অসম
পর্ব ১৬,১৭,১৮
কলমে লিপিকা
১৬
অনুপম হাত নেরে নেরে নিতুর সঙ্গে কথা বলছিল আর নিতু খুব মুগ্ধ হয়ে অনুপমের কথা শুনছিল। আবার কখনো দুজনেই হেসে যাচ্ছিল। তাদের এই সুন্দর কথোপকথন দূর থেকে আরও একজোড়া চোখ মুগ্ধ হয়ে অবলোকন করছিল,খুব সুক্ষ্ম ভাবে খেয়াল করলো সেই চোখ নিতুর এঁটো জুস স্বাচ্ছন্দ্যে খেয়ে যাওয়া অনুপমকে। নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে সানজানা মনে মনে বলল তোমাদের ঐ আয়োজনে আমি কত বেমানান।
তোড়া সানজানার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল- কষ্ট পাচ্ছ?
না সূচক মাথা নড়ালো সানজানা
তোড়া আবার বলল -আমিতো তোমাকে আগেই বলেছিলাম আন্টি যতই বলুক অনুপম ভাইয়া এই রিলেশনের ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস।
তোড়ার কথা সানজানার কানে যাচ্ছিল না,তার মনের মনিকোঠায় যত্ন করে রাখা স্বপ্নগুলোয় চিড় ধরছে,এই চিড় ধরা স্বপ্ন ভেঙে যাবার শব্দে অন্যসব শব্দ সংকোচিত হয়ে যাচ্ছে।
অনুপমের সেল ফোনে টুং-টুং করে শব্দ হল,অনুপম স্ক্রীনে ভেসে উঠা ম্যাসেজ সিন করলে এক অদ্ভুত ভালো লাগা ছুঁয়ে গেল,
নিজের অজান্তেই বেরিয়ে এল -ওয়াও
নিতু বলল -কি দেখছো
-কাছে এস
নিতু অনুপমের কাছ ঘেঁষে ফোনের স্ক্রীনে চোখ রাখলো,খুব সুন্দর একটা ছবি, অনুপম নিতুর দিকে হাত নেরে কিছু বলছিল আর নিতু মুগ্ধ হয়ে অনুপমের দিকে তাকিয়ে আছে, এমন সুন্দর থিমের ছবি দেখে নিতুরও ভালো লাগলো।
অনুপম বলল -আমাদের প্রথম কাপলফটো, তোমার ভাল লেগেছে নিতু
– কে পাঠলো,নিজের ভালো লাগাকে অগ্রাহ্য করে নিতু বলল।
বুড় আঙ্গুল উঁচু করে অদূরে বসে থাকা তুহিনকে গ্রেট সাইন দেখালো অনুপম
সব গেস্ট বিদায় দিয়ে নিতুকে নিয়ে বের হতে দেরি হয়ে গেল অনুপমের। রাস্তায় মানুষ জনের চলাচল কমে এসেছে, দু একটা গাড়ি শো শো শব্দ করে ওদের গাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছে। বনানীর এই রাস্তা নির্জন। সোডিয়াম লাইটের আলো যেখানে ক্ষীণ আঁধারের ভাগ বেশি তারই একপাশে অনুপম গাড়ি থামলো।
নিতু বলল -থামলে কেন?এমনিতেই অনেক রাত হয়ে গিয়েছে
অনুপমের জড়তাহীন উত্তর -আদর করব,তার আগে তোমাকে কিছু কথা বলব
-বল
নিতুর চোখে চোখ রেখে অনুপম বলল -শোন নিতু আমি যদি বলি তুমি আমার জীবনের প্রথম নারী তাহলে মিথ্যা বলা হবে, তোমার সাথে আমার যখন দেখা হয় তখন আমার বয়স সাইত্রিশ, এই সাইত্রিশ বছর জীবনে আমি বহু মেয়ের সঙ্গে ফ্লাট করেছি, তিন চারজন গার্লফ্রেন্ডও ছিল আমার
নিতু অবাক হয়ে বলল-একসঙ্গে তিন চারজন! কিভাবে সামলিয়েছো
অনুপম হেসে বলল -আরে ধুর গেছে আসছে টাইপ
-তারপর!
