হৃদপিন্ড পর্ব-২৯

হৃদপিন্ড পর্ব-২৯
#জান্নাতুল নাঈমা

সাদা কাতানের শাড়ী পড়া বাঙালীভাবে গলায় সাদা মুক্তোর মালা,কানে মুক্তোর দুল চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা পড়া দুপাশে দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে টান টান হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দাঁড়ালো। সবাই আপ্যায়নে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। মুসকান দূর থেকে হা করে চেয়ে দেখছে। এতো সুন্দর, সুন্দর মানুষ গুলো দেখে তাঁর ভীষণ অবাক সেই সাথে ভালোও লাগছে। খানিকটা ভয় ও করছে এরা তাঁর শাশুড়ি মায়ের মতো হবে না তো আবার?? বুকটা ধুরু ধুরু করছে তাঁর ।
দাদী এসে মেয়েকে কতোক্ষন আদর সোহাগ করে নাতী,নাতনীদের আদর করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন।
সাজিয়া বেগম সরবত সহ হালকা নাস্তা নিয়ে ট্রি টেবিলে রাখলেন।
মুসকান তিনজনকে ড্যাব ড্যাব করে দেখতে লাগলো। আজ তাঁর মাকে ভীষণ মনে পড়ছে সামনের এই মানুষ টার সাথে তাঁর মায়ের যে অনেক মিল। তাঁর পাশের মেয়েটার সাথেও বেশ মিল খুঁজে পেলো নিজের সাথে তবে তাঁর থেকে এই মেয়ের গায়ের রং টা বেশ উজ্জ্বল।

— নিপ্রাপু কেমন আছো?? নিলয় ব্রো কি খবড় তোমার?

— ইয়ানা ইয়াশফার দিকে চেয়ে নিলয়,নিপ্রা এক গাল হাসি নিয়ে বললো উই আর ফাইন,,, থোমরা??

ইয়ানা সহ ইয়াশফা দুজনই হেসে ফেললো।
— আমরাও ভালো।
আপি, ভাইয়ু এখনো বাংলা টা জব্দ হলো না।

নিলয়, নিপ্রা হেসে ফেললো।মায়ের দিকে চেয়ে দুজনই একসাথে বলে ওঠলো মম হু ইজ সি,,,
নদী আশে পাশে তাকালো। রান্নাঘরের সামনে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটার দিকে তাকাতেই দেখলো মেয়েটা ড্যাব ড্যাব চোখে চেয়ে আছে।
চোখ দুটো জলে ভরে গেলো নদীর।
তাঁর মায়ের দিকে চাইতেই নাজমা চৌধুরী চোখ দিয়ে আশ্বস্ত করলেন।
নদী মুসকানকে হাত দিয়ে ইশারা করতেই মুসকান ভঁয়ে আঁতকে ওঠলো।
দাদী, নিলয়,নিপ্রা ছাড়া সবাই ভ্রু কুঁচকে চেয়ে রইলো।সাজিয়া, রিতিশা তো অবাকের চরম পর্যায়ে।
মুসকান ভয়ে ভয়েই একপা একপা করে এগুতে লাগলো। নদী দুচোখ ভরে পা থেকে মাথা অবদি দেখে যাচ্ছে মুসকান কে।
গাড় সবুজ রঙের সেলোয়ার পড়া। সূতি ওড়না দিয়ে মাথায় কাপড় তুলে রেখেছে। ওড়না পেরিয়ে লম্বা চুল গুলো ওকি দিচ্ছে। নদী চোখের পলক ফেলছে না অপলক ভাবে দেখে যাচ্ছে সামনের এই ছোট্ট প্রিন্সেস টা কে।
মুসকান সামনে এসে দাঁড়াতেই নদী তাঁকে শক্ত করে জরিয়ে নিলো বুকের মাঝে, হুহু করে কেঁদে ওঠলো।
তাঁর কান্না দেখে দাদীও চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। নিপ্রার চোখেও পানি নিলয় সরে গেলো সে তাঁর মায়ের চোখের পানি সহ্য করতে পারেনা।
মুসকান হতভম্ব হয়ে গেলো নদীর বুকেই সে কাঁপতে লাগলো। নদী সমানে তাঁকে চুমু খাচ্ছে, আদর করছে।

