#আরেকটি_বার
#পর্বসংখ্যা_৩
#Esrat_Ety
সুমনা হাতে একটা বাটিতে খানিকটা পায়েশ নিয়ে ঘরে ঢোকে। নাবিল বিছানায় চুপচাপ বসে আছে। সুমনা এসে তার পাশে বসে, হাতের পায়েশের বাটি টা একবার দেখে নিজের বোনের ছেলের মুখের দিকে তাকায়। বয়স ষোলো। এখনই লম্বা হয়েছে বেশ। মনে হচ্ছে তার পাপাকেও ছাড়িয়ে যাবে। অত্যন্ত সুদর্শন দেখতে হয়েছে ছেলেটা। দেখলে মনে হয় সে যেনো পচিশ ছাব্বিশ বছরের দুলাভাইকেই দেখছে এই ছেলেটার মধ্যে। শিমালা আর রাওনাফের দু’জনের সৌন্দর্য এক সাথে পেয়েছে ছেলেটা।
নাবিল সুমনার হাতের দিকে তাকায়। তারপর ঠান্ডা গলায় বলে,”খাবো না খালামনি।”
_দুলাভাই আমাকে বারবার ফোন দিচ্ছে। চলো তোমাকে ও বাড়িতে দিয়ে আসি।
_যাবো না।
সুমনা মৃদু হেসে বলে,”একেবারেই যে তুমি নাবালক একটি ছেলে তা কিন্তু নয়। তোমার এই বয়সে তোমার বাবাকে দেখেছিলাম,কতটা বুঝদার ছিলেন। তাই পরিস্থিতি বুঝতে চেষ্টা করো।”
_ত্রিশ বছর বয়স ঐ ভদ্রমহিলার। আমার বন্ধুরা হাসবে খালামনি।
উদাসী গলায় নাবিল বলে।
সুমনা হাসে,নাবিলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,”এটা তোমার সমস্যা না বাবা। তোমার সমস্যা কোথায় সেটা আমি ধরতে পেরেছি। তোমার মতো একটি পুঁচকে ছেলের সাথে আমি এখন আলোচনায় যেতে চাচ্ছি না। চলো তোমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিই।”
_লাগবে না, আমি যেতে পারবো।
_কখন যাবে?
_যখন ইচ্ছে তখন। তোমার কাছে দুই হাজার টাকা হবে খালামনি? আমাকে দাও।
সুমনা মাথা নেড়ে নাবিলকে টাকাটা দিয়ে দেয়। তারপর নাবিলের ফোনটা তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,”পাপা ফোন করলে কথা বলবে। এটা আমার আদেশ।”
সুমনার বাড়ি থেকে বের হয়ে নাবিল রাস্তায় রাস্তায় উদ্দেশহীন ভাবে হাটছে,এই শহরে তাদের আত্মীয়ের অভাব নেই। খালামনির বাড়ি ছাড়া নাবিলের কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না কখনো। তার সবসময়ই একা থাকতে ইচ্ছে করে। হঠাৎ নাবিলের পাশ দিয়ে একটা অ্যাম্বুলেন্স চলে গেলো সাইরেন বাজাতে বাজাতে। নাবিল দাঁড়িয়ে পরে, গাড়িটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সে। তারপর একটা রিকশা নিয়ে তার দাদাবাড়ির দিকে রওনা হয়। সে তার মায়ের ক’বর জিয়ারত করবে।
***
রওশান মঞ্জিলের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর একটুখানি আলোকপাত করা যাক।
রওশান আরা তার মৃত স্বামীর আরাম কেদারায় শুয়ে আছে। তার মাথা ধরেছে,আমিরুন তার মাথা টিপে দিচ্ছে। সকালে সে শায়মীর কথা বার্তা সবই শুনেছে। সে ইচ্ছে করেই বাইরে আসে নি।ছেলেমেয়েগুলো খুবই কষ্ট পেয়েছে,ওদের সামনে সে যেতে চাচ্ছে না।
বাচ্চারা হৈ হৈ করে ক্যারাম খেলছে,আজমেরী দুইবার এসে তাদের বলেছে আস্তে শব্দ করে খেলতে, চিৎকার চেঁচামেচি কারোরই সহ্য হচ্ছে না। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি,বরং চিৎকার চেঁচামিচি আগের থেকে বেরেছে।
মোহনা,রুমা, শাফিউল মিলে লিস্ট করছে অতিথীদের। কাল বাড়িতে বৌভাত। ছোট করে হলেও করতে হবে রওশান আরার আদেশ।
শায়মী নিজের বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে আছে,শর্মী পাশে বসে আছে। দুপুরে কেউ খেতে যায়নি।
রাওনাফ একটা প্লেটে খাবার নিয়ে রুমে ঢুকলো। পাপাকে দেখে শর্মী নড়েচড়ে বসলো। শর্মী বরাবর তার পাপাকে ভ’য় পায়। অথচ রাওনাফ কখনই তার মা মরা মেয়েদের বকাবকি করে না।
রাওনাফ বিছানায় বসে শায়মীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। শর্মী বললো,আজ তোমার ডিউটি নেই পাপা?
