#সর্বনাশীনি_তুমি
২+৩
#পর্ব:২
#Mishmi_muntaha_moon
আপুর লাগাতার কলে অতিষ্ঠ হলাম।ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই আপুর অস্থির কন্ঠ
‘কিরে উপম কই তুই এভাবে বেরিয়ে গেলি যে।ঠিক আছে তো সব!’
আপুর কথায় আশেপাশে একবার পরোখ করে নিলাম।ইশফা শুয়ে আছে।পাশেই ওর মা,বাবা,ভাই সকলেই চিন্তিত হয়ে কেউ বেডের পাশে চেয়ার পেতে তো কেউ কর্নারের চেয়ারে বসে আছে।জুই,লাবিবা,মারজিয়া ও দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইশফার আম্মু সবাইকে চলে যেতে বলেছিলো।কিন্তু ওরা না করলো। সূর্য অস্ত যাচ্ছে পরিবেশ ধীরে ধীরে লাল আভায় আচ্ছন্ন হচ্ছে।
আরিয়ার তাড়া দেয়ায় উপমা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আকাশে চোখ রেখে বলল
‘ইশফার এক্সিডেন্ট হয়েছে গুরুতর ভাবে হাতে চোট লেগেছে। হসপিটালে আছি আপাতত। ‘
আমার কথার বিপরীতে আপু আম্মুকে আবার রিপিট করলো মোবাইলের অপর পাশ থেকেই শুনলাম।আম্মু তো শুনে কিছুটা রেগে গিয়ে আপুকে বলল
‘ওর নিজের অবস্থাই তো ভালো না।আর ইশফা এক্সিডেন্ট করেছে দেখতে যাবে ভালো কথা কিন্তু এখন তো বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে ওর ফ্যামিলিরা কি আসে নি।ওকে আসতে বল’
আরিয়া আপু আবার রিপিট করতে নিতেই আমি ধীর কন্ঠে বললাম
‘শুনেছি আমি আবার রিপিট করার দরকার নেই।দেখি আসছি আমি,রাখি।’
বলেই কল কেটে ইশফার বেডের পাশে গিয়ে দাড়াতেই ওর আম্মু আবারও আমাদের সব ফ্রেন্ড দের তাড়া দিয়ে বলল
‘আমরা ইশফার কাছে আছি তোমরা বাড়িতে যাও।রাত হছে যাচ্ছে তো।’
ইশফার মার কথায় উপমা বিনয়ী স্বরে বলল
‘জ্বী আন্টি এখন তো যেতেই হবে আম্মুও বলছিলো।’
আবারও জুই,মারজিয়া,লাবিবার দিকে তাকিয়ে বলল
‘তোরা কি এখন যাচ্ছিস নাকি আরেকটু পরে।’
জুই পাশের টেবিল থেকে ব্যাগ কাধে নিয়ে বলল
‘হুম আমিও যাই তোর সাথে ওরা আরেকটু পরে যাবে।’
ইশফার আম্মু আব্বুকে বিদায় দিয়ে আমি আর জুই বেরিয়ে পড়লাম।
রিকশায় বসে জুইকে জিজ্ঞাসা করলাম
‘কিরে এমন হলো কিভাবে। আর ইশফার হাতে কিভাবে ব্যাথা পেলো?’
