হৃদপিন্ড,পর্ব-১১
জান্নাতুল নাঈমা
সাজিয়া বেগম চেঁচাতে চেঁচাতে বললো আমার দুল পাচ্ছি না, হে গো শুনছো আমার দুলটা পাচ্ছি না সকালেই ড্রেসিং টেবিলের উপরে ছিলো এখন নেই।
একরামুল চৌধুরী ভ্রু কুঁচকে দাড়িয়েই রইলো।
ইয়াশফা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে তাঁর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তাঁর ভিতর কি চলছে কতোটা ভয় তাকে ঘিরে ধরেছে। ইয়ানা কিছুই বুঝতে পারছে না এসব কি হচ্ছে।
মুসকান ভয়ে ভয়ে বললো এটা কি আপনার দুল।
সাজিয়া বেগম খানিকটা হকচকিয়ে গেলো।
ইয়াশফার দিকে একবার চেয়ে আবার মুসকানের সামনে গিয়ে দুলটা কেড়ে নিয়ে বললো হ্যাঁ এটাই আমার। তোমার কাছে কি করে গেলো, ছিঃ পেটে পেটে এতো,
আমার এতো দামী দুলটা দেখে লোভ সামলাতে পারোনি তাইনা। দেখেছো তোমরা দেখেছো এই জন্যেই এই মেয়েকে আমি পছন্দ করিনা।
ছোট লোকের বাচ্চা, লোভী। এখুনি বেরিয়ে যা বাড়ি থেকে। বলেই মুসকানের হাত টেনে দরজার কাছে গেলো।
মুসকান ভয়ে কাঁপছে চোখ বেয়ে অঝড়ে পানি পড়ছে। তাঁর সাথে চলে যাবার দিন এমন ঘটনা ঘটবে সে ভাবতে পারেনি। অসহায় চোখে চাইলো ইমনের দিকে।
ইমন স্ট্রেট দাঁড়িয়ে আছে গম্ভীর্য ভাবটা তাঁর বরাবর থাকলেও এখন ঠিক কি চলছে বোঝা গেলো না।
নাজমা চৌধুরী জোর গলায় বললেন বউ মা, বাড়াবাড়ি একদম করবে না। অনেক হয়েছে আর না। তোমার সাহস কি করে হয় ওকে ছোট লোকের বাচ্চা বলার।
না জেনে তুমি মেয়েটাকে দোষারোপ করতে পারো না।
ইমন রাগে তাঁর দু হাত মুঠ করে রয়েছে রক্ত বর্ন চোখে তাকালো ইয়াশফার দিকে।
দাঁতে দাঁত চেপে বললো তুই বলবি নাকি আমি বলাবো কথা??
ইয়াশফা ভয়ে কেঁপে ওঠলো। সাজিয়ার হাত নরম হয়ে এলো মুসকানের হাত ছেড়ে অবাক চোখে ইমনের দিকে তাকালো।
মুসকান কেঁদেই চলেছে।
ইমন এবার প্রচন্ড রেগে গেলো। ইয়াশফাকে আরেক এক ধমক দিতেই ইয়াশফা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে গড়গড় করে সব বলে দিলো।
একরামুল চৌধুরী বললেন ছিঃ সাজিয়া তোমার মন এতোটা নিচু ছিঃ।
ইমন বললো দাদী অনুমতি পেলে আমি এক্ষুনি এই বাড়ি থেকে চলে যেতে চাই।
একরামুল চৌধুরী বললেন ইমন এসব কি বলছো এটা তোমার বাড়ি।
হ্যাঁ আমার বাড়ি কিন্তু আমার একার নয়। আর আপনি খুব ভালো করেই জানেন আমি এখানে পার্মানেন্ট থাকার জন্য আসিনি। আপনার ওয়াইফ, ছেলে, মেয়ে কে বলে দেবেন আমার দিকে আঙুল ওঠানোর আগে যেনো নিজেদের দিকে আঙুল তোলে।
সাজিয়া বেগম বললেন আমরা কেউ তোমাকে কিছু বলিনি।
এবার ইমন যেনো ক্ষেপে গেলো। রাগটা সে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না।
আঙুল তুলে বললো মিসেস সাজিয়া চৌধুরী ডোন্ট শাউট। আপনি আর একটা কথাও বলবেন না। আপনি যে কাজ করেছেন এরপরও যে ইমন চৌধুরী চুপ আছে তা শুধু আপনি তাঁর বাবার ওয়াইফ বলে। নয়তো এর ফল কি হতে পারতো আপনি কল্পনাও করতে পারতেন না।
ইয়াশফার দিকে চেয়ে বললো ছেলে, মেয়েদের ভালো শিক্ষা দেন নয়তো কপালে দুঃখ আছে।
