#গল্প১৩৮
#সূর্যের_পারিজাত (পর্ব ২)
১.
আজ সকালে এখনো সূর্য ওঠেনি, ফাঁকা মাঠে তাতে শীতটা আরো বেশি অনুভূত হয়। কয়েদিদের দশজনের একটা দল নির্দিষ্ট ছন্দে মাটি কুপিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটা কোপের সাথে মুখ দিয়ে একটা অদ্ভুত শব্দ বের হচ্ছে। মাটিগুলো খুব শক্ত, শক্তি বেশি লাগে। সূর্যকে যে কোদালটা দেওয়া হয়েছে সেটার হাতলটা লম্বায় ছোট। তাতে ওর মতো লম্বা মানুষের জন্য কষ্টই হচ্ছে। আর অনভ্যাসের কারণে হাতের তালুতে ফোস্কা পড়ে গেছে এ ক’দিনেই। জমশের চাচা ওর হাতের অবস্থা বুঝতে পেরে একটা পুরনো কাপড়ের টুকরো পেঁচিয়ে দিয়েছে। তাতে ব্যথাটা একটু কম হচ্ছে। কেন জানি ওকে খুব স্নেহ করে লোকটা। ক’দিন আগে ওকে যখন এই কাজটা দেওয়া হয় তখন এই জমশের চাচা অবাক হয়ে বলেছিল, ‘আপনারে এই কামে দিছে? এমুন তো হওয়ার কতা না। শিক্ষিত মানুষরে তো লেখালেখির কাম দেয় জানি।’
হ্যাঁ, এটা ও শুনেছে। কয়েদিদের মাঝে যারা লেখাপড়ায় ভালো তাদের ভাগ্য ভালো হলে কিছু চিঠি লেখালেখির কাজ পায়। এমনকি যারা কম্পিউটার পারে তারা আরো ভালো কাজ পায়। কিন্তু ওকে প্রথমে এই কাজেই দেওয়া হয়েছে। মাটি কোপানোর কাজ সেভাবে কখনো করা হয়নি। কাজটা যে এত পরিশ্রমের তা ওর ধারণাতেই ছিল না। আর ক্ষুধাও লাগে ভীষণ। সেই ভোর ছয়টায় সকালের নাস্তা করতে হয়েছে, তাও মোটা একটা রুটি সাথে গুড়। কোদালের কয়েকটা কোপ দিতেই সেই রুটি কখন হজম হয়ে গেছে। অথচ, আগে সকালে ক্ষুধাই লাগত না। এমন বড় একটা রুটি খেলে বিকেল পর্যন্ত পেট ভরা থাকত। সূর্য বোঝে কায়িক পরিশ্রম যারা করে তারা কেন এত খেতে পারে। আর যাদের কায়িক পরিশ্রম করেই খাবার জোগাড় করতে হয় তাদের কাছে খাওয়া ব্যাপারটা কত গুরুত্বপূর্ণ।
সূর্য আর কয়েকটা কোপ দিয়ে বসে পড়ে, হাঁপাতে থাকে। জমশের মিয়া ওর দিকে তাকিয়ে দরদী গলায় বলে, ‘ভাইস্তা, তুমি বইয়া জিরাও। আমরা এই ক্ষেত কোপাই ফেলমু।’
জমশের মিয়া এই দলের নেতা, জমিজমা নিয়ে মারামারি মামলার আসামি। সবাই হুম হুম শব্দে কোদাল চালাতে থাকে। আজ এই ক্ষেতটা কোপানো শেষ হলে পরে এখানে পিয়াঁজ লাগানো হবে। সূর্য মাটির আইলে বসে বসে ভাবছিল এমন করে কী করে ও দিন পার করবে? প্রথমে ভেবেছিল পনেরটা বছর খুব বেশি না। কিন্তু এই ক’দিনেই ও কেমন হাঁপিয়ে গেছে। অথচ রায় হবার আগ পর্যন্ত একটা আশা ছিল, হয়তো শাস্তি কমও হতে পারে। কিন্তু যেদিন থেকে ও জানল এই কারাগারেই থাকতে হবে সেদিন থেকে ওর হতাশাটা বেড়েই চলছে। এখানে শুধু দিন গোনা ছাড়া আর অপেক্ষার নতুন কিছু নেই।
এই যখন ভাবছে ঠিক তখন বাঁজখাই একটা গলা শোনা যায়, কেউ একজন বিশ্রী একটা গালি দিয়ে বলে, ‘কাম বাদ দিয়া বইয়া আছস, নবাবের পুত।’
