#প্রেমোত্তাপ পর্বঃ ৩

#প্রেমোত্তাপ

পর্বঃ ৩

আকাশে আলো আঁধারের মিশেলে মুগ্ধ একটা রঙ সৃষ্টি করেছে কারণ- সময়টা ঠিক সন্ধ্যা। সন্ধ্যাবেলা টা একেক জনের কাছে একেক ভাবে পরিচিত৷ কেউবা সন্ধ্যাকে মন খারাপের সাথে তুলনা করে, কেউবা বলে সন্ধ্যা হলো মুক্ত অনুভব করানোর সময়, সারাদিন ব্যস্ততা শেষে এই সন্ধ্যাবেলা মানুষকে এক আকাশ সমান বিরতি দেয়, কারো কাছে প্রেমের গদ্য হলো সন্ধ্যা, আকাশে যেন প্রেমিকার মুখ ভাসে। কিন্তু চাঁদনীর কাছে সন্ধ্যা মানেই কেবল বিষন্নতা। এই সময়টা তাকে মনে করিয়ে দেয়, সে একজন মানুষকে ভালোবেসে খুব বাজে ভাবে ঠকেছে। যে মানুষটার সাথে তার ঘর করার কথা ছিলো, সে মানুষটার সাথেই ঘর করছে অন্য কেউ। যে মানুষটা তাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখিয়েছে, সে মানুষটাই আজ নিজের ঘরে অন্য একটা বউ নিয়ে সুখে মেতে আছে। যাকে ছাড়া চাঁদনীর চলবেই না ভেবেছিলো, তাকে ছাড়াই চাঁদনী বেঁচে আছে। অথচ এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না!

চারদিকে সন্ধ্যা ঘন হয়ে আসছে। চাঁদনীর বিশাল রুমটা অন্ধকারে ডুবে আছে ঠিক চাঁদনীর মতন। এক ফোঁটা আলো নেই। চাঁদনী বালিশে মুখ ডুবিয়ে শুয়ে আছে। অন্যান্য দিন সে এ সময়টা অফিসেই থাকে। একটা নামকরা প্রাইভেট অফিসেই উচ্চ পদে কর্মরত সে। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর পরই সে চাকরিতে জয়েন করে। ভালো ছাত্রী বিধায় চাকরির এই মূল্যবান বাজারে চাকরি পেতে অসুবিধা হয় নি। তাছাড়া বাবা চাচার নাম ডাকও ভূমিকা পালন করেছে বলা যায়। আজ চাঁদনিী অফিস যায় নি। তার মায়ের জন্য ই যেতে পারে নি বলা যায়। আজকে তাদের বাড়ি মেহমান আসবে। শাহাদাৎ এবং তার নতুন বধূ সহ তাদের পরিবারের সবাইকে সওদাগর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আজ। ব্যবসায়িক একটা ভালো সম্পর্ক আছে এই দুই পরিবারের ভিতরে, সেই সুবাদেই এই আয়োজন।

খুব বেশিক্ষণ চাঁদনীর শুয়ে থাকা হলো না। তার আগের তার মা রোজা সওদাগর ব্যস্ত পায়ে ছুটে এলেন মেয়ের ঘরে। পুরো ঘর আঁধার দেখে খানিকটা চেঁচিয়ে বললেন,
“কী ব্যাপার চাঁদ? তুই ঘরের লাইট জ্বালাস নি কেন?”

চাঁদনী উত্তর দিলো না। তা দেখে ভদ্র মহিলা আরেকটু বিরক্ত হলো। আঁধার হাতড়ে সুইচ বোর্ড খুঁজে বের করে পুরো ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিলেন। ঘর, ঘরের সাথে লাগোয়ক বারান্দা এমনকি বিছানার সাইটের ছোটো লাইট অব্দি জ্বালিয়ে দিলেন। এতক্ষণ অন্ধকারে ছিলো বিধায় হঠাৎ আলোটা চাঁদনীর চোখে গিয়ে বিঁধলো। সে বিরক্ত কণ্ঠে বললো,
“মা, জ্বালাচ্ছো কেন?”

