#পূর্নিমার_চাঁদ_জানে_তুমি_আমার
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
Part 8
রেহান ভাইয়ের কথা শুনে থ হয়ে গেছি।কি বলবো বুঝতে পারছিনা।আমার মনে এখন রেহান ভাইয়ের জন্য আগের সেই পাগলামি ভালোবাসা টা আর নেই।
“রেহান ভাই আপনি এটা কি বলছেন?আপনি তো নিধি আপুকে …”
“না সারা নিধি আমার ভালো লাগা ছিলো ভালোবাসা না।আমি তোকে ভালোবাসি।তাই তো দেখনা নিধির সাথে সব শোষ করে দিয়েছি।”
“কিন্তু …”
“কোনো কিন্তু না সারা।তুই আমায় ভালোবাসিস তো নাকি।”
আমি চুপ করে আছি।আজ থেকে ঠিক কয়েক মাস আগে আমাকে এই কথাটা জিজ্ঞেস করলে হয়তো আমার উত্তরটা ভিন্ন হতো।।আলি বললাম।,,
“দেখুন রেহান ভাই।আমি চাইনা এখন কোনো সম্পর্কে জড়াতে।”
“আচ্ছা তুই টাইম নে।আমার সমস্যা নেই।যতটাইম লাগে তুই নে।আমি অপেক্ষা করবো।”
“কিন্তু আমি তো বললাম”
“প্লিজ সারা একটা সুযোগ দে ভালোবাসার।ভুলগুলোকে মাফ করে আমাকে তোর ভালোবাসা দিয়ে গুছিয়ে নে।”
আমি চুপ করে আছি।কি বলবো। এখন আমার কোনো কথাই রেহান ভাই শুনবে না।
ওইদিন কোনোরকম রেহান ভাইকে নিয়ে বাসায় ফিরেছি।ওইদিনের পর থেকে রেহান ভাই আরও পাগল হয়ে গেছে।সারাদিন শুধু সারা সারা করে।তাহিন ভাইতো বলে
“কিরে মিথি কি যাদু করলি আমার ভাইয়ের উপর একদম তোর দিওয়ানা হয়ে গেলো।”
ভিষন লজ্জা করে তখন।কিন্তু আমি যে আমার মনকে বুঝিয়ে নিয়েছি।আমি কিছুতেই রেহান ভাইয়ের জীবনের সাথে জড়াবো না।
_______________________________________
কেটে যায় একটি বছর রেহান ভাই এখন আমাকে বিয়ের জন্য রাজি হতে বলছে।আমার কেনো কথাই শুনতে নারাজ।একদিন রেহান ভাই সহ সব কাজিনরা মিলে রেস্টুরেন্টে গেলাম।সেখানে আমি আর রেহান ভাই পাশাপাশি বসেছি।আমাদের সামনে তাহিন ভাইয়া আর অর্পি আপু।সবাই গল্প করছি।তখনই ওয়েটার কফি নিয়ে এলো।আমার জামাতে ফেলে দিলো। ভাগ্যিস কোল্ড কফি ছিলো।নাহলে আমার অবস্থা খারাপ হতো।
রেহান ভাই কিছু ক্ষন চিল্লাচিল্লি করলো।আমি রেহান ভাইকে থামিয়ে অর্পি আপুকে নিয়ে ওয়াশরুমে গেলাম।ক্লিন করতে জামাটা।আপুর একটা কল আসায় আপু বলল,,
“মিথি তুই ড্রেসটা ক্লিন কর। আমি একটু আসছি।”
আমি হ্যা সুচক মাথা নাড়ালাম।
ওয়াশরুমের ভিতরে এসে পানি ছেরে দিয়ে ড্রেসটা ক্লিন করছিলাম।ওমনি লাইট অফ হয়ে গেলো।হালকা নীল আলো জলছে।কিম্তু আমার ভিষন ভয় করছে।তারাতারি বের হতে নিলেই সামনে কোনো মানুষের অবয় দেখতে পেলাম।সাহস নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।,,
“ককে?কে ওখানে?”
কোনো উত্তর পেলাম না।অবয়টা আমার দিকে আসতে লাগলো।ভিষন ভয় করছে।হঠাৎ ই চেনা গলার আওয়াজ পেলাম।মিস্টার ভুত!
অনেকদিন পর ওনার দেখা মিলল।আমাকে বলছেন,,
“সারা ভুল করছো তুমি ভুল।কল্পনা আর বাস্তব দুটো ই এক লাগছে তোমার কাছে।”
“মানে?আর আপনি এতোদিন পর এখানে কিভাবে এলেন?”