সূর্য মুখ ঘুরিয়ে তাকাতেই ওদের ওয়ার্ডের ‘ম্যাট’ গাল কাটা বাবুলকে দেখতে পায়। একটা খুনের মামলায় যাবজ্জীবন শাস্তির আসামি। পনের বছরের উপরে শাস্তি খেটে ফেলেছে। এখানে যারা তাদের শাস্তির মেয়াদের অর্ধেকের বেশি খেটে ফেলে তারা সাধারণত অন্যান্য কয়েদিদের দেখে রাখার কাজটা পায়। এদেরকে ম্যাট বলে, এদের কথা মতো কয়েদিদের চলতে হয়। সুযোগ পেলেই অনেক ম্যাট নির্যাতন চালায়।
বাবুলকে দেখে জমশের দৌড়ে এগিয়ে এসে অনুনয় করে বলে, ‘শিক্ষিত পোলা, তাই আমি কইছি একটু বিশ্রাম নিতে।’
সূর্য ততক্ষণে ওঠে দাঁড়িয়ে কোদালটা হাতে নিয়েছে, নিজেকে ভীষণ অপমানিত লাগছে। এমন একটা লোক ওকে এভাবে কথা বলছে! রাগী চোখে একবার তাকাতেই গাল কাটা বাবুল তেড়ে আসে, ‘একদম চোখ গাইলা দিমু, আবার আমার দিকে চোখ বড় কইরা চাইয়া থাকে।’
ঠিক এমন সময় জাহাঙ্গীর নামের একটা ছেলে বাবুলের সামনে এসে দাঁড়ায়, হিম শীতল গলায় বলে, ‘বাবুল, তুই তো জানস আমি ডাবল মার্ডারের আসামি। এই জেলেও অনেক মাইর পিট করছি, তাই তোর মতো ম্যাট হইতে পারি নাই। সেই ইচ্ছাও নাই। কিন্তু এইহানে মাতবরি করিস না। ক্ষেত পুরাটা বিকালের মধ্যে কোপানো হইলেই হইল।’
জাহাঙ্গীরের দিকে বাবুল তীব্র চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে, তারপর এক দলা থুতু ফেলে হনহন করে চলে যায়।
সূর্য অবাক হয়ে জাহাঙ্গীরের দিকে তাকায়, এই ছেলেটা চুপচাপ থাকে। কেন যে ওর পক্ষ নিল ও জানে না। শুনেছে নিজের বোনের অসম্মান করেছিল গ্রামের কিছু প্রভাবশালী। মেয়েটাকে রেপ করে মেরে ফেলেছিল। তখন ও এর প্রতিশোধ নেয়, দু’জন আসামিকে খুন করে। প্রথমে মৃত্যুদণ্ড হয়েছিল পরে উচ্চ আদালতে আপিলে শাস্তি কমে যাবজ্জীবন হয়।
বারোটা বাজার কিছুক্ষণ আগেই সবাই কাজ থামায়। একটু পরেই দুপুরের খাবার। ফেরার পথে জমশের মিয়া বলে, ‘চিন্তা কইরো না, জেলার সাবের সাথে আমার ভালা খাতির আছে। আমি তো মেলা দিন এই জেলে। মাঝে মাঝে হের বাসায় যাই ফুল গাছ লাগাই দিতে। আমি তোমার ব্যাপারটা বলমু।’
সূর্য মাথা নাড়ে। ওর মাথায় এখন কিছু ঢুকছে না, ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে। লাইনে দাঁড়িয়ে খাবারটা নিয়েই গোগ্রাসে খেতে থাকে। লাউ দিয়ে মাছ ভেঙে রান্না হয়েছে। গরম গরম ভাত দিয়ে খেতে বেশ মজাই লাগছে। খেতে খেতে একটা জিনিস ও আবিষ্কার করে, ক্ষুধা পেলে খাবার খুব মজা লাগে। এই সত্যটা আগে বোঝেনি। হঠাৎ করেই মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। মা যদি দেখত ও এই খাবার এমন করে খাচ্ছে, খুব কষ্ট পেত। কত যত্ন করে ওকে বেড়ে খাওয়াত। ওর জন্যই সবসময় বাজারের দামি চালটাই কিনত। আর এখন এই মোটা চালের ভাতই কেমন চেটেপুটে খাচ্ছে। আচ্ছা, মা কী একা একা খেতে পারছে? সূর্যকে ছাড়া মা কেমন আছে?
