কায়নাত,পর্বঃ৩

কায়নাত,পর্বঃ৩
লেখিকাঃ টিউলিপ রহমান

ঘুমন্ত কায়নাতের পাশে বসে তার মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।মেয়ের আজ এই অবস্থার জন্য সে নিজেকেই দায়ী মনে করছেন। কারন কায়নাত প্রায়ই তাকে অদ্ভুত আওয়াজের কথা বলতো। আর সে প্রতিবারই বলতো এগুলো শুধুমাত্র ওর খামখেয়ালি ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু কে জানত ঐসব অদ্ভুত কথা আজ ওর জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে।হঠাৎ কায়নাত কেমন যেনো নড়ে উঠল।সে সময় রুমে আছে শুধু কায়নাত আর তার মা। বাকীরা অন্য ঘরে। কায়নাতের বাবা তার ঘরে বসে আছেন। আর তৌসিফ তার কোন এক বন্ধুকে খবর দিতে গিয়েছে। কায়নাত আবার কেঁপে উঠলো। কেঁপে ওঠার কারনেই ফাহমিদা চৌধুরী ওর গায়ে হাত দিয়ে দেখছেন জ্বর এসছে কিনা। দু একবার কেঁপে হঠাৎ করেই কায়নাত নিজের জায়গা ছেড়ে সোয়া অবস্থায়ই ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠে শূন্যে ভেসে রইল। এটা দেখে ওর মা চিৎকার করে উঠলো । তার চিৎকারে আশফাক চৌধুরী ছুটে এলো। তবে তিনি আসতে আসতে কায়নাত আবার ওর জায়গায় ফিরে এলো যেমনটি আগে শুয়ে ছিল । দাদী ফুফু এসে দরজার কাছে দাড়িয়ে রইলো । ভয়ে রুমের ভিতরে ঢুকতে চাইছে না।

— কি হয়েছে, ওমন চিৎকার করলে কেনো?( বাবা )

–কায়া যেনো কিভাবে ঘুমের মধ্যে উপরে ভেসে উঠল। ( মা )
— ভেসে উঠল মানে কি ? উপরে শূন্যে আবার কিভাবে ভাসবে? কি অদ্ভুত কথা? ( বাবা)

–সত্যি বলছি। ওকে দেখলাম একটু কেঁপে উঠলো। আমি ভাবলাম ওর হয়তো শীত করছে তাই কপালে হাত দিয়ে দেখি শরীর একেবারে ঠান্ডা। তারপরই এভাবে শোয়া অবস্থায়ই উপরে ভেসে উঠল।( মা)

— বলো কি??কিভাবে এটা সম্ভব। ?( বাবা)
— জানি না। কায়ার বাবা, আমার মেয়ের সাথে এগুলো কি হচ্ছে? ! ( মা কেঁদে কেঁদে)

দুরে দাড়িয়ে থাকা দাদী আর ফুফু এগুলো শুনে
” আল্লাহ গো ” বলে চিৎকার দিল। তখনই দরজায় কড়া নড়ার শব্দ হলো। কন্ঠ শুনে ফাহমিদা চৌধুরী বুঝতে পারলো পাশের বাসার আয়েশা এসছে। কায়নাত আর ওনার খুব ভাব। কায়নাত সুস্হ থাকা অবস্হায় ওরা বেশ গল্প করতো। একসাথে সময় কাটাতো। কায়নাত অসুস্থ শুনে হয়তো দেখতে এসছেন। কিন্তু এখন এই অবস্থায় কিভাবে কায়নাতের সাথে উনি দেখা করবেন! কায়নাতের বাবা তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলে আয়েশাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বিদায় দিয়ে দিলেন, ঘরে আর ঢুকতে দেয়নি। এমনেই কোয়ার্টারে একটা কথা ছড়াতে সময় লাগে না। আর মানুষ তিল কে তো তাল বানায়ই। এখন কায়নাতের যা অবস্থা তাতে উনি যদি এসে দেখেন যে এই অবস্থা তাতে ভয় পেয়ে যাবেন আর হয়তো সবাইকে বলেও দিবেন। ভবিষ্যতে কায়নাত সুস্থ হলে ওর চলাফেরা করতে অনেক সমস্যা হবে ।যাই হোক কায়নাতের বাবা বুঝতে পারলেন কায়নাতের অবস্থা তেমন একটা সুবিধার না। যা করতে হবে তাড়াতাড়ি ই করতে হবে নতুবা মেয়েটা জীবন থেকে খসে পড়বে!

