কায়নাত,পর্বঃ৪
লেখিকা : টিউলিপ রহমান
তার কথায় আমি একটু বিব্রতবোধ করে বললাম
— শব্দ শুনলাম, তাই দেখতে এলাম রুমে কে ঢুকেছে !!
–ও, আমি ভাবলাম আপনি ভুতের ভয় পাইছেন।( বুয়া তার দাঁত গুলো কেলিয়ে )
তার কথাটা শুনে আর অপেক্ষা করিনি, সোজা আবার ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ওয়াশরুমের দরজা ভিতর থেকে আটকে দিয়ে তাকে মনে মনে কতগুলো বকাঝকা করলাম।
—” একটু বেশীই কথা বলে! কথা কি এই মহিলার! আমি নাকি ভুতের ভয় পেয়েছি! ফালতু একটা মহিলা!”
কথাবার্তা শুনে মনে হয় না এই মহিলা সিলেটি। আমরাও অবশ্য সিলেটি নই। বাবার ট্রান্সফার সিলেটে হওয়ায় আমরা এখানে এসেছি। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ছয়। আর এখন উনিশ। অর্থাৎ তেরো বছর হলো আমরা এখানে অবস্থান করছি। বাবা অবশ্য বলেছিল আমাদের ঢাকায় থাকতে কিন্তু মা রাজি হয়নি। মা চায়নি যে বাবা সিলেটে থেকে একা একা থেকে কষ্ট করুক।এখানে আমরা একটা সরকারি কোয়ার্টারে থাকি। আমাদের বিল্ডিং টা চারতলা। আমরা থাকি তিনতলায়। বাবা কাজের সুবাদে মাঝে মাঝে সিলেটের বাহিরে যান। ভাইয়া হোস্টেলে থাকে। কিন্তু বাবা যখন সিলেটের বাহিরে যায় তখন ভাইয়া বাসায় এসে থাকে। বাসায় একা একা থাকার কারনে বেশিরভাগ সময়ই আমি বই পড়ে কাটাই। এছাড়া বিকেলে একটু বান্ধবীদের সাথে নিচে হাঁটাহাঁটি, একটু আড্ডাবাজি করি তবে তা কখনো কখনো।এছাড়া ছাদে যাওয়া আমি খুব পছন্দ করি। মাঝে মাঝে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা ছাদে গল্পের বই পড়ে সময় কাটাই। তখন মায়ের বকাও শুনি সেই লেভেলের । আর যখন পড়ার মত কোনো বই থাকে না তখন আর কি করা, টিভিই থাকে আমার শেষ ভরসা।
.
আজ সারাদিন করার মত তেমন কোনো কাজ ছিলনা বলেই নাস্তা সেরে শুয়ে শুয়ে একটা বই পড়লাম। শেষ হলো আসরের আযানের পর। এর মাঝে মা কয়েকবার এসে পিঠে দুই চারটি চাপড় কেটে গেলো।কিন্তু আমার কোনো খবর নেই। বই পড়া আমার নেশায় পরিনত হয়েছে। বই পেলে পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি সেটাকে হাতছাড়া করি না! খুব মজা করে আজ বইটা পড়েছি। পড়া শেষে বইটা টেবিলের উপর রেখে বিছানা ছেড়ে উঠে ডাইনিং গেলাম। দেখি পুরো বাসা ফাঁকা। মা নেই, ভাইয়াও নেই। আমি যেহুতু গোসল করিনি ভাবলাম গোসলটা সেরে আসি।গোসল সেরেই ভেজা চুলগুলো নিয়ে আমি সোজা ড্রইং রুমে চলে গেলাম। ড্রইংরুমে সোফায় শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছি। বেশ কিছুক্ষণ পর টিভি দেখতে দেখতে হঠাৎ মনে হলো রান্না ঘরে কেও যেনো হাড়ি-পাতিল নড়াচড়া করছে । আমি একটু ঘাড় ঘুরিয়ে রান্নাঘরের দিকে তাকালাম।শব্দটা এখনো হচ্ছে । বোধহয় মা এসছে। উঠে মাকে বলতে গেলাম কিছু বানিয়ে দিতে খুব ক্ষিদে পেয়েছে। কিন্তু গিয়ে দেখি কেও নেই! তাহলে শব্দটা হলো কোথা থেকে? বাহিরে তাকিয়ে দেখি দিনের আলো এখনো আছে। হয়তো অন্য বাড়িতে শব্দ হয়েছে । তাই নিজের মনের ভুল ভেবে আবার আমি টিভি দেখায় মনোনিবেশ করলাম। টিভিতে খুব সুন্দর একটা প্রোগ্রাম হচ্ছে। শুয়ে শুয়ে পা দুলিয়ে খুব মজা করে প্রোগ্রামটা উপভোগ করছিলাম আর তখন মনে হলে আমার কানে একটা গরম বাতাস এসে বারি খেল।তখন আমি চুপচাপ করেই শুয়ে রইলাম। নড়াচড়া করার বিন্দুমাত্র সাহস পাচ্ছি না । গরম বাতাস টা আবার কানে এসে বারি খেল তবে এবার সাথে সাথে বললও
— কায়নাআআআআআ..ত!!
