হৃদপিন্ড পর্ব-৭

হৃদপিন্ড পর্ব-৭
#জান্নাতুল নাঈমা

কাজের লোক দরজা খুলতেই ইমন হনহন করে ভিতরে ঢুকে উপরে চলে গেলো। মুসকান রান্নাঘর থেকে ইমনকে দেখে খুশিতে আটখানা হয়ে তারাতারি খাবাড় বেড়ে ডায়নিং টেবিলে রাখতে লাগলো। সুপ্তি দৌড়ে এসে বললো মুসু আন্টি মামাই এসে গেছে,,,
মুসকান মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো দেখেছি।
সুপ্তি কোমড়ে দুহাত দিয়ে চোখ নাচিয়ে বললো এবার খুশিতো,,,
মুসকান ভ্রু কুঁচকে আমতা আমতা করতে করতে বললো মানে,আমি আবার কখন মন খারাপ করলাম।
সুপ্তি খিলখিল করে হাসতে লাগলো আর বললো মামাইকে মিস করছিলে বলেই তো তোমার মন খারাপ ছিলো।
মুসকানের বুকের ভিতর কেমন করে ওঠলো।
সুপ্তির দিকে বিস্ময় চোখে চেয়ে বললো আমি মিস করছিলাম??
সুপ্তি ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বললো হে তো,,,মাম্মা যখন পাপা কে মিস করে তখন তো তোমার মতোই মন খারাপ করে। মাম্মা তো বললো তুমিও মিস করছো মামাই কে। সুপ্তির কথা শুনে মুসকান হকচকিয়ে গেলো লজ্জায় নাকের আগা লাল হয়ে গেলো তাঁর। বুকের ভিতর ডিপডিপ করতে শুরু করলো। এক ঢোক চিপে একটু নিচু হয়ে সুপ্তির মুখোমুখি হয়ে বললো তোমার পাপা কোথায়,,,
মূহুর্তেই সুপ্তির মুখটা মলিন হয়ে গেলো।
মুখটা ভাড় করে বললো আমার পাপা অনেক দূরে আছে। জানো আমি আমার পাপা কে এখন পর্যন্তও দেখিনি। যখনি দেখতে চাই তখনি মাম্মা পাপার এতো এতো ভিডিও, ছবি বের করে দেখায়। পাপা নাকি অনেক দূরে আছে। হাত উচু করে আমি যখন ইয়া বড় হবো তখনি পাপা আসবে,,
জানো পাপার ওপর আমার ভীষণ অভিমান।
আমার স্কুলে সবারই পাপা আছে,ছুটির পর সবার মাম্মার সাথে সবার পাপাও যায় মাঝে মাঝে,আর আমার পাপা এখন অবধিও যায় নি,আমার সামনেই আসেনি। বলেই মাথাটা নিচু করে ফেললো।
মুসকানের বড্ড মায়া হলো ইশ কখনো তো ওর বাবার ব্যাপারে শুনাই হয়নি। আহারে মেয়েটা কতো কষ্ট পায়, কিন্তু ওর বাবা কোথায়???
সায়রীর ডাকে সুপ্তি বললো মাম্মা ডাকছে যাই, পরে আমরা গল্প করবো ওকে।
মুসকান সুপ্তির দুগাল টেনে বললো ওকে।
,
ইমন নিচে আসতেই মুসকান সব খাবাড় সামনে দিলো। ইমন খেতে খেতে মুসকান কে কয়েকবার দেখলো। মুসকান চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে একদম রেডি হয়ে যখন যা লাগবে ওমনি সামনে দেবে।
ইমন নিজের মতো খেয়ে ওঠে গেলো, মুসকান যাওয়ার পানে চেয়ে তৃপ্তির এক হাসি দিলো। বুকটা তাঁর ভালো লাগায় ভরে গেলো। স্বস্থির এক নিঃস্বাস নিয়ে সব গুছিয়ে নিজের জন্য ভাত বেড়ে খেতে শুরু করলো।
ইমন সিঁড়ি বেয়ে উপরে যেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে মুসকানের কাজগুলো দেখে বাঁকা হেসে রুমে চলে গেলো।
,
সুপ্তির প্রচন্ড জ্বর এসেছে তাই সায়রী একদিনের ছুটি নিয়েছে তাঁর এবং সুপ্তির স্কুল থেকে। মেয়েটা বার বার বায়না করছে মাম্মা পাপার কাছে যাবো,মাম্মাম আমার পাপা কোথায়।
সায়রীর চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝড়ছে,,,
কি বোঝ দিবে এইটুকুন মেয়েটাকে, এতোগুলো বছর ধরে তো মিথ্যা আশা দিয়ে রেখেছে। আর কতো মিথ্যা বলবে সে সুপ্তি যে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে।
মেয়েটাকে কিভাবে সত্যিটা বলবে, এই ছোট্র মস্তিষ্কে এতো বড় ধাক্কা কি করে সহ্য করবে?

