তোকে ঘিরে,part-16,17,18
Ariyana Nur
Part_16
রাতের খাবার শেষ করে সবাই বসে বসে গল্প করছে।তুরকে কিছুক্ষন আগে নিধি ঘুম পারিয়ে রেখে এসেছে।তাদের কথার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠলো।মাহাব ঘরির দিকে তাকিয়ে বলল….
—এতো রাতে কে এল???
নিধিঃ আমি দেখে আসি কে এসেছে???
মানহা চিৎকার দিয়ে বলল…
—না না….যেও না।যদি সিরিয়াল কিলার হয়???আমাদের যদি মেরে ফেলে তাহলে কি হবে???আমি এতো তারাতারি মরতে চাইনা।এখন অদ্বি তো আমি বুড়িই হই নি।আমার কত ইচ্ছা ছিল নাতির বিয়ের দিন নানি বউ এর সাথে এক রকম সাজবো।মরে গেলে তো কিছুই হবে না।(কাদো কাদো হয়ে)
আরহাম ধমক দিয়ে বলল….
—কি শুরু করেছো তুমি???আরেক বার মরার কথা বললে খবর আছে তোমার।
মানহা আরহামের কথা শুনে ওকে ভেংচি কাটলো।
মাহাবঃ দাড়াও আমি দেখছি কে।
মাহাব দরজা খুলে দেখে একজন মেয়ে দাড়িয়ে আছে।মাহাব কে দেখে মেয়েটি নেকামি শুরে বলল….
—উফ…ভাইয়া কতক্ষন ধরে দরজায় দাড়িয়ে রয়েছি এতো দেরিতে কেন দরজা খুললে???দাড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার পা ব্যথা করছে।
মাহাবঃ তুই এতো রাতে এখানে???(অবাক হয়ে)
মেয়েটি ভিতরে ঢুকে হাতের মোবাইলে টাইম দেখে বলল….
—এতো রাত কোথায় মাএ তো…১১টা৪০বাজে।
নিধিঃআরে এলি…কেমন আছো???হঠাৎ কি মনে করে??
এলিঃভালো ভাবি।
মাহাবঃ এতো রাতে তুই কোথার থেকে আসলি???নিশ্চই তোর জামাই এর সাথে ঝগরা করে এসেছিস???
এলিঃ না ঝগরা করে আসি নি।এদিকে একটা র্পাটিতে এসেছিলাম।বাসায় যাওয়ার জন্য গাড়ি পাচ্ছিলাম না তাই তোমাদের বাসায় চলে এলাম।ভাবি মানহার রুমটা খালি আছে না,আমি ওখানে গিয়ে রেষ্ট নেই।আমি খুব টায়ার্ড।
মানহাঃ (এসে গেছে ন্যকামী করতে।দরকার ছাড়া যে তুমি চান্দু এ বাড়িতে আসো নি তা ভালো করেই আমাদের জানা আছে)আমার রুমে তুমি থাকলে আমি থাকবো কোথায়???
এলিঃ আরে মানহা….তুই এখানে???তা এবার জামাই নিয়ে এসেছিস তো..???
মানহা মুচকি হেসে বলল….
—কি মনে হয় তোমার???
এলিঃ কি আর মনে হবে।আমার মনে হয়কি জানিস,তুই মনে হয় কোন টাকলা দেখতে সুন্দর না,এমন একটা ছেলেকে বিয়ে করে ফেলেছিস।তাই আমাদেরকে দেখাস না।কপাল বোন কপাল।দেখছিস না,আমি কতো সুন্দর তার মধ্যে তোর জিজুও কত সুন্দর।থাক যাই হোক তোর জামাইকে একদিন দেখাস।দেখতে খারাপ হলেও আমি কিছু মানে করবো না।
মানহা মনে মনে বলল….
—দাড়া তুই তোকে আজকে বাগে পেয়েছি।তোর টাকলা জামাই নিয়ে এতোদিন বেশি বড়াই করেছিলি না।মানহা একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলল….