“আমি জ্বালাচ্ছি? হ্যাঁ, আমি জ্বালাচ্ছি। তোরা আমার র ক্ত মাংস চিবিয়ে খাচ্ছিস না? তোদের সংসারে পরে আমার জীবনটা শেষ।”

“উফ্ মা, বিরক্ত করো না।”

মেয়ের মনের অবস্থা বুঝলেন না রোজা সওদাগর বরং কিছুটা চেঁচিয়েই বলে উঠলেন,
“তোরে কে বিরক্ত করছে? বিয়ের বয়সী একটা মেয়ে এখনো বাপের ঘাড়ে বসে আছে, কেউ কিছু বলে না তাই মাথা কিনে নিয়েছিস। আমি বলি তাই আমাকে সহ্য হয় না, তাই না।”

চাঁদনী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো মায়ের দিকে। গত কয়েকটা দিন যাবত হাসিখুশি মেয়েটা নেতিয়ে গিয়েছে, চোখের নিচে পড়েছে কালো প্রলেপ। হাঁটুর বয়সী মেয়েটা বুঝতে পারছে তার আপা ভালো নেই অথচ তার মা! তার মা কি সুন্দর আরও ভেঙে দিলো! বাবা-মা গুলো মাঝে মাঝে এতটা অবুঝ হয় কেন? তারা একটু সন্তানকে সঠিক সময় বুঝলে খুব কী ক্ষতি হয়ে যেতো? চাঁদনী খুব শক্তপোক্ত মেয়ে কিন্তু তার মায়ের আচরণ তাকে ভেতর থেকে ভেঙে দিয়েছে। মুহূর্তেই তার শুকনো চৌচির হয়ে থাক চোখ গুলো অশ্রুতে টলমল করে উঠলো। অথচ রোজা সওদাগর নিজের মতন কথা শুনিয়ে যাচ্ছেন আর পড়ার টেবিল টা গোছাচ্ছেন। মায়ের এত হৈচৈ, চিৎকার চেঁচামেচির মাঝেই চাঁদনী কোমল, অসহায় কণ্ঠে বললো,
“আমি কী তোমাদের বোঝা হয়ে গেছি, আম্মু? আমাকে কী আর বয়ে বেড়ানো যাচ্ছে না?”

রোজা সওদাগর থেমে গেলেন। আড়চোখে তাকালেন মেয়ের দিকে। মায়ের কঠিন মন বোধহয় কিছুটা নরম হলো। সে আর চেঁচামেচি করলেন না তবে ধীর কণ্ঠে বললেন,
“আমাদের তুই ই একটা সন্তান। আমাদের কী ইচ্ছে করে না তোকে বিয়ে দিবো, তোর সংসার দেখবো। তোর সুখ দেখবো।”

“বিয়ে করলেই সবাই সুখী হয় আম্মু? কই, ছোটোমা তো বিয়ে করলো চাচ্চুকে, তাকে তো সুখী হতে দেখলাম না।”

“চাঁদ, মুখ সামলে কথা বল। বে য়া দব হয়ে যাচ্ছিস দিন দিন।”

চাঁদনী হাসলো কিন্তু উত্তর দিলো না। রোজা সওদাগর বাহিরে যেতে যেতে তাড়া দিয়ে বললেন,
“এসব জামাকাপড় বদলে শাড়ি পড়। মেহমান আসবে, সেখানে একটা মানানসই পোশাক দরকার। তোর বয়সী ছেলে বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছে। আর তুই ঘরে পড়ে পড়ে কেবল বেয়াদবী করে যা। আর কী করবি।”

