আলো-৩,০৪
রোকেয়া পপি
০৩
মন্টুর মনটা অসম্ভব রকমের খারাপ হয়ে গেল। তার এখন খুব ইচ্ছে করছে একটা বিড়ি খেতে। কিন্তু আলোর কড়াকড়ি নিষেধ আছে বিড়ি খাওয়ার।
তার বয়স হয়েছে, বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। ডাক্তার তাকে অনেক নিয়োম কানুন মেনে চলতে বলেছে।
সে অবশ্য এসব নিয়মের ধার ধারে না।
কিন্তু আলো যা বলে তা মেনে নেয়। এই মেয়েটার প্রতি তার এক ধরনের মমতা কাজ করে। শুধু মাত্র এই মেয়েটির জন্য তার ভালো হয়ে যেতে ইচ্ছে করে।
আলোর জন্য কিছুই করতে পারবে না, এই দুঃখে তার মনটা ব্যাথায় ভরে উঠলো। এখন তার খুব পিপাসা পেয়েছে।
পিপাসাটা অবশ্যই পানির পিপাসা না। এটা বিড়ির পিপাসা। তার সাথে সবসময় বিড়ি থাকে। সে একটা বিড়ি ইচ্ছে করলেই এখন খেতে পারে।
কিন্তু আলোর মাথায় হাত দিয়ে প্রতিজ্ঞা করেছে, আর খাবে না। সে উশখুশ শুরু করলো।
পকেট থেকে একটা বিড়ি বের করে না ধরিয়েই সে টানা শুরু করলো। খুব বেশি মন খারাপ হলে সে এই কাজটি করে। তখন তার মনে হয়, সে সত্যি সত্যি একটা বিড়ি খেলো।
মবিনুর রহমান গাড়িতে বসে দেখলো, একজন অপরিচিত মানুষ গেটের কাছে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে, সিগারেটে আগুন নেই, তাও সে বার বার টাছে আর ধোঁয়া ছাড়ার ভঙ্গিও করছে।
তার বেশ মজা লাগলো দৃশ্য টা দেখে।
সে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললো।
গাড়ি থামাতে বলাতে সায়মা একটু বিরক্ত হলো। সে বিরক্তি না লুকিয়েই বললো, এমনিতেই আজকে তুমি বাইরের কাজ সারতে দেরি করেছো। এখন আবার সময় নষ্ট করলে আজকের ফ্লাইট ঠিক মিস করবো।
বেশি সময় নেব না সায়মা। পাঁচ মিনিট।
সে গাড়ির দরজা খুলে বের হওয়া মাত্র মন্টু বিড়িটা পায়ের নিচে ফেলে মুচড়ে তার সামনে এসে বড়ো করে সালাম দিলো।
সে হাত কচলে বললো, স্যার আপনার সাথে আমার খুব জরুরী কথা আছে, আপনি আমাকে একটু সময় দেন স্যার।
আমার তো এখন কোন কথা শোনার মতো সময় নেই। আজকের রাতের ফ্লাইটে আমরা লন্ডন যাচ্ছি। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।
আপনি যদি পাঁচ মিনিটের মধ্যে আপনার জরুরী কথা বলতে পারেন, তবে বলেন।
নয়তো আমার মোবাইল নাম্বার দিচ্ছি। কালকে ফোন করবেন।
মন্টু দেখলো এখন সময় নষ্ট করা হবে বিশাল বোকামি। সে সরাসরি বললো, স্যার পনেরো বছর আগে আলো নামে আপনার কেউ হারিয়ে গেছিলো?
আমি তার সন্ধান দিতে আসছি।
মবিনুর রহমান নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে এটা কি শুনলো!
সায়মাও গাড়িতে বসে কান পেতে ছিল, সে আলো নামটা শোনা মাত্র গাড়ি থেকে বের হয়ে এসে মন্টুর শার্টের কলার চেপে ধরে ঝাঁকানো শুরু করলো।
কোথায় আমার আলো। আপনি তাড়াতাড়ি বলুন। আজ পনেরোটা বছর ধরে আমি ঠিক মতো ঘুমাতে পারি না, খেতে পারি না।
যাযাবরের মতো জীবন যাপন করছি।
কয়দিন লন্ডন, কয়দিন বাংলাদেশ। কোথাও শান্তি করে কয়টা দিন থাকতে পারি না। বলুন আমার আলো কোথায়, বলুন?
