হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸,পর্বঃ৫,৬

হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸,পর্বঃ৫,৬
আদিলা
পর্বঃ৫

জাবির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। হটাৎ ইয়ামিনার নামে এসব কথা শুনে রাগে তার মাথা গরম হয়ে যায়। ইয়ামিনাকে সে নিজের বোনের মত ভালবাসে। তার ব্যাপারে এসব সে কখনও শুনতে পারবে না।।। জাবির সামনে এসে লোক দুটোকে মারতে নিলে তার আগে লোক দুটোকে কেউ থাপ্পড় মেরে বসে। ইয়ামিনা পাশে তাকাতে অবাক হয়ে বলে… ইভান ভাইয়া।।

চোখ জোরা লাল করে ইভান লোক দুটোর কলার ধরে বলে…কি পেয়েছিস কি তোরা তোদের টাকা বাড়ি গাড়ি নাম সুনাম আছে বলে কি আমাদের সম্মান নেই। সাহস কিভাবে হলো আমার বোনের নামে বাজে কথা বলা। তোকে তো আজ আমি…. বলে ইভান মারতে নিলে জাবির এসে থামিয়ে লোক গুলোকে বেদারাম পিটায়।। কারন লোক গুলো বড় মাপের হওয়া ইভান ওদের সাথে পেরে উঠবে না কেসে ফাসিয়ে দিতে পারে তাই জাবির এসে লোক গুলাকে মারে।।
জাবির লোক গুলোর কলার ধরে তারপর বলে….আর কোনো দিনও যেন কোনো মেয়েকে ইভটিচিং না করতে দেখি তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না। গার্ডসগুলোকে ইশারা করতে তারা ওই লোকগুলোকে টেনে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।।।

…………..🌸🌸

অনুষ্ঠান শেষ। সব গেস্টরা চলে গেছে।। পুরো বাড়িতে পিন পিন নিরবতা।।। ইভান দাতমুখ চোয়াল শক্ত করে দাড়িয়ে আছে।।একটু আগে কি হয়েছে না হয়েছে সেখানে আমিরের কোনো ভাবান্তরই নেই।। আমির সেখান থেকে চলে যেতে নিলে…. ইভান চিৎকার দিয়ে জাবিরের দিকে তাকিয়ে বলে…আমরা মধ্যবিত্ত বলে কি আমাদের মান সম্মান কি কিছুই নেই। আমির হুইল চেয়ার থেকে হাত সরিয়ে ইভানের দিকে তাকায়।
কি হয়েছে বলুন মি.জাবির আবরার খুব তো বলেছিলেন ইয়ামিনাকে কোনো কষ্ট পেতে দিবেন না বোন হিসেবে নিয়ে যাচ্ছেন সব দায়িত্ব আপনাদের।। ইভান ইয়ামিনার হাত উচু করে ধরে বলে দেখুন আমার বোন তো অনেক সুখে আছে।। যে দোষ আমার বোন কখনো করেই নি তার শাস্তি কেন আমার বোন পাচ্ছে। কেন আমরা মিডেলক্লাস বলে..কেন আমরা কি মানুষ না।। মি জাবির..আপনি ভাল করেই জানের সব দোষ ওই আমির আবরারের। আরে যার নিজেরেই কোনো ঠিক নেই মদ খেয়ে গাড়ি চালায় সে আমার বোনের সম্মান রক্ষা করবে।।। আরে আমার বোন তো সেদিন কোনো দোষ না করেই অপরাধী হয়ে গিয়েছিল। আর এই যে মি. জাবির আজ যে এখানে সুস্থ ভাবে দাঁড়িয়ে আছেন সেটা আমার বোনের জন্যে নিজের জীবনের চিন্তা না করে আপনাকে বাচিয়ে ছিল।। জাফরা ভাবি এতক্ষন চুপ থাকলে এখন মুখ খুলে। অবাক হয়ে বলে…. মানে

