হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ৮,৯

#হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব,পর্বঃ- ৮,৯
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ৮

–আরে তুমি আমার রুমে এলে কবে.? আর আমার ফোন তোমার হাতে কেন.?

মায়ার নাম্বারটা ব্লক করে দিয়ে নীলা তামিমের ফেসবুক আইডিতে ঢুকে ফ্রেন্ড লিস্ট চেক করছিল। হঠাৎ তামিম ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখল নীলা তার ফোন নিয়ে কি যেন করছে। তাই তামিম নীলাকে উপরের প্রশ্নটা করে। হঠাৎ তামিমের গলার আওয়াজ শুনে নীলা ধড়ফড়িয়ে উঠলো আর সাথে সাথে তামিমের ফোনটা টেবিলে রেখে দিয়ে তামিমের দিকে তাকিয়ে বললো…

নীলাঃ না মানে আপনার জন্য আনা গিফটটা দিতে আসছিলাম। এসে দেখি আপনি রুমে নেই তাই চলে যাচ্ছিলাম, ঠিক তখনই আপনার ফোনে একটা মেসেজ আসে তাই ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজটা চেক করছিলাম।

তামিমঃ কে মেসেজ দিয়েছে.?

নীলাঃ Gp কোম্পানি।

তামিমঃ ঠিক আছে এবার যাও তুমি।

নীলাঃ আপনার গিফট.?

তামিমঃ কি এনেছ.?

নীলাঃ খুলেই দেখেন, এই নেন (বলেই একটা কাগজে মোড়ানো প্যাকেট তামিমের দিকে এগিয়ে দিল)।

তামিমঃ ওকে দেখব নে পরে, তুমি এবার যাও।

নীলাঃ এখনই দেখেন না, এখন দেখলে তো আর কোনো সমস্যা নেই।

তামিম বুঝতে পারলো এই গিফটের প্যাকেট না খোলা পর্যন্ত এই মেয়েটা রুম থেকে যাবে না তাই সে একপ্রকার বাধ্য হয়েই প্যাকেটটা খুলল। প্যাকেট খুলে দেখল ভিতরে একটা হাত ঘড়ি। হাত ঘড়ি তামিমের এতোটা পছন্দ না তবুও নীলাকে খুশি করার জন্য তামিম একটা মিথ্যা বললো।

তামিমঃ বাহ ঘড়িটা তো খুব সুন্দর.! কবে কিনেছ এটা.?

নীলাঃ সত্যি.! আপনার পছন্দ হয়েছে এটা.? আজকে মার্কেট করার সময়ই কিনে ছিলাম যখন আপনি একটু বাহিরে গেছিলেন।

তামিমঃ ওহ আচ্ছা। হে অনেক সুন্দর ঘড়িটা।

নীলাঃ তাহলে কাল থেকে এটা পরে ভার্সিটিতে যাবেন ওকে.?

তামিমঃ ওকে।

নীলাঃ আচ্ছা আমি তাহলে এখন যাই গুড নাইট (বলেই খুশি মনে তামিমের রুম থেকে বেরিয়ে গেল)।

নীলা চলে যাওয়ার পর তামিম তার ফোনটা হাতে নিয়ে ফোনের মেসেজ লিস্টে ঢুকলো এটা দেখার জন্য যে সত্যিই ফোনে কোনো মেসেজ এসেছে কি না। কিন্তু না কোথাও কোনো মেসেজ আসে নি। তার মানে কি নীলা তাকে মিথ্যা বলেছে.? তাহলে সে তার ফোন নিয়ে এতক্ষণ কি করছিল.? তামিম আর এ বিষয়ে মাথা ঘামাল না, তার ফোনে এমন কোনো জিনিস নেই যেটা মানুষ দেখলে তাকে খারাপ ভাববে, এক কথায় তার ফোনে কোনো সিক্রেট জিনিসই নেই তাই সে তার ফোনে কখনো লক ব্যবহারই করে না। বড় কথা ফোনে লক লাগানোটা তামিমের ভালো লাগে না। তাই সে তার ফোনে নরমাল লক দিয়েই রাখে। অতঃপর তামিম নীলার দেওয়া ঘড়িটা টেবিলে রেখে ফোনটা নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে ঘুরাঘুরি করতে লাগলো।

