল গোলাপ! কি করতে এসেছে? আমাকে বিয়ে দিতে? মনে হচ্ছে দৌড়ে গিয়ে ওর চুলমুল টেনেটুনে ছিঁড়ে দেই।

দাদী ইবাদতকে দেখে দৌড়ে শিউলিকে নিয়ে এসে পরিচয় করিয়ি দিচ্ছে। ইবাদতকে বিছানায় বসিয়ে, তার পাশে শিউলিকে বসিয়ে বলছে
–বাহ! খুব সুন্দর মানিয়েছে তো! একদম মনে হচ্ছে আল্লাহ জোড়া বেঁধে দিয়েছেন, মাশাআল্লাহ। কারো যেনো নজর না লাগে । ইবাদত তুমি তো ডাক্তারী পড়ছো তাই না?
— জী।
–তোমার বাড়ী কই?
— জী সিলেটেই।
— একদিন তোমার বাবা মাকে আনবে এই বাসায় ঠিকাছে? আমরা থাকতে থাকতেই আনবে, মনে থাকবে?
— জী আনবো।

তারপর দাদী ভাইয়াকে দিয়ে ওদের কতগুলো ছবি তুলিয়ে নিল। আর ইবাদতও সুন্দর ঐ মেয়ের পাশে বসে আছে। নির্লজ্জ একটা জ্বীন কোথাকার! আমি তোমাকে ঘৃনা করি।খুব কান্না পাচ্ছিল। তখনই বাবা মার কথা মনে পড়লো। আমি তাদের কখনইই কষ্ট দিতে পারবো না।

মা এসে বলল আহনাফের মা বাব চলে এসেছে। আমি কাঁদো কাঁদো চোখে ইবাদতের দিকে তাকালাম। ও মাথা নিচু করে ভাইয়ার পাশে বসে আছে। ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ওর অন্তরটা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু কেনো এগুলোর বিরোধিতা করছে না! কেনো আমাকে বলছে না যে তোমাকে ভালোবাসি, তুমি শুধু আমার, আর কারোর অধিকার নেই তোমার উপর!

আমাকে মা আহনাফের বাবা মার পা ছুঁইয়ে সালাম করতে বলল। আমি করলাম। তারপর আমাকে আহনাফের পাশে বসিয়ে দিল। ওকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। সুন্দর একটা সেরোয়ানি পরে এসেছে। ওদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে একেবারে বিয়ের প্রিপারেশন নিয়ে এসেছে। আহনাফের মা বললেন

–কায়নাত কে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। আপনাদের কোনো আপত্তি না থাকলে ওকে আমারা আমাদের ছেলের বউ করে উঠিয়ে নিয়ে যেতে চাই। কি বলেন?
— একটা মাত্র মেয়ে আমাদের, এভাবে খালি হাতে কি করে উঠিয়ে দেই?(বাবা)
–না না, আজ আমরা কাবিন করাবো, আপনারা চাইলে পরে অনুষ্ঠান করে তুলে দিতে পারেন।
— জী আচ্ছা, তবে তাই হবে।( বাবা)

তারপর আহনাফের মা আমার হাতে আংটি পরিয়ে দিলেন, হাতে বালা আর গলায় একটা বড় সীতাহার পরিয়ে আদর করে দিলেন। আহনাফ এদের সবার সামনেই আমার হাত ধরলো। সবই ঠিক হচ্ছিলো কিন্তু আমার এগুলো কিছুই ভালো লাগছে না। আমি বার বার শুধু ইবাদত কে দেখছিলাম। ও এখনো চুপ করে বসে আছে। বাবা বিয়ে পড়ানোর জন্য কাজী সাহেব কে নিয়ে আসলেন। তিনি বিয়ে পড়ানোর জন্য দোয়া পড়া শুরু করলেন আর আমার মনে হচ্ছিল তার প্রতিটা দোয়া আমার হৃদয়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করছে। নাহ! আমি আর এগুলো নিতে পারছি না।আর সহ্য করতে পারছি না। মনে মনে বললাম –বাবা, মা আমাকে মাফ করে দিও। তারপর সেখান থেকে সোজা উঠে দৌড়ে আমার রুমে চলে এসে দরজা লক করে দিলাম। আমার এই কান্ড দেখে রীতিমতো সবাই অবাক। আসলে আমি নিজেই অবাক। সবাই এসে দরজা নক করছে। কিন্তু আমি কারো কথার কোনো উত্তরই দিচ্ছি না। জানি না কাজটা ভালো করলাম না মন্দ। আমি আমার ভালবাসার বিজয় দেখতে চাই।

(সমাপ্ত)

[ কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। এভাবে শেষ করলাম যাতে নতুন করে শুরু করতে পারি,সিজেন 2 নিয়ে আসবো।তার জন্য অপেক্ষা করুন একটু ❤❤❤ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here