তোকে ঘিরে,Part 19,20,21
Ariyana Nur
part-19
সময় যেন চোখের পলকেই চলে যাচ্ছে।কিন্তু আরহামের এক একটা মুহুর্ত মনে হচ্ছে হাজার বছরের সমান।ওর দিন মনে হচ্ছে ঠেলে ঠুলে পার হচ্ছে।
আজ হাসপাতাল থেকে আরহাম বাড়িতে এসেছে ১৫দিন হয়ে গেছে।আরহাম মোটামুটি এখন সুস্থ। মাথার বেন্ডেজ খোলা হয়ে গেছে।শুধু হাতের প্লাষ্টারটা খোলা বাকি আছে।মানহা আরহামের সব দিকেই খেয়াল রাখছে কিন্তু এক্সিডেন্টের পর থেকে আরহামের সাথে দরকার ছাড়া একটা কথাও বলেনি।আরহাম অনেক বার ওর সাথে ইহান এর ব্যপারে কথা বলতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছে।এই জিনিসটাই আরহামকে আরো বেশি পোড়াচ্ছে।
কারো উপর যদি রাগ থাকে তাহলে তা নিয়ে রাগ দেখালে সেই রাগটা সহজে পরে যায়।কিন্তু কোন কিছু না বলে চুপ করে থাকলে সেই রাগটা আরো বেশি ভয়ংকর রূপ ধারন করে।
আরহাম খাটে হেলান দিয়ে বসে আছে মানহা খাবার নিয়ে আরহামের মুখের সামনে ধরতেই আরহাম ওর দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে বলল….
—করুনা করছো আমার উপর???
—…….
—তোমার এই চুপ থাকা যে আমাকে বেশি পোড়াচ্ছে তা কি তুমি বুঝছো না।
—…….
—প্লিজ ভালো খারাপ কিছু তো বল।আর আমার কথাটা একটু শুনো।
—…….
—দেখো তুমি যা বলবে তাই করবো আমি।
—…….
—কথা না বললে চলে যাও তুমি।আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না তোমার।খাবো না আমি।
আরহাম গাল ফুলিয়ে বসে রইরো।
তা দেখে মানহা কোমরে হাত দিয়ে তুরকে ডাক দিলো।
তুর দৌড়ে এসে বলল….
— মাম্মাম ডেকেছো আমায়???
মানহা রাগি গলায় বলল….
—তোমার পাপাকে বলো তারাতারি খাবার শেষ করতে।
আমার কাজ আছে।
আরহামঃতুর তোমার মাম্মাম কে বলো আমি খাবো না।আমার জন্য যেন তার মূল্যবান সময় নষ্ট না করে।
আরহামের কথা শুনে মানহার এবার মাথা গরম হয়ে গেল।ও বসে বসে সাপের মত ফোস ফোস করতে লাগলো।
তুর গোল গোল চোখ করে একবার মানহা আর আরহামের দিকে তাকিয়ে বলল….
—মাম্মাম পাপা খাবে না।আর পাপা না খেলে আমিও খাবো না।
মানহা তুরকে ধমক দিয়ে বলল….
—চুপ….তুই খাবি না……
দেখি তুই কেমনে না খাস।তুইও খাবি তোর বাপেও খাবে।
মানহা আরহাম আর তুর এর মুখে জোর করে খাবার দিয়ে দিল।আর তারা বাপ,মেয়ে চুপচাপ খেতে লাগলো।
মানহার এই রূপ দেখে ওদের কারো মুখেই কোন কথা নেই।
দরজার বাহির থেকে মা আর মিষ্টি ওদের কাহিনী দেখে মিটমিট করে হাসছে।
মানহা ওদের খাবার খাইয়ে আরহামকে ঔষধ খাইয়ে চলে গেলেই মিষ্টি রুমে এসে হাসতে লাগলো।আরহাম মিষ্টিকে ধমক দিয়ে বলল….