এদিকে মায়া বার বার তামিমের নাম্বারে ফোন দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ততবারই ফোনটা ব্যস্ত দেখাচ্ছে। অবশেষে মায়া বুঝতে পারলো তার নাম্বারটা ব্লক করে রাখা হয়েছে।
-তামিম ভাইয়া তো নিজেই আমাকে উনার নাম্বার দিয়েছেন যাতে কোনো প্রয়োজনে উনাকে ফোন করি তাহলে উনি আমায় ব্লক করবেন কেন.? তাহলে কি ওই মেয়েটা আমার নাম্বার ব্লক করে রেখেছে.? আর ওই মেয়েটাই বা কে যে তামিম ভাইয়ার বদলে ফোন রিছিভ করেছে.? আর ও নিজেকে তামিম ভাইয়ার বউ বলে দাবি করলো কেন.? তাহলে কি সত্যিই তামিম ভাইয়া বিয়ে করে ফেলেছেন.? তার মানে আজকে সন্ধ্যার সময় যে উনাকে দুইটা মেয়ের সাথে মার্কেটে দেখেছিলাম তখন মার্কেট শেষে বাসায় ফেরার সময় কি ওরা দুজন কাজি অফিস থেকে বিয়ে করে বাসায় গেছে.? উফফ কিছুই মাথায় ঢুকছে না আমার।

আজ সন্ধ্যায় মায়া তার আম্মুর সাথে একটু মার্কেটে গেছিল কিছু কেনাকাটার জন্য। মায়া সেখানে তামিমকেও দেখতে পায় দুইটা মেয়ের সাথে। একটা মেয়েকে তো সে চিনে যাকে ওইদিন তামিমের সাথে রিক্সায় দেখেছিল মানে তামিমের কাজিন। কিন্তু আরেকটা মেয়ে কে ছিল এটা মায়া চিনতে পারে নি। তাই রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে মায়া তামিমের নাম্বার ফোন দেয় বিষয়টা ভালো করে বোঝার জন্য। কিন্তু তখন তামিম ওয়াশরুমে থাকায় ফোনটা নীলা রিছিভ করে আর তাদের বিয়ে হয়ে গেছে মিথ্যা বলে কল কেটে মায়ার নাম্বার ব্লক করে দেয়। তারপর থেকেই মায়া তামিমের নাম্বারে একের পর এক কল দিতেই থাকে, কিন্তু নাম্বার ব্লক লিস্টে থাকায় তামিম তার কিছুই টের পায়নি। মায়া অনেক্ষণ ভাবা ভাবির পর জান্নাতের নাম্বারে কল দিল এই বিষয়ে জানার জন্য। কয়েকবার রিং হতেই জান্নাত কল রিছিভ করলো।

জান্নাতঃ হে মায়া বল এতো রাতে ফোন দিলি যে.?

মায়াঃ আচ্ছা জান্নাত, তামিম ভাইয়ার কি আজ কারও সাথে বিয়ে হয়েছে.?

জান্নাতঃ কিহহ.! তামিম ভাইয়ার বিয়ে মানে কার সাথে বিয়ে হবে উনার.?

মায়াঃ আরে উনার আজ কারও সাথে বিয়ে হয়েছে কি না এটা বল.?

জান্নাতঃ নাহ কার সাথে বিয়ে হবে আজব.! তুই হঠাৎ ফোন দিয়ে এইসব জিজ্ঞেস করছিস কেন কি হয়েছে বল তো.?

তারপর মায়া জান্নাতকে সব বললো। সব শুনে জান্নাত বললো…

জান্নাতঃ হয়তো ওটা উনার ওই কাজিন হবে আর দুষ্টুমি করে তোকে এই কথাটা বলেছে।

মায়াঃ এতো বড় একটা মেয়ে যে কিনা ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে সে এমন বিষয় নিয়ে দুষ্টুমি করবে এটা কেমন কথা.? আর দুষ্টুমি করলে ও আমার নাম্বার ব্লক করলো কেন.?

জান্নাতঃ কি জানি, তা তুই হঠাৎ তামিম ভাইয়াকে ফোন দিয়েছিলি কেন.?

মায়াঃ একটা দরকারে।

জান্নাতঃ কি দরকার.?