_আছে তো,রাত আট টা থেকে ।
উত্তর দিয়েই থালায় ভাত মাখাতে শুরু করে।
শায়মী উঠে বসে। সে বলে সে খাবে না। রাওনাফ তবু তার মুখের কাছে ভাতের লোকমা তুলে ধরে। শায়মী অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। রাওনাফ ভাতের লোকমা সরিয়ে নেয় না। কোমল কন্ঠে ডাকে,”মামনী”
শায়মীর চোখ ভিজে ওঠে। রাওনাফ বলে, “তোমরা না খাওয়া অব্দি আমিও খাবো না আমার মামনীরা। খেয়ে দেয়ে আমি তোমাদের সব শাস্তি মাথা পেতে নেবো। তার আগে তোমাদের পাপাকে এতো কষ্ট দিও না মামনী রা।”
শায়মী আর বসে থাকতে পারে না। পাপাকে জড়িয়ে ধরে। শর্মীও ছুটে আসে। সে তার পাপাকে জরিয়ে ধরার কোনো সুযোগ মিস করবে না।
দরজার এপাশে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে বাবা মেয়েদের এই মধুর মুহুর্ত উপভোগ করছিলো উর্বী।
মেয়েদের খাইয়ে রাওনাফ উঠে পরতেই উর্বী পর্দার ওপাশ থেকে সরে রুমে চলে যায়।
***
জেলখানার মেইন গেইট দিয়ে জেলার হারুন ও দুইজন কন’স্টেবল ভেতরে ঢোকে। তাদের পিছু পিছু ঢোকে শহরের ক্ষমতাবান ক্রি’মি’নাল লইয়ার বিধান চন্দ্র রায়। তার হাতে জামিনের পেপার।
আঠেরো নাম্বার সেলের সামনে এসে জেলার দাঁড়ায়। হাতের লাঠি দিয়ে মেঝেতে দুইবার আওয়াজ করে কয়েদী নাম্বার আঠেরো কে ডাকে। কয়েদী নাম্বার আঠেরো মাথা তুলে তাকায়। তার হাত বেধে রাখা হয়েছে,চোখে মুখে তার হিংস্র’তা। কিছুক্ষন আগে কয়েদী নাম্বার বিয়াল্লিশের মাথা ফাটিয়ে দিয়ে এসেছে। একটা সামান্য ইস্যুকে কেন্দ্র করে এই গণ্ডগোলের সৃষ্টি। শা’স্তি হিসেবে তার হাত দুটো বেধে রাখা হয়েছে। সাবেক ম’ন্ত্রীর ছেলে বিধায় তাকে অতি নগন্য শা’স্তি দেওয়া হয়েছে। নয়তো জেলার হারুন হেন অপ’রাধে অনেক কয়েদীর হাত ভেঙে দিয়েছিলো।
জেলার হারুন ডেকে বলে,”এই যে তুমি,তোমার বাবা তোমার জামিন করিয়ে নিয়েছে, হাত খুলে দিচ্ছি। নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নাও।”
দুজন হাবিলদার গিয়ে ভয়ে ভয়ে তার হাতের বাধন খুলতে থাকে, মারপিটের সময় তারা কয়েদিকে পেছন থেকে লা’থি দিয়েছিলো।তাদের ভয় হাত খুললেই কি না তাদের মা’রধোর করা শুরু করে দেয়।
কিন্তু কয়েদি কিছু বলে না। উঠে দাঁড়ায়, হাত দিয়ে চুল ঠিক করে নেয়। তার কোনো জিনিসপত্র গোছানোর প্রয়োজন সে মনে করে না।লাত্থি দিয়ে কাপড়ের ব্যাগ টাকে দূরে সরিয়ে দেয়। হাবিলদার দুজন পিছনে সরে দাঁড়ায়। তাচ্ছিল্য মাখা হাসি দিয়ে সেল নাম্বার আঠেরো থেকে বেড়িয়ে আসে সে। উকিল বিধান চন্দ্র রায় পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,”সবই তোমার কপাল বুঝেছো বাবা। ভগবান চাইলে কি না পারে,আর পাচ মিনিট দেড়ি হলে তোমার জামিন আজ করাতে পারতাম না,আরো দশ বারোদিন লেগে যেতো। সবই গোপালের কৃপা,ভালোয় ভালোয়…..”