– এম.বি.এস পাশ করে আমি ভিয়েনা চলে যাই।ডিগ্রি টিগ্রি নিয়ে বাংলাদেশে যখন আশি বিয়ের বয়স পার হয়ে গিয়েছে, এই সাইত্রিশ বছরের বুড়োর জন্য মা যাকে পছন্দ করে আমার পছন্দ হয় না, আবার আমার পছন্দ হলে মেয়ের বাড়ির দিক থেকে রেড সিগনাল আসে, এমনই একটা সময় বেঙ্গল বুকে তোমার সাথে আমার দেখা, খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তোমার সুখের একটা সংসার আছে, ভাবলাম পিছু ফিরবো পারলাম না,
সেভেন্টি ডেইজ তোমাকে ফলো করলাম, নিজের সাথে যুদ্ধ করে সওুরতম দিনে তোমার সাথে প্রথম কথা বললাম। তোমাকে একটা দিন না দেখলে পাগল পাগল লাগে।তুমি ব্যাংককে সাতদিন থাকবে শুনে আমিও চলে গেলাম, পাতা ফাঁদে পা দিলাম, দশবছর তোমাকে না দেখে কাটিয়ে দিলাম।এই দশবছর আমি কোন মেয়ের সঙ্গে ফ্লাট করিনি কোন গার্লফ্রেন্ডও ছিল না, যেখানে হাত বাড়ালে সেক্স এত সস্তা সেখানে আমি রয়ে গেলাম নারী শূন্য, তুহিন মাঝে মাঝে তোমার খোঁজ দিত, ছবি সেন্ড করতো ওটাই হলো আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন।
দশবছর পর তোমাকে আবার পেলাম,এত গভীরভাবে পেলাম যা অন্যকোন নারীকে আমি পাইনি, সেই রাত হয়ে গেল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত
তুমি দেশে ফিরে এলে, আমিও ভাবলাম এই বিভীষিকাময় থাইল্যান্ডে আর নয়,তোমাকে নিয়ে সুইডেন পারি দিব,সবকিছু ঠিক করতে ছয়মাস লেগে গেল, দেশে আসলাম, আমার সমস্ত পৃথিবী তুমিময় হয়ে গেল, এই তুমিময় পৃথিবীতে কিভাবে আমি অন্য নারীকে এন্ট্রি দিব যেখানে তুমিহীনা পৃথিবীতেই পারিনি।
অনুপম কিছু সময় চুপ করে রইল, তারপর আবার বলল -এতকিছু বলার কারণ তুমি সানজানার ব্যাপারে রিয়্যাক্ট করেছো মুড অফ করে ছিলে, আমি কষ্ট পেয়েছি
অনুপম নিতুকে জড়িয়ে নিল শক্ত করে, কানের কাছে ফিসফিস করে বলল -ভাল না বাস ক্ষতি নেই দূরে ঠেলে দিও না, তোমাকে ছাড়া বাঁচব না নিতু, সত্যি বাঁচবো না।
চলবে
অসম
পর্ব ১৭
কলমে লিপিকা
অনুপম আর নিতু মুখোমুখি বসে আছে নিতুর অফিস কেবিনে। অনুপম নিতুর দিকে গম্ভীর ভাবে তাকিয়ে বলল – তাহলে তুমি যাচ্ছ না?
-যেতে চাচ্ছি না
-ওকে!গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে বলল।
অনুপম পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে কল লিস্টে যেয়ে ফোন করল
-নেশাল বলছ
-ইয়েস
-আমি অনুপম
-আঙ্কেল বলুন
-নেশাল আমি সাতদিন হসপিটাল করব না
-কেন আঙ্কেল? আপনি কি সিক?
-না,আমরা বন্ধুরা মিলে কক্সবাজার যাচ্ছি
-ও আচ্ছা
-নিতুকে বলেছিলাম কিন্তু রাজি হচ্ছে না, রিফ্রেশের জন্য ওর যাওয়া উচিৎ ছিল, সে যাই হোক, তুমি আমার ছুটিটা গ্র্যান্ড করে নিও।
-আঙ্কেল মাম্মা যাবে আপনি ব্যবস্থা করুন
-ওকে!
