আলো-১১,১২
রোকেয়া পপি
১১
অহনা আজকে নিজেই ড্রাইভ করছে।
ইচ্ছে করে ড্রাইভার চাচাকে নেয়নি। মাকে বলেছে বান্ধবীর জন্মদিন। সাথে করে ড্রাইভার নেওয়া
মানে খাল কেটে কুমির ডেকে আনা।
পাপার কানে এই ঘটনা গেলে পাপা কোনদিন ও মানবে না তার একমাত্র রাজকন্যা একজন চাল চুলো হীন ছেলের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
আসিফকে আগে থেকে বলা ছিল বাংলা মটরের সামনে থাকতে। সেখান থেকে অহনা ওকে তুলে নিবে।
ভালো কোন নিরিবিলি রেস্টুরেন্টে বসবে।
ও দূর থেকে দেখতে পেলো আসিফ দাঁড়িয়ে আছে, আর বার বার ঘড়ি দেখছে।
পরনে সেই বহুল ব্যবহৃত এ্যাশ কালারের শার্ট আর রঙ জ্বলে যাওয়া জিন্স।
পায়ে স্লিপার।
আজকের দিনে ও ছেলেটা সেই পুরনো ড্রেস পরে আসছে।
অহনার মনটা খারাপ হয়ে গেল।
চোখ ভিজে উঠছে। সে নিজের আবেগ কন্ট্রোল করে আসিফের সামনে গিয়ে গাড়িটা থামালো।
ও খেয়াল করলো, আসিফ এখনো বোকার মতো এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর ঘড়ি দেখছে।
অহনা হর্ন বাজিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলো।
এরপর আসিফের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিল।
আসিফ ভেতরে বসা মাত্র অহনা গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে একটানে যমুনা ফিউচার পার্কে চলে আসলো।
আসিফ খুব অবাক হয়ে প্রশ্ন করল এখানে কেন?
আমাদের তো কোথাও বসার কথা।
অহনার চোখ আবার ভিজে উঠেছে এই বোকা ছেলেটার কান্ড কারখানা দেখে।
ও আজ শাড়ি পরেছে।
ওর মা চোখে পানি এনে আবেগীয় কন্ঠে বলেছে আমার মেয়েটা কখন এমন বড়ো হয়ে গেল!
মারে তোর দিক থেকে তো চোখ ফেরানো যায় না।
দেখিস কারো যেন নজর না লাগে।
আর এই ছেলেটা একটা বার আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে ও দেখলো না।
প্রশংসা তো দূরের কথা।
অথচ তার পছন্দের শাড়ি, ঝুমকা পরেছি।
খোঁপায় বেলি ফুলের মালা পরেছি।
আজ দেরি হবার কারণ ও এই বেলি ফুলের মালা।
পরী হঠাৎ করে এসে বললো, শাড়ির সাথে ফুল ছাড়া মানায় না।
ঘরে তো বেলি ফুলের মালা নেই।
মা সাথে সাথে ড্রাইভারকে দিয়ে বেলি ফুলের মালা এনে খোঁপায় জড়িয়ে দিলো।
আজ মাকে মনে হচ্ছিল ঠিক যেন আমার বন্ধু।
বের হবার মুখে আলো আবার আমাকে দাঁড় করালো।
তোকে একটু ভালো করে দেখি দাড়া।
সে গালে হাত দিয়ে বললো, কি যেন একটা নাই নাই লাগছে।
হুম পেয়েছি।
টিপ।
টিপ ছাড়া তোকে বেমানান লাগছে।
একটা বড়ো দেখে লাল টিপ পরিয়ে দিয়ে বললো, এবার ঠিক আছে।
এখন যা।
বলেই এক চোখ টিপ।
জীবনে প্রথম শাড়ি পড়লাম।
আর উনি তাকিয়ে ও দেখছে না!
হায় খোদা এই ছেলের সাথে আমি ক্যামনে প্রেম করবো।
এর তো রস, কষ, সিঙ্গারা, বুলবুলি কিছুই নেই।
আছে শুধু পড়ালেখার মাথা!
