ওগো_প্রণয়ের_নিমন্ত্রণ🌼 #লেখিকা:-Nowshin Nishi Chowdhury #৮ম_পর্ব

#ওগো_প্রণয়ের_নিমন্ত্রণ🌼

#লেখিকা:-Nowshin Nishi Chowdhury

#৮ম_পর্ব

শুভ সাদা তুল তুলে নরম বিছানায় শুয়ে আছে এক ছোট্ট মোমের পুতুল। ব্লাঙ্কেটটাকে একহাতে চেপে ধরে পাশের বিশাল দেহী ক্রিম কালার টেডি বিয়ারের কাঁধে মুখ গুঁজে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে সে।

দরজা খুলে মেয়েটির রুমে প্রবেশ করলেন একজন। দরজা থেকেই সে ঘাড় উঁচিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলেন বিছানার উপরে শুয়ে থাকা মানবটিকে।

সামনের বেবি কার্ট দেওয়া কালো চুলগুলো কপালেও মুখের সাইডে লেপ্টে আছে। যার কারনে দূর থেকে তার চেহারাটা দেখা যাচ্ছে না।

নরম পায়ে রুমটিতে প্রবেশ করলেন তিনি। রুমটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। যার ফলে রুমের জানালা দরজা গুলো বন্ধ করে পর্দা টেনে দেওয়া। মাথা উঠিয়েই এসির দিকে তাকালেন। টেম্পারেচার ২০ ডিগ্রিতে দেওয়া আছে।

তা দেখে আগত ব্যক্তি জানালার কাছে গিয়ে পর্দা সরিয়ে গ্লাস খুলে দিলেন। অমনি বাইরে আটকে থাকা সূর্যের আলোকগুচছ জানালা দিয়ে হুড়মুড় করে ঢুকে মেয়েটির রুমের মেঝেতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। মুহূর্তেই ঘরটা আলোকিত হয়ে উঠলো।

মেয়েটার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলো যেন। সে আরো একটু টেডি বিয়ারটাকে কাছে টেনে নিয়ে পুরো মুখটা ঢেকে ফেলল।

একে একে দরজা ও পাশে জানালাটাও খুলে দিয়ে পিছনে বিছানায় মেয়েটির দিকে তাকালেন আগত্তক । এরপর বিছানার দিকে অগ্রসর হলেন। তা বুঝতে পেরে মেয়েটা টেডি বিয়ারের সাথে আরো একটু লেপ্টে গেল।

আগত্তক বিছানায় বসল। ভালো করে তাকিয়ে দেখল বিছানায় মেয়েটির কোন নড়াচড়া নেই। তা দেখে মুচকি হেসে টেডি বিয়ারটা সরিয়ে দিলেন মেয়েটির মুখের উপর থেকে।

মেয়েটি তৎক্ষণাৎ খুব শক্ত করে চোখ বুজে শুয়ে থাকলো। তা দেখে আগত্তক আবারো নিঃশব্দে হাসলো। মেয়েটি আর কোন সারা শব্দ না পেয়ে এক চোখ খুলতেই আগত্তকের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেল। আবার সে চোখ বন্ধ করে ফেলল। আগত্তক এবার শব্দ করে হেসে উঠলো।

মেয়েটি চোখ বন্ধ রেখেই বলে উঠলো,

— ইনা না ।আমি এখনো ঘুমাবো।আমি কিন্তু এখন উঠবো না।আমি আজকে স্কুলে যাব না।প্লিজজজ।

আগত্তক মেয়েটির হাত ধরে টেনে নিজের কোলের মধ্যে শুয়ে দিয়ে। নিচু করে মেয়েটির কানে কানে বললেন,

—- শুভ জন্মদিন পুতুল মামনি। এরকম শুভ দিন বারবার ফিরে আসুক তোমার জীবনে।

মাইশা চোখ বন্ধ করেই হেসে উঠলো। চোখ খুলে নিজের মুখের উপরে মায়ের মুখ দেখতে পেল। সে নিজের মুখ বাড়িয়ে মায়ের কপালে চুমু খেয়ে বলল,

— আই লাভ ইউ মামনি।

তখনই ঘরটিতে আলো জ্বলে উঠলো। মুহূর্তেই ঘরটির কোনায় কোনায় কৃত্রিম আলো ছড়িয়ে পড়ল।সূর্য ডুবেছে কিছুক্ষণ আগে।তখনই দেখা গেল বিছানার উপর বসে উবু হয়ে আছে জীর্ণ শীর্ণ ও মলিন চেহারার একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা।

