অসম পর্ব ১৯,২০,২১

অসম
পর্ব ১৯,২০,২১
কলমে লিপিকা
১৯

বিস্ময় আর অবিশ্বাসের চোখে নিতুর দিকে তাকালো তুহিন। মনে মনে বলল নিতু কাঁদছে তাও আবার অনুপমের জন্য। তুহিন নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে বলল – ফোন করেছিলে
চোখের জল অত্যন্ত সন্তর্পণে মুছে অস্ফুট স্বরে বলল – বন্ধ বলছে
তুহিন ভাবল একে আর কষ্ট দেয়া ঠিক হবে না,শ্বাস ফেলে বলল- ওর রুমে নক করেছিলে?
নিতু দু’দিকে মাথা ঝাকিয়ে না বলল
-এস আমার সঙ্গে
দুবার নক করতেই অনুপম বেরিয়ে এল,নিতুর চোখ মুখের দিকে তাকিয়ে তুহিনকে ইশারায় জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে ওর
তুহিনও ইশারায় বুঝিয়ে দিল তোর বিরহে দেওয়ানা
অনুপম মুচকি হেসে নিতুর দিকে তাকিয়ে বলল – কি হয়েছে তোমার
নিতুর চোখ অভিমান আর অভিযোগের জলে টইটম্বুর হয়ে উঠল
দরজা লক করে নিতুকে জরিয়ে ধরে অনুপম বলল -সরি
নিতু কান্না জরানো কন্ঠে বলল – ফোন বন্ধ কেন
-চার্জ চলে গিয়েছিল খেয়াল করিনি
– আমাকে একা করে এখানে বসে আছ
– তুমিইতো চলে যেতে বলেছ
-শাস্তি দিচ্ছ
– ওমন দিন যেন কোনদিন না আসে
– কিন্তু দিয়েছে
-নিজের অজান্তে, চোখ বন্ধ কর
-কেন
অনুপম তার অনামিকা নিতুর কপাল থেকে লম্বাভাবে টেনে এনে ঠোঁটে থামাল।নিতু আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলল। নিতুকে কোলে করে রুমের মাঝে দাঁড় করিয়ে দিল অনুপম। পিছন থেকে জরিয়ে চুলে নাক ডুবিয়ে বলল- Happy birth day my sweety, many many happy returns of the day.
নিতু বিস্ময়কর চোখে দেখলো তার চারপাশে ক্যানডেলের আলো প্রিয় ফুল হলুদ অলকানন্দায় রিফলেকশন হয়ে বিচ্ছুরণ হচ্ছে। টি টেবিলের উপর রাখা জলের যে বাটি তারই মাঝে খেলে যাচ্ছে পদ্ম,পাশে রাখা ছোট একটা রেইনবো কেক যাতে লিখা ” আমার ভালবাসায় তোমার প্রাণ বেঁচে থাক এক সহস্র বছর। ”
অদ্ভুত ভালো লাগা ছুঁয়ে গেল নিতুর মন,জল চিকচিক চোখে অনুপমের দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বলল – থ্যাংকস্
অনুপম নিতুর মুখ দু’হাতে আগলে উঁচু করে ধরল,কপালে কপাল ঠেকিয়ে গভীর আবেগ নিয়ে বলল –Try to fill this moment.
নিতুর হাতে থাকা ফোন ভাইব্রেট করে উঠলো, দুজনেই তাকালো ফোনের স্ক্রীনে,নিতুর হাত কেঁপে উঠল সাথে সারা শরীর, অনুপম বলল -রিল্যাক্স,আমি দেখছি
ভিডিও কলটা কেটে গিয়ে আবার বেজে উঠল, নিতু অনুপমের দিকে অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকালো, অনুপম আলো জ্বালাল,জানালার ধারে ডিভানের উপর নিতুকে বসিয়ে আশস্থ করে বলল – এখান থেকে রুমের কোন অংশই ভিডিওতে ধরা দিবে না তুমি নিশ্চিন্ত হয়ে কথা বল, আমি বারান্দায় আছি।
নিতু অনুপমের পিঠ খামচে ধরে ভয়ার্ত কন্ঠে বলল- যাবে না
– ওকে!নিতুর পায়ের কাছে অনুপম বসে পরলো।
তৃতীয়বারের কলটি রিসিভ করল নিতু, নেশাল মিষ্টি করে হেসে বলল – happy birth day my sweet sweetmeat mam
নিতুর আরস্টতা নিয়ে বলল – থ্যাংকস্
নিতুকে দেখে নেশালের মুখ চুপসে গেল, চিন্তার রেখা কপালে ফুটিয়ে তুলে বলল- তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন
– আমি ঠিক আছি
– মন খারাপ
– না
– তোমার বন্ধুরা তোমাকে উইশ করেনি
– কাল করবে হয়তো, আজতো অনেক রাত হয়ে গিয়েছে
-তুমি কি ওদের সাথে আনকমফোর্ট
– না
– মাম্মা শোন, আমি তোমাকে ভালো থাকার জন্য পাঠিয়েছি,তুমি যদি কমফোর্ট ফিল না কর তবে কাম ব্যাক, আমি টিকিট কনফার্ম করছি।
নেশালের কথা শুনে অনুপমের বুক কেঁপে উঠল, ইশারায় নিতুকে বলল মানা করতে
নিতু হেসে বলল – আমি ভালো আছি নিশু,টেনশন করার মত কিছু হয়নি, হিমি কোথায়
-বাবার বাড়ি
– কেন
-ওর বড় বোন অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছে তাই দেখা করতে গিয়েছে।
– ও আচ্ছা, তুই যাসনি
– গিয়েছিলাম চলে এসেছি
– অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পর,সুফিয়াকে বলবি তোর যা যা দরকার
-বলব,গুড নাইট
– গুড নাইট
নিতু ফোন কেটে দেয়ার পর অনুপম শ্বাস ছেড়ে বলল – টিকিট কনফার্ম করার কথা শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম
নিতু চুপ করে রইল
অনুপম তর্জনী দিয়ে নিতুর পায়ে হালকা ভাবে দাগ কাটতে কাটতে বলল- নেশাল তোমাকে ভীষণ ভালবাসে
– তাইতো ভয় হয় সবকিছু জানার পর ও যদি আমায় ঘেন্না করে। – ও বুদ্ধিমান, কখনো এটা করবে না, আমার মনে হয় তোমার ওর সঙ্গে কথা বলা উচিৎ।
– কেমন করে এসব বলব
– বাইরের কারো কাছ থেকে বিশ্রী গসিপ না শুনে তোমার কিম্বা আমার কাছ থেকে সত্য জানা ভাল নয়কি
-এসব ভাবতে ভালো লাগছে না,অনুপম
– ওকে! কিছু সময় চুপ করে থেকে অনুপম বলল -নিতু!
-হুঁম
পকেট থেকে প্লাটিনামের পায়েল বের করে নিতুর হাতে দিল, নিতু পায়েল হাতে নিয়ে মিহি কন্ঠে বলল -অপূর্ব
-দাও পরিয়ে দি
অনুপম পায়েল পরিয়ে দিয়ে বলল- শেকল পরিয়ে দিলাম, আজ থেকে উড়াউড়ি বন্ধ
-অন্যের খাঁচায় রেখে শেকল পরিয়ে লাভ কি,খাঁচা ভেঙে যদিও বা আসার চান্স ছিল সেটাও বন্ধ করে দিলে
– খাঁচা ভেঙে নয়,জয় করে নিয়ে আসব নিতু রানিকে
নিস্তব্ধতায় কেটে গেল আরও কিছু সময়,
অনুপম নিতুর পায়ে চুমু খেল,নিতুর সমস্ত শরীর শিউরে উঠলো, পায়ের আঙুল আপনা থেকেই কুঁচকে এল।অনুপম নিতুর কোমর জরিয়ে ধরে আবেগ নিয়ে বলল – তোমার ঐ একান্ত তুমিটাকে আমায় দিবে!
–I need some time
– how long
-I dont know
অনুপম নিতুকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে এল,তার বলিষ্ঠ দেহে নিতুর তুলতুলে নরম শরীরটাকে আঁকড়ে ধরল।কানের কাছে ফিসফিস করে বলল –do you trust me
-yeas
– তোমার অমতে আমি কিছু করব না, প্রমিজ
– আমি জানি
অনুপম গলা নামিয়ে ঘন হয়ে আসা কন্ঠে বলল – আমার এই সুন্দর সাজানো ঘরে তোমাকে অাহ্বান করছি নিতু
নিতু চুপ করে রইল
অনুপম নিতুর মুখ দু’হাতে আগলে উঁচু করে ধরে বলল- কিছু বলবে না!
নিতু আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল,শত সহস্র বাঁধাকে অতিক্রম করে বলল -আমি বোধহয় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি।
অনুপম আরও শক্ত করে নিতুকে আঁকড়ে ধরল,দুজনের শ্বাস ঘন হয়ে আসছে, নিতুর গলায় ঘাড়ে নাক ঘসতে ঘসতে অনুপম বলল – আমি তোমায় পূর্ণ করে দিচ্ছি।