নাজমা চৌধুরী বললেন দাদু ভাই আবার কবে আসবি বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।
ইমন বললো দাদী চিন্তা করো না ইনশাআল্লাহ কদিনপরই আমার বাড়ি নিয়ে যাবো। তোমার শেষ ইচ্ছে পূরন করার সময় এসেছে এবার।
সাজিয়া বেগম, একরামুল চৌধুরী চমকে গেলেন।
তাঁদের বুঝতে বাকি রইলো না ইমন কিসের কথা বলছে।
দাদী মুসকানের কাছে গিয়ে মুসকানকে আদর করলো, কয়েকটা চুমু খেলো আর বললো কিছু মনে করিসনারে মানুষ তামা কে পরীক্ষা করে না। মানুষ সোনাকেই পরীক্ষা করে যে সে খাঁটি কিনা।
তুই তো পাশ করে গেছিসরে পাশ করে গেছিস তুই বলেই কপালে চুমু খেলো। মুসকান দাদীকে জরিয়ে কেঁদে ফেললো। সত্যি তাঁর ভীষন কষ্ট হচ্ছে এ বাড়িতে এসে দুটো ঘটনার সম্মুখীন হয়ে সে আজ বুঝতে পারছে ইমন কেনো এ বাড়ির ছেলে হয়েও এ বাড়িতে সকলের সাথে একসাথে থাকে না। কেনো সে আলাদা থাকে ঠিক বুঝেছে সে।
একমাএ দাদী ছাড়া, আর ইয়ানা ছাড়া কেউ যে ইমন কেও ভালোবাসে না।
এ বাড়ির মানুষ গুলো বড্ড স্বার্থপর।
ইয়ানা এসে বললো মুসকান আমি কিন্তু তোমার সাথে দেখা করতে যাবো এরপর থেকে।
মুসকান ইয়ানার দিকে চেয়ে বললো আচ্ছা।
,
মুসকান কেঁদেই চলেছে, ইমন ড্রাইভ করছে মাঝে মাঝে আড় চোখে মুসকান কে দেখছে।
মুসকানের কান্না থামার কোন নাম নেই।
হঠাৎ ই মাঝ পথে ইমন গাড়ি থামিয়ে দিলো।
এতো জোরে থামলো যে মুসকান কেঁপে ওঠলো ইমনের দিকে তাকাতেই ভয়ে মিইয়ে গেলো।
ইমন এক ধমক দিয়ে বললো ডোন্ট ক্রায়িং।
আর যদি কাঁদতেই হয় তো গাড়ি থেকে নেমে যেখানে খুশি সেখানে গিয়ে কাঁদো।
চলে যাও আমার কাছ থেকে, আমার কাছে থেকে তো চোর অপবাদ পাচ্ছিলে চলে যাও আমার থেকে অনেক দূরে চলে যাও। আমি মানুষ টাই ভালো না আমার সাথে সত্যি থাকা যায় না। চলে যাও মুসকান যাও চলে।
ইমনের রাগের মাথায় বলা কথায় মুসকান ভয় পেয়ে গেলো কান্না থেমে গেলো তাঁর।
ইমন জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে রাগটা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে মুসকানের দিকে শান্ত স্বরে তাকালো।মুসকান মাথা নিচু করে নরম, ভেজা গলায় বললো আর কাঁদবো না সরি,,,আপনি গাড়ি স্টার্ট দিন ।
ইমন অবাক চোখে তাকালো বুকের ভিতর টা তাঁর ঠান্ডা হয়ে গেলো। সমস্ত রাগ যেনো এক নিমিষেই কমে গেলো। মুসকান মলিন চোখে চেয়ে বললো কিহলো দেরী হয়ে যাচ্ছে তো বাসায় ফিরে অনেক কাজ আছে চলুন,,,বলেই সামনে তাকালো।
ইমনের বুকটা শান্তি তে ভরে গেলো। মন বার বার জানান দিতে লাগলো ইয়েস সঠিক মানুষ এসে গেছে, আর কোন চিন্তা নেই তোর। এবার সব ঠিক হয়ে যাবে সব।
,
রাত তখন এগারোটা ছুঁই ছুঁই। ইমন বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। সায়রী আর সুপ্তি কাল আসবে। মুসকান ইমনকে রাতের খাবাড় খাওয়িয়ে সেই যে রুমে গিয়ে দরজা দিয়েছে আর বের হয়নি।
ইমন তিনবার রুমের সামনে গিয়েও ফিরে এসেছে।