রিতিশা,সাজিয়া দুজন দুজনের হাত চেপে ধরে অবাক চোখে চেয়ে আছে। তাঁরা কিছু বুঝতে পারছে না।
ইয়ানা, ইয়াশফাও হতবাক।

উপর থেকে ইমন এই দৃশ্য দেখে তৃপ্তির এক হাসি দিলো। নদী উপরে তাকাতেই ইমনকে ইশারা দিলো।
ইমনও নেমে আসলো নিচে।
নিপ্রা,নিলয় গিয়ে ইমনকে জাবটে ধরলো।
ইমন ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নদীর সামনে যেতেই নদী মুসকান কে ছাড়লো।
মুসকান ও কাঁদছে, কেনো কাদছে সে জানেনা।
শুধু এইটুকু জানে সামনের মানুষ টার গা থেকে মা মা গন্ধ আসছে,,,
— অবশেষে আমার বাবাই আমার কলিজার সম্পদটাকে নিয়ে এলো।
বলেই ইমনের কপালে চুমু খেলো।
নদী মুসকান কে আবারো জরিয়ে কপালে চুমু খেলো।

— মা ভাই কোথায় ভাই কে আসতে বলো।

সাজিয়া বেগম বললেন — তোমরা বসছো না। বউ কে তো পরেও দেখতে পারবে। কতোদূর থেকে এসেছো রেষ্ট নাও নদী।

নদী বড় বড় করে তাকালো।

— না মানে আসলে তোমরা তো টায়ার্ড তাই বলছিলাম আর কি,,,

— আমাদের নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।
নিপ্রা, নিলয় যা পোশাক পালটে নে।
ইমন ভাইকে ফোন দে, আমি আর ধৈর্য্য ধারন করতে পারছি না।

মুসকানের বেশ অবাক লাগছে সব কিছু।
ইমন মুসকানের দিকে চেয়ে বাঁকা হাসলো।
মুসকান সেই হাসি দেখে দ্বিগুণ ভয় পেয়ে গেলো।
কিছু তো একটা খটকা আছেই।

— খালামুনি গো আমার হাত পা কাপছে। এরা এই গাইয়াটাকে এমন তুলুতুলু করছে কেনো আমার মাথায় ঢুকছে না।

— আমারো রিতি আমার কেমন যেনো ভয় লাগছে কি হচ্ছে এসব।

— মম সি ইজ আওয়ার লিটল সিস?
বলেই নিপ্রা দৌড়ে এসে মুসকানকে জরিয়ে ধরলো।

নিপ্রার কথা শুনে সাজিয়া,রিতিশা,ইয়াশফা, ইয়ানা চমকে গেলো।

মুসকান কখনো ভাবেনি এরা এতো ভালো তাঁকে এতো ভালোবাসবে খুশিতে তাঁর দ্বিগুণ কান্না পেয়ে গেলো।
নদী এসে বললো– কি হলো মামনি কাঁদছো কেনো?? তুমি তো কাঁদবে না আমি এসে গেছি তো,,,
কে তোমায় কাঁদায় সেটাই তো আমি দেখবো। সব হিসেব নিকেশ করে নিবো আজ। তোমার অস্তিত্ব জানান দিবো আজ আমি কেনো কাঁদছো মামনি বলেই আবারো কপালে চুমু খেলো।