অনুপম টেবিলের উপর ফোন রেখে বলল- গেট রেডি, তোমার পারমিশন পেয়ে গিয়েছো
নিতু এক হাতের উপর মুখ রেখে বলল- মানুষ কতটা টাউট শ্রেণীর হয় তোমাকে না দেখলে অদেখা থেকে যেত
-ভদ্রভাবে কথা বল,এটাকে টাউট বলে না এটাকে বলে স্মার্টনেস।কলার ঝাকিয়ে অনুপম বলল।
-তা হ্যান্ডসাম লাভার বয় এবার বলুন আপনারা কারা কারা যাচ্ছেন
-আমি, তুমি আর তুহিন, তোড়া
-এক্সদের নিয়ে চল
-এক্স সামাল দেয়া ব্যাপার না ম্যাম বাট প্রেজেন্ট বড্ড বেসামাল, টিপস দাও
-মানে?
-অবাধ্য প্রেমিকাকে বসে আনার টিপস
-সানজানার মত সুন্দর মেয়ে বিয়ে করে দেখিও দাও তুমি আসলে কি ডিজার্ভ কর
নিতুর মুখের কাছে মুখ এনে অনুপম বলল এ্যাডভাইজার হিসেবে তুমি যে থার্ড ক্লাস সেটা কি তুমি জান?
নিতু হেসে বলল প্রেমিকা হিসেবেও থার্ড ক্লাস
অনুপম উঠে এসে নিতুর চেয়ারের হাতলে দু’হাতের ভর রেখে বলল- সে আমি বুঝবো
তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল- আগামীকাল সকাল নয়টায় ফ্লাইট।
ওরা চারজন যখন হোটেল নিলাদ্রিতে এসে পৌঁছাল তখন সকাল এগারোটা।লবিতে বসে চেক ইনের জন্য ওয়েট করছে।
তুহিন অনুপমের দিকে তাকিয়ে বলল -ওরাতো দেড়টার আগে চেকইন করতে দিবে না, চল্ বিচ থেকে ঘুরে আশি
-নিতুর মাইগ্রেনের সমস্যা আছে, এত রোদে বের হলে দেখা যাবে ট্রিপটাই মাটি
তোড়া নিতুকে বলল ভাইয়া কিন্তু তোমার প্রতি খুব কেয়ারিং
নিতু তোড়ার কথায় বিব্রত হলো,অনুপম নিতুকে আড়াল করতে বলে উঠলো -তোড়া তোমার এই সুন্দর বাক্য বিনিময়ের জন্য ট্রিট পাচ্ছ,বল কি খাবে
-আগে মেন্যু দেখি। উল্টো পাল্টা বললে ঠকে যেতে পারি।
অনুপম হেসে দিল
তুহিন বলল -তোড়া উঠ আমরা বিচ থেকে ঘুরে আশি।
তোড়া আর তুহিন চলে যাবার পর অনুপম নিতুকে বলল – are you feeling sick
-মাথা জ্যাম হয়ে আছে
-রাতে ঘুম হয়নি?
নিতু চুপ করে রইল, সাদাত চলে যাবার পর তার এই সমস্যা হচ্ছে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যখন পাশ ফিরে তাকায় তারপরই ঘুম ছুটে যায়।
অনুপম নিতুর কব্জিতে হালকা করে ধরল,নিতু হাত টেনে নিয়ে বলল -কি করছ?এটা পাবলিক প্লেস
-কি পাবলিক প্লেস পাবলিক প্লেস করছ, পালস্ রেট চেক করছিলাম
-সরি!
