অতঃপর_তুমি_আমি #লেখিকা:#ইশা_আহমেদ #পর্ব_৪

#অতঃপর_তুমি_আমি
#লেখিকা:#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৪

ওয়ামিয়া রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছে।শেহজাদ তাকে সত্যিই তবে ভালোবাসে না।তবে তার চোখের দিকে তাকালে কেনো অফুরন্ত ভালোবাসা দেখতে পায় ওয়ামিয়া।চোখ কখনো মিথ্যা বলে না।তবে কেনো এমন ব্যবহার।তার মাঝে মাঝে ভীষণ রাগ হয় আব্বু ভাই জানের উপর।তারা কেনো অপছন্দ করে শুধু ওই একটা কারণ।যার ভিত্তি নেই পর্যন্ত।ওয়ামিয়ার ভাবনার মাঝেই দরজায় টোকা পরলো।ওয়ামিয়া দ্রুত চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করলো।উঠে দরজা খুলে দিলো।হুমায়ন শেখ রুমে প্রবেশ করতে করতে বলেন,

‘আম্মাজান দরজা আটকে কি করছিলে’

‘কিছু না আব্বু শুয়ে ছিলাম’

হুমায়ন শেখ গিয়ে বসেন বিছানায়।ওয়ামিয়াও পাশে গিয়ে বসে।হুমায়ন শেখ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে নরম কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,,

‘আম্মাজান সত্যি করে বলো হাত কেটেছিলে কেনো?’

ওয়ামিয়া অস্বস্তিতে পরে যায়।কি বলবে সে এখন।বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলে,

‘আব্বু তুমি কি আমায় বিয়ে দিতে চাইছো’

হুমায়ন শেখ অবাক হলেন।ভীষণ অবাক হলেন,কারণ তিনি এই বিষয়ে ভাবেননি।হুমায়ন শেখ বিষ্ময়কর কন্ঠে বলেন,

‘কেনো আম্মাজান তোমার এমন মনে হলো কেনো?’

‘সেদিন বাড়িতে ঘটক কেনো এসেছিলো আব্বু নিশ্চয়ই আমার জন্য তোমরা তাকে আসতে বলেছো’

হুমায়ন শেখ থতমত খেয়ে যান।তবে এর জন্যই ওয়ামিয়া আত্নহত্যা করতে চেয়েছিলো।সে হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারলো না।

‘তুমি এর জন্য….’

‘হ্যা আব্বু তুমি তো জানো আমি পড়াশোনা করতে চাই।নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই’

‘আমি জানি তো আম্মাজান।কিন্তু তুমি এই সামান্য বিষয় নিয়ে হাত কাটবে।যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো তাহলে আমরা বাঁচতাম কিভাবে?’

ওয়ামিয়া অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে বলল,

‘আমার তখন মাথা কাজ করছিলো না আব্বু দুঃখিত আমার এরকম করা উচিত হয়নি।ক্ষমা করে দাও।জীবনেও আর এমন করবো না’

‘এরকম আর করো না মেহেনাজ আম্মাজান।ঘটক এসেছিলো তবে তোমার জন্য নয় মাহিমের জন্য।মাহিমকে বিয়ে দিতে চাইছি।তোমার ভাবি দরকার না একটা’

ওয়ামিয়ার চোখ খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠে।তার অনেক দিনের শখ ছিলো তার ভাইয়ের বিয়ে খাওয়ার।তবে ভাই বিয়ে করতে চায় না। সে ধারণা করেছিলো এমন কিছুরই।এবার হয়তো হবে বিয়েটা।হুমায়ন শেখ মেয়েকে আরো কিছু জ্ঞানের বানী শুনিয়ে চলে গেলেন।ওয়ামিয়া হাফ ছেড়ে বাঁচলো।যাক ভুলটুল বুঝিয়ে এটা তো কাটাতে পারলো।হুমায়ন শেখ আদেও বিশ্বাস করেছেন কিনা সেইটাই বড় বিষয়।ওয়ামিয়া জানে তার আব্বু ভীষণ বিচক্ষণ মানুষ।

*****

সামনেই নির্বাচন।ভীষণ ব্যস্ত শেহজাদ।সব দিক সামলাতে হচ্ছে তাকে।এরপর আবার নিজের পেশায় জয়েন করতে হবে।সব মিলিয়ে অনেক ব্যস্ত।শত ব্যস্ততার পরেও শেহজাদ নিজের প্রেয়সীর খবর ঠিকই রেখেছে।প্রেয়সী এখন সুস্থ আছে।শেহজাদ গরিব ছেলে মেয়েদের খাবার দিচ্ছে।আজকে মুনতাসিব খান গ্রামের দরিদ্র শিশুদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে।শেহজাদ তো শুনে ভীষণ খুশি এবারও নমিনেশন তার আব্বুই পেয়েছে।এই দিনটা অনেক স্পেশাল তাদের জন্য।