মবিনুর রহমান সায়মাকে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
কি পাগলামি করছো সায়মা। শান্ত হও ।
আমি দেখছি ব্যাপারটা।
মবিনুর রহমান আজ উবার নিয়েছিলো এয়ারপোর্টে যাওয়ার জন্য। সে উবার বিদায় করে, মন্টুকে নিয়ে ঘরে বসলো। আর দারোয়ান কে বললো, লাগেজ গুলো ভেতরে নিয়ে রাখতে।
এখন বলুন আপনি কি বলতে চান?
তার আগে আপনার নামটা বলুন।
স্যার আমার নাম মন্টু মিয়া।
আপনার কি মনে আছে, আজকে আপনার সাথে বিকেলে একটা ঘটনা ঘটেছিল পকেট মারের?
হ্যা মন্টু মিয়া আমার মনে আছে, এই তো কিছুক্ষণ আগের ঘটনা। একটা মেয়ে আমার পকেট থেকে ম্যানিব্যাগ বের করতে যেয়ে, আরেকজন পথচারীর হাতে ধরা পড়ে।
কিন্তু এই ঘটনার সাথে আলোর কি সম্পর্ক?
মন্টু মাথা নিচু করে ফেললো।
স্যার আপনি চাইলে আমাকে জেলে দিন আমার কোন আপত্তি নেই।
কিন্তু আপনার মেয়ে আলোকে আমি নিয়ে গিয়েছিলাম সেদিন ।
সেই দিনটার কথা মনে করে দেখুন।
আপনি ফোনে কথা বলছেন, আমার হুন্ডাও পাশে দাঁড় করানো। আপনার ছোট্ট মেয়েটা আইসক্রিম হাতে টুকটুক করে হেঁটে এসে ভুল করে আমার হুন্ডায় উঠে বসলো। আর আমি ও লোভে পড়ে তাকে নিয়ে চলে গেলাম।
তাকে আমি ট্রেনিং দিয়ে পকেটমার বানাই। তাকে ট্রেনিং দিতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। অন্য বাচ্চাদের এতো সময় লাগেনি। ওরা রাস্তায় বড়ো হওয়া বাচ্চা। চুরি চামাড়ি ওরা আগে থেকেই জানতো।
কিন্তু আলো ভদ্র ঘরের ইংরেজিতে কথা বলা মাইয়া। হেরে বাংলা শিখাইতেই আমাগো অনেক সময় গেছেগা। যাউকগা হেই সব কথা বাদ।
তয় বিশ্বাস করেন স্যার আলো পকেটমার হলেও তাকে আমি নিজের মাইয়ার মতো ভালোবাসছি। আমি সবসময় তার ভালো চাই।
এই যে দেখেন আপনার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পেপার। আমি অনেক যত্ন কইরা তুইলা রাখছিলাম। এই ঠিকানা দেইখা আমি কতোবার আসছি আলোকে ফিরায় দিমু জন্য।
বিশ্বাস না হলে আপনার দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করেন। আমি মাঝে মাঝেই আইসা খোঁজ নেই যে আপনাগো।
এতোক্ষণ মবিনুর রহমান চুপ করে মন্টুর কথা শুনছিলেন। আর সায়মার গাল ভিজে যাচ্ছে চোখের পানিতে।
মবিনুর রহমান কেশে গলা পরিষ্কার করে বললেন, আপনি যে দাবি করছেন এই পকেটমার মেয়েটি আমার সন্তান আলো।
আমি আপনার কথা কিভাবে বিশ্বাস করবো?
আপনার কাছে কোন প্রমাণ আছে?
