#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ #পর্বঃ৫ #লেখিকাঃদিশা_মনি

#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ইভানা আজ দেখা করল ফারজানা বেগমের সাথে। মূলত ইশরাত খাতুনের থেকে তার ফোন নম্বর জোগাড় করে বাইরে একটি কফিশপে ডেকে পাঠালেন ওনাকে। ইভানা ও ফারজানা বেগম মুখোমুখি বসে আছে। ইভানা কফিতে চুমুক দিয়ে মৃদু হেসে বললো,
‘বিয়েটা যাতে একটু উৎসব অনুষ্ঠান করে হয়, সেই আর্জি জানাতেই আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছি। আসলে আমার দাদাজানের অনেক ইচ্ছা মহাসমারোহে আমার বিয়ে দেবেন।’

ফারজানা বেগম চিন্তিত মুখে বললেন,
‘আমিও তো চাই আমার ছেলের বিয়েটা বড় অনুষ্ঠান করে দিতে। কিন্তু ওই তো মানা করল।’

‘ছেলেরা তো জেদ করবেই। কিন্তু আন্টি আপনি ভেবে দেখুন না, এরকম ভাবে কারো বিয়ে হয়? আপনি আপনার ছেলেক্ষমা বুঝিয়ে বলুন। দেখবেন তিনি এমনিই রাজি হবেন।’

‘আচ্ছা চেষ্টা করে দেখব।’

অতঃপর তারা আরো কিছু সময় কথা বার্তা বলে। ফারজানা বেগমের সাথে বেশ ভাব হয়ে যায় ইভানার। ফারজানা বেগম ভাবতে থাকেন, এইরকম একটা মিষ্টি মেয়েকে তার ছেলের বউ হিসেবে পেলে তিনি ধন্য হবেন। আর তার ছেলে কিনা বিয়েটা করতে অমত করেছিল।

ফারজানা বেগম গ্রামেই নিজের জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করেছেন। তাই তার চিন্তাধারা শহুরে মানুষদের মতো এত প্যাচানো নয়। বেশ সহজ সরল চিন্তা ভাবনা তার। শহুরে কোন মানুষ হলে হয়তো ইভানাকে কখনো নিজের ছেলের বউ হিসেবে পছন্দ করতেন না। কিন্তু গ্রামে থাকায় তার কাছে পড়াশোনা ওতোটা মূল্যবান নয়। তার মতে, নিজের ছেলেকে তো শিক্ষিত করেছেনই, এখন তার বউ নাহয় একটু কমশিক্ষিত হলো তাতে তো কোন অসুবিধা নেই। তাছাড়া ফারজানা বেগম নিজেও পড়াশোনা করেন নি।

ফারজানা বেগম তাই মনে করেন বাড়ির বউ হওয়ার জন্য সুন্দরী, গুণবতী হওয়াই যথেষ্ট। এই কারণেই ইভানাকে এক দেখায় তার পছন্দ হয়ে গেছে। এখন ইভানাকে বাড়ির বউ করে ঘরে তুললেই তার শান্তি। এখন দেখা যাক, ভাগ্যে কি লেখা আছে!

৯.
সময়ের স্রোতে এগিয়ে গেছে কয়েকটা দিন। ইভানা ও ফারহানের বিয়ের দিন তারিখও প্রায় চলে এসেছে। আর মাত্র দুই দিন পরেই তাদের বিয়ে হওয়ার কথা।

ইতিমধ্যেই বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের ভীড় লেগেছে। ইভানার কথা শুনে ফারজানা বেগম ফারহানকে বুঝিয়ে বড় অনুষ্ঠান করে বিয়ের কথা বলেছিলেন। ফারহান তো একদম রাজি হতে চায়নি। তবে ফারজানা বেগম অনেক বোঝানোর পর ফারহান কিছুটা শান্ত হয়।

এখন বিয়েটা খুব সাদামাটাভাবেও হচ্ছে না আবার বড় অনুষ্ঠান করেও না। কাছের আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশী নিয়ে অনুষ্ঠান করেই বিয়েটা হবে।

ইভানা এখন প্রতিশোধের নেশায় রয়েছে। তার উদ্দ্যেশ্য ফারহানকে বিয়ে করে সব অপমান এবং অবহেলার প্রতিশোধ নেবে। এখন দেখা যাক তার এই প্রতিশোধের ইচ্ছা কখনো পূর্ণ হয় কিনা। তবে ইভানার প্রতিশোধটা হবে অন্যরকম। যাকে বলা যায় মিষ্টিমধুর প্রতিশোধ!

______________________
আজকে ইভানা গায়ে হলুদ। গায়ে হলুদ উপলক্ষে হলুদ রঙের লেহেঙা পড়েছে ইভানা। অপূর্ব সুন্দর লাগছে তাকে। তোহাসহ ইভানার কিছু কাজিন তাকে ঘিরে বসেছে। একটু পরেই গায়ে হলুদের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। তার আগে কাজিনরা সবাই মিলে গল্পগুজবে মেতেছে। সবার মাঝে রিয়া নামে ইভানার এক চাচাতো বোন বলে ওঠে,
‘তোর ভাগ্য কত ভালো তাইনা? মেট্রিক ফেল করে ম্যাজিস্ট্রেটের বউ হবি।’

কথাটা শুনে সবার মাঝে হাসির রোল উঠে যায়। ইভানার ভীষণ লজ্জা লাগে। সবার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে যায় সে। তোহা ব্যাপারটা সামলানোর জন্য বলে,
‘এখন এসব কথা থাক। বিয়ে খেতে এসেছিস সবাই, বিয়েতে আনন্দ মজা কর। এসব নিয়ে কথা বলার তো দরকার নেই।’