-এবার ঢাকা যেয়ে বেডরুম চেঞ্জ করে নিবে
-কেন
-আমি বলছি তাই
তুহিন যখন নিতুর হাতে রুমের কার্ড দিল তখন প্রায় দুটো। তুহিন অনুপমের দিকে তাকিয়ে বলল -এই নে তোর রুমের চাবি
অনুপম চাবির কার্ডটা মুখের সামনে ধরে বলল- কাগজের একটা সার্টিফিকেটের জন্য দুই রুমের ভাড়া গুণতে হচ্ছে
তুহিন বলল -নিতু সার্টিফিকেট পাওয়ার ব্যাবস্থা করে ফেল
নিতু ভাবলেশহীন ভাবে বলল -সার্টিফিকেট পেতে যোগ্যতা লাগে।
অনুপম তুরি বাজিয়ে বলল-আমি পরীক্ষা দিতে রাজি আছি তুহিন সিটপ্লান কর।
তুহিন হোঃহো করে হেসে উঠলো সাথে তোড়াও,তুহিন হাসতে হাসতে বলল- নিতু তুমি শেষ
নিতু লিফটের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল- তোমার বন্ধুকে মুখে লাগাম দিতে বল
চলবে
অসম
পর্ব ১৮
কলমে লিপিকা
নিতুর রুমে লাঞ্চ করার পর অনুপম ডিভানের উপর টানটান হয়ে শুয়ে পরলো। নিতু ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল -এখানে শুচ্ছ যে
– রুমের এসি নষ্ট
– আমাকে এটা বিশ্বাস করতে বলছো
– বিশ্বাস হচ্ছে নাতো,ওকে!লবিতে চলে যাচ্ছি।
নিতু বিছানায় শুয়ে ব্লাংকেট দিয়ে নিজেকে জরিয়ে নিয়ে বলল -বেডের ধারে কাছে ঘেঁষবে না
-মাথা এখনো জ্যাম হয়ে আছে?
– হুম
-মাসাজ করে দি
-লাগবে না
অনুপম উঠে এসে নিতুর বেডের পাশে বসলো,নিতুর চুলে আঙুল ডুবিয়ে বলল- তুমি ঘুমাও, আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
অনুপমের ঘুম ভাঙলো ফোন বাজার শব্দে। স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখল তুহিনের ফোন। ঘুম জরানো কন্ঠে বলল – বল্
– দোস্ত তোমার রুম সজানো কমপ্লিট, এসে চেক করে দেখ আরও কিছু লাগবে কিনা
– আসছি
– তারাতাড়ি আয়,তোড়া আবার সানসেট দেখবে
– ওকে
ফোন রেখে অনুপম নিতুর দিকে তাকিয়ে দেখলো নিতু কটমট করে অনুপমের দিকে তাকিয়ে আছে। অনুপম দুহাত দুদিকে মেলে দিয়ে বলল – আমি কিন্তু কিছু করিনি বরং তুমি আমার হাতের উপর মাথা রেখেছ,ওফ্ মাথার কি ওজনরে বাবা, রিতিমত হাত ব্যাথা করছে।
নিতু দাঁতে দাঁত চেপে বলল – পা সরাও আর রুম থেকে বেরোও
অনুপম হেসে বলল – সরি! সরি! একটু আধটু ভুল হতেই পারে, ঘুমের উপরতো আর কন্ট্রোল নেই।
অনুপম বেড ছেড়ে উঠে দাঁড়াল, নিতুর দিকে তাকিয়ে বলল – তোমার ওয়াশরুম ইউজ করতে পারি?
– এই একদম না,নিজের রুমে যাওতো, ওফ্ ঘুমাতেই দিচ্ছ না
অনুপম টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল, দশমিনিট পর মুখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে এল, আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করে নিয়ে রাডো ঘড়িটা হাতে জরিয়ে নিল,ফোন আর ওয়ালেট প্যান্টের পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে বলল- ঘুমিয়েছো
-হুম
– আমার দেরি হবে ফিরতে তুমি ডিনার করে নিও
– আচ্ছা
-ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিল এদিকে ঘুরবে
নিতু পাশ ফিরে অনুপমের দিকে তাকালো
– ভালবাসি,ভীষণ
নিতু হেসে দিল।
তোড়া আর তুহিন বিচে হাঁটছে,তোড়ার শাড়ির আঁচল বাতাসে পতপত করে পতাকার মতো উড়ছে তার সাথে চুলগুলো। পশ্চিম আকাশ লাল আভা ছড়াচ্ছে, একটু পরেই টুপ করে ডুবে যাবে সূর্য, তোড়া তুহিনের বাহুতে হাত গলিয়ে দিয়ে বলল – আকাশটাকে দেখে কি মনে হচ্ছে বলতো?
