#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ #পর্বঃ৭ #লেখিকাঃদিশা_মনি

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ফারহান বিয়ে করবে না এই কথাটা শুনে ইভানার বাবা তারিকুল ইসলাম বলে উঠলেন,
‘এটা তুমি কি বলছ? সবকিছু ঠিক হয়ে আছে। আমাদের কত আত্মীয় স্বজন এসেছে, এমন অবস্থায় তুমি বিয়েটা না করলে কেমন হয়!’

ফারজানা বেগমও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। তিনি ফারহানের কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। তিনি ফারহানের কাছে এসে শক্ত গলায় বললেন,
‘এটা তুই কি বলতাছিস ফারহান? বিয়া করবি না মানে?’

‘আম্মু এই নিয়ে আমি আর কোন কথা শুনব না।’

হাশেম আলী প্রচণ্ড রেগে গেছেন। একেই এই বিয়ে থেকে শুরু থেকেই তার অমত ছিল। এখন বিয়ের আসরে যেসব কাহিনি ঘটে যাচ্ছে তাতে তার ধৈর্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে। হাশেম আলী আর থাকতে না পেরে বলে উঠলেন,
‘আমার নাতনীর এত বড় অপমান আমি সহ্য করবো না৷ এই ছেলের সাথে কোনভাবেই আর আমার নাতনীর বিয়ে দেবো না।’

পরিস্থিতি ভীষণ ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছিল। ইভানাও বুঝতে পারছিল না ঠিক কি হতে চলেছে। সে উঠে সামনের দিকে পা বাড়াতেই তোহা তাকে আটকে বললো,
‘তুই এখানেই থাক ইভানা। বড়রা ওখানে আছে তারা সবকিছু সামলে নেবে।’

‘কিন্তু আপাই উনি কি বলছেন এসব? আমায় বিয়ে করবেন না মানে?’

রিয়া তাচ্ছিল্য করে বলে,
‘এমন ন্যাকার মতো কথা বলছিস কেন ইভানা? বুঝতে পারছিস না কি হয়েছে? তোর বিয়েটা বানচাল হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এটা হওয়ারই ছিল৷ তোর মতো মেট্রিক ফেল মেয়েকে তো আর একটা ম্যাজিস্ট্রেট বিয়ে করবে না কখনো।’

তোহা রিয়ায় কথার জবাবে বলে,
‘তুই এসব নিয়ে কথা বলিস না রিয়া। তোর স্বভাব কি আমি খুব ভালো করেই জানি। তুই তো আমাদেরকে হিংসা করিস।’

রিয়া নাকিসুরে বলে,
‘এখন তো আমি খারাপ হবোই। তোমরা এত বড়লোক, আমি তো তোমাদের মতো নই। তাই তোমরা সবসময় আমাকে অপমান করো।’

কথাটা বলে সে দূরে সরে আসে। ইভানাও আর দাড়িয়ে থাকতে পারে না। সে দৌড়ে চলে আসে সামনে। তোহা তাকে আটকানোর বৃথা চেষ্টা করে। তোহা মাথায় হাত দিয়ে বলে,
‘না জানি এই সমস্যার সমাধান আদৌ হবে নাকি সবকিছু আরো ঘোলাটে হয়ে যাবে।’

১৩.
ইভানা ফারহানের সামনে এসে উপস্থিত হয়। অতঃপর তার সামনে মিনতির স্বরে বলে,
‘প্লিজ আপনি বিয়েটা করে নিন। আপনি তো অনেক শিক্ষিত, তাই এটা খুব ভালো করেই জানেন যে এই সমাজ ব্যবস্থা মেয়েদের জন্য কতো কঠিন। আজ যদি আপনি বিয়ে না করে এখান থেকে চলে যান তাহলে হয়তো আপনার কিছু হবে না। কিন্তু একজন মেয়ে হিসেবে আমাকে অনেক কথাই শুনতে হবে। লোকে আমার দিকে আঙুল তুলবে। একেই মেট্রিক পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্টের জন্য অনেক তিরস্কার আর অপমান সহ্য করেছি। এখন আর নতুন করে এত অপমান মানতে পারবো না।’

ফারহান ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
‘সেটা আমার দেখার বিষয় না। তোমার কথা ভেবে আমি নিজের সম্মান নষ্ট করতে পারবো না। সবাই কি বলছে জানো? আমি নাকি তোমার সাথে কোন আ’কাম করতে গিয়ে ধরা পড়েছি জন্য বাধ্য হয়ে তোমায় বিয়ে করছি। ভাবতে পারছো এতে আমার মান-মর্যাদার কি পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে।’

ইভানার চোখে জল চলে আসে। সে নিজের স্বপক্ষে কিছু বলতে যাবে কিন্তু তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফারহান হনহন করে চলে যেতে থাকে। তারিকুল ইসলাম, ফারজানা বেগম সহ আরো অনেকে তাকে আটকানোর অনেক চেষ্টা করে কিন্তু ফারহান কারো কথায় কর্ণপাত করে না।

ফাহিমের মতো কঠিন প্রকৃতির একটা ছেলেও এই মুহুর্তে দোটানায় ভুগছিল। একবার তার মনে হচ্ছে তার ভাই যা করছে সেটা ঠিক, কারণ সম্মানটাই সবার আগে। আজ বিয়েটা করলে তার ভাইকে আরো অনেক কথা শুনতে হবে।

