তোকে ঘিরে,Part_22,23,24,25
Ariyana Nur
part-22
মানহা বিরবির করে কিছু বলছে আর কান্না করছে।আরহাম বুঝতে পারলো মানহা স্বপ্নে কিছু দেখে এমন করছে।আরহাম মানহাকে কয়েক বার ডাক দিল কিন্তু তাতে কিছুই হলো না।ও সেই আগের মতই করছে।তাই আরহাম উপায় না পেয়ে মানহাকে টেনে উঠিয়ে ওর গালে আস্তে আস্তে চাপর দিয়ে ডাকতে লাগলো।একটু পর মানহা চোখ খুলে আবার পাগলামি করতে লাগলো।মানহা আরহামকে দেখে বাচ্চাদের মত করে বলল…
—দিব না আমি আমার মেয়েকে কাউকে দিব না।ওরা আমার মেয়েকে নিয়ে যাবে।আমি ওদের দিব না।ওকে নিয়ে গেলে আমি বাচবো কি করে।
এই বলে মানহা ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।আরহাম কোন ভাবেই মানহার কান্না থামাতে না পেরে ওকে একটু জোরে ধমক দিয়ে বলল….
—চুপপপ…..একদম চুপ।কেউ নিবে না আমাদের মেয়েকে।কাউকে দিব না।আমরা আগলে রাখবো আমাদের মেয়েকে।প্লিজ….কান্না থামাও।দেখো আমাদের মেয়ে তোমার পাশে ঘুমিয়ে আছে।ও যদি ঘুম থেকে উঠে তোমাকে এভাবে কান্না করতে দেখলে ও ভয় পেয়ে যাবে।প্লিজ….শান্ত হও।
মানহা পাশে তুর কে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে আস্তে আস্তে কান্নার গতি কমিয়ে দিল।আরহাম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ও একটু পর পর ফুপিয়ে উঠছে।কিছুক্ষন পর আরহাম বলল….
—খারাপ স্বপ্ন দেখেছো???
মানহা ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল….
—হুম…..
—কি দেখেছো বলবে???আমি আমার নানুকে বলতে শুনেছি যদি কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখে তাহলে তা বলে দিলে আর দেখে না।
—সত্যি(অবাক হয়ে)
—হুম….সত্যি….
এখন কি বলবে কি দেখেছো????
মানহা এবার এক হাত দিয়ে তুরকে আর আরেক হাত দিয়ে আরহামের হাত জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলল….
—ওরা আপনাদের কে ডাকলো আর আপনারা আমাকে না নিয়ে ওদের সাথে চলে যাচ্ছিলেন।আমি কত ডাকলাম কিন্তু আপনারা শুনলেন না।আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন। প্লিজ আপনারা জাবেন না আমাকে ফেলে।প্লিজ….
এই বলে ও অবার কান্না করতে লাগলো।আরহাম ওকে এক হাতে জরিয়ে ধরে ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল….
—দেখো আমরা তোমার সামনে আছি।কথা দিচ্ছি তোমাকে ছেড়ে মৃত্যু ছাড়া কোনদিন ও চলে যাব না।আর আমরা দুজন মিলে আমাদের মেয়েকে আগলে রাখবো।কোন কষ্ট কোন দুঃখ যাতে ওর কাছে আসতে না পারে সব সময় তার চেষ্টা করবো।প্লিজ…এবার কান্না থামাও।
—আপনি অনেক পচা আমাকে বকেছেন(গাল ফুলিয়ে)
আরহাম ইনোসেন্ট ফেস করে বলল…..
—সরি আর বকবো না।এবারের মত মাফ করে দাও।প্লিজ…
মানহা ওর মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল….
—আপনি এতো ভালো কেন??
আরহাম মুচকি হেসে বলল….
—একটু আগে না বললে আমি পচা।
মানহা চোখ নামিয়ে গাল ফুলিয়ে রইলো।তা দেখে আরহাম মুচকি হেসে বলল….
—তুমি যে ভালো তাই আমাকে তোমার ভালো মনে হয়।
মানহা ছলছল চোখে আরহামের দিকে তাকিয়ে বলল….
—সবাই যে বলে আমি অ…..
আরহাম মানহাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বলল….
—সবাই কি বলে তা আমার দেখার বিষয় না।এবার কথা না বলে ঘুমিয়ে পর।প্লিজ….