কায়নাত এখন আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে। ওর বাবা মা পাশে বসে আছে! ওর মার ভয়ে হাত কাঁপছে। ওর বাবার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। তিনি মেয়ের হাতটা ধরে দেখলেন বরফের মত ঠান্ডা হয়ে আছে।

বেশ কিছুক্ষণ পর কায়নাত স্বাভাবিক ভাবে ঘুম থেকে জেগে উঠে মার হাতে বসে সুপ খাচ্ছে আর তখন ওর ভাই তৌসিফ, সঙ্গে করে একজন ভদ্রলোককে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। তারা রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথেই কায়নাত ঐ ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে কেমন যেনো চমকে উঠলো । এক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে রইল। ওর হৃদস্পন্দনটা হঠাৎ করেই যেনো বেড়ে গেল। তখন ওর মনে পড়ে গেল প্রায় বিশ দিন আগে ও যখন ছাদে বসে ছিল তখন সূর্য টা প্রায় ডুবু ডুবু ছিল ।ওর মনে পড়ছে, ও ছাদে খুব মন খারাপ করে বসে ছিল। তখন ছাদে খুব সুন্দর বাতাস বইছিল। ঐ বাতাসে ওর খোলা,কোমড় পর্যন্ত লম্বা কালো চুলগুলো দুলছিল। বারবার সেগুলো ওর চোখকে স্পর্শ করে যাচ্ছিল। বারবারই হাত দিয়ে সেগুলো মুখ থেকে সরিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু তাতে বিন্দু মাত্র কাজ হচ্ছে না। সেগুলো আবারও ওর চোখ, নাক, ঠোঁট কে স্পর্শ করেই যাচ্ছিল।

বিশ দিন আগে,( ছাদে বসে কায়নাত )

মা আজ খুব বকেছে। বলছে পড়াশোনায় নাকি আমার একদম মন নেই। সারাদিন আমি নাকি শুধু গল্পের বইই পড়ি।বলেছে বুকসেল্ফ ভর্তি এত এত বই মা সব আগামীকাল বিক্রি করে দিবেন। এটা কোনো কথা হলো!কত কষ্ট করে তিল তিল করে বইগুলো জমিয়েছি। উফ্ ! আমি এখন কি করবো? মাকে কিভাবে বোঝাব যে আমি এখন খুব খুব মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করবো। আর খারাপ রেজাল্ট করবো না। এগুলো চিন্তা করতে করতেই ও পিছন ফিরে তাকালো আর দেখতে পেলো একটা বাচ্চা ছেলে ছাদে বল দিয়ে খেলছে। ও ভালো করে দেখলো। নাহ, চিনতে পারলো না।বিল্ডিংয়ের সব বাচ্চাদেরই ও ভালো করে চিনে। বোধহয় কারো বাসায় বেড়াতে এসছে। কিন্তু আশেপাশে তো কাওকেই দেখছি না। বাবুটা একা একা ছাদে এলো কি করে? হারিয়ে যায়নি তো! ও বাচ্চাটার কাছে গেল। তারপর বলল

— আই বাবু, তোমার নাম কি? কাদের বাসায় এসেছো?

বাচ্চাটা খেলা বন্ধ করে ওর দিকে ফিরে তাকালো, ওকে কেমন যেনো নিস্প্রান লাগছিল। মনে হচ্ছে শরীরে রক্ত কম। কোনো অসুখ করেছে বোধহয়। বাচ্চাটা ফেসফেসে গলায় হঠাৎ করে বলে উঠল

–তোমার বাসায়!