গাড়ি পার্ক করার পর আসিফ নেমে গেছে।
অহনা হালকা করে চোখের পানি মুছে বের হয়ে আসলো।
আসিফ এই প্রথম অহনার দিকে ভালো করে তাকালো।
ও মুগ্ধ হয়ে দেখলো একটা লাল পরী গাড়ির ভেতর থেকে বের হয়ে আসছে।
অহনাকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখে আসিফ এতোটাই মুগ্ধ হয়ে গেলো, যে অহনা কখন ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ও খেয়াল করেনি।
হা করে অহনার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে।
অহনার মন খারাপ ভাব কেটে গেছে। ওর মনের আকাশের মেঘ কেটে গিয়ে রৌদ্র ঝলমল করছে।
ওর নজরে পড়েছে আসিফের চোখের মুগ্ধতা।
এখন ওর গাল দুটো লজ্জায় রক্তিম আভা ছড়িয়েছে।
ও আস্তে করে আসিফের হাত ধরলো।
তারপর ফিসফিসিয়ে বললো, কি যাবে না?
অহনার হাতের স্পর্শে আসিফের ধ্যান ভঙ্গ হলো।
ও কেঁপে উঠে বললো, হা চলো।
ওরা যখন দুজন দুজনের চোখে হারাচ্ছিল, রন্জু তখন গাড়ির ভেতরে বসে মহা বিরক্ত।
ও মনে মনে বললো, তোরা আর জায়গা পেলি না প্রেম করার , শেষ পর্যন্ত এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত ধরাধরি।
এতো প্রেম!
বাপরে!
রন্জু ইচ্ছে করে একটু আড়াল রেখে ওদের পেছন পেছন ঘুরছে।
অহনা বেশ কিছু টি শার্ট আর জিন্স কিনে দিলো ছেলেটিকে।
ছেলেটা সম্ভবত নিতে চাইছে না।
অহনা চোখ পাকিয়ে কি যেন বললো।
ছেলেটা এবার কান ধরে সরি বললো খুব সম্ভবত।
তারপর ট্রায়াল রুমে ঢুকে গেল।
এতো দূর থেকে রন্জু ওদের সব কথা শুনতে না পেলেও মুখভঙ্গি দেখে অনেক কিছু বুঝতে পারছে।
ও নিজেকে নিজে শান্তনা দিল। ভাগ্যিস অহনা তার প্রেমিক কে নিয়ে মহা ব্যাস্ত।
তা না হলে আজ তার কপালে শনি ছিল।
কোন ভাবে যদি অহনা টের পেয়ে যায়, তার ভাইয়া আজ তার ওপরেই গোয়েন্দা গিরি করছে।
তাহলে খবর আছে।
আসিফ কফি কালারের একটা শার্ট আর ব্লু জিন্স পরে যখন ট্রায়াল রুম থেকে বের হয়ে আসলো।
অহনা হা হয়ে গেল।
একটা মানুষ কে শুধু মাত্র একটা পোশাকে চেহারায় এতো পরিবর্তন আনতে পারে
তা তার কল্পনার অতীত।
ও মুগ্ধ দৃষ্টিতে আসিফের দিকে চেয়ে রইল।
আসিফ খুব আন ইজি ফিল করছে।
সে অহনাকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছে, এতো গুলো পোশাক আমার প্রয়োজন নেই।
আমি খুবই সাধারন ঘরের ছেলে।
আমি এতো দামি দামি পোশাক দিয়ে কি করবো?
অহনা শক্ত করে একটা ধমক দিল।
ওর ধমক শুনে অনেকেই ঘুরে তাকালো।
একদম চুপ। আর একটা ও কথা বলবে না।
তোমার জন্মদিন উপলক্ষে এগুলো আমার পক্ষ থেকে ছোট্ট উপহার।
তুমি যখন আমাকে শাড়ি আর ঝুমকা কিনে দিলে
আমি কি না করছি একবারো?