”
এইইইইইইই”
কর্কশ কন্ঠে চেচিয়ে ওঠে কয়েদী।
-এতো কিছু শুনতে চাইছি আমি? একদম কথা কম।
বিধান চন্দ্র হকচকিয়ে যায়, সে ভিষন অপমানিত বোধ করে।
তাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে হেলে দুলে জেলারের পিছু পিছু মেইন গেটের দিকে চলে যায় কয়েদী নাম্বার আঠেরো।
বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে বিশ পঁচিশজনের একটা দল। ছয় বছর পরে তাদের গুরু ছাড়া পাচ্ছে। তারা আবার তাদের কলিজার জোর ফিরে পাচ্ছে। সজীবের হাতে ফুলের মালা। গুরুর ডান হাত হিসেবে মালা পড়ানোর দায়িত্ব তার। সে এতে খুবই অহংকার বোধ করছে।
গেইটের বাইরে পা রাখতেই দুপুরের করা রোদ সরাসরি উচ্ছাসের মুখে গিয়ে পরে, সে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে, এতদিন জে’লের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে থেকে সে তাতেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলো। আস্তে আস্তে সে মুখ থেকে হাত টা সরায়।
দাত বের করে ফুলের মালা নিয়ে এগিয়ে আসছে সজীব।
সে “ভাইইইই” বলে গগন কাপানো চিৎকার দেয়, তার সাথে তার দলের অন্যরাও মিছিল দিতে শুরু করে।
সজীব ফুলের মালা পরাতেই যাবে অমনি উচ্ছাস হাত দিয়ে সজীবকে থামিয়ে দেয়। সজীব কিছু বুঝতে পারে না।
উচ্ছাস জিগ্যেস করে, “বাবা আসবে না?”
সজীব ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয়,”না মানে ভাই,কাকা তো খুব ব্যস্ত তাই আমাদের পাঠিয়ে তোমাকে একটা নিরাপদ যায়গায় রাখতে বলেছে কদিনের জন্য….”
উচ্ছাস বুঝতে পারে তার বাবা তাকে দেখতে চায় না।
সে সজীবকে থামিয়ে বলে, “আসল কথা বল।”
সজীব পকেট থেকে একটা টাকার বান্ডিল, একটা মোবাইল আর খাম বের করে উচ্ছাসের হাতে দেয়। উচ্ছাস মোবাইল আর টাকার বান্ডিল দুই পকেটে ঢুকিয়ে রাখে। খামটা খুলতে খুলতে বলে,”এটা আবার কি?”
সজীব মাথা নুইয়ে বলে,”উর্বীর স্বামীর ছবি আর বায়োডাটা।”
উচ্ছাসের হাত থেমে যায় উর্বী নামটা শুনে। সে সজীবের দিকে তাকায়। সজীব মিনমিন করে বলে,”ওরা বরিশাল থেকে চলে গিয়েছে। পরশু রাতে বিয়ে হইছে ভাই!”