মানহা আর কথা না বলে তুরকে জরিয়ে ধরে ঘুমানোর জন্য শুয়ে পরলো।আরহাম ওদের শরীরে চাদর টেনে দিয়ে মানহার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।মানহা আরহামের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমের দেশে পারি দিল।
এদিকে আরহামের চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।এটা দুঃখের কান্না না সুখের।কেননা আজ মানহার চোখে ওকে হারানোর ভয় দেখতে পেয়েছে।ও যে মানহার মনে নিজের জন্য জায়গা করতে পেরেছে এটা ভেবেই ও আল্লাহ্ এর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলো।
____________________________
সকালের মিষ্টি রোদ চোখে পরতেই মানহার ঘুম ভেঙ্গে যায়।উঠে বসে দেখে তুর ওর সামনে ঘুমিয়ে আছে আর আরহাম ওর সামনে চেয়ারে বসে বেডে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।মানহা নিজেকে এভাবে দেখে প্রথমে অবাক হলো।তারপর কালকের কথা মনে হতেই নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে তুর কে আদর দিল।আরহামকে ডাক দিতে গিয়ে কি মনে করে যেন ডাক না দিয়েই বিছানা থেকে নেমে চলে গেলো।
রুম থেকে বের হতেই মা সামনে এসে বলল….
—তুই ঠিক আছিস কাল কি হয়েছিল এমন করছিলি কেন জানিস কাল কত ভয় পেয়ে গেছিলাম।তোকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে তো আরহাম পাগলের মত করেছে।
মা মানহার গালে হাত রেখে বলল….
—কি হয়েছিলো তোর???
মানহা মুচকি হেসে বলল….
—আমি ঠিক আছি মা।এখন আমাকে কিছু ক্ষেতে দাও।অনেক ক্ষুধা লেগেছে।
মা বুঝতে পারলো মানহা কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছে তাই সে আর কথা না বাড়িয়ে বলল….
—ঠিক আছে তুই ফ্রেস হয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।
তুর ঘুম থেকে উঠে এসে মানহাকে জরিয়ে ধরে বলল….
—মাম্মাম….
মানহা তুরকে জরিয়ে ধরে বলল….
—আমার মা এখন কেমন আছে???
—ভালো……
—তা ঘুম ভাঙ্গলো তোমার???
—শুধু ঘুম ভাঙ্গেনি।পাপা আমাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে হাত মুখ ধুইয়ে দিয়েছে।
—ভালো এবার খেতে চলো তাহলে।
—আজ পাপা আমাকে খাইয়ে দিবে।তুমি আসো আমি যাই পাপার কাছে।
_________________________
মানহা কাল রাতের কথা গুলো মনে করে বসে বসে মুচকি মুচকি হাসছে।মিষ্টি এসে মানহাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল….
—কি ব্যপার আজ কাল একটু বেশিই তুমি ব্লাশ করছো ।তা আমার ভাইয়া কি তোমাকে….প্রপোজ টোপোজ করেছি নাকি।(চোখ মেরে)
—তোমার ঐ খাম্বা খচ্চর ভাই শুধু রাগ আর পকর পকররি করতে পারে।প্রপোজ করতে পারে না।হুহ….
—তাহলে তুমিই কর।দেখবে ভাইয়া গরগর করে একসেপ্ট করে ফেলবে।
—আমার বয়েই গেছে ঐ লম্বু খচ্চর কে প্রপোজ করার।হুহ….আর আমি কি তাকে পছন্দ করি নাকি যে প্রপোজ করবো।
—ওওওও….মা…..তাই না কি!!!কিন্তু তোর চেহারা তো অন্য কথা বলছে।
কথাটা বলে আফরা ওদের সামনে এসে বসলো।
মিষ্টি আফরাকে জরিয়ে ধরে বলল….
—আপি…কেমন আছো তুমি।
আফরাঃ ভালো। তোমার খবর কি???
মিষ্টিঃভালো….
