একা_তারা_গুনতে_নেই — লামইয়া চৌধুরী। পর্বঃ ৫৮

#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ৫৮
দীপা- কাদিন ডিনার থেকে ফিরল একটু রাত করে। কাদের সাহেব তাদের জন্য ড্রয়িংরুমে বসে অপেক্ষা করছিলেন। তাদের দেখেই তিনি বললেন, “তোমার জিনিস এনেছি বাবা।”
দীপা আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়াল, “কই দেখি?”
কাদের সাহেব পাঞ্জাবীর পকেট থেকে দুটো চকোলেট কোকোলা ওয়েফার রোল বের করে দিয়ে বলল, “বলেছিলাম না এগুলো এখনও আছে৷”
কাদিন না থাকলে দীপা এখন আনন্দে দুটো লাফ দিতো। কাদিন পাশে থাকায় দীপার আনন্দ শুধু চেহারাতেই ঝলমল করতে পারল। দীপা খপ করে দুটো চকোলেট ওয়েফার রোল নিয়ে বলল, “এগুলো খুব ছোটবেলায় স্কুলের পাশের এক দোকানে পেতাম। আমি ভাবতাম আর নেই, হারিয়ে গেছে।”
কাদের সাহেব বললেন, “খুঁজে বের করেছি।”
দীপা বলল, “আচ্ছা এগুলোর নাম কি? আমি নাম জানি না। ছোটবেলায় শুধু খেয়েছিই।” বলে কাদের সাহেবের পাশে বসে ওয়েফার মুখে দিলো। তারপর চোখ বন্ধ করে খেতে খেতে বলল, “আগেরটা আরো বেশি মজা ছিল।”
কাদের সাহেব বললেন, “এটার নাম চকোলেট ওয়েফার রোল।”
দীপা চোখ খুলে হাতে থাকা অবশিষ্ট আরেকটা ওয়েফার রোল কাদের সাহেবকে হাসতে হাসতে খাইয়ে দিলো। কাদের সাহেব হাসতে হাসতে কাদিনের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এই মেয়ে আমায় মেরে ফেলবে৷ এমনি মিষ্টি খেতে দেয় না আর এখন ওয়েফার রোল ঠুশে ঠুশে খাওয়াচ্ছে।”
দীপা হাত ঝেরে বলল, “ইশ শেষ। আরো থাকলে আরো খাওয়াতাম।”
কাদের সাহেব হাসতে হাসতে উঠে গিয়ে আস্ত দুটো বয়াম নিয়ে এসে বললেন, “অনেক আছে।”
দীপা বয়াম দুটো নিয়ে মনের আনন্দে ঘরে ফিরে এলো। জামা কাপড় না বদলে বয়াম খুলে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসল। কাদিন গেল ফ্রেশ হতে। পা দোলাচ্ছিল, আর খাচ্ছিল দীপা। বাথরুমের দরজার খোলার শব্দ হতেই সে পা দোলানো বন্ধ করে দিলো। কাদিন সেটা দেখল। বলল, “আমাকে বলোনি কেন?”
দীপা উত্তর দিলো না। কাদিন পাশে বসে একটা ওয়েফার নিলো। দীপার মুখ কুঁচকে গেল। মনে মনে বলল, “এই জিনিসটায় ভাগ বসাতে হলো তার! এখন তার শরীরে ক্ষতি হয় না?”
কাদিন ওয়েফারে ছোট কামড় দিয়ে খেল। বলল, “আহামরি কিছু না।”
দীপা বলল, “আহামরি না হলে খাচ্ছ কেন? বাকিটা ফেরত দাও।”
কাদিন দীপার হাতে অবশিষ্ট অংশ ধরিয়ে দিয়ে বলল, “নাও, নাও। অবস্থা দেখো! তুমি এই কোকোলা ওয়েফারের বদলে স্বামীও বিক্রি করে দিবে।”
দীপা বলল, “ফালতু কথা।”
কাদিন শুয়ে পড়ে বলল, “সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে।”
দীপা উত্তর কি দিবে ভেবে পেল না৷ ও কথা জানে না কেন? অসহ্য!
কাদিন আবার বলল, “আর খেও না।”
“হে তখন তো মোটা হয়ে যাব৷ তোমার জন্য সমস্যা।”
কাদিন ওপাশ ফিরে চোখ বন্ধ করল। দীপা উঠে শাড়ির পিন খুলে শাড়ি খুলল। কাদিন হঠাৎ ঘুরে অবাক হয়ে গেল। লাফ দিয়ে উঠে চাপা চিৎকার দিলো, “দীপ!”
দীপা ভড়কে গিয়ে বলল, “কি?”
কাদিন অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে বলল, “দরজা, জানালা সব খোলা।”
দীপা হকচকিয়ে উঠল, “আমি খেয়াল করিনি।”
তারপর দ্রুত বাথরুমে ঢুকে গেল। কাদিন উঠে বারান্দার দরজা বন্ধ করল। জানালা বন্ধ করে, পর্দা টানল। এ কেমন মেয়ে? এ কেমন ছন্নছাড়া আচরণ?

অনেকক্ষণ পর দীপা ভয়ে ভয়ে বেরুলো। কাদিন রুষে গিয়ে বলল, “তুমি দরজা, জানালা সব খুলে শাড়ি খুলে ফেলেছ।
তোমার কি মাথা কাজ করেনা? তুমি কি পাগল?”
দীপা মিনমিন করে বলল, “আমার খেয়াল ছিল না।”
“এখন আমি না থাকলে কি হতো?”
দীপা আবারো বলল, “আমার খেয়াল ছিল না।”
কাদিন শক্ত গলায় বলল, “সারাক্ষণ কথা বলতে থাকলে খেয়ালটা হবে কখন? মানে কি করে না করে কিচ্ছু ঠিক নেই।”
দীপা বলল, “সারাক্ষণ কোথায় কথা বলি? হিসাব করে করে চলতে চলতে তোমার বাসায় আমার দমবন্ধ হয়ে আসে।”
কাদিন বলল, “কি বললে?”
দীপা বলল, “বলেছি তোমার সাথে সংসার করা অসম্ভব। তোমার সাথে আর একদিনও না।”
“তুমি ভুল করলে আবার তুমিই মেজাজ দেখাচ্ছো?”
“শক্ত শক্ত কথা খালি তুমিই বলতে পারো? আর কেউ আমরা পারি না?”
“এখন কি আমার রাগারাগি করার কথা না?”
“না তুমি কেন রাগবে? নিঃশ্বাস ফেলার আগেও আমাকে ভাবতে হয় নিঃশ্বাস নিলে তুমি আবার কি মনে করো।”
কাদিন বলল, “আরে এই মেয়ে তো বদ্ধপাগল।”
দীপা বলল, “আমি পাগল তাই আমি চলে যাচ্ছি। অনেক সহ্য করেছি। তুমি ম্যাচিওর বুড়া দাদী বিয়ে করে নিয়ে থাকো। আমি তো ছোটোখাটো পাতলা মানুষ, ইরান থেকে ইরানী সুন্দরী নিয়ে এসো। যার হাতে বড় হ্যান্ড ব্যাগ মানাবে। পারলে বোবা, কথা বলতে জানে না এমন একটা বউ খুঁজো।”
কাদিন বলল, “তুমি বোবাদের ছোট করে কথা বলছ। তোমার বুঝা উচিত আল্লাহ তাদের বাকশক্তি দেননি। সোউ মিন।”
“আমার কপাল এত খারাপ?” দীপা আলমারির উপর থেকে লাগেজ নামাল৷ লাগেজ আছড়ে ফেলে আলমারি থেকে জামা কাপড় বের করে লাগেজ গুছাতে শুরু করল৷ কাদিন বলল, “এরকম ধুমধাম শব্দ করবে না। রাত হয়েছে মানুষ ঘুমাচ্ছে।”
দীপা বলল, “এজন্যই আমি আর তোমার সাথে থাকব না। এখানেই সব শেষ।”
কাদিন বলল, “কালকে যাবে না এখনি?”
দীপা চিৎকার করে বলল, “এখনি, এখনি, এখনি, একশোবার এখনি।”
কাদিন উঠে হাত দিয়ে দীপার মুখ চেপে ধরে বলল, “চুপ। চিৎকার করে সিনক্রিয়েট করবে না। লাগেজ গোছাও। আমি নিজেই তোমায় দিয়ে আসব।”
দীপা কান্নাচোখে তাকিয়ে বলল, “আমি একা যেতে পারব।”
“একা কেন যাবে? একা এসেছ এ বাসায়? আমি যখন নিয়ে এসেছি, আমি আবার ফেরত দিয়ে আসব।”
দীপা বলল, “যথা আজ্ঞা।”
দীপা লাগেজ গুছাতে লাগল। কাদিন চুপচাপ বসে রইল। সে একসাথে কয়েকটা বড় ধরনের ভুল করে ফেলেছে। প্রথমত, সে দীপাকে বিয়ে করেছে। দ্বিতীয়ত, নারীসঙ্গহীন সে প্রথম কোনো নারীর সান্নিধ্য পেয়ে অল্পতেই এই আবোলতাবোল মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছে। এখন তাকে ছাড়া থাকতে কষ্ট হবে। যাইহোক, অশান্তির চেয়ে আলাদা থাকা ভালো।
.