‘আরেহ কি বলবো কলেজের সামনে গ্যাঞ্জাম পাকিয়ে গিয়েছিলো।সেহরিশ আর আরেকটা দলের মাঝে।সেইখানেই মারামারি লাগে তার মাঝেই পাশ দিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম দুরেই ছিলাম তবুও কোথা থেকে একটা মাঝারি সাইজের কাঠের মোটা লাঠি ইশফার উপর পরতে যাচ্ছিলো বেচারি ভয়ে হাত দিয়ে নিজেকে বাচাতে গিয়ে হাতে ব্যাথা পায়।’
ওর কথায় মন টা বিষিয়ে উঠলো।এই উনাদের ঝামেলার জন্য ইশফা ভাগিদার হলো। আরও মানুষও তো কতোভাবে আহত হয়েছে কোনো খবর আছে।মুখের রাশভারী রেখেই বললাম
‘উনাদের এই ঝামেলায় মাঝে জনগন আহত হয়।এই রাজনীতিতে মানুষের ক্ষতি ছাড়া ইদানীং কিছুই কাজের হয় না’
‘আরে নাহ সবাই তো আর এক না।যেমন সেহরিশ উনি তো রাজনীতির মাধ্যমে ভালো কাজ করে আবার আরেক দল ওরা অলওয়েজ গ্যাঞ্জাম পাকায়।সবাই এক না বুজলি।ভালো খারাপ সব কিছুর মধ্যেই আছে।’
ওর এতো ভাষন শুনে চোখ ফিরিয়ে অন্য জায়গায় ধ্যান দিলাম।
_
বাড়িতে পৌছেই ক্লান্ত পায়ে হেটে রুমে গিয়ে বসতেই আম্মু এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো
‘নিজের অবস্থা ভালো নেই কিন্তু অন্যজনের চিন্তায় বাচে না।আরে নিজে বাচলে তো বাপের নাম।’
আম্মুর কথায় বিরক্ত হলাম।জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে বললাম
‘আচ্ছা বুজলাম এইবার যাও তো রেস্ট নিবো।আর আব্বু কোথায়?’
আব্বুর কথা জিজ্ঞাসা করতেই আম্মুর মুখটা ছোট হয়ে এলো।কিছু না বলেই চলে গেলো।কিছুই বুজলাম না কি হলো।
কিছুক্ষন পর আপুকে দেখে জিজ্ঞাসা করায় আপুও আমতা আমতা করছিলো। অনেকক্ষণ জোর করায় বলল
‘আব্বু বড় চাচার বাড়িতে গেছে কিছু প্রয়োজন ছিলো হয়তো তুই খেয়ে নে ভাবিস না ওইসব’
বলে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
আপুর কথা শুনে আমারও মুখটা ছোট হয়ে গেলো কেনো গেলো আবার আব্বু উনাদের বাড়ি আর কি প্রয়োজন রয়ে গেছে এখনো।বুক ভারী লাগতেই রুমের পাশের জানালা টা মেলে দিয়ে বসতেই আপু খাবার নিয়ে কিছুটা খেয়ে নিলাম।
___
ঘুম থেকে উঠতেই বাহিরে উঁকি দিয়ে দেখি আব্বু চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে টিভিতে খবর দেখছে আর আম্মু গোমড়া মুখে বসে আছে।আমিও গিয়ে বসে আপুর কথা জিজ্ঞাসা করায় জানতে পারলাম আপু চলে গেছ্র আজকে সকালেই হঠাৎ উনার ননাসের আগমনের কারণে।
‘আম্মু আমি কলেজে যাবো আজকে। আর এক মাস আছে মাত্র পরীক্ষার সব নোটস গুলো ও কালেক্ট করতে হবে।’
আম্মু আমার কথায় রাজি হয়ে বলল
‘হুম তোর আব্বু দিয়ে আসুক’
আমি সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম
‘নাহ প্রয়োজন নেই আমি চলে যেতে পারবো।’
রুমের দিকে পা বাড়াতে নিতেই আব্বু বলল
‘আমি বড় ভাই এর বাড়িতে গিয়েছি বলে তুইও রেগে আছিস নাকি?’
আব্বুর কথায় আমি মুচকি হেসে বললাম
‘আরেহ না কি যে বলো না আমি কেনো রাগবো তোমার ভাই হয় সম্পর্ক তো একেবারে এভাবে ভেঙে ফেলা যায় না জানি আমি।’
আমার কথা শুনে আব্বুও হেসে কাছে আসতে বলে হাতে কিছু টাকা দিয়ে বলে
‘হুম ভালোই বুদ্ধিমান দেখছি আমার মা টা।খেয়ে নে তারপর যা কলেজে।’
খেয়ে দেয়ে বিদায় নিয়ে নিচে গিয়ে জুই কে কল দিয়ে মোবাইল কানে নিয়ে উপমা রিকশায় উঠতে নিবে তখনি নিজের নাম শুনে কল কেটে দাড়াতেই কালো রঙের গাড়ির ভেতরে বসে থাকা সেহরিশ কে নজরে পড়লো। সাথে সাথে অস্বস্তিতে মিইয়ে যায়।
সেহরিশ আবারও তাড়া দেওয়ায় কাছে গিয়ে দাড়াতেই উপমাকে উদ্দেশ্য করে বলে
‘কলেজে যাচ্ছো নাকি?’