—কি যে বলল না আপু,এতোদিন তো ওর কাজের চাপ ছিলো তাই তোমাদের সাথে ওর পরিচয় করাতে পারিনি।এই শুনছেন এদিকে আসেন….
মানহার কাহিনী দেখে নিধি আর মাহাব মিটমিট করে হাসছে।আর আরহাম শকড হয়ে বসে আছে।মানহা আরহামের সামনে এসে ফিসফিস করে বলল….
—আমার হ্যা তে হ্যা মেলাবেন।তা না হলে আপনার খবর আছে।
তারপর আরহামের হাত ধরে এলির সামনে এসে বলল….
—আপু এই হচ্ছে আমার বর মিঃ আরহাম শিকদার।আর ইনি হচ্ছেন আমার মামাতো বোন এলিনা।আমরা শট করে এলি বলে ডাকি।
এলিনা হা করে আরহাম এর দিক চেয়ে আছে।ওর বিশ্বাসই হচ্ছে না এতো সুন্দর একটা ছেলে মানহার জামাই।ওদের দুজনকে একসাথে দেখলে সবাই বলবে, পারফ্রেক্ট জুটি।
এলিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মানহা মিট মিট করে হাসছে।
এলি কাপা কাপা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল….
—হাই আমি এলি।
আরহাম সালাম দিয়ে বলল….
—কেমন আছেন আপা???
আরহামের মুখে আপা শুনে এলি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।নিজের মুখে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে বলল….
—আমি তোমার ছোট।তুমি আমাকে এলি বলেই ডাকতে পারো।
আরহামঃ আপনি আমার বয়সে ছোট বাট আত্নীয়তায় আপনি আমার বড়।আর আমি সব সময় বড়দের সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করি আপা।
এলি দাতে দাত চেপে বলল….
—ভাবি আমি কোন রুমে থাকবো।আমি না হয় মানহার রুমে….
ওকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে নিধি বলল….
—কি যে বল।তুমি জানো না বুড়ি ওর রুম ছাড়া অন্য রুমে ঘুমায় না।তুমি বরং কোনার রুমটায় ঘুমাও।ঐ রুমটা গুছানোই আছে।
—আমি ঐ রুমে ঘুমাসতে পারি না।আমার ভয় করে।
—তাহলে আর কি করার।হয়তো ঐ রুমে ঘুমাও তা না হয় এখানে বসে থাকো অথবা দরজাটা এখনো খোলা আছে।
এলি মানহা আর নিধির দিকে কটমট করে তাকিয়ে বড় বড় পা ফেলে কোনার রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল।
ওর এমন কাহিনী দেখে নিধি আর মানহা খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
মাহাব ওদের ধমক দিয়ে বলল….
—চুপ করো তোমরা।একটা মানুষ বাড়িতে আসলে এমন ব্যবহার করে কেউ।আর তাছাড়া আরহাম যে তোমাদের সামনে দাড়ানো সেদিকে খেয়াল আছে তোমাদের।বুড়ি না হয় পাগল তুমিও নিধি ওর সাথে তাল মিলাচ্ছো???
নিধি ভেংচি কেটে বলল….
—করেছি বেশ করেছি।ও কোন সাহসে আমার ননদীকে আপমান করতে আসে।আর আরহাম ভাই তো আমাদের বাড়ির মানুষই।কি ভাইয়া আপনি কিছু মনে করেছেন???