মানহাঃতা মিডিয়ার লোক আমাদের বাড়িতে??কোন বেকিং নিউজ আছে নাকি।
আফরাঃ মাইর চিনোস😡তোদের বাড়িতে কি আমি আসতে পারি না।
মিষ্টিঃ বেকিং নিউস তো আছেই আপু।ক্রাইম রিপোটার আরহাম শিকদারের বউ অজ্ঞান হওয়ায় আরহাম শিকদারের অবস্থা পাগল হওয়া প্রায়।
আফরাঃমানে….(অবাক হয়ে)
মিষ্টি আফরাকে সব বলল সব শুনে তো আফরা মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো।
আফরাঃ ও মাই গড ভাইয়া যে বউ জন্য এমন পাগলামি করতে পারে তা তো আমি ভাবতেও পারিনি।
মিষ্টিঃশুধু কি পাগলামী।বাচ্চাদের মত ভাবীকে ধরে কান্না করেছে।পরে মা বকে তার কান্না থামিয়েছে।
মিষ্টি আর আফরা মানহাকে নিয়ে মজা করছে আর বেচারা মানহা বসে বসে রাগে ফোস ফোস করছে।
________________________________
আরহাম বাসায় এসে ওর রুমে যাওয়ার সময় দেখে মানহা ব্যগ গুছাচ্ছে।তা দেখেই আরহামের মনে ভয় ঢুকে যায়।ও মানহার সামনে গিয়ে বলল….
—কোথায় যাচ্ছ???ব্যগ গুছাচ্ছো কেন???
—…….
—কি হল কথা বলছো না কেন???
—…..
আরহাম জোরে ধমক দিয়ে বলল….
—কি হল কথা বলছো না কেন???
আরহামের ধমক শুনে মানহা ভয় পেয়ে গেলো।কাপা কাপা গলায় বলল….
—এখান থেকে আমি…..
চলবে
তোকে ঘিরে
Part_23
Ariyana Nur
আরহামের ধমক শুনে মানহা ভয় পেয়ে গেলো।কাপা কাপা গলায় বলল….
—এখান থেকে আমি…..
আরহাম ওর কথা শেষ করতে না দিয়ে চিৎকার করে বলল….
—-চুপ কোন কথা বলবে না।তোমার যখন আমার সাথে এক বাড়িতে থাকতে সমস্যা হচ্ছে তাহলে আমিই এই বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছি।তার পরেও তুমি এই বাড়ি থেকে যাবে না।
—আমার কথাটা শুনুন।আমি….
—চুপ আর একটাও কথা বলবে না।আমাকে নিয়েই তো তোমার যত সম্যসা।আমি আর তোমার সামনে আসবো না।তারপরেও তুমি এই বাড়ির থেকে বের হবে না।যদি বের হয়েছো তাহলে আমি নিজের ক্ষতি করে দিব।কথাটা মাথায় রেখো।
কথাটা বলে আরহাম গটগট করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।
মানহা মূর্তির মত কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলো।সব ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো কিছুই মাথায় ডুকছে না।মানহা বিরবির করে বলল….
—যা এই পাগল,বজ্জাত দেখি আমার কথা না শুনেই চলে গেলো।আমার কথাটা তো একবারো শুনলোই না।নিশ্চয়ই মাথায় সম্যসা হয়েছে।আরে আমি বলতে চেয়েছিলাম আমি আফরাদের বাড়িতে যাব।আমার কথা না শুনেই নিজের মন মত খেয়ালি পুলাউ পাকিয়ে আমাকে কথা শুনিয়ে চলে গেলো।
আফরার এংগেন্জমেন্ট ৭দিন পর।তাই আজ আফরা ওদেরকে দাওয়াত দিতে এসেছে আর মানহা, তুর আর মিষ্টিকে নিতে এসেছে।তাই মানহা ব্যাগ গুছাচ্ছিল।
(আপনারা সবাইও আরহামের মত মানহাকে ভুল বুঝলেন😭)
আফরা আরহামকে রেগে চলে যেতে দেখে মানহাকে এসে বলল….
—কি রে কি হয়েছে।ভাইয়া এভাবে রেগে চলে গেলো কেন??
মানহা কোমরে হাত রেখে বলল…
—তোমার ঐ বজ্জাত ভাই আমার কোন কথা না শুনেই আমাকে কথা শুনিয়ে চলে গেছে।
—ও…তাই।তা তুমি কি করেছিলে শুনি একটু।আমার জানা মতে আমার ভাই এমনিই কারো উপর রাগ করে না।
—তুই তোর ঐ ভাই এর পক্ষে কথা বলছিস😡
—থাক তোর কিছু বলতে হবে না।তোদের মধ্যে আমি ঢুকতেও চাই না।এবার তুই তারাতারি রেডি হয়ে নে।
—আমি আজ যাবো না।
—কেন যাবি না।ভাইয়া না করেছে।
—আরে না ওকে তো বলতেই পারলাম না।তার আগেই চলে গেলো।প্লিজ বোন রাগ করিস না।আমি ওকে বলে কাল চলে যাব।
—ঠিক আছে।ভাইয়ার জন্য আজ বেচে গেলি।কিন্তু একটা কথা আমার মাথায় ঢুকছে না।
—কি কথা???(সন্দেহ চোখে)
—এই ওওওও… টা কবে হলো হুম….(চোখ টিপে)
মানহা রাগি শুরে বলল….
