হৃদপিন্ড,পর্ব-১২,১৩

হৃদপিন্ড,পর্ব-১২,১৩
জান্নাতুল নাঈমা
পর্ব-১২

প্রথমে অপ্রস্তুত হলেও পরোক্ষনেই ইমনের মেজাজ টা বিগরে গেলো। চোখ মুখ শক্ত করে চেয়ে রইলো।
এতো বড় সাহস আমার কাজে ব্যাঘাত ঘটায়,আমি কি খারাপ কিছু করতে আসছি নাকি, যা আমি করতে চাইছি তা তো আমাকে করতে দিতেই হবে ভেবেই মুসকানের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো।
মুসকান ইমনের অমন রাগী চাহনী, শক্ত স্পর্শে ভয়ে কুঁকড়িয়ে গেলো।
ইমন কেমন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আঙুলের ফাঁকে আঙুল ঢুকিয়ে বিছানায় চেপে ধরলো। আরেক হাতে মুসকানের ঘাড়ে শক্ত করে চেপে ঠোঁট এগিয়ে নিলো কপালে।
কপালে ঠোঁটের ছোয়া যে এতো তীব্রভাবে কেউ দিতে পারে তা বোধহয় কোন মেয়েরই জানা নেই।
মুসকানের তো একেবারেই নেই।
শরীরটা কেমন শিরশির করছে তাঁর, বুকের ভিতর চ্ঞ্চলতা ক্রমশও বেড়ে যাচ্ছে ঘন নিশ্বাসের মৃদু ছোঁয়া গুলো ইমনের গলায় লাগছে ক্রমশ।
কপাল থেকে ঠোঁট সরিয়ে মুখের দিকে তাকালো ইমন।
মুসকানের মুখো ভঙ্গি দেখে হাতের বাঁধন আলগা করে সরে গেলো বিছানা ছেড়ে ওঠে হালকা কেশে কাঠকাঠ গলায় বললো এতো ঘুম কিসের।
এখানে কে ঘুমাতে বলেছে নিজের রুমে গেলেই পারতে,যাও খাবাড় রেডি করো আমার বেশী টাইম নেই বলেই বাথরুমে ঢুকে গেলো।

মুসকান কয়েকদফা শ্বাস নিয়ে চট করে বিছানা ছেড়ে ওঠে দাঁড়ালো। ভ্রু কুঁচকে একবার নিজের ডান হাত আবার কপাল ছুঁয়ে দেখছে।
ওনি এমনটা কেনো করলো,ঘুমিয়ে গেছিলাম বলে শাস্তি দিলো?ইশ চোখটা লেগে গেছিলো।
আল্লাহ কি ভয়টাই না পেয়েছি। কপালে চুমু খেলো না কি, কি করলো কিছুই তো বুঝলামনা। চোখ, মুখ দেখে তো বোঝা যাচ্ছে বেশ রেগে গেছে।
যাই তারাতারি সব রেডি করি গিয়ে তবেই রাগটা কমে যাবে বলেই এক ঢোক গিলে ছুটে রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।

ফোনে কথা বলতে বলতে ইমন সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে। সাদা শার্ট, কালো কোর্ট, কালো প্যান্ট পড়া, হাইট অনুযায়ী একদম পারফেক্ট বডি। মুসকান রান্নাঘর থেকেই ইমনকে লক্ষ করছে সামনাসামনি সেভাবে দেখতে পারে না। দূর থেকে দেখে শুধু এতেই বেশ ভালো লাগে তাঁর। কাছাকাছি শুধু তাঁর প্রয়োজন গুলো খেয়াল করে যায়।দূর থেকে তাঁর সবটাই খেয়াল করে।কথা বলা, হাঁটা চলা,রাগ সবটাই মুখস্থ হয়ে গেছে তাঁর।
তাঁর চোখে এমন পুরুষ, এমন ব্যাক্তিত্ব আর দুটো ধরা পরেনি। কেমন যেনো বড্ড ভালো লাগে।
টিভিতে দেখা হিরোদের মতো জিম করা বডি, এততো লম্বা। দাদীর কথায় লম্বা খাম্বার মতো কিন্তু আমি তো এইটুক আমার সাথে কি ওনাকে মানায় ভেবেই মনটা খারাপ করে ফললো মুসকান।
আবারো চোখ তুলে তাকালো অপলক ভাবে চেয়ে দেখতে লাগলো।
গাল ভর্তি ঘন কালো দাঁড়ি, গোলাপি ঠোঁট জোরা নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলতে বলতে নিচে নেমে এলো।
ডায়নিং টেবিলের সামনে এসে চেয়ার টেনে বসে পড়লো। ফোন কেটে পকেটে ঢুকিয়ে রান্না ঘরের দিকে একবার চেয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।
বুঝলো আজ একটু দেরী হয়ে গেছে। বুয়াও আসেনি একা একা করছে তাই লেট হচ্ছে বোধহয়।
মুসকান সব খাবাড় গুছিয়ে সামনে দিলো। ইমন খেতে শুরু করলো।
মুসকান চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছুক্ষন পর নিচু গলায় বললো সায়রী আপা আসবে আজ,,,

ইমন খেতