হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ৪,৫

#হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ৪,৫
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ৪

–Thank You.

তামিম পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল মায়া দাঁড়িয়ে আছে তার সাথে জান্নাতও।

তামিমঃ Thank You কেন.?

মায়াঃ যেই ছেলেগুলোকে আমাকে টিজ করেছিল তাদেরকে শায়েস্তা করার জন্য।

তামিমঃ আমি কখন তাদেরকে শায়েস্তা করলাম.?

মায়াঃ সেটা তো আমি দেখি নি তবে এটা জানি আপনি ওদেরকে শায়েস্তা করেছেন বিধায় ওরা সকালের ঘটনার জন্য আমার কাছে এসে মাফ চেয়েছে।

তামিমঃ আপনাকে কে বলেছে যে আমি ওদেরকে শায়েস্তা করেছি.?

মায়াঃ জান্নাত নিজেই তো বললো।

তামিমঃ কিরে তুই নিজ চোখে দেখেছিস আমি ওদেরকে

জান্নাতঃ দেখার কি আছে, আমি তো জানি এইসব কাজ একজনই করতে পারে আর সেটা হলে তুমি।

তামিমঃ যাকে চিনি না, জানি না তার জন্য কেন আমি ওদেরকে শায়েস্তা করবো.? হয়তো উনার বয়ফ্রেন্ড এই কাজটা করেছে।

মায়াঃ আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই।

তামিমঃ তাহলে আপনার কোনো পাগলা আশিক এই কাজটা করেছে মেবি।

জান্নাতঃ হে এটাও হতে পারে, মায়ার তো আবার আশিকের অভাব নেই। কলেজে থাকাকালীন ছেলেদের থেকে কতো প্রপোজাল যে সে পেয়েছে.! তাদের মধ্যে থেকে কেউ একজন মেবি এই কাজটা করেছে।

তামিমঃ হুম ওদের মধ্যে থেকেই কেউ একজন হবে। হয়েছে এখন বাসায় যা (চেহারায় কিছুটা রাগ এনে)।

জান্নাতঃ হু যাচ্ছি যাচ্ছি, চল মায়া।

তারপর জান্নাত আর মায়া সেখান থেকে চলে গেল। কিছু পথ যাওয়ার পর মায়া বললো…

মায়াঃ কিরে তুই না বললি এই কাজটা উনি করেছেন। তাহলে উনার সামনে বললি কেন যে আমার কোনো আশিক হয়তো এই কাজটা করেছে.?

জান্নাতঃ আরে এমনি বলেছি, এই কাজটা তামিম ভাইয়াই করেছেন কিন্তু উনি এটা স্বীকার করবেন না আমি জানি। তাই তখন উনার সামনে এই কথাটা বললাম।

মায়াঃ ওহ।

জান্নাতের ধারণাটাই ঠিক, তামিম ই এই কাজটা করেছে। ভার্সিটিতে ছেলেরা যদি অকারণে কোনো মেয়েকে টিজ করে তাহলে তামিম তাদেরকে উচিত শিক্ষা দেয়। আজকে যে ছেলেগুলো মায়াকে টিজ করেছিল তারা মায়ার এক ক্লাস সিনিয়র। তামিমকে তাঁরা খুব ভালো করেই চিনে সাথে অনেক মানেও তাই তামিমের বলা মাত্রই ওরা মায়ার কাছে এসে পা ধরে মাফ চেয়েছে। তবে তামিম এইসব কাজ করে কখনো প্রকাশ করতে চায়না যে সে-ই এইসব করেছে।

রাতেরবেলা…

রুমে বসে বসে তামিম ফেসবুকিং করছিল এমন সময় তার ফোনে একটা মেসেজ আসে। মেসেজটা ওপেন করতেই তামিম বেশ অবাক হলো। সেদিনের অচেনা নাম্বার থেকে আজকেও মেসেজ এসেছে। মেসেজটা পড়ে তামিম আরও অবাক হয় কারণ আজকের মেসেজের লিখাটা হলো ‘আপনাকে খুব মিস করছি’। গতকালের মেসেজটা সে ফান হিসেবে নিলেও আজকের মেসেজটা নিতে পারল না। একটা অচেনা নাম্বার থেকে পর পর ২ দিন মেসেজ আসাটা স্বাভাবিক ব্যাপার না আর আজকের মেসেজটা ফান হিসেবেও নেওয়ার মতো না। কে এই মেসেজটা দিয়েছে এটা জানার জন্য তামিম ওই অচেনা নাম্বারে ফোন দেয়। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ওই নাম্বারটায় কল যাচ্ছে না অথচ একটু আগেই কেউ এই নাম্বার থেকে মেসেজটা দিয়েছে। তার মানে ওই ব্যক্তি মেসেজটা দিয়েই তার নাম্বারটা ব্লক করে রেখেছে যাতে সে এই নাম্বারে কল দিতে না পারে।

