তোকে ঘিরে,Part_02,3,4

তোকে ঘিরে,Part_02,3,4
Ariyana Nur

সবাই সামনে তাকিয়ে দেখে একজন সুদর্ষন পুরুষ দাড়িয়ে আছে। লোকটি সামনে এসে বলল…

—আপনি কি জানেন না মিঃ শেখ বিবাহিত মহিলার স্বামী বেচে থাকতে অন‍্য আরেকজন বিয়ে করতে পারে না।যতক্ষন না তার প্রথম স্বামী তাকে ডিভোর্স না দেয়।

লোকটির কথা শুনে মানহা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল।

লোকটির কথাশুনে ইহান রেগে বলল…
—কি যা তা বলছেন।ও স্বামী তো কবেই মরে গেছে।

—আপনি কি কানা চোখে কম দেখেন।চোখের সামনে জীবিত মানুষ দাড়িয়ে আছে আর আপনি বলছেন সে মরে গেছে।

—মানে!!!

—আরে এতো মানে মানে করেন কেন নেতা মানুষ সহজ কথা বুঝেন না।থাক আমিই বুঝিয়ে দিচ্ছি আমি হচ্ছি মিসেস মানহা শিকদারের স্বামি মিঃআরহাম শিকদার।

লোকটির কথা শুনে মানহা হা করে রইল।বলে কি এই লোক তাকে তো আমি জীবনে প্রথম দেখলাম।আর তার উপরে আমাকে তার স্ত্রী বলছে।কোন পাগলা গারদ থেকেই পালিয়েছে আল্লাহ্ জানে।

ওর ভাবনার মাঝেই ইহান গর্জন দিয়ে বলল….

—আপনি যে ওর স্বামী তার কি প্রমান আছে।এমনি এমনি বলবেন আর আমি মেনে নিব।আমাকে কি আপনার পাগল মনে হয়।

আরহাম মাথায় হাত দিয়ে বলল….

—হায় আল্লাহ্ এক বাচ্চার বাপ হয়ে গেলাম তার পরেও লোকে বলে প্রমান দিতে।আর আপনাকে পাগল কেন মনে হবে আপনিতো পুরোই পাগল।তা না হলে কেউ বিবাহিত মেয়ের পিছনে পরে।আপনার জন‍্য মনে হচ্ছে দুনিয়াতে মেয়ের অভাব পরেছে।যাই হোক আম্মু তুর… এদিকে আসো তো।

তুর এতোক্ষন বাহিরে দাড়িয়ে ছিল।আরহামের ডাক শুনে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসলো।

তুর কে দেখে মানহা দৌড়ে গিয়ে ওকে ধরে কাদতে লাগলো।আর পাগলের মত বলতে লাগলো…

—মা তুমি ঠিক আছো তোমার লাগেনি তো।তোমার যদি কিছু হয়ে যেত তাহলে আমি কি করতাম বল।আই এম সরি মা আমি তোমাকে সেফ করতে পারিনি।

তুর সুন্দর করে মানহার চোখের জল মুছে দিয়ে বলল….

—বোকা মেয়ে এভাবে কাদে।দেখ আমি ঠিক আছি।পাপা আমাকে ঠিক সময় নিয়ে এসেছে।

তুর এর মুখে পাপা শুনে মানহা অবাক হয়ে বলল….

—পাপা!!!কে তোমার পাপা???

তুর হাত দিয়ে আরহামকে দেখিয়ে বলল….

—এই যে আমার পাপা।জানো মাম্মাম পাপা না সুপ‍্যারম‍্যান‍ের মত ঐ পচা আঙ্কেলদের কাছ থেকে আমাকে ছাড়িয়ে এনেছে।

মানহা তুর এর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল…

—না মা…উনি তোমার পাপা না।উনি একটা ভালো আঙ্কেল।

মানহার কথা শুনে ইহান রেগে বলল…

—এই মেয়ে এখানে আসলো কি করে ওকে তো…
আর একদম নাটক করবে না।এই লোকটি বলছে তুমি ওর স্ত্রী।তোমার মেয়ে বলছে এই লোকটা ওর পাপা।আর তোমার স্বামীকে এখন তুমিই চিনতে পারছো না।

মানহা মনে মনে ভাবছে….
— এ কোন পাগলের পাল্লায় পরলাম। একজন বিয়ের জন‍্য উঠে পরে লেগেছে আরেক জন তো এসে বলছে সে নাকি আমার স্বামী।কোন ফেসাদে ফালালে আল্লাহ্।আরে আমার তো বি…..