ইয়ামিনা ইভানের হাত ধরে শান্ত করে বলে..থাক না ভাই যা হওয়ার হয়ে গেছে এসব নিয়ে কথা না বললে কি নয়।।ভাই তু….
জাবির ইয়ামিনাকে থামিয়ে দিয়ে জাফরার দিকে তাকিয়ে বলে…হ্যা জাফ আজ হয়তো আমি এখানে তোমার সামনে দাড়িয়ে তার কারন এই মিয়ামিনা।। সেদিন আল্লাহ অশেষ রহমতে আমি মৃত্যুর হাত থেকে বেচে ফিরে ছিলাম উছিলা হিসেবে বলে ইয়ামিনা আমাকে বাচিয়ে ছিল।।

জাফরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে…তার মুখে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে সে সবটুকু জানতে চায়।।
জাবির লম্বা শ্বাস ছেড়ে বলে…সেদিন আমি অফিস থেকে খুব তারাহুড়া করে বের হয়ে পরেছিলাম একটা ডিল নিয়ে খুব ব্যাস্ত ছিলাম তাই আশে পাশে খেয়াল না করে গাড়ির উদ্দেশ্য সামনে হাটা দেই। গাড়ির সামনে আসতে না আসতে একটা গাড়ি বেসামাল ভাবে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসতেই কোথা থেকে কেউ একজন এসে তার সর্বোচ্চ দিয়ে আমাকে ধাক্কা দেয়।। যার কারনে আমার কিছু না হলে ইয়ামিনা গুরুতর একসিডেন্ট করে। আমি কোনো মতে ইয়ামিনা কে ধরে হসপিটালে নিয়ে ভর্তি করিয়ে দেয়… সেখানে থেকে ইয়ামিনাকে আমি আমার বোনের মর্যাদা দেই। কথাটা বলে জাবির হাফ ছাড়ে..
জাফরার চোখের কোনো পানি।। যে মেয়ে নিজের জীবনের চিন্তা করে একজনকে বাচাতে পারে সে কিছুতেই অন্য কারো জীবন নষ্ট করতে পারেনা।জাফরার আর আরুশির চোখ দিয়ে পানি বেয়ে পরছে….
আমিরের চোখ এতক্ষন নিচে থাকলে চোখ তুলে ইয়ামিনার দিকে তাকায়।।

জাবির হাত দিয়ে চুল গুলো পিছনে নিয়ে একটা লম্বা শ্বাস ছেড়ে ঘৃনার দৃষ্টিতে আমিরের দিকে তাকিয়ে বলে….ওই মেয়েটার কোনো দোষ ছিল না । আরে তুই তো সেদিন মদ খেয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলি।। কোনো কিছু সত্যতা না যেনেই ইয়ামিনাকে এত বড় শাস্তি দিয়ে দিলে।।। আরে নিজের ভাল তো কাকও বুঝে তোর চোখে থেকে তুই অন্ধ ছিলি।। তোর রিপোর্টে স্টেট লিখা ছিল তুই সেদিন ড্রাংকড ছিলি।। আর ওই ইশিতা কিভাবে পারে এত টা ইরিস্পনসিবল হতে তুই ড্রাংক জানা স্বত্তে তোকে গাড়ি ড্রাইভ করতে দিয়েছে। তোকে একবারের জন্য না করে নি।।

অতীত….