কথা শেষ করেই রোজা সওদাগর আবার চঞ্চল পায়ে চলে গেলেন। চাঁদনী তার মায়ের যাওয়ার পানে নিঃশব্দে তাকিয়ে রইলো। মুখে ফুটে আছে চরম তাচ্ছিল্যের হাসি। ভিতর থেকে অন্তর আত্মা হয়তো চিৎকার দিয়ে বলছে,
“আমায় একটু বুঝলে না কেন, আম্মু। আমায় একটু বাঁচতে দিচ্ছো না কেন। আমার যে বাঁচতে ইচ্ছে করছে, আমায় সাহায্য করো তোমরা। আর ভেঙে দিও না।”

কিন্তু মেয়ের আর্তনাদ মা অব্দি পৌঁছালো না। হয়তো ‘কুড়িতে বুড়ি’ প্রবাদ বাক্য বিশ্বাস করা সমাজ কুড়ির পর আর মেয়েদের মন বলতে কিছু থাকে তা ভুলে যায়। মেয়ে তখন অযত্নের এক শোপিস হয়ে ঘরের কোণায় পড়ে থাকে। যে শোপিসের কোনো দরকার নেই অথচ বাবা-মা দয়া করে পালেন।

_

চিত্রা আর বনফুল চিত্রার রুমে বসে আছে। বাহিরে তখন অতিথি গমগম করছে। চিত্রা তার প্রিয় বান্ধবী ছাড়া বাড়ির একটা অনুষ্ঠানেও থাকে না। বনফুলকে তার চাই ই চাই। অন্যান্য দিন হলে চিত্রার মনে উচ্ছ্বাস থাকতো। মেহমান এসেছে আর পড়া লাগবে না, সে ভেবে খুশি থাকতো কিন্তু আজ ব্যাপারটা উল্টো। আজ তার মেহমানের সামনে যেতে মন চাচ্ছে না। শাহাদাৎ লোকটাকে তার দু-চোখে সহ্য হচ্ছে না। এত বিরক্তিকর মানুষ তার জীবনে আর একটাও দেখে নি সে।

অন্যদিকে বনফুল মেয়েটা আজ চঞ্চল পায়ে এধার ওধার হাঁটাহাঁটি করছে। মেয়েটা চিত্রার মতন তত চঞ্চল না। কিছুটা সহজ সরল আর বোকা বোকা ধরণের। শরীরের রঙটা একটু চাপা, রোগা-সোগা শরীর, কোঁকড়া চুল কিছুটা ভাইয়ের মতনই। কিন্তু বাহার ভাই আর বনফুলের চেহারায় কোনো মিল নেই, এমনকি বাহার ভাইয়ের সাথে তার মায়ের চেহারারও মিল নেই না আচরণের মিল আছে, একদম বিপরীত ধর্মী সে। সে রাগী, গম্ভীর অথচ বনফুল কখনো রাগ করে না, অভিমান করে না। চিত্রাই যেন তার সর্বেসর্বা। কিন্তু আজ মেয়েটা একটু উত্তেজিত, কিছু একটা কারণে প্রচন্ড উতলা হয়ে আছে। চিত্রা হয়তো জানে সে কারণ। তাই তো মিটমিটিয়ে হাসছে।

বনফুল বোকা বোকা চোখে তাকালো চিত্রার দিকে। কপাল কুঁচকে বললো,
“কিরে চিতাবাঘ, হাসছিন কেন?”

চিত্রা গলা পরিষ্কার করার মতন শব্দ করলো। কিছুটা গম্ভীর গম্ভীর ভাব ধরে বললো,
“বনফুল, একটা কাজ করে দিবি আমার?”

“কি কাজ বল, আমি এখনই করে দিবো। ঘর ঝাড়ু দিবো?”