চলবে
অসম
পর্ব ২০
কলমে লিপিকা
দরজার ঠকাঠক শব্দে অনুপমের ঘুম ভেঙে গেল, চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না, শব্দের বেগ বেড়ে যাওয়ায় ঘুম জরানো চোখ নিয়ে বিছানা থেকে নেমে এলো। কয়েক স্টেপ যাবার পর পায়ে বাঁধা পেল,চোখ কচলে নিচে তাকিয়ে দেখল নিতুর শাড়ীতে পা আটকিয়েছে,এলোমেলো ভাবে পরে আছে পেটিকোট, ব্লাউজ, কাচুলি,একটা একটা করে টুকে নিয়ে ডিভানের উপর রাখলো,মেঝে থেকে নিজের টিশার্ট তুলে নিয়ে গায়ে জরাতে জরাতে দরজা খুলে দিল।
অনুপমকে দেখে তুহিন বলল – আল্লাহ রহম কর! বেঁচে আছিস?
ভাবলেশহীন ভাবে অনুপম বলল -হুম
– হাজার বার কল করেছি, আধা ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি,সর এখন, তুহিন অনুপমকে সরিয়ে ভিতরে ঢুকতে চাইলে অনুপম বাঁধা দিয়ে বলল – নিতু ঘুমোচ্ছে
বিস্ময়কর চোখে অনুপমের দিকে এক পলক তাকালো তুহিন তারপর হেসে বলল – এ্যাট্ লাস্ট
– কেন খুঁজছিস
– মেরিন ড্রাইভে যাবি কিনা তার জন্য, এখনতো মনে হচ্ছে ভুল করে ফেলেছি
– তোরা যা আমরা পরে জয়েন করছি
তুহিন রহস্যময় মুখ নিয়ে বলল – দোস্ত কিভাবে কি হল
– তুই যা ভাবছিস ওরকম কিছু না
– তাহলে কি রকম কিছু
– তুই যাবি
তুহিন হাসতে হাসতে বলল- তাড়াতাড়ি চলে আশিস

তুহিন আর তোড়া পালংকি রেস্টুরেন্টে বসে অনুপম আর নিতুর জন্য ওয়েট করছে। মধ্য দুপুর, সূর্যের তেজ মাথার উপর গনগন করছে,নিতু আর অনুপম যখন ওদের সাথে জয়েন করলো তখন পালংকি গমগম করছে লোকজনে। নিতুকে দেখে তোড়া বলল – এত দেরি করলে কেন আপু
– সরি
-ইটস্ ওকে
আর চোখে নিতুকে দেখছিল অনুপম
তুহিন অনুপমকে বলল- কোনা করে দেখছিস কেন, সরাসরি দেখ কিছু মনে করবো না
অনুপম হেসে বলল – চল্ লাঞ্চ করে নিই, তারপর বাকী সব হবে
– ওকে! অরগানাইজারের যেমন ইচ্ছে
তোড়া নিতুর দিকে মেন্যু কার্ড ঠেলে দিয়ে বলল – পড়ে দেখ কি সুইট করে ওরা খাবারের নাম লিখেছে
নিতু মেন্যু বুক পড়ে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল- সো সুইট, অনুপম পড়ে দেখ
অনুপম মেন্যু বুক তুলে নিয়ে বলতে শুরু করল-
নরম গরম
কক্সবাজারের টারজান – পাহাড়ি মুরগী ভুনা
হাসফাস – নারকেল দুধে হাঁসের মাংস
জন্ম থেকে জ্বলছি
শিক কাবাব
রেশমি কাবাব
আর পারছি না, পেট শুধু খাবার চাই চাই করছে