আরহাম মাথা নাড়িয়ে না বললো।
নিধিঃ দেখেছো ভাইয়াও কিছু মনে করেনি।এবার বেশি কথা না বলে ঘুমাতে যাও।মেয়েটা একা ঘুমাচ্ছে।(ধমক দিয়ে)
মাহাবঃভাই তোমাকে আমি আগেই বলে দেই এদের থেকে দুরে দুরে থেকো।আর এখন রুমে চলে যাও।তা না হলে এদের কথা শুনলে তুমি পাগল হয়ে যাবে।
এই বলে মাহাব চলে গেল।আর আরহামও রুমে চলে গেলো।
এলিনা মানহার মামাতো বোন।তিনি নিজেকে বিশ্ব সুন্দরী মনে করে।অহংকারে মনে হয় মাটিতেই পারা দেয় না।বড়লোক দেখে একটি বয়ষ্ক লোককে বিয়ে করেছে তার পরেও পরের জামাই এর বদনাম নিয়ে পরে থাকে।মানহা দেখতে ওর থেকে সুন্দর তাই মানহাকে ও দেখতেই পারে না।কথায় কথায় ওকে অপমান করে।
____________________________
আরহাম বিছানায় বসে বসে মোবাইলে কথা বলছে।দরজা খোলার শব্দ পেয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মানহা দাড়িয়ে আছে।আরহাম ফোন রেখে মানহাকে বলল….
—দাড়িয়ে আছো কেন???ভিতরে আসো।
মানহা কাচুমাচু করে দরজা চাপিয়ে ভিতরে ঢুকতে নিলেই আরহাম বলল….
—লাগিয়ে দিয়ে আসো।
মানহা চুপচাপ দরজা লাগিয়ে এসে আরহামের সামনে দাড়ালো।
আরহামঃ মেয়ে কি ভাবির কাছেই থাকবে????
—হুম….
—তা এভাবেই দাড়িয়ে থাকবে।
মানহা কাচুমাচু করে বলল….
—সরি আপনাকে ডিস্টাব করার জন্য।আসলে বাড়িতে যেই সুনামি এসেছে এই রুম ছাড়া অন্য রুমে ঘুমালে…..
—আরে তাতে কি হয়েছে।তুমি তো অন্য কারো রুমে ঘুমাচ্ছো না।নিজের স্বামীর সাথেই এক রুমে ঘুমাচ্ছো।
—আপনি তখন কিছু মনে করেননি তো???(ভয়ে ভয়ে)
আরহাম মানহার ভিতু ফেস দেখে হেসে বলল….
—আরে পাগল নাকি তুমি।কিছুই মনে করিনি।
—সত্যি….
—হুম।সত্যি….
মানহা একটা বড় করে নিশ্বাস ফেলে বলল….
—থ্যাক্স গড।আমি তো কি না কি মনে করেছিলাম।আসলে কি জানেন এই রংগি ঢংগিরে দেখলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়।সব সময় মানুষকে অপমান করার ধান্দা।নিজে ময়দা মাইখা বইসা থাকে আর আমারে বলে আমি নাকি ক্রীম মাইখা সুন্দর হই।আরে ভাই যদি ক্রিম ওই মাখতাম তাহলে কি কালা থাকতাম।
মানহা তাকিয়ে দেখে আরহাম ওর দিকে হা করে তাকিয়ে রয়েছে।মানহা আরহামের সামনে চুটকি বাজিয়ে বলল….
—ও হ্যালো…কোন ধ্যনে আছেন।
—তুমি এতো কথা বলতে পারো আমার জানা ছিলো না।তা এতোদিন কি করে চুপ ছিলে।বাড়িতে তো দেখতাম সবসময় চুপচাপ থাকো।
—কে বলেছে আপনাকে আমি চুপচাপ থাকি।আপনার সামনেই ঔ আর কি একটু থাকতাম।আর আমি ভাইয়া ভাবিকে পেলে এভাবেও আমার কথা আর দুষ্টুমি দুটোই বেরে যায়।
—তা তো দেখতেই পাচ্ছি।তা আজ আমার সামনে যে কথার ঝুলি নিয়ে বসলে???
—আপনাকে আমি প্রথমে যেমন ভাবতাম তেমন আপনি নন।তাছাড়া আজকে আমি এতোদিন পর ভাইয়া,ভাবিকে পেয়ে বেশি খুশি তো তাই।(খুশি হয়ে)
—তা কেমন মনে করেছিলে আমাকে???
—খরুস,বদ মেজাজী,চিটার-বাটপার ইত্যাদি ইত্যাদি।
আরহাম মানহার দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই মানহা একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল….
—আচ্ছা বাদ দিন ও সব কথা।এখন বলুন কফি খাবেন???