কোলের উপরে রাখা আছে সেই ক্রিম কালারের বিশাল দেহের পুতুলটা ‌। তারই মাথার সাথে কপাল ঠেকিয়ে বসে আছেন তিনি।

রুমের লাইট জ্বালিয়ে লোকটি এগিয়ে গেলেন বিছানার দিকে। গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখলেন তখনই হু হু করে কান্নার আওয়াজ আসলো লোকটির কানে।

লোকটি তার কাঁধ চেপে ধরলেন। ভদ্রমহিলার কান্নার আওয়াজ আরও বেড়ে গেল। পুতুলটাকে রেখে ঘুরে বসে লোকটির কোমর জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,

— আমার পুতুলটাকে এনে দাও না শারাফাত। আমার খুব কষ্ট হয় ওকে ছাড়া থাকতে। কত বছর ওকে বুকের মধ্যে নিয়ে ঘুমাই না। যাও দেশে এসেছিল। আবার আমাকে ছেড়ে চলে গেল।

কথাগুলো শেষ করতে করতে কান্নায় ভেঙে পড়ল মিসেস মেহেরিমা চৌধুরী। স্বামীকে আরো একটু আঁকড়ে ধরে বলল,

— ও এই বিছানায় ঘুমিয়ে থাকতে বল। প্রতিদিন স্কুলে না যাওয়ার জন্য কত বায়না করতো। চোখ বুজে শুয়ে থাকতো। আমি যেই বলতাম ঘুমিয়ে থাকলে আমার মামনি কথা বলে কি করে..!

চোখ বুজেই বলতো, কই আমি কথা বলছি না তো। তুমি ভুল শুনেছো তো আম্মু।

আর ওর জন্মদিন! প্রতিটা জন্মদিনের সকালে আমি ওকে নিজের কোলের মধ্যে নিয়ে ঘুম ভাঙাতাম আর প্রথম উইশ আমি করতাম।

আর আজ দেখো আমার মেয়েটা আমার এই কোলের মধ্যে নেই। আমার কোলটা একদম ফাঁকা।

ডাক্তার শারাফাত চৌধুরীর চোখের কোনে অশ্রু জমা হলো। স্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

— আমি কাল নিজে যাব ওকে আনতে।দেখি ও না এসে কীভাবে থাকতে পারে! আর তুমি এখন কান্নাকাটি বন্ধ কর আর কালকে মেয়ের জন্মদিনের আয়োজন করো।

মিসেস মেহরিমা চৌধুরী স্বামীর দিকে তাকিয়ে অনেক কষ্টে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে বললাম,

— ও কাল আসবে তাই না!

— হুম অবশ্যই আসবে !

_______🤎______

লাইটারের ক্ষীণ আলোয় ফালাক তার আদুরে বউ এর মায়াবী মুখটা দেখতে লাগলো। সেই টানা টানা চোখ সেই তীক্ষ্ণ নাক,গোলাপী পাতলা ঠোঁট,আর প্রাকৃতিক নাকফুল! আহ্ স্বর্গীয় অনুভূতি !

ফালাক যেন কতদিনের তৃষ্ণার্ত চোখজোড়ার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে। বউয়ের মুখখানা দেখতে দেখতে ফালাক যেন এক ঘোরের মধ্যে চলে গেল। এক দৃষ্টিতে সামনের আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে সে। তার পাশের এক জোড়া চোখ পলক বিহীনভাবে তাকেই দেখে চলেছে।

বাহিরে ঝিরঝিরি বৃষ্টি ও হালকা মেঘের গর্জন সাথে থেমে থেমে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। লাইটারের আলো নিভে গেল। ফালাক আবার জালালো। মাইশার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে পেছন থেকে সরে এসে

ড্রেসিং টেবিলের পাশের ডেক্স থেকে মোমবাতি বের করল। দুটো মোমবাতি জ্বালিয়ে একটা ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখল এরপর পেছনে ঘুরে কিছুটা হেঁটে গিয়ে আরেকটা খাটের পাশের বক্সের উপরে রাখলো।

তখনই ফালাকের উপর হঠাৎ আক্রমণ করে উঠলো মাইশা ।ঘাড়ের পিছনে বেশ জোরেই আঘাত করেছে। বিছানায় পরে গেল ফালাক। ঘাড় চেপে ধরে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাইসার দিকে।