তুমি কেন এমন করছো?
এখন চলো আমরা হালকা কিছু খাবো।
তারপর তোমার জন্য সু কিনবো।
আসিফ হাঁটা শুরু করে আবার থমকে দাঁড়িয়েছে।
দেখো অহনা এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।
যা দিয়েছো এনাফ।
আর কিছু কিনতে চাইলে আমি বাসায় চলে যাবো।
অহনা বুঝতে পারছে, আসিফের ইগোতে লাগছে।
আসিফের মতো ছেলেরা কখনো গিফট পেতে অভ্যস্ত নয়।
কিন্তু ওর কি দোষ।
ও দেখেছে ভার্সিটিতে আসিফ প্রতিদিন এই একি পোশাক পরে আসে।
ওর তো ইচ্ছে করে ওর ভালোবাসার মানুষটিকে সুন্দর সুন্দর পোশাকে দেখতে।
ওরা এখন যমুনা ফিউচার পার্কের ফুড কোর্টে বসে আছে।
রন্জু ও একটু দূরে বসে কফি খাচ্ছে।
রন্জুর আর ইচ্ছে করছে না, ওদের পেছনে গোয়েন্দা গিরি করতে।
ইচ্ছে করছে আলোর মুন্ডুপাত করতে।
ও কফির বিলটা দিয়ে আস্তে করে কেটে পড়লো।
করুক ওদের যা মন চায় তাই।
অহনা যথেষ্ট বড়ো হয়েছে। ওর ভালো মন্দ ডিসিশন নেওয়ার রাইট ওর আছে।
অহনা ফুড কোর্ট থেকে বের হয়ে মার্কেটে এদিক ওদিক ঘুরে আসিফকে আর কোন কিছু কিনে দিতে ব্যার্থ হয়ে দুজনে এসে গাড়িতে বসলো।
সন্ধার পর এই সময়টা রাস্তায় বেশ জ্যাম।
গাড়ি খুব একটা আগাতে পারছে না।
ঘন্টা খানেক জ্যামে বসে থেকে ওরা শেষ পর্যন্ত একটা অপরিচিত রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি পার্ক করলো।
অহনার খুব ইচ্ছে ছিল খুব ভালো কোন রেস্টুরেন্টে ওরা আজ বসবে।
কিন্তু বাসায় ফেরার তাড়া আছে।
এখন যদি রাস্তায় সময় চলে যায় তাহলে আসিফের সাথে একান্ত কিছু সময় কাটানো যাবে না।
ভেতরে ঢুকে অহনার মনটা ভালো হয়ে গেল।
ও কখনো এই রেস্টুরেন্টে আসেনি।
বাইরে থেকে বোঝা ও যায় না ভেতরটা এতো সুন্দর করে সাজানো।
ওরা বসা মাত্র ওয়েটাররা ব্যাস্ত হয়ে গেলো।
এদিকে রেস্টুরেন্টের পরিবেশ দেখে আসিফ ভেতরে ভেতরে ঘামছে।
তিনটা টিউশন ফি দিয়ে ওকে চলতে হয়।
কিছু টাকা বাড়িতেও পাঠাতে হয়।
সেদিন ঝোঁকের মাথায় কতো গুলো টাকা খরচ করে অহনাকে শাড়ি, ঝুমকা কিনে দিলো।
কিছু জমানো টাকা ছিল, সেগুলো সব আজ সাথে করে নিয়ে এসেছে।
বড়ো লোকের মেয়ে, কি খেতে চায়, কতো বিল আসে।
লজ্জায় যেন না পড়তে হয়।
কিন্তু এখন ওর মনে হচ্ছে এখানে সম্পূর্ণ বিল ওর পক্ষে দেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না।
ওর পকেটে আছে মাত্র দুই হাজার টাকা।
এই টাকার মধ্যে যদি বিল আসে তাহলে না হয় দেওয়া যাবে।
কিন্তু আজ মাসের মাত্র এগারো তারিখ।
পুরো মাস পড়ে আছে।
কিভাবে চলবে বাকি দিন গুলো?