—এতো রাতে???
—তাতে কি হয়েছে আমি আর….
আরহাম মানহার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই মানহা একটু চুপ করে থেকে গম্ভীর হয়ে বলল…
—একটা কথা জিগ্যেস করবো???
—বলো….
—যদি কখনো শুনেন যে,আমার সম্পর্কে আপনি যা জানেন তার মধ্যে অধ্যেক মিথ্যে তখন????
—আরহাম একটু চুপ করে থেকে বলল….
—তুমি আমার সামনে আছো এটা সত্যি তো।তাতেই আমার চলবে।
—যদি আমিই না থাকি???
—আবার এই কথা শুরু করলে😡
—রাগ করছেন কেন???
আচ্ছা আপনি আমাকে কবের থেকে চিনেন???আর আপনি একবারও কেন আমার সম্পর্কে কিছু জানতে চাননি???যদি আমার পিছনে কোন ভয়ংকর কোন অতীত থাকে তাহলে পারবেন আমাকে মেনে নিতে???
চলবে
তোকে ঘিরে
Part 17
Ariyana Nur
মানহার কথা শুনে আরহাম মুচকি হেসে বলল….
—তুমি আমাকে যা যা বললে এ কথা গুলো যদি আমি তোমাকে বলি তখন তোমার উওর কি হবে???
—প্রশ্নটা আমি আগে করেছি।
—উওরটা আমি আগে জানতে চাচ্ছি।পারবে তখন আমাকে ক্ষমা করতে???
মানহা কতক্ষন আরহামের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল….
—সেটা না হয় তখনি দেখা যাবে।এই কথা বলে মানহা কফি বানাতে চলে যেতে নিলে আরহাম মানহাকে করুন শুরে বলল….
—যাই হয়ে যাক প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।যা শাস্তি দেওয়ার আমার কাছে থেকেই দিও।আমি সব মাথা পেতে নিব।কোন প্রতিবাদ করবো না।তার পরেও আমাকে ছেড়ে যেও না।
মানহা মনে মনে বলল….
—একে যতই সহজ সরল মনে করি ততই এ গরল বের হয়।মাঝে মাঝে তার কথায় মারপেচ আমি বুঝি না। এর মনে কি চলে আল্লাহ্ই ভালো জানে।
_____________________
দেখতে দেখতে আরো চার মাস কেটে গেলো।এ চার মাসে মানহা একটু একটু করে আরহামের প্রতি দুর্বল হয়ে পরেছে।কেনই বা হবে না,সব সময় আরহাম যে,মানহা আর তুর কে ছাড়ার মত আগলে রেখেছে।ছোট থেকে ছোট বিষয়ের খেয়াল রেখেছে।প্রতিদিন ওদের স্কুলে দিয়ে আসে আবার সময় পেলে মাঝে মাঝে ওদের নিয়ে ঘুরতে যায়।মানহার বেশি ভালো লাগে আরহামের তুর এর প্রতি কেয়ার দেখে।তুর তো এখন আরহামের জান।তুর কে কেউ কিছু বললে আরহাম তার ১৪গুষ্ঠির খবর নিয়ে ছাড়ে।একটা মানুষ কি করে যে অন্যের বাচ্চাকে নিজের মেয়ে বলে আপন করে নিতে পারে তা আরহামকে না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না।আর তুর ও এখন আরহামকে ছাড়া কিছুই বুঝে না।সারাদিন শুধু পাপা আর পাপা।কেউ একটু জোরে ওর সাথে কথা বললেই আরহাম আসতে না আসতেই তার নামে বিচার দিবে।আর আরহামের এক কথা, আমার মেয়ের সাথে যেন কেউ উচু গলায় কথা না বলে।কোন ভুল করলে বুঝিয়ে বললেই আমার মেয়ে বুঝে।তাই ওর সাথে কেউ ধমক দিয়ে কথা বলবে না।এই নিয়ে আরহাম আর মানহার সাথে বেশ কয়েকবার কথা কাটাকাটিও হয়েছে।কিন্তু আরহাম তো নাছোর বান্দা যা বলেছে তাই।তার কথার নড়চড় করেনি।
আরহামকে মানহা যত দেখে ততই মুগ্ধ হয়।মানহা মাঝে মাঝে ভাবে,একটা মানুষ এতো নিখুঁত কি করে হতে পারে???সব দিক দিয়ে পারফ্রেক্ট।সবার প্রতি এতো কেয়ার কি করে করতে পারে???সবার আগে সে তার ফেমেলির কথা ভাবে।সবার ভালো,খারাপ,পছন্দ-অপছন্দ সব দিকে তার খেয়াল থাকে।আরহামের মনে মানহাকে নিয়ে কি আছে তা মানহা জানে না।আর না আরহাম কখনো মানহাকে বলেছে।কিন্তু আরহামকে এতো কাছ থেকে দেখতে দেখতে আরহামের জন্য মানহার সম্মান আর স্রদ্ধা দুটোই বেড়ে গেছে।
একদিন মানহা আর মিষ্টি বসে বসে গল্প করছে।গল্পের মধ্যেই মিষ্টি বলল….