বনফুলের কথায় চিত্রা নিজেই নিজের কপালে চাপড় মারলো। দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
“ধরে থাব্রা দিবো তোরে। ঘরের কাজ করতে আসিস নাকি এখানে। তোর কাজ হলো তুহিন ভাইয়ের ঘরে যাওয়া।”

তুহিন নামটা শুনতেই বনফুলের কোমল চিত্ত চঞ্চল হয়ে গেলো। হৃদপিণ্ড আকস্মিক তার কম্পন বাড়িয়ে দিলো। মেয়েটার কাঁপা কাঁপিও শুরু হলো। আমতা-আমতা করে বললো,
“কেন, কেন?”

“ভাইয়া মাত্র অফিস থেকে এসেছে হয়তো, গিয়ে বলবি আমার ঘরে আসতে। আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিবো। যা।”

বনফুল ভীতু ভীতু কণ্ঠে বললো, “তুই, তুই যা চিতাবাঘ। আমি যাবো না।”

“কী? তুই এই আমাকে ভালোবাসিস? এত ছোটো একটা কাজও করে দিতে পারবি না?”

বোকা মেয়েটা চিত্রার কৌশল বুঝলো না। বান্ধবী কষ্ট পেয়েছে ভেবে সে তৎক্ষনাৎ বললো,
“রাগ করিস না চিতাবাঘ। আমি যাচ্ছি এক্ষুনি। তবুও তুই রাগিস না।”

“হু, যা।”

চিত্রা খুব কষ্টে নিজের হাসি চেপেই গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিলো। বনফুলও ছুটে গেলো সাথে সাথে। বনফুল বেরিয়ে যেতেই চিত্রা হেসে উঠলো। মেয়েটা যে কেন এত ভয় পায় তার ভাইকে সে বুঝে উঠে না। আবার এই ভাইয়ের জন্য ই রাত সাতটা বাজে জানালার সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। কখন তুহিন নামক লোকটা আসবে আর বনফুল তা দেখে চোখ জুড়াবে।

চিত্রার ভাবনার মাঝেই হৈ হৈ করে ঘরে প্রবেশ করলো মৃন্ময়, তার পিছে পিছে চাঁদনী ও অহিও হাজির হলো। চিত্রা হা হয়ে মৃন্ময়ের দিকে তাকাতেই ছেলেটা মিষ্টি হাসি দিলো। মিষ্টি করে বললো,
“ওহে প্রিয় চিতই পিঠা, তোমারে না দেখিতে পাইয়া মোর মন আনচান আনচান করছিলো। তাই তোমার বোনদের সহিত চলে এলাম তোমাকে দেখতে।”

চিত্রাও মৃন্ময়ের মতন ভঙ্গিমা করে বললো,
“ওহে আমার মৃগী রোগী ওরফে মৃন্ময় ভাইয়া, তোমায় দেখিয়া মোর হৃদয় ছলাৎ করিয়া উঠিলো।”

দু’জনই দু’জনের অদ্ভুত কথা বলে হেসে উঠলো। চাঁদনীও কিঞ্চিৎ হাসলো। কেবল মুখ গোমড়া করে চিত্রার পড়ার টেবিলের সাথে থাকা চেয়ারে এসে বসলো অহি৷ কিছুটা বিরক্ত কণ্ঠে বললো,
“এই মৃন্ময় ভাইয়া টা আমারে একটু পড়তে দিলো না। চেরি কে দিয়ে এমন তাড়া পাঠালো, আমি তো ভাবলাম কি না কি যেন বলবে।”

“বিদ্যাসাগরের জুতা, অহি বেগম, এত পড়ে আপনি কী বিদ্যাড্রেন হতে চান?”

মৃন্ময়ের কথায় হেসে দিলো চিত্রা ও চাঁদনী। অহি মুখ ফুলিয়ে ফেললো তা দেখে। চিত্রা এবার চাঁদনী আপার দিকে তাকালো, মানুষটা কী সুন্দর সাদা শাড়ি পড়েছে! কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করা ছাড়াও মেয়েটা কী সুন্দর চাঁদের ন্যায় জ্বলজ্বল করছে। অথচ এমন একটা মেয়েকেই ফিরিয়ে দিয়েছে কোনো পুরুষ! কী বোকা সে!