মোমবাতির ক্ষীণ আলোয় মাইশার রণমূর্তি ধারণ করা চেহারা দেখে ফালাকের ভ্রু কুঁচকে যায়। ফালাককে মোটেও সময় না দিয়ে মাইশা ফালাকের শরীরের ওপরে চেপে বসলো।

হাটু দিয়ে ফালাকের হাতের মাসল চেপে ধরল সে। ডান হাত ঘুরিয়ে এনে হাতে থাকা সেই ধারালো চুলের কাঁটা দিয়ে আঘাত করতে গেলে ফালাক কৌশলে নিজের ডান হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মাইশার হাত চেপে ধরল।

ফালাক বিস্ময় চোখে মাইসার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। অশ্রুতে টই টুম্বুর চোখজোড়া ক্রধে লাল হয়ে গেছে। সারা মুখশ্রীতে নিজের জন্য ঘৃণা ছাড়া ফালাকার কিছুই দেখতে পাইনি।

মাইশা অনবরত হাত ঝাকাচ্ছে হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য। ফলে মাথা থেকে টাওয়েল পরে গিয়ে সমস্ত চুল সারা গায়ে ছড়িয়ে পড়ল। । কিন্তু ফালাকের সুঠামদেহের শক্তির সাথে মাইশা পেড়ে উঠলো না।ধস্তাধস্তিতে বিধ্বস্ত এক অবস্থা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর মাইসা নিজে থেকেই থেমে গেল।

ফালাক মুচকি হেসে মাইসার উদ্দেশ্যে বলল,

— কি হলো এনার্জি শেষ!

কথাটা শুনতে রাগে অগ্নি শর্মা হয়ে ফালাককে আবার আক্রমণ করতে চাইলে বাম হাতটাও ছাড়িয়া নেয় তার কাছ থেকে ফালাক । ফালাক বাম হাত দিয়ে মাইশা ডান বাহুটা শক্ত করে চেপে ধরে নিজের দিকে এগিয়ে নিয়ে এসে বলল,

— বরকে এতদিন পর দেখে কি পাগল হয়ে গেছো? যে পাগলামির ঠেলায় নিজের বরকে মেরে ফেলতে উদ্বত হয়েছো। এটা দিয়ে আঘাত করলে তো তোমার বর এখানেই মরে যাবে। তখন তো তুমি বিধবা হয়ে যেতে।

মাইশা নিজের বাহু থেকে ফালাকের হাত ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলল,

— আজব! আপনাকে মারলে আমি বিধবা কেন হব? বরং একজন বিশ্বাসঘাতক কমে যেত।

ফালাক থমকে গেল। হাত আলগা হয়ে গেল তার বিড়বিড় করে বলল,

—- বিশ্বাসঘাতক!

ফালাকের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

— কেন সন্দেহ আছে?

এতক্ষণে মাইশা ফালাকের হাত থেকে নিজের হাত জোড়া ছাড়িয়ে নিতে সক্ষম হল। ফালাকের উপর থেকে নেমে যেতে গেলে ফালাক মাইশা কে নিজের দিকে আরো টেনে নিয়ে বিছানায় গড়িয়ে মাইসার উপরে ঝুঁকে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

— বিশ্বাসঘাতক!তা কি আর করা যাবে বলো তোমার কপালটাই খারাপ। না হলে তোমার কপালে আমার মত এরকম বিশ্বাসঘাতক কেন জুটবে।? একবার যখন জুটেই গেছে তখন….

ফালাক ডেভিল একটা হাসি দিয়ে মাইশার দিকে আরো কিছুটা ঝুঁকে মাইশার ডান গালে স্লাইড করতে করতে বলল,

— আগে তো বেশ নাদুসনুদুস ছিলে! এখন এমন রোগা হয়ে গেছো কেন? আমার শোকে!

মাইশা অনবরত ধাক্কিয়ে যাচ্ছে ফালাককে। তাকে বিন্দু পরিমাণ সরাতে না পেরে রাগে রক্তিম হয়ে উঠেছে মাইশা চেহারা। গরম চোখে ফালাকের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

— আমার উপর থেকে উঠে পড়ুন। আমার দম বন্ধ লাগছে।

মাইশা রেগে যাওয়া করুণ মুখটা দেখে ফালাকের বেশ হাসিও পেল। মায়া ও হলো। তাই বলল,

— ওকে। চোখ দিয়ে আর আমাকে ভস্ম করতে হবে না আমি উঠে যাচ্ছি। কিন্তু তার আগে বলো? কোথায় ছিলে তুমি এতো দিন?

ফালাককে ধাক্কা দিয়ে নিজের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসে বলল,

— জাহান্নামে।

ফালাকের মুখের হাসি মিলিয়ে গেল মাইসার হাত টেনে ধরে বলল,

— এতদিন তো আমিও ওখানে ছিলাম কই তোমাকে তো খুঁজে পাইনি।

মাইশা ফালাকে চোখের দিকে তাকিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জবাব দিল,

— আমাদের দুজনের রাস্তা অনেক আগেই আলাদা হয়ে গিয়েছে ডা.ফালাক শাহতাজ খান। এজন্য জাহান্নামের রাস্তায়ও আপনি আমাকে খুঁজে পাননি।

ফালাক মাইশার মুখে নিজের পুরো নাম উচ্চারণ হতে শুনে বুকের মাঝে ধক করে উঠলো। তার পুতুল বউ তো কখনো তাকে পুরো নাম ধরে ডাকেনি। সে তাকে সব সময় ডক্টর তাজ অথবা পুতুলের বর বলে ডাকতো।

—- এ্যাই পুতুলের বর । তুমি সারা পৃথিবীর কাছে যতোই ডাক্তার ফালাক শাহতাজ খান হও না কেন! আমার কাছে সারাজীবন ডক্টর তাজ ই থাকবে কিন্তু।

ফালাক কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে এসে সামনে থাকা মানবীটির দিকে তাকালো। সেই ছোট্ট পুতুল বউ আর এই মেয়েটার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ হয়ে গেছে।

সামনে থাকা মানবীটি একজন ম্যাচিউর পারসন। যে বাস্তববাদী। কাল্পনিক অস্তিত্ব যার মধ্যে আর অবশিষ্ট নেই। যার চোখে এখন মায়ার পরিবর্তে রুক্ষতা বিদ্যমান।

মাইশা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠিক করে নিয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,

—- আপনার সেই যোগ্যতা সম্পন্ন জীবন সঙ্গিনী গুলো কোথায় চলে গেছে মিস্টার? বলেছিলেন না ভাত ছড়ালে নাকি কাকের অভাব হবে না। তা আপনার সেই কাকগুলো কি অন্য ডালে বাসা বেঁধেছে নাকি!

যে আপনি আবার আমার শরণাপন্ন হলেন।

মাইশা এক একটা কথা বিষাক্ত তীরের মতো গিয়ে বিঁধছে ফালাকের বুকে। নিজেকে সামলে নিয়ে ফালাক বলল,

— আমি ভালোবাসার আর আমার বউয়ের শরণাপন্ন হয়েছি। অনেক অন্যায় করে ফেলেছি তার সাথে। তাই তার কাছে হাত জোর করে ক্ষমা চাইছি। আমাকে ক্ষমা করে দাও আর একটা সুযোগ দাও আমি সবকিছু তোমাকে বলতে চাই। যদি মনে হয় যে আমি সত্যিই অন্যায় করেছি তাহলে তুমি যে শা…

মাইশা ফালাকের দিকে তাকিয়ে বলল,

— লিসেন টু মি কেয়ারফুলি মিস্টার । এটা কোন বিচারালয় নয় বা আপনার সামনে কোন বিচারক দাড়িয়ে নেই। যে আপনার বিচার করব।

আমি ডাক্তার। মানুষের মাথার ব্যামো ঠিক করি। সেটা যদি আপনার প্রয়োজন পড়ে তাহলে কাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে হসপিটালে আমার সাথে দেখা করতে পারেন। আমি বাসায় রোগী দেখি না।

আর যেটুকু বুঝতে পারছি আপনার বর্তমানে চিকিৎসার বড্ড প্রয়োজন।

ফালাক মলিন হেসে বলল,

— আমি না হয় তোমার একজন বিশেষ রোগী হলাম। এখানেই করো না আমার চিকিৎসা। অন্তত এটুকু ভাগ্যে জুটুক আমার।

মাইশা দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে বলল

— আপনি এখন আসতে পারেন।

ফালাক আরো কিছুক্ষণ নীরবতায় মাইসার দিকে তাকিয়ে থাকলো। কি কঠোর দৃষ্টি তার। তার পুতুল বউয়ের এত পরিবর্তন হয়ে গেছে।