—তুই যাবি নাকি আমি তোকে বের করবো।
_________________________________
আজ দুদিন ধরে আরহাম এর কোন খবর নেই।মা কে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে ও কাজের জন্য এক জায়গায় যেতে হবে তাই বাড়িতে আসবে না।এর পর থেকে ওর ফোন অফ।মানহার তো রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।মানহার ইচ্ছে করছে ওর অফিসে গিয়ে ওর মাথা ফাটাটে।
মাননহা রাতের বেলা বেলকানিতে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।মিষ্টি আর তুর বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।ঘুম নেই শুধু মানহার চোখে।দাড়িয়ে দাড়িয়ে আরহামকে ইচ্ছে মত বকছে।কেমন করে পারছে ও দুদিন ধরে কোন যোগাযোগ না করে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে।মানহা আনমনে নিচের দিকে তাকাতেই একটা ছাড়া দেখতে পেলে।ওর মনে হচ্ছে ছাড়াটা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।মানহার কেন যেন মনে হলো ওটা আরহাম।তাই আর দেরি না করে মানহা ভিতরে চলে গেল।
আরহাম এতোক্ষন নিচে দাড়িয়ে মানহাকে দেখছিলো।মানহাকে ভিতরে ঢুকে যেতে দেখে ও মন খারাপ করে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে চলে যেতে নিলেই নিজের শাটের কলারে টান অনুভব করলো।মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে মানহা ওর শাটের কলার ধরে দাড়িয়ে আছে।আরহামের তো চোখ বের হওয়ার উপক্রম।মানহা যে কখন ওর পিছনে এসে দাড়িয়েছে তা ও বলতেও পারে না।পারবে কি করে এতোক্ষন তো সে মানহার বেলকানির দিকে এক ধ্যনে তাকিয়ে ছিল।
আরহাম কিছু বলার আগেই মানহা ওকে টেনে পাশে যে একটা ছোট বাগান আছে সেখানে নিয়ে গেলো।মানহার এমন কাজে আরহাম হা করে তাকিয়ে রইলো।বাগানের ভিতরে গিয়ে মানহা আরহাম এর কলার দুই হাতে ধরে বলল….
—সম্যসা কি আপনার??
আরহাম যেন এখনো ঘোরের মধ্যে আছে।ওর মনে হচ্ছে ও জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে।ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না মানহা ওর সামনে।
মানহা আরহামকে ওর দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ধমক দিয়ে বলল….
—কি হল কথা বলছেন না কেন???
মানহার ধমক খেয়ে আরহাম নিচু স্বরে বলল….
—আমার কোন সম্যসাই নেই।ছাড়ুন আমায়??
—এখন আমি আপনি হয়ে গেলাম।এই দুই দিনে কাকে পেয়েছন যে আমাকে আপনি বলছেন???😡নতুন কাউকে পেয়েছেন নাকি??
—একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবে না।
—আমার কথা তো এখন আপনার উল্টাপাল্টাই মনে হবে।এখন আপনার আফসোস হচ্ছে আমার মত কালো দেখতে সুন্দর না মেয়েকে বিয়ে করে।তাই নাহ….
মানহার এমন কথায় আরহাম রেগে মানহার হাত কলার থেকে ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে বলল…..
—দেখতে তুমি না আমিই খারাপ।আমিই ভালো না।আর আমিই তোমার যোগ্য না।তাইতো তুমি আমার কাছ থেকে দুরে চলে যেতে চাও।এতে তোমার কোন দোষ নেই।সব দোষ আমার আমি তোমাকে তোমার অনুমতি ছাড়া বিয়ে করেছি।আসলে আমার বুঝা উচিত ছিল প্রথম ভালোবাসা কেউ ভুলতে পারে না।তাই তো তুমি তোমার আগের স্বামীকে ভুলে আমাকে তার জায়গায় বসাতে পারছো না।আর আমি চাইও না তুমি তোমার আগের স্বামীর জায়গায় আমাকে বসাও।আমি চাই আমাকে তুমি একটু বুঝো।কিন্তু তুমি তো আমার ছাড়াটাও দেখতে পারো না।(ছলছল চোখে)
মানহা রনমূর্তি হয়ে দাড়িয়ে আছে।রাগে ওর চেহারা লাল হয়ে গেছে।
মানহাকে কিছু বলতে না দেখে আরহাম আবার বলল….