মায়াঃ তোর জানা লাগবে না ঘুমা তুই (বলেই রাগ দেখিয়ে কল কেটে দেয়)

জান্নাত কিছুক্ষণ পর আবার মায়ার নাম্বারে কল দিল কিন্তু মায়া কল কেটে দিল। এইভাবে আরও কয়েকবার কল আসলো আর প্রতিবারের মতোই মায়া জান্নাতের কল কেটে দিল। অবশেষে আর জান্নাত কল দিল না। মায়াও আর জেগে না থেকে ওই মেয়েটার বলা কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরল।

––––––––

–শুনলাম আপনি নাকি বিয়ে করেছেন.?

ভার্সিটি যাওয়ার পথে মায়া আজকেও রাস্তায় তামিমকে পেয়ে যায় আর তামিমের কাছে এসে উপরের প্রশ্নটা করে। হুট করে তামিমের সামনে মায়া এসে উপস্থিত হওয়া অতঃপর এমন অদ্ভুত প্রশ্ন করাতে তামিম বেশ অবাক হয় আর বলে…

তামিমঃ হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন.?

মায়াঃ পরে বলবো আগে যেটা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দেন।

তামিমঃ এখনো পড়াশোনাই শেষ হয়নি তাহলে বিয়ের কথা আসলো কোথা থেকে.? আমার মতো ছেলের কাছে কে তার মেয়েকে বিয়ে দিবে বা কোন মেয়েই বা আমার মতো ছেলেকে বিয়ে করবে যে কিনা এখনো পড়াশোনা করছে.?

মায়াঃ তার মানে আপনি বিয়ে করেন নি.? (অনেকটা খুশি হয়ে)

তামিমঃ আমার কথার মানে কি বুঝেন না.?

মায়াঃ সোজাসুজি বলেন, বিয়ে করেছেন নাকি.?

তামিমঃ নাহ করি নি (কিছুটা বিরক্ত হয়ে)।

মায়াঃ তাহলে গতকাল যে আপনার নাম্বারে কল দিলাম কে ফোন রিছিভ করেছিল.? আর সে কেন ফোন রিছিভ করে বললো যে সে আপনার বউ.?

তামিমঃ গতকাল আপনি আমায় ফোন দিলেন কবে.? (অনেকটা অবাক হয়ে)

মায়াঃ রাত ১০ টার দিকে দিয়েছিলাম, তখন একটা মেয়ে ফোন ধরেছিল আর ধরে বললো সে নাকি আপনার বউ আর আজকে নাকি আপনাদের বিয়ে হয়েছে।

তামিম কিছু বুঝতে না পেরে তার ফোনটা বের করে ফোনের কল লিস্টে ঢুকলো আর দেখল সত্যিই মায়া তাকে গতকাল রাতে কল দিয়েছিল তাও ১০ টারও বেশি কল.! তামিম এটা দেখে বেশ অবাক হলো আর যখন দেখল মায়ার নাম্বার ব্লক লিস্টে তখন সে আরও অবাক হলো। তামিম ভেবে পাচ্ছে না মায়ার নাম্বার ব্লক লিস্টে গেল কিভাবে, সে তো তাকে ব্লক করেনি, আর গতকাল এতো কল দিয়েছে মায়া তার কিছুই তামিম টের পায়নি কেন। তামিম মনে মনে ভাবলো তাহলে কি নীলা মায়ার কল রিছিভ করেছিল.? আর মায়াকে এই সেই বলে শেষে ব্লক করে দেয় আর তাই মায়া এতো কল দেওয়ার পরও আমি টের পাইনি। কারণ গতকাল রাতে নীলা যখন আমার রুমে এসেছিল তখন তার হাতে আমার ফোন দেখেছিলাম।

মায়াঃ কি হলো আপনি এতো কি ভাবছেন.?

তামিমঃ হে না কিছু নাহ।

মায়াঃ তা ওই মেয়েটা কে ছিল যে আমার ফোন রিছিভ করেছিল.?

তামিমঃ ওটা আমার ওই কাজিন ছিল।

মায়াঃ ও আপনার রুমে ছিল নাকি.?

তামিমঃ আরে নাহ, একটা গিফট এনেছিল আমার জন্য সেটা দেওয়ার জন্যই রুমে এসেছিল। তখন আমি ওয়াশরুমে ছিলাম তাই মনে হয় সে কল রিছিভ করেছিল।

মায়াঃ তো উনি এইসব বললো কেন যে উনি আপনার বউ, আর আপনাদের আজ বিয়ে হয়েছে।

তামিমঃ হয়তো আপনার সাথে মজা করেছে, আচ্ছা বাদ দেন আর বলেন গতকাল আপনি কল কেন করেছিলেন.?