উচ্ছাস খাম খুলে একটা ছবি আর বায়োডাটা বের করে। শ্যামলা উজ্জ্বল বর্ণের একজন পুরুষের ছবি। বায়ো ডাটায় লেখা,
নাম: সামিউল করিম খান।
বয়স: বত্রিশ।
পেশা: ফটোগ্রাফার।
ঠিকানা:……………..।
উচ্ছাস ছবি আর বায়োডাটায় চোখ বুলিয়ে দুটোই ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয়। তার শিষ্যরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।
উচ্ছাস ক্লান্ত ভঙ্গিতে হাটা শুরু করে, এই ছবি আর বায়োডাটা তার মাথায় ঢুকে গেছে। মুখস্থ হয়ে গেছে। সে কখনো ভুলবে না।
***
রওশান আরা চোখ বুজে চেয়ারে আধশোয়া হয়ে আছে। এই মূহুর্তে তার ভ’য়ংকর একটা কাজ করতে ইচ্ছে করছে, যা সে কখনো করে নি। তার ইচ্ছে করছে পায়ের কাছে বসে থাকা তার ছেলেকে মারতে মারতে মেরে ফেলতে।
তার পায়ের কাছে বসে আছে সামিউল। সে হাত দিয়ে তার মায়ের পা ধরে রেখেছে,যতক্ষন না তার মা তাকে মাফ করে দেয় সে পা ছাড়বে না। সামিউলের পিছনে একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে অন্তরা। তার বুক ধুকপুক করছে। সে সামিউলের মাকে আগা গোরা দেখতে থাকে। ভদ্রমহিলার ভাব দেখে মনে হচ্ছে না সে তাদের মেনে নেবে। অন্তরা চিন্তায় পরে যায়।
রওশান আরা শাফিউলকে ডাকে,”শাফিউল,এই শাফিউল।”
শাফিউল,মোহনা,আজমেরী, রুমা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আড়ি পেতে দাঁড়িয়ে ছিলো। মায়ের ডাক পেয়েই শাফিউল দৌড়ে আসে।
-মা,কি হয়েছে?
-এই কু’লা’ঙ্গার টা এখানে কি করে এলো,বাড়িতে কিভাবে ঢুকলো? রাওনাফ জানে? যা রাওনাফকে ডেকে নিয়ে আয়।
শাফিউল মিন মিন করে বলে,”মা ভাইয়াই সৈকতকে বাড়িতে নিয়ে এসেছে।”
রওশান আরা অবাক হয়,
-কি বললি! রাওনাফ নিয়ে এসেছে? আজকাল দেখছি আমার উপরে সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলছে। রাওনাফ কোথায়,ওকে ডাক।
রাওনাফকে ডাকতে হয় না। সে রুমে ঢুকে বলে,”মা,ও তো ক্ষমা চাইছে,ওকে মেনে নাও,তোমার সব কথা আমি শুনি,তুমি আমার এই একটা কথা মানতে পারবে না?”
রওশান গর্জে ওঠে, বলে,
“কোনোদিনো না,আমি বেঁচে থাকতে না,আমি ম’রে গেলে যেনো ও ওর এই দুশ্চ’রিত্রা বৌকে নিয়ে আমার লা’শের ওপর দিয়ে এ বাড়িতে ঢোকে,ওকে এখনই বেরিয়ে যেতে বল, এখনই।”
রাওনাফ মায়ের হাত ধরে,”মা অন্তরাকে নিয়ে এভাবে বাজে কথা বলবে না। ও তোমার ছেলের বৌ এখন। তোমার কাছ থেকে এমন কিছু আশা করিনা।”
রওশান আরা তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,”এই মেয়েকে এক্ষুনি ঘা’র ধরে বের করে দে তোরা, সাথে এই কু’লা’ঙ্গার টাকেও। এই মেজো বৌ,কথা কানে যায় না,এই দুটোকে বের করে দাও। এক্ষুনি।
মোহনা ঘামতে থাকে,”শাশুড়ি তাকে এ কি আদেশ দিচ্ছে।”
সামিউল মায়ের পা ধরে আবারও,”মা,তুমি চাইলে আমরা এই বাড়িতে আর আসবো না। তবু একটিবার বলো তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো। মা একটিবার বলো।”
রওশান আরা চেচিয়ে ওঠে,”ক্ষমা! তোর মতো কু’লাঙ্গার কে করবো আমি ক্ষমা। তোর জন্য একটা আমার মান সম্মান সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো, আর তুই! একবার আমার মানসম্মানের কথা ভাবলি না।দূর হ তুই,দূর হ।
উর্বী রুমে চুপচাপ বসেছিলো। রওশান আরার হাক-ডাক শুনে সে বেরিয়ে আসে রুম থেকে। রওশান আরার ঘরের বাইরে দেখতে পায়, বাচ্চারা উকি দিয়ে দেখছে ভেতরে কিছু হচ্ছে। শায়মী শর্মীও দাঁড়িয়ে আছে। উর্বীকে দেখতে পেয়ে দুজনেই কপাল কুচকে নিজেদের রুমের দিকে চলে যায়।
উর্বী পর্দা সরিয়ে ভেতরে ঢোকে। রওশান আরা তার বড় ছেলে রাওনাফের বুকে মাথা ঠেকিয়ে ফোপাচ্ছে। তার পায়ের কাছে বসে আছে সামিউল করিম খান। এ বাড়ির ছোট ছেলে। যার সাথে উর্বীর বিয়ে ঠিক হয়েছিলো। সামিউলের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে, উর্বী মেয়েটির দিক থেকে চোখ সরাতে পারে না। অসম্ভব সুন্দরী এই শ্যামবর্ণের মেয়েটি।
হঠাত মোহনা উর্বীকে দেখতে পেয়ে বলে,”একি তুমি! তুমি এখানে কেনো আসলে?”