রিয়া অপমানিত বোধ করে। তাই সে তোহার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘সত্য কথা বললে রেগে যাওয়াই স্বাভাবিক। তুমি বড় বোন হয়ে এখনো কুমারী আছ, এদিকে তোমার ছোট বোনের বিয়ে হতে যাচ্ছে। এর কারণ তো কারো অজানা নয়। কারণ ইভানা একটা ফেলটুস ছাত্রী।’

ইভানা চোখ ছলছল করছিল। এইজন্য সে এই একবছর বাড়ির বাইরে কোথাও যায়নি। এই তিক্ত কথাগুলো যে তার সহ্য হতো না। কেউ পরীক্ষায় অকৃতকার্য করলে তাকে কথা শোনানো যেন সমাজের লোকের স্বভাব হয়ে দাড়িয়েছে। একবারো তারা নিজেদেরকে তাদের যায়গায় বসিয়ে ভাবে না যে, কাউকে অপমান করলে কত কষ্ট লাগে।

এরমধ্যেই গায়ে হলুদের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়৷ সবাই একের পর এক ইভানার গায়ে হলুদ দিতে থাকে। তোহা ইভানার গায়ে হলুদ লাগিয়ে বলে,
‘আমি তোকে আগেও বলেছি, এখন বিয়ে না করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা কর, কিন্তু তুই শুনলি না আমার কথা। বিয়ের পর কিন্তু তোকে এরকম অপমান আরো অনেক সহ্য করতে হবে।’

‘আমি জানি। আমি নিজেকে সবকিছুর জন্য প্রস্তুতও করে নিয়েছি।’

ইভানার এমন জবাব শুনে তোহা আর বলার মতো কিছু খুজে পায় না। যে বোঝে না তাকে হয়তো বোঝানো যায়, কিন্তু যে বুঝেও বুঝতে চায়না তাকে বোঝানোর সাধ্য এই দুনিয়ার কারোরই নেয়।

তবুও তোহা শেষ দিন অব্দি নিজের বোনকে হাজারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে। নিজের বড় বোনের দায়িত্ব যথাযথ ভাবেই পালন করেছে সে।

১০.
আকাশে আজ চাঁদ তার পূর্ণ রূপেই আবির্ভাব ঘটিয়েছে। কারণ আজ পূর্ণিমা। এই আলোকিত রাতে ইভানাদের বাড়ি আজ আরো অনেক বেশি আলোকিত।

চারিদিকে সাজসজ্জা। জোরে সাউন্ড বক্স বাজিয়ে গান বাজানো হচ্ছে। সেই গানের তালে অনেকে নাচছে। বর্তমানে বাজছে, ❝মেহেন্দি লাগাকে রাকনা❞ গানটা। সাথে চলছে ইভানার হাতে মেহেদী লাগানোর আয়োজন।

তোহা অনেক সুন্দর মেহেদী লাগাতে পারে। তাই নিজের বোনের হাতে সেই মেহেদী পড়িয়ে দিলো। ইভানার হাতে ফারহানের নামের প্রথম অক্ষরও লিখে দিলো তোহা।

সব কিছু ভালো ভাবেই মিটে গেল। অতঃপর আগমন ঘটল আনহার। ইভানা আনহাকে দেখামাত্রই বললো,
‘তুই আসতে এত দেরি করে দিল কেন?’

‘আর বলিস না। পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। যাইহোক একবার যখন এসে পড়েছি তখন তোর বিয়ের সব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করব। অনেক হই হুল্লোড় করব।’

অতঃপর দুই বান্ধবী গল্পগুজবে মেতে ওঠে। দুজনে গল্প করতে করতে ইভানার রুমে চলে যায়।

এই সময় আনহা ইভানার সামনে ফারহানের প্রসঙ্গ তুলে বলে,
‘তাহলে শেষ অব্দি ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর প্রতিশোধ নিতে বিয়েটা করেই ফেলছিস।’

ইভানা মৃদু হেসে বলে,
‘হুম। তা বটে। বিয়েটা শুধু হয়ে যেতে দে,তারপর দেখ আমি কিভাবে সবকিছুর প্রতিশোধ নেই।’

দরজার আড়ালে দাড়িয়ে আনহা ও ইভানার সব কথোপকথন রেকর্ড করে নেয় রিয়া। ইশরাত খাতুনের কথামতো ইভানা ডাকতে এসেছিল সে। তখনই দরজার বাইরে থেকে তাদের কথোপকথন শুনতে পায় এবং রেকর্ড করে নেয়।

ছোটবেলা থেকেই ইভানা ও তোহাকে হিংসা করে রিয়া। তারিকুল ইসলামের চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে রিয়া। তারিকুল ইসলাম অনেক ধনী, তাদের মেয়ে কত সুযোগ সুবিধা পায়। ইভানা ম্যাট্রিক ফেল করেও ম্যাজিস্ট্রেটকে বিয়ে করতে পাচ্ছে। অন্যদিকে রিয়া অনেক মেধাবী ছাত্রী। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় সে বোর্ডের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিল। এবার এইচএসসি পরীক্ষাতেও ভালো করার আশা দেখছে। কিন্তু তার বাবা একজন সাধারণ চাকরিজীবী। তার জীবনে এত স্বচ্ছলতা নেই। তাই মূলত সে হিংসা করে তাদেরকে। বারবার তাদের অবস্থা নিয়ে আফসোস করে বলে, যদি তার জীবনও এমন হতো।

রিয়া এসমস্ত কথা রেকর্ড করে শ’য়তানী হাসি দিয়ে বলে,
‘জীবনে অনেক আনন্দ করে নিয়েছিস তুই। এবার একটু কষ্ট সহ্য করার প্রস্তুতি নে। আমি করবো তোর কষ্টের ব্যবস্থা।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here