২.
মেহেরুন্নেসা ভীষণ চিন্তিত মুখে স্কুল কমিটির সভাপতি মান্নান মিয়ার সামনে বসে আছেন। ওনার কথা কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না। ব্যাপারটা ভালো করে বোঝার জন্য আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার কথা আমি ঠিক বুঝলাম না, আমি কেন রিজাইন করব? এই স্কুলে আমি গত বিশ বছর ধরে পড়াচ্ছি, কারো কোনো অভিযোগ তো নাই।’
মান্নান সাহেব আসলে একটা বিপদেই আছেন। উনিও জানেন মেহেরুন্নেসা আপা খুব ভালো শিক্ষক। কিন্তু ইদানিং একটা নতুন ঝামেলা পাকিয়েছে, আর এটা যে কিছু ষড়যন্ত্রকারীদেরই কাজ সেটা বেশ বুঝতে পারেন। কিন্তু এরা এমন করে সব অভিভাবকদের খেপিয়ে তুলেছে তাতে মেহেরুন্নেসাকে রিজাইন করতে বলা ছাড়া ওনার আর কোনো উপায় নেই। গলা খাকড়ি দিয়ে বলেন, ‘আপা, অভিযোগ আগে ছিল না, কিন্তু এখন আছে। কোনো অভিভাবকই চায় না একজন খুনির মা তাদের সন্তানদের শিক্ষার দায়িত্ব নিক। যার ছেলে কিনা খুনি সে আর কী শিক্ষা দেবে বাচ্চাদের। দিন দিন অভিভাবকেরা খেপে ওঠেছে। এতদিন তাও মামলাটা বিচারাধীন ছিল, সবাইকে বুঝিয়ে রাখা গেছে। কিন্তু এখন তো শুনলাম আপনার ছেলের বিশ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। কেউ এমন দাগী আসামির মাকে শিক্ষক হিসেবে দেখতে চায় না। আপনি নতুন কোথাও চাকরি দেখেন, ততদিন আমি সবাইকে বুঝিয়ে রাখব। হাজার হলেও আপনি এই স্কুলের একজন পুরনো শিক্ষক।’
মেহেরুন্নেসা হতবিহ্বল হয়ে চেয়ে থাকেন, এবার তার কাছে জীবনের আরেকটা কঠিন দিক প্রকাশিত হয়। এই হাইস্কুলে তিনি গণিতের একজন সম্মানিত শিক্ষক ছিলেন। কোনোদিন ভাবেননি এমন দিন আসবে। আচ্ছা, কেউ বিপদে পড়লে কেন মানুষ তাকে আরো খাদে ফেলে দেবার চেষ্টা করে? সূর্য নাই, ওর মামলা চালাতে জমানো অনেক টাকাই খরচ হয়ে গেছে। উচ্চ আদালতে আপিল করতে হবে, আরো টাকার দরকার। এখন যদি এই চাকরিটা হারান তাহলে যে সত্যিই অকূলপাথারে পড়বেন। কিন্তু এদের কাছে চাকরির জন্য অনুরোধ করতেও ইচ্ছে করছে না। একটু ভাবেন, এই এলাকাতে এমনিতেও আর থাকা যাচ্ছে না। আশেপাশের সবার দৃষ্টিভঙ্গি পালটে গেছে, আগেরমতো সেই সম্মানটা নেই। বোঝেন, সবাই সূর্যকে নিয়ে আড়ালে আবডালে কথা বলে। এখন তাও সবাই আড়ালে কথা বলে, ক’দিন পর মুখের উপর অপমান করে যাবে। আর শিক্ষক মানুষ হয়ে ছেলেকে মানুষ করতে পারেননি এই খোটাটা দিতে পেরে সবাই দারুণ আত্মতৃপ্তি পায়।