—ঐ টমেটো হাসছিস কেন???
—কি করবো বলো আজ ভাবি তোমাদের যেভাবে শায়েস্তা করল তা দেখলে কে না হাসবে।তোমাদের চেহারাটা তখন দেখার মত ছিল।আমি তো ভাবির ফোনে ছবিও তুলে রেখেছি।
তুরঃমনি তুমি আমাদের সাথে এমন করতে পারলে??আমি তোমার সাথে আর কথাই বলবো না।(গাল ফুলিয়ে)
—চুপ থাক পাপার চামচি।তোর আমার সাথে কথা বলতে হবে না।আমার ভাবি আছে হুহ…..
—পাপা তুমি তারাতারি সুস্থ হও তারপরে তুমি আর আমি মিলে ঘুরতে গিয়ে অনেক চকলেট আর আইসক্রিম খাব।মনি আর মাম্মাম কাউকে দিব না।হুহ….
—হুহ…তোরটা লাগবেও না।
—দিবওনা।হুহ…..
লেগে গেলো তাদের মধ্যে টম এন্ড জেরির ঝগড়া।
______________________
আরহামের একটা জরুরী কাজে অফিসে যেতে হবে।আরহাম আয়নার সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে আর মনে মনে মানহাকে জ্বালানোর শয়তানি বুদ্ধি পাকাচ্ছে।আরহাম চিৎকার দিয়ে মানহাকে ডাক দিল।
মানহা আর মা রান্না ঘরে কাজ করছিল।আরহামের এমন ডাক শুনে মানহা হা করে মার দিকে তাকিয়ে রইল।মা মুচকি হেসে বলল….
—যা শুনে আয়।
মানহা আরহামের দরজার সামনে গিয়ে নক করতেই আরহাম বলল….
—আমার রুমাল আর ফাইল পাচ্ছি না।প্লিজ একটু খুজে দাও।
মানহা ওরদিকে রাগি চোখে তাকাতেই আরহাম হাত দেখিয়ে বলল….
—আমার হাতটা তো পুরোপুরি ঠিক হয়নি।তা না হলে আমিই খুজে নিতাম।
মানহা একবার আরহামের দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে সব খুজে আরহামের সামনে রাখলো।
আরহাম মুচকি হেসে বলল…
—ধন্যবাদ।
মানহা ওর দিকে একটা রাগি লুক দিয়ে চলে গেলো।
একটু পর আবার আরহাম মানহাকে ডাক দিল।মানহা আসতেই আরহাম বলল…
—প্লিজ আমার কফিটা দিয়ে যাও।
মানহা চুপচাপ কফি দিয়ে রুম থেকে চলে আসলো।
মানহা পারছেনা আরহামকে কিছু বলতে।দাতে দাত চেপে সব কাজ করে দিচ্ছে।
আবার একটু পর মানহারকে আরহাম ডাক দিলো।
মিষ্টি কাজ করতে করতে দুষ্টো হেসে চিৎকার দিয়ে বলল….
—দেখেছো মা….তোমার ছেলে কেমন বউ পাগল হয়ে গেছে।আমাদের তো চোখেই পরে না।
মানহা এবার রেগে ধুপধাপ পা ফেলে আরহামের সামনে আসতেই আরহাম ওর হাতে টাই ধরিয়ে বলল….
—এটা পরিয়ে দাও।
মানহা ওকে একবার ভালো করে দেখে টাইটা দুই হাতে পেচিয়ে আরহামের গলায় ফাস দেওয়ার মত করে ধরলো।মানহার এমন কাজে আরহাম চোখ বড় বড় করে কাশতে লাগলো।একটু পর মানহা ছেড়ে দিল।আরহাম বড় বড় কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে বলল….
—পাগল হয়েছো??কি করছিলে???আরেকটু হলেই তো মরে যেতাম।
মানহা রাগি শুরে বলল….