আমি জানি আপনি এই কথাটা বলবেন। তাই আমি আলোর বিভিন্ন বয়সের ছবি আনছি দেখেন।
সে তার ব্যাগ থেকে তিন চারটা ছবি বের করে মবিনুর রহমানের হাতে দিলো।
মবিনুর রহমান দেখার আগেই সায়মা ছবিগুলো ছো মেরে নিয়ে দেখা শুরু করলো।
সায়মা দেখলো, হারিয়ে যাওয়ার সময় থেকে কৌশরে উত্তীর্ণ হওয়া পর্যন্ত আলোর বেশ কয়েকটি ছবি। আলোর সাথে তার বয়সী বিভিন্ন ছেলে মেয়ে এবং বয়স্ক একজন মহিলার ও ছবি আছে।
যেখানে আলো বয়স্ক মহিলার গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
সে ছবি গুলো বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলো।
তুমি এখনি আমাকে আমার আলোর কাছে নিয়ে যাও।
এটাই আমার আলো।
আমার বুকের মানিক।
আমার হারিয়ে যাওয়া সাত রাজার ধন।
চলবে……
আলো-৪
রোকেয়া পপি
ঘরের প্রতিটি জিনিস দেখে আলো অভিভূত।
এতো সুন্দর কারো বাসা হয়!
এতো দামি দামি শোপিস দেখে আলোর মাথা নষ্ট হয়ে যাবার যোগাড়। ভালো ভালো শপিং মলে ও এ ধরনের শোপিস দেখেছে। কিন্তু কারো বাসায় এতো সুন্দর সুন্দর জিনিস থাকতে পারে ওর ধারনার বাইরে।
ওর ইচ্ছে করছে টুপ করে একটা শোপিস নিয়ে পকেটে ভরে ফেলতে। বিশেষ করে এ্যাশট্রে টা দেখে লোভ সামলানো কঠিন।
লোভে চোখ দুটো চকচক করছে। এই জিনিসটা মন্টু মামাকে দিতেই হবে।
সায়মা বেগম মেয়ের অবাক চাহনি দেখে কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে মমতা মাখা কন্ঠে বললো, মা গো এ বাড়ির মালিক তুমি। এখানে যা কিছু দেখছো সব তোমার।
এখন চলো হাতমুখ ধুয়ে মুখে কিছু দাও।
আর তোমার রুমটা ঠিক আগের মতই সাজিয়ে রেখেছি।
তুমি যেমনটি রেখে গিয়েছিলে ঠিক তেমনটিই আছে।
আমার বিশ্বাস ছিল আমার আলোকে একদিন আমি ঠিক খুঁজে পাবো।
তাইতো বছরে দুইবার করে দেশে আসি।
শুধু মাত্র তোমাকে আবার ফিরে পাবো সেই বিশ্বাস থেকে।
এখন তুমি ফিরে এসেছো। তোমার রুম তুমি নিজের পছন্দে সাজিয়ে নিবে।
মশারির ভেতরে একটা মশা ঢুকেছে। মন্টু চোখ বন্ধ করলেই কানের কাছে এসে পিনপিন করে শব্দ করছে। হঠাৎ করে কপালে গালে এসে বসে ছোট করে কামড় দিয়ে উড়ে যাচ্ছে।
মন্টু খুব চেষ্টা করছে অন্ধকারে হাতরে হাতরে আন্দাজের ওপরে মশাটাকে মারার। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না।
এমনিতেই আজ তার ঘুম আসছে না। আলোর জন্য খুব পরান পুড়ছে। তার ওপরে মশার এই বার্তি যন্ত্রণায় সে উঠে বসলো। মশারির ভেতর থেকে বের হয়ে আলো জ্বালালো। মাত্র ষাট পাওয়ারের বাল্ব। কিন্তু অন্ধকার নিকষ কালো রাতে আলোটা খুব ঝকমক করছে। চোখ ধাঁধানো আলো।
মন্টু আবার মশারির ভেতরে ঢুকলো মশাটা মারার জন্য। কিন্তু মশাটাও কম চালাক নয়। সে শুধু উড়ছে। যদিও বা একটু বসছে, কিন্তু মন্টু এগিয়ে যাওয়ার আগেই উড়ে যাচ্ছে।
মহা যন্ত্রণা হলো তো।
মন্টু মহা বিরক্ত হয়ে চুপচাপ বসে রইল মশাটা এক জায়গায় স্থির হয়ে বসার অপেক্ষায়।