মেহেরুন্নেসা গম্ভীরমুখে বলেন, ‘আমাকে কিছুদিন সময় দিয়েছেন তার জন্য ধন্যবাদ। আমি নিজেই চলে যাব, আপনাকে কষ্ট করে কিছু করতে হবে না।’
সেদিন বিকেলে ক্লান্ত পায়ে যখন বাসায় ফেরেন, তখন হঠাৎ করেই বুক ভেঙে কান্না চলে আসে, ফোঁপাতে ফোপাঁতে বিড় বিড় করে বলেন, সূর্য, তুই কোথায় বাবা? তোর মা যে একা একা যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে।’
৩.
সূর্য সার বেঁধে পিয়াঁজের চারা লাগাচ্ছে। কাজটা বেশ মজার। প্রথমে ওরা সবাই মিলে পিয়াঁজের চারাগুলোর লম্বা লম্বা শিকড় কেটে ছোটো করে নিয়েছে, সাথে উপরের মাথাটাও। তারপর একজন ক্ষেতের এক মাথা থেকে আরেক মাথাতে একটা নিড়ানি কাচি দিয়ে কয়েকটা সমান্তরাল লাইন কেটে দেয়। সেই লাইন বরাবরই সারিবদ্ধভাবে চারা লাগাতে হয়। সারাদিন লেগে যায় কাজটা শেষ করতে। পুরো ক্ষেতটা এখন দারুণ লাগছে দেখতে।
কাজ শেষে করে ওরা আজ ঘুর পথে ওয়ার্ডে ফেরার পথ ধরে। সবাই দারুণ ক্লান্ত, ক্ষুধা লেগেছে। অবশ্য একটু পরেই রাতের খাবার দিয়ে দেবে। এখানে সন্ধ্যে হলেই রাতের খাবার খেতে হয়। সূর্য আনমনে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ একটা গাছ দেখে দাঁড়িয়ে যায়, পুরো গাছটা কাঁটায় ভরা আর তাতে লাল ফুল ফুটে আছে। অস্ফুটে বলে, পারিজাত ফুল। মনের ভেতর বরফের একটা হিমবাহ যেন গলে যায়, পারিজাতের মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেইসাথে পাঁচ বছর আগে ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ারে ফিরে যায় ও।
সেদিনও ওদের ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের সামনে এমন একটা গাছ দেখে সদ্য পরিচিত ওর ক্লাশেরই একটা নতুন মেয়েটাকে বলেছিল, ‘দেখো, তোমার নামের ফুল।’
মেয়েটা একটু গম্ভীরমুখে বলেছিল, ‘এটা মান্দার গাছের ফুল। সবাই এটাকে ভুলে পারিজাত নামে ডাকে। শিউলি ফুলটাই আসলে পারিজাত ফুল। অনেকে এটা স্বর্গীয় ফুলও বলে।’
সূর্যও নাছোড়বান্দা, সাথে সাথে গুগল করে দেখায়, ‘এই দেখো, এখানে পরিস্কার বলা আছে মান্দার ফুলই হলো পারিজাত ফুল।’
পারিজাতও কম যায় না, মোবাইলটা খুলে বলে, ‘এই দেখো, পুরাণের বর্ণনা, সাহিত্যের বর্ণনায় যেভাবে বলা আছে তাতে শিউলি ফুলই পারিজাত। আর এটাও বলা আছে পারিজাতের সুন্দর ঘ্রাণ আছে, তোমার ওই কাঁটাওয়ালা মান্দার গাছের ফুলে কী এমন ঘ্রাণ আছে?’