—ভালো থেকো আমি আর…..
ওকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মানহা আরহাম কে ধমক দিয়ে বলল….
—চুপপপ…..
আর একটাও কথা বলবেন না।ইচ্ছা হলে নিজের জীবনে রাখবেন আর ইচ্ছা হলেই জীবন থেকে সরিয়ে দিবেন।মগের মুল্লুক পেয়েছেন??
—দেখো আমি কিন্তু তোমাকে…..
—বলেছিনা চুপ কোন কথা বলবেন না😡দুদিন আগেও তো বললেন চলে যাবেন না আর এখন পালাচ্ছেন কেন??
—আমি পালাচ্ছি না।আমি চাইনা আমার জন্য তোমার কোন সম্যসা হোক।তোমার আগের স্বামী ….
মানহা রেগে আরহামকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওর কলার ধরে বলল….
—কি তখন থেকে আগের স্বামী আগের স্বামী করছেন। আমার কি আগে দুই এক টা বিয়ে হয়েছিলো যে আমার আগের স্বামী থাকবে??
চলবে
তোকে ঘিরে
Part_24
Ariyana Nur
অতীত……
মানহা ফুপিয়ে ফুপিয়ে সাদে বসে কান্না করছে।নিধি পিছন থেকে ওর কাধে হাত রেখে বলল….
—কি হয়েছে বুড়ি এভাবে কান্না করছো কেন??
—জানো ভাবিমা ও বলেছিলো এবার যেভাবেই হোক আমাকে আমার কলিজাকে দেখিয়ে নিবে।আর ভাইয়াও বলেছিলো আমাকে ওর কাছে যেতে দিবে।কিন্তু কেউ কারো কথা রাখলো না।
নিধি একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলল…..
—যেটা পারো না সেটা কেনো করতে যাও তুমি???
—মানে???(অবাক হয়ে)
—আমার কাছ থেকেও কষ্ট লুকাবে??কিন্ত যতই চেষ্টা করো না কেন পারবে না।
মানহা কাপা কাপা গলায় বলল….
—আ..মার আ..বার কিসের কষ্ট।আমি বিন্দাস আছি।
—সবাইকে এই কথা বললেও আমি যে তা মানছি না।তোমার যদি ছেলেটাকে পছন্দই না। তাহলে তোমার ভাইয়া কে হ্যা বললে কেন??আমি কথা বলতে চাইলাম তাও না করলে??
মানহা একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলল….
—সব ভাইরাই চায় তার বোনকে বেষ্ট জীবন সাথী খুজে দিতে।আর আমার ভাই এর ধারনা ঐ ভেবলাই আমার জন্য বেষ্ট।তাই আমিও ভাইয়ার পছন্দে রাজি হয়ে গেলাম।
—তাই বলে তোমার কোন মতামত দিবে না???তোমার ভাইয়া তো তোমাকে জিগ্যেস করেছেই???অন্তত আমাকে দিয়ে তো বলতে পারতে??পরে যখন তোমার ভাইয়া জানবে তখন যে সে কষ্ট পাবে।
—ধুর….বাদ দাও।আর ভাইয়াকে জানালে তো ভাইয়া জানবে।আমার কপালে মনে হয় এমটাই আছে।আর তুমিও ভাইয়াকে কিছু বলো না প্লিজ।
নিধি কিছু না বলে চুপ করে রইলো।জানে বলে লাভ হবে না।
মানহা কে আর কিছু বলেই কিছু হবে না।একবার যখন ও ঠিক করেছে ভাই এর পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করবে তাহলে আর কেউ কিছু বলেই কিছু করতে পারবে না।
মাহাব মানহার বিয়ে ঠিক করছে ওর পছন্দের এক ছেলের সাথে।মানহার পছন্দ হয়েছে কি না জিগ্গেস করলে ও বলে দিয়েছে ভাইয়া যেখানে খুশি হয়ে বিয়ে দিবে ও সেখানেই যাবে।যেহেতু ওর কোন পছন্দ নেই।ছেলেটাকে মানহা আগের থেকেই চিনে।কিন্তু কেন যেন ও ছেলেটাকে দেখতেই পারে না।মাহাব ছেলেটাকে পছন্দ করেছে দেখে মানহা আর না করেনি।কেননা ভাইয়ের পছন্দের উপর আর ভাইয়ের উপর তার পুরো বিশ্বাস আছে।বাকিটা ভাগ্য।
_____________________________
ফোনের রিংটনের শব্দ শুনে মানহা বেলকানি থেকে রুমে এসে ফোন রিসিভ করেই বলল…..