মায়াঃ গতকাল সন্ধ্যায় আপনাকে দুইটা মেয়ের সাথে মার্কেটে দেখেছিলাম। তার মধ্যে একজন আপনার কাজিন অপরজন কে ছিল এটা জানার জন্য কল দিয়েছিলাম।

তামিমঃ ওইটা আমার ছোট বোন ছিল। বাই দ্যা ওয়েহ আপনার কেন এইসব জানার আগ্রহ জাগলো.?

মায়াঃ না মানে এমনিই

তামিমঃ ওহ।

তারপর তামিম আর কথা বাড়ালো না, মায়াও আর কিছু জিজ্ঞেস করল না কারণ তার যা জানার ছিল সে জেনে গেছে। কিন্তু ওই মেয়েটা তার কাছে এইসব কেন বললো মায়া এটাই ভেবে পাচ্ছে না। সারা রাস্তায় মায়া এ নিয়েই ভাবতে থাকলো কিন্তু তামিমকে আর কিছু জিজ্ঞেস করল না এ ব্যাপারে। কিছুক্ষণ পর তাঁরা ভার্সিটিতে চলে আসলে দুজনেই যার যার ক্লাসে চলে গেল।
.
.
.
.
.
Loading…… ❤️

#হৃদয়_দিয়ে_ভালোবাসিব
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ৯
,,
,,
,,
,,
–আচ্ছা তুই গতকাল রাতে আমায় কল দিয়ে ওইসব কথা জিজ্ঞেস করলি কেন.?

মায়া ক্লাসে ঢুকে জান্নাতের পাশের সিটে গিয়ে বসতেই জান্নাত মায়ার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলে উঠলো।

মায়াঃ এমনিই জিজ্ঞেস করেছিলাম।

জান্নাতঃ তাহলে গতকাল তামিম ভাইয়াকেও কি এমনিই কল দিয়েছিলি.?

মায়াঃ তুই কিভাবে জানলি যে আমি গতকাল তামিম ভাইয়াকে কল দিয়েছি.?

জান্নাতঃ তুই নিজেই তো ফোন করে বললি আমায় এটা। আরও বললি তামিম ভাইয়ার ফোন কোনো একটা মেয়ে রিছিভ করেছে আর কি কি যেন বলেছে যে তামিম ভাইয়ার সাথে তার বিয়ে হয়ে গেছে আর সে নাকি তামিম ভাইয়ার বউ।

মায়াঃ ওহ হে মনে পরেছে, আমিই তোকে বলেছিলাম এইসব।

জান্নাতঃ তা এতো রাতে তুমি তামিম ভাইয়াকে কেন কল দিয়েছিলে হুম.?

মায়াঃ না মানে

জান্নাতঃ মানে সামথিং সামথিং তাইনা.?

মায়াঃ কি সামথিং সামথিং.?

জান্নাতঃ মানে তুমি তামিম ভাইয়ার প্রেমে পরে গেছ এটাই।

মায়াঃ আরে দুর কি বলছিস এইসব, তুই যা ভাবছিস তার কিছুই না।

জান্নাতঃ তাহলে গতকাল কেন তামিম ভাইয়াকে কল দিয়েছিলি শুনি.?

জান্নাতের কথায় মায়া আর কিছু বলতে পারলো না। মায়া একেবারে চুপ করে বসে রইলো। কিছুক্ষণ পর ক্লাসে স্যার চলে আসলে মায়া হাফ ছেড়ে বাঁচল এটা ভেবে যে যাক জান্নাত আর তাকে এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবে না। তারপর ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেলে মায়া জান্নাতকে ফাঁকি দিয়ে বাসায় চলে যাবে, এটা ভেবে মায়া ক্লাসে মনোযোগ দিল।

–––––––

ভার্সিটি শেষে তামিম বাসায় এসে খাওয়া দাওয়া করে মিলির রুমে গিয়ে নীলাকে তার রুমে আসতে বলে সে তার রুমে চলে এলো। তামিম নীলাকে তার রুমে ঢেকেছে এটা ভাবতেই নীলা অবাক হচ্ছে। -হঠাৎ তামিম ভাইয়া কেন আমায় উনার রুমে আসতে বললো.? উনিও আমার জন্য কোনো গিফট এনেছেন নাকি.? নাকি গতকাল রাতের বিষয়টা উনি জেনে গেলেন.? দুর এতো ভেবে লাভ নেই, আগে যাই উনার রুমে তাহলেই বুঝতে পারবো উনি কেন ডেকেছেন।

নীলা তাদের রুম থেকে বেরিয়ে তামিমের রুমে আসলো আর ভিতরে ঢুকে দেখল তামিম বিছানায় বসে বসে ফোন টিপছে।

নীলাঃ জী বলুন কেন ডেকেছেন আমায়.?

