#প্রেমময়_বসন্তের_আগমন
#পর্বঃ৮
#বর্ষা
ওয়াজিহা মাথা চেপে ধরে হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে।ইউশা খাবার আনতে বাইরে গেছে। ওয়াজিহার একদিকে অনেক কান্না পাচ্ছে,তো আরেকদিকে সব গোলকধাধায় ফেসে যাচ্ছে। ওয়াজিহা মোবাইল খোঁজে তবে পায় না।মনে পড়ে ইউশা ইজহানের বাড়ি থেকে বের হবার সময় জুতা পড়তে গিয়ে সে ওখানেই একটা জায়গায় ফোন রেখেছিলো।আর নেওয়া হয়নি তাড়াহুড়োয়। ওয়াজিহা ওঠার চেষ্টা করে বেড থেকে।
”আরে আরে কি করছো? তুমি অসুস্থ।সুয়ে থাক!”
তাসকিনকে কেবিনে দেখে হাইপার হয়ে ওঠে ওয়াজিহা। তাসকিন আজকে জাস্ট দেখতে এসেছিলো ওয়াজিহাকে কেননা মনটা কেমন কেমন করছিলো তার।আসলেই পুরুষ তুমি মহৎ।একসাথে দুই নারীতে কত সুন্দরভাবেই আসক্ত!
”হাউ ডেয়ার ইউ?আপনার সাহস কি করে হলো এই কেবিনে আসার!বেরিয়ে যান বলছি… বেরিয়ে যান!”
ওয়াজিহা চিৎকার করে ওঠে। তাসকিন ওয়াজিহাকে শান্ত করতে পারে না। ওয়াজিহা এককথাই বারবার বলতে থাকে চিৎকার করে। ততক্ষণে ইউশা চলে আসে। ওয়াজিহার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে দ্রুত কেবিনে ঢোকে। ওয়াজিহার অবস্থা দেখে ওকে দ্রুত জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে। পেছনে ফিরে তাসকিনকে ‘মেরে ফেলবো’ লুক দেয়। তাসকিন কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে।
”লাবণ্যময়ী তুমি আমায় কি করে ভুলে গেলে?একটা মানুষ কি দু’জনকে ভালোবাসতে পারে না একসাথে?আমার যে তোমাকে এবং স্নিদ্ধাকে উভয়কেই লাগবে।তবে তুমি স্নিদ্ধার কথা কিভাবে জানলে?কে জানালো তোমাকে?”
তাসকিন তার প্রশ্নের জবাব পায় না।ওয়ার্ডে চলে যায়।ওর পেশেন্ট মোঃ আজিজুল জাবির।ব্রেনের নিউরনে গিট লেগেছে। মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।তাসকিনও সেই বোর্ডের সদস্য।আজই গুরুত্বর সেই অপারেশনের ডেট।সকল ডক্টররা পৌঁছে গেছে অলরেডি। তাসকিন সব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে নিজেও যোগদান করে ডক্টরদের সাথে অপারেশন নিয়ে করা আলোচনায়!
আলোচনা শেষে তাসকিন মাথা ডলতে ডলতে বের হয়।মাথা ধরেছে তার।ডক্টর মাহিম মাহমুদ অনেক যাবৎ তাসকিনকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন।ধরতে গেলে দু’জন সমবয়সীই।
”আর ইউ টেন্সড ডক্টর রাফিন?”
তাসকিনকে হসপিটালে সবাই রাফিন নামেই চেনে।শেষনাম অথবা পরিচিত নাম বলা চলে।খুব কাছের মানুষেরা ছাড়া কেউই তাকে তাসকিন নামে ডাকে না। অবশ্য অনেকে জানেই না।
” ইয়েস আ’ম ওকে!”
”ডক্টর রাফিন আমরা কলিগ জাস্ট লাইক ফ্রেন্ড।সো যদি আপনি মনে করেন যে আমার সাথে কিছু শেয়ার করলে আপনি ফ্রি হবেন,দেন জাস্ট রিমেমবার মি.আ’ম হেয়ার!”
”ওকে!উমমমম….ক্যান ইউ গিভ মি সাম টাইম?”
