ওগো_প্রণয়ের_নিমন্ত্রণ🌼 #লেখিকা:-Nowshin Nishi Chowdhury #১২_পর্ব

#ওগো_প্রণয়ের_নিমন্ত্রণ🌼

#লেখিকা:-Nowshin Nishi Chowdhury

#১২_পর্ব

সকাল আটটার মধ্যে চৌধুরী বাড়িতে সকালের নাস্তা করা হয়। কারণ ৯ টার দিকে শারাফাত চৌধুরীর হসপিটালে ডিউটি থাকে এবং মিসেস মেহেরিমা চৌধুরীর কলেজে চলে যেতে হয়। আর মাইশার এডমিশন কোচিংয়ের ক্লাস থাকে।

এ বাড়ির নিয়ম হচ্ছে দিনের প্রথম ভাগের এবং শেষভাগের খাবারটা পরিবারের সবাই একসাথে একই টেবিলে বসে খাওয়া। লাঞ্চের সময় একেক জন একেক জায়গায় থাকে যার কারণে একসঙ্গে করা সম্ভব না শুধুমাত্র শুক্রবার ছাড়া। ফ্যামিলি টাইম যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই না।

ঘড়িতে এখন আটটা বেজে দশ মিনিট।

মেহেরিমা চৌধুরী রান্নাঘরে দ্রুত হাতে স্বামী ও মেয়ের জন্য নাস্তা এবং নিজেদের জন্য টিফিন গুছাচ্ছেন।আর ডাইনিং টেবিলে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন শারাফাত চৌধুরী।

মেহেরীমা চৌধুরী হেলপিং হ্যান্ড কে টিফিন কারী দুটো টেবিল এনে রাখতে বলে সকলের জন্য নাস্তা নিয়ে চলে এলেন ডাইনিং টেবিলে। ডাইনিং এ এসে মেয়ের চেয়ারটা খালি দেখে মেহরিমা চৌধুরীর ভ্রু কুঁচকে গেল। মেয়ে এখন আসেনি কেন? তিনি যখন পুতুলের রুমে গিয়েছিলেন তখন তো ওয়াশরুমে ছিল।

স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,

— মেয়েটা এখনো এলো না কেন?

কথা শেষ করে ঘুরে মেয়ের রুমের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তার মধ্যেই সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসলো মাইশা। ব্ল্যাক জিন্স , বেবি পিংক কালারের ফ্রক, গলায় জর্জেটের ওড়না প্যাঁচানো। ঘাড়ে ব্যাগ ঝুলানো আর চুলগুলো বিনুনি করা।

মায়ের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ডাইনিং এ এসে বাবার মুখোমুখি চেয়ারে বসে পড়ল। মিসেস মেহরিমা চৌধুরী স্বামীর দিকে একঝলক তাকিয়ে মাইসার দিকে তাকালেন। এত শান্তশিষ্ট হয়ে টেবিল এসে বসেছে।

মেয়ের চেয়ারের কাছে এগিয়ে গেলেন তিনি। মেয়ের প্লেটে নাস্তা তুলে দিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

— শরীর ভালো আছে তো তোর?

মায়ের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল,

— ঠিক আছি আমি।

শারাফাত চৌধুরী পেপারটা টেবিলের সাইডে ভাঁজ করে রেখে বললেন,

— কালকে রাতে ঘুম কেমন হয়েছে মামনি?

মাইশা কিছুটা চমকে তাকালো বাবার দিকে।

— ভালো।

মেয়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সারাফাত চৌধুরী স্ত্রীকে বললেন,

— ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি। তাই এমন ঝিম মেরে বসে আছে।

মেহেরিমা চৌধুরী মেয়ের গাল টেনে দিয়ে বলল,

— তা আজ নয় কোচিংয়ে যাওয়ার দরকার নেই তোর। বাসায় থাক।

মাইশা মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল ,

— না থাক সমস্যা নেই। আমি কোচিংয়ে যেতে পারবো আম্মু।

মেহেরিমা চৌধুরী চোখ গরম করে তাকিয়ে বললেন,

— বললাম না যাওয়া লাগবে না। নাস্তা করে ঘরে গিয়ে রেস্ট নে। তুমি ও র স্যারকে ফোন দিয়ে বলে দাও আজকে আর যাবে না। কাল থেকে যাবে।

তারপর একটু উঁচু গলায় তাদের বাসার হেল্পিং হ্যান্ড কে ডেকে বলল,

— খালা আমি বাসায় না আসা পর্যন্ত পুতুলকে একটু দেখে রেখো। আমি তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করব।

_______🤎______

— স্যার নেক্সট উইকে আমাকে বাড়িতে যেতে হবে। আর বেশ কিছুদিনের ছুটিও লাগবে।

ফালাকের কথায় সামনের আসনে বসে থাকা প্রফেসর শিকদার চোখ তুলে তাকালেন। কিছুক্ষণ আগে তিনি ওয়ার্ডে রোগী দেখছিলেন।