চলবে……
আলো-১২
রোকেয়া পপি
আকাশে পঞ্চমীর চাঁদ। মিষ্টি আলো ছড়াচ্ছে চারদিকে। জানালা দিয়ে তার কিছু আলো অহনার টেবিলে এসে পড়ছে। হু হু করে ঠান্ডা একটা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। পর্দা গুলো বাতাসে উড়ছে।
অহনার বেশ লাগছে এই পরিবেশে ডায়রি লিখতে।
রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সারাদিন কি কি ঘটলো, তা লিখতে ওর বেশ ভালো লাগে।
ডায়রি লেখার অভ্যাস টা আগে ছিল না।
গতো বছরের জন্মদিনে ওর পাপা ওকে এই নীল ভেলভেট কাপড়ের কভার করা ডায়রিটা গিফট করেছে।
ডায়রিটা অহনার এতো পছন্দ হয়েছে, সেদিন থেকেই টুকটুক করে লেখা শুরু।
অহনার হাতের লেখা বেশ গোটা গোটা। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন লেখা। এতো সুন্দর লেখা দেখে কেউ ভাবতে পারে, ও হয়তো খুব যত্ন করে ধীরে ধীরে ডায়রি লেখে।
ঘটনা কিন্তু তা না।
ও খুব দ্রুত লেখে। কিন্তু আজ ওর মনটা অনেক বেশি ভালো।
আজকে সে খুব যত্ন করে লিখছে।
আজকে সকাল থেকেই খুব এক্সাইটেড ছিলাম, কখন বিকেল হবে।
কখন আসিফের সাথে দেখা করবো।
এর মধ্যে দেখলাম ওর শখ করে কিনে দেওয়া ঝুমকা সেটটার একটা ঝুমকা নেই।
আমি কিভাবে হারালাম বুঝতে পারছি না।
মনটা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেল।
ঠিক যেন রোদ ঝলমল আকাশ হঠাৎ করে মেঘে ছেয়ে গেছে।
এমন না যে আমার ভালো কোন ঝুমকা নেই। আমার অনেক দামি দামি গহনা আছে। তার কাছে এটা কিছুই না।
কিন্তু তারপরও এই ঝুমকা টার মধ্যে আসিফের ভালোবাসা মিশে আছে।
ওর অনেক কষ্টের টাকায় কেনা শাড়ি আর ঝুমকা পরে আজ দেখা করার কথা।
অথচ একটা ঝুমকা মিসিং!
ইচ্ছে করছে চিৎকার দিয়ে কান্না করি।
এরমধ্যে আমার কাজিন আলো আসলো।
সব শুনে ও এক রকম জোর করে মার্কেটে নিয়ে গেল ভর দুপুরে।
আমি খুশি মনে ঝুমকা নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
কিন্তু সবচেয়ে বেশি সারপ্রাইজ হলাম, আলো যখন আমার হারিয়ে যাওয়া ঝুমকার জোড়া মিলিয়ে একটা ঝুমকা দোকানীকে না জানিয়েই নিয়ে এসেছে।
আমি ঝুমকা টা নিয়ে হা হয়ে গেলাম।
আমার এতো বছরের জীবনে এমন আশ্চর্য জনক ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।
এখন আমার একি রকম দুই সেট ঝুমকা। হা হা হা।
আমি রেডি হয়ে আসিফকে যখন রাস্তা থেকে তুলে নিলাম। খুব আশায় ছিলাম আসিফ আমাকে দেখে অনেক প্রশংসা করবে।
হাজার হলেও জীবনে প্রথম শাড়ি পড়লাম।
আমি ড্রাইভ করার ফাঁকে ফাঁকে আড় চোখে আসিফকে দেখছিলাম।
ও ভুল করে ও আমার দিকে তাকাচ্ছে না।
আমার চোখে পানি জমতে শুরু করলো।
আমি জানি ঝাপসা চোখে গাড়ি চালানো খুব রিক্স।
কিন্তু আমি নিজের চোখকে কোন ভাবেই শাসন করতে পারছিলাম না।
মনে মনে প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত একটা আবেগ হীন ছেলের প্রেমে পড়লাম!