“আমি কিভাবে এসেছি সেটা তোমার না জানলেও চলবে।তবে এটা জেনে রাখো রেহান তোমাকে ভালোবাসে না। অন্য উদ্দেশ্য আছে ওর তোমাকে নিয়ে।নিজেকে সেভ করতে চাইলে আজই ওর সাথে রিলেশন ভেঙে দাও।”
“কিসব যা-তা বলছেন আপনি?আর আপনার কথায় আমি কেনো রেহান ভাইয়ের সাথে সব শেষ করবো।”
“সারা আমি তোমার ভালো চাই।আমি বলেছিলাম আমি তোমায় ভালোবাসি।তোমার খুশিতেই আমার খুশি।তাই এই একটা বছর দূরেও ছিলাম।কিন্তু আজ যখন তোমার বিপদ জানলাম।আমি পারিনি দূরে থাকতে।”
“কিসব বলছেন।আর প্লিজ আপনার কাছে আমি রেহান ভাইয়ের নামে বাজে কথা শুনবো না।”
“আমি একটা কথাও মিথ্যে বলছি না সারা।”
“অনেক হয়েছে।যান এখান থেকে।একদম ভালোলাগেনা এসব বাজে কথা আমার।”
পস্তাতে হবে তোমায় সারা।যদি তোমার কোনো ক্ষতি হয়।আমার থেকে ভয়ংকর আর কেউ হবে না সেদিন মাথায় রেখো।”
কথাটা বলার একটু পরই লাইট জ্বলে উঠলো।আমি ভাবছি।কি বলতে চাইলো মিস্টার ভুতত।?আজব।
আর না ভেবে চলে এলাম সবাই যেখানে আছে সেখানে।খাওয়া দাওয়া করে বাসার গেলাম।কেটে যায় আরও কয়েকটি দিন।সব ঠিকঠাকই ছিলো। এরই মধ্যে একদিন রাতে ডিনার করে এসে সুয়ে পড়বো এমন সময় রেহান ভাই এলো,,
“সারা আসবো?”
“হুম ভাইয়া এসো।”..
” এখনো ভাইয়া বলবি।আমি কি এতো খারাপ যে একটু ভালোবাসা যায়না।”
“না না এমনটা না।”
“তাহলে কি সারা?ভালোবাসো না আমায় হুম।”
“না মানে?”
“আমার উত্তর পেয়ে গেছি। বউটা।”
“বউ!”
“হুম বউ। কাল সন্ধ্যার সময় রেডি থেকো।ঘুরতো যাবো।”
“আচ্ছা। ”
এই নাও এই ড্রেসটা পরবে।”
বলে রেহান ভাই আমার হাতে একটা প্যাকেট দিলো।তারপর চলে গেলো।
_____________________________________
পরেরদিন সন্ধ্যার সময় রেডি হয়ে আছি।রেহান ভাইশের দেওয়া ব্লাক কালারের গাড়ি পড়েছি।হাতে,গলায়, কানে অর্নামেন্টস।হালকা লিপস্টিক। ব্যাস সাজ শেষ। একটু পরেই রেহান ভাই এলো ব্লু ফর্মাল ড্রেস পড়ে।দুজনে বেরিয়ে পড়লাম। বাসায় সবাই জানে আমার কলেজের একটা প্রোগ্রামে যাচ্ছি।রেহান ভাই আমাকে সেখানে পৌছে দিয়ে চলে যাবে একটা কাজে।
প্রায় ১ঘন্টার কাছাকাছি হলো গাড়িতে আমরা।রেহান ভাই চুপচাপ ড্রাইভ করছে।আমি জিজ্ঞেস করেছি করেকবার কোথায় যাচ্ছি। বলেছে সারপ্রাইজ। আরও বেশ অনেকক্ষণ ড্রাইভ করার পর চলে এলাম একটা ফাইভ স্টার হোটেলের সামনে। দেখে মনে হচ্ছে এখানে কোনো পার্টি হচ্ছে।অনেক গুলো কার পার্ক করা।
আমি রেহান ভাইকে বললাম,,
“এটা কোথায় এসেছি? ”
“চল ভিতরে গেলেই দেখতে পাবি।”
আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি।রেহান ভাই আমার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলো।অনেক মানুষ বসে আছে।চেয়ারে।তাদের সামনে টেবিল।টেবিলে হুইস্কি আর বিয়ারের বোতল রাখা।আমার কেমন একটা অসস্তি হচ্ছে। রেহান ভাই কে বললাম,,
“রেহান ভাই চলুন না এখান থেকে চলে যাই।”
“কুল বেবি।যাওয়ার জন্য তো তোমাকে এখানে নিয়ে আসিনি।”
রেহান ভাইয়ের কথা ঠিক বোধগম্য হলো না আমার।ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে।আমি কি কোনো ভুল করলাম?ভাবনার মাঝেই এক লোক কে দেখলাম বড় বাজে নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।রেহান ভাই কাকে যেনো ফোন দিলো।তার একটু পরই একটা মেয়ে এলো নাম এলিনা।এসেই বলল,,
“আরেহ নিউ নাকি।দেখতে তো সেই।এর দাম ভালো আসবে।”
আমি থ হয়ে গেলাম কি বলছে এসব।রেহান ভাই মাথা নাড়ালো।তারপর মেয়েটি আমাকে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।
আমি বার বার বললাম,,
“আপু আমি এমন মেয়ে না প্লিজ আমাকে যেতে দাও।”
“আমি তোমাকে কিভাবে যেতে দিবো? এখানে তুমি এসেছো নিজ ইচ্ছায় যাবে আমাদের ইচ্ছায়।”
“এটা কোন যায়গা আপু?”