এবার তাঁর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। মুসকান ভালো করেই জানে ইমন যে অবদি না ঘুমাতে যায় সে অবদি টুকটাক কাজের জন্য মুসকানকেও ইমনের সাথে জাগতে হয়। আজ সব ভুলে গেলো কি করে,,,
ইমন সিগারেট টা নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেললো।
খানিকটা রাগ নিয়েই মুসকানের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় কয়েক থাবা দিলো। মুসকান বলে এক ডাক দিতেই মুসকান দরজা খুলে মাথা নিচু করে ফেললো।
রুমের ভিতর ঢুকে গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করলো কি করছিলে,,,
মুসকান কিছু বললো না মাথা নিচু করেই রইলো।
ইমন জানে কিভাবে বললে কাজ হবে তাই এক ধমক দিয়ে বললো আমি প্রশ্ন করেছি কি করছিলে, ঘুমাচ্ছিলে না সেটা বোঝাই যাচ্ছে।
মুসকান কেঁপে ওঠলো মাথা তুলতেই ইমন চোখ, মুখ দেখে বেশ বুঝলো সে কান্না করছিলো।
ইমন দাঁতে দাঁত চেপে বললো লুকিয়ে কাঁদছিলে,,,
মুসকান মাথা নিচু করে ফেললো আবারো।
ইমন এবার আর রাগ করলো না একটু কাছে গিয়ে মুসকানের দুগালে আলতো করে চেপে ধরলো।
মুসকান চোখ তুলে তাকালো।
ইমন মুসকানের কান্নামিশ্রিত ডাগর ডাগর চোখের পাপড়িগুলো মুগ্ধ নয়নে দেখতে লাগলো।
আদুরে গলায় বললো আমার কাছে থেকে কষ্ট হচ্ছে,,, দুপুরে তো চলে যেতে বললাম। চলে যেতে,,,
কথাটা ইমন মুসকানকে পরীক্ষা করার জন্যই বলছে। এতে যদি মুসকান যেতেও চায় যেতে দেবে কিনা সন্দেহ।
হুট করেই মুসকান ইমন কে জরিয়ে ধরলো।
অবাধ্য মন যেনো আর বাঁধা মানলো না কান্নায় ভেঙে পড়তে ইচ্ছে হলেও মুসকান কান্না চেপে রাখলো। ইমন যে কান্না সহ্য করতে পারেনা,,,
দুহাতে শক্ত করে জরিয়ে বললো আমি কোথাও যেতে চাইনা, আমি আপনাকে ছেড়ে যেতে চাইনা।
আপনি ছাড়া যে আমার আপন কেউ নেই।
ইমন এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুসকান কে ছাড়িয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো।
মুসকান লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো।
এটা কি করে ফেললাম, আল্লাহ ওনি কি ভাবলো। এখন যদি খুব বকে। ভয়ে ভয়ে একটু চোখ তুলেই আবার নামিয়ে ফেললো।
ইমন গম্ভীর ভাব নিয়েই বললো তোমার কান্না আমার বিরক্ত লাগে বলে এই নয় যে তোমাকে রাতের নিস্তব্ধতায় রুমে মুখ গুজে লুকিয়ে কাঁদতে হবে।
মুসকান চমকে ওঠলো,,,
আমি কাঁদছিলাম ওনি বুঝে গেছেন। এখন কি হবে ভয়ে বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেলো তাঁর ।
ইমন বললো –
“মানুষ এমন একটা হতভাগা জাতি যে কখনো কখনো চিৎকার করে মন খুলে কাঁদতে ইচ্ছে হলেও তাঁরা কাঁদতে পারে না শুধু মাএ লোক চক্ষুর ভয়ে।
আমরা নিজেদের স্বাধীন স্বাধীন বলে সারাজীবন গলা ফাটাই, রাস্তা, ঘাটে যে কোন জায়গায় বুক ফুলিয়ে মাথা উঁচু করে বলি আমরা স্বাধীন, আমরা স্বাধীন। অথচ দিন শেষে রাতের আঁধারে লোকচক্ষুর ভয়ে লুকিয়ে কাঁদি। স্বাধীন ভাবে কাঁদতে পারিনা,স্বাধীন ভাবে কখনো কখনো হাসতে পারিনা। এই আমাদের স্বাধীন জীবন?এমনটা হতে পারেনা কারো মন খারাপ?