ইহানের কথায় ও ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসলো।

ইহানঃআর একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ তোমার ডিভোর্স হোক চাই না হোক তোমাকে আজ আমি এই মুহুর্তে বিয়ে করবো।আর সাক্ষি হবে তোমার স্বামী।
এই তোরা কে কোথায় আছিস এদের কে বেধে ফেল।

ইহানের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই একজন লোক তুর এর গলায় ছুরিধরে।যা দেখে মানহা চিৎকার দিয়ে বলল….

—তুর… আপনারা আমার মেয়েকে ছেড়ে দিন।

ইহানঃতুমি আমাকে বিয়ে করলেই আমি তোমার মেয়েকে ছেড়ে দিব।তখন তো আমার মেয়ে হয়ে যাবে তাই না।নিজের মেয়েকে কি আর আটকিয়ে রাখতে পারি বল।এবার বল বিয়ে করবে কি না।

মানহা কান্না করতে করতে কাপা কাপা গলায় বলল….

—আপনি যা বলবেন আমি তা করতে রাজি আছি।তারপরেও আমার মেয়েকে কিছু করবেন না।

আরহামঃকি যা তা বলছো।ওকে বিয়ে করবে মানে।আমি থাকতে কেন তুমি ওকে বিয়ে করবে।

মানহাঃপ্লিজ দয়া করে আমার মেয়েকে ছেড়ে দিন।ওর কোন ক্ষতি করবেন না।

ইহানঃঠিক আছে। আমার শক্রতা তোমার সাথে তোমার মেয়ের সাথে না।এবার কথা না বলে সাইন করে দাও।
ইহান পেপারে সাইন করে পেপারটা মানহার হাতে দিল।মানহা কোন উপায় না পেয়ে পেপারটায় সাইন করে দিল।

ইহান পেপারটি নিয়ে আরহামের সামনে এসে বলল…

—তুমি আমাদের বিয়ের সাক্ষি হিসেবে এবার সাইন করে দাও।

আরহামঃনিজের সন্তান কে বাচাতে যদি তুমি অন‍্য কাউকে বিয়ে করতে পারো মানহা তাহলে আমি কেন পারবো না।আমি নিজে তোমাদের বিয়ের সাক্ষি হব।আরহাম আর কোন কথা না বলে পেপারে সাইন করে দিল।

_____________________________

আরহাম শিকদার।পেশায় একজনক সাংবাদিক।আরহামের পরিবারে মা আর ছোট একটা বোন আছে।কিছুদিন আগেই ওর বাবা মারা গেছে যার কারনে ওকেই ওর পরিবার সামলাতে হচ্ছে।আরহামের ছোট বোনের নাম আনিশা।আনিশা এবার ক্লাস টেনে পরে।

অনেকক্ষন ধরে মানহাকে কল দিচ্ছে মাহাব।কিন্তু প্রত‍্যেকবার একটা কথাই ভেসে আসছে আপনি যেই নাম্বারে কল করছে তা এই মুহুর্তে বন্ধ আছে।মাহাব হতাস হয়ে ফোনটা পাশে রাখলো।এমন সময় নিধি ঘরে ঢুকে বলল….

—কি হয়েছে বুড়ি ফোন ধরেছে???