এটা শুনে আমার শরীর যেনো বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গেল। আমি সাতপাঁচ না ভেবে এক লাফ দিয়ে উঠে দৌড়ে বাসার গেট খুলে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম। একতলায় নেমে এসে খুব হাপাচ্ছি। ভয়ে আমার অন্তরআত্না কেঁপে উঠল। এগুলো কি হচ্ছে আমার সাথে? আমি কি দিন দিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি? নাকি সত্যিই ভুত জাতীয় কিছু ছিল! কি ভয়ংকর সেই কন্ঠ! ভয়ে আমার শরীরের সবগুলো লোম খাড়া হয়ে গেল। মাকে যদি এই সব বলি তাহলে মা আমাকে ভীষণ বকা দিবে! নাহ! মাকে এসব কথা বলবো না।( মনে মনে )
.
আশেপাশে তাকিয়ে মাকে খুঁজছি। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসছে। আমার চুলগুলো বাতাসে উড়ছে । তখনই একটা মিষ্টি সুগন্ধযুক্ত বাতাস নাকে লাগলো। যেনো মনে হচ্ছে চেনা পরিচিত কোনো মিষ্টি ফুলের সুভাষ।মনোমুগ্ধকর সেই গন্ধে আমার প্রানটা ভরে গেল।শরীর মন সব জুড়িয়ে গেল। চোখ বন্ধ করে তা মন ভরে উপভোগ করছিলাম।আর তখন
পাশ থেকে কেও একজন কাশি দিয়ে বলছে
— এই যে মিস, ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি?
আমি চমকে তাকিয়ে দেখি সুন্দর, সুঠাম দেহী একজন সুদর্শন পুরুষ আমার সামনেই দাড়িয়ে আছে, মিষ্টি সুগন্ধ টা বোধহয় তার শরীর থেকেই আসছে।আমি একটু বিরক্ত বোধ নিয়ে বললাম
— ঘুমিয়ে যাইনি, তবে একটু চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়েছিলাম এই আরকি ।
— জী, ওটাকেই ঘুম বলে। (বলেই হাসছে) তা এখানে কেনো মিস?
কথাটা শুনেই মেজাজটা বিগড়ে গেল। দেখতে কি সুন্দর অথচ কথাবার্তা কি রকম জঘন্য। তারপর আমি বললাম
— এখানে ঘুমাবো কেনো? আমার কি বাসা বাড়ি নাই নাকি যে ঘুমের জন্য এভাবে রাস্তায় আমাকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ঘুমাতে হবে? আর আপনাকে কি আমার বলতে হবে আমি এখানে কেনো? বড়ই অদ্ভুত মানুুষ তো আপনি !!
— যদি ঘুমানোর জায়গাই থাকে তাহলে এভাবে রাস্তা আটকে ঘুমোচ্ছেন কেনো? কি, বাসা থেকে বের করে দিয়েছে নাকি, হুম? মিস আ -আ -আ, হুম- ঘুমপরী??
–কি এত বড় কথা? আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে? আপনার এত সাহস? আর আমাকে কি নামে ডাকলেন ঘুমপরী?? আপনার এত সাহস!!