– তুমিই বল
– সূর্যের চুমু খেয়ে লাল হয়ে গিয়েছে
– খুব সুন্দর উপমা,আমারতো মনে হচ্ছে কোন কবি সাহিত্যিকও এত সুন্দর করে কখনো বলতে পারেনি।
– তুমি সূর্য হবে!
– অবশ্যই হব।আশেপাশে একবার তাকিয়ে বলল সূর্য আকাশকে নিয়ে ঘুমিয়ে যাবার পর হব
– লজ্জা পাচ্ছ?
– নিজের বউকে আদর করতে লজ্জা কি! তুহিন আচমকা তোড়াকে কোলে নিয়ে গোলাকার করে ঘুরতে লাগলো
তোড়া হাসতে হাসতে বলল- এই নামাও পরে যাব
– পরবে না, শক্ত করে আমার গলা জরিয়ে ধর।
নিতুর যখন ঘুম ভাঙলো তখন চারপাশে অন্ধকার বাসা বেধেছে, দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত আটটা,ফ্রেস হয়ে এসে গোলাপি জমিনে বেগুনি পার আঁচলের বাটিকের নকশা করা সুতি শাড়ি পরে নিল সাথে জারকানের কানে গলায়।নুড কালারের লিপস্টিক ছোঁয়ানোর পর এক স্নিগ্ধ দ্যূতি ছড়াচ্ছে ও মুখে।
কোনার যে টেবিল টা নিতু ডিনারের জন্য বেছে নিয়েছে সেখান থেকে সমুদ্রের গর্জন শোনা যাচ্ছে,উথাল পাথাল ঢেউ ঢেকে আছে আঁধারের পাটে,তারপরও অন্ধকার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভাল লাগছে নিতুর।
পার্স থেকে ফোন বের করে তুহিনকে কল করলো নিতু, বলল- তোমারা কোথায়?
তুহিন একগাল হেসে বলল – বিচে বসে প্রেম করছি
-অনুপম কই?
– বলতে পারছি না, তুমি কোথায়? চলে আস
– কাবাব মে হাড্ডি হতে চাচ্ছি না
– ওকে
ফোন কেটে দিয়ে এবার অনুপমকে ফোন করল নিতু,এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো কিন্নরী কন্ঠে মেয়েটি বলে উঠলো – সরি! দিস নাম্বার ইজ আনরিচেবল
নিঃসঙ্গতায় দম বন্ধ হয়ে আসছে নিতুর, সারাটা দিনের হিসেব মিলিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলো রাগ করার মতো কিছু কি করেছে। অভিমানে বেরিয়ে এল “এভাবে একা করেই যদি রাখবে তবে নিয়ে এলে কেন ”
চিকেন স্টুর বাটিতে চলতে থাকলো চামুচ আর নিতুর হাতের যুদ্ধ। অস্থিরতার তুঙ্গে এসে দাঁড়িয়ে পরলো নিতু, নিচে এসে লনে কিছুক্ষন হাঁটাহাটি করল নিতু, তারপর চলে এল লবিতে।
সোফায় বসে ম্যাগাজিনের পাতা উল্টালো,কিছুতেই কিছু ভাল লাগছে না।
লাস্ট যখন অনুপমকে ফোন করল তখনো নিতুর কানে বেজে উঠলো একই কথা। সমস্ত জড়তাকে পিষে ফেলে রাত সারে এগারোটায় নিতু তুহিনের দরজায় নক্ করলো
তোড়া দরজা খুলে নিতুকে দেখে হাসি মুখে বলল – আপু তুমি! এস ভিতরে এস
চিন্তা আর অস্থিরতা নিয়ে রুমে ঢুকে জল টলমল চোখে তুহিনের দিকে তাকিয়ে বলল – ও কোথায়?
চলবে