তামিমঃ তোমাকে কিছু প্রশ্ন করবো এখন, আশা করি তার সঠিক উত্তর দিবে।

নীলাঃ জী বলুন কি প্রশ্ন.?

তামিমঃ গতকাল রাতে তুমি যখন আমার রুমে এসেছিলে তখন কি আমার ফোনে কেউ কল দিয়েছিল.?

নীলাঃ নাহ তখন শুধু একটা মেসেজ এসেছিল গতকাল রাতে তো বললাম ই।

তামিমঃ ওকে, তাহলে কি তুমি কারও নাম্বার ব্লক করেছিলে.?

নীলাঃ নাহ আমি কেন কারও নাম্বার ব্লক করবো.?

তামিমঃ কর নি তাইনা.?

নীলাঃ নাহ।

তামিমঃ সত্যি বলছ তো.?

নীলাঃ আজব তো মিথ্যা বলবো কেন.?

তামিমঃ ওকে তুমি তাহলে এখন যাও।

নীলাঃ আচ্ছা, তা হঠাৎ আমায় এইসব জিজ্ঞেস করলেন কেন.?

তামিমঃ এমনিই, তুমি যাও এখন।

নীলাঃ আচ্ছা বলে তামিমের রুম থেকে বেরিয়ে আবার মিলির রুমে চলে আসলো। আমায় কি আপনি এতোই বোকা পেয়েছেন যে কারও কল রিছিভ করবো আর সেটার হিস্টোরি ডিলেট করবো না.! এতোটা বোকা এই নীলা চৌধুরী নয় মিস্টার তামিম (বলেই মনে মনে একটা ডেভিল হাসি দিল)।

তামিমঃ মেয়েটা আমার সাথে মিথ্যা বলে ভাবছে আমি তার কিছুই টের পাব না.! অথচ আমার ফোনে অলটাইম কল রেকর্ডের সিস্টেম চালু করা থাকে যা কেউ জানেই নাহ হাহা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে নীলা কেন মায়াকে এইসব বললো.? আর মায়ার নাম্বার ব্লক কেন করলো.? কি চায় সে.?

রাতেরবেলা…

মায়া তার রুমে শুয়ে শুয়ে নীলার বিষয়ে ভাবছে।
-আচ্ছা ওই মেয়েটা কেন আমায় ওইসব বললো.? আর মজা করেই যদি বলে থাকে তাহলে কেন আমার নাম্বার ব্লক করেছিল.? কি চায় ওই মেয়েটা.? নাকি ওই মেয়েটা তামিম ভাইয়াকে ভালোবাসে.? না না এটা কিভাবে হবে, ও তো তামিম ভাইয়ার কাজিন হয় তা ছাড়া ও তামিম ভাইয়ার থেকে অনেক ছোট। ও যদি তামিম ভাইয়াকে ভালোই বাসে তাহলে তামিম ভাইয়া কি ওকে ভালোবাসবেন.? আমার তো মনে হয়না উনি বাসবেন। আচ্ছা আমি ইদানীং উনাকে নিয়ে এতো ভাবছি কেন.? উনার সাথে যেদিন ওই মেয়েটাকে প্রথম দেখেছিলাম সেদিন আমার কেমন যেন লেগেছিল তারপর আবার আরেকদিন মার্কেটে উনার সাথে ওই মেয়েটাকে দেখেও আমার কেমন যেন লেগেছিল আর গতকাল মেয়েটা যখন বললো ও উনার বউ আর তাঁরা আজকে বিয়ে করেছেন এটা শোনার পর থেকে আমার এতো চিন্তা হচ্ছিলো কেন.? তার মানে কি আমি উনাকে ভালোবেসে ফেললাম.? কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে না যে আমি উনাকে ভালোবেসে ফেলেছি, তাহলে কেন ইদানীং আমি উনাকে নিয়ে এতো ভাবছি.?