তামিম কিছুতেই বুঝতে পারছে না তাকে এই মেসেজটা কে দিতে পারে। তামিম এক গভীর ভাবনায় পরে গেল এই মেসেজ দেওয়ার বিষয়টা নিয়ে। কিছুক্ষণ ভাবার পর তামিমের মনে হলো এই মেসেজটা ওই মায়া মেয়েটা দেয়নি তো.? কিন্তু ও আমার নাম্বার কই পাবে.? হতেও পারে জান্নাতের থেকে নিয়েছে। কিন্তু আমি কীভাবে শিওর হব যে মেসেজটা মায়া দিয়েছে.? সে যদি দিয়েই থাকে তাহলে নিশ্চয়ই জান্নাতের থেকে আমার নাম্বারটা নিয়েছে। দেখি তো জান্নাতকে জিজ্ঞেস করে ও কিছু বলে কি না। তামিম আবার ফেসবুকে ঢুকে জান্নাতকে একটা মেসেজ দিল যে, সে কাউকে তার নাম্বার দিয়েছে কি না।
জান্নাত তখন ফেসবুকেই ছিল তাই সাথে সাথে রিপ্লাই দিয়ে বললো, না দেইনি। তামিম আর কিছু বললো না। জান্নাত আবার মেসেজ দিয়ে বললো, কেন কি হয়েছে হঠাৎ এই প্রশ্ন.?
কিছু হয়নি এমনি জিজ্ঞেস, করলাম বলেই তামিম অনলাইন থেকে বেরিয়ে আসলো। অতঃপর এই বিষয়ে ভাবা বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে পরল।

এদিকে সেই অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ দেওয়া মানুষটা নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো, উফ কেন যে তুই উনাকে আজ মেসেজ দিলি, উনি হয়তো প্রথমদিনের মেসেজটা ইগনোর করেছিলেন তাই সেদিন কোনো মেসেজ বা কল দেননি, বাট আজকে উনি ডাইরেক্ট কল দিয়ে বসলেন.! এই নাম্বারটা কার আর আমিই বা উনার নাম্বার কীভাবে পেলাম হয়তো এটা জানার জন্য উনি কল দিয়েছিলেন কিন্তু আমি তো উনার সাথে কথা বলতে পারবো না আমার লজ্জা করে। আমি জানতাম উনি আজ মেসেজটা পড়লে কল দিবেন ই দিবেন তাইতো মেসেজটা দিয়েই উনার নাম্বারটা ব্লক করে ফেলি। ইশ কবে উনাকে আমার মনের কথাটা বলবো.! আমার মনের কথাগুলো শুনে উনি আমায় ফিরিয়ে দিবেন না তো.? দূর এইসব নেগেটিভ চিন্তাভাবনা না করাই ভালো। যেদিন উনাকে সামনা-সামনি দেখবো সেদিনই উনাকে নিজের মনের কথাগুলো বলে দিব। তারপর যা হবার হবে। আপাতত এখন উনার এই ছবিটাকে নিয়েই ভবিষ্যতের চিন্তা করি, বলেই মেয়েটা তামিমের ছবিতে একটা চুমু খেয়ে ছবিটা তার বুকের মধ্যে চেপে ধরলো আর ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিল।

সকালবেলা…

মায়া ভার্সিটিতে ঢোকার সময় এদিক সেদিক তাকাতে লাগলো। তার তাকানো দেখে পাশ থেকে জান্নাত বললো…

জান্নাতঃ কিরে এইভাবে তাকিয়ে কাকে খুজছিস.?