—ভাবি তোমার ফেভারেট হিরো কে??নিশ্চই কুরিয়ান কোন হিরো???
মানহা মুচকি হেসে বলল….
—তাদের আমার ভালো লাগে কিন্তু দাড়ি না থাকায় আমার কাছে কেমন মেয়ে মেয়ে আর ছোলা মুরগির মত লাগে।আমার ফেভারেট হিরো তো আমার র্যাম।
মিষ্টি হাসতে হাসতে বলল….
—তুমি যে কি বল না।ছোলা মুরগি…..
তা তোমার হিরোর নিশ্চই দাড়ি দেখেই তার উপর এমন ফিদা হয়েছো???
—আর জানো ওর সব থেকে দাড়ির স্টাইল টা আমার কাছে অসম লাগে।আর তা দেখেই তো আমি ওর উপর ফিদা।
মানহার কথা শেষ হতে না হতেই আরহাম কোথা থেকে এসে মিষ্টিকে ধমক দিয়ে বলল….
—দিনদিন বাদর হচ্ছিস।কি সব আজে বাজে কথা বলছিস।আজ থেকে বাড়িতে কাউকে জেনো কোন তামিল মুভি দেখতে না দেখি।আর যা তারাতারি গিয়ে পরতে বস।
কথাগুলো বলে রাগে গজ গজ করতে করতে নিজের রুমে গিয়ে আরহাম ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল।
মিষ্টি আর মানহা একে অপরের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
এই ঘটনার পর থেকেই আরহাম দাড়ি রাখা শুরু করেছে। আর কখনো ক্লিন সেভ করে নি।
মানহা বেলকানিতে দাড়িয়ে একা একা কথা গুলো ভাবছে আর মিটমিট করে হাসছে।মিষ্টি পিছন থেকে কান্না করতে করতে বলল….
—ভা…বি….
মিষ্টির কান্নারত কথা শুনে মানহা মিষ্টির মাথায় হাত রেখে বলল….
—কি হয়েছে???কান্না করছো কেন??
—ভা…ভা…ভাইয়া….
—কি হয়েছে উনার???
—ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে।
মিষ্টির কথা শুনে মানহার মুর্তির মত দাড়িয়ে রইল।পায়ের নিচ থেকে মনে হয় জমিন সরে যাচ্ছে।ওর যেন দিন দুনিয়ার কোন খবরি নেই।
মানহা সি এন জি তে বসে বসে চোখের জল ফেলছে আর আল্লাহ্ কাছে প্রর্থনা করছে।মিষ্টি পাশে বসে নিরবে কান্না করে যাচ্ছে।
সি এন জি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ওরা হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে যায়।রিসিপসনে গিয়ে ওরা আরহামের খোজ করতেই তারা বলে দেয় আরহামকে অনেকক্ষন আগেই ওটিতে ঢুকানো হয়েছে।ওর আর দেড়ি না করে ওটির সামনে চলে যায়।
________________________
ওটির থেকে ডাঃ বের হতেই একজন ঝড়ের গতিতে ডাঃ এর সামনে এসে বলতে লাগলো….