আপা,,, তাহলে আমি যাই পরীক্ষা শেষ হলেই এসে পড়বো আমি। বলেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।
সায়রী ও দাঁড়িয়ে নিজের চোখের পানি লুকাতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো। মুসকানের দিকে ঘুরে জোর পূর্বক হেসে বললো আচ্ছা সাবধানে যেও।
মুসকান মুখ টা মলিন করে বললো আপা তুমি কাঁদছো কেনো??
সায়রী বললো আরে বোকা মেয়ে কাঁদছি না যাও তো ভালোভাবে এক্সাম দিও কেমন।
মুসকান ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো। সায়রী বেশ বুঝলো মেয়েটা এখন এটা নিয়েই চিন্তা করবে। মেয়েটা যেনো খুব তারাতারিই সবাইকে ভীষন আপন করে নিয়েছে। কারো কষ্টই মেয়েটা সহ্য করতে পারে না।
সায়রী এগিয়ে এসে মুসকানের দুগালে ধরে বললো সুপ্তির জ্বর তো ও অসুস্থ হলে আমার খুব কষ্ট হয়।
ও যে আমার কলিজার টুকরা গো,,,ওর কিছু হলে আমি বাঁচতে পারবো না। ওর জন্যই তো দুনিয়াতে টিকে আছি আমি। ওর একটু ব্যাথাও আমি সহ্য করতে পারি না।
মুসকান যেনো কেঁদেই ফেলবে।
আপা চিন্তা করবেন না সুপ্তি ঠিক হয়ে যাবে। আমি এসে ওর মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিবো, দেখবেন সেড়ে যাবে।
সায়রী মুসকানের কপালে চুমু খেলো। আর বললো এবার যাও দেরী হয়ে যাবে নয়তো।
আচ্ছা,,,

মুসকান বাসা থেকে বেরিয়ে একটা রিকশা নিয়ে স্কুলের পথে চললো।
রিকশার পিছন পিছন চললো মি.ইমন চৌধুরীর গাড়ি। মুসকান স্কুলের ভিতর ঢুকতেই ইমন অফিসের পথে গাড়ি ঘুরালো।

