পূর্নিমার_চাঁদ_জানে_তুমি_আমার #লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী Part 7

#পূর্নিমার_চাঁদ_জানে_তুমি_আমার
#লেখনীতে:মাইশা চৌধুরী
Part 7

বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে গেছি রুমে গিয়ে।সকালে অরিনের ডাকে ঘুম ভাঙে।

“আপু উঠো আজ বিয়ে।১২ টা বেজে গেছে।”

আমি চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসলাম।অরিন একটা মিষ্টি হাসি চলে গেলো।ভাবতে লাগলাম কাল রাতের কথা।রুপকথার মতো ছিলো।আমি ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে রুম থেকে বের হলাম।দেখি আদ্রিয়ান আর রেহান ভাই মুখোমুখি সোফায় আসে আছে।দুজনের মুখ দেখে মনে হচ্ছে যে রেগে আছে।কি হয়েছে ভাবতেই দেখি তাহিন ভাইয়া ফুলের মালা গলায় দিয়ে এদিকে আসছে।আমি বললাম,,

“একি ভাইয়া মালা পড়ে ঘুরছো কেনো?আজ কি বিয়ে করার নিয়ত আছে নাকি?”

“যদি কেউ ভালোলাগে তাহলে শুভ কাজে দেরি করবো না।তাই মালা পরে ঘুরছি।”

আমি হেসে দিলাম তাহিন ভাইয়ার কথায়।তারপর জিজ্ঞেস করলাম।

“ভাইয়া রেহান ভাই আর আদ্রিয়ান ভাই এভাবে বসে আছে কেনো?যেন এখনই দুজন দু’জনকে খু//ন করবে।?”

“জানিনা।সকালে রেহান রুম থেকে বের হতেই আদ্রিয়ান ডেকে নিয়ে কি যেনো বলল। তারপর থেকে এমন লাগছে দু’জন কে।”

“ওহ।”

“হুম। আচ্ছা থাক আমি ওইদিক টা দেখি।”

“আচ্ছা যাও।”

তাহিন ভাইয়া চলে গেলো।ওদের দিকে একবার তাকিয়ে অর্পি আপুর কাছে গেলাম।আপু রেডি হচ্ছিলো।আমাকেও সাজিয়ে দিলো তারপর একটা রেড কালারের লেহেঙ্গা পরে চুলগুলো হালকা পাফ করে ছেড়ে রাখলাম।মাথায় টিকলি,হাতে, গলায় অর্নামেন্টস পরে আমি রেডি হলে বের হলাম রুম থেকে।তাহিন ভাইয়া দেখেই বলল,,

“একিরে মিথি আজ কি তোর বিয়ে?”

“না আমার বিয়ে কেন হবে?”

“তাহলে এতো সেজেছিস কেনো হুম।?”

তখনি অর্পি আপু এসে বলল,,

“ছোট ভাইয়া আমাদের কাজিনের বিয়ে আমরা তো সাজবোই। তোমার ইচ্ছা হলে তুমি সাজো সমস্যা নাই।”

“আচ্ছা আমাকে তাহলে একটু আদা ময়দা মাখিয়ে দে। যদি কেউ পছন্দ করে।”

তাহিন ভাই আর অর্পি আপুর মাঝে ছোটখাটো একটা যুদ্ধ হলো কারন মেকআপ কে তাহিন ভাই আটা ময়দা বলেছে।ফুপি এসে বলে গেলো তারাতারি বের হতে। পার্লার থেকে মেয়ে এসেছিলে সবাই তাদের কাছেই সেজেছে।আমি বেশি সাজতে চাইনি বলে অর্পি আপু আমাকে হালকা সাজিয়ে দিলো।তাও তাহিন ভাইয়া এই কথা বলল।ধুর।আমি রাগ করে চলে এলাম ওখান থেকে।এসে দেখি বর রেডি।ফুপি আমাকে ডেকে বলল, নিধি আপুকে ডেকে দিতে।

আমিও গেলাম ডাকতে আমাকে দেখে নিধি আপু বলে,,

“আরে মিথি আন্টি ডাকছে তো এটা উনি এসে বললেই তো পারতো।”

“মানে কি ডাকছে তুমি শুনে এসো।বেয়াদবের মতো কথা বলছো কেনো নিধি আপু? ”

“এই শুনো তুমি আমাকে বেয়াদব বলো কোন সাহসে।আমার বাবা এমপি ওকে।আমি চাইলে তোমার লাইফ শেষ করে দিতে পারি।”

“আমি ভয় পাইনা।তোমার মতো নোংরা মেয়ে আমি আমার লাইফে দেখিনাই।ফুপি ডাকছে শুনে এসো। ”

বলে চলে আসতে নিলে দেখি দরজার কাছে রেহান ভাই দাড়িয়ে আছে।কালকে রাতের ওই দৃশ্য দেখার পর কেমন একটা ঘৃনা কাজ করছে মনে।আমি পাশ কাটিয়ে চলে এলাম।আসার সময় এই টুকু শুনলাম,,

“নিধি সারার সাথে এভাবে কথা বলবে না আর।”