—এর পর থেকে বুঝে শুনে আমার সাথে লাগতে আসবেন।
—আরে আজব তো!!আমি কেন তোমার পিছে লাগতে যাবো।আমি তো শুধু আমার হাত ভালো না দেখে টাইটা বেধে দিতে বললাম।আর তুমি……
মানহা কোমরে হাত রেখে বলল…
—আচ্ছা আপনি টাই পরেন???এতো দিনে তো একবারো টাই পরতে দেখলাম না।
—এতোদিনে পরিনি তো কি হয়েছে আজ আমার টাই পরতে মন চাচ্ছে তাই তোমাকে বললাম।
—আচ্ছা আপনার পান্জাবীর সাথে টাই পরতে মন চাচ্ছে।আগে বলবেন তো।দাড়ান আমি সুন্দর করে টাইটা বেধে দিচ্ছি।
এতোক্ষনে আরহামের হুস হলো।ওতো মানহাকে রাগানোর জন্য এতোক্ষন এমন করছিলো।আজ যে সে পান্জাবী পরেছে তা তো তার মাথার থেকে বের হয়েই গেছিলো।
মানহা টাইটা নিয়ে আরহামের সামনে আগাতে আগাতে বলল….
—দাড়ান আমি টাইটা বেধে দিচ্ছি।এমন টাই বাধবো জীবনেও ভুলবেন না।
আরহাম একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল….
—আমার দেরি হচ্ছে।আমি আসি।
—কেন টাই পরবেন না।
আরহাম কোন কথা না বলে মানহার দিকে রাগি চোখ একবার তাকিয়ে দ্রুতো রুম থেকে বের হয়ে গেলো।আর মানহা আরহামের কাহিনী দেখে খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
আরহাম পুনোরায় দরজার সামনে এসে ভিতরে উকি দিয়ে বলল…
—তোমাকে হাসিতেই মানায়।এভাবেই থাকবে সব সময়।এই বলে আরহাম মুচকি হেসে চলে গেলো।
(সবাই কি ভাবছেন🤔🤔মানহা এমন নরমান বিহেব কি করে করছে তাই তো???)
চলবে
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।সবাই একটু ধর্য্য ধরে পরতে থাকুন খুব তারাতারিই মানহার অতীত সবার সামনে আসবে।ধন্যবাদ)
তোকে ঘিরে
Part 20
Ariyana Nur
আরহাম আর ওর বন্ধুর সাথে বসে কথা বলছে।আরহাম ওকে সকালের সব ঘটনা বলতেই ও উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো।আরহাম রেগে বলল….
—মটু তোর দাত দেখানো বন্ধ কর।
—আরে ভাবি তো তোকে পুরো নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছে।
—ও তর ভাবি???কোন রিস্তায়????🙄
—ধুর রিস্তা লাগে নাকি।তোর বউরে আমি ভাবি ডাকতেই পারি।
—তা আর কি কি ডাকতে পারেন???(ভ্রু নাচিয়ে)
—চুপ থাক।আমার কথা শোন।আমার মনে হয় ভাবিও তোরে পছন্দ করে তুই এক কাজ কর।ভাবিবে গিয়ে প্রপোজ করে দে।
—তোর মাথা ঠিক আছে।আমি তোর ভাবিরে গিয়া প্রপোজ করি আর তোর ভাবি আমারে ঝাটা পিটা করুক।😡
—তওবা তওবা আমার ভাবি একটুও এমন না।
—তাহলে কেমন বল শুনি…
—তুই যদি প্রপোজ করোস তাহলে ভাবি তোরে ঝাটাপিটা করবো না ঠিকই কিন্তু তোর এই চেহারার নকশা পালটাইয়া দিব।(হাসতে হাসতে)
আরহাম রেগে সামনের রাখা পানির বোতলটা ওর দিকে ছুরে মারলো।
_____________________________
মানহা বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।আর ভাবছে রাগের মাথায় কি একটা বড় ভুল করতে চলেছিল।রাগের মাথায় কোন সিধান্ত নেওয়া যে ঠিক না সেটা এখন হারে হারে বুঝতে পারছে।সেদিন যদি রাগের মাথায় উল্টাপাল্টা কোন কিছু করে বসতো তখন???