—না….ওর ফোন বন্ধ বলছে।

—চিন্তা করো না।ও ঠিক আছে।মনে হয় ওর ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে।

—চিন্তা কি আর সাধে করি।কত করে বললাম এখানে একটা চাকরি কর।তা না করে ওখানে মেয়েকে নিয়ে চলে গেল।আমার যদি একটা কথা শুনতো।

—এ সব কথা বাদ দাও।পুরোনো কথা মনে করে কি লাভ।তুমি তো জানোই ও এখানে কেন থাকে না।তা না হলে কার মন চায় সবাইকে ফেলে মেয়েকে নিয়ে এতো দুরে থাকতে।এখন শুধু দোয়া কর ও যেন ওর মেয়েকে নিয়ে যেখানেই থাকে ভালো যেন থাকে।

মাহাব কোন কথা না বলে দীর্ঘ একটা নিস্বাস ছাড়লো।

এতোক্ষন যারা কথা বলল তা হল মানহার ভাই ভাবি।মানহার পরিবারে তারা ছাড়া আর কেউ নেই।মা বা অনেক অগেই মারা গেছে।

ইহান পেপারটা হাতে নিয়ে হাসছে।যাকে বলে ৩২টা দাত বের করে হাসা😁
ইহান পেপারটা সাইডে রেখে বলল….

—কি মিঃ আরহাম….
নিজের স্ত্রীকে বাচাতে এসে নিজেই নিজের স্ত্রীর বিয়ের সাক্ষি হয়ে গেলে।দেখলে এই ইহানের পাওয়ার।ইহান যা চায় তা করেই ছাড়ে কেউ আটকাতে পারে না।এই বলে আবার হাসতে লাগলো।

ইহানের কথা শুনে আরহাম শয়তানি হাসি দিয়ে বলল…

—ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মত এতো লাফাচ্ছেন কেন মিঃ ইহান শেখ???

ইহান রেগে বলল….
—মানে???কি বলতে চাচ্ছেন???

—আরে আপনি মনে হয় কানে কথা কম শুনেন আর একটু কমও বুঝেন।তাই তো শুধু মানে মানে করেন।ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মত না লাফিয়ে পেপার টা একবার ভালো মত তাকিয়ে দেখেন।

ইহান আরহামের কথা শুনে রেগে গিয়ে পেপারটা হাতে নিল।পেপারটা ভালো মত চোখ বুলিয়ে ইহানের চেহারার রং পালটে গেল।আর তা দেখে আরহাম হাসতে লাগলো….

চলবে

তোকে ঘিরে,Part_03
Ariyana Nur

ইহান রাগি গলায় বলল….
—তোর সাহস তো কম না তুই আমার এখানে এসে আমার সাথেই চাল চাললি।

আরহাম মুচকি হেসে বলল….

—সাহসের কি দেখলেন আপনি।আর আমার সাহস সম্পর্কে আপনার কোন ধারনাই নেই।এইটুকুটেই চেহারার এমন দশা করে ফেললেন মিঃ ইহান শেখ।

ইহানঃ কে তুই????

আরহামঃহায় আল্লাহ্…. তখন না বললাম আমি কে।এতো তারাতারি ভুলে গেলেন।

ইহানঃবেশি কথা আমার পছন্দ না কে তুই তারাতারি বল তা না হলে তোদের একটাকেও আমি এখান থেকে যেতে দিব না।

আরহামঃঐ ভুল ভুলেও করেন না।কেননা এখানে যা হচ্ছে আই মিন এতোক্ষন যা হলো সব তাহলে পাবলিক দেখতে পাবে।

ইহানঃতোর মাথা মনে হয় গেছে।এখান কার খবর পাবলিক জানবে কি ভাবে???

আরহামঃক‍্যামেরা বলে একটা জিনিস আছে চিনেন তো।আরে আমিও যাহ… নেতা মানুষ ক‍্যামেরা চিনবে না।যাই হোক আমি একজন সাংবাদিক।এই যে আমার কার্ড।(কার্ড দেখিয়ে)আর আমি এখানে ঢোকার সময় সুন্দর করে ক‍্যামেরাটা ঐ খানে লাগিয়ে দিয়েছি যা আপনারা কেউ দেখেনি।আর আপনি যদি আমাদের মেরে ফেলেন তাহলে আপনার এই সুন্দর কারনামা(গোপন তথ‍্য) আমার সহকারি পাবলিকের সামনে ফুটিয়ে তুলবে।এখন আপনিই ভাবেন আমাদের ছেড়ে দিবেন না আপনার কুরসি(চেয়ার) ছারবেন।

ইহানঃআমার এখানে এসে আমার চোখ ফাকি দিয়ে কি করে তুই এই মেয়েকে বিয়ে করলি।আর আপনি (কাজিকে উদ্দেশ্য করে)কিভাবে আমার সাথে বেইমানি করলেন??