মায়াঃ আরে গতকালকে যে কিছু ছেলেরা আমায় টিজ করেছিল তাদেরকে তো আজকে কোথাও দেখছি না.!

জান্নাতঃ আর কখনো দেখবিও না।

মায়াঃ কেন.?

জান্নাতঃ গতকাল তামিম ভাইয়া হয়তো বলে দিয়েছে আর যেন কাউকে টিজ না করে তাহলে এখানে আর থেকে কি করবে.? তাই হয়তো সবকটা ক্লাসে গিয়ে বসে আছে।

মায়াঃ ছেলেগুলো উনাকে এতো ভয় পায়.!

জান্নাতঃ হ্যাঁ।

মায়াঃ কিন্তু কেন এতো ভয় পায়.?

জান্নাতঃ কি জানি।

জান্নাত আর মায়া এই প্রসঙ্গে কথা বলতে বলতে ক্লাসে চলে আসলো। ক্লাসে আসার কিছুক্ষণ পর স্যার ক্লাসে এসে ক্লাস শুরু করে দিলেন।

এইভাবেই কেটে গেল বেশ কিছুদিন। এই কয়দিনে তামিমের সাথে মায়ার অনেকবার দেখা হয়েছে, দেখা হওয়ার পাশাপাশি একে অন্যের সাথে দুজনের কথাও হয়েছে। তবে তামিম এখনো মায়াকে আপনি করেই বলে।
এদিকে সেই অচেনা নাম্বার থেকে এই কয়দিনে তামিমকে আর মেসেজ দেওয়া হয়নি তাই তামিমও অচেনা নাম্বারটা নিয়ে আর কিছু ভাবে নি।

–––––––

রাত প্রায় ১০ টা বাজে, তামিম তখন এক জায়গা থেকে বাসায় ফিরছিল। চার রাস্তার মোড়ে আসতেই তার কানে কিছু মানুষের দৌড়ানোর আওয়াজ এসে পৌছাল। আওয়াজটা পিছন থেকে আসছে আর কিছু মানুষ এদিকেই দৌড়ে আসছে। তামিম শরীরটা ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে তাকাতেই একটা কালো বোরকা পরিহিতা মেয়ে তার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে পরলো। মেয়েটার পুরো শরীর এক অজানা ভয়ে কাঁপছে। হয়তো মেয়েটা কোনো খারাপ মানুষের পাল্লায় পরেছিল আর সেখান থেকে দৌড়ে এইখানে এসেছে।

তামিমঃ এই মেয়ে কে আপনি আর আমার পিছনে এসে লুকিয়েছেন কেন.?

মেয়েটা তামিমের দিকে একবার তাকাল অতঃপর তার বোরকার নেকাবটা খোলে ফেললো। মেয়েটাকে দেখেই তামিম চমকে উঠলো আর বললো, মায়া আপনি.!
.
.
.
.
.
Loading…….

#হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ৫
,,
,,
,,
,,
(গল্প পড়া শেষে সবাই অবশ্যই নিচের লেখাগুলো পড়বেন)
তামিম চোখ বড় বড় করে মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ার চেহারায় ভয়ের সাথে বিন্দু বিন্দু ঘামও দেখা যাচ্ছে। মায়ার এ অবস্থা দেখে তামিম বললো…

তামিমঃ আপনার চেহারা এমন দেখাচ্ছে কেন কি হয়েছে আপনার.?

তামিমের প্রশ্নের উত্তরে মায়া কিছুই বললো না শুধু কাঁপা কাঁপা হাতে আঙুল দিয়ে সামনের দিকে ইশারা করল। তামিম ঘাড় ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই দেখল একটা পাগল তাদের থেকে ১০ হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তামিম এবার বুঝতে পারলো মায়ার চেহারায় ভয়ের চাপ কেন দেখাচ্ছে। নিশ্চয়ই এই পাগলটা তাকে রাস্তার মধ্যে একা পেয়ে ওকে ভয় দেখাচ্ছিল। তামিম পাগলটাকে একটা ধমক দিল আর ওমনি পাগলটা দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেল। তামিম এবার মায়ার দিকে তাকিয়ে বললো…

তামিমঃ ওই পাগলটাকে দেখে ভয় পেয়েছেন.?