‘হুম’ উপমার এককথায় জবাব
সেহরিশ আবারও গম্ভীর কন্ঠে বলল
‘রাস্তাঘাটে এখন অনেক ঝামেলা চলছে বসো আমি পৌছে দেই। ‘
‘না না আমি তো রিকশা থামিয়েছি রিকশা দিয়েই চলে যাবো আপনার কষ্ট করার দরকার নেই।’
সেহরিশ কিছুক্ষন উপমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ চোখের সানগ্লাস টা খুলে বিনয়ী সুরে বলল
‘আসসালামু আলাইকুম আন্টি। ভালো আছেন।’
উনার কথায় উপমা হচকচিয়ে গেলো।কাকে সালাম দিচ্ছে দেখার জন্য পিছে তাকাতেই দেখলো ওর আম্মু দাঁড়িয়ে আছে।আম্মুকে উপমা ভ্রু কুচকে বলল
‘তুমি নিচে কি করো।’
‘তোকে হলরুম এর জানালা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এলাম।আরেহ সেহরিশ বাবা তুমি এখানে কি করছো?’
‘জ্বী আন্টি আমি তো এইখানে দিয়ে যাচ্ছিলাম উপমা কে দাড়য়ে থাকতে দেখে ভাবলাম পৌছে দেউ কলেজে। ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম তো।’
উনার কথা শুনে আম্মু যেনো ভীষণ খুশি হলো।হাসি মুখে এটে রেখেই বলল
‘বাহ ভালো তো।কিরে উপমা যা সেহরিশ পৌছে দেক তাছাড়া রাস্তাঘাট ও তো ততোটা ভালো। যাহ যাহ তারাতারি। আচ্ছা বাবা আমাদের বাড়িতে তোমার আম্মুকে নিয়ে এসো কোনো একদিন।আমি আসি তাহলে।’
বলে আম্মু চলে গেলো।বুঝি না আমি আমার আম্মু আব্বুদের। এইখানে উনাকে আব্বু ততোটা পছন্দ করে না আর আম্মু যেনো পারে না,,, থাক আর বলতে হবে না সেই বিপাকের কথা।
কোনো রকম চোখ নামিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম।উনাকে আগে থেকেই আমার ভয় লাগতো এই মারপিট জঞ্জালের জন্য এখন তো সাথে অস্বস্তি ও যোগ হয়েছে।
উনার গাড়িতে বসতেই উনি ভ্রু বাকিয়ে কিছু ইশারা করলো যার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম। না বুঝিয়েও একটা বোকা মার্কা হাসি দিলাম। কারণ মাঝেমধ্যে হাসির মাঝেও তো অনেক কথার জবাব হয়ে যায় আপনাআপনি।হাসি দিয়ে দুই হাত মিশিয়ে কচলাতে লাগলাম।হার্টবিট যেনো সাধারনের তুলনায় কিছুটা বেশি ধুকপুক করছে।
হঠাৎ উনার হাসির আওয়াজে তাকিয়ে দেখি উনি তখনো জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে হাসছে আমাকে উনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসি থামিয়ে বলল
‘সিটবেল্ট লাগাতে বলেছি।না বুঝলে জিজ্ঞাসা করতে হয় বোকার মতো না হেসে।’
উনার কথা ইন্সাল্ট ফিল করলাম।মুখে বললে যেনো কথা ফুরিয়ে যেতো, ইশারাবাজি করে যত্তসব!
চলবে,,,,
#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:৩
#Mishmi_muntaha_moon
ক্লাস করছি গোমড়া মুখ করে। সকালে ক্লাসে ঢোকা মাত্রই ক্লাসমেটদের জিজ্ঞাসাবাদ। অবশ্য দোষ আমারই আমি ক্লাসের সবাইকে আমার বিয়ের কার্ড বিলীন করেছি এই নিজ দুইটা হাতে।কিন্তু বিয়ে টা যে এইভাবে ভেঙে যাবে কে জানতো।
মারজিয়ার ডাকে মুচকি হেসে ওদের সাথে মাঠের সবুজ ঘাসে বসে পড়লো উপমা। উপমাকে দেখে শুরু হলো সেহরিশের কথা।ক্লাসে এসে সব ঘটনা বলার পর থেকেই ওদের মুখ চলছে আর উপমার টাইটেন ধৈর্য।
‘ আহা কি একটা ভুল করলি।আমি তোর পরিবর্তে হলেতো বিয়েটা করেই নিতাম।আর সকাল বিকাল রাত শুধু চুম্মাইতাম।’
জুইয়ের বেশরম কথা সারাজীবনকার।শুনে চোখ মুখ কুচকে ফেললাম
‘ কি বেশরম কথাবার্তা।বেচারা উনি শুনলে তো নিশ্চিত অজ্ঞান হয়ে যেতো।`
‘বেচারা নাকি উনি?’