ডক্টর মাহিম মাহমুদ ঘড়িতে সময় দেখেন।মুখটা কিছুটা চোক্ষা করে আবারো স্বাভাবিক করেন।তারপর বলেন,
”আচ্ছা চলুন।ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে কথা বলি!”
লিফটের ফাস্ট ফ্লোরে চলে আসে ওরা। একপাশে ফার্মেসী।আরেকপাশে বিশাল হলরুম।তার সাইড দিয়ে বা’পাশেই ক্যান্টিন বা ক্যাফেটেরিয়া। দুটো কফির অর্ডার দিয়ে জানালার একপাশে গিয়ে দুজন বসে।ডক্টর মাহিম মাহমুদ বলে,
”বাইরের ঠান্ডা ঠান্ডা ওয়েদার সুন্দর লাগছে না?”
”হুম!”
ডক্টর মাহিম মাহমুদ খেয়াল করে তাসকিন অন্যমনস্ক। একজন কফি দিয়ে যেতেই মাহিম কফির কাপে ঠোঁট লাগায়। তাসকিন তখনো কিছু ভাবতে ব্যস্ত।
”কফি তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ডক্টর রাফিন!কফি খেতে খেতে বলুন।”
কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকে তাসকিন।মনের ভেতর উত্থালপাত্থাল অবস্থা।একবার ভাবছে বলবে আবার ভাবছে বলবে না!শেষে মস্তিষ্কের কথা না মেনেই সে বলতে উঠলো।
”ডক্টর মাহমুদ একসাথে কি দুই নারীতে আসক্ত হওয়া অন্যায়?”
ডক্টর মাহমুদ কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে হেসে ওঠেন। তাসকিন লজ্জা পায়।সে ভাবে হয়তো ভুল করেছে সে এ প্রশ্ন করে।তখনই ডক্টর মাহিম মাহমুদ বলেন,
”বুঝলেন ডক্টর রাফিন,আমরা পুরুষ জাতি বড্ড অদ্ভুত।কাজের দায়ে কিংবা অন্য কোনো বাহানায় বহু নারীতে আসক্ত হয়ে পড়ি।তা আমাদের নিকট কখনোই দোষের হয় না। কিন্তু যখনই আমাদের এ কর্মে সম্পর্কে জ্ঞাতিত হয়ে আমাদের কোনো প্রিয়তমা অন্য পুরুষে আসক্ত হতে চাইবে,ঠিক তখনই আমরা তাদের নাম দিয়ে দেই ছলনাময়ী,প্রতারক।কখনো নিজেদের কর্মের দিকে তাকাই না!”
তাসকিন মাথা নিচু করে রাখে।ঠিক কথাই তো বলেছে ডক্টর মাহমুদ। তাসকিনের নিজের প্রতি লজ্জা হয়।যাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে ছাত্রাবস্থায় বউ করেছিলো তাকে কিনা সে কষ্ট দিয়েছে।না,না শুধু তো কষ্ট দেয়নি।প্রতারণাও করেছে।আদৌ একে ভালোবাসা বলেতো!নাকি সবই নামমাত্রিক!
ডক্টর মাহিম মাহমুদ টেলিভিশনে সময় টিভির খবর দেখছিলেন।কালকের দূর্ঘটনা নিয়েই মূলত আলোচনা।পুলিশ সদস্যরা আশ্চর্যজনক ভাবে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন এই কেসে।অন্যান্য কেসগুলোকে গুরুত্ব দিলেও এতোটা আদৌ কখনো কোনো কেসে দেওয়া হয়েছে বলে বোঝানো যাবে না।
”দেখছেন ডক্টর রাফিন,এইবারের সড়ক দুর্ঘটনার কেসটা কতটা প্রখর ভাবে নিচ্ছে প্রসাশন।আগে তো হয়তো দূর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিতো।প্রসাশনিক কাজ উন্নয়ন ঘটছে!”
”ডক্টর মাহমুদ এমনও তো হতে পারে এবার যার সড়ক দূর্ঘটনা ঘটেছে তিনি ভি.আই.পি কেউ!”