মায়াঃ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।

তামিমঃ আপনি এতো রাতে কোথায় গেছিলেন.?

মায়াঃ ফার্মেসীতে।

তামিমঃ কেন.? (কপাল কুচকে)

মায়াঃ সন্ধ্যার সময় হঠাৎ আব্বুর শরীরে জর চলে আসে। অন্য সময় জর হলে একদিন পর সেটা বেড়ে যেত তাই ভাবলাম এইবারও এমনটাই হবে তাই আর ঔষধ খাওয়ানোর প্রয়োজন মনে করি নি। ভেবেছিলাম সকাল হলে ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে ঔষধ কিনে দিয়ে যাব। কিন্তু রাতে খাওয়ার সময় আব্বুকে ডাক দিতেই দেখলাম উনি কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছেন। আমি উনার পাশের গিয়ে শরীরে হাত দিতেই দেখলাম ভিষণ জর এসেছে। এই শরীর নিয়ে তো আব্বু উঠতেই পারছিল না আর বাসায়ও জরের কোনো ঔষধ ছিল না তাই আমিই আব্বুর জন্য ঔষধ কিনতে বেরিয়ে পরলাম। ঔষধ কিনে বাসার আসার মাঝ পথেই হঠাৎ ওই পাগলটার সামনা-সামনি পরে যাই। আমাকে দেখেই সে আস্তে আস্তে আমার দিকে এগুতে লাগলো আমিও তাই দ্রুত পা চালাতে লাগলাম সাথে সেও আরও দ্রুত আমার দিকে আসতে লাগলো তাই ভয়ে দৌড়াতে শুরু করি আর দৌড়াতে দৌড়াতে এই পর্যন্ত চলে আসি (কথাগুলো বলেই মায়া থামলো)।

তামিমঃ বাসায় কি আর কোনো পুরুষ মানুষ নেই আপনার বাবা ছাড়া.? মানে আপনার কোনো ভাই নেই.?

মায়াঃ না আমি একাই।

তামিমঃ আপনার বাসার আশেপাশের বাসাগুলোতেও কি কোনো পুরুষ মানুষ নেই.? যাদের সাথে আপনার পরিবারের খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে.?

মায়াঃ এতো রাতে তাদেরকে গিয়ে ঔষধ আনতে বলবো এটা আমার কাছে ভালো লাগেনি তাই আমিই ঔষধ নিতে চলে আসি।

তামিমঃ ঔষধ আনার কথা বলতে কে বলেছে, তাদেরকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখতেন যে তাদের কাছে জরের ঔষধ আছে কি না।

মায়াঃ আসলে তখন আমার মাথায় এসবের কিছুই আসেনি তাই জিজ্ঞেস করি নি।

তামিমঃ সাথে মোবাইল আছে আপনার.?

মায়াঃ জী আছে।

তামিমঃ দেন তো দেখি।

মায়াঃ কেন কি করবেন.?

তামিমঃ দিতে বলছি দেন বাড়তি কথা বলেন কেন.? (কিছুটা রাগ দেখিয়ে)

মায়া আর কিছু না বলে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে তামিমের দিকে এগিয়ে দিল। তামিম মায়ার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে তার ফোন নাম্বার উঠিয়ে একটা কল দিল। পকেটে থাকা ফোনটা বেজে উঠতেই তামিম কল কেটে দিয়ে মায়ার ফোনটা আবার তার কাছে দিয়ে দিল।

তামিমঃ এই নেন আপনার ফোন। আমার নাম্বার সেভ করে দিলাম আপনার ফোনে। নেক্সট টাইম রাতেরবেলা যদি কোনো ইমার্জেন্সি প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে একটা কল দিবেন আমি আপনাদের বাসার কাছে চলে আসবো।

মায়াঃ অচেনা একজনকে তুমি করে বলতে চান না অথচ তাকে নিজের ফোন নাম্বারটা দিয়ে দিলেন আর তার ইমার্জেন্সি প্রয়োজনে এতো রাতে তাকে হেল্প করতে চলে আসবেন.! আমি তো আপনার কিছু হইনা তাহলে কেন আমার জন্য এতোকিছু করবেন.?