সাজিয়া আঁতকে ওঠলো ।
–কিছু তো গরবর আছেই কিন্তু এদের কিছু জিগ্যাস করা যাবে না। নদী যা খ্যাক খ্যাক করে অপেক্ষা ছাড়া উপায় নেই।
,
ড্রয়িং রুমে সবাই উপস্থিত মুসকান ভেবেছিলো সবাইকে খেতে দিবে আরো কতো কাজ কিন্তু নদী তাঁকে সেই যে তাঁর পাশে বসিয়েছে এক বারও কাছ ছাড়া করে নি। কাজের লোকরাই সব করছে। মুসকানের কেমন অস্বস্থি লাগছে। খনে খনে নদীর মুখের দিকে চেয়ে দেখছে আর মায়ের মুখটা মনে করছে আর ভাবছে কতো মিল দুজন মানুষের।
ইমন ও খনে খনে মুসকান কে দেখে মিটি মিটি হাসছে।
,
সবাই আমার দিকে তাকাও আর আমি যা বলছি পই টু পই মাথায় গেঁথে নাও।

নদীর কথায় সকলের দৃষ্টি তাঁর দিকে স্থির।
ছেলে-মেয়েরা সবাই উপস্থিত সেখানে।
রিতিশা,ইভান একপাশে দাঁড়িয়ে আছে।

— আজ থেকে ২৬ বছর আগের ঘটনা,
একরামুল ভাই,এনামুল আমি আর নয়ন আমরা চার ভাই বোন ছিলাম।

নয়ন নামটা শুনে মুসকান চমকে ওঠলো নদীর দিকে চাইতেই নদী চোখ বুজে আশ্বস্ত করলো। হাতটা শক্তভাবে চেপে ধরলো।
উপস্থিত সবাই নদীর দিকে উৎসুক নয়নে চেয়ে আছে।
,
নয়ন তখন ক্লাস টেনে পড়তো ভাই -বোনদের মধ্যে সবার ছোট ছিলো নয়ন। আমাদের সকলেরই ভীষণ আদরের ছিলো।এক কথায় কলিজার টুকরা,সকলের নয়নের মনি। তাই বাবা আদর করে নাম দিয়েছিলো নয়ন তারা।
ও খুব প্রাণোচ্ছল ছিলো, সবার সাথে খুব সহজেই মিশে যেতো।
কথায় আছে বেশী সুখ সবার কপালে সয় না নয়নেরও তাই হলো। আবেগের বশীভত হয়ে জীবনটাকে বিপর্যয়ে ফেলে দিলো ও নিজেই।
বাড়ির ড্রাইভারের সাথে সম্পর্কে জরালো।
বাবা যেমন ছেলে-মেয়েদের ভালোবাসায় কোন ত্রুটি রাখেননি তেমনটা শসনেও ত্রুটি রাখেন নি।
প্রথম যেদিন ওদের সম্পর্কের কথা জানতে পারে বাবা সেদিন তাঁর কাঠের লাঠিটা দিয়ে বেশ আঘাত করেছিলো নয়নের গায়ে শুধু নয়নকে নয় ড্রাইভার তারেকের গায়েও আঘাত করেছিলো।
আমরা কেউ আটকাতে পারিনি বাবাকে।
সত্যি বলতে আমাদেরও রাগ হয়েছিলো ভীষণ।
সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে হয়ে নয়ন কি করে একটা ড্রাইভারের সাথে প্রেমে জরাতে পারে??
কেউ মেনে নিতে পারছিলাম না আমরা এই সত্যি টা৷
নয়নের বাইরে যাওয়া,স্কুল যাওয়া সব বন্ধ করে দিলো বাবা,রুম বন্দি করেও রাখলো।
মেয়েটা প্রচন্ড জেদী ছিলো ঠিকভাবে খেতো না,ঘুমাতো না পাগলের মতো কান্নাকাটি করতো।
ওর এই কষ্ট মা সহ্য করতে পারতো না।
নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে সন্তানের মায়া ত্যাগ করে মা তারেক কে খবড় পাঠায় গোপনে।
নিজের মেয়েকে নিজ হাতে ঐ ড্রাইভারের হাতে তুলে দেয়। সেদিনই শেষ নয়নের মুখে হাসি দেখেছিলো মা। আর সেদিনই ছিলো মায়ের সাথে নয়নের শেষ দেখা।
বড় বাড়ির মেয়ে একটা ড্রাইভারের সাথে পালিয়েছে। আশে পাশে খবড়টা রটে যায়, আর বাবা সেদিনই স্ট্রোক করেন। হসপিটাল বেডে শুয়েই তাঁর অতি আদরের ছোট সন্তান তাঁর নয়নের মনি নয়নতারা কে ত্যাজ্য করে দেন।
তারপর থেকে নয়নের থেকে আমাদের যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
বাবার সামনে আমরা কেউ নয়নের নাম উচ্চারণ করতাম না। কতো রাত মা বালিশ ভিজিয়েছে হিসেবের বাইরে।বিয়ের আগ পর্যন্ত এমন কোন রাত নেই যে আমি আমার নয়নের স্মৃতি মনে করে কাঁদিনি। বিয়ের পর ব্যাস্ততায় চোখের পানি ফেলতাম না ঠিকি মনের কোনে ঠিকি ও রয়ে গেছিলো। আশায় ছিলাম কোন একদিন আবারও আমরা দুবোন এক হবো,কোন একদিন আবারো আমাদের পরিবারের সকলে এক হবো।
কিন্তু যেদিন মা আমাকে ফোন করে সবটা জানালো।
যেদিন ইমনের মাধ্যমে সব খবড়াখবড় যোগার করলাম সেদিন যেনো সব আশা নিরাশায় পরিনত হলো।