আমার সব অভিমান পানি হয়ে গেল যখন গাড়ি থেকে নামলাম।
আসিফের চোখে আমার জন্য যে মুগ্ধতা আমি দেখেছি।
এখন আমি জনম জনম ওর জন্য অপেক্ষা করতে পারি।
সব দুঃখ কষ্ট মাথা পেতে নিতে পারি।
ওর হাত ধরে গাছ তলায় ও থাকতে পাররবো।
আমার একটুও কষ্ট হবে না।
আমার কষ্ট হয় আসিফের পোশাক দেখলে।
আজকে আমার প্লান ছিল ওকে প্রয়োজনীয় সব কিছু কেনাকাটা করে দেওয়ার।
কিন্তু ছেলেটার আত্মসন্মান বোধ খুব প্রখর।
কয়টা টি শার্ট কিনে দেওয়ার পর আর কিছুই দিতে পারলাম না।
আমাদের খাওয়ার পর বিল আসলো চার হাজার প্লাস।
আমি যখন বিলটা দেওয়ার জন্য টাকা বের করলাম।
আসিফের চোখে তখন পানি চিকচিক করছে।
ও ব্যাথাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, অহনা আজকে আমার খাওয়ানোর কথা ছিল।
কিন্তু আমার কাছে তো এতো টাকা নেই।
আর আমি বুঝতে ও পারিনি দুজনের এক বেলা খাওয়ার বিল এতো হতে পারে।
আমি দুই হাজার দেই।
বাকিটা তুমিই দাও।
আমি টিউশন ফি পেলে তোমায় দিয়ে দিব।
কি সহজ সরল স্বীকারোক্তি।
আমি ওর হাতটা চেপে ধরলাম।
তুমি আমাকে শাড়ি, গহনা গিফট করছো। আমি কি তখন টাকা দিয়েছি, বা না করছি দিতে।
কিন্তু আজকের দিনটা আমি অনেক প্লান করে রেখেছিলাম আগে থেকেই।
আজ আমি সব কিছু করবো আমার ইচ্ছে মতো।
কিন্তু তোমার জন্য পারিনি।
আচ্ছা শোন আমার জন্মদিনে তুমি খাওয়ার বিল দিও।
কিন্তু আজকে আমাকে দিতে দাও প্লিজ।
আমার খুব মন খারাপ হবে বিলটা দিতে না পারলে।
এরপর আসিফ আর কিছু বলেনি।
কিন্তু সারাটা পথ খুবই মুড অফ ছিল।
তারপরও আমি খুবই হ্যাপি।
আজকে আমি আমার ভালবাসার মানুষটির এতো কাছাকাছি থাকাতে পেরেছি।
গিফট দিতে পেরেছি।
এখন আর প্রতিদিন ভার্সিটি তে এক পোশাকে দেখতে হবে না।
এটাই আমার পরম পাওয়া।
অহনা ডায়রিটা বন্ধ করে লাইট অফ করে বিছানায় শুয়ে শুয়েও আসিফের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছে।
ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখছে আসিফ একটা সাইকেল নিয়ে ওদের বাসার সামনে এসে বেল বাজাচ্ছে।
অহনা খুবই অবাক হলো, এতো রাতে কে এভাবে টুং টুং করে শব্দ করে।
ও উঠে বেলকোনিতে গিয়ে দেখে আসিফ সাইকেল নিয়ে ওদের বাসার সামনে।
ওকে দেখা মাত্র মিষ্টি করে হেসে হাত ইশারায় নেমে আসতে বললো।
এরপর দেখে অহনা আসিফের সাইকেলের পেছনে বসে আছে।
আসিফ সাইকেল নিয়ে নদীর পাড়ে চলে আসছে।
নদীর মিষ্টি বাতাস এসে অহনার চুল গুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে।
অহনার বেশ মজা লাগছে।
প্রথমে খুব ভয় ভয় লাগছিল, আগে তো কখনো সাইকেলে চড়ে নি।
কিন্তু এখন বেশ ভালো লাগছে।
হঠাৎ করে উঁচু নিচু জায়গায় এসে সাইকেল টা উল্টে পড়লো।