সেদিন দিনটাই ছিল অন্য রকম ইয়ামিনার খুশির শেষ নেই জেন। আজ দিহানজির সাথে তার বিয়ের তারিক ঠিক হয়েছে।।। আর দুই সপ্তাহের পর তাদের বিয়ে।ভাবতেই অনিশা সারা শরীর যেন নেচে উঠছে।। ইয়ামিনার খুশির আরেকটা বড় কারন হচ্ছে তার ইভান ভাই আজ প্রথম গাড়ি কিনেছে।। ইয়ামিনার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল পুরো ফ্যামিলি মিলে গাড়ি করে লং ড্রাইভ যাবে।।। খুশিতে ইভানকে জড়িয়ে ধরে ইয়ামিনা চোখেমুখে খুশির ঝিলিক।
এই ললিপপ গাড়িটা কিন্তু তোর জন্য কিনেছি কেমন হয়েছে বল…
ইয়ামিনা খুশিতে গদগদ হয়ে বলে…মাশাল্লাহ আমার স্বপ্নের মত হয়েছে ভাই। আমি অনেক খুশি আজকে৷৷

তাহলে চল একটা লং ড্রাইভ দিয়ে আসি… কি বলিস..

বাহ বাহ।। অনিশা নাচতে নাচতে বলে।। একদম!!!! চলো ভাইয়া।।।
ইভান গাড়ি ড্রাইভ করছে আর অনিশার বার বার সিটে উন্ডতে সব জায়গায় হাত দিয়ে বার বার দেখছে ।। একটা সময় কত স্বপ্ন দেখতে নিজের গাড়িতে বসে ঘুরবে।।

ইভান ইয়ামিনার কান্ড দেখে মুখ টিপে হাসছে। কিরে ললিপপ কেমন লাগছে।।
অসাম ভাই আমার কি যে খুশি লাগছে কিভাবে বুঝাবো তোকে।।।
ইভান হেসে কিছু একটা চিন্তা করে বলে…তুই ড্রাইভ করবি…
ইয়ামিনা চোখ বড় বড় করে তাকায়..
আরে ভয় পাচ্ছিস কেন তোর ভাই আছে কি করতে… আজকে তোর এই ইচ্ছাটাও পুরুন করে দিব…
ইয়ামিনা আরও অবাক হয়ে বলে… তুমি কিভাবে জানলে ভাই আমার এই ইচ্ছার কথা।।।
আমি সবই জানি ললিপপ।। ইয়ামিনার গাল টেনে বলে…ইভান গাড়ি থামিয়ে ইয়ামিনাকে ড্রাইভিং সিটে বসিয়ে দিয়ে নিজে ইয়ামিনার পাশে বসে পরে….

ভাই আমার না খুব ভয় হচ্ছে পরে কিছু অঘটন ঘটে গেলে… তোর এত সাধেত গাড়ি।।

আরে আমার ললিপপের থেকে বড় কিছুই না। তোর জন্যই তো গাড়িটা কিনেছি।।ওইখানে দেখ নিচে বলে ইভান ইয়ামিনা কে ভাল ভাবে বুঝিয়ে দেয়….

ইয়ামিনা ধীরে ধীরে গাড়ি চালাচ্ছিল আর ইভান নানা ভাবে ইন্সট্রাকসন দিয়ে যাচ্ছে… হটাৎ এমন একটা ঘটনার জন্য ইয়ামিনা প্রস্তুত ছিল না ওদের গাড়ি সামনে দিয়ে একটা বিড়াল দৌড়ে যায়। হটাৎ এমন হওয়াতে ইয়ামিনা দ্রুত ব্র্যাক কষতে যেয়ে গাড়ির স্প্রীড আরও বারিয়ে দেয়…হটাৎ এমন হবে ইভান বুঝতে পারে নি। আর তখনি সামনে দিয়ে একটা গাড়ি তেরে আসতে থাকে বেশ বেসামাল ভাবে গাড়িটা সামনের দিকে এগোচ্ছে… গাড়িতে ব্যাক্তি দুজন কেউ না ইশিতা আর আমির ছিল…গাড়িটি বেসামাল করে চলার কারনে গাড়িটা আগে থেকে ব্রেক ফেল করে যার কারনে আমির চাওয়া স্বত্তে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিল না।। ঘটনার দ্রুততাই ইভানে বুঝে উঠতে পারছিল না। ইয়ামিনা ভয়ে গাড়ির স্টিয়ারিং থেকে হাত সরিয়ে ফেলে। ইভান কোনো মতে ইয়ামিনার পায়ের দিকে ঝুকে গাড়ির আ্যাকসিলারেটর পা দিয়ে ব্রেক কষে।।। কিন্তু তার আগে আমিরের গাড়ি সাথে ইভানের গাড়ি সাইডে লেগে আমিরের গাড়ি পথ বেকে গাছের সাথে এত জোরে ধাক্কা খায় যার ফলে গাড়ির অর্ধেক অংক ভেঙে নাজেহাল অবস্থা হয়ে পরে…
ইয়ামিনা আর ইভানও গুরুতর আহত হয়।।।