তিনি খিলখিল করে হেসে উঠলো যেনো মুখ থেকে মুক্ত ঝড়ছে। অদ্ভুত সুন্দর তার সেই হাসি। আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম। তারপর তিনি বললেন
— আচ্ছা ঠিকাছে সাহস না হয় আর দেখালাম না তবে আপনি একটু সরে দাড়ান আমি ভিতরে যাবো।
–না, একদমই সবো না। দেখি আপনি কি ভাবে ভিতরে যান।আপনি আমাকে অনেক আজেবাজে কথা বলেছেন। এর সোধ আমি নিবোই।
— আপনি যত যাই করুন না কেনো আমি কিন্তু উপরে যেতে পারবো ঠিকইই, তবে পরে কিন্তু আপনি কান্না করতে পারবেন না!
–আমি ঐ রকম মেয়েই নাহ যে কথায় কথায় কান্না করে। আপনি আমাকে বারবারই অপমান করছেন।এরপর আর একটা বাজে কথা বলবেন তো আমি কিন্তু আর সহ্য করবো না।
— কেনো মারামারি করবেন বুঝি ?ওটা করে লাভ নেই আমার সাথে আপনি মারামারিতে পারবেন না।
–বলা নেই কওয়া নেই এভাবে একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে আপনি ঝগড়া করেই যাচ্ছেন, করেই যাচ্ছেন, আপনার খারাপ লাগছে না?
— অবশ্যই না। ঝগড়া টা আপনি প্রথমে শুরু করেছেন আমি নই। আর জায়গা ছেড়ে দিলে আমিও চলে যাই আর ঝগড়াটাও আগে বাড়ে না, ইটস সো সিম্পল!একটা উপদেশ দেই, এভাবে আমার সাথে ঝগড়া করবেন না, যদিও মেয়েরা আমার সাথে একবার কথা বললেই প্রেমে পড়ে যায়! (খিলখিল করে হেসে)
[তার কথাটা আমার খুব গায়ে লাগলো। উনি দেখতে সুন্দর আর আমি দেখতে পঁচা! আড় চোখে তার দিকে তাকিয়ে দেখি আসলেই তো প্রেমে পড়ার মত একটা চেহারা, কিন্তু ব্যবহার? জঘন্য! ঝগড়াটে একটা পাজি ছেলে। ব্যবহার জানে না। ওকে বুঝতেই দেওয়া যাবে না যে আমি ওকে দেখে বিমোহিত। (মনে মনে )]তারপর বললাম
–ইশ! যেই না চেহারা নাম রেখেছে আবার পেয়ারা! আমার বয়েই গেছে আপনার মত একটা ঝগড়াটে ছেলের প্রেমে পড়ার! দুনিয়াতে কি ছেলে মানুষের কমতি আছে যে আপনার প্রেমে পড়বো ? আমাকে বারবার এভাবে অপমান করছেন, এর সোধ আমি নিবোই নিবো।মাইন্ড ইট।
তখনই পিছন থেকে বাবা এসে বলছে
— কিরে কায়া তুই এখানে একা একা দাড়িয়ে কি করছিস?কার সাথে কথা বলছিস?
কায়নাত তার পাশে তাকিয়ে দেখে আসলেই তো লোকটি গেলো কোথায় ? এইমাত্রই তো এখানে ছিল! হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো নাকি, খুব অদ্ভুত ব্যাপার ! হয়তো বাবাকে দেখে ভয়ে কেটে পরেছে।
–না, বাবা! আসলে মার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, বাসায় একা একা ভালো লাগছিল না।
— তোর মা হাঁটতে গিয়েছে?
–হুম।
— আচ্ছা, উপরে চল ।
বাসায় পৌঁছে বাবা সব ঘরের আলো জ্বালিয়ে দিল। আমি ধীরে ধীরে রান্নাঘরে চলে গেলাম, কিন্তু খুব ভয় হচ্ছিলো। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে সব দেখে নিলাম। নাহ সব ঠিক আছে। বাবাকে কি বলবো একটু আগে এখানে কেও আমার নাম ধরে ডেকেছে? রান্নাঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে এগুলো চিন্তা করছিলাম আর তখন খুব জোরে কেও বাসার দরজা নক করলো। আমি একদম চমকে গেলাম। বাবা ভিতর থেকে বলছে কে? তারপর বললেন
–মা দরজাটা একটু খুলে দেখ তো কে এলো?