তামিমঃ আপনি জান্নাতের খুব ভালো বন্ধু আর জান্নাত আমার বোনের মতোই। সেই সুবাদে আপনাকে হেল্প করবো।

মায়াঃ ওহ

তামিমঃ জী এবার চলেন আপনাকে আপনার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি।

মায়াঃ না না আপনাকে এতো কষ্ট করতে হবে না, আমি একাই বাসায় চলে যেতে পারবো (যদিও তার একটু আগের ভয়টা এখনো কাটেনি তবুও কথাটা বললো)।

তামিমঃ আপনার চেহারাই বলে দিচ্ছে আপনি একা যেতে পারবেন কি না। চলেন আর দাঁড়িয়ে থাকা লাগবে না, আপনাকে আপনার বাসায় দিয়ে আসি।

মায়াঃ আচ্ছা চলেন।

তারপর তামিম মায়াকে নিয়ে তার বাসায় দিকে হাটা ধরলো। রাস্তার মধ্যে তাদের আর কোনো কথা হয়নি। প্রায় কিছুক্ষণ পর মায়াদের বাসার কাছে তাঁরা চলে আসলো।

তামিমঃ আচ্ছা তাহলে আপনি এবার বাসায় যান আমিও নিজের বাসায় যাই।

মায়াঃ বাসায় ঢুকবেন না আমাদের.? না মানে আমায় এতোটা পথ এগিয়ে দিলেন একটু চা-পানি খেয়ে যান।

তামিমঃ না থাক অন্য একদিন আসলে খাব নে, আজ না।

মায়াঃ সেই দিনটা কি আর আসবে.?

তামিমঃ ভাগ্য যেহেতু আমাদের এতবার দেখা করাচ্ছে তাহলে এটাও ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেন (মুচকি হেসে)।

মায়াঃ যদি এটা ভাগ্যে না থাকে.?

তামিমঃ তাহলে তো আর কিছু করার নেই। আচ্ছা এখন বাসায় যান আমিও গেলাম।

মায়াঃ আচ্ছা বলে বাসার ভিতরে চলে গেল।

মায়া চলে যাওয়ার পর তামিমও ওইখান থেকে তাঁর বাসায় চলে আসলো।

এদিকে মায়া বাসায় এসে ঢুকতেই তাঁর আম্মু তাকে দেখে দৌড়ে এগিয়ে আসলেন আর বললেন, কিরে মা সেই কখন বাসা থেকে বেরিয়ে গেলি আর এখন আসলি.! রাস্তায় কি কোনো সমস্যায় পরেছিলি.?

মায়াঃ না আম্মু তেমন কিছু না, আসলে ফার্মেসীওয়ালা ঔষধ খুজে পাচ্ছিল না তাই একটু দেড়ি হয়ে গেছে।

মায়ার আম্মুঃ ও এই ব্যাপার, আচ্ছা এখন যা তোর আব্বুকে গিয়ে ঔষধ গুলো খাইয়ে দে।

মায়াঃ হে যাচ্ছি।

তারপর মায়া ঔষধগুলো নিয়ে তার আব্বুর রুমে গিয়ে উনাকে ঔষধ খাইয়ে দিল। ঔষধ খাইয়ে দিয়ে মায়া তার রুমে চলে আসলো। রুমে এসে বোরকা খুলে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিল। কিন্তু হঠাৎ মায়ার একটু আগের কথা মনে পরে গেল। উনি তো আমার ফোনে নিজের নাম্বার সেভ করে দিয়েছে দেখি তো কি নামে সেভ করেছে। মায়া তার ফোনের কন্টাক্টে ঢুকে দেখল তামিম ভাই নামে নাম্বারটা সেভ করা হয়েছে। তামিমের নামের সাথে ভাই শব্দটা দেখে মায়ার কেন জানি একটু রাগ হলো তাই সে এডিট অপশনে ক্লিক করে তামিমের পাশে ভাই শব্দটা কেটে দিয়ে সেভ করে নিল আর মনে মনে বললো, উনি আমার কোন জন্মের ভাই লাগেন যে উনার নামের সাথে ভাই শব্দটা এড করে দিছেন.? নাকি জান্নাতের একরকম ভাই হোন বলে আমারও ভাই.? এহ আমার ঠেকা পরছে উনাকে ভাই বানানোর। থাকুক উনার নাম এইভাবেই, উনি তো আর আমার ফোন নিয়ে চেক করবেন না যে উনার নাম চেঞ্জ করেছি নাকি। উফফ অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমিয়ে পরি, কাল তো আবার ভার্সিটিতেও যেতে হবে।

–––––––

–কিরে মায়া তুই তামিম ভাইয়ার নাম্বার পেলি কোথায়.? তোর ফোনে তো দেখছি তামিম ভাইয়ার নাম্বার সেভ করা, তাও শুধু তামিম নাম দিয়ে.!