বর্তমান….🌸

জাবির তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে…তোর গাড়ি ব্রেক ফেল হয়ে গেছিলি তোর অসাবধানতায়। আরে ইয়ামিনার গাড়ির সাথে ধাক্কা না গাললে তুই অন্য কোনো গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে উপরে চলে যেতে কিন্তু আল্লাহ রহমতে বেচে গেছিস।।।। আর অপরাধ না থাকার স্বত্তে একটা নিষ্পাপ মেয়েত জীবন নষ্ট করে দিয়েছিস..

আমির স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। চোখে আবারও ওই দৃশটা ভেসে উঠেছে।খুব কষ্ট হচ্ছে তার। নিজেকে অপরাধী লাগছে। চোখ যেন লাল হয়ে আছে। চোখের কোনে অবাধ্য কিছু জল।।।এক দৃষ্টিতে ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে আছে।। নিজের প্রতিশোধে অন্ধ হয়ে একটা মেয়ের জীবনের নষ্ট করে দিয়েছে।।অনেক্ষন এইভাবে তাকিয়ে থেকে আমির কিছু না বলেই হুইল চেয়ারে হাত রেখে সোজা রুমের দিকে চলে যায়…

………….🌸

জাফরা ভাবি ইয়ামিনার কাধে হাত রেখে বলে… চোখে তার টলটলে পানি।।। ধরা গলায় বলে…
আমাকে পারলে মাফ করে দিও তোমার ব্যাপারে না জেনে তোমাকে অনেক ভুল বুঝেছি।।

ইয়ামিনা হেসে বলে…তুমি আমার বড় ভাবী তোমাকে মাফ চেতে হবে না।। আর যা হয়েছে হয়ে গেছে। বাধ দাও ভাবী।
জাফরা ইয়ামিনাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয় আরুশিও ইয়ামিনাকে জড়িয়ে ধরে।। ইয়ামিনার চোখে পানি।এটা যে খুশির পানি। এক অন্যরকম ভাল লাগা কাজ করছে।।
জাবির ইভানের কাধে হাত দিয়ে বলে….তুমি চিন্তা করো না ইয়ামিনার এই ভাই বেচে থাকতে ওর গায়ে কোনো আচ আসতে দিব না।।
ইভান সামনে এসে ইয়ামিনাকে জড়িয়ে ধরে…. ললিপপ কি করেছিস কান্না করতে করতে ইভান কান্না মুছে দিয়ে বলে… মুখ তো একেবারে টমেটো করে রেখেছিস।। আমি কিন্তু আসবো মাঝে মাঝে তোকে দেখতে তুই একদম মন খারাপ করবি না কেমন।।। আজ আসি তাহলে ললিপপ…

পাশ থেকে জাফরা ভাবী বলে…সেকি এসেই চলে যাবে আজকে থেকে যাও।।

না ভাবী আজ না আরেক দিন আসব।। আসি ললিপ্প বলে ইভান চলে যায়….
………………………

ইয়ামিনা রুমে ঢুকে চারপাশ চোখ বুলায় আমির দেখতে না পেয়ে বারান্দায় পা বাড়ায়…..🌸🌸
.
.
.
চলবে……..
আমি আসলে অনেক দুঃখিত গল্পটা এত দিন দিতে পারি নি বলে… এখন থেকে নিয়মত দিব।। কমেন্ট করে জানাবেন কেমন হয়েছে। কারন আপনাদের রিয়েক্ট এবং কমেন্ট আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা যোগায়।।🌸🌸