লাঞ্চ করে গাড়িতে উঠে অনুপম বলল- ড্রাইভার ভাই এসি বন্ধ করে জানালা খুলে দিন আমরা প্রাকৃতিক বাতাস খেতে খেতে যাব,তোড়া তোমার কোন সমস্যা হবে
– না ভাইয়া
বাতাসে নিতুর অবাধ্য চুল উড়ছে, অনুপম প্রাণভরে লম্বা শ্বাস নিয়ে নিতুর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল -ডলসি গারবানা!
নিতু কপট রাগ দেখিয়ে বলল- মেয়েদের পারফিউম নিয়েও আজকাল রিসার্চ করা হচ্ছে
– উ হুঁ, শুধু নিতু রানীর

মেরিন ড্রাইভ প্রকৃতির এক অপূর্ব সৌন্দর্যের লীলাভূমি, একদিকে পাহাড় অন্যদিকে সমুদ্র।সমুদ্রের উত্তাল ভালবাসা পাহাড়ের মত জড়তায় মিশে সবুজে হারায়। কি যে সুন্দর ঐ পর্বত যা দেখে সমুদ্র উথাল পাথাল হয়ে গর্জে উঠে। পাহাড় আর সমুদ্রের মাঝে দিয়ে চলে গিয়েছে মাইল কি মাইল পথ।এ সৌন্দর্য বর্ননাতীত।

অনুপমের জিরো পয়েন্ট দেখার ইচ্ছে ছিল কিন্তু সময়ের অভাবে সম্ভব হলো না, সূর্যাস্ত দেখার জন্য পাটোয়ারটেক বিচে চলে এল ওরা।

পাটোয়ারটেক বিচ রাস্তা থেকে ঢালু,অনুপমের হাত ধরে নিতু সাবধানে বিচে নেমে এলো।দু তিনটি বাচ্চা মেয়ে লতাপাতা জরানো ক্রাউন নিয়ে এল।নিতু আর তোড়ার দিকে ক্রাউন এগিয়ে দিয়ে বলল – ম্যাম আপনাদের জন্য গিফট
অনুপম ওয়ালেট থেকে দুটি একশো টাকার নোট বের করে বাচ্চা দুটোর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল – দেখি আমার হাতে দাও
একটা ক্রাউন তোড়ার হাতে দিয়ে অন্যটা নিতুর মাথায় পরিয়ে দিল।

পাটোয়ারটেক বিচে রয়েছে বিশাল বিশাল পাথর, ঢেউ এসে আঁচড় কাটছে পাথরে,সূর্য ঢলে পরেছে পশ্চিম আকাশে, শেষ বিকেলের কনে দেখা আলোয় পাহাড় আর সমুদ্র ছড়িয়ে দিচ্ছিল তাদের সৌন্দর্য।
এত সুন্দরের মাঝেও নিতুর ভিতর হাহাকার ঠেলে উঠে একধরনের অপরাধবোধ কাজ করছে, গতকালের রাতটা সুক্ষ্ম সুচের মতো খোঁচা দিয়ে যাচ্ছে।
অনুপম নিতুকে বলল – চল পাথরের উপর বসে সূর্যাস্ত দেখি
নিতু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো
নিতুকে পাথরের উপর বসিয়ে দিয়ে অনুপমও ওর পাশে বসে পরলো। নিতুর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় পুরে প্রচন্ড আবেগ নিয়ে বলল – মুড অফ কেন
নিতু চুপ করে রইল
অনুপম ধীরে ধীরে বলল- আমরা কিন্তু যথেষ্ট এডাল্ট,দুজন দুজনকে ভালওবাসি,আমাদের এই ভালবাসায় অন্য কেউ ঠকে যাচ্ছে না কারণ আমরা দুজনেই সিঙ্গেল, ভালবেসে ভালো থাকাটা আমাদের অধিকার, এ অধিকার থেকে আমরা যদি কাছাকাছি আশি তাতে দোষ কোথায়
– আমিতো তোমাকে ভালবাসি না
– আচ্ছা এই কথা,কে জেন আমাকে না দেখে কেঁদে কেটে একাকার হয়ে যাচ্ছিল
– ওটা হিউম্যানিটি
অনুপম নিজের কপাল দিয়ে নিতুর কপালে টাক দিয়ে বলল – ভাল না বেসেই এত দূর, ওহ্ মাই গড! ভালবাসলে না জানি কি হবে এটা ভাবতেই কেমন কেমন জানি লাগছে।
নিতু অনুপমের পিঠে আস্তে করে কিল দিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল অনুপমের এমন বেঢপ কথা শুনে, আর অনুপম হাসতে হাসতে দুহাত দিয়ে নিতুর সুখময় আঘাত প্রোটেস্ট করে যাচ্ছিল।