হাসি পায়।রেহান ভাই কি না বলছে আমার সাথে এমন ভাবে কথা না বলতে। আমি চলে এসেছি।বর যাত্রী সব রেডি যাওয়ার জন্য।দুপুর ২টো পার হয়ে গেছে।বিয়েতে গিয়ে রেহান ভাই বা আদ্রিয়ান কারোর সাথেই দেখা হয়নি।আজব বিষয় দুজনই গায়েব ছিলো। কেমন জানো ভাব দু’জনের ।
বিয়ে শেষে হতে প্রায় সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে।বর বউ এক গাড়িতে,আমি অর্পি আপু,অরিন,তাহিন ভাই এক গাড়িতে।বাকিরা অন্য গাড়িতে।পৌঁছাতে রাত হয়ে গেছে।এসে ফ্রেস হয়ে খেয়ে দেয়ে রুমে এলাম।অরিন চুপচাপ মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে।
আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,

“কি হয়েছে অরিন আপু?”

“কিছুনা তেমন।আসলে ভাইয়া চলে যাবে।”

“তোমার ভাই আছে?”

“হুম বড় ভাই।ও চলে যাবে নাকি বিদেশে ও।র যাওয়ার কোনো কারন নেই।কেনো যেতে চাইছে বুঝছি না।”

“আরে পাগলি মন খারাপ করেনা। তুমি বলে তোমার ভাইকে যে সে যেনো না যায়।”

“বলেছি।ভাইয়া বলেছে দেখবে। কিন্তু আমি জানি যে ভাইয়া যখন একবার বলেছে তখন যাবেই।”

“আরেহ না। তুমি ভালো করে বলো যাবে না।”

আরও কিছুক্ষণ অরিনকে বুঝিয়ে ঘুমাতে গেলাম।ক্লান্তি থাকায় তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছি।

____________________________________

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখি।ব্লু শার্ট আর ব্লাক জিন্স কাধে স্টুডেন্ট ব্যাগ নিয়ে আদ্রিয়ান চলে যাচ্ছে। আমি বুঝলাম এনি এভাবে কই যাচ্ছে?আদ্রিয়ান সবার কাছে বিদায় নিলো।বরের বন্ধু ছিলো।বর তো যেতেই দিবে না তবুও জোর করেই গেলো।আমার সামনে এসে করুন চোখে একবার তাকালো তারপর আমার পিছে তাকালো।দেখলাম আমার পিছে রেহান ভাই এসে দাড়িয়েছেন।তারপর আদ্রিয়ান চলে গেলো।আমার একটু খারাপ লাগছে।অনেকটা সুন্দর সময় কাটিয়ে ওনার সাথে।এখন সেটা শুধুই সৃতি।
বিকেলের দিকে আমরাও চলে এলাম।
রেহান ভাই আসার সময় নিধি আপুকে পিছে বসতে বলেছিলো।কিন্তু নিধি আপু বসেনি।

কেটে যায় বেশ কয়েকমাস,,
মেডিকেল চান্স পেয়েছি।মজার বিষয় আমি কোনো কোচিং এ পড়িনি। তাও ভালো রেজাল্ট করেছি।কারন কোচিং এর টিচাররা বাসায় এসে পড়িয়ে গেছে।সেটাও রেহান ভাইয়ের জন্য।কারন আগে অনেক গুলো কোচিং করতাম।একদিন ফিরতে লেট হয়ে গেছিলো তাই কোনো রিক্সা পাচ্ছিলাম।না। হেটে হেটে আসছিলাম তখন কতোগুলো ছেলে ডিস্টার্ব করে আমাকে।আর ওখানে পুলিশ এসে যায়।সাথে রেহান ভাই।ওইদিনের পর থেকে সব টিচার রা বাসায় এসেই পড়িয়েছে।
আদ্রিয়ানের সাথে কাটানো ওই একটা রাত অনেক সুন্দর ছিলো। মাঝে মাঝেই সৃতিচারণ করি।ভালোই লাগে।আদ্রিয়ান হয়তো আমাকে ভুলে গেছে।হঠাৎ এক ঝড়ের মতো এসেছিলো আমার জীবনে।নিধি আপুও এখন এই বাসায় থাকে না।মনে হয় রেহান ভাইয়ের সাথে ঝামেলা হয়েছে।

একদিন ক্লাস করে বেরিয়ে দেখি রেহান ভাই দাড়িয়ে আছে গেটের সামনে।

আমাকে দেখে বলল,,

“সারা চল আজ একসাথে বাড়ি ফিরবো।”

“হুম।”

আমি এখন রেহান ভাইয়ের সাথে বেশি কথা বলিনা।যতটুকু না বললেই নয় ততটুকু বলি।বাসার কাছাকাছি আসতেই রেহান ভাই দাড়িয়ে গিয়ে আমাকে ডাক দিয়ে বলল,,

“সারা শুন।”

আমি দাড়িয়ে পিছনে ফিরলাম,,
রেহান ভাই আমার কাছে এসে আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,,
সারা আমি তোকে ভালেবাসি।কখন কিভাবে ভালেবাসাটা হয়ে গেছে আমার জানা নেই।আমি শুধু এইটুকু জানি যে তোকে আমি ভালেবাসি। আমাকে তুই তোর মতো করে গুছিয়ে দিস আমি যে বড্ড অগোছালো।

আমি থ হয়ে গেছি রেহান ভাইয়ের কথা শুনে।

চলবে…!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here