—আঙ্কেল আরহাম কেমন আছে???বেশি ব্যথা পায়নি তো???ও ঠিক আছে তো???ওর কিছু হবে না তো???আঙ্কেল এখানে যদি চিকিৎসা ভালো না হয় তাহলে আপনি বলুন আমাকে আমি ওকে বাহিরে নেওয়ার ব্যবস্থা করছি।
ডাঃ মুচকি হেসে বলল….
—রিলেক্স মাই বয়….
আরহাম আল্লাহ্ এর রহমতে এখন বিপদ মুক্ত।কিছুদিন বেড রেষ্ট আর ঔষধ ঠিক মত খেলেই আল্লাহ্ এর রহমতে ভালো হয়ে যাবে।একটু পরে ওকে কেবিনে দেয়া হবে।জ্ঞান ফিরলেই দেখা করতে পারবে।
—থ্যাক্স আঙ্কেল।
ডাঃমুচকি হেসে চলে গেলো।আর লোকটি লম্বা একটি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল।মনে হচ্ছে তার দম এতোক্ষন কেউ আটকিয়ে রেখেছিল।লোকটি মনে মনে আল্লাহ্ এর শুকরিয়া আদায় করে পিছন দিকে ঘুরে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো।কেননা ওর পিছনে মানহা আর মিষ্টি দাড়িয়ে আছে।
মানহা লোকটিকে দেখে অবাক হয়ে কাপা কাপা গলায় বলল…
—মিঃ…ই…ইহান….আপনি????
(মানহার জোরকা ঝাটকা জোরসে লাগা😁)
চলবে
তোকে ঘিরে
Part_18
Ariyana Nur
আরহাম এর কেবিন এর বাইরে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে ইহান আর পাশের চেয়ারে মিষ্টি আর মানহা বসে আছে।কারো মুখেই কোন কথা নেই।একটু পর একজন নার্স এসে বলল….
—পেশেন্ট এর জ্ঞান ফিরেছে।আপনারা চাইলে দেখা করতে পারেন।
মানহা দুর্বল শরীর নিয়ে আস্তে আস্তে উঠে দাড়ালো।
মিষ্টি আরহামের সামনে বসে কান্না করছে।আরহাম দুর্বল গলায় বলল…..
—কান্না করছিস কেন???দেখ আমি ঠিক আছি।তুই একা এখানে কি করে আসলি???
মিষ্টি কান্না থামিয়ে নাক টেনে বলল….
—আমি একা আসিনি। ভাবি সাথে এসেছে।
—কোথায় ও???
মানহা হাত দিয়ে দরজার দিকে ইশারা করলে আরহাম ঐ দিকে তাকাতেই আরহামের চেহারার রং পালটে গেলো।কেননা মানহা আর ইহান দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।
আরহাম কোন কথা না বলে মানহার দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো।আরহামের চোখে রয়েছে প্রিয় কিছু হারিয়ে যাওয়ার ভয়।ওর মনে হচ্ছে ওর বুকে কেউ ছুরি দিয়ে অনবরত আঘাত করছে।শরীরের ক্ষতগুলোর ব্যথার থেকে মনের ক্ষত গুলো ওকে বেশি পোড়াচ্ছে।
_____________________________
আরহাম বেডে হেলান দিয়ে শুয়ে রয়েছে।মা আসার পর থেকেই কান্নাকাটি করছে ।মা কে কান্না করতে দেখে আরহাম বলল….
—আহ্ মা কান্না করছো কেন???দেখো আমি ঠিক আছি।
এবার থামো প্লিজ।
মা ধমক দিয়ে বলল….
—চুপ কর তুই।একটা কথাও বলবি না।মাথা ফাটিয়ে হাত ভেঙ্গে বসে আছে আবার বলছে ঠিক আছি।
আরহাম মুচকি হেসে বলল….