ফ্লাসব্যাক…….
হাসপাতালে ইহানকে দেখে মিষ্টি উৎতেজিত হয়ে ইহানকে জিগ্যেস করল…..
—ইহান ভাইয়া….
ভাইয়া কেমন আছে???ভাইয়া ঠিক আছে তো???
ইহান মিষ্টির মাথায় হাত রেখে বলল…..
—চিন্তা করিস না টমেটো।ও আল্লাহ্ এর রহমতে ভালো আছে।
মানহা কাপা কাপা গলায় বলল…..
—মিষ্টি তুমি এনাকে চিনো???
মিষ্টি ইহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল….
—হ্যা চিনি।ইহান ভাইয়া। ভাইয়ার বেষ্টফ্রেন্ড।
এটা শুনে মানহা চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো।মানহার পুরো দুনিয়া এখন ঘুরছে।যে মানুষটাকে এতোদিন ও এতো বিশ্বাস করলো।ওর অনিচ্ছা থাকা সর্তেও ওকে বিয়ে করেছে।তারপরেও মানহা আরহামকে কিছু বলেনি।মনকে বুঝিয়েছে সে তো আমার উপকার করতে গিয়েই আমাকে বিয়ে করেতে বার্ধ্য হয়েছে।ভাগ্যের উপর সব ছেড়ে দিয়েছিলো।কিন্তু আজ যখন এটা জানলো যে আরহাম…..
মানহা আর ভাবতে পারছে না।মানহা রাগ করে সেখান থেকে চলে যেতে নিলেই ইহান বলল…
—মানহা আমার কথাটা শোন।প্লিজ….
মানহা ইহানের দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে চলে যেতে নিলে ইহান মানহার হাত ধরে একটা ফাকা রুমে নিয়ে যায়।পিছে পিছে মিষ্টিও চলে আসে।
ইহান রেগে বলল….
—তোমার সাহস কি করে হয় ওকে এই অবস্থায় একা ফেলে চলে যাচ্ছ।ওর পাশে তোমাকে না পেলে জানো ও কতটা ভেঙ্গে পরবে।
মানহা চিৎকার করে বলল….
—আপনাদের সাহস কি করে হয় আমার জীবন নিয়ে খেলা করার।অভিনয় তো ভালোই করতে পারেন।আপনাদের কে তো নোবেল দেয়া দরকার।কেন করলেন আমার সাথে এমন কেন???কেন আমাকে ধোকা দিলেন???কি করেছিলাম আমি???আমার দোষ কোথায়???কি ক্ষতি করেছিলাম আমি???
ইহান কথা না বলে চুপ করে রইলো।মানহা একটু থেমে চোখের জল মুছে আবার বলল….
—আপনার বন্ধুকে তো আমি ভালো মনে করেছিলাম।আসলে সে একটা চিটার,ধোকাবাজ।আমাকে ধোকা দিয়েছে।তাকে আমি কখনই ক্ষমা করবো না।
ইহান মানহা বলে চিৎকার দিয়ে ওর দিকে হাত উঠিয়ে আবার নামিয়ে ফেলল।রাগে দেয়ালে একটা ঘুষি দিয়ে বলল….