ইহানের কথা শুনে মানহার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।ও তো পাথরের মত দাড়িয়ে রইল।

কাজি আমতা আমতা করতে লাগলো।তা দেখে আরহাম বলল….

—আমি বলছি ওর কিছু কারনামা(গোপন তথ‍্য)আমার কাছে আছে।আর এসেই আমি তাকে ইশারায় ছোটখাট একটা থ্রেট দিয়েছে।তাই তো উনি আমার নাম বরের জায়গায় লাগিয়ে দিয়েছে।আর আপনিও সাইন করার সময় দেখেননি।ভালোই হলো এমন একজন নেতা মানুষ আমাদের বিয়ের সাক্ষি।আহ্…কি কপাল আমার।

ইহান কাজির দিকে তাকিয়ে বলল…
—তোকে তো আমি জ‍্যান্ত কবর দিব।

কাজিঃসি সি ক‍্যামেরা… ক‍্যামেরা… ভুলে গেছেন।

কাজির কথা শুনে ইহান চুপ করে রইল।আর কাজি মানে মানে কেটে পড়ল।আর মনে মনে বলতে লাগলো….

—জীবনেও আর আমি বিয়ে করামু না।আল্লাহ তুমি আমারে বাচাইও।

আরহামঃতো মিঃ ইহান শেখ আমি কি আমার বউ বাচ্চা নিয়ে যেতে পারি।

ইহান কোন কথা না বলে রাগে ফোস ফোস করতে লাগল।

___________________________

মানহা সেখান থেকে বের হয়ে সোজা তুর কে নিয়ে বাসায় চলে গেল।আরহামের সাথে একটা কথাও বলে নি।বাসায় গিয়ে বিছানায় বসে বসে এসব ভাবছে আর কান্না করছে।এমনটা না হলেও তো পারতো।কেন আল্লাহ্ এমন করলো।

তুর এর ডাকে মানহা ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসলো।মাম্মাম আমি ফ্রেস হয়ে গেছি। তুমি তারাতারি ফ্রেস হয়ে আমাকে খেতে দাও। আমার পেটে কিন্তু ইন্দুর লাফালাফি করছে।

মানহা চোখের জল মুছে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল…
—তুমি একটু বস মা।আমি ফ্রেস হয়ে তোমার খাবার নিয়ে আসছি।

_________________________

সারাদিনে কই গেছিলে যে ফোন ধরো নাই।আর এখন এমন ভাবে খাচ্ছো যে কতোদিন ধরে খাও নাই।

আনিশার কথা শুনে আরহাম আনিশার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলল…

—বিয়ে করতে গেছিলাম।শশুর বাড়ি খাওন দেয় নাই তাই এমনে খাচ্ছি।তোর কোন সমস‍্যা।

আনিশাঃ মা…মা….মা…..

আরহামঃঐ টমেটো এমন চেচাচ্ছিস কেন???

আনিশার ডাকে তার মা রান্নাঘর থেকে আচলে হাত মুছতে মুছতে ওদের সামনে এসে বলল…

—কি হয়েছে এভাবে ডাকছিস কেন???

আনিশাঃমা তোমার ছেলে না বিয়ে করে ফেলেছে!!