আমার বাসায়! কায়নাত খুব আশ্চর্য হলো। কারন ও আগে কখনো ওকে দেখেনি। আর ওর মা একা একা ওকে কখনো ছাদে পাঠাবে না। তারপর বলল

— ওও, আচ্ছা চলো বাসায় যেয়ে দেখিতো তোমার আব্বু আম্মু কে! আমি তোমাকে ঠিক চিনতে পারছি না।

–কিন্তু আব্বু তোমাকে চিনে।( বাচ্চাটি)
— তাই নাকি? চকলেট খাবে? বাসায় অনেক আছে, চলো তোমাকে অনেকগুলো দিবো!

–তাহলে আমাকে ধরো!

বলে বাচ্চাটি অন্য পাশে দৌড় দিল। কায়নাত ও পিছন পিছন দৌড় দিল এবং খুব অবাক হলো যখন বাচ্চাটা দৌড়ে ছাদের দেওয়াল ভেদ করে অদৃশ্য হয়ে গেল। এটা দেখে ওর মুখ হা হয়ে গেল। নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। তখন ও পুরো ছাদের সব জায়গা খুজে দেখলো। তখনই শুনতে পেলো মাগরিবের আযান হচ্ছে চারিদিকে। ভয়ে ওর শরীরের লোম সব দাড়িয়ে গেল। তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করছে

— মা বাসায় কি কোনো গেস্ট এসেছিল?
–কই ? না তো! কে আসবে এই সন্ধ্যায়। ?( মা )
— ওও
–কেনো কি হয়েছে? কারো আসার কথা? ( মা )
–না, এমনেই মনে হলো কেও এসেছিল।

কায়নাত খুব চিন্তায় পড়ে গেল। এখন যদি মাকে এসব বলে হয়তো ছাদে যাওয়াও ওর বারন করে দিবে। তাই মাকে আর কিছু বলেনি। কিন্তু ছাদে ও কি দেখলো? হতে পারে ভুল দেখেছে । ও এসব জিনিস একেবারে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে হাত মুখ ধুয়ে, হালকা কিছু খেয়ে পড়তে বসলো। আজ অনেকক্ষণ পড়লো। মাও বার বার এসে দেখছে মেয়ে আজ খুব পড়ছে। মনে মনে তিনিও খুব খুশি হয়ে গেলেন। তারপর আর তেমন কিছুই হলো না, আর কায়নাতও সেই ব্যাপারটা ভুলে গেল।

রাতে ঘুমের মধ্যে মনে হলো কেও আমার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কে? মা? আধবুঝু চোখে আমি পাশে শুয়ে থাকা মাকে দেখে নিলাম। কই কিছুই নেই তো! মা তো ঘুমুচ্ছে। অন্ধকারেই চাঁদের যেটুকু আলো এসে ঘরে প্রবেশ করেছে তাতে দিব্বি ঘড়িটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যেটাতে ঘন্টার কাঁটা টা তিনটা ছুঁই ছুঁই। তাহলে হয়তো মনের অজান্তেই এমনটি মনে হয়েছে যে কেও আমাকে স্পর্শ করছে। পাশ ফিরে শুয়ে আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করছি।তখনই মনে হলো আমার ঘরের ফ্লোরে কেও যেনো পা টেনে টেনে হেঁটে যাচ্ছে। শীতের রাত তাই যে কোন শব্দই কানে এসে লাগে।আমি আরো মনোযোগ দিয়ে শব্দটা শোনার চেষ্টা করছি। ভয়ে কম্বলের ভিতর নাক, কান চেপে মুড়ো দিয়ে শুয়ে আছি। মা কি শব্দটা শুনতে পারছে না? ছেঁচড়িয়ে হাঁটার শব্দটা যেনো আরো গভীর হচ্ছে। হঠাৎই একটা জায়গায় শব্দটা যেনো বন্ধ হয়ে গেল।কায়নাত খুব সাহস করে কম্বলটা একটু সরিয়ে দেখার চেষ্টা করলো , আসলেই কি কেও আছে রুমে? কায়নাত চোরকে আবার ভীষণ ভয় পায় । মনে হচ্ছে বাসায় কোনো চোরই ঢুকেছে । দুইদিন আগেই পাশের বিল্ডিংয়ের এক বাসায় চুরি হয়েছে।তাই মনে হচ্ছে বাড়িতে চোর ঢুকেছে। কায়নাত সাহস করে ধীরে ধীরে কম্বলের নিচ থেকে চোখদুটো বের করে দেখলো , কিন্তু আশেপাশে তেমন কিছুই পেলো না।
.