—শয়তান,বান্দর,কুত্তা,বিলাই,শাকচুন্নি,শেওরা গাছের পেত্নী কেন ফোন দিয়েছিস???
—বাহ্ আজ এতোটুকু বকলি।কিন্তু এতোটুকে তো আমার মন,প্রান,কলিজা কিছুই ভরলো না।
—তোর মন,প্রান,কলিজা ভরা লাগবো না।এখন বল আমার কলিজা কই??
—খেলছে।
—ফোনটা ওর সামনে ধর আমি কথা বলব।
—বল কথা আমি লাউড দিয়ে দিছি।
—আমার মাম্মাম কেমন আছে??সে কি আমাকে মিস করছে??তোমার আম্মু অনেক পচা তাইতো দেখোনা তোমাকে কোন বনবাসে নিয়ে গেছে।তুমি আম্মুকে বেশি করে জালাবে আর যদি আম্মু তোমাকে বকে তাহলে মাম্মামকে বলবে মাম্মাম বকে দিবে।
মানহা এতোক্ষন একটা বাচ্চার সাথে কথা বলছিল।
বাচ্চাটা মনে হয় সব কথা বুজে গেলো।তাই সে খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
—তোর মেয়ে তোর মতই হয়েছে একে বাজে পাজি।
মানহা ধমক দিয়ে বলল….
—চুপ থাক।তোর সাহস তো কম না তুই আমার মেয়েকে পাজি কস।
—পাজি দের পাজি বলবো না তো কি বলবো।এবার বল তোর বিয়েতে তুই মত কিভাবে দিলি।তারপরেও ঐ ভেবলারে।
(মানহার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে তাকে ওরা ভেবলা বলে)
—হুহ…নিজে আরো ৩বছর আগে বিয়ে কইরা বাচ্চা ফুটাইয়া ফালাইছে আর আমারে কইতাছে বিয়েতে মত কেমনে দিলাম।আমি কি খুটি হইয়া ঘরে বইসা থাকুম।
—দেখ আমি সিরিয়াস।
—আমি ভেরি সিরিয়াস।
—আমি তোর বিয়ায় জাম না😔
—জুতা চিনোস 😡
—কেন রে কিননা দিবি😁
—নাগো চান্দু তোরে পিটামু।ভালোয় ভালোয় বুধবার আইসা পরবি।
—তুই এতো কিপ্টা হুলুদের আগের দিন দাওয়াত দিলি।ছিহ….
—আগে আয় বান্দর তোর কথা আমি ছুটাবো।
মানহা এতোক্ষন যার সাথে কথা বলল সে হলো মানহার বেষ্ট ফ্রেন্ড বিথি।বিথি তার বর এর সাথে গ্রামে থাকে।বিথির পরিবারে কেউ নেই।তাওহিদ(বিথির বর)তার পরিবার এর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিথিকে বিয়ে করায় ওর সাথে সব সম্পর্ক তারা শেষ করে দেয়।বিথির একটা দুই বছরের বাচ্চা আছে।তাওহিদ তার ছোট পরিবার নিয়ে গ্রামে থাকে।সেখান একটা ছোট কাপরের ব্যবসা করে।আল্লাহ এর রহমতে তারা ভালোই আছে।
____________________________
মানহা সাদের এক কোনে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।বাড়িতে বিয়ের তোরজোর চলছে।যেহেতু ঘরওয়া ভাবেই বিয়েটা হচ্ছে তাই শুধু বাড়িতে মানহার আত্মীয়রাই আছে।
হঠাৎ মানহাকে কেউ পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো।মানহা ঘুরে তাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।
একটু পর একজন বলল….
—আরে শালি সাহেবা আজ এতো কান্না করলে চোখের সব পানি যে শেষ হয়ে যাবে।তাহলে বিয়ের দিন তো চোখের পানি আর পাবে না।আর বিয়ের দিন না কান্না করলে লোক খারাপ বলবে।
বিথি মানহাকে ছেড়ে দিয়ে রাগি গলায় বলল….
—তুমি আসতে না আসতেই ওর সাথে মজা করছো।
তাওহিদঃকি করবো তোমরা যে আসতে না আসতেই মরা কান্না জুরে দিলে।
বিথিঃ কি বললে আবার বল😡
মানহাঃআরে থামো তোমরা….এবার বলো আমার মাম্মাম কোথায়??