চলবে
অসম
পর্ব ২১
লেখিকা তানিয়া রহমান
দুটো লাগেজ গোছানোর পর অনুপম গাল ফুলিয়ে শ্বাস ছেড়ে বলল -এখন তোমার ঐ রুমটা চেক করতে হবে
নিতু বসা থেকে উঠে বলল- আমি চেক করে আসছি
– একদম না, বোস বলছি, এক সেকেন্ডের জন্যও আমার চোখের আড়াল হবে না
নিতু আবার ডিভানে বসে দু’হাতের উপর মুখ রেখে অনুপমের দিকে তাকিয়ে রইল
অনুপম লাগেজ দুটো রুমের একপাশে রেখে এসে নিতুর পাশে বসলো, নিতুর একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল – সময়টা কেমন ঘোড়ার রেসের মতো পাল্লা দিয়ে চলে গেল, এ কদিনে আমি তোমাতে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছি,ঢাকায় ফিরতে হবে এটা ভাবতে বুকের ভিতর কেমন করছে।

অনুপমের কথার মাঝে নিতুর ফোন বেজে উঠল, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে নিতুর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। অনুপম নিতুর দিকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল – কথা বল
নিতু কাঁপা কাঁপা গলায় ফোন রিসিভ করল
– মাম্মা, কাল কখন আসছ
– বাসায় ফিরতে দুটোর বেশি বেজে যাবে
– গাড়ি পাঠাব
– লাগবে না
– হিমি এখনো আসেনি আর সুফিয়া খালার নাতি অসুস্থ, দুদিন ছুটি নিয়েছে তুমি লাঞ্চ করে বাসায় এস
– আচ্ছা
– ওকে! কাল দেখা হচ্ছে, গুড নাইট
– গুড নাইট

আলো আধারী রুমে নিতু আর অনুপম পাশাপাশি শুয়ে আছে, নিতুর হাত যথারীতি অনুপমের হাতের মুঠোয়, নিতুর দিকে পাশ ফিরে অনুপম নিতুর মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বলল- সাতচল্লিশ বছরের উপোস ভাঙ্গিয়ে সরে পরছো, কেমন করে থাকবো বলোতো
– সব সময় অসভ্যতা
অনুপম হেসে বলল – আর বলব না, এবার কাজের কথা বলি, ঢাকায় গিয়ে সুইডিশ ভিসার জন্য এ্যাপলাই করবে
– করবো, আর?
– বেডরুম চেঞ্জ করবে
-সম্ভব না,নেশাল ভালো চোখে দেখবে না, তারপর?
অনুপম আদুরে গলায় বলল -রাতে ঘুমাতে পার না তার কি হবে
-ঘুমাতে চেষ্টা করবো, আর কিছু
– কল করা মাত্র রিসিভ করবে
-হুম, বলে যাও
– ভালবাসি,ভীষণ
– আমিও
অনুপম হাস্যজ্জ্বোল মুখে বলল – আমি কি ঠিক শুনছি
– হুম
– রিয়েলি! এ-ও আমার কপালে ছিল নিতু! আমি বোধহয় এবার সত্যি পাগল হয়ে যাব
নিতু হেসে বলল – তুমি পাগল হতে থাক আমি ঘুমাচ্ছি

ওরা চারজন যখন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালো তখন ১২.৩০,অনুপম ওর নিজস্ব ড্রাইভার মোরশেদকে ওয়ালেট থেকে পাঁচশত টাকার নোট বের করে দিয়ে বলল – বাসায় চলে যাও, আমি ড্রাইভ করব
মোরশেদ বিনয়ের সাথে টাকা নিয়ে লাগেজ দুটো গাড়ির পিছনে তুলে দিয়ে বলল – স্যার আমি তাহলে আশি
– ওকে!