লাবিবার কথার টোন শুনে ওরা তিনজন সমস্বরে হাসতে লাগলো।শেষমেষ ওদের সাথে কথায় না পেরে বিদায় নিয়ে বাড়িতে চলে গেলাম।
—
রাস্তায় যাওয়ার সময় আরেকদফা নজরে পড়লো সেহরিশকে।কারো সাথে হেন্ডশেক করছে।হাসি মুখে গাড়ির ভিতরে লোকটাকে বসিয়ে নিজেও বসবে।উপমার রিকশা টা আস্তে আস্তে সেহরিশদের পেরিয়ে যাবে তখনি চোখ তুলে তাকালো,তাকিয়েই রইলো শান্ত দৃষ্টিতে সাথে সাথেই উপমা চোখ ফিরিয়ে নিলো।রিকশা অনেকটা সামনে বাড়তেই উপমা রিকশা দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে দেখতেই দেখে এখনো তাকিয়ে আছে।ধরা পরে গিয়ে তারাতারি মাথা সোজা করলো।
ইশফাদের বাড়ি থেকে ওকে দেখে এসে বাড়ি ফিরে।ক্লান্ত দেহটা বিছানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পড়লো।
__
রাতে উপমাদের পাশের বাড়ির রিয়া ছাদে যাবে বলে ডাক দিতেই ওর সাথে ছাদে গেলো।ঝড়োহাওয়া বইছে।
ছাদে গিয়ে রেলিং এ পা বসলাম পা ঝুলিয়ে বসে পড়লো একটু হেরফের হলে নিচে পরে স্পট ডেড।উপমাদের থাকার বিল্ডিং টা ৭তলা অর্থাৎ অনেক উচু। উপমার বাতাসের ঝাপটায় চুল মুখে বারি খাচ্ছে বারংবার।
‘এই ওইটা সেহরিশ ভাইদের বাড়ি না।’
রিয়ার কথায় ঘাড় ঘড়িয়ে তাকায় উপমা।সেহরিশ,সাদাত আর সাথে একটা মেয়ে আর সেহরিশের বাবা একসাথে চেয়ার পেতে বসে আছে। সেহরিশদের ছাদে সুন্দর করে মরিচ বাতি দিয়ে ডেকোরেট করা।ওইগুলার আলোতে কিছুটা দেখা যাচ্ছে।মাঝে ২টা বিল্টিং এর পর সেহরিশদের বিল্ডিং। সেহরিশ কথার মাঝেই উপমাদের ছাদে তাকাতেই ভ্রু কুচকে যায়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে উপমা তারাতারি করে রেলিং থেকে নেমে দাঁড়ায়।সেহরিশের পাশে বসে থাকা মেয়েটা ডাক দিতেই উপনার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ওই মেয়েটার দিকে দৃষ্টি ফেলে।
নিচে এসে দেখল উপমা ওর বাবা এসে পরেছে।উপমাকে দেখে একটু বকলো এমন ওয়েদার এ ছাদে কেনো যায়।আম্মুকে রান্নাঘরে যেতে দেখে উপমাও ওর আম্মুর পিছে যায়। কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওর আম্মু কাজ দেখলো।উপমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই মুচকি হেসে গলা ঝেড়ে বলল
‘ও আম্মু শুনো একটা কথা’
‘এমন ঢং না করে বল’
এমন বাকা কথা গিলে আগ্রহ নিয়ে বললো
‘ছাদে গিয়ে দেখলাম রোকেয়া আন্টির দুই ছেলে উনার বাবা আর একটা মেয়ে ছিলো। ‘
‘তো?’
‘মেয়েটা কে গো?’