—তোমার সাহস কি করে হয় আমার সামনে ওর নামে বাজে কথা বলার।তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে তার আমি খবর নিয়ে ছারতাম।সব ভুল ওর সব ভুল।ওর সব থেকে বড় ভুল ও তোমাকে ভালোবেসেছে।ও যখন যেনেছে তুমি বিবাহিত তোমার মেয়ে আছে তখন ও তোমাদের থেকে দুরে সরে গিয়েছিল।ও তোমার ব্যপারে না জেনেই তোমাকে ভালোবেসেছিলো।তার জন্য ও অনেক অনুতপ্ত করেছে।কি করে আরেক জনের স্ত্রীর দিকে ও নজর দিয়েছে তার জন্য নিজেকে অনেক ছোট করেছে।পরে যখন জানতে পারে তুমি বিধবা।তারপরেও তোমার কাছে ওর মনের কথা প্রকাশ করে নি। যদি তুমি ওকে ফিরিয়ে দাও।তাই দুর থেকেই তোমাকে ও ভালোবেসে গেছে।ওকে তোমাকে নিয়ে পাগলামি করতে আমি দেখিছি।তোমার জন্য দিনের পর দিন চোখের জল ফেলছে ও।তার পরেও তোমার কাছে নিজের মনের কথা বলেনি।ও চাইতো তোমরা দুরে থাকো তার পরেও ভালো থাকো।দুর থেকেই ছায়ার মত তোমাদের সাথে থেকেছে ও।
ইনান একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে আবার বলল…..
কিন্তু তোমাকে আর তুরকে নিয়ে যে পাড়ার লোকেরা তোমার পিঠপিছে বাজে কথা বলতো তা ও সর্য্য করতে পারছিলো না।একদিন ওর সামনে একটা লোক তোমাকে ওনেক বাজে কথা বলেছে।লোকটাকে সেখানে মারলে তোমার দিকে সবাই প্রশ্ন ছুরবে তাই রাতের বেলা লোকটাকে মেরে হাসপাতালে ভর্তি করেছে।তোমাদেরকে নিয়ে লোকদের বাজে মন্তব্য বেড়েই চলেছিলো।আর কিছু জানোয়ার এর তোমার উপর কুনজর ছিল।যা ও সর্য্য করতে পারছিলো না।তাই প্রথমে আমি তোমার সাথে সামান্য একটা বিষয় নিয়ে ঝামেলা করি।তারপর ঐ ইশু ধরেই তোমাকে কিডনাপ করি।বাকি সব তো তুমি জানোই।
ইহান একটু থেমে আবার বলল…..
—আর একটা কথা জানো কি……
তুমি যতই ভালো থাকো না কেন,যত ভালো ভাবেই চলো না কেন, এই সমাজের কিছু কিছু মানুষ আছে যারা তোমাকে লোকের কাছে খারাপ বানানোর জন্য উঠে পরে লাগবে।যেমনটা তোমার পিছে লেগেছিলো।কিন্তু তুমি এই সবের কিছুই জানো না।
মানহা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল….
—আপনি যে সত্যি বলছেন তার প্রমান কি??আপনার মতো গুন্ডা বদমাশের কথা আমি কেনই বা বিশ্বাস করবো???
মিষ্টি ইহানের দিকে তাকিয়ে বলল….
