#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ #পর্বঃ১৮ #লেখিকাঃদিশা_মনি

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

সকাল হতেই ঘুম থেকে উঠে পড়লো ইভানা। সূর্য মামা নতুন দিনের আগমনের বার্তা দিচ্ছে যে। ইভানার আজকে কলেজে যাওয়ার কথা৷ তাই সে ভীষণ খুশি। কলেজে গেলে কত আনন্দ, কত মজা হবে। নতুন নতুন বন্ধু-বান্ধব হবে। এসব ভাবতে ভাবতে ওয়াশরুমে চলে যায় ইভানা। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বের হয়।

ফাহিম ততক্ষণে সকালের নাস্তা ছেড়ে রুমে চলে এসেছিল। ইভানাকে দেখে বলে,
‘তুমি উঠে পড়েছো। ঠিক আছে, যাও নাস্তা করে নাও। তারপর আমি তোমাকে কলেজে নিয়ে যাবো।’

ইভানা খুশি মনে নিচে চলে আসে নাস্তা করতে। খাবার টেবিলে তখন ফারজানা বেগম ও ফারহান বসেছিল৷ তারাও নাস্তা করছিল। ইভানাকে দেখেই ফারহানের চোখমুখে রাগ ভেসে ওঠে। ফারজানা বেগমও মুখ ভাড় করে নেন।

ইভানা খাবার টেবিলে বসতেই ফারজানা বেগম বলে ওঠেন,
‘চলে আইছেন মহারাণী। এতক্ষণে তোমার ওঠার সময় হইল!’

ইভানা ফারজানা বেগমের এমন ব্যবহার দেখে অবাক হয় ভীষণ। তাকে বড্ড অচেনা লাগছিল। ইভানা মন খারাপ করে নিজের খাবার নিজে বেড়ে নেয়। ইভানা খেতে শুরু করতেই ফারজানা বেগম বলেন,
‘তোমায় আমি পছন্দ করছিলাম কারণ আমি ভাবছিলাম তুমি যেহেতু পড়াশোনায় ভালা না, তাই বিয়ার পর বাড়ির সব কাম করবা। বাড়ির বউ বাড়ির কাম করবো এটাই তো নিয়ম। কিন্তু এহন দেখছি তুমি ডেং ডেং কইরা নাচতে নাচতে কলেজ যাচ্ছো। এটা আমি মাইনতে পারছি না।’

‘মানতে না চাইলেও মেনে নিতে হবে আম্মু। কারণ ইভানা আমার স্ত্রী। আমি যখন ওকে পড়াতে চাই, তখন তোমার আপত্তির কোন মানে নেই।’

ফাহিম কথাটা বলে ইভানার পাশে এসে দাড়ায়। ফারহান রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
‘এসব কেমন কথা ফাহিম? মায়ের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে।’
‘বাব্বাহ, তোমার মাতৃভক্তি হঠাৎ কোথা থেকে উদয় হলো? বিয়ের দিন তো ঠিকই মায়ের কথা অগ্রাহ্য করে উঠে গিয়েছিলে। আজ আবার মাতৃভক্তি উতলে উঠছে।’

‘ঠিক করে কথা বল, আমি বড় ভাই হই তোর।’

‘বড় ভাই জন্য এখনো তোমাকে সম্মান করি। আশা করি তুমি এই সম্মানের মর্যাদা রাখবে।’

ফারহান আর কিছু বলে না। কিন্তু অপমানে তার গলা দিয়ে খাবার নামছিল না৷ ইভানা এরমধ্যে খাবার শেষ করে নেয়। ফাহিম ইভানাকে বলে,
‘চলো, এখন তাহলে যাওয়া যাক।’

ইভানা উঠে দাড়ায় এবং ফাহিমের সাথে চলে যায়। তারা যেতেই ফারহান ফারজানা বেগমকে বলে,
‘দেখলে তো মা ফাহিম বউ পেয়ে আমাদের সাথে কেমন ব্যবহার করছে।’

‘হুম সব দেখতাছি। কোন রোগের কি ওষুধ হেইডা আমার ভালোই জানা আছে। ঐ ইভানারে কেমনে বসে আনতে হয় হেডি আমি দেখমু।’

৩৫.
ইভানাকে কলেজের সামনে নামিয়ে দেয় ফাহিম। অতঃপর ইভানার হাত শক্ত করে ধরে বলে,
‘চলো আমার সাথে।’

ইভানা ফাহিমের বাড়িয়ে দেওয়া ভরসার হাত খুব সন্তপর্ণে ধরে। ফাহিমের হাতটা ধরে বেশ ভরসা লাগছে তার। দ্রুত ফাহিমের সাথে ভেতরে যায় ইভানা। ভেতরে গিয়ে দুজনে প্রথমে প্রিন্সিপালের রুমে যায়। প্রিন্সিপালের সাথে ইভানার এডমিশনের ব্যাপারে কথা বলে ফাহিম।

প্রিন্সিপাল ইভানার রেজাল্ট দেখে বলে,
‘সবকিছু তো ঠিকই আছে কিন্তু তোমার ওয়াইফের রেজাল্ট তো বেশি ভালো না ফাহিম। তুমি আমার ভাইয়ের বন্ধু হতে পারো কিন্তু আমাদের কলেজেরও তো একটা প্রেস্টিজ আছে। ও মেট্রিক পরীক্ষায় প্রথমবার ফেল করে দ্বিতীয় বার পাস করেছে। এই রকম একজন স্টুডেন্ট ইন্টারে যদি ভালো রেজাল্ট না করে তাহলে তো আমাদের কলেজেরই দূর্নাম হবে।’