মাঃওমা তাই!!!তা তো ভালই।তা বাবা কবে আমার বউ মা কে ঘরে তুলবি।

মার কথা শুনে আরহাম মিটমিট করে হাসছে আর আনিশা রাগে ফুলছে।

আনিশাঃতুমি কেমন মাগো….
ছেলে বিয়ে করে ফেলেছে আর তাকে বাড়ি থেকে বের না করে বলছো বউমাকে কবে ঘরে আনবে।তোমাদের সাথে আমি আর কথাই বলবো না।

আনিশা রাগ করে সেখান থেকে চলে গেল।
ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মা আর আরহাম মিটমিট করে হাসছে।

____________________________

রাত১১.৪০……
মানহা বিছানায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।তুর অনেক আগেই ঘুমিয়ে গেছে।মানহার চোখে কোন ঘুম নেই।হঠাৎ মানহার ফোনটা বেজে উঠল।মানহা ফোন রিসিভ করে কিছু বলার আগেই ওপাস থেকে একজন বলল….

—বুড়ি তুই ঠিক আছিস???তোর কিছু হয়নি তো???তোর ফোন বন্ধ কেন ছিল???সারাদিনে একটা ফোন কেন দিলি না???

অপর পাশের মানুষের কথা শুনে মানহা মনে হয় কষ্টটা আরো দু’গুন বেরে গেলো।ও নিজেকে ওনেক কষ্টে সামলিয়ে কাপা কাপা গলায় বলল….

—আ…মি ঠিক আছি।

মাহানঃতোর কথা এমন শুনা যাচ্ছে কেন???কান্না করছিস???

—আরে না….এমনি। সিজন পরিবর্তন হচ্ছে না তাই গলাটা একটু ডেবে গেছে।

—সারাদিনে কি হয়েছিল তোর।একটা ফোনও যে দিলি না।আমি কতগুলো কল করেছি তোকে।রাগ করেছিস আমার সাথে???

—ধুর…কি যে বল না।প্রথমত আমার ফোনে চার্জ ছিল না।তাই তুমি ফোন বন্ধ পেয়েছো।আর ২য় তো আমার ফোনে টাকা নাই।তাই আমি কল করতে পারি নি।আর কিছু….

—আগে বলিসনি কেন ফোনে টাকা নেই।আমি কালকেই তোর ফো….

—থামো…থামো…..
আমি কালকে টাকা ভরে নিব।এবার এটা বাদ দাও।এখন বল ভাবি কেমন আছে???

—ভালো ঘুমাচ্ছে।আর আমার পরিটা কেমন আছে রে….

—ভালো ও ঘুমাচ্ছে।

ওরা আর কিছুক্ষণ টুকটাক কথা বলে রেখে দিল।

_______________________

মানহা কিছুদিন ধরেই বাসা খোজছে ভালো বাসা পাচ্ছে না।আর কালকের ঐ ঘটনার পর তো এখানে থাকার বিন্দু মাএ ইচ্ছে নেই।মানহা অনেকজনকে ভালো বাসার খোজ নেওয়ার জন‍্য বলেছে।তারা বাসা দেখিয়েছে ও।কিন্তু মানহার পছন্দ হয় নি।বাসা পছন্দ হলে টাকায় পছন্দ হয় না।টাকায় হলে বাসায় হয় না।আজ সকালে একজন ফোন করে মানহাকে একটা বাসার ঠিকানা দিয়েছে।
মানহা ঠিক করেছে ক্লাস শেষ করে একবার গিয়ে দেখে আসবে।এবার ও ঠিক করেছে বাসা যদি পছন্দ হয় তাহলে টাকা বেশি হলেও নিয়ে নিবে।তারপরেও এখানে আর থাকবে না।

চলবে

তোকে ঘিরে
Part 04
Ariyana Nur

মানহার বাসা পছন্দ হয়েছে তাই সে বাড়িওয়ালার সাথে কথা বলছে।বাড়ি ওয়ালা বললে ভুল হবে বলতে হবে ফ্লাট ওয়ালী🤣
মানহা যে বাসাটা দেখতে এসেছে সেখানে তিনটি বেড রুম। একটি কিচেন আর একটি ডয়িংরুম ।সেখানেই তারা এক রুম ভাড়া দেবে।মানহা আর ভদ্র মহিলা সোফায় বসে কথা বলছে।

মানহাঃতো আন্টি আপনাদের বাসায় কে কে থাকেন??না মানে আমরা মা মেয়ে যদি আপনাদের এখানে থাকি আপনাদের যদি সমস‍্যা হয়।সাথে বাচ্চা আছে বুঝেনি তো।
তাই আর কি…..