২৬বছর আগে যে মেয়েটা এই বিলাসবহুল বাড়ি ছেড়ে নিজের শেকড় বিচ্ছিন্ন করে,আপনজন দের ছেড়ে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে একজন পুরুষের হাত ধরে বেরিয়ে গিয়েছিলো অজানা পথে।
সেই মেয়েকি জানতো তাঁর ভবিতব্য???
জানতো না বলেই তো এইভাবে শেষ হয়ে গেলো সে।
মুসকান ডুকরে কেঁদে ওঠলো। তাঁর আর বুঝতে বাকি রইলো না কাকে নিয়ে কার অতীত নিয়ে কথা বলা হচ্ছে।
নদী মুসকান কে নিজের বুকে জরিয়ে নিলো।
কেঁদো মামনি, কেনো কাঁদছো??
আজ যে আমাদের সুখের দিন। আমরা আমাদের নয়নকে হয়তো আর ফিরে পাবো না কিন্তু আমাদের নয়ন যে তাঁর সেরা জিনিসটাই আমাদের জন্য রেখে গেছে। আমার নয়নের অংশ যে তুমি বলেই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠলো।

সাজিয়া বেগম সহ ইভান,রিতিশার পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেলো। এসব কি শুনছে তাঁরা।

— ইভান,এই ইভান আমি স্বপ্ন দেখছি না তো??
ভাই আমার একটু চিমটি কাট, এই মেয়ে তোদেরই বাড়ির সন্তান এটা কি করে সম্ভব।

ইভানের শরীর থরথর করে কাঁপতে শুরু করেছে।
রাগে তাঁর মাথা ফেটে যাওয়ার উপক্রম।
সে আর এক মূহুর্ত সেখানে দাড়ালো না।
হনহন করে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে গেলো।
এই দৃশ্য ইমনের চোখ এড়ালো না।
,
হ্যাঁ ও আমার নয়নের সন্তান। ও এ বাড়ির সন্তান।
বাবা আজ বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন।
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে বাবা যে বলে গেছেন তাঁর নয়নকে ক্ষমা করে এ বাড়ি ফিরিয়ে আনতে। আমরা আমাদের নয়নকে ফিরিয়ে আনতে না পারলেও ইমন নিজের অজান্তেই নয়নের অংশকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।
হ্যাঁ মুসকান আমার নয়নের মেয়ে এ বাড়িতে আমার যতোটা অধিকার আছে,আমার সন্তান দের যতোটা অধিকার আছে তাঁর থেকেও বেশী অধিকার মুসকানেরও রয়েছে। চৌধুরী পরিবারের নাতনী ও ইমন চৌধুরীর অর্ধাঙ্গিনী ও।
অন্যদের তুলনায় ওর অধিকারটা অনেকটাই বেশী।
মুসকান কোন পতিতা পল্লি থেকে ওঠে আসেনি।
তাঁর বংশ পরিচয় ঠুনকো নয়।
জোর গলায় কথাগুলো বলে সাজিয়ার দিকে তাকালো নদী।
সাজিয়া মাথা নিচু করে ফেললো।
সবাই নিরব, পুরো বাড়িই শুনশান নীরবতায় রইলো।
রিতিশা আর এক মূহুর্তও এখানে দাড়ালো না সবার মাঝ থেকে সেও সরে গেলো।

— ও যদি নয়নের মেয়ে হয়ে থাকে তাহলে নয়ন কোথায়? ও আদেও নয়নের মেয়ে তো? নাকি এটা কোন চাল?

সাজিয়ার কথায় ইমন রাগে দুহাত শক্ত মুঠ করে ফেললো। একরামুল চৌধুরী বললেন,

— তোমার কি মনে হয় আমরা নির্বোধ?
ও নয়নেরই সন্তান আর ওর বার্থ সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে সব ইনফরমেশনই ইমনের কাছে রয়েছে।
এর মাঝে আমি নিজে গিয়েও তারেকের সাথে দেখা করে এসেছি। তারেক অনুতপ্ত ভীষণ অনুতপ্ত।
সে আমার বাড়ির মেয়েকে যথার্থ মর্যাদা দিতে পারেনি। আর না মুসকান কে সে বাবার স্নেহ দিতে পেরেছে। সে ব্যার্থ না পেরেছে স্বামী হতে না পেরেছে বাবা হতে।

মুসকান অবাক চোখে ইমনের দিকে তাকালো।
ইমন মৃদু হাসলো, হালকা কেশে বললো,
— সেদিন রাতে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেছিলাম তার কারন সবারই অজানা। সেদিন আমি মুসকানের যাবতীয় কাগজপএ,গ্রাম থেকে আনিয়েছি লোক পাঠিয়ে সেই সাথে মি.তারেককেও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর আসল রূপ দেখিয়ে এসেছি।

মুসকান ভয়ে এক ঢোক গিললো।
আরো অনেকের অনেক কৌতুহল থাকলেও ইমন কথা বাড়ালো না।
নদী শেষ একটা কথাই বললো — এতোদিন ওকে যে যতোভাবে অপমান, অসম্মান করেছো করেছো।
আজকের পর ওর দিকে আঙুল তোলার আগে একবার হলেও সবাই নিজের জায়গাটা আর ওর জায়গাটা ভেবে নেবে আশা করি।
,
সাজিয়া বেগমের হাত পা কাঁপছে, রিতিশা রাগে কাপছে।
— রিতি তুই আর কোন ঝামেলা করিস না দোহাই লাগে। নদী খুব ডেন্জারাস আমি চাই না কোন প্রকার ঝামেলা হোক। আর মুসকান কে নিয়ে যে সমস্যাটা ছিলো সেটা তো মিটেই গেলো।
আমার আর কোন অসুবিধা নেই ওকে নিয়ে।

— খালামুনি কি বলছো এসব?? ভুলে গেছো তুমি আমার অপমানের কথা??ভুলে গেছো তুমি তোমার ছেলের গায়ে পড়া আঘাত গুলোর কথা??