বাবা-মা,বন্ধু -বান্ধব,আশেপাশের মানুষ, ভালোবাসার মানুষ, হাজব্যান্ড,ওয়াইফ আঘাত দিয়েছে? তুমি মন খুলে কাঁদতে চাও? দু হাত ওঠিয়ে উন্মুক্ত বুক পেতে কাছে কেউ ডাকতে পারেনা? বলতে পারে না আসো আমাকে আঁকড়ে ধরে যতো পারো কাঁদো, চিৎকার করে কাঁদো। মনের সব আবেগ খুলে প্রকাশ করো,সব ব্যাথা অশ্রুনার মাঝে ঝড়ে যেতে দাও। কাঁদো তুমি অনেক কাঁদো। মানুষের জীবন কেনো এমন থাকবে?
হাসতে গেলে বাঁধা, কাঁদতে গেলে বাঁধা। বাঁধা, বাঁধা, বাঁধা কেনো এই বাঁধা? বলতে পারো কেউ”?
মুসকান,,,কষ্ট হচ্ছে??? কাঁদতে চাও??? আমায় আঁকড়ে ধরো,,, কাঁদো তুমি মন খুলে। সব ব্যাথা প্রকাশ করে দাও বলেই ইমন দু হাত তুলে মুসকানের দিকে তাঁর উন্মুক্ত বুক পেতে দিলো।
মুসকান আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না।
এভাবে আজ পর্যন্ত কেউ তাকে বলেনি, মা মারা যাওয়ার পর শান্তিতে মন খুলে কাঁদার জায়গাটুকুও পায়নি সে। আর ইমন তাঁকে সেই জায়গা করে দিয়েছে সে কি না গিয়ে পারে,,,
ছুটে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো ইমনের বুকে। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। আর বলতে লাগলো আপনি এতো ভালো কেনো?আপনি আমায় এতো বোঝেন কেনো? জানেন আমার খুব কষ্ট হয়েছে আজ, বিশ্বাস করুন আমার মনে ওসব খারাপ চিন্তা নেই আমি লোভী না বিশ্বাস করুন।
আপনি আমাকে চলে যেতে বললেন কিন্তু আমি তো আপনার কাছেই অনেক ভালো আছি। আপনাকে ছাড়া এক মূহুর্তও ভালো লাগে না। আমি আপনার কাছেই থাকতে চাই।
আপনাকে আমার খুব ভালো লাগে,আপনার খুশিতে আমি নিজে খুশি হই। আপনার সুখে আমি নিজে সুখ পাই।
আপনার কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যায়।
তাহলে আপনাকে ছেড়ে আমি কি করে ভালো থাকবো, কোথায় যবো আমি। আমার যে সত্যি যাওয়ার জায়গা নেই। আপনার মতো করে কেউ তো আমার জন্য ভাবেনা। তাহলে কেনো আপনি আমাকে চলে যেতে বললেন । রাগ হলে মারুন, বকুন কখনো চলে যেতে বলবেন না।
আমি আমার সারাটাজীবন আপনার নামে লিখে দিতে চাই।সারাজীবন আপনাকে রেঁধে খাওয়াতে চাই,আপনার সমস্ত কাজ করে দিতে চাই। আমি এই সব দায়িত্ব থেকে কখনোই মুক্তি চাইনা বিশ্বাস করুন। আমি কখনো আপনার থেকে মুক্তি চাইনা।
আর যদি কখনো আপনার থেকে মুক্ত হতে হয় সেদিন যেনো আমার মরন হয়।
ইমন মুসকান কে ছাড়িয়ে দিলো ওঠে দাঁড়ালো।
মুসকান কেঁদেই চলেছে,,,
এসব কথা মুসকান বলতে পারছে,,,সত্যি ও বলছে তো,,,এগুলোর অর্থ বুঝে বলছে তো??
ইমন বললো তুমি যা বলছো ভেবে বলছো?
তোমার সারাজীবন আমাকে লিখে দিলে, এইটুকুন মেয়ে এতো বড় বড় কথা বলার সাহস কোথা থেকে আসে।
মুসকান বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো।
মাথা নিচু করে বললো আমার ভুল হলে মাফ করে দিন। কিন্তু মন যা বলেছে আমি তাই বলেছি।
আমি আপনার থেকে অনেক টা ছোট বলে আমার কি কোন মন নেই,,,
মনের কি কোন বয়স আছে?
ইমন হকচকিয়ে গেলো।এতোটুকু মাথায় এতো কঠিন কথা আসে কোথা থেকে। দাদী শিখিয়েছে নাকি এসব ভেবেই মুসকানের দিকে গভীর দৃষ্টি রেখে একটু ঝুকে বললো “মুগ্ধময়ী” কথার মুগ্ধতায় ডুবিয়ে মারতে চাইছেন নাকি,,,
মুসকান লজ্জা পেয়ে গেলো।
ইমন বললো লজ্জা পেয়ে লাভ নেই দায়িত্ব যেহেতু নিতেই চেয়েছো দায়িত্ব তো তোমাকে এবার নিতেই হবে।
মনে রেখ এতোদিন যে দায়িত্ব নিয়েছো সেই দায়িত্ব আর এই দায়িত্ব কিন্তু এক হবে না।এই দায়িত্ব অনেক কঠিন হবে তোমার জন্য।
তবে তুমি নিজে থেকে দায়িত্ব নিতে চেয়েছো আমি না দিয়ে কি পারি নাকি। তোমাকে যখন আমার নামে লিখেই দিলে তো আর কি করার। হয়ে যাক যা হওয়ার। করে নিবো তোমায় আমার সম্পত্তি,,, বলেই বাঁকা হাসলো।
মুসকান ইমনের কথার কোনটাই বুঝলো না। শুধু এইটুকু সে বুঝে ইমন তাঁর খুব আপনজন। সে যা করবে তাতেই তাঁর ভালো হবে। তাঁর হ্যাঁ তে হ্যাঁ তাঁর না তে না এটা ছাড়া আর কিছু সে বুঝতেও চায় না, জানতেও চায়না।
ইমন হালকা কেশে মুখে আবারো গম্ভীর্য ভাব এনে বললো ঘুমিয়ে পড়ো, সকালে অফিস আছে আমার বলেই রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।
মুসকান দরজা লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে বুকে হাত রেখে জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিলো। বুকের ভিতর কেমন কেমন যেনো করে। এমন এমন করে কেনো ওনি কাছে আসলেই।
ধ্যাঁত ঘুমিয়ে পড়ি কাল সকালে ওঠে ওনাকে আবার খাবাড় রেডী করে দিতে হবে।
,
ইমন রুমে গিয়ে বাঁকা হাসলো। রিক্তা কে ফোন করলো।
ইমন চৌধুরী যা বলেছিলো ঠিক তাই হয়েছে। তোকে বলেছিলাম না,যা হবে মুসকানের ইচ্ছে তে হবে।
রিক্তা উত্তেজিত হয়ে বললো মানে, মুসকান নিজেই বলেছে??
কি বলিস কি মেয়েটার তো বেশ সাহস। নিজে থেকে প্রপোজ করে বসলো।
ইমন বললো সাহস না বুঝেছিস ও যেভাবে করেছে সেভাবে হয়তো পৃথিবীর কোন মেয়েই কোন ছেলেকে বলবে না।
ওবাবাগো কি বলিস কি তা কিভাবে বললো।
সেটা তোর শুনতে হবে না। কাল সায়রী আসছে, পর্শু দাদীকে নিয়ে আসবো সামনে সপ্তাহে সবকাজ সেরে ফেলবো ঘরোয়াভাবেই। রেজিস্ট্রি টা পরে হবে তুই কালই আসবি ওকে।
রিক্তা বললো সব তো ঠিক আছে কিন্তু এতো পিচ্চি মেয়ে বিয়ে করবি তুই ভাবতেই কেমন একটা লাগছে।
ইমন গম্ভীর গলায় বললো ভাবা বন্ধ কর।
বলেই ফোন কেটে দিলো ইমন।
রিক্তা হা করে বসে রইলো কিছুক্ষন। তারপর সায়রী কে ফোন করে শুনলো সব সত্যিই। কি আর করার বন্ধুর বিয়ে বউ পিচ্চি হোক আর যাই হোক তাঁকে যেতেই হবে। তবে কথা হলো ভার্সিটির কয়টা মেয়ে যে স্ট্রোক করবে আল্লাহ জানে ভেবেই কাঁথা গায়ে চেপে শুয়ে পড়লো।
,
তিনটা বেজে গেছে তবুও ইমনের চোখে ঘুম নেই।
সব বাজে চিন্তা, কালো অতীতটা এসে মাথায় চাপছে আর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। সব ভেঙে চুরে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এমনটা হলে কেমন হবে, আমি কি নতুন ভাবে বাঁচতে পারবো না?