ফালাক ভেজা গলায় বলল,

— রাতে আমার কিছু খাওয়া হয়নি পুতুল। তোমার কাছে কি কিছু খাবার হবে। আসলে আজ ই নতুন ফ্ল্যাটে এসেছি তো। তার ওপরে একটানা বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে গিয়ে খাবার কিনে আনতে পারিনি।

মাইশা ফালাকের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ফালাক রুম থেকে বের হলো না ঠিকই কিন্তু দরজার কাছে দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে দেখল মাইশা রান্নাঘরে আছে।

ফালাক মনে মনে বলল,

— যতই ওপরে তুমি কঠোরতা দেখাও না কেন পুতুল বউ?আমি জানি তোমার মনের কতখানি জায়গা জুড়ে আমি আছি।

বেশ কিছুক্ষণ পর একটা খাবারের বক্স এগিয়ে দিয়ে বলল,

— আশা করি এখানে যে খাবার আছে তাতে আপনার হয়ে যাবে। এবার আপনি আসতে পারেন।

ফালাক জেদ করে বিছানার উপরে বসে বলল,

— আমি যাব না। এটা আমার বউয়ের ঘর। এই ঘরে এই বিছানায় আমার অধিকার আছে।

তালাকের কথায় মাইশা চোখে অশ্রুরা ভিড় জমালো। ফালাকের দিকে তাকিয়ে থেকে ভেজা গলায় বলল,

— যেখানে এই মানুষটার উপরেই আপনার কোন অধিকার নেই। সেখানে তার ঘরে তার বিছানায় থাকার অধিকার চাওয়াটা কি হাস্যকর বিষয় নয় মিস্টার।

ফালাক বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মাইশার মুখোমুখি হয়ে বলল,

— কেন নাই তোমার উপর আমার অধিকার?

ফালাকের চোখে চোখ রেখে বলল,

— কারণ আমি নিজেই আপনাকে সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছি।

মাইশা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে ফালাকের হাতে খাবারের পাত্র ধরিয়ে দিয়ে হাত টেনে ধরে রুমের বাইরে তাকে বের করে দিয়ে মুখের উপরে বেডরুমের দরজা আটকে দিল।

মাইশার ভেতরে এতক্ষন আটকে রাখা কান্না গুলো ফোয়ারা হয়ে চোখ দিয়ে ঝরে পরতে লাগলো। মেয়েটা কাঁদছে হাউমাউ করে কাঁদছে। কিন্তু ডান হাতটা মুখের সাথে চেপে ধরে থাকায় চাপা গোঙানির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে শুধু।

দরজার এই পাশ থেকে ফালাক দরজা ধাক্কা দিতে দিতে বলল,

— এ্যাই পুতুল বউ। তুমি কাঁদছো কেন? তোমার এই বিশ্বাসঘাতক বরটা কি মরে গেছে নাকি? যে এভাবে পাগলের মত কাঁদছো। প্লিজ এভাবে কেঁদো না।

কিছুক্ষণ পর মাইশা ফালাকের আর কোন সারা শব্দ পেল না। চলে গেছে! মাইশা দরজায় কান পেতে দিল।

তখন পিছন থেকে বারান্দার থাই গ্লাস লাগানো দরজায় নক করলো ফালাক। দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ। মাইশা পেছন ঘুরে তাকাতেই ফালাক ইশারায় তাকে বোঝালো,

— কান্না করো না প্লিজ।

তারপর ফালাক থাই গ্লাসের উপরে আঙুল দিয়ে লিখলো।

— ভালোবাসি পুতুল বউ ♥️

লেখাটার দিকে বেশ কিছু সময় অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইল মাইশা। বেডরুমের দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বুঝে নিল মাইশা। হারিয়ে গেল অতীতের স্মৃতি পাতায়।

যেখানে পেয়েছিল সে,

এই মানুষটার প্রণয়ের নিমন্ত্রণ..!

#চলবে…🤎

[ আচ্ছা এই গল্পটা সম্পর্কে আপনাদের কি কোন অনুভূতি নেই? গল্পটা কি আর ভালো লাগছে না আপনাদের কাছে। শুধুমাত্র Nice/Next/N লিখে আপনারা কি বোঝাতে চান আমি বুঝতে পারি না।

এত কষ্ট করে বড় বড় পর্ব দেই আপনাদের জন্য। তাই ভালো না লাগলে আমাকে জানাবেন অন্তত।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here