লাঞ্চ করে নিতুর বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে তিনটা বেজে গেল, ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে দরজা খুলে নিতু অনুপমকে বলল- বোস
অনুপম নিতুকে এক হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এল, ফুঁ দিয়ে নিতুর কপালের চুলগুল উড়িয়ে দিয়ে বলল – তোমার সঙ্গতো আমার ভালোই লাগে নিতু রানী কিন্তু আজ যেতে হবে, জানাইতো ভাইয়া ভাবী এব্রোড থেকে এসেছে
নিতু অনুপমের বুকে মাথা রেখে বলল- থ্যাংকস্ ফর এভরিথিং
– প্লিজ নো মেনশন
নিতুর কপালে চুমু একেঁ দিয়ে অনুপম বলল – কাল দেখা হচ্ছে, এখন শাওয়ার নিয়ে রেস্ট কর

অনুপম আর নিতুর এই বিদায়ী সম্ভাষণ নেশালকে হতবাক করে দিল, নিতুর দরজা খুলার শব্দ পেয়ে নেশাল রুম থেকে বেরিয়ে এসেছিল তার মাম্মাকে ওয়েলকাম জানাতে, সিড়ির কাছে এসে দাঁড়াতেই তার চোখ পরে এই নিষিদ্ধ চিত্রে।কিছু সময় হতবাক হয়ে নেশাল আবার পা বাড়ালো নিজের রুমের দিকে।

বাসায় ফিরে অনুপম টানা তিনঘণ্টা ঘুমালো,ঘুম থেকে উঠে ওয়াশ রুমে যায়, ফিরে এসে দেখলো অনুপমের ভাবী রত্না বেডের পাশে সোফায় বসে আছে অনুপমকে দেখে রত্না বলল- শেষ পর্যন্ত দেখা মিললো
– সরি ভাবী, কেমন আছ
– দেবরের বিয়ে ভালোতো থাকতেই হবে
– বিয়ে মানে, ঠিক বুঝলাম না
– সানজানার প্রেমে যে হাবুডুবু খাচ্ছো তা আর লুকিয়ে লাভ কি
– কি সব বলছ, তুমিতো সবই জান
– জানি বলেইতো অবাক হয়েছি
-মা তোমাদেরকে এসব বলেছে
-হুম, তোমার ভাইয়া তোমার সাথে কথা বলে ডেট ফাইনাল করতে চাচ্ছে
– বিয়ে যদি করি তো নিতুকেই করব
-একতরফা ভাবে আর কত
– ব্যাপারটা এখন আর একতরফা নেই, আমরা দুজনেই দুজনকে চাই
-রিয়েলি!
– হুম
– মা নিতুর কথা জানে?
– আমি বলেছি, তারপরও এমন কেন করছে বুঝতে পারছি না
– হয়তো মানতে পারছে না
– ভাবী প্লিজ, ওদের বোঝাও না
– বাদ দাও , নিতু তোমাদের সঙ্গে গিয়েছিল
– হুম
– ছবি দেখাও
– অনুপম ফোন হাতে নিয়ে গ্যালারী অপশনে গিয়ে ছবি বের করে দিয়ে রত্নার হাতে ফোন দিল।
রত্না একটার পর একটা ছবি দেখে দেখতে দেখতে বলল- জমিয়ে প্রেম করছো মনে হয়
অনুপম লাজুক হাসি দিল
– বার্থডে সেলিব্রেশন কেমন হলো
অনুপম মাথা চুলকে বলল- তুহিন তোমাকে সব বলেছে তাই না
– সব বলেনি, তোমার গলার কাছে দাগ দেখে বাকীটা বুঝে নিয়েছি
অনুপম রত্নার কথা শোনার পর আপনা থেকেই একটা হাত গলার কাছে চলে এল, মনে মনে বলল – টাওয়াল দিয়ে ঢেকে রাখার পরও দেখলো কিভাবে, কি চোখরে বাবা
অনুপমের চুপসে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে রত্না হাসতে হাসতে বলল- ডিনার করতে আস,সবাই ওয়েট করছে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here