ফাহিম কাতর কন্ঠে বললো,
‘প্লিজ, একবার সুযোগ দিয়েই দেখুন না ভাইয়া। আমি অনেক আশা নিয়ে এখানে এসেছি। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি ইভানা অনেক ভালো রেজাল্ট করবে।’

‘আচ্ছা, ভেবে দেখবো। তবে,,,’

প্রিন্সিপালের কথা মানে বুঝতে পারে ফাহিম। তাই ইভানাকে বলে,
‘ইভানা তুমি এখানে আর কতক্ষণ বসে থাকবে? যাও কলেজটা একটু ঘুরে দেখো। আফটার অল এখানেই তো তোমাকে পড়তে হবে। আমি স্যারের সাথে কথা বলে নেবো।’

ইভানা উঠে দাড়ায়। তারপর প্রিন্সিপালের রুম থেকে বের হয়ে এসে কলেজটা ঘুরে দেখতে থাকে।

ফাহিম প্রিন্সিপালকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘বেসরকারি কলেজে কিভাবে এডমিশন নিতে হয়, সেটা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে ভাইয়া। আপনার ভাইও আমাকে এই ব্যাপারে বলেছে। তো বলুন কত টাকা দিতে হবে?’

‘বেশি না। এমনিতে ৫০ হাজার লাগে, কিন্তু যেহেতু তুমি আমার ভাইয়ের বন্ধু য়াই ৪০ হাজার টাকা দিলেই এডমিশন হয়ে যাবে।’

ফাহিম বাকা হেসে বলে,
‘ঠিক আছে। টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আপনি বাকিটুকু সামলে নিন।’

বলেই ফাহিম বাইরে বের হয়ে আসে। ইভানা ঘুরতে ঘুরতে কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে। তখন ফাহিমের সাথে তার দেখা হয়ে যায়। ইভানাকে দেখে ফাহিম বলে,
‘তুমি মন দিয়ে পড়ালেখা শুরু করো। তোমার এডমিশন হয়ে গেছে।’

কথাটা শুনে একটুও খুশি দেখায় না ইভানাকে। ফাহিম ইভানার চুপসে থাকা মুখ দেখে বলে,
‘তুমি খুশি হও নি?’

ইভানা বলল,
‘না। কারণ আমি জানি আমার মতো ছাত্রী এত ভালো একটা কলেজে এমনি এমনি চান্স পাবে না। নিশ্চয়ই আপনি টাকা দিয়ে আমাকে ভর্তি করিয়েছেন তাই না?’

ফাহিম উত্তরে কি বলবে বুঝে পায় না। তবুও কিছুটা সময় নিয়ে বলে,
‘তুমি এসব নিয়ে ভেবো না। ভালো করে পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট করো।’

ইভানা কিছু বলল না। শুধু দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। এটা তার কাছে নতুন কিছু নেই। ছোট থেকেই সে এটা দেখে আসছে যে তার বাবা টাকা দিয়ে নামী দামি স্কুলে তাকে ভর্তি করাচ্ছে। এজন্যই তো সে পড়াশোনায় উদাসীন ছিল৷ আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এতটা নিম্নপর্যায়ে চলে গেছে যে এখানে ব্যবসা শুরু হয়ে গেছে!

৩৬.
ইভানা বাড়ি ফিরতেই ফারজানা বেগম তার ঘরে এসে বললেন,
‘বিয়া কইরা সারাদিন শুয়া বইসা থাকইলে চলবো না। নতুন বউ আমাগো রান্না কইরা খাওয়াবা না?।’

ইভানা যদিও অনেক ক্লান্ত ছিল কিন্তু তবুও বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়। ফারজানা বেগমের সাথে রান্নাঘরে চলে আসে। এসে বলে,
‘কি করবো আমি?’

‘এই নাও পেয়াজ। এগুলা কা’টো।’

ইভানা মাথা নাড়ায়। কিন্তু সে পেয়াজ কা’টতেই পারছিল না। পরে বাধ্য হয়ে তাদের বাড়ির কাজের লোক রহিমা এসে পেয়াজ কা’টেম ইভানার চোখের জলে নাকের জলে অবস্থা। ফারজানা বেগম কপাল চাপড়ে বলেন,
‘কোন কা’ম তোমার দ্বারা হইবো না। যাও ঘরে গিয়া পড়ো। হেইডাও তো পারো না। করছো তো ফেল।’

ইভানা কাদতে কাদতে নিজের রুমে যায়। ফারজানা বেগম বলেন,
‘যতসব ঢং। আমি ভাবছিলাম এই মাইয়া বিয়ার পর ভালো বউ হইবো, তা না ডেংডেং করে কলেজ যায়।’


ইভানা ঘরে এসে বসে তোহার বলা কথাই ভাবছিলো। বিয়ের আগে তোহা বলেছিল, সংসার করতে গেলে মনে হবে পড়াশোনাই এর থেকে ভালো। আজ ইভানার সত্যি তাই মনে হচ্ছে। যদি সে মন দিয়ে পড়াশোনা করত তাহলে হয়তো এত কিছু সহ্য করতে হতো না।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here