বিথিঃনিধি ভাবির কাছে।এবার ঘরে চল।আমার কিন্তু খুব ক্ষুধা লেগেছে।
মানহাঃরাক্ষুসি চল ঘরে।
_________________________
বিকেলে মানহা বিথির রুমে গিয়ে বিথিকে রেডি হতে দেখে বলল….
—কিরে এই বিকেল বেলা কোথায় যাচ্ছিস???
—সামনের সর্পিং মলে। একটু কেনাকাটা বাকি আছে।
—এখন বের হলে তো ফিরতে রাত হয়ে যাবে।
—তাতে কি হয়েছে তোর ভাই তো সাথেই আছে।
—ভাই থাকলেই হলো বাবুকে নিয়ে তোরা রাত করে চলাফেরা করবি???
—তুই কি দাদি নানিদের মত শুরু করলি।ওকে নিলে সমস্যা কোথায়???
—তোরা যা আমি ওকে আমার কাছে রাখবো।তোদের সাথে এখন আমি যেতে দিব না।
—পারবি তো রাখতে???
—পারবো মানে তোর থেকে ভালো পারবো।(ভাব নিয়ে)
বিথি হাসতে হাসতে বলল….
—তাহলে তো ভালোই হলো আমি মরে গেলে তুই ওকে মার আদর দিয়ে রাখতে পারবি।কিরে পারবি না???
—তোর মুখে কি ভালো কথা নেই।সব সময়ই আজে বাজে কথা😡
আরে রাগ করছিস কেন??আমি তো মজা করছিলাম।
মানহা বিথিকে জরিয়ে ধরে বলল…
—এমন মজা আর করিস না প্লিজ….
আমার ভয় করে।
—আরে পাগলি আমি মজা করছিলাম কান্না করছিস কেন??যা তোর বাবুকে তোর কাছেই রেখে গেলাম।এবার একটু হাসো না প্লিজ।
মানহা কে গোমরা মুখ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বিথি মানহাকে কাতুকুতু দিতে লাগলো।আর মানহা খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
______________________________
রাত ১০টা….
মানহা বাবুকে নিয়ে খেলা করছে।আর একটু পর পর বিথির নাম্বারে কল দিচ্ছে।কিন্তু বার বার একটা কথা ভেসে আসছে আপনি যেই নাম্বারে ফোন করেছেন তা এই মুহুর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না।
মানহার কেমন যেন অস্থির লাগছে।মনে হচ্ছে ওর থেকে কি যেন হারিয়ে যাচ্ছে।একটু পর বিথির নাম্বার থেকে কল এলো।মানহা রিসিভ করে বলল….
—ঐ কই তুই???আর কতক্ষন লাগবে??
ওপাস থেকে যা শুনলো তাতে মানহার হাত থেকে ফোন পরে গেলো।চোখ দিয়ে বেড়িয়ে আসলো অজস্র নোনাজল।
চলবে
তোকে ঘিরে
Part_25
Ariyana Nur
মানহা চিৎকার করে কান্না করছে।ওর কান্না শুনে পাশের রুম থেকে নিধি আর মাহাব দৌড়ে ওর রুমে এসে দেখে মানহা বাবুকে জরিয়ে ধরে কান্না করছে।মাহাব ওর মাথায় হাত দিয়ে উৎত্তেজিত হয়ে বলল…
—কি হয়েছে বুড়ি এভাবে কান্না করছিস কেন???
নিধি ওর পাশে বসে বলল….
—কি হয়েছে তোমার??এভাবে কান্না করছো কেন??বাবুর কিছু হয়েছে??(অস্থির হয়ে)
মানহা নিধির কথা শুনে ফুপিয়ে কান্না করতে করতে বলল…
—ভা…ইয়া…বিথিরা হাসপাতালে।ওরা নাকি রাস্তায় একস্নিডেন্ট করেছে।
মানহার কথা শুনে সবাই শকড্ হয়ে বসে রইলো।
বিথি আর তাওহিদ কে ওটি তে নেওয়া হয়েছে।দুজনের অবস্থা অনেক ক্রিটিকেল।বাচার চান্স নেই।মানহা হাসপাতালে এসে ওদের এমন কথা শুনে অজ্ঞান হয়ে গেছে।জ্ঞান ফিরতেই উল্টাপাল্টা কথা বলতে শুরু করেছে।মানহা একা একাই বিরবির করে বলছে….