যেহেতু মুসকান ক্লাস করে না সেহেতু তেমন কোন ফ্রেন্ড হয়নি। শুধু একটা মেয়ে ফ্রেন্ড হয়েছে নাম শ্রাবনী, মেয়েটা হিন্দু তবে খুবই মিশুক। পরীক্ষা শেষে শ্রাবনী বললো মুসকান চলো আমরা ফুসকা খেতে যাই, ফুসকা খেয়ে একসাথে বাসায় যাবো।
মুসকান ভাবলো ওর বাসাতো আমাদের বাসার কাছেই তাহলে দুজন একসাথেই যাই বেশ ভালো হবে। এছাড়া বাইরের জগতে তো তেমন আসাই হয় না সবসময় বাসায়ই থাকা হয়। গ্রামেও কোথাও যেতে পারিনি আম্মা শুধু কাজ করিয়েছে। গ্রামের ছেলেরা কেমন বদ নজরে তাকিয়েছে। আব্বা-আম্মা কেউ কোথাও যেতে দেয়নি। সারাদিন কাজে লেগে থাকতে হতো। আজকে একটু না হয় ঘুরেই যাবো। বেশ ভালো হবে সায়রী আপা, সুন্দর মুখো গুন্ডা বেশ ভালো মানুষ কেউ কিছু বলবে না।
,
অফিস থেকে তারাহুরো করে বেরিয়ে ইমন স্কুলের দিকে চললো,স্কুলের একটু আগে আসতেই চোখে পড়লো মুসকান সাথে একটা মেয়ে একসাথে দাঁড়িয়ে ফুসকা খাচ্ছে। ইমন গাড়ি থামিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। রাস্তার অপজিট পাশে মুসকান আর শ্রাবনী ফুসকা খাচ্ছে। ইমন ভাবলো খাওয়া শেষ হোক তারপরই ডাকবো,,,
গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সানগ্লাসটা খুললো।
সামনের দিকে তাকিয়ে মুসকানের ফুসকা খাওয়া সেই সাথে মৃদু হাসি, ধীরস্থির ভাবে কথা বলা দেখতে লাগলো। ডানহাতে ফুসকা মুখে দিয়ে বাম হাতে মুখ ঢেকে খাচ্ছে মুসকান। বাম হাতের সাদা কাঁচের চুরি গুলো স্পষ্ট দেখতে পেলো। বুকের ভিতর কেমন একটা করে ওঠলো মনে মনে হাসলো ভীষন।
“কম বয়সি মেয়েদের অনুভূতি গুলো বড্ড অদ্ভুত সেইসাথে এরা বড্ড পাগলী হয়।
এদের মাঝে ম্যাচিওরিটি আসেনি বলেই বোধহয় এরা এতো টা প্রানখুলে ভালোবাসতে জানে। যাকে বলে অবুঝ ভালোবাসা।
ইমন সানগ্লাসটা চোখে পড়ে বিরবির করে বললো সাদা রঙ পড়ি বলে একে কে বললো এই রঙ আমার পছন্দ,,, হয়তো সবসময় সাদা পড়ি তাই বলে এটা আমার পছন্দের কালার কে বললো। নিজের মতো ভেবে নিয়ে বোকার মতো সাদা, জামা-কাপড়, সাদা চুড়ি,আরো কিসব যেনো কিনেছে ধূর সেসব এর নাম ও জানি না।
,
চা স্টলে কয়েকটা ছেলে শ্রাবনী আর মুসকানের দিকে কেমন দৃষ্টিতে যেনো চেয়ে রইলো। একটা ছেলে জিব্হা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে লোভাতুর দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো। ইমন একবার ছেলেগুলো কে আরেকবার মুসকান কে দেখলো। মাথাটা তাঁর কেমন করে ওঠলো। অতীত টা যেনো হুট করেই মাথায় নাড়া দিলো। বুকের ভিতর তীব্র ব্যাথা অনুভব হলো, সেই সাথে একরাশ ঘৃনা এসে জমলো মনে।
,
ফুসকা খাওয়া শেষে পানি খাচ্ছে মুসকান এমন সময় হুট করে ইমন মুসকানের বাম হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। মুসকান ব্যাথায় আহ করে পাশে তাকাতেই ইমনকে দেখে চুপ হয়ে গেলো। বুকটা তাঁর ধক করে ওঠলো। কাঁপা গলায় বললো আপনি,,,
শ্রাবনী অবাক হয়ে চেয়ে রইলো আর ভাবলো ইনি সেই বদমেজাজি লোকটা না,,, আমার ভাইয়া তো এনার অফিসেই জব করে। এ ওর কি হয়, শ্রাবনী বললো ওনি তোর কি হয় বড় ভাই।
মুসকান কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই ইমন হিড়হিড় করে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে গেলো।
শ্রাবনী কিছু বুঝলো না রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে রইলো। আর ভাবলো পরে শুনে নেবো এই রাগী লোকটা ওর কি হয়??
,
চুড়িগুলো ভেঙে রাস্তায় ই পড়ে আছে। ব্যাথায় অসহ্য হয়ে যাচ্ছে মুসকান হাত বেয়ে রক্ত পড়ছে ইমনের ভয়ে সেই হাত লুকিয়ে রাখতে মুঠ করে কোলে হাত রেখে দিয়েছে। সাদা স্কুল ড্রেসটা রক্তে লাল হয়ে গেছে। চোখে পানি আসলেও এক হাতে পানি মুছে কান্না লুকাতে চাইছে। আড় চোখে ইমনের রাগী, গম্ভীর মুখটা দেখে ভয়ে কুঁকড়িয়ে যাচ্ছে সে।
আর বুঝার চেষ্টা করছে সে কি ভুল করেছে, কেনো এতো রেগে গেলো তাঁর উপর। ভয়টা ক্রমাগত বাড়তেই থাকলো, ভয় টা যখন মাএাতিরিক্ত বেড়ে গেলো তখনি তাঁর শরীরে কাঁপুনি ধরলো।
ইমন সামনের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে গাড়ি চালাচ্ছে।
রাগে শরীর কাঁপতে শুরু করেছে তাঁর।
ইচ্ছে করছে সব তছনছ করে দিতে, কোনভাবেই নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না।
একজন ভয়ে কাঁপছে, আরেকজন রাগে কাঁপছে।