—আরে নাহ নাহ…আমরাও মা মেয়ে থাকি।তোমরা যদি এখানে থাকো তাহলে আমাদের কোন সমস‍্যা হবে না।আর বাচ্চা আমাদের পছন্দ।তো বাচ্চা নিয়ে আমাদের কোন সমস‍্যা হবে না।

—ঠিক আছে আন্টি।সব কথা তো হয়েই গেল।তাহলে আমরা সামনের ১তারিখে কি বাসায় উঠতে পারি???

—১তারিখ কেন চাইলে তুমি আজকেই থেকে যেতে পার।

মানহা অবাক হয়ে বলল….
—মানে????

মহিলাটি কথা ঘুরিয়ে বলল….
—এই তুমি আমাকে আন্টি কেন বলছ???
আমি কি দেখতে আন্টির মত।আমি যদি একটু ভালো ভাবে তৈরি হয়ে তোমার সাথে দাড়াই না তাহলে সবাই বলবে আমি তোমার বড় বোন।(ভাব নিয়ে)

মানহা বোকার মত তাকিয়ে থেকে বলল…
—সরি ম‍্যাম….

—আবার ম‍্যাম….
আমি তোমার কবের কার টিচার যে আমাকে ম‍্যাম বলছো।

—তো আমি আপনাকে কি বলে ডাকবো???

মানহার প্রশ্নটা শুনে মহিলাটি একটু ভেবে বলল…

—তুমি তো আমার মেয়ের মত তুমি আমাকে মামুনি বলেই ডাকতে পারো।

মানহা মনে মনে বলল….
—আল্লাহ কোন পাগলের পাল্লায় পরলাম।একবার বলছে বড় বোন একবার বলছে মেয়ের মত।আমি যেন পাগল না হয়ে যাই।আল্লাহ বাচাও আমায়।

মানহাকে চুপ করে থাকতে দেখে মহিলাটি বলল….
—কিহ পারবেনা আমাকে মামুনি বলতে???

মানহা মুচকি হেসে বলল….
—পারবো না কেন আমি তো আপনার মেয়ের মতই।

—তাহলে আমি তোমাকে কি বলে ডাকবো???তুর আরেক রুম থেকে ওদের সামনে এসে বলল।

মহিলাটি তুরকে ওর পাশে বসিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল….
—তুমি আমাকে কি বলে ডাকতে চাও বনু???

তুর একটু ভেবে বলল…..
—তুমি মাম্মামকে মেয়ে বলছো আর মাম্মাম তো আমার মেয়ে।তাহলে আমি তোমাকে বনু ডাকবো।

মামুনিঃ এহ্ বাবা…
—আমার পাকা বনুর মাথায় তো অনেক বুদ্ধি।

তুরঃ আমি তো অনেক বড় তাই।

মামুনি মুচকি হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল….
—ওহ্ তাই।

তুরঃহুম….

মামুনি মানহাকে বলল….

—তা তোমার স্বামী কোথায় থাকে???কি করে???

তার কথা শুনে মানহার কাশি উঠে গেল।তা দেখে তিনি পানির গ্লাস এগিয়ে দিল।মানহা ঢক ঢক করে সব পানি এক নিশ্বাসেই খেয়ে নিল।

মামুনিঃ তুমি ঠিক আছো??এই অসময়ে কে আবার তোমার নাম নিচ্ছে।

মানহাঃ হুম….আমি ঠিক আছি।

মামুনিঃতা বললে না তোমার স্বামীর কথা???

মানহা কিছু বলবে তার আগেই তুর বলল….