—-ইহান ভাইয়া খারাপ নয় ভাবি।ইহান ভাইয়া সব সময় অন্যায় আর গরীবদের হকের জন্য লড়ে।এর জন্য মাঝে মাঝে তাকে অনেক ভয়কর রূপ ধারন করতে হয়।আর আমার মনে হয় ভাইয়া তোমাকে তার সম্পর্কে যেমন দেখাতে চেয়েছে তুমি তেমন টাই দেখেছো।
মিষ্টির কথা শুনে মানহা ঠাস করে নিচে হাটু গেরে বসে কান্না করতে লাগলো।ওর পিঠপিছে এতো কিছু হয়ে গেছে আর ও জানেও না।
(ইহান এর ব্যপারটা আরেকটুকু ক্লিয়ার করে দিচ্ছি।ইহান হচ্ছে আরহামের বেষ্টফ্রেন্ড।দুজন প্লান করেই মানহাকে কিডন্যাপ করে তারপর আরহাম মানহাকে বিয়ে করে।ইহান ইচ্ছে করেই মানহার সামনে নিজেকে খারাপ প্রমান করে।আর অন্য লোকদের দিয়ে মানহাকে জানায় ও গুন্ডা,বদমাশ।কেউ কিন্তু আবার ইহানের দিকে নজর দিয়েন না🙃)
মিষ্টি মানহার সামনে এসে মানহার হাত ধরে বলল…
—জানি ভাবি ভাইয়া তোমার সাথে যা করেছে তা ভুল।কিন্তু কি জানো,ভাইয়া তোমাকে পাগলের মত ভালোবাসে।যখন জানতে পেরেছে তুমি বিবাহিত তোমার মেয়ে আছে তখন মনে হয় আমার ভাইয়া জীবিত লাশ হয়ে গিয়েছিলো।আমার ভাইয়া পুরো পাল্টে গিয়েছিলো।পরে তোমার সাথে বিয়ে হওয়ার পর আস্তে আস্তে ঠিক হয়।
ভাবি আমি ছোট মানুষ।ছোট মুখে বড় কথা মানায় না।শুধু এটাই বলবো আমাদেরকে ভাইয়াকে ছেড়ে যেও না।তুমি চলে গেলে ভাইয়া শেষ হয়ে যাবে।
ইহানঃ আমি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি তার জন্য সরি।আর প্লিজ তুমি আমাদের কথাটা একটু শুনো।রাগের মাথায় কোন ভুল সিধান্ত নিও না প্লিজ।আরহাম এখন অসুস্থ।এখন ওর পাশে তোমাকে না পেলে ও আরো ভেঙ্গে পরবে।ওকে ছেড়ে যেও না প্লিজ।তোমার লাইফে অতীতে কি আছে আমরা জানি না।আর না জানতে চাই।আমি বলব না তুমি অতীত ভুলে যাও।কিন্তু এটাই বলব অতীত কে সাইডে রেখে জীবন শুরু করো।আরহাম তো তোমাকে এভাবেই একসেপ্ট করেছে।তাহলে তুমি কেন পারবে না।
তোমার জন্য না হলেও তুর এর জন্য।তুরকে এমন একটা পরিবার থেকে আলাদা করো না।
সেদিন মানহা তুর এর কথা ভেবে চলে যায় নি।পারেনি তুরকে আর নিজেকে এমন একটা পরিবার থেকে আলাদা করতে।কি করে আলাদা করবে ও নিজেই যে তাদের মায়ায় জরিয়ে পরেছে।
চলবে
তোকে ঘিরে
Part 21
Ariyana Nur
সকাল থেকেই আকাশের রং পাল্টে আছে।কখন যে বৃষ্টি শুরু হয় কে জানে।মানহা মিষ্টি বসে বসে গল্প করছে আর তুর পাশে বসে কার্টুন দেখছে।
তুর চিৎকার দিয়ে বলল…..
—বনুওওওও….তোমার কাছে কি আমার চকলেট রেখে গেছে পাপা???
—হ্যা রেখে গেছে নিয়ে যাও।
তুর দৌড় দিয়ে চকলেট নিতে চলে গেলো।তুর চকলেট নিয়ে এসে দেখে মানহা আর মিষ্টি টম এন্ড জেরি দেখছে।তুর কোমরে হাত রেখে বলল….
—আমি না কার্টুন দেখছিলাম।তোমরা পল্টালে কেন???
মিষ্টিঃ আমরাও কার্টুন দেখছি।চাইলে আমাদের সাথে দেখতে পারো।
তুরঃ আমি এই কাটুন দেখবো না।আমি অগি দেখবো।
মানহাঃ পারো তো সারাদিন ঐ অগি দেখতে।সারাদিন অগি দেখে অগির মত বলদ হচ্ছো।
তুর চোখ ছোট ছোট করে বলল….