ভয়ে আমার হৃদপিন্ডটা মনে হয় ধুক ধুক করে শরীর থেকেই বের হয়ে যাবে। হাত, পা কাঁপছে তাও বাবাকে এতটুকুও বুঝতে দেইনি যে ভয় পেয়েছি। দরজা খুলে দেখি মা আর পাশের বাসার আয়েশা ভাবির ছেলে সায়ান এসছে।ও আচ্ছা এর মাঝে আমি ভুলেই গেলাম সেই ভদ্রলোকের কথা যার সাথে কিছুক্ষণ আগে আমি তুমুল ঝগড়া করেছি।সায়ান আমাকে টেনে চুপিচুপি বলছে
— ফুপ্পি ছাদে চলো আমরা সবাই মিলে মানুষ উড়াবো!
–হ্যাঁ? মানুষ?
— হ্যাঁ ঐ যে পিছনে আগুন লাগিয়ে আকাশে উড়িয়ে দেয় যে সেটা।
ওর কথাগুলো শুনে আমি শব্দ করে হেসে দিলাম,হাসতে হাসতে মনে হয় আমার পেট ফেটে যাবে। মাও হেসে দিল। সায়ান চার বছরের একটা ছোট ছেলে। ছোট হলে কি হবে তার মুখে সারাদিন থাকে পাকনা পাকনা কথা। বেশিরভাগ সময় ও আমাদের বাসায়ই থাকে,হয় আমার কান ঝালাপালা করে না হয় মায়ের।আমি ওকে বললাম
–এখন যেতে পারবো না, বাবা বকা দিবে।
— না, তোমাকে ছাড়া আমি যাবো না, আম্মু আছে আর সবাই আছে অনেক মজা করবো। চলো প্লিজ !!
–ওরে পুচকু তোমার নানা বকা দিবে।( আমাকে ফুপ্পি ডাকলেও বাবাকে নানা আর মাকে সে আপু বলে ডাকে। কেনো? জানি না, যখন থেকে ও কথা শিখেছে আমাদের ও এইভাবেই ডাকে)
পাশ থেকে মা বলছে — তোর বাবা এসছে? আগামীকাল না আসার কথা?
–হুম, বাবা এসছে। বোধহয় হাত মুখ ধুচ্ছে। মা, সায়ান বলছে ছাদে যেতে আমি কি যাবো?
— তোর বাবা না এসছে, এখন ছাদে যেতে চাইলেই বকবে।তারপর মা সায়ান কে বলল
— সায়ান সোনা! তোমার ফুপ্পির অনেক পড়া আছে আর তোমার নানাও বাসায়, এখন ছাদে গেলে তোমার ফুপ্পিকে বকা দিবে, বুঝেছো?? তুমি একাই যাও, ঠিকাছে??ফুপ্পি অন্যদিন যাবে।
–না, আমি ফুপ্পি কে ছাড়া যাবো না।( বলে গাল ফুলিয়ে সোফায় গিয়ে বসে পড়ল ।)
পিছন থেকে বলল
— কিরে এখানে এতো হট্টগোল কিসের? (হাত মুখ মুছতে মুছতে বাবা এসে বসলেন সোফায়) ওরে বাবা! এ তো দেখছি আমাদের সায়ান বুড়ো! কিরে বুড়ো কি হয়েছে?
— ফুপ্পি আর আমি ছাদে গিয়ে মানুষ উড়াবো আপু দেয় না।বলে তুমি বকা দিবে।( সায়ান)
— মানুষ?( বাবা )
— বাবা ফানুস। সায়ান ফানুস কেই মানুষ বলছে।(আমি)
— ও তা এই অবস্হা! কিন্তু বাবু এখন রাত হয়ে গিয়েছে। অন্ধকারে কিভাবে উড়াবে? আগামীকাল সকালে উড়িয়ো,ঠিকেছে?