গাড়ি বাসার সামনে থামতেই মুসকান চমকে ওঠলো।
ইমন গাড়ি থেকে নেমে দাঁতে দাঁত চেপে বললো নামো।
মুসকান গাড়ি থেকে নেমে মাথা নিচু করে ভিতরে ঢুকলো। দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে হাত ধরে কাঁদতে শুরু করলো।
কিছুক্ষন পর কেউ আসছে বুঝতে পেরে কান্না চেপে রাখতে গিয়ে হেচকি ওঠে গেলো তাঁর।
ইমন পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে কাউকে দেখতে পেলো না। নিশ্বাসের তীব্র শব্দ শুনে ডানপাশে নিচে তাকাতেই দেখতে পেলো হাত চেপে বসে কাঁদছে।
ইমন এক ধমক দিয়ে বললো এখানে কি,ওঠো।
মুসকান কেঁপে ওঠলো ওঠে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। ক্রমাগত হেচকি ওঠছেই তাঁর।
ইমন বিছানার কাছে গিয়ে বসলো হাতে তাঁর ফার্স্ট এইডস বক্স। কড়া গলায় বললো এখানে এসো বসো।
মুসকান ভয়ে ভয়ে সেখানে গিয়ে বসলো।
ইমন তাঁর বাম হাত সামনে ধরে বেশ ঘাবড়ে গেলো।
এতোটা কেটে গেছে,,, রক্ত পরিষ্কার করে হাতে ব্যান্ডেজ করতে করতে ধমকের স্বরে বললো নেক্সট কখনো রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ফুসকা খাবে না।
আর এসব কি পড়ো হাতে এইসব ফালতু চুড়ি নেক্সট টাইম যেনো পড়তে না দেখি । মাইন্ড ইট।
সায়রী মুসকানের রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো কিরে কার কি হলো।
মুসকানের হাতে ব্যান্ডেজ দেখে বললো কি হয়েছে।
ইমন গম্ভীর মুখে দাঁড়ালো সায়রী কে বললো সুপ্তির জ্বর কমেছে,,,
সায়রী বললো হ্যাঁ। কিন্তু মুসকানের হাত কাটলো কিভাবে?
সায়রীর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ইমন হনহন করে বেরিয়ে গেলো।
সায়রী ভ্রু কুঁচকে বললো যাব্বাবা এর আবার কি হলো। নাকের ডগায় আজ এতো মেজাজ কাহিনী কি।
মুসকানের দিকে চাইতেই সায়রী দ্রুত মুসকানের পাশে বসে বললো কি হয়েছে,,,
মুসকান কাঁদতে কাঁদতে সব খুলে বললো।
সায়রী বললো থাক আর কখনো রাস্তার ধারে ফুঁসকা খেওনা। অবশ্যই এতে তোমার কোন ক্ষতি বা ওর কোন ক্ষতি হবে তাই এভাবে রেগে নিষেধ করেছে।
আর ব্যাথা দিয়ে কেমন নিজেই যত্ন নিয়ে নিলো।
এতো ভালোবাসা পাবে কোথায়,,,
মুসকানের কান্না থেমে গেলো। সায়রীর কথাটা কানে বার বার বাজতে লাগলো এতো ভালোবাসা পাবে কোথায়।
সায়রী ওঠতে নিতেই মুসকান বললো আপা।
ব্যান্ডেজ করে দিলে ভালোবাসা বুঝা যায়।
