একা_তারা_গুনতে_নেই — লামইয়া চৌধুরী। পর্বঃ ৪৮

#একা_তারা_গুনতে_নেই
— লামইয়া চৌধুরী।
পর্বঃ ৪৮
নরম হাওয়ার রোদেলা সকাল। শিল্পী দ্রুত রিকশা খুঁজছে। সে ঘড়ি দেখল। মিলার স্কুলের এবং তার ব্যাংকের সময় হয়ে যাবার আগেই তাকে মিলার হোস্টেলে গিয়ে পৌঁছুতে হবে। শিল্পী হাঁটা ধরল। রিকশা পাওয়া মুশকিল।
মিলা ভোরে উঠেই পড়তে বসে। রসায়নের বিক্রিয়া লিখে লিখে পড়ছিল সে। শিল্পীকে দেখে বই রেখে উঠল। লেবুর শরবত বানাল। শিল্পী বলল, “কিছু করতে হবে না। পড়ছিলি পড়।”
মিলা শিল্পীর হাতে গ্লাস দিয়ে বলল, “ঠাণ্ডা পানি নেই।”
শিল্পী গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল, “এখানে থাকতে হবে না তোকে। আমার সাথে থাকবি।”
মিলা বলল, “আমি এখানেই ভালো আছি।”
শিল্পী বলল, “আমি একা ভালো নেই। তুই আমার সাথে থাকলে আমি হয়তো ভালো থাকব।”
মিলা বলল, “স্যরি, মা। বারবার জায়গাবদল করলে আমার পড়ার ক্ষতি হয়। আমি যাব না।”
“তুই যাবি। তুই আমার উপর রাগ করে আছিস। তাই এমন করছিস।”
মিলা একবার ভাবল বলবে, “রাগ করাটাই কি স্বাভাবিক না?”
কিন্তু বলল না। মাকে কষ্ট দিতে ওর কষ্ট হয়। বলল, “রাগ করে নেই, মা। পড়াশুনার কথা ভেবেই বলছি। আমার এসএসসির পর আমি তোমার কাছে চলে আসব।”
শিল্পী হাতের গ্লাসটা রেখে চড় মারবার ভঙ্গি করে বলল, “একটা চড় মারব। বাপের মত ধুরন্ধর হয়েছিস সবকটা। এসএসসির পর যে তুই ঢাকায় যাবি বলে ঠিক করে রেখেছিস, সেটা কি আমি জানি না? কলা দিয়ে ছেলে ভোলানো হচ্ছে? সবগুলা স্বার্থপর।”
মিলা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “মুবিনকে নিয়ে যাও, মা।”
শিল্পী বলল, “কথা যে শোনে তাকেই বলেই কাজ হলো না। অবুঝটা কি বুঝবে?”
“আমাকে জোর করো না, মা। আমি একা’ই থাকব। পারলে তোমার ছেলেকে জোর করো।”
শিল্পী ওড়নায় চোখ মুছে বলল, “মায়ের কষ্ট বুঝলি না।”
মিলা ঘাড় কাত করে বলল, “আরেক গ্লাস শরবত করে দিই?”
শিল্পী বলল, “কর, করে তোর বাপ আর তোর বাপের প্রেমিকাকে দিস। মা ভালো না। মা খারাপ। সৎ মা অনেক আদর দিবে।”
“বসো, মা। যেও না।”
“তাহলে আমার সঙ্গে চল।”
“স্যরি মা।”
শিল্পী কষ্ট নিয়েই ফিরে গেল। মিলা হোস্টেলের জানালা ধরে দাঁড়াল। মাকে যতক্ষণ দেখা যাবে ততক্ষণ সে দাঁড়িয়ে থাকবে।
শিল্পীর আশেপাশে অনেক খালি রিকশা টুংটাং শব্দ করে যাচ্ছে। কোনো কোনো রিকশাচালক নিজ থেকেই বলছেন, “আফা, কই যাইবেন?”
শিল্পী কোনো উত্তর দিচ্ছে না।
.