বেশ কিছু সময় উড়াউড়ি করে ক্লান্ত হয়ে মশাটা এক সময় মন্টুর বাম হাতে এসে বসলো।
সে ইচ্ছে করে কিছুটা রক্ত খেতে দিলো। তারপর আস্তে করে ডান হাতটা সাবধানে তুলে এক থাপ্পড়ে মশাটাকে পিষে ফেললো।
সে মনে মনে নিজেকে নিজেই বাহবা দিয়ে লাইট অফ করে ঘুমাতে গেল।
ঘরের মধ্যে গুমোট ভাব। কিছুতেই ঘুম আসছে না।
বারবার আলোর মুখটা ভেসে আসছে তার চোখের সামনে।
তার ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো।
সে জানে আলো খুব ভালো আছে তার নিজের বাড়িতে। সে দূর থেকে দেখেছে আলোর বাবা মা কতো পরম যত্নে মেয়েকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিজেদের কাছে নিয়ে গেছে।
এখন আর আলোর জন্য তার কোন চিন্তা নেই।
এখন যেটা হচ্ছে, সেটা হলো মায়া।
মায়া বড়ো সাংঘাতিক জিনিস। এই মায়ার ঘোর থেকে সে কবে বের হতে পারবে নিজেও জানে না।
কোন ভাবেই ঘুম আসছে না। শুধু শুধু শুয়ে থাকার কোন মানে হয় না।
মন্টু উঠে সিগারেটের প্যাকেট টা হাতে নিয়ে বারান্দায় এসে বসলো।
রাত প্রায় শেষ হতে বসেছে। সে একটা সিগারেট রের করে না ধরিয়ে মুখে নিয়ে টানতে শুরু করলো।
আলোকে সে কথা দিয়েছে আর কখনো সিগারেট খাবে না।
এখন আলো নেই। বকা দেওয়ার ও কেউ নেই। চাইলেই সে এখন দিব্যি একটা সিগারেট খেয়ে উঠতে পারে।
কিন্তু সে আলোকে খুব বেশি ভালবাসে। আলো কষ্ট পায় এমন কোন কাজ সে করতে নারাজ।
কল্পনায় সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আকাশের দিকে তাকালো। আকাশে বেশ মেঘ করেছে। যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে।
মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকে উঠছে।
তার খুব জানতে ইচ্ছে করছে আলো কি করছে।
আলো ও কি তার মতো এমন জেগে বসে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে।
মেয়েটা খুব আকাশ পছন্দ করে। সুযোগ পেলেই আকাশের দিকে তাকিয়ে অন্য কোন জগতে হারিয়ে যেতো। আহারে মেয়েটা আমার নতুন পরিবেশে না জকি করছে।
না সকাল হলেই আলোকে দেখতে যেতে হবে।
কাছে না গেলেও দূর থেকে এক নজর দেখে আসবে সে।
কিন্তু মন্টু জানে সকালে তার আলোর কাছে যাওয়া হবে না।
তাকে যেতে হবে পেটের ধান্দায়। আজকের দিনটা মাটি হয়েছে। কোন ইনকাম হয়নি।
কাল কিছু না কামাতে না পারলে, না খেয়ে মরতে হবে।
আলোর কিছুতেই ঘুম আসছে না। এতো সুন্দর রুমটা ওর!
এতো আরামদায়ক বিছানা। তুলার মতো নরম। শোয়া মাত্র শরীর ডেবে যায়।
না বিছানায় কিছুতেই ঘুম আসবে না। অনেক রাত পর্যন্ত এপাশ ওপাশ করে শেষে বালিশটা নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়লো।
তাও চোখে ঘুম নেই।
বারবার শুধু মন্টু মামার কথা মনে পড়ছে। ওর মন বলছে, আমি তো এখানে কতো ভালো ভালো খাবার খেলাম। মামা কি রাতে কিছু খেয়েছে?
মামারো কি আমার জন্য দুশ্চিন্তায় ঘুম আসছে না।
ইস মামাকেও যদি এখানে এনে রাখতে পারতাম!