সায়রী হেসে ফেললো আর বললো আরে বোকা মেয়ে ইমন কেমন জানো না, ও কি কারো সেবা করার মতো মানুষ। আর তোমার হাতে ব্যান্ডেজ তো আমাকে দিয়েও করাতে পারতো। নিজে এসে করে গেলো তাও আবার ইমন চৌধুরী। যার কিনা নিজের খাবাড় বেড়ে খাওয়ার কখনো সময় হয়না সে তোমার হাতে ব্যান্ডেজ করতে এসেছে ভাবা যায়।
,
ইমনের রুমে কিছু একটার শব্দ শুনে দৌড়ে এলো সায়রী। আয়নার কাঁচ ভাঙা, হাত শক্ত মুঠ করে দাঁড়িয়ে আছে ইমন। টপটপ করে রক্ত পড়ছে ফ্লোরে।
সায়রী ছুটে এসে ইমনের হাত ধরে বললো এসব কি,,,
পাগল হয়ে গেছিস, কেনো এটা করলি, কি হয়েছে টা কি??
এতো রাগ,এতো জেদ এতো ভয়ংকর রূপ এবার একটু বন্ধ করতে পারিস না। এমন কি হয়েছে যে এমন করছিস।
ইমন ধমকে বললো কিচ্ছু হয় নি। আমাকে একা থাকতে দে যা এখান থেকে।
সায়রী বললো ওকে যখন কষ্ট দিয়ে, ব্যাথা দিয়ে নিজে ঠিক থাকতেই পারবি না তাহলে কেনো ওকে ব্যাথা দিলি আর কেনোই বা এভাবে নিজের রক্ত ঝড়ালি।
ইমন কঠোর চোখে তাকাতেই সায়রী রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।
ইমন নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে লাগলো।
,
রাতের খাবাড় নিয়ে মুসকান ইমনের রুমে আসতেই ইমন ল্যাপটব থেকে চোখ সরিয়ে মুসকানকে চেয়ে দেখলো।
মুসকান ইমনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিচু স্বরে বললো খেয়ে নিন।
ইমন ল্যাবটপে চোখ রেখেই বললো খাবো না।
মুসকান বললো অল্প করে এনেছি খেয়ে নিন।
ইমন চোখ গরম করে তাকালো মুসকান ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো। এক ঢোক গিলে বললো আপনি চাইলে আমি খাওয়িয়ে দিতে পারি। সায়রী আপা বললো আপনার হাত কেটে গেছে।
ইমন ল্যাবটপ টা অফ করে সোফায় রেখে দাঁড়ালো।
মুসকানের সামনে দাঁড়াতেই মুসকান ভয়ে এক ঢোক গিলে ইমনের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে ফেললো।
ইমন বললো মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে।
আমাকে তুমি খাওয়িয়ে দেবে,,আর আমি তোমার হাতে খাবাড় খাবো।
মুসকান বললো কেনো আমার হাতের রান্না খেতে পারলে আমার হাতে খাবাড় কেনো খাওয়া যাবে না।
ইমন হকচকিয়ে গেলো মুসকানের কথা শুনে।
কে বলবে দুপুরে এই মেয়েকে সে শাসন করেছে।
ইমন হালকা কেশে ওঠলো বড় বড় করে চেয়ে