অহনা ও ছিটকে পড়ে গেল সাইকেল থেকে।
অহনা তাকিয়ে দেখে ও খাট থেকে ঘুমের মধ্যে সত্যি সত্যি নিচে পড়ে গেছে।
ও উঠে আলো জ্বালালো ।
রাত প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তিনটা পঞ্চান্ন বাজে।
ও উঠে বেলকোনিতে গিয়ে দাঁড়ালো।
পঞ্চমীর চাঁদের আলো কমে এসেছে।
আলো আঁধারিতে এক মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
ওর খুব ইচ্ছে করছে এই সুন্দর পরিবেশে গরম এক মগ কফি খেতে।
কিন্তু ভালো লাগা আর অলসতা মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।
একটু ও নড়তে ইচ্ছে করছে না জায়গা টা থেকে।
মনে হচ্ছে এখান থেকে সরে গেলেই ভালো লাগার রেশটা কেটে যাবে।
আচ্ছা আসিফ এখন কি করছে?
ও কি ঘুমাচ্ছে, নাকি আমার মতো ও জেগে জেগে পঞ্চমীর চাঁদ দেখছে?
মন্টু মিয়া ঘরে ঢুকে লাইটের সুইচ টা হাতড়ে হাতড়ে খুঁজতে গিয়ে একটা শক খেলো।
সে ভুলেই গেছিল আজ কয়দিন ধরে সুইচটা সমস্যা করছে।
একজন মিস্ত্রী ডেকে আনতে হবে।
কিন্তু দিনের বেলায় তার এ কথা মনে থাকে না।
ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিছুই দেখা যায় না।
বাইরে ও এতো বেশি অন্ধকার। আকাশ কালো করে মেঘ করেছে।
যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে। শরীরটাও ভালো লাগছে না।
এই বয়সে পাশে একজন নিজের আপন মানুষ খুব দরকার।
এখন মনে হচ্ছে সবাইকে মুক্তি দিয়ে খুব ভুল করছে।
বাচ্চাদের কাউকে নিজের কাছে রেখে দেওয়া খুব দরকার ছিল।
ভুল হয়ে গেছে, মারাক্তক ভুল হয়ে গেছে।
কি দরকার ছিল এই শেষ বয়সে এসে দাতা হাতেম তাই হবার!
উফ মাথায় আবার যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। মনে হয় আবার জ্বর আসবে।
মাথার দুপাশের শিরা টনটন করছে।
রগ গুলো ফুলে উঠছে।
মেঘ গর্জন করে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো।
কোথাও খুব জোরে বাজ পড়ার শব্দ হলো।
এই ঝড়বৃষ্টির রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে কে তাকে দেখবে? এই মুহূর্তে আলোকে খুব মনে পড়ছে।
আলো কি ঘুমিয়েছে?
ওকে কি একটু ফোন করবো?
কতোদিন দেখি না মেয়েটাকে।
আলোর কথা ভাবতে ভাবতে মন্টু নিজের অজান্তেই আলোর নাম্বারে ডায়াল করে ফেললো।
একবার নয় পরপর তিনবার।
প্রতিবার বিজি টোন আসছে।
মন্টুর হঠাৎ করে বুকের ব্যাথায় শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। হাত থেকে মোবাইলটা পড়ে গেছে নিচে।
সে চেষ্টা করছে মোবাইলটা তোলার।
কিন্তু কিছু তেই পারছে না।
তার কাছে মনে হচ্ছে সে এখনি জ্ঞান হারাবে।
কেউ যেন তার বুকের ওপরে চেপে বসেছে।
খুব চেষ্টা করছে একটু শ্বাস নেওয়ার কিন্তু পারছে না।
চলবে…….