ফালাক তার আইটেম শেষ করে সেকেন্ড ফ্লোরে এসেছিল স্যার কে খুঁজতে ।পেয়েও গেল। পরে প্রফেসর নিজের কেবিনে এসে বসার পর ফালাককে তার সামনে বসতে বলে এবং কি বলতে চায় সেটা বলতে বললেন।

স্যারকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে ফালাক সাথে সাথেই বলে উঠলো,

— স্যার আমার ছোট বোনের বিয়ে। নেক্সট মান্থের ফার্স্ট ফ্রাইডে। এখন বাড়িতে যাওয়া সত্যিই আমার জন্য খুব জরুরী।

প্রফেসর ডাক্তার সিকদার। ফালাককে বিগত পাঁচ বছর ধরে চেনেন। অকারনে সময় নষ্ট করার মত ছেলে ফালাক নয়।

বরং খুব নিয়মানুবর্তী ছেলে সে। খুব দরকার না হলে যে সে এতো ছুটির কথা বলতো না এ ব্যাপারে ডাক্তার শিকদার খুব ভালো জানেন। তাই তিনি আর মানা করতে পারলেন না।

গম্ভীর আওয়াজে বললেন,

—- আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু বাড়ি থেকে ফিরে আসার পরে তোমার ওপরে কিন্তু প্রচুর প্রেসার পড়বে ফালাক।আগে থেকেই জানিয়ে রাখলাম।

ফালাক মুচকি হেসে সম্মতি জানালো।

— ওকে স্যার। এখন আমি আসি?

— হুম। পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের যে রোগীটা আজ ভর্তি হয়েছে। তার ফুল ডিটেলসটা কালেক্ট করে বিকেলে আমার সাথে একটু দেখা কর।

— ওকে স্যার।

ফালাক কথা শেষ করে দরজা পর্যন্ত যেতেই আবার ডেকে উঠলেন ডাক্তার শিকদার।

— ফালাক।

ফালাক ঘাড় ঘুরিয়ে স্যারের দিকে তাকালেন,

— তোমার বোনের জন্য আমার পক্ষ থেকে নতুন জীবনের অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইলো।

ফালাক ডঃ শিকদারের দিকে কৃতজ্ঞতা পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

— থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।

ফালাক সোজা ক্যান্টিনে চলে আসলো যেখানে তার বেস্ট ফ্রেন্ড তাজিম আগে থেকেই বসে ছিল। তাজিমের মুখোমুখি গিয়ে বসতেই ক্যান্টিনের ছেলেটি দুই কাপ চা এনে ফালাকের টেবিলে রাখল।তা দেখে হাতে তালি দিয়ে ফালাকের উদ্দেশ্যে তাজিম বলল,

— কি টাইমিং ভাই তোর ! দেখ তুইও আসলি চা টাও এসে হাজির। তা আপনার ছুটি কি মঞ্জুর হয়েছে বৎস?

ফালাক তাজীমের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে চায়ের কাপটা তুলে নিয়ে মুখের কাছে ধরে বলল,

— মঞ্জুর।

________🤎_________

বাতাসের দাপটে সামনে রাখা “দারুচিনির দ্বীপ”উপন্যাস বইয়ের পাতা লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে মাইশার। কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই সে তার বারান্দায় রাখা দোলনায় হেলান দিয়ে বসে স্থির দৃষ্টিতে দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এবং গতরাতে মায়ের বলা কথাগুলো চিন্তা করছে সে।

°কাল রাতে রুমের দরজায় শব্দ হতেই মাইশার গাড় হতে থাকা ঘুমটা ছুটে গিয়েছিল । অন্ধকার রুমে এমন একটা উদ্ভট শব্দ শুনে তার বেশ ভয় করছিল তাই সে উঠে মা-বাবার দরজার সামনে গিয়ে যখন নক করবে তখন ভেতর থেকে আসা বাবার কণ্ঠস্বর শুনে থমকে গেল।

— বড় আপা কিন্তু এবার বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছেন আজ। তিনি আমার সম্পর্কে বড় এবং সম্মানীয় বলে ওনার মুখে উপরে আমি কিছু বলতে পারিনি। নাহলে…

— দেখো । আমরা তো আগে থেকেই আবিরের সাথে পুতুলের বিয়ে ঠিক করে রেখেছি তাই না। আর তাছাড়া এখন তো আর বিয়ে দিচ্ছি না মেয়েকে। দুলাভাই বিদেশে যাওয়ার আগে ছেলে-মেয়ের এনগেজমেন্ট এর ইচ্ছা পোষণ করেছেন।

— তুমি বুঝতে পারছ না রিমা। আমাদের মেয়ে এসব বিয়ে এঙ্গেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে মানসিকভাবে অতটা পরিপক্ক নয়।ওর আচার আচরণ এখনো বাচ্চাদের মত।