— তোমাদের সেবায় ঠিক হয়ে যাব।
মিষ্টিঃ তা ভাইয়া এক্সিডেন্ট কি করে করলে???
আরহাম মিষ্টির কথাটা শুনে ইহান এর দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল…..
—বাইকের সামনে একটা কুকুর চলে এসেছিল।ওটাকে বাচাতে গিয়েই বাইক সাইডের পিলারের সাথে ধাক্কা লেগেছে।
তুরঃ পাপা তুমি দেখে বাইক চালাতে পারো না।আর কুকুরটাকে পেলে আমি পিটুনি দিব।ওটার জন্য আমার পাপা ব্যথা পেয়েছে।
আরহাম মুচকি হেসে বলল….
—ঠিক আছে মামুনি এর পর থেকে সাবধানে বাইক চালাবো।এবার বাড়িতে গিয়ে আমার গুর্ড র্গালের মত খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে থাকবে।একদম দুষ্টুমি করবে না।ঘুম থেকে উঠে দেখবে আমি তোমার কাছে চলে এসেছি।
—পাপা প্লিজ আমি তোমার কাছে থাকি না।(আল্লাদি সুরে)
—না মা…এখানে বাচ্চারা থাকতে পারে না।তুমি না আমার ভালো মা।পাপার কথা শুনবে না।
তুর ভালো মেয়ের মত পাপার কথায় রাজি হয়ে গেলো।
একজন নার্স এসে বলল….
—আপনাদের যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।আর রাতে পেশেন্টের সাথে একজন থাকতে পারবেন।
নার্স চলে যেতেই আরহাম বলল….
—মা তোমরা বাড়িতে চলে যাও।আমার এখানে কারো থাকতে হবে না।দরকার পরলে আমি তাদের….
আরহামের কথা শেষ হতে না হতেই মানহা মাহাব কে বলল….
—ভাইয়া তুমি মা,মিষ্টি আর তুর কে নিয়ে বাসায় চলে যাও।
আমি এখানে থাকবো।কোন সম্যসা হলে তোমাদের জানাবো।
মানহার কথা শুনে সকলের মুখে হাসি ফুটলে উঠলো।কেউ ভাবতেও পারে নি মানহা এখানে থাকতে চাইবে।
আরহাম বেচারা তো এখনো শকড্ হয়ে মানহার দিকে তাকিয়ে আছে।
______________________________
সারারাত মানহা চোখের পাতা এক করে নি।আরহামের পাশে নির্রঘুমে বসে রয়েছে।তাহাজুদের সময় ওজু করে নামাজ আদায় করেছে।নামাজ শেষে মোনাজাতে চোখের জল ফেলছে।মানহার মনে কি চলছে তা মানহাই ভালো জানে।(আমিও জানি কিন্তু কমু না😁)
হঠাৎ আরহামের ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় পাশে তাকিয়ে দেখে মানহা ফ্লোরে একটা ওরনা বিছিয়ে মোনাজাত নিয়ে বসে আছে।চেহারা ওরনা দিয়ে ঢেকে রাখার কারনে কান্না মাথা চেহারা দেখা যাচ্ছে না ঠিকই কিন্তু বার বার শরীর কেপে উঠার কারনে বুঝা যাচ্ছে ও কান্না করছে।মানহাকে এভাবে কান্না করতে দেখে আরহামের চোখের কোনাও জল চলে আসলো।ও পারছে না মানহাকে এভাবে দেখতে ওর মনে হচ্ছে ওর কলিজাটা কেউ কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
__________________________
মানহা আরহামকে সুপ খাইয়ে দিচ্ছে আর আরহাম মানহার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।কিন্তু সেদিকে মানহার কোন ভূক্ষেপ নেই।এমন সময় আফরা কেবিনে ঢুকে কাশি দিয়ে বলল…..
—সরি…সরি…..