‘ভাই মামু ডাকছে তোমাকে’

ইফাজের কথায় শেহজাদ অর্নবকে হাতের কাজগুলো বুঝিয়ে দিয়ে মুনতাসিব খানের নিকট যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।শেহজাদের শরীরে আজও শভ্ররঙা পাঞ্জাবি।পাঞ্জাবির হাটা গুটিয়ে কুনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা।দেখতে মাশাআল্লাহ দারুন লাগছে।শেহজাদকে শেহজাদের মতোই লাগছে।ঘামে লেপ্টে আছে পাঞ্জাবিটা শরীরের সাথে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপাল জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।এই অবস্থায় ওয়ামিয়া তার শেহজাদ ভাইকে দেখলে ক্রাশ খেতো।অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো।

‘আব্বু ডেকেছো আমায়’

‘হ্যাঁ শেহজাদ আজ কেনো আমি এগুলো করছি তা বেশ ভালো করেই জানো তুমি’

‘হ্যাঁ আব্বু আমি জানি’

‘তুমি নির্বাচনের সময় এখানে থেকো না প্লিজ।অনুরোধ করছি তোমায়।তোমার আম্মুর চোখের মনি ছিলে।শেষ সময়ে সে তোমাকে রক্ষা করতে বলে গিয়েছে’

‘আব্বু আম্মু আমাকেও একটা কথা বলে গিয়েছে।আমি সব সময় তোমার পাশে থাকি এটা ওয়াদা করেছি আমি।আব্বু বলছি এগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো আমি আর তোমাকে একা ছাড়ছি না।এক বছর অনেক কষ্টে দূরে থেকেছি আর নাহ’

‘তুমি বুঝতে কেনো চাইছো না শেহজাদ এখানে এখন থাকাটা নিরাপদ না তোমার জন্য”

‘তাহলে তো তোমার জন্যও নিরাপদ না আব্বু।যদি যেতে হয় তোমাকে নিয়েই যাবো।একা আমি কোথাও যাবো না’

‘তুমি বুঝছো না আমি গেলে এখানে….’

‘তুমি যখন যেতে পারবে না তখন আর কোনো কথা না।আজকের দিনটা শান্তিতে কাটাও।দুদিন পর নির্বাচন অনেক ব্যস্ত থাকতে হবে তখন।এখন বিশ্রাম নিয়ে নাও’

শেহজাদ বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।আজকে তার আম্মু শেহতাজ শেখের জন্মদিন।মুনতাসিব খান প্রতিবছর এই দিনে গ্রামের দরিদ্র শিশুদের খাওয়ান।শেহজাদ নিজ হাতে শিশুগুলোর প্লেটে খাবার তুলে দেয়।মুনতাসিব খান দূর থেকে এগুলো দেখে চোখ জুড়ান।ছেলেটা তার মায়ের মতোই হয়েছে।শেহতাজ ছিলেন অতন্ত্য নরম মনের অধিকারী একজন নারী।শেহজাদ বাকি গুন গুলো শেহতাজের মতো পেলেও ব্যক্তিত্ব কিছুটা মুনতাসিব খানের মতো হয়েছে এবং নিজের মতো।

শেহজাদ বেরিয়ে এসে মায়ের প্রিয় জায়গায় চলে আসে।শেহতাজের প্রিয় জায়গা ছিলো নদীর পাড়।কিনারা ঘেষে হওয়া কাশফুল ছিলো তার ভীষণ প্রিয়।ছোটবেলায় অনেকবার এসেছে সে মুনতাসিব আর শেহতাজের সাথে।সেগুলো এখন স্মৃতি মাত্র।শেহজাদ একা এসেছে।ইফাজ বা অর্নব কাউকেই আনেনি সে।আজকে বড্ড মাকে মনে পরছে তার।কতো সুন্দর মুহুর্ত কাটিয়েছে তারা তবে সেগুলো এখন স্মৃতি মাত্র।মানুষটা নেই তবে স্মৃতিগুলো এখনো হৃদয়ের গভীরে রয়ে গিয়েছে।

‘আম্মু আমি পারছি না।তুমি থাকলে তো আর এমন হতো না।না মামা এমন করতো আর না আমার প্রেয়সীকে হারানোর ভয় থাকতো।আম্মু ফিরে আসো,দেখো তোমার শেহজাদ কাঁদছে।প্লিজ ফিরে এসো’

শেহজাদ কাঁদছে।আজ ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার।হৃদয়টা জ্বলছে,ভেতরটা ছারখার হচ্ছে।জীবনের দুইজন গুরুত্বপূর্ণ নারীর একজনকে সে হারিয়েছে।আরেকজনকে পেতে হলে তাকে লড়াই করতে হবে নিজের সাথেই।কি করবে সে!মেনে নিবে ওয়ামিয়াকে।তবে ওয়ামিয়া কি তার ভয়ংকর প্রেম সহ্য করতে পারবে।শেহজাদ ঘাসের উপর শুয়ে পরে ধপ করে।

******

‘ফুপি আম্মু খুব কি ক্ষতি হতো তুমি থাকলে।আজকের দিনটা এমন হতো না।আগের মতো আমি আর শেহজাদ ভাই তোমাকে নিয়ে ঝগড়া করতাম,খুনসুটি হতো।আমি শান্তি চাই ফুপি আম্মু।পারছি না আর!’