উপমার কথায় ওর আম্মু ভ্রু কুচকে ফেললো।কথার জবাব তখনি না দিয়ে আবারও কাজ করতে লাগলো।কাজের মাঝেই বলল
‘আমি কি ওদের জাসুসি করি যে জানবো ওদের ফেমিলির কথাবার্তা।’
মন খারাপ করে যেতে নিবে তখনি ওর আম্মু ভাবুক হয়ে বলল
‘ওহ তোকে তো বলতেই ভুলে গেছি।রোকেয়া আপার স্বামী তো আরেকটা বিয়ে করেছে। তো ওই মহিলার ঘরে একটা মেয়েও আছে।হয়তো ওই মেয়েটা হবে।’
শুনে উপমা বেশ অবাকই হলো।এই বিষয় জানা ছিলো না ওর।
__
কলেজে যেতেই উপমা শুনতে পেলো আরেকটা কাহিনি। আজ নাকি রোকেয়া শ্বাশুড়ির মৃত্যুবার্ষিকী। সব দিকে যেনো দাওয়াত চলছে।সেহরিশ সকল গরীব অসহায় থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, ধনী সকলকে দাওয়াত খাওয়াচ্ছে।
কলেজেও এসেছে সকল ক্লাসে বিলীন করে স্যার দের সাথে বিনয়ী ভাবে কথা বলছে।
‘বাজ ভালোই তো দাওয়াত হয়ে গেলো আজ’
মারজিয়ার কথায় ভাবনার সুতো কাটে।আমি ওদের দিকে তাকিয়ে শুধু হাসলাম।জুই বলল
‘সেহরিশ নামটা কিন্তু দারুন।আর মানুষটা তো ড্রিমবয়।দেখ আজ আমার ড্রেসের সাথে মেচিং মেচিং পাঞ্জাবি। হাহা’
ওর কথায় বিরক্ত হয়ে বললাম
‘উফফ চুপ থাক তো জুই।উনার থেকে দূরে থাকতে পারলেই ভালো।’
‘তা তো সম্ভব হচ্ছে না’
কন্ঠটা শুনে পিছে ফিরতেই উপমা সেহরিশকে দেখে এক পা পিছিয়ে দাড়ালো।
‘হ্যালো ভাইয়া’
জুইয়ের কথায় গম্ভীর মুখে কিছুটা হাসি ফুটিয়ে জুই এর কথার জবাবে বলল
‘হ্যালো।’
বলে আবার উপমার দিকে তাকিয়ে বলে
‘আমি তোমাদের বাড়িতে যাচ্ছি। গেটের বাইরে ওয়েট করছি আসো।’
বলেই চলে গেলো। আমি এখনো থম মেরে আছি কি আজব কথাবার্তা বলে গেলো, উনি যাবে বাসায় যাক ওকে কেনো যেতে বলছে।উফফ
ওদের হাসির আওয়াজ শুনে ভ্রু কুচকে তাকালো উপমা
‘যাও তোমার উনি ডাকছে।’
ওদের কথায় রেগে বলল উপমা
‘কি অসভ্য কথা বার্তা আমার উনি মানে কি।’
বলে কেটে পরলো ওইখান থেকে।সেহরিশ গাড়িতে হেলান দিয়ে কিছু ছেলের সাথে কথা বলছিলো। উপমা কে দেখে চলে গেলো ছেলে গুলো।সেহরিশ নিজে গাড়িতে বসে পাসের সিটের দরজা খুলে দিলে উপমা চুপ করে বসে পরলো।
পুরো রাস্তায় কেউ কোনো কথা বলল না আর।
_
বাড়িতে যেতেই উপমার আম্মু সেহরিশ কে দেখে তো রীতিমতো অবাক।তারাতারি বসতে বলে চা বানিয়ে নিয়ে আসে।
‘আরেহ সেহরিশ বাবা হঠাৎ এলে যে। আহারে এই প্রথম আসলে কিছু দিতেও পারলাম না।’
আম্মুর কথা শুনে অবাক হয়ে দেখলাম।কতো দরদ।উপমার আম্মুর কথায় সেহরিশ বলল
‘এতো অস্থির হওয়ার প্রয়োজন নেই আন্টি।আজকে আমার দাদুর মৃত্যুবার্ষিকী তো তাই কিছু আয়োজন করা হয়েছিলো। আম্মু তো একটু অসুস্থ তাই আমি আসলাম।
‘কিহ তোমার আম্মু অসুস্থ। অসুস্থ হলো কিভাবে’
সেহরিশ ভ্রু চুলকে ধীর কন্ঠে বলল
‘ওই আরকি প্রেশার চাপ দেওয়ার কারনে’