তন্মধ্যেই তাদের ঘরে উপস্থিত হলো শাহাদাৎ এবং তার নতুন বউ। রোজা সওদাগরই নিয়ে এসেছেন তাদের। এসেই ধমকে সবার উদ্দেশ্যে বললেন,
“ওরা ওখানে একা বসে আছে আর তোরা আড্ডা দিচ্ছিস। ওদের ডাকবি না।”

অতঃপর শাহাদাৎ এর দিকে তাকিয়ে গদোগদো কণ্ঠে বললো,
“বাবা, আম্মু তোমরা বসো এখানে। ওদের সাথে আড্ডা দেও। আমি শরবত পাঠাচ্ছি।”

মহিলা আবার ব্যস্ত পায়ে চলে গেলো সেখান থেকে। চাঁদনী ছোটো একটা হতাশার শ্বাস ফেললো। তার মা না জেনেই তার ভেতর কেমন ক্ষত করে ফেলছে!

মৃন্ময় ছুটে গেলো নতুন বউয়ের দিকে। উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বললো,
“এটা আমাদের ঘরের বউ। কিউট না? ও নিলা, সবে এসএসসি দিয়েছে। আমার অনেক ছোটো অবশ্য। তবে বেশ আদুরে তাই না?”

অহি মাথা দুলালো কিন্তু চিত্রা দাঁড়িয়ে রইলো শক্ত মুখে। চাঁদনী খাটে বসে ছিলো, মিষ্টি হেসে মৃন্ময়ের উত্তরে বললো,
“হ্যাঁ ভীষণ সুন্দর। নাহয় আমিও তো বলি, তোমার ভাই এমন পাগল হলো কেন। বিদেশ থেকে এসে এক সপ্তাহেই বিয়ে করে নিলো। অল্প বয়সী পুতুল বউ।”

চাঁদনীর কথায় শাহাদাৎ মাথা নিচু করে রাখলেও নিলা মেয়েটা সুন্দর এক হাসি উপহার দিলো। মৃন্ময় মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো,
“ভাইয়ার ছোটো বউ ভাল্লাগে আর আমার সিনিয়র বউ। কেমন একটা এডভেঞ্চার ভাব থাকে।”

“তোমার কপালে বউ জুটলে তো!”

কথাটা বলেই চিত্রা ভেংচি কাটলো। চাঁদনী সে দিকে ধ্যান না দিয়ে তাকিয়ে রইলো নিলার দিকে। অল্প বয়সী একটা মেয়ে। সদ্য ফোটা পুষ্পের ন্যায়। সেজন্যই তো প্রেমিক পুরুষ পথ ভুলেছে, প্রেম ভুলেছে সাথে ভুলেছে প্রেমিকা। চাঁদনীর সাথে শাহাদাৎ এর যখন প্রেম শুরু হয় তখন চাঁদনীও সদ্য যুবতী। নিলার চেয়েও বোধহয় সুন্দর তার রূপ। শাহাদাৎ এর সাথে এক ক্লাসে পড়তো। শাহাদাৎ মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতো। এরপর সেই মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকা ছেলেটার প্রেমে যে সে পড়লো, দুনিয়ার আর কোনো ছেলেকে আর ভালো ই লাগলো না। অথচ সেই রূপ আজ কিছুটা চাপা পড়েছে, তাই প্রেমিকের প্রেমও হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। কিন্তু বয়সের এই সরল নামতা যেই প্রেমিকের জন্য পাড় করলো, সেই প্রেমিকই আজ বয়সের দোহাই দিয়ে ছেড়ে গেছে। আহা প্রেমিক, আহা জীবন!