টিফিন পিরিয়ডে মায়া আর জান্নাত ভার্সিটির কেন্টিনে নাস্তা করতে আসে। জান্নাতের ফোনে ব্যালেন্স নেই তাই সে মায়ার থেকে তার ফোনটা চেয়ে নেয় ফারহানকে কল দেওয়ার জন্য। কিন্তু কল লিস্টে তামিমের নাম্বার দেখে জান্নাত কিছুটা চমকে উঠে সাথে সাথে সে নাম্বারটা ভালো করে দেখে অতঃপর মায়াকে প্রশ্নটা করে। জান্নাতের কথা শুনে মায়া কিছুটা চিন্তায় পরে যায় এটা ভেবে যে সে এখন জান্নাতের করা প্রশ্নের জবাবে কি বলবে। তামিম তার থেকে ২ ক্লাস সিনিয়র, বয়সের দিক দিয়েও অনেক বড় আর সে কি না ওর নাম্বার শুধু তামিম নামে সেভ করে রেখেছে.! মায়া তবুও স্বাভাবিক থেকেই বললো…

মায়াঃ আসলে হয়েছে কি শুন (তারপর সে জান্নাতকে গতকাল রাতের ঘটনাটা বললো)। এই কারণে উনি উনার নাম্বার আমার ফোনে সেভ করে দিয়েছেন যাতে নেক্সট টাইম কোনো ইমার্জেন্সি প্রয়োজনে উনাকে কল দিয়ে বলি।

জান্নাতঃ সবই বুঝলাম কিন্তু উনার নাম্বার শুধু তামিম নামে সেভ করা কেন.? উনি কি নিজ থেকে এই নামে সেভ করে দিয়েছেন নাকি তুই করেছিস.?

মায়াঃ আমি কেন করবো, উনিই করেছেন (মিথ্যা বললো নাহলে সে ঝামেলায় পরে যাবে)।

জান্নাতঃ তুই সত্যি বলছিস তো, উনিই তোকে উনার নাম্বার দিয়েছেন.? উনি তোর থেকে বড় হওয়া সত্তেও এইভাবে উনার নাম্বার তোর ফোনে সেভ করে দিয়েছেন.! বিষয়টা মাথায় ঢুকছে না আমার।

মায়াঃ আরে মিথ্যা বলবো কেন.? তোর বিশ্বাস না হলে উনাকেই জিজ্ঞেস করিস যা। আর ঢুকা লাগবেও না ফোন যে কারণে নিয়েছিস সেই কাজটা করে শেষ কর আর এই খাবারগুলো তোর পেটে ঢুকা তাহলেই হবে।

জান্নাতঃ দ্বারা এক মিনিট বলেই সে ফারহানের নাম্বারে একটা মেসেজ দিয়ে বললো, আমি জান্নাত আমার ফোনে ব্যালেন্স শেষ, আপনি ফ্রি থাকলে আমার ফোনে একটা কল দিয়েন, আপনার সাথে কথা আছে আর এটা আমার এক বান্ধবীর ফোন তাই এই ফোনে কল দিয়েন না।

মেসেজটা দিয়েই সে মায়ার কাছে তার ফোনটা দিয়ে দিল। তারপর দুজনে নাস্তা খেয়ে আবার ক্লাসে চলে আসলো। এইভাবেই কেটে প্রায় ১৫ দিন। এখন তামিম আর মায়ার একে অন্যের সাথে দেখা হলে দুজনেই একে অন্যের সাথে ভালো মন্দ কথা বলে, এই যেমন কেমন আছেন.? পড়াশোনা কেমন হচ্ছে এইটুকুই। এইভাবেই চলছিল তাদের দিনকাল।
.
.
.
.
.
Loading…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here