আমার মুগ্ধময়ীকে নিয়ে নতুন করে শুরু করতে পারবো না?
রাগে নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ফ্রিজ থেকে ড্রিংক বের করে আবার রেখে দিলো।
এখন এই অবস্থায় তাঁর সঙ্গী হয় ড্রিংক হবে নয় তো তাঁর মুগ্ধময়ী হবে। সে মুগ্ধময়ীকেই বেছে নিলো।
মুসকানের রুমে গিয়ে ঘুমন্ত মুসকানের দিকে কিছুক্ষন মুগ্ধনয়নে চেয়ে কয়েকবার ডাক দিলো।
মুসকান ঘুমঘুম চোখে চেয়ে ইমনকে দেখে ধরফরিয়ে ওঠে বসলো। ওড়নাটা গায়ে জরিয়ে ইমনের দিকে চেয়ে উত্তেজিত হয়ে বললো কি হয়েছে?
ইমন পিছন ঘুরে বললো আমার সাথে চলো।
মুসকান কিছু না বলে বিছানা ছেড়ে ওঠে ইমনের পিছু পিছু তাঁর রুমে গেলো।
ইমন বিছানায় সোজা হয়ে গা এলিয়ে দিলো।
মুসকান পাশে দাঁড়িয়েই রইলো।
ইমন বললো মাথাটা ভীষণ ধরেছে ঘুম আসছে না।
মুসকান বুঝে গেলো কি করতে হবে, চুপচাপ মাথার কাছে বসে চুলগুলো আলত করে টেনে দিতে লাগলো।
ইমন চোখ দু’টো বন্ধ করে ফেললো।
মুসকান ওভাবেই মাথা টিপে দিতে লাগলো কখনো কপালে দু আঙুল দিয়ে,কখনো চুলগুলো আলতো করো টেনে ধরলো।
চারটার দিকে ইমন ঘুমিয়ে গেলো।
মুসকান ও ওভাবে বসেই ইমনের মাথার কাছে গাল ঠেকিয়ে এক হাতে গলা ধরে কখন ঘুমিয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি।
মুসকানের মুখের গরম শ্বাস ইমনের মুখে লাগছে ক্রমাগত।
,
আটটা বেজে গেছে ইমনের ঘুম ভেঙে গেলো।
কারো গরম শ্বাস মুখে লাগছে বুঝতেই পাশে চোখ ফেলতেই চমকে গেলো।
মুসকান, এভাবে বসেই ঘুমিয়ে গেছে ওহ গড।
ইমন ওঠতে নিতেই মুসকান একটু নড়ে ইমনের গলায় রাখা হাত দিয়ে ইমনের গলাটা বেশ ভালো ভাবেই নিজের সাথে জরিয়ে নিলো।
ইমনের দাঁড়িগুলো মুসকানের গালের সাথে লেপ্টে আছে একদম।
ইমনের শ্বাস দ্রুত হয়ে গেলো। ঘুমন্ত মুসকানের দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলো। ইচ্ছে করলো কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিতে।
চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো ধীরে ধীরে ঠোঁট এগিয়ে নিতেই মুসকানের ঘুম ভেঙে গেলো। ইমনের ঘোর লাগা চোখের দিকে চেয়ে বুকের ভিতরটা তাঁর ধক করে ওঠলো৷ পুরো শরীরে অদ্ভুত শিহরন খেলে গেলো। লজ্জায় মিইয়ে গেলো কেমন।
ডানহাতটা ইমনের ঠোঁটে চেপে ধরলো।
ইমন চমকে ওঠে ঘোর কাটিয়ে মুসকানের চোখের দিকে তাকালো।
চলবে………