কড়ির সঙ্গে যে ছেলেটি দেখা করতে এসেছে তার নাম মৃন্ময়। মৃন্ময় ধানমন্ডি লেকের কাছে কড়ির অপেক্ষা করছিল। কড়িকে দেখে বলল, “তুমি বড় হয়ে গেছ।”
উত্তরে কড়ি বলল, “আসসালামু আলাইকুম।”
মৃন্ময় বলল, “ওয়ালাইকুম আসসালাম। চলো কোথাও বসা যাক।”
কড়ি বলল, “না বসব না। আমার একটু তাড়া আছে। আসলে ক্লাস আছে। ক্লাসটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি মিস করতে চাই না।”
“ওহো, স্যরি। আচ্ছা, তোমার নাম্বারটা দাও। তোমার নাম্বার না থাকায় কাদিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসতে হয়েছে।”
কড়ি নাম্বার বলল। মৃন্ময় নাম্বার সেভ করে বলল, “ঠিক আছে ভালো থেকো। তুমি যখন ফ্রি থাকবে দেখা করব।”
কড়ি তড়িঘড়ি করে চলে এল। তার কপালে চিন্তার রেখা। মেজো ভাইয়ার পছন্দের পাত্র হলে তো গজব। ইমাদকে দেয়া সময় পর্যন্ত বিয়ে আটকাবার জন্য কোনো ছুঁতো খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে।
.
ক্লান্ত, অবসন্ন শিল্পী নিজের চেয়ারে বসল। হেঁটে আসায় ব্যাংকে আসতে আসতে দেরি হয়ে গেছে। পাশ থেকে জুয়েল সাহেব বললেন, “আজ এত দেরি কেন, শিল্পী?”
শিল্পী যন্ত্রের মত বলল, “কাজ ছিল।”
“কি কাজ?”
শিল্পী বিরক্ত হয়ে বলল, “অফিসিয়াল কোনো কাজ না।”
“আপনাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।”
শিল্পী চুপ করে রইল। এই লোকটাকে আজকাল অসহ্য লাগে তার। জুয়েল সাহেব নিজেই আবার বললেন, “কি হয়েছে, বলুন তো? আপনি সাধারণত দেরি করে আসেন না।”
শিল্পী কম্পিউটার চালু করতে করতে বলল, “জুয়েল সাহেব, আমি ব্রাঞ্চটা চেঞ্জ করতে চাচ্ছি না। আমার অসুবিধা হয়ে যাবে। আপনি এরকম করতে থাকলে আমি বদলি হয়ে যেতে বাধ্য হব।”
জুয়েল সাহেব আত্মপক্ষ সমর্থন করে কিছু বলতে চাচ্ছিলেন। শিল্পী সে সুযোগ দিলো না।
.
মুবিন সুহার শেষ প্র্যাক্টিকেল খাতাটা ফেরত দিয়ে চলে যাচ্ছিল। সুহা ডেকে বলল, “অ্যাই মুবিন শুনো।”
মুবিন চলে যেতে যেতে ঘুরে তাকাল। সুহা ভ্রুকুটি করে বলল, “ধন্যবাদ দিলে না যে?”
মুবিন স্থির গলায় বলল, “অনেক সময় নষ্ট করেছ আমার। আমাকে সবগুলো খাতা একেবারে দিলে সুবিধা হতো। একটা একটা করে দেয়ায় খাতা নিতে প্রতিদিন স্কুলে আসতে হয়েছে। নাহয় ঐ সময়টায় বাসায় বসে প্র্যাক্টিকেলগুলো করলে আরো তাড়াতাড়ি শেষ হতো।”
“কি বলছ তুমি?”
মুবিন প্রশ্ন করল, “বয়রা নাকি?”
সুহার মুখ শক্ত হয়ে গেল, “তুমি আমাকে এখনি ধন্যবাদ বলবে। এখনি।”
মুবিন বলল, “বলব না।”
সুহার মুখ লাল হয়ে গেল, “বলবে না?”
মুবিন ঘাড় শক্ত করে বলল, “বলব না। তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনি।”
মুবিন অবশ্য ঠিকই বলেছে। সুহা তাকে বিশ্বাস করেনি। সন্দেহ ছিল খাতা নিয়ে ফেরত দিবে কিনা। তাই সব খাতা বোকার মত একেবারে দিয়ে দেয়নি। একটা একটা করে দিয়েছে। গেলেও একটা যাবে। অথচ, মুবিন সুহার প্রতিটা খাতাই খুব যত্ন সহকারে ফেরত দিয়েছে। সুহা খাতা খুলে দেখেছেও। একটুও নষ্ট হয়নি।
ঘণ্টা বেজে উঠল। ঢং ঢং ঢং। অ্যাসেম্বলির সময় হয়ে গেছে। মুবিনকে কড়া কথা বলবার অবকাশ না পেয়ে সুহার সারা অঙ্গ জ্বলে গেল।
চলবে ইনশাআল্লাহ….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here