— আমি মোটেও বলদ না।আমার পাপা বলে আমি অনেক চালাক।
মানহাঃ আ..হা…কি আমার চালাক রে….(শুর টেনে)
আর তোমার পাপা বললেই হলো। তোমার পাপা তো নিজেই একটা কুলোর বলদ।
—তুমি আমার পাপাকে বলদ বললে।আমি পাপা আসলে বলে দিব।
—যা বল তোর পাপাকে ভয় পায় কে।
মিষ্টিঃসত্যি তুমি ভাইয়াকে ভয় পাও না(অবাক হয়ে)
—কেন উনি বাঘ না ভাল্লুক উনাকে ভয় পেতে হবে।উনিই উল্টো আমাকে ভয় পায়।(ভাব নিয়ে)
মা রুম থেকে বেরিয়ে এসে ওদের সামনে বসে বলল….
—কি ব্যপার বলতো।তুই এতো কথা বলছিস?? আবার বলছিস আমার ছেলেকে ভয় পাস না।কাহিনী কি???
—কাহিনীর কি আছে সত্যিটাই তো বললাম যে উনাকে ভয় পাই না।
তুরঃ আমি পাপাকে সব বলে দিব।(গাল ফুলিয়ে)
মানহাঃপাপা কি চামচী যা বল গিয়ে।মিষ্টি চলো বাহিরে না বৃষ্টি হচ্ছে আমরা ব্যেলকানিতে দাড়িয়ে ভিজে আসি।
মিষ্টি খুশি হয়ে বলল….
— সত্যি চলো না আমারো না অনেক দিন ধরে ভিজতে মন চাচ্ছে।চল চল….
মাঃ একেবারে পা ভেঙ্গে দিব ভিজতে গেলে।
মিষ্টিঃ প্লিজ মা অল্প ভিজবো।
মাঃ না বলেছি মানে না।
মানহা মনে মনে বলল….
তোমাকে কিভাবে রাজি করাতে হবে তা আমার জানা আছে।
মানহা মা এর গলা ধরে অদুরে গলায় বলল…
প্লিজ মা….একটু ভিজবো একটু প্লিজ…
তুমি না আমার ভালো মা।আমার জাদু মা প্লিজ…
মানহা এমন ভাবে আবদার করলো যে, মা না করতে পারলো না।তিনি বললেন….
—ঠিক আছে আর তেল মাখতে হবে না যা ভিজ গিয়ে কিন্তু অল্প ভিজবে।
মানহা আর মিষ্টি খুশি হয়ে বলল…
—ঠিক আছে।
তুর ওদের সাথে যেতে চাইলে মানহা বলল…
—পাপার চামচী পাপা আসলে ভিজো।বাই….
তুরঃ আমি ভিজবো।প্লিজ….
মিষ্টিঃ ভাগ তুই।তোর পাপারে নিয়ে ভিজিস।
তুরঃপ্লিজ…তুমি না আমার ভালো মনি।আমি তোমাকে অনেকগুলো চকলেট দিব।আর তোমাকে আমার থেকেও চকলেট খেতে দিব।প্লিজ…প্লিজ….প্লিজ….
কথাগুলো বলে তুর মিষ্টিকে আদর দিতে লাগলো।
মিষ্টি মুচকি হেসে তুরকে আদর দিয়ে ওকে কোলে নিয়ে ভিজতে চলে গেলো।
মাঃদেখেছিস পুরো তোর মত।কিভাবে মানুষের মন গলাতে হয় তা ভালো করেই জানে সে।
মানহা মিষ্টি হেসে বলল….
—দেখতে হবে না মেয়েটা কার।
______________________________
আরহাম রাতে বাহির থেকে এসে দেখে তুর মুখ ছোট করে সোফায় বসে আছে।দেখে মনে হচ্ছে অসুস্থ।আরহাম তুরকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ওকে কোলে নিয়ে বসে বলে…
—কি হয়েছে আমার মামুনির???আমার মামুনি কি অসুস্থ???