কিছুক্ষন বসে সেহরিশ বিদায় নিয়ে যেতে নিবে তখন উপমা বলল সেহরিশের আম্মুকে দেখে আসবে।ওর আম্মুও মত দেয়ায় সেহরিশ আবারও উপমাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
সেহরিশদের বাড়িতে গিয়ে বেশ কিছু অপরিচিত মুখ দেখে ঘাবড়ে যায়।উপমার অবস্থা দেখে সেহরিশ হাত ধরে রোকেয়ার রুমে নিয়ে যেতেই সেইদিনের মেয়েটাকে বসে থাকতে দেখে।উপমা রোকেয়া বেগমের কাছে পা বাড়াতে নিতেই হাতে টান পড়ায় থেমে যায় হাতে তাকাতেই সেহরিশ ছেড়ে দেয় হাত।উপমা মুখে হাসি টেনে গিয়ে রোকেয়ার পাশে বসে। মেয়েটাকে গম্ভীর মুখে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে দেখে সেহরিশের দিকে তাকায়।সেহরিশ শান্ত ভংগিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে দেখে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
কিছুক্ষন হতে না হতেই সেহরিশের বাবা সেহরিশকে ডাক দিতেই সেহরিশ গম্ভীর মুখে রুম থেকে বেরিয়ে পরে।উপমা বাহিরের থেকে চোখ সরিয়ে রোকেয়ার দিকে তাকাতেই উনার চিন্তিত মুখশ্রী নজরে পরে।ভ্রু কিঞ্চিৎ কুচকে যায়।তার কিছুক্ষন পরেই সেহরিশের উচ্চ স্বরের কথার আওয়াজে উপমা কেপে উঠে।
কার সাথে এমন রাগারাগি করছে দেখার জন্য উপমা উঠে রুম থেকে বেরোতে নিতেই রোকেয়া হাত ধরে আটকে বসিয়ে চিন্তিত মুখেই বলে
‘বাহিরে যেও না মা।’
উনার কথায় আর গেলো না।উপমাকে নিয়ে সেহরিশের বাবা রেগে বুঝতে পেরে ভ্রু কুচকে গেলো,মুখে যেনো কালো মেঘ জমে গেলো তাৎক্ষনাৎ।আর সেহরিশ ওর জন্যই নিজের বাবার সাথে লড়ে পড়ছে তা দেখে খারাপও লাগলো।হঠাৎ সেহরিশ রুমে এসে উপমার হাত টেনে ধরতেই উপমা ঘবড়ে গিয়ে সেহরিশের দিকে তাকাতেই আঁতকে ওঠে। চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে আছে।দাতে দাত খিচে উপমাকে রুমের থেকে নিয়ে যেতে লাগলো।
পিছন থেকে শুধু রোকেয়ার চিন্তিত স্বর শোনা গেলো
‘সেহরিশ শান্ত হ বাবা।’
কিন্তু রোকেয়ার কথা সেহরিশ কানে নিলে তো।বাহিরে গিয়ে গাড়ির সামনে হাত ছেড়ে দারিয়ে রাগ সংবরণ করার চেষ্টায় কপালে হাত দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো।
উপমা ঢোক গিলে একজায়গায় দাঁড়িয়ে আছি নড়ছে চড়ছে না।যদি রাগ ওর উপর দিয়ে আবার ছাড়ে।
কপাল থেকে হাত সরিয়ে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে উপমার গালে স্পর্শ করতেই কেপে উঠে।সেহরিশের অতি শান্ত চাহনিতে উপমার বুক কেপে উঠলো।
প্রায় ৫মিনিটের মত এভাবে তাকিয়ে থেকে উপমার বাড়ির রাস্তায় হাটতে লাগলো। উপমা কিছুক্ষন স্থব্দ হয়ে দাড়িয়ে থেকে ধীর পায়ে সেহরিশের পিছে পিছে হাটতে লাগে।বুক যেনো এখনো ট্রেনের গতিতে ছুটছে। গালে যেনো এখনো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ লেগে আছে।
চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই। আর ঈদ মোবারক সবাইকে🥰❤)