বললো বড্ড সাহস বেড়েছে তো।
মুসকান আমতা আমতা করে বললো প্লিজ খেয়ে নিন। পেটে খিদে থাকলে ঘুম হবে না। আর ঘুম না হলে মাথায় শুধু রাগ আর রাগ থাকবে।
আর রাগী মানুষ কে একদম সিনেমার ভিলেইনের মতো লাগে। সামনা সামনি তো আর বলতে পারেনা আপনাকে ভিলেইনের মতো লাগে রাগলে তাই সবার কথাই বললো।

ইমন বিস্ময় চোখে চেয়ে বললো কিহ,,
মুসকান দ্রুত ইমনের সামন থেকে সরে খাবাড় নিয়ে বিছানায় বসলো।
ইমন কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে বসলো।
মুসকান ওর ছোট্র হাত দিয়ে সুন্দর করে ভাত মেখে ইমনের সামনে ধরলো।
ইমন অপলক ভাবে চেয়ে রইলো,
এই মেয়ে কে কি ভালো না বেসে পাড়া যায়। আজকে ওর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে আমার আচরনের জন্য হয়তো আর আমার সামনেই আসতো না বা আমার ওপর ভীষন রেগে যেতো।
আর ও আমাকে যত্ন করে খাওয়াতে এসেছে তাও নিজের হাতে মেখে।
ইমনের বয়সটা যেনো একদম কমে গেলো। পাঁচ -ছয় বছরের বাচ্চার মতো চুপ করে শান্ত হয়ে খাবাড় খেতে লাগলো।
মুসকান যখন ইমনের মুখের সামনে খাবাড় তুলে দিচ্ছিলো তখন ইমনের বুকের ভিতরে চিনচিন ব্যাথা অনুভব হচ্ছিল। যখন থেকে সে বুঝতে শিখেছে তখন থেকে আজ পর্যন্ত কেউ তাকে এভাবে আদর মেখে যত্ন নিয়ে খাওয়িয়ে দেয় নি। দাদী চাইলেও ইমন নিজেই কখনো দাদীর হাতে খায় নি। কেউ তাকে সেভাবে ভালোবাসা দেয়নি আর না সে চেয়েছে কারো ভালোবাসা পেতে। ভালোবাসা বিহীন জীবন তাঁর পাথরের মতো শক্ত মন তাঁর। মুসকান কি পারবে পাথরের বুকে ফুল ফোটাতে,,,নাকি অলরেডি ফুটিয়ে দিয়েছে। এইটুকুন মেয়ের এতো ক্ষমতা।