— আমি কিছু ভুলিনি, কিন্তু সত্যি তো এটাই ওদের কারো কোন দোষ নেই। মুসকানেরও কোন দোষ নেই।

— আছে দোষ আছে মামনি, আর মুসকানের দোষ না থাকুক ইমনের আছে ওর জন্য আমি আমার বেবীকে হারিয়েছি,আমার ভালোবাসা হারিয়েছি। ওকে আমি সুখী হতে দিবো না, দিবো না সুখী হতে।

চিৎকার করে কথা গুলো বললো রিতিশা।
সাজিয়া রিতিশার কাঁধে ধরে কড়া গলায় বললো,
— তোর এই জেদের কারনে আমার না সংসার ভেঙে যায়,তোর এই জেদের কারনে আমার জীবনে অভিশাপ না নেমে আসে।

— কিছু হবে না খালামুনি, কিছু হবে না।

আমি কালই এ বাড়ি থেকে চলে যাবো। এ বাড়ি থেকে কিছু করা সম্ভব নয়। ইভান কোথায়??

— তুই ইভান কে এসবের মধ্যে কেনো টানছিস??

— রিতিশা সাজিয়ার কথার উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
,
রাত এগারোটা বাজতে চললো আর আমার চুমু চুন্নির খবড় নেই??
আজ কি আমার কাছে আসবে না নাকি।
ফুপুকে পেয়ে আমায় ভুলে গেলো??
বিরবির করছে আর পাইচারী করে যাচ্ছে পুরো রুম জুরে। আরো আধঘন্টার মতো ওয়েট করে ফুপুর রুমের দিকে পা বাড়ালো ইমন।
দরজার কাছে যেতেই দেখলো ফুপুর কোলে মাথা রেখে ফুপুর বলা গল্প গুলো শুনছে,,,
মুসকান ও প্রান খুলে কথা বলছে নদীর সাথে।
আর তাঁর প্রত্যেকটা কথায় তাঁর মা আর মা রয়েছে।
ইমন দরজায় হেলান দিয়ে দুপকেটে দুহাত গুজে মুগ্ধ চোখে চেয়ে রইলো।
তাঁর হৃদয় জুরে শীতলতায় ছেয়ে গেলো।
তাঁর মুগ্ধময়ীর বলা প্রত্যকটা বুলি, তার মুগ্ধময়ীর চোখে মুখের চঞ্চলতা।খুব গভীর ভাবে আকৃষ্ট করলো তাঁকে। অপলকভাবে তাকিয়ে আছে ইমন।
নদী মুসকানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
,
— ব্রো তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
চলো ভিতরে চলো।

নিপ্রার কথায় ধ্যান ভাঙলো ইমনের।
নদী, মুসকান দুজনই তাকালো ওদের দিকে।

ইমন হালকা কেশে ভিতরে যেতে যেতে বললো,

— ফুপু,,, ফুপা কবে আসবে??

— তা তুই তাঁকেই ফোন করে জেনে নিস।
বস এখানে।

— না বসবো না রাত অনেক হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো তোমরা আমিও ঘুমাবো সকালে অফিস আছে।

— ওও তাহলে যা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।

— ইমন মুসকানের দিকে আড় চোখে তাকালো।

নিপ্রা ইমনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো ব্রো,, সিস আমাদের সাথে ঘুমুবে আজ হিহিহি।

ইমন জোর পূর্বক হেসে চলে গেলো ধীর পা ফেলে।
মুসকান ইমনের যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।
কয়েক সেকেন্ডের ভিতরেই ইমন আবারো রুমে এলো।
নিপ্রা ভ্রু ওঠিয়ে জিগ্যেস করলো — কি???
নদী বললো,
— কিরে কিছু বলবি??

ইমন আমতা আমতা করে বললো,,,

— তোমরা তিনজন একসাথে থাকবে???

নদী ভ্রু কুঁচকে বললো,
তা দিয়ে তুই করি করবি যা গিয়ে ঘুমা তোর না অফিস আছে।

নিপ্রা মুচকি হাসলো, মুসকান ও মুখ টিপে হাসলো।
যা চোখ এড়ালো না ইমনের।

,

চলবে…….
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

আজকের পার্ট টা সাজাতে পারলাম না ব্যাস্ততায়।
নিজের কাছেই কেমন একটা লাগছে তবুও ২০২০ সালের হৃদপিন্ড গল্পের শেষ পার্ট টা দিয়ে ফেললাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here