আবার তার এটাও মনে হচ্ছে মেয়েটাকেও তো অনেক ভুগতে হবে। কারণ এই সমাজে মেয়েদের অবস্থান কেমন সেটা ফাহিম অনেক ভালো করেই জানে। সমাজ সবসময় মেয়েদের দিকেই আঙুল তোলে। এসব ভেবে ফাহিম ভাবলো তার ভাইকে আটকানো উচিৎ। তাই সে ফারহানের পিছু পিছু গিয়ে বললো,
‘ভাইয়া শোন আমার কথা। যাসনা প্লিজ। বিয়েটা করে নে।’

‘তুই এই কথা বলছিস? ফাহিম তুই তো আমায় বলেছিলি যে এই বিয়েটা যেন আমি না করি। আমার বিয়ে নিতে তো সবথেকে বেশি আপত্তি তোর ছিল। আর এখন তুই আমাকে বিয়ের কথা বলছিস।’

‘হ্যা ভাইয়া বলছি। কারণ যখন আমি বিয়েটা করতে মানা করেছিলাম তখন শুধু বিয়ের কথাবার্তা চলছিল৷ সেই সময় বিয়েটা বাতিল হয়ে গেলে কোন সমস্যা হতো না। কিন্তু তখন তো তুই মায়ের বাধ্য সন্তানের মতো বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছিলি। তাহলে এখন কেন এমন করছিস?’

‘আমি তো কারণটা খুব স্পষ্ট করেই বলেছি। এত অপমান আমি সহ্য করতে পারবো না।’

‘ভাইয়া আমি তোকে আগেই এই ব্যাপারে সতর্ক করেছিলাম। সেইসময় তো তুই আমার কথা শুনলি না। আম্মুকেও কতো বোঝালাম। কিন্তু তুই বা আম্মু কেউ আমার কথা শুনলি না।আমি আগে থেকেই জানতাম এমন কিছুই ঘটবে৷ তাই বিয়ের কথাবার্তা ফাইনাল হওয়ার আগেই আমি বলেছিলাম বিয়েটা না করতে। বাট, এখন যদি তুই বিয়েটা না করিস তাই ঐ মেয়েটাকে কত কথা শুনতে হবে জানিস? আজ মেয়েটার যদি ভালোমন্দ কিছু হয়ে যায় তার দায়ভার কিন্তু তোর এবং আম্মুর হবে।’

‘আমি এত কথা শুনতে চাই না। আমার পথ থেকে সরে দাড়া। ‘

বলেই ফাহিমকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো ফারহান।

১৪.
ফারহান বাইরে চলে আসতেই তার পেছন পেছন রিয়াও চলে আসে। রিয়া ফারহানকে পেছন থেকে ডাক দিয়ে বলে,
‘একটু দাড়ান আপনার সাথে আমার কথা আছে।’

ফারহান পিছনে তাকিয়ে বিরক্তির সাথে বলে ওঠে,
‘কি বলবেন আপনি? বিয়ে করার জন্য জোর করতে এসেছেন নিশ্চয়ই?’

‘আপনি ভুল ভাবছেন। আমি ঐ ইভানার কাজিন হতে পারি, কিন্তু শুভাকাঙ্ক্ষী নই। কারণ ওর স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে আমার খুব ভালোই জানা আছে। ও খুবই স্বার্থপর আর খারাপ একটা মেয়ে। দাড়ান আপনাকে একটা ভিডিও দেখাচ্ছি।’

বলেই রিয়া সেদিন রেকর্ড করা ভিডিওটি দেখায় ফারহানকে। যেখানে ইভানা বলেছিল, সে প্রতিশোধ নিতে চায় ফারহানের থেকে। ভিডিওটি দেখে ফারহানের রাগ আরো বেড়ে যায়। রিয়া ফারহানের মুখের দিকে তাকিয়ে তার অন্তরের কথা উপলব্ধি করতে পেরে বলে,
‘দেখলেন তো ইভানা কিরকম মেয়ে। আমার তো মনে হয় বিয়েবাড়িতে এই সমস্ত কথা ইভানাই ছড়িয়ে দিয়েছে যাতে আপনার মান-সম্মান নষ্ট করে আপনার উপর প্রতিশোধ নিতে পারে।’

ফারহান হাতের মুঠো শক্ত করে নেয়৷ অতঃপর রিয়ার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার জন্যই আমি বুঝতে পারলাম ইভানা মেয়েটা কেমন। এখন তো কোন মতেই আমি বিয়েটা করবো না।’

বলেই ফারহান হনহন করে চলে যায়।ফারহান চলে যাওয়ার পর রিয়া কুটিল হেসে বলে,
‘ব্যস, যদিওবা কোনরকমে তোর হবু বরকে মানিয়ে নিয়ে আসার রাস্তা ছিল কিন্তু সেই রাস্তাও আমি বন্ধ করে দিলাম ইভানা।’

ইতিমধ্যেই অনেকে ফারহানকে আটকানোর জন্য ছুটে আসে। কিন্তু রিয়ার ভিডিওটা দেখার পর ফারহান আরো বেশি রেগে গেছে তাই তাকে মানানোর আর কোন উপায় নেই।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here