🌸#হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸

#আদিলা
#পর্বঃ৬
_______________
পুরো আকাশ ঘুট ঘুট অন্ধকার। আজ চাদটাও যেন কোথায় লুকিয়ে পরেছে। আমির একপানে আকাশের দিকে চেয়ে আছে।। ইয়ামিনা পাশে এসে দাড়ায়।। আমির আকাশের দিকে চেয়ে বলে…..
আমি খুব স্বার্থপর আর খারাপ তাই না।
হটাৎ এমন কথায় ইয়ামিনা একটু ইতস্তত বোধ করে।। উত্তরে কি বলবে ইয়ামিনা বুঝতে পারছে না।
আমির ইয়ামিনার উত্তরের আশা না করে রুমে চলে যায়….
কিছুক্ষন পর ইয়ামিনা এসে বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরে……
____________🌸🌸

সকালে একটা মেয়ের আওয়াজে ইয়ামিনার ঘুমটা ভেঙে যায়। উঠে চারপাশ তাকিয়ে দেখে আমির পাশে নেই।। ইয়ামিনা কিছুটা অবাক হয়।। পাশের রুম থেকে আওয়াজটা আসছে।। ইয়ামিনা শাড়ি ঠিকঠাক করে মাথায় গোমটা দিয়ে রুম থেকে বের হয়… আওয়াজটা অফিস রুম থেকে আসছে। আমির তার রুমের পাশেই খুব শক করেই এই রুমটা বানিয়ে ছিল। অফিসের যাবতীয় কাজ প্রায় সে এখানেই করে।।।ইয়ামিনা ইচ্ছা না থাকার সত্ত্বেও রুমে উকি দেয়…

আমির চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে।। চোখের রোগ যেন ফুলে উঠেছে।। চোখের মধ্যে একরাশ ঘৃনার জল…কেন এমন করছো ইশিতা।। আজ আমার এই পুঙ্গত্তের কারনে তুমি আমকে ভালবাসতে পারছো না এতটাই কি দুর্বল ছিল আমাদের ভালবাসা।।

দেখ আমি তোমাকে ভালবাসতাম এখন বাসি না। আর আমি রিলেশনে তোমাকে কোনো কমিটমেন্ট দেয়নি যে ভালবাসতে হলে তোমার সাথে আমার সারাজীবন থাকতে হবে… তুমিও মজা করেছো আমি করেছি তাও আবার কিছু সময়ের জন্য…

ওয়াট দ্যা বলে ইশিতার সামনে গ্লাসটা ছুড়ে মারে রাগে তার সারা শরীর কাপছে। আমির নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করে বলে….তাহলে কেন ভালবাসি ভালবাসি বলে আমার পিছে সারাদিন ঘুরতে। কই আমি তো তোমাকে বলেনি আমাকে ভালবাসতে তুমি তো এসেছিলে আমার কাছে ভালবাসার অধিকার নিয়ে। আজ যখন আমি তোমাকে এতটাই ভালবেসে ফেলছে। তখন তোমার কাছে মজা মনে হচ্ছে আমির চিৎকার দিয়ে বলে আন্সার মি ডেম ইট।।