আমরা যদি এখন এনগেজমেন্টের আয়োজন করি তাহলে আমার ওই বাচ্চা মেয়েটার মনের মধ্যে ভয় ঢুকে যাবে।যে বাবাই তাকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। সামনে এডমিশন পরীক্ষা। মেয়ে কিন্তু পরীক্ষা খারাপ করে ফেলবে।

— তুমি আমাকে কবে বিয়ে করেছিলে। ভুলে গেছো? অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার আগে আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। তারপর এই সংসারে এসে পড়াশোনা করেছি, এখন চাকরিও করছি।

— তুমি যেমন বিয়ে, সংসার এই শব্দগুলোর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলে পুতুল পারবে না রিমা। ওর মনে এই ব্যাপার নিয়ে বিরূপ প্রভাব পড়বে। আমার মেয়েটা কষ্ট পাবে রিমা।

— শোনো বিয়ে প্রত্যেকটা মেয়ের জীবনে খুব ‌একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যা একটি মেয়ের জীবনের আমূল পরিবর্তন আনে। নির্দিষ্ট অভ্যাস এর গণ্ডি পেরিয়ে যখন একটা ভিন্ন পরিবেশে একটি মেয়ে যায় তখন প্রত্যেকটা মেয়েরই ওই পরিবেশটা মানিয়ে নিতে অসুবিধা হয় , কষ্ট হয়। কিন্তু সময়! সময় আস্তে আস্তে সব কিছু ঠিক করে দেয়।

মেহেরিমা চৌধুরী স্বামীর পাশে বসে বাহুতে হাত রেখে বললেন,

— আর আমরা কি এখনই আমাদের মেয়ের বিয়ে দিচ্ছি নাকি। শুধু এনগেজমেন্ট করে রাখতে চাইছি।

তুমি এত দুশ্চিন্তা করো না তো। এত তাড়াতাড়ি আমাদের রাজকন্যাকে রাজ্য ছাড়া হতে দেব না।পারলে সারা জীবন আমাদের দুজনের মাঝে ওকে আগলে রাখবো।

°°°°°°°°°′

ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো মাইশা।ঘাড় ঘুরিয়ে রুমের দরজার দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ আগে তার মা তার কাছে থেকে কৌশলে এনগেজমেন্ট এর জন্য মতামত নিতে এসেছিল। সেটা সে বেশ বুঝতে পেরেছে।

— পুতুল আমাদের সিদ্ধান্তের উপর তোর কতটা আস্থা ও ভরসা আছে?

— একটুও না।

— এ্যা!

পুতুল হেসে উঠলো বলল,

— এটা আবার জিজ্ঞেস করার মতো কোনো প্রশ্ন হলো পুতুলের আম্মু? পুতুল তার আম্মু আর বাবাইকে সবথেকে বেশি ভালোবাসে।

মিসেস মেহরিমা চৌধুরী মেয়ের গাল টেনে দিয়ে বলল,

— পাজি মেয়ে। মায়ের সাথে খালি দুষ্টুমি তোর। এখানে থাক তুই। আমি নাশতা নিয়ে আসি।

ফোনের রিংটোনের শব্দে দরজা থেকে নজর সরিয়ে সরিয়ে মোবাইলের দিকে তাকালো মাইশা। ফোনটা রিসিভ করে কানে নিল সে,

— মাইশু এখনো সময় আছে কিন্তু ভেবে দেখ । পরে জানাজানি হলে তুই তো যাবি সাথে আমিও ফেঁসে যাবো।

— সবকিছু ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি অথৈ। তুই শুধু আমাকে একটু হেল্প কর। দ্যাটস ইট।

চলবে…!

অবশ্যই পড়বেন
______________________

[ একটা গল্প লিখতে কত সময় লাগে জানেন। একটানা হিসাব করলে আড়াই থেকে তিন ঘন্টা। আমি আবার একটানা বসে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে গল্প লিখতে পারি না মাথা যন্ত্রণা করে।

এতটা সময় নিয়ে লিখি শুধুমাত্র আপনাদের জন্য আর সেই আপনারাই কোন রেসপন্স করেন না ভালো মতো। চুপি চুপি গল্প পড়ে চলে যান।

প্রতিদিন অপেক্ষা করে বসে থাকি আপনাদের সুন্দর সুন্দর মন্তব্য গুলো পড়ার জন্য। আপনাদের সুন্দর সুন্দর মন্তব্য গুলো আমার লেখার অনুপ্রেরণা যোগায়।

কিন্তু আপনারা আমাকে প্রতিনিয়ত হতাশ করছেন। সত্যি এখন আর লিখতে ইচ্ছা করে না। যত দ্রুত সম্ভব এই গল্প শেষ করে বিদায় নেব আমি😓]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here