“এটা বডারের কাছের একটা ফাইভ স্টার হোটেল।এখানে প্রতিদিন প্রায়। শ’খানেক মেয়ে বাডারের বাহিরে পাঠানো হয়।”
“কিহ!!”
“হুম।আর তুমি আজ এই পার্টির মুল আকর্ষন।চলো রেডি হয়ে নাও।”
“না না আমি পালাবো।”
“সে চিন্তা ভুলে যাও।এখানের চার পাশে কড়া সিকিউরিটি আছে।”
কান্না পাচ্ছে ভিষন।কি করবো এখন।রেহান ভাই এমন।এতোটা খারাপ ছিহ।একটু পরেই এলিনা নামের মেয়েটা জুস নিয়ে এলো।আমি খাবো না।তবুও জোর করছে।জোর করেই খাইয়ে দিলো। জুসটা খাওয়ার পর থেকেই মাথাটা ঝিম ঝিম করতে শুরু করল।জানিনা কেনো হঠাৎ ই দুর্বল লাগছে শরীরটা।এলিনা আমার সামনে এসে বলল,,
“এখন তুমি রেডি কাস্টোমারদের সামনে যাওয়ার জন্য।চলো চলো।তোমার ডিমান্ড সব থেকে বেশি।৬০লাখ থেকে শুরু হবে ভাবা যায়।
আমি যাবোনা তবুও জোর করেই আমাকে নিয়ে যেতে লাগলো।আমাকে একটা স্টেজে এনে দার করানো হলো।মাথা এতোই ঝিম ঝিম করছে যে সামনে ভালো করে দেখতে পারছিনা সব ঘোলাটে লাগছে।
হঠাৎ দাম বলা শুরু হলো।৬০লাখ,কেউ বলছে ৭০লাখ।কেউ ৭৫লাখ।আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।এতোটা বিশ্বাস করলাম যাকে সে এভাবে ঠকালো। একজন ৫০ বছর বয়সি লোক বলল,,
“৯০লাখ।”
আর কেউ বলছে না কিছু। মানে এই লোকটাই আমাকে কিনে নিবে।আল্লাহ সহায়তা করুন।
চোখ বন্ধ করে আল্লাহ কে ডাকছি।
ওইদিকে শুনতে পাচ্ছি বলছে,,
“৯০লাখ ১,৯০লাখ ২,৯০লাখ”
“দেড় কোটি”
উপস্থিত সবাই পিছে তাকালো।আমি মুখ দেখতে পারছিনা স্পষ্ট । কে এটা।যেই হোক।আজ থেকে হয়তো আমার ঠিকানা বদলে যাবে।ডক্টর হওয়ার সপ্নটা সপ্নই রয়ে যাবে।শেষ পর্যন্ত দেড় লাখ বলা লোকটির কাছে আমাকে দেওয়া হলো।চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।আমার। জানিনা কি হবে আমার সাথে এর থেকে ম/রে যাওয়া ভালো ছিলো ।।
চলবে…!!
(নায়ককে এটা নিয়ে অনেকের কনফিউশান ছিলো। আজ আশা করি সেটা দূর হয়ে গেছে ।আর একটু সময় নিয়ে গল্পটা পড়ুন এমনি বুঝতে পারবেন।আমি এতোটাও জটিল করে লেখিনি।)