কায়নাত তার বাবা মার দুই সন্তানের মধ্যে ছোট মেয়ে।কায়নাতের বড় একজন ভাই আছে। সে সিলেট মেডিকেলে পড়ছে। ইদানীং সে বাড়িতেই আছে। তৌসিফ কায়নাতের বড় ভাই, সে এখন তার নিজের রুমে ঘুমোচ্ছে। যেটা কিনা এক রুম পরেই। কায়নাত একাই ঘুমায়, তবে গতকাল তার বাবা ঢাকায় যাওয়ায় তার মা তার সাথে শুয়েছে।কায়নাতের রাত জেগে বই পড়ার অভ্যাস কিন্তু আজ পড়েনি। ইদানীং প্রায় রাতেই কায়নাত খুব খারাপ খারাপ স্বপ্ন দেখছে। মাকে অবশ্য এসব কথা বলেছে। মা বলেছে, এগুলো নাকি বেশী বেশী ভুতের বই পড়ার ফল।এখন একা একাই এগুলো সহ্য করতে হবে। ওর এখন একটু একটু ভয় করছে কারন বিকেলে ছাদেও একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। শত ভয়ের পরও মাকে না ডেকে ঘাড়টা একটু উঁচু করে চারপাশটা চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। দেখতে দেখতে ওর চোখ গেল উপরের ঝুলন্ত ফ্যানের পাখায়। সেখানে দেখা মাত্র যেনো ওর দমটা বন্ধ হয়ে গেল। দেখলো একটা কালো, মোটা সাপ ফ্যানের পাখার সাথে প্যাঁচিয়ে, ওর দিকেই তাকিয়ে ঝুলে আছে।এটা দেখে কায়নাতের যেনো সমস্ত শরীর পাথর হয়ে গেলো। ওর মনে হচ্ছে ও কোনো স্বপ্ন দেখছে। সাপটা ওর দিকে ফনা তুলে ছোবল দিতে আসতেই মা বলে চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।
.

পরদিন সকালে একটু দেরী করেই ঘুম ভাঙ্গলো।তাকিয়ে দেখতে পেলাম মা ডাইনিং এ হাঁটাচলা করছে। বুয়া এসছে, তাকে মা কাজ দেখিয়ে দিচ্ছে। ধীরে ধীরে উঠে বসলাম। শরীরটা কেমন দুর্বল লাগছে। চোখে হাত বুলাতে বুলাতেই মনে পড়ে গেল গতকাল রাতের ঘটনার কথা। তাড়াতাড়ি ফ্যানের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সাপটা কি এখনো আছে কিনা! নাহ, কিছুই নেই, তবে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে দৌড় দিয়ে ডাইনিং এ মায়ের কাছে চলে গেলাম।

— কি ব্যাপার, রাতে কি হয়েছিল? অমন চিৎকার কেনো করেছিস? (মা)
— মা, তুমি দেখোনি, রুমে ফ্যানের সাথে বিশাল একটা সাপ?
— সাপ? কি বলছিস, না কই দেখিনি তো!আর এখানে সাপ আসবে কোথা থেকে, রাতে কি স্বপ্ন দেখেছিস?
— না মা, স্বপ্ন দেখিনি। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমি সাপই দেখেছি। আরো শুনেছি, ঘরে ঢোকা চোরের হাঁটাচলার শব্দ।।