সবাই উর্বীর দিকে তাকায়, সামিউল মাথা তুলে উর্বীর দিকে তাকাতেই একটা ধাক্কার মতো খায়। এই মেয়েটা তাদের বাড়িতে কি করছে!
সে অবাক হয়ে জিগ্যেস করে,”উর্বী, আপনি এখানে!”
রওশান আরা ক্ষে’পে যায়, সামিউলকে বলে,”এই খবরদার! উর্বী বলে ডাকবি না,একদম নাম ধরে ডাকবি না। বড় ভাবি বলবি,সম্মানের সাথে ডাকবি।”
সামিউল অবাক হয়ে যায়। সবার মুখের দিকে তাকায়। রাওনাফ মাথা নিচু করে রাখে। অন্তরা অবাক হয়ে উর্বীকে দেখছে। এই সেই ভদ্রমহিলা, যার সাথে সামিউলের বিয়ে ঠিক করেছিলো সামিউলের মা। মহিলা ছবির চেয়ে সুন্দর। সারা মুখে স্নিগ্ধ একটা ভাব লেগে আছে।
সামিউলের ঘোর কাটে না, মোহনাকে জিগ্যেস করে,”এই মেজো ভাবী, কি বলছে মা। বড় ভাবি মানে? কার সাথে বিয়ে হয়েছে ওনার?
-সেদিন রাতে,মা বড় ভাইয়ার সাথে উর্বীর বিয়ে দিয়ে দিয়েছে।
ঠান্ডা গলায় উত্তর দেয় মোহনা।
সামিউল মাথা নিচু করে রাখে। সে এই পুরো ব্যাপার টা জানতো না।শাফিউল বা রাওনাফ বলে নি ফোনে। জানলে সে এই বাড়িতেই আসতো না। সে কখনোই উর্বীর সামনে পরতে চায়নি।
রওশান আরা বলে,”কি! এখনো বসে আছিস যে। চলে যা”! তোর এই মুখ আমাকে দেখাবি না। হয়েছে শান্তি এখানে এসে? তুই তোর বৌ নিয়ে সুখে থাক বাপ,যা এ বাড়ি থেকে। যা।”
রওশান আরা হাপাতে থাকে। রাওনাফ বলে, “একটু শান্ত হও মা।তুমি অসুস্থ হয়ে পরবে।”
রওশান আরা শান্ত হতে পারে না। অন্তরা নামের একটি ঝ’ড় তার সুখের নীড় টাকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে গেছে। সে কাঁদতে থাকে।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে উর্বী এসে রওশান আরার একটা হাত ধরে। রওশান আরা মাথা তুলে তাকায়।
উর্বী নরম সুরে বলে,”আপনারা সবাই একটু বাইরে যাবেন? আমি মায়ের সাথে একটু কথা বলবো।”
রাওনাফ কিছুটা অবাক হলেও চুপচাপ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
মোহনা এসে সামিউলকে টেনে উঠায়। তারপর রুম থেকে বেরিয়ে যায়,অন্তরা রুম থেকে বের হতে হতে পেছনে ফিরে তাকায় উর্বীর দিকে। কি চাচ্ছে এই মহিলা!?
চলমান….