লিসেন্ট এত রিয়েক্ট করার কি আছে। ইটস নরমাল। আমার তোমাকে এখন আর ভাললাগে না।। বিয়ে তো করেই ফেলেছো পা দুইটা ভেঙে পরে আছে কিন্তু শরীরের জ্বালা কমেনি তাই তো একদিনে বিয়ে করে ফেলেছে। কেন তোমার বউ কি সুখ দিতে পারছে না বলে আমার কাছে আসার চেষ্টা করছো। তো ভাল করে শুনে রাখ আমি কখন তোমার কাছে কাম বেক করবো না আমি কেন কোনো মেয়েই করবে না তোমার এই পঙ্গুত্বের কারনে।। ওই মেয়ের নিশ্চয়ই টাকা পয়শা দেখেই তোমাকে বিয়ে করেছে থার্ডক্লাস মাইন্ডের চিপ গার্ল।। কোনো ভাল বংশের মেয়ে বিয়ে কি তোমার এই অবস্থা দেখে তোমার দিকে ফেরেও তাকাবেনা।।

আমির এখনও ওইভাবে তাকিয়ে আছে এটাই কি তার সেই ইশিতা ছিল যে তাকে পাগলের মত খালি ভালোবাসি ভালোবাসি বলে তাকে পাগল করে ফেলত।। নিজের এরকম না হলে ইশিতার রুপ কখনও সে দেখতে পেত না। আমিরের বুকে চিন চিন ব্যাথা হচ্ছে।। ইশিতার মুখ থেকে এসব কথা শুনবে কখনো ভাবতেও পারেনি। খুব কষ্ট হচ্ছে।
আমিরের গলা ধরে আসচ্ছে। ধরা গলায় বলে..ই.ই.ইশিতা তুমি আমাকে এসব বলতে পারলে তুমি আমাকে না খুব ভালবাসতে…

ও হেলো খালি ভালোবাসার দোহায় দিয়ে ইমসোনাল ব্ল্যাকমেইল করতে আসবা না। এতটা ক্যারেক্টর লেস আর নিলজ্জ্ব কেমনে হয় বার বার ফিরিয়ে দেওয়ার সত্ত্বেও কেন কুত্তার মত ঘু…….ঠাসসসসসসসসসসসস
আর বলতে পারলোনা তার আগেই ইয়ামিনা কষিয়ে ইশিতার গালে চড় মারে……ইশিতা তাকাতেই যেন ইয়ামিনা আরেকটা চড় মেরে বসে।।।আমির অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে এমন কিছু হবে ভাবতে পারে নি।।
ইয়ামিনা এখন নিজের মধ্যে নেই রাগে তার সারা শরীর ঝংকার দিয়ে উঠেছে….
ইশিতা কিছু বলতে নিবে তার আগেই ইয়ামিনা বেশ বড় গলায় বলে…
এই মেয়ে সমস্যা কি তোমার। উনি কিছু বলচ্ছে না দেখে মুখে যা খুশি তাই বলে যাচ্ছো।। ক্যারেক্টর লেস কাকে বলছো নির্লজ্জ কাকে বলচ্ছো আরে ক্যারেক্টর লেস তোমাদের মত মেয়েরা হয় যারা জামা কাপরের মত ছেলে বদলায়।। উনি তোমাকে কিছু বলছে না দেখে ভেবে নিও না উনি তোমার এসব চিপ টাইপের কথা স্বীকার করে নিয়েছে।উনি তোমাকে ভালবাসে বলে সব শুনে যাচ্ছে। আরে যে মেয়ে ভালবাসার মুল্য দিতে পারে না সে মেয়ে কাউকে ভালবাসবে কিভাবে। তোমার কাছে ভালবাসা টাকার খেল হতে পারে। সেদিন উনি পুঙ্গত্ব ছিল না বলে সে তুমি তাকে ভালবাসতে আজ তার এই দুরঅবস্থা তুমি তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছো।। তো কান খুলে শুনে রাখ তোমাদের মত মেয়ে কোনো দিনও সুখি হতে পারবে আমি গেরান্টি দিয়ে বলছি। আজ উনার ভালবাসা তোমার কাছে নির্লজ্জ মনে হচ্ছে কিন্তু একদিন এই ভালবাসা পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যাবে কিন্তু সেদিন তুমি তার ধরাও পাবে না ৷।।আর থার্ডক্লাস গার্ল কাকে বলচ্ছো নিজেকে একবার আয়নাতে ভাল করে দেখো তাহলে বুঝতে পারবে ক্যারেক্টর লেস কে।যদি আর একটুও লজ্জা থাকে তো সোজা এখান থেকে কেটে পর কোনো দিনও যেন তোমার মুখ না দেখি তাহলে আমার ভয়ংকর রুপ দেখতে বাধ্য হবে।জাস্ট গেট লস্ট।।
ইশিতা আমিরের দিকে একবার তাকিয়ে গালে হাত দিয়ে গটগট করে চলে যায় সেখান থেকে।।।