সূর্য মুখে হাসি ফুটিয়ে দু’হাত তুলে বলে, ‘আচ্ছা এই ফুল নিয়ে বিতর্ক থাকুক গুগলে, কিন্তু আপনি যে ওই কাঁটাওয়ালা পারিজাত না, বরং শুভ্র সুন্দর শিউলি ফুল তাতে কোনো বিতর্ক নেই।’
পারিজাত চোখ বড় বড় করে তাকায়, কথাটা বুঝতে এক সেকেন্ড সময় লাগে, তারপর হুট করেই লজ্জা পেয়ে যায়। ও সুন্দর, এ কথা অনেকে অনেকভাবেই বলেছে, কিন্তু আজ কেন জানি মনে মনে খুব ভালো লেগে যায় কথাটা।
ভালো লাগাটা বুঝতে না দিয়ে পারিজাত ভ্রু কুঁচকে বলে, ‘বেশ ভালোই তো মানুষ পটানো কথা বলতে পারেন। তবে এটা জেনে রাখবেন, প্রয়োজনে আমি কিন্তু কাঁটাওয়ালা পারিজাতও হতে পারি, সেটা মাথায় রাখবেন কিন্তু।’
সূর্য দমে না গিয়ে বলে, ‘আপনিও পারিজাত নিয়ে একটা গল্প আছে সেটা মাথায় রাখবেন। সেটা হলো পারিজাতিকা নামে আপনার মতোই এক রাজকন্যা সূর্যের প্রেমে পড়ে।কিন্তু সূর্যকে সে কখনো পায়নি। সেই দুঃখে সে মারা যায়। তার ভস্ম থেকেই পারিজাতের সৃষ্টি। আর এজন্যই আপনার কথিত পারিজাত মানে শিউলি ফুল রাতে ফোটে আর দিনে সূর্যের আলোতে ঝরে পড়ে অশ্রুবিন্দুর মতো। যেন সূর্যকে না পাবার দুঃখের প্রতীক। তাই আপনিও সূর্যের ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন।’
পারিজাত রেগে যেতে গিয়েও রাগে না, পারিজাত ফুলের এই গল্পটা ওর জানা ছিল না। কী বিষন্ন সুন্দর গল্পটা! ছেলেটা বেশ ভালোই পড়াশোনা করে, এর সাথে অন্তত কথা বলে আরাম পাওয়া যাবে।
এরপর থেকে দু’জনের প্রায়ই কথা হতে থাকে, সাহিত্যের নানা দিক নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক হয়, আবার মিটেও যায়। দিন দিন শুধু কাছে আসাটা আরো বাড়তেই থাকে। একটা সময় দু’জনে জীবনের লক্ষ্যটাও ঠিক করে ফেলে। কিন্তু হঠাৎ করেই জীবন যে এমন করে পুরো বিপরীত দিকে ঘুরে যাবে তা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি সূর্য।
সূর্যের বাহুতে টান পড়তেই তাকিয়ে দেখে জমশের মিয়া, তাড়া দিয়ে বলে, ‘ভাইস্তা, কী হইল, বাড়ির কথা মনে হইছে বুঝি? তাড়াতাড়ি পাও চালাও, গোনতির সময় হইয়া গেছে, না পাইলে কিন্তু তুলকালাম কইরা ফেলব।’
‘গোনতি’ ব্যাপারটা আসলেই খুব স্পর্শকাতর ব্যাপার। কমপক্ষে তিনবার করে গুনে দেখা হয় বন্দীর সংখ্যা। কেউ যদি সেসময় অনুপস্থিত থাকে, তাহলে তার কপালে নিদারুণ শাস্তি থাকে।
সূর্য মাথা নাড়ে, তারপর ওদের সাথে দ্রুত পা চালায় অন্ধকার কুঠুরির দিকে।
(চলবে)
মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সুবাস
শিমুলতলী, গাজীপুর
১৪/০২/২০২২