তোমাদের ডিস্টাব করলাম না তো।
আরহামঃ আরে না এসো।
আফরাঃতা ভাইয়া কেমন আছেন???সরি ভাইয়া কালকে আসতে পারিনি।আসলে আমার ফোনটা অফ ছিল।যার জন্য আপনার কোন খবর আমি পাইনি।আর যখন জেনেছি তখন অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল😔
আরহামঃআরে তাতে কি হয়েছে।কোন সমস্যা নেই।
আফরাঃ তা বললেন না ভাইয়া কেমন আছেন এখন???
আরহাম মানহার দিকে আর চোখে তাকিয়ে বলল….
—যেমন রেখেছে সে….
কথাটা যে মানহাকে উদ্দেশ্য করে বলল তা মানহার বুঝতে বাকি রইলো না।
আফরাঃআরে বউ এর সেবা পেলে সবাই ভালো থাকে আর তারাতারি সুস্থ হয়ে যায়।আপনিও হয়ে যাবেন।
আরহাম কোন কথা না বলে শুধু মলিন হাসলো।
__________________________
ডাঃ এসে আরহামকে চেকাপ করে বলল…..
—কেমন আছেন???
আরহামঃ আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো।
ডাঃমাথায় ব্যথা করছে???
—হুম….অল্প।
—-সম্যসা নেই।ঔষধ ঠিকমত খেলে সেরে যাবে।আপনার শার্টেতো রক্ত লেগে গেছে।নার্স ওনার শার্টটা চেন্জ করে দাও।
ডাঃ চলে যেতেই নার্স শার্ট নিয়ে আরহামের সামনে এসে দাড়াতেই আরফার একটু জোরেই বলল….
—এক মিনিট….এক মিনিট….
সবাই ঘাবরে গিয়ে আফরার দিকে তাকাতেই আফরা ছো মেরে নার্স এর হাত থেকে শার্টটা নিয়ে বলল….
—আপনি ওনার শার্ট চেন্জ করবেন???
নার্সঃহ্যা কেন কোন সমস্যা???
—সমস্যা মানে অনেক সম্যসা।
মানহাঃ তোর আবার কি হয়েছে।এখান থেকে সর আর ওনার কাজ ওনাকে করতে দে।
আফরা ধমক দিয়ে বলল….
—চুপ কর তুই।দেখেছিস এই মেয়েটা কিভাবে আমার জিজুর দিকে তাকিয়ে রয়েছিল।মনে হচ্ছিল চোখ দিয়েই গিলে খাবে।এর নজর ভালো না।শার্ট চেন্জ করার ধান্দায়….
আফরার কথা শুনে নার্সটি তেলে বেগুনে জ্বলে বলল….
—হ্যালো ম্যাম আমি মেরিড।সবাইকে আপনার মত ভাববেন না।যেখানে আপনার বোন এর কোন সম্যসা নেই সেখানে আপনি এতো কথা বলছেন কেন???
আফরা রেগে বলল….
—মেরিড হয়েও লুচুগিরি করেন।লজ্জা করে না।আপনার নামে আমি কমপ্লেইন করবো।
—আপনি কি কমপ্লেইন করবেন আমি এখনি গিয়ে কমপ্লেইন জানাচ্ছি।নার্সটি রেগে কেবিন থেকে চলে গেলো।
মানহা রেগে বলল….
—নার্স কে তো ভাগিয়ে দিয়েছিস এখন তুই শার্ট চেন্জ কর।
আফরা শয়তানি হাসি দিয়ে বলল….
—তুমি আছো কি করতে।এই নে শার্ট আমি বাহিরে গিয়ে পাহারা দিচ্ছি যাতে তোমাদের কেউ ডিস্টাব করতে না আসে।
—তোকে আমি দেখে নিব😡
—আগে জিজুকে দেখ পরে আমাকে দেখিস।
আফরা শয়তানি হাসি দিয়ে কেবিন থেকে চলে গেলো।আর মানহা মূর্তির মত শার্ট হাতে নিয়ে দাড়িয়ে রইল।
এদিকে ওদের কাহিনী দেখে আরহাম মিটমিট করে হাসছে।
চলবে
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আপনাদের কি মনে হয় ইহান ভালো নাকি খারাপ???ধন্যবাদ)