—আসলে কি জানো….
মাম্মাম না পাপার সাথে রাগ করেছে তাই মাম্মাম পাপার সাথে কথা বলছে না।জানো বনু….
আমার পাপা না দেখতে অনেক সুন্দর। পুরো সুপার ম‍্যেনের মত আ….

মানহাঃহয়েছে আর পাকামো করতে হবে না।আচ্ছা মামুনি আমরা আজ আসি।

—ঠিক আছে সাবধানে যেও।আর সময় মত এসে পরো।আর একটা কথা স্বামীর সাথে রাগ করে থেকোনা মা।তাতে আল্লাহ্ নারাজ হয়।যত তারাতারি হয় সব ঠিক করে নাও।

মানহা মুচকি হাসি দিয়ে আসি বলে চলে গেল।

__________________________

মানহা তুর কে বকছে আর তুর মুখ লটকিয়ে বসে আছে।
মানহাঃ এই পাকা বুড়ি তুমি কি পাপা, পাপা শুরু করেছো বলবে।সেদিন কিছু বলি নি বলে ভেবোনা আজ কিছু বলবোনা।কেন তখন ঐ কথা বললে।

তুর কাদো কাদো হয়ে বলল…

—আমার কি দোষ।পাপাই তো আমাকে তাকে পাপা বলতে বলেছে।

মানহা চোখ রাঙ্গিয়ে বলল…
—আবার পাপা…..

—সরি…(মন খারাপ করে)

মানহা নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলল….
—বলো তো মা সেদিন কি হয়েছিল।ঐ লোকটাই বা তোমাকে তাদের হাত থেকে কিভাবে ছাড়ালো???

—তুমি আমাকে বকেছো।তাই আমি কিছু বলবো না।(মুখ ভার করে)

মানহা বুঝতে পারছে ওর সাথে রাগ করে কথা বললে কোন কথাই বলবে না।তাই মানহা নরম শুরে বলল….

—সরি মা…মাম্মাম আর বকবে না।।প্লিজ….রাগ করে থেকো না।

তুর কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে চলে গেল।আর মানহা একটা বড় করে নিশ্বাস ছাড়লো।কেননা তাকে তার মেয়েকে সোয়া সের তেল মেখে মান ভাঙ্গাতে হবে।

______________________________

আরহাম এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।মনের মধ‍্যে একটা অপরাধ বোধ কাজ করছে।মানহার সাথে এমনটা করা ঠিক হয়নি।মানহার অনুমতি ছাড়া ওকে বিয়ে করা ঠিক হয়নি।কেন করেছে তা সে জানলেও তারপরেও নিজের প্রতি নিজেরি একটা ঘৃনা কাজ করছে।আরহাম মনে মনে বলছে…..

—কি করে করলাম এমন আমি কি করে???উনি কি কখনো আমাকে মাফ করবেন???উনি মাফ না করলেও তো আল্লাহ্ ও আমাকে মাফ করবেন না।

মানহা দুপুরে ঘুম থেকে উঠে শুনতে পেল তুর কার সাথে যেন কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে।মানহা উঠে সেখানে গিয়ে ওর মাথা গরম হয়ে যায়।মানহা তাদের সামনে গিয়ে দাড়াতেই ওরা মানহাকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে উঠে।

তুর আমতা আমতা করে বলল….
—মাম্মাম তুমি উঠে গেছো এত তারাতারি।তু…..

আর কিছু বলার আগেই মানহা ধমক দিয়ে বলল…..
—চুপ…
কোন কথা না।তুমি এখান থেকে যাও।

তুর গুটি গুটি পায়ে সেখান থেকে কান্না করতে করতে চলে গেল।কেননা ও জানে তার মাম্মাম ভীষণ রেগে গেছে।কিছু বলেই কিছু লাভ হবে না।

মানহা চেহারা রাগে লাল হয়ে আছে।শরীর হাত পা কাপছে।

সামনের মানুষটি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল…
—দেখুন…..আ….

আর কিছু বলার আগেই মানহা শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে সামনের মানুষের গালে একটা থাপ্পড় মারলো….

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here