মায়া নিজেও এইসবের কিছুই বুঝতে পারছে না। সে কি তামিমকে ভালোবেসে ফেলেছে নাকি না এটাও তার বুঝে আসছে না। মায়া আর এতোকিছু না ভেবে দিল একটা ঘুম কারণ এইসব নিয়ে সে যত ভাববে ততই তার মনে অনেক প্রশ্নের উদয় হবে আর এতে তার রাতের ঘুমটাই উড়ে যাবে।

–––––––

এদিকে নীলা শুয়ে শুয়ে ভাবছে।
-আচ্ছা এই মায়া মেয়েটা কে যে গতকাল তামিম ভাইয়াকে ফোন দিয়েছিল.? মেয়েটা কি উনার গার্লফ্রেন্ড.? নাকি ফ্রেন্ড.? ফ্রেন্ড হলে ঠিক আছে, বাট গার্লফ্রেন্ড হলে ওর জীবনে অনেক কষ্ট আসতে চলেছে কারণ তামিম ভাইয়া শুধু আমার আর কারও না। কয়েকদিনের মধ্যেই উনাকে আমি নিজের ভালোবাসার কথাটা জানিয়ে দিব যে আমি উনাকে সেই ক্লাস নাইন থেকে ভালোবাসি। কিন্তু উনি যদি আমাকে ফিরিয়ে দেন আর বলেন উনার গার্লফ্রেন্ড আছে তাহলে.? সমস্যা নেই, উনাকে কিভাবে নিজের করতে হবে এটা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। তার আগে উনাকে ভালো করে বুঝিয়ে বলবো যদি না বোঝেন তাহলে কি করতে হবে তা আমার ভালো করেই জানা আছে। ইশ কবে যে উনার সাথে আমার বিয়েটা হবে (বলেই নীলা তার পাশে শুয়ে থাকা মিলিকে জড়িয়ে ধরলো)।

মিলিঃ কি হয়েছে আপু হঠাৎ এইভাবে জড়িয়ে ধরলে যে.? দুলাভাইকে সপ্নে দেখে আমায় ধরলে নাকি.?

নীলাঃ না গো সোনা, ভাবছি কবে যে উনার সাথে আমার বিয়েটা হবে আর উনাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাব।

মিলিঃ তার মানে কি তুমি কাউকে ভালোবাস.?

নীলাঃ হুম (চেহারায় কিছুটা লজ্জার চাপ এনে)।

মিলিঃ কে উনি আপু.? উনিও কি তোমায় ভালোবাসে.?

নীলাঃ সময় হলেই জানতে পারবি, আর উনি আমাকে ভালোবাসে কি না জানি না কারণ আমি এখনো উনাকে নিজের ভালোবাসার কথা জানাই নি।

মিলিঃ কেন জানাও নি.?

নীলাঃ সেই সুযোগই হয়ে উঠেনি এখনো।

মিলিঃ তো কবে জানাবে.?

নীলাঃ খুব শীগ্রই।

মিলিঃ তা দুলাভাই দেখতে কেমন.?

নীলাঃ আমার কাছে উনি কোনো হিরোর চেয়ে কম না।

মিলিঃ তাই.! তা উনাকে কবে থেকে ভালোবাস তুমি.?

নীলাঃ ক্লাস নাইন থেকে।

মিলিঃ বল কি.! ক্লাস নাইন থেকে ভালোবাস আর এখনো উনাকে নিজের ভালোবাসার কথা জানাও নি.? কেন উনি কি বাহিরের দেশে থাকেন নাকি.?

নীলাঃ আরে না বললাম না সেই সুযোগ এখনো হয়ে উঠেনি। আচ্ছা এবার ঘুমা অনেক রাত হয়েছে, আমার ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমালাম (বলেই অন্যপাশ হয়ে শুয়ে পরল)।

মিলিঃ কোথায় এতো রাত হলো, মাত্র তো ১১ টা বাজে। গতকাল তো ১২ টা পর্যন্ত গল্প করেছিলে।

নীলাঃ কিন্তু আজ আমার খুব ঘুম পাচ্ছে তাই আজকে আর গল্প করার মোড নেই। ঘুমিয়ে পর এখন।

মিলিঃ আচ্ছা।
.
.
.
.
.
Loading……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here