–চোর! কি জানি! সকালে তেমন কিছুই মনে হলো না যে চুরি হয়েছে।আর তেমন কোনো আলাতমও পেলাম না। আচ্ছা, আমি সব দরজা জানালা ভালোভাবে চেক করে দেখছি। এছাড়া তোর ভাইয়াও তো রাত জেগে পড়েছে! ও ঘুম থেকে উঠলে আমি ওকে জিজ্ঞেস করবো কোনো শব্দ শুনেছে কিনা।

— হুম, ঠিকাছে, তবে মা আমি শুনেছি,আর আমার খুব ভয়ও লেগেছিল।
–ভয় লাগলে আমাকে ডাকিসনি কেনো?তুই না বুঝেছিস এসব ভুতের গল্প টল্প পড়া ছেড়ে নিজের পড়ালেখায় মন দে।এই ভুতের গল্প পড়ে পড়েই তোর মাথাটা নষ্ট হয়েছে। আজেবাজে জিনিস পড়া বাদ দে, দেখবি এসব ভয় টয় সব চলে যাবে।হাত মুখ ধুয়ে আয়, নাস্তা দিচ্ছি।

পাশ থেকে বুয়া তার কাজ বাদ দিয়ে আমাদের মা মেয়ের কথা শুনছিল। পরে তিনি বলল
— খালা আমার মনে হয় আপনার মাইয়ারে মসজিদের হুজুরের কাছ থেকে পানি পড়া আইনা খাওয়ানো উচিৎ । স্বপ্ন দেইখ্যা আফায় ভয় পাইছে।( বুয়া)
–আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিকাছে! তুমি এখন তোমার কাজ করো।(মা)

মা আমার হাত ধরে টেনে সেখান থেকে নিয়ে রুমে আসলো। তারপর বলল
— দেখলি তো! বুয়া সব কিছু শুনে ফেলেছে। এখন বাড়িতে বাড়িতে কাজ করবে আর পুরো কোয়ার্টার জুড়ে এই গল্প করেই বেড়াবে। কথা বলার সময় একটু
আশেপাশে দেখে নিবি তো! কি যে করিস না! এখন বিকেলে নিচে হাঁটতে গেলেও সব ভাবিরা কত প্রশ্ন করা শুরু করে দিবে। তোর এই জিনিসগুলোই আমার খুব বিরক্ত লাগে। যা! এখন মুখ ধুয়ে, নাস্তা খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর!

মায়ের কথাগুলো শুনে খুব কষ্ট লাগলো। মা সবসময়ই আমাকে শুধু বকা ঝকা করে । একটুও ভালোবাসে না। সব ভালোবাসা তার ডাক্তার ছেলের জন্য। এক গাদা বকা খেয়ে পেট ভরে মাথা নিচু করে চলে গেলাম ওয়াশরুমে। ওয়াশরুমের আয়নায় দেখে দেখে দাঁত ব্রাশ করছিলাম আর চিন্তা করছিলাম আসলেই কি আমি স্বপ্ন দেখেছি না সত্যি ছিল? তাহলে গতকাল রাতে যা দেখেছি, শুনেছি সবই আমার কল্পনা! কিন্তু ফ্যানের সাথে যে বিশাল সাপটা ঝুলে ছিল সেটাও কল্পনা ছিল ? মুখে ব্রাশটা পুরেই ওয়াশরুম থেকে উকি দিয়ে রুমের ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে আছি আর তখনই খট করে একটা শব্দে হয়ে ফ্যানটা চালু হয়ে গেল। একটু হকচকিয়ে উঠলাম। আমার বুকটা ধড়ফড় করে উঠল। দেখি বুয়া ম্যাডাম তার বত্রিশটা দাঁত বের করে মেঝে মুছতে এসেছে। তারপর বলল

— ছোট আফা, কি ভয় পাইছেন?? আমি আপনাগো জরিনা বুয়া।। ( দাঁত কেলিয়ে একটা বিরাট হাসি দিয়ে)

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here