,
ডিসেম্বর মাস এসে গেছে সায়রী, সুপ্তি দুজনেরই স্কুল ছুটি। সায়রি ছুটি পেয়ে ভাবলো এবার তাঁর মায়ের কাছে বেশ কিছুদিন থাকতে যাবে। সুপ্তিকেও তার নানা-নানী, মামাদের সাথে সময় কাটাতে দেওয়া উচিত।ইমন কে গিয়ে বলি আমাদের সাথে মুসকান কেও নিয়ে যাবো। নয়তো একা একা বোরিং হবে মেয়েটা।
ইমনকে জানাতেই ইমন সোজা না করলো।
সায়রী বললো কেনো, সমস্যা কি?
ইমন কি করে বলবে মুসকান কে ছাড়া এতো দিন থাকতে পারবে না। মেয়েটাকে সারাদিন এক নজর না দেখলে কেমন পাগল পাগল লাগে তাঁর। এই বয়সে এসে মনটা এতো ছটফট করে তাঁর যা বড্ড বেমানান লাগে নিজের কাছেই। তবুও মনের বিরুদ্ধে সে যেতে পারবেনা।
ইমন বললো আসলে দাদী ওকে দেখতে চেয়েছে তাই ভেবেছি দাদীকে দেখাতে নিয়ে যাবো। আর দাদী চাইছে বাড়ি গিয়ে থাকি ছুটির যে কদিন আছে মুসকানের এ কটা দিন ওখানেই রাখবো। এছাড়া সবার জানা উচিত, বোঝা উচিত আর মুসকান কেও সবার সাথে পরিচয় করানো উচিত।
সায়রী বললো কিন্তু মুসকান তো কিছু বুঝবেনা। বরং বিব্রত হবে।
ইমন বললো কোন বিব্রত হবে না। সবটা দেখে নেবো আমি। সব থেকে বড় কথা দাদীর বয়স হয়েছে, বয়স্ক মানুষ টা আমার পথ চেয়ে বসে থাকে, মুসকানের কথা শুনে ওকে দেখার জন্যও পাগল হয়ে গেছে।
তাই এবার আমার উচিত দাদীর কথা রাখা।
কদিন ই বা আছে দুনিয়ায় তাঁর কথাগুলো রাখলে যদি সে খুশি হয় তো কেনো রাখবো না।
ও বাড়িতে এই একটা মানুষ ই তো আমাকে মন থেকে ভালবাসে, ভালো চায়।

কিন্তু বাকি লোকগুলো,এরা তো সুবিধার না।

চিন্তা করিস না আমি আছিতো। সব সামলে নিবো।
এছাড়া সবাই কে চোখে আঙুল দিয়ে সবটা দেখিয়েও দিবো। কিছু মানুষ নয়তো ভাববে ইমন চৌধুরী লুকিয়ে কাজ করছে।
তাই সেসব মানুষ কে দেখিয়ে দিতে চাই ইমন চৌধুরী জীবনে এমন কিছু করেনি বা করবে না যার জন্য তাকে লুকিয়ে কাজ করতে হবে।

,
চৌধুরী বাড়িতে কয়েকজনের মুখে হাসি ফুটে ওঠলো তো কয়েক জনের মুখে বিরক্তি সেইসাথে ভয় জমলো।
একরামুল চৌধুরী ইমনের বাবা বেশ খুশি হয়ে কাজের লোকদের বললেন তাঁর মায়ের থেকে চাবি নিয়ে ইমনের রুম টা পরিষ্কার করতে।
এছাড়াও একটা এক্সট্রা রুম পরিষ্কার করে সব গুছাতে। কারন ইমন তাকে স্ট্রেট জানিয়েছে তাঁর সাথে মুসকান আসছে। তাঁর বাবা ছেলেকে দ্বিতীয়বার আর প্রশ্ন করে নি। ছেলে যে বাড়িতে থাকার জন্য আসছে এতেই অনেক। ছেলে তাঁকে পছন্দ না করলেও তাঁর বড় সন্তান ইমন তাঁর প্রতি তার আবেগই আলাদা।

সাজিয়া বেগম ইমনের সৎ মা বললেন এক্সট্রা রুম কেনো?
একরামুল চৌধুরী বললেন ইমন বলেছে তাই।
সাজিয়া বেগম কড়া গলায় বললেন আমি কিন্তু এ বাড়িতে কোন রাস্তার ময়লা আবর্জনা কে জায়গা দেবো না।

চলবে……….

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here