—তুই প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাস না।আল্লাহ ওদের তুমি সুস্থ করে দাও।ওরা না থাকলে ওদের বাবুকে কে দেখবে।আমি জানি বাবা, মা ছাড়া একটা মানুষকে যে মানুষের কত কথা শুনতে হয়।আল্লাহ দয়া করে তুমি ওদের বাচিয়ে দাও।মানহা একা একাই বির বির করছে।
মাহাব দুর থেকে দাড়িয়ে মানহাকে দেখছে আর চোখের জল মুছছে।মাহাবের সাহস নেই যে বোনের পাশে বসে বোনকে সান্তনা দিবে।ও ওর বোনের এমন অবস্থা দেখে নিজেই শকড্ হয়ে দাড়িয়ে আছে।
ওটিতে ঢুকানোর একটুপর তাওহিদ দুনিয়ার মায়া ত্যগ করে।আর তার কিছুক্ষন পরেই বিথি দুনিয়ার মায়া ত্যগ করে।চলে যায় তারা দুজন না ফেরার দেশে।আজ বিথির দোয়া আল্লাহ্ কবুল করেছে।কেননা বিথি একদিন কথার ছলে তাওহিদ কে বলেছিলো,বাচলে একসাথে বাচবো আর মরলে এক সাথে।আর আমার আগে যদি তুমি চলে যাও তাহলে তো আর আমি আত্যহত্যা করতে পারবো না।কেননা তাতে পরকালে তোমাকে পাবো না।তাই দোয়া করি আল্লাহ্ যেন আমাকেও নিয়ে যায় তোমার সাথে সাথে।না হলে যে আমি জিন্দা লাশ হয়ে পরে থাকবো দুনিয়াতে।
বিথি আর তাওহিদকে একটি কেবিনে পাশাপাশি রাখা হয়েছে।মানহা গুটি গুটি পায়ে কেবিনে ঢুকে দেখে বিথির শরীর সাদা কাপর দিয়ে ঢাকা।চেহারাটা শুধু বের করা।তা দেখেই মানহা চিৎকার করে বলল….
—কার এতো বড় সাহস ওকে সাদা কাপর পরিয়েছে।তোমরা কি জানো না আমার সাদা পছন্দ না দেখে ও সাদা পরে না।কেন ওকে সাদা কাপর পরিয়েছো।আর তুই(বিথিকে উদ্দেশ্যে করে) দেখ আমার কিন্তু এই নাটক একদম সয্য হচ্ছে না।তারাতারি উঠ তো। বাবু তোর জন্য বাড়িতে কান্না করছে।আমি হেরে গেছি।আমি তোর থেকে বাবুকে ভালো রাখতে পারিনি।দেখ বোন মজা করিস না।আর এই সাদা কাপর তারাতারি সরা।আমি তোকে এভাবে দেখতে পারছিনা।দেখ বাবা, মা ও কিন্তু এই কাপর পরে আমার কাছ থেকে অনেক দুরে চলে গেছে।তুইও প্লিজ চলে যাস না।
কথাগুলো বলে মানহা বিথির সামনে হাটু গেরে বসে পরলো।কাপাকাপা হাতে বিথির মুখে হাত রেখে বলল….
—তু…ই ও…আ…মাকে ছেরে চলে গেলি???আমি কাকে বকবো বল।কার সাথে রাগ করে থাকবো।কে আমার জ্বালা সয্য করবে।প্লিজ ফিরে আয় না।আর তা না হলে আমাকে নিয়ে যা।দেখ একবার কথা বল আমার সাথে প্লিজ একবার।আমি কি এতোই খারাপ যে সবাই আমার কাছ থেকে দুরে সরে যায়।
মানহা অঝরে কান্না করছে আর পাগলামি করছে।মাহাব এসে ওর কাধে হাত রাখতেই মানহা মাহাবকে টেনে ওর পাশে বসিয়ে বলল…
—ভাইয়া ওকে কথা বলতে বল।ও কেন আমার সাথে কথা বলছে না।আমি আর ওকে বকবো না।আমার সব কিছু ওকে দিয়ে দিব।ও যা বলবে আমি তাই করবো।তার পরেও ওকে আমার সাথে কথা বলতে বল।প্লিজ…ভাইয়া ওকে কথা বলতে বল।
মাহাব বোনকে এমন পাগলামো করতে দেখে মানহাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো।একটু পর মানহা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে বিরবির করতে করতে অবার অজ্ঞান হয়ে গেলো।
চলবে