তুর আরহামের গলা ধরে খুশি হয়ে বলল…
—জানো পাপা আমরা না আজ বৃষ্টিতে ভিজেছি।
—আমরা মানে???
তুর আরহাম কে সব বললে আরহাম রেগে মিষ্টি কে ডাক দেয়।মিষ্টি আরহামের রাগি গলা শুনে ভয়ে ভয়ে আরহামের সামনে আসলে আরহাম বলে…
—আজ বৃষ্টিতে ভিজেছিস…
—…..
—কথা বলছিস না কেন (ধমক দিয়ে )
মিষ্টি আরহামের ধমক খেয়ে কাদো কাদো হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।
মানহা সামনে এসে বলল….
—কি হয়েছে এতো চেচাচ্ছেন কেন??
মানহার কথা শুনে আরহাম রেগে বলল….
—তোমরা তুরকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছো???
মানহা বুঝতে পারছেনা বৃষ্টিতে ভিজেছে তাতে রাগের কি আছে।মানহা সাভাবিক ভাবেই বলে…
—হ্যা ভিজেছি।তো….
মানহার এমন কথায় জেনো আরহামের রাগ আরো বেরে যায়।আরহাম পাশের সোফায় পা দিয়ে লাথি দিয়ে বলল….
—কেমন মা তুমি???মা এরা সন্তানদের বৃষ্টিতে ভিজতে বারন করে আর তুমি নিজে মেয়েকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে মেয়ের জ্বর বাধিয়েছো সেদিকে তোমার খবর নেই।মেয়ের খেয়াল না রাখতে পারলে বলবে আমিই আমার মেয়ের খেয়াল রাখতে পারবো।
আরহাম কথাগুলো বলে তুরকে কোলে নিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তুর এর সাথে কথা বলতে লাগলো।
মানহার মূর্তির ন্যায় দাড়িয়ে আছে।ওর মাথায় শুধু আরহামের কথা গুলো বাজছে।হঠাৎ কিছু একটা মনে হতেই মানহা ঝড়ের গতিতে তুরকে আরহামের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজের সাথে জাপটে ধরে বলতে লাগলো….
—ও…আমার মেয়ে…..
আমার মেয়েকে আমি কাউকে দিব না।কাউকে না।কেউ ওকে আমার কাছ থেকে নিতে পারবে না।
মানহা তুরকে কোলে নিয়ে পাগলের মত বিহেব করছে।সবাই মানহার এই ব্যবহারে হা করে মানহার দিকে তাকিয়ে আছে।
মানহা এমন করছে মনে হচ্ছে ওর কাছ থেকে ওর মেয়েকে কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আরহাম মানহার সামনে আগাতে নিলেই মানহা চিৎকার দিয়ে বলল….
—কেউ আসবেন না ওকে নিতে। দিবনা আমি দিবনা…কাউকে দিব না।
কথাগুলো বলতে বলতে মানহা অজ্ঞান হয়ে পেরে যেতে নিলেই আরহাম এক হাতে ওকে অরেক হাত তুরকে ধরে ফেলে।
______________________________
মানহা অচেতন হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।পাশে তুর ঘুমিয়ে আছে।এতক্ষন মা আর মিষ্টি মানহার কাছেই ছিলো।আরহাম তাদের কে বুঝিয়ে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে ওদের পাশে বসে আছে।আরহামের এখন নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।কেন যে মানহাকে রাগের মাথায় এতোগুলো কথা বলল।আর এদিকে তো মা আরহামকে ইচ্ছে মত বকে দিয়েছে মানহাকে এতোগুলো কথা শুনানোর জন্য।একটু পর মানহাকে কিছু একটা বিরবির করে বলতে দেখে আরহাম ওর মুখের সামনে কান পেতে ঝুকে মানহার কথা শুনার জন্য।আর যা শুনে তাতে যেন ও কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে।
চলবে