হঠাৎ করে আলোর বুকে এক ধরনের চাপা কষ্ট ভর করলো। ওর মনে হচ্ছে বুকের ভেতরটা কেমন যেন থম ধরে আছে। এই বদ্ধ ঘরে ওর দম আটকে আসছে। ইচ্ছে করছে এক দৌড়ে বাইরে গিয়ে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে।
ও উঠে বেলকোনিতে গিয়ে গ্রিল ধরে আকাশ দেখা শুরু করলো।
ওর যখনি মনটা খুব বেশি খারাপ হয়, ও তখন তন্ময় হয়ে আকাশের সৌন্দর্য দেখে।
রাত প্রায় শেষ হয়ে এলো। কয়টা বাজে বুঝতে পারছে না। অবশ্য আলো জ্বেলে দেখা যায় কয়টা বাজে। তার রুমে একটা বিশাল সাইজের ওয়াল ঘড়ি আছে। ঘড়িটা অদ্ভুত সুন্দর।
কিন্তু একদম ঘরে যেতে ইচ্ছে করছে না।
ও গভীর মনোযোগ দিয়ে অন্ধকার আকাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে ভাবছে
আচ্ছা শহরের মানুষ গুলো কি আমার মতো এতো গভীর মনোযোগ দিয়ে আকাশ দেখে?
ওদের কি এতো সময় আছে আকাশ দেখার?
এই যে রাতের অন্ধকারেও আকাশে কি সুন্দর মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে।
একটু পর পর বিজলি চমকানোর আলোতে ভুতুড়ে শহরটাকে আরো বেশি ভুতুড়ে মনে হচ্ছে। কেমন অদ্ভুত এক মায়াময় পরিবেশ।
শহরের মানুষের কি ঘুম না আসলে আমার মতো শুয়ে না থেকে উঠে গিয়ে আকাশ দেখে!
এলোমেলো চিন্তার মাঝে হঠাৎ করে ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নেমে এলো।
বৃষ্টির ছিটায় আলোর পুরো শরীর ভিজে একাকার।
আলোর সেদিকে কোন খেয়াল নেই।
ওর খুব ইচ্ছে করছে এই রাজকীয় প্রাসাদ ছেড়ে মন্টু মামার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে।
মন্টু মামার জন্য গভীর মমতায় আলোর চোখ জুড়ে নোনা জল নেমে আসলো।
কোনটা বৃষ্টির জল, আর কোনটা আলোর চোখের নোনা জল এখন আর কেউ আলাদা করতে পারবে না।
মন্টু মিয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি নেমে তার পুরো শরীর ভিজিয়ে দিলো।
সে জানে তার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। এই অসময়ে বৃষ্টিতে ভেজা ঠিক হচ্ছে না। আলো থাকলে হয়তো একটা কঠিন ধমক দিতো।
কিন্তু উঠে যে ঘরে যাবে সে ইচ্ছেও করছে না।
আলোর জন্য মনটা এতোটাই ছটফট করছে, যে নিজের অজান্তেই চোখ ভিজে উঠলো।
সে বুকে এক ধরনের চাপা কষ্ট অনুভব করলো।
মন্টু মিয়া খুব লজ্জিত হয়ে চোখের পানি মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। তার মতো এমন শক্ত মনের মানুষের এতো মমতা দেখাতে নেই।
পরক্ষণেই মনে হলো, আরে আমি এতো লজ্জা পাচ্ছি কেন?
এখানে তো এই শেষ রাতে আমার চোখের পানি দেখার জন্য কেউ বসে নেই।
তাছাড়া কেউ দেখলেই বা সমস্যা কি!
বৃষ্টির পানিতে তো বোঝার উপায় নেই কোনটা চোখের পানি, কোনটা বৃষ্টির পানি।
সে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে প্রার্থনা করলো, হে আল্লাহ তোমার বৃষ্টির পানিতে আমার সব দুঃখ কষ্ট ধুয়ে মুছে দূর করে দাও।
আর আমার আলোকে ভালো রেখো।
ও যেন আমার মতো এতো কষ্ট না পায়। মেয়েটা আমার কাছে অনেক কষ্ট করেছে। এখন যেন ও একটু সুখের মুখ দেখে।
মন্টু মিয়া হঠাৎ করে ঝাপসা চোখে দেখতে পেলো আলো তাকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে।
মামা এসো। দেখো কি সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে।
এসো আজ আমরা দুজন এক সাথে বৃষ্টি স্নান করবো।
মন্টু মিয়া বুঝতে পারছে না, এতো রাতে আলো এখানে কিভাবে এলো।
সে কি সত্যি সত্যি আলোর বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা ধরবে?
নাকি সে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে!
চলবে…….