–ঐটা রাতেই উড়ায়, পিছনে আগুন লাগিয়ে। নানা কিছু জানেও না। (বলে হেসে দিল)( সায়ান)
–ও হ্যাঁ তাইতো। আমিও ওকে কি বুঝাচ্ছি। কিন্তু ফুপ্পি এখন যেতে পারবে না। ফুপ্পির অনেক পড়া আছে।(বাবা)
— না, আমি যাবো না। ফুপ্পিকে নিয়েই যাবো,ওখানে সবাই আছে, চলো না ফুপ্পি? অনেক মজা হবে। ( সায়ান )
বাবা একদম নরম মানুষ। সহজে রাগ হয় না। তবে একবার রেগে গেলেই বিপদ।আমরা কখনো বাবার মুখের উপর কোনো উত্তর দেই না। তাই আমি আর মা চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম। তারপর বাবা বলল
–এখন এই যে, এই সন্ধ্যার সময়টা , খুব খারাপ একটা সময়। এই সময় মেয়েরা, ছোট বাচ্চারা বাহিরে গেলে তাদের অনেক ক্ষতি হয়। তাই তুমিও বাসায় চলে যাও। নতুবা তোমারও ক্ষতি হবে।
কথার পিছে মা বাবাকে বলল
— তোমাকে এক কাপ চা করে দিবো?
–হ্যাঁ, নামাযটা পড়ে নেই, তারপর খাবো। তাহলে আমি কি বলছিলাম সায়ান?(বাবা)
— নানা, আম্মু আছে, আরো অনেক মানুষ আছে, কিছু হবে না। তুমি দেখে নিও!
বাবা আর সায়ান কথা বলছিল আর আমি সেখান থেকে আমার রুমে চলে এলাম , মাও রান্না ঘরে চলে গেলো। আমি শিওর ছিলাম বাবা কখনো আমাকে যেতে দিতে রাজি হবেন না। কিন্তু এখনকার বাচ্চারা বড্ড জেদী টাইপের।তাদের বোঝানো খুব কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। তারা যেটা বলে সেটা তাদের চাই চাইই। তাই এই পুচকুও বাবাকে কিভাবে যেনো রাজি করিয়ে ফেলল। আমি আর মা দুরে দাড়িয়ে পুরাই বোকা হয়ে গেলাম।তারপর এই পুচকু আমার কাছে এসে বলল
— চলো ফুপ্পি! আমরা এখন ছাদে মানুষ উড়াবো, চলো!
— কায়া, তাড়াতাড়ি চলে আসবি, ঠিকাছে? (বাবা)
— জী আচ্ছ বাবা।
তারপর বাবা নামাজে গিয়ে দাড়ালো। ওদিকে মা চা বানাচ্ছেন। আমি সায়ানকে বললাম
— চলো, দেখি তোমার মানুষ উড়ানো!
ছাদে গিয়ে দেখি এ কি অবাক কান্ড! এখানে দেখি পুরো বিল্ডিংয়ের মানুষ জড়ো হয়েছে। আমার সমবয়সী, ছোট বেলার খেলার বান্ধবীরাও এসছে।আর সবচেয়ে সুন্দর কথা হচ্ছে আকাশটা তখন কেমন নীলাভ বেগুনী রঙের রুপ ধারন করেছে। আকাশে ছোট ছোট অসংখ্য বাদুড় বা চামচিকা যাকে বলে এলোমেলো ভাবে উড়ে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ হঠাৎ মাথার উপর দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে। তখনই খেয়াল করলাম ছাদের এক কর্নারে কেও একজন উল্টো ঘুরে দাড়িয়ে আছে। মাথার চুলগুলো বাতাসে এলোমেলো ভাবে দোল খাচ্ছে। দুর থেকে দেখতে বেশ ভালো লাগছে। নওরিন, আমার একমাত্র ক্লোজ বান্ধবী,সেও আমার সাথে দাড়িয়ে ছেলেটিকে দেখছে। তারপর বলল
— ছেলেটি কে? সেই কখন থেকেই তার চেহারাটা দেখার চেষ্টা করছি কিন্তু উল্টো দিকেই ঘুরে দাড়িয়ে আছে।(নওরিন)
— চল, চুপি চুপি হাঁটতে হাঁটতে গিয়ে দেখে আসি? (আমি)
— দেখছিস না আয়েশা ভাবি আছে! আরও কত কে। সবাই কি বলবে বল তো?( নওরিন)
— আরে ধুর কিছু হবে না, কেও খেয়াল করবে না, চল।
(আমি)
হাঁটতে হাঁটতে আমরা দুইজন তার থেকে কিছুটা দুরে দাড়িয়ে একজন আরেকজনের সাথে কানাকানি করছিলাম আর তখন তিনি পাশ ফিরে আমাদের দিকে তাকালেন আর আমরা দুইজনই হা করে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ।
( চলবে )