চাঁদনীর ভাবনা ভাঙলো মৃন্ময় আর চিত্রার তুমুল ঝগড়ায়। এটা নতুন কিছু না। ছেলেটা সবার সাথেই এমন লেগে থাকে। চাঁদনী বসা থেকে উঠে এসে নিলার হাত ধরলো, মিষ্টি হেসে বললো,
“এসে নিলা, বসবে এসো।”

“এ মা, না না আপু, আপনি বসুন। এটা আপনার স্থান তো।”

“সব জায়গা কী সবসময় সবার থাকে? কখনো কখনো কিছু জায়গা ছেড়ে দিতে হয় নতুনদের জন্য।”

নিলার কথার বিপরীতে বাহার তার গম্ভীর কণ্ঠে কথাটা বলতে বলতেই ঘরে প্রবেশ করলো।

_

সওদাগর বাড়ির সবচেয়ে দক্ষিণ দিকের রুমটায় নীল রঙের নিভু নিভু একটা বাতি জ্বলছে। লো ভলিউমে রবীন্দ্র সংগীত ‘আমারও পরানে যাহা চায়’ বাজছে। ফ্যানের নিঃশব্দ বাতাসে উড়ছে ঘরের পর্দা গুলো। বাথরুম থেকে ভেসে আসছে পানির শব্দ। আর ঘরে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে বনফুল। এটা বাড়ির বড়ো ছেলে তুহিনের রুম। সবচেয়ে ভদ্র ছেলে সে। অথচ তাকে দেখলেই বুক কাঁপে বনফুলের। কেন কাঁপে সে জানেনা। হৃদপিণ্ড টা তার কম্পন বাড়িয়ে দেয়। মনে হয় এই বুঝি শ্বাস বন্ধ হয়ে এলো। এ কেমন মরণ মরণ অসুখ! তবে বনফুল এই মরণ মরণ অসুখটা ভালোবাসে। লোকটা যে তার ভীষণ প্রিয়!

বনফুলের ভাবনার মাঝে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো তুহিন। ভিজে শরীরে সাদা একটা পাঞ্জাবি পড়া। লাল হয়ে আছে নাকটা। মাথা থেকে শিশির বিন্দুর ন্যায় জলের ফোঁটা পড়ছে।

বনফুলকে নিজের ঘরে দেখে হাসলো তুহিন। মিষ্টি কণ্ঠে শুধালো,
“আরে বনফুল যে! তা এ ঘরে যে? কোনো দরকার?”

মেয়েটা মাথা তুলে তাকালো না। মেঝেতে দৃষ্টি রেখেই বললো,
“তোমাকে চিতাবাঘ ডাকছে। সবাই একসাথে আড্ডা দিবে।”

“ও তাই নাকি! আচ্ছা যাচ্ছি। তা তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?”

“ভা, ভালো ভাইয়া।”

বনফুলের কথায় হাসলো তুহিন। ঠাট্টা করে বললো, “হ্যাঁ আমি তো ভালো জানি, পড়াশোনাটা কেমন চলছে!”

বনফুল অস্বস্তিতে আরেকটু মাথা নত করলো। তা দেখে তুহিন হো হো করে হেসে উঠলো। লোকটা হাসলে কতো সুন্দর লাগে! কিন্তু এই মুগ্ধতা বেশিক্ষণ টিকলো না। চিত্রার রুম থেকে কেমন ধমক ভেসে এলো। বনফুল আর তুহিন দু’জন দু’জনের দিকে তাকিয়ে দ্রুত ছুটে গেলো চিত্রার রুমের দিকে। চিত্রার রুমের দরজায় গিয়ে তুহিনের চক্ষু চড়কগাছ। চিত্রা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার সামনে দেয়াল হিসেবে বাহার দাঁড়িয়ে আছে।

#চলবে

মম সাহা

[২০০০ শব্দ। ধরা যায় দু পর্বের সমান।]

ছবিয়ালঃ রুবাইয়া😘

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here