মুবিনের সাথে কথা বলে কড়ি অনেকক্ষণ মোবাইল হাতে বসে রইল। তার ভ্রু ধনুকের মত বেঁকে আছে। সেই বেঁকে যাওয়া ভ্রু নিয়েই সে ইমাদকে কল করল। ইমাদও যেন অপেক্ষায় বসে ছিল। খপ করে মোবাইল কানে ধরল। কণ্ঠ তবু স্পৃহাহীন, “কি হলো?”
“কথা হলো।”
“পরে?”
কড়ির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটল, “আনপ্রেডিক্টেবল।”
“কি মনে হয়?”
“মুশকিল।”
“আচ্ছা।”
কড়ি বলল, “শাট আপ।”
ইমাদের হাসি পেয়ে গেল। সে মাথা চুলকে বলল, “মুবিনের সাথে কথা বললে প্রথম প্রথম এমনই হয়।”
কড়ি বলল, “স্যরি।”
“ইটস টোটালি ওকে। ছাত্রের মেজাজ গরম হলেও স্যার খারাপ না।”
“উফরে আবার ফ্লার্টিং।” কড়ি পুরা বিরক্ত হয়ে গেল।
ইমাদ নিঃশব্দে হাসছিল। ঘরে বাইরে কেউ নেই, কড়িও সামনে কই? এখন হাসলে কি ক্ষতি? কড়ি’ই আবার বলল, “একসাথে একজন বিরক্ত করলে সহ্য করা যায়। পালা করে পেছনে পড়লে খারাপ হবে। একজনকেও ছাড়ব না। স্যারকেও না, ছাত্রকেও না।”
ইমাদ দুঃখিত হয়ে বলল, “খুব জ্বালাল?”
কড়ি বলল, “এই পিচ্চি খুবই ডেঞ্জারাস।”
“এজন্যই চাইছিলাম ওর সাথে কথা না বলুন।”
কড়ি শান্ত হয়ে বলল, “সমস্যা নেই। ওর সাথে ঠাণ্ডা মাথায়ই কথা বলেছি।”
“আচ্ছা।”
কড়ি হতাশ কণ্ঠে বলল, “সে আপনার পক্ষ নিয়ে একটা কথাও বলেনি। আমাদের পুরো পরিকল্পনাকে এক মিনিটে নাস্তানাবুদ করে দিয়ে বলেছে আপনি নাকি সারারাতই ঐ মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন। এর মানে আপনার জন্য ওর মনে কোনো সফট কর্ণারই তৈরী হয়নি। সে আপনার সাহায্য করতে কল করেনি। কত বড় বিচ্ছু!”
“সফটকর্ণার আপনারও হয়নি। তবু লেগে আছি। ওর বেলায়ও থাকব।”
“আমি ভেবেছিলাম আমরা সিরিয়াস কথা বলছি।”
“আপনার কথা বলছি মানে আমি সিরিয়াস।”
কড়ি বলল, “যাইহোক, অপরপক্ষকে দূর্বল ভাবা অনেক বড় ভুল। আমি তাকে আবার কল করব। ওর মস্তিষ্ক অনেক দ্রুত চলে। আরো সাবধানী হব।”
“আমি কি একটি পরামর্শ দিতে পারি?”
“জি অবশ্যই।”
“মুবিনকে বলতে পারেন আপনি আমাকে হাতেনাতে ধরে শায়েস্তা করতে চান। সে আপনাকে প্রমাণ বের করে দিতে পারবে কিনা।”
কড়ির বিড়ালাক্ষী চোখে একটা ঝিলিক বয়ে গেল, “দারুণ বলেছেন৷ কি বুঝাতে চাইছেন বুঝেছি।”
ইমাদ বলল, “আচ্ছা।”
চলবে…
★অটোগ্রাফসহ আমার পাঠকদের বহুল প্রতীক্ষিত উপন্যাস, আমার তৃতীয় বই “একটুখানি” এর প্রি- অর্ডার চলছে। (প্রি-অর্ডার চলবে ২০ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।)
★প্রি- অর্ডার লিঙ্কঃ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1127224604700136&id=100022378217757

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here