”ভি.আই.পি কেউ হলে তো এতোক্ষণে তোলপাড় রমরমা পরিবেশ হতো হসপিটালের বাইরে!”
”কোন হসপিটালে এই রোগী?”
”ডি.এম.সি তে!”
”ওহ!”
”হুম!”
”আচ্ছা তবে চলুন ডক্টর রাফিন।আমার ওয়ার্ডের সময় হয়ে আসছে।আপনার তো শেষ মনে হয়!”
”শেষ তবে পেশেন্ট না থাকায় আমি দুঘন্টার রেষ্টের জন্য ছুটি নিয়েছিলাম।তাই ধরতে গেলে আমারও ওয়ার্ড শুরু।”
”আপনারা নিউরোলজিস্ট দের কত শান্তি। পেশেন্ট আসেই না!”
”আর যখন আসে একসাথেই আসে।”
”আরে কথাতেই তো আছে,’যাব রাব দেতাহে তাব ছাপ্পার ফারকে দেতাহে!”
”হা হা হা!”
★
ইউশা অনেক প্রচেষ্টার পরেও থামিয়ে রাখতে পারেনি ওয়াজিহাকে।মেয়েটার শরীর চলে না,সে নাকি এখন তার ফোন খুঁজতে যাবে!ভাবা যায়।ইউশা শেষমেশ বাধ্য হয়ে ওয়াজিহাকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ওর ফোন খুঁজতে এসেছে।ঘুম ভাঙলেই আরেক কেলেংকারি না বাজায় মেয়েটা। ওয়াজিহার থেকে শুনেছিলো ফোন নাকি সে ইউশার বাড়ির বাইরে তবে গেটের ভেতরে জুতা রাখার স্থানে ফোন ফেলে এসেছে।
ইউশা নিজ ভিলার সামনে দাঁড়িয়ে।সে ভুলেই গিয়েছিলো সিসিটিভির কথা। এখন সে অবাক দৃষ্টিতে সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছে। হঠাৎ দৌড় লাগায় ব্যাক ইয়ার্ডের দিকে। সুইমিং পুলের ওপাশে গিয়ে হঠাৎ উধাও হয়ে যায় সে।
মিনিট পনেরো বাদে আবারো একই রাস্তা দিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়া ইউশা ফিরে আসে।চোখ জোরা তার শীতল।বাইরে থেকে বোঝা কঠিন ভেতরে কি চলছে তার!
জুতা রাখার স্থান থেকে ওয়াজিহার ফোন হাতে নেয় সে।কিছু একটা করতে গিয়েও আর পারে না। ওয়াজিহার ফোনে লক সিস্টেম।তাও ছোট নয় বিশাল অর্থাৎ আটটি পাসওয়ার্ডের।ইউশার মুখে বিরক্তি ছেয়ে যায়!
ইউশার হঠাৎ মনে হয় কেউ তাকে দেখছে।দ্রুত পেছনে ঘুরে অথচ কাউকেই সে দেখতে পায় না।ইউশা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে।
আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে সবুজ পোশাকে নিজেকে আবৃত করা মানুষটি। পুরুষ নাকি মহিলা বোঝা মুশকিল!সেও দ্রুত প্রস্থান করে।ভিলা থেকে খানিক দূরে গিয়ে কাউকে ফোন করে।বলে,
”09659351”
ওপাশ থেকে কি বলে বোঝা যায় না।তবে এপাশের ব্যক্তি ধিমে আওয়াজে আবারো বলে,
”টাকাটা যেন সময় মতো পেয়ে যাই!”
কল কেটে পেছনে ঘুরতে নেওয়ার সাথে সাথেই কেউ পেছন থেকে অনেক জোরে কিছু দিয়ে আঘাত করে।আঘাতকারী আর কেউ নয় বরং ইউশা। মুখে তার হেরে যাওয়ার ভয়!কি গেম খেলছে তারা যে যেখানে মানুষের জীবন খেলার ন্যায়?তারা কি কোনো মাফিয়া!
চলবে?
পূর্ববর্তী পর্বঃ
https://www.facebook.com/groups/371586494563129/permalink/931016148620158/?mibextid=2JQ9oc