‘কাঁদছিস কেনো মেহনাজ’

অজিফার আওয়াজ শুনে ওয়ামিয়া অশ্রুশিক্ত নয়নে তাকালো অজিফার দিকে।অজিফা থমকায়।মেয়েটার সাথে তার এক দুই বছরের বন্ধুত্ব না।আট টা বছর একসাথে।কম কথা না।চেনে সে ওয়ামিয়াকে।অজিফা শেখ পরিবার আর খান পরিবারের সব কিছু সম্পর্কে অবগত।অজিফা জড়িয়ে ধরে ওয়ামিয়াকে।ওয়ামিয়া ঝাপটে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে।অজিফা মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে।

‘অ…জিফা আমি শেহজাদ ভাইকে ভীষণ ভালোবাসি।উনাকে ছাড়া অন্য পুরুষের সান্নিধ্যে কল্পনা করলেও আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়’

‘কান্না থামা মেহেনাজ।আল্লাহর উপর ভরসা রাখ।ইনশাআল্লাহ আল্লাহ সব ঠিক করে দিবেন’

অনেক সময় পর শান্ত হয় ওয়ামিয়া।আজ কলেজে গিয়েছিলো সে আর অজিফা তবে একটা ক্লাস করে বেরিয়ে এসেছে।খালপাড়ে বসে আছে দুজন।আকাশে রোদ নেই।সাদা কালো মেঘেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে আকাশ জুড়ে।আকাশে যেমন মেঘর আনাগোনা ওয়ামিয়ার হৃদয়েও মেঘেদের আনাগোনা চলছে।

‘মেহেনাজ চল বাড়ি ফিরি’

‘এখন বাড়িতে যেতে ইচ্ছা করছে না তোর ইচ্ছে করে চলে যা’

অজিফা বিরক্ত হলো।এই মেয়ে সব সময় তার সাথেই এমন করে।কিছু একটা বললেই যা তুই কর,চলে যা।অজিফা বিরক্তিকর আওয়াজে আওড়ালো,

‘আমি গেলে তোকে নিয়েই যাবো।একা ফেরার কথা বলিনি’

অজিফা গাল ফুলিয়ে বলল কথাটা।ওয়ামিয়া নিঃশব্দে হাসে।মেয়েটা হুটহাট অভিমান করে।এগুলোর সাথে সে অভ্যস্ত।

‘রাগ করেছিস পেত্নী’

‘আমি!আমি কে যে রাগ করবো।আমি তো কারো কিছুই না’

ওয়ামিয়া অজিফাকে ঝাপটে ধরে বলে,,’সরি তো।তুই তো আমার বেস্টু’

অজিফা হেসে ফেলে।দুজন খাল ঘেষে হাঁটতে হাঁটতে নদীর তীরে চলে আসে।নদীর কাছে আসতেই হতভম্ব হয় ওয়ামিয়া।তার শেহজাদ ভাই এলেমেলো ভাবে বসে আছে ঘাসের উপর।অজিফাকে দূরে দাড়িয়ে থাকতে বলে ওয়ামিয়া পা বাড়ালো তার শখের পুরুষের দিকে।কাছাকাছি আসতেই থমকালো ওয়ামিয়া।উষ্কখুষ্ক চুল,লাল এক জোড়া চোখ দেখে ভেতরটা কেমন যেনো করে উঠলো ওয়ামিয়ার।ওয়ামিয়া দ্রুত পায়ে হেঁটে শেহজাদের কাছে আসলো।তার ভেতরই ঝুপ দিয়ে বৃষ্টি নেমে পড়লো।এদিকটায় কেউ নেই।ফাঁকা চারপাশ।দূরে দাঁড়িয়ে অজিফা সব দেখছে।ওয়ামিয়া শেহজাদের থেকে দূরত্ব রেখে বসে পড়লো।বৃষ্টির তেজ অনেক।

‘শেহজাদ ভাই আপনি এই সময়ে এখানে এ অবস্থায় কেনো?’

শেহজাদ হুট করে কান্ড ঘটিয়ে ফেললো।ওয়ামিয়া কল্পনাও করেনি এমন কিছু হবে।ওয়ামিয়া কাঁপছে।দূরে দাঁড়িয়ে থাকা অজিফার চোখগুলো ও বড় বড় হয়ে গেলো!

#চলবে ইনশাআল্লাহ,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here