ইয়ামিনা রাগি দৃষ্টিতে আমিরের দিকে তাকিয়ে চিল্লিয়ে বলে… আপনার কি লজ্জা শরম বলতে কি কিছু নেই। ওই মেয়ে ঠিকি বলেছে আপনি আসলেই নির্লজ্জ। চোখের সামনে সব দেখে কেন না দেখার ভান করছেন। আপনি কি বুঝত্ব পারচ্ছেন না।ওই মেয়ে আপনাকে কোনো দিন ভালইবাসে নি আরে যার নিজের ক্যারেক্টর ঠিক নাই সে ভালবাসবে কিভাবে।।এইভাবে অন্ধ না হয়ে চোখ খুলে আশেপাশে ভাল করে তাকিয়ে দেখুন।বার বার কেন নির্লজ্জ্বের মত ওই মেয়ের ভালবাসা চাইছেন। যদি একটুকু নিজের মধ্যে আত্নসম্মান বেচে থাকেন তাহলে ওই ক্যারেক্টার লেস মেয়ের কাছে ফিরে যাবেন না।।
আমির ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে আছে।। ইয়ামিনার মুখ রাগে পুরো লাল আভায় ধারন করেছে। রাগে ইয়ামিনার ঠোট কাপচ্ছে রীতিমতো। আমির এখন স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।।
ইয়ামিনা আর কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে আসে।।ঠেস দিয়ে দেয়ালে দাড়িয়ে পরে। চোখের কোনে জল যেন থামচ্ছে না। আজ তার দিহানজি পাশে থাকলে ওই মেয়ে কখনও তাকে এসব বলার সাহস পেত না। কেন করলেন আমার সাথে দিহানজি আমি যে আর পারচ্ছি না হাপিয়ে উঠেছি। এই মিথ্যে সংসার খেলতে খেলতে। হটাৎ রুমের ভেতর পরার কিছু আওয়াজ পেয়ে ইয়ামিনা দৌড়ে রুমে যায়। যেয়ে দেখে আমির হুইল চেয়ার থেকে নিচে পরে গেছে উঠতে পারচ্ছে না গ্লাসের বেশ কয়েকটা টুকরা আমিরের হাতে বিধে গেছে।যার কারনে বেশ রক্ত বের হচ্ছে। ইয়ামিনা তড়িঘড়ি করে আমির কে ধরে উঠায়।উঠিয়ে কোনো মতে সফায় বসায়। আমিরের হাতের রক্ত ইয়ামিনার সাদা পেটে পিঠে লেপ্টে গেছে।।ইয়ামিনা অস্থির হয়ে বলে…আপনি একটু বসুন এখানে আমি এখনি আসছি বলে ইয়ামিনা উঠতে নিলে তার আগেই আমির রক্তামাখা হাতে ইয়ামিনাকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে কেদে দেয়। ইয়ামিনা অবাক সাথে বিচলিত হয়ে পরে…এত রাগী আর গম্ভীর মানুষ এইভাবে কাদতে পারে ইয়ামিনা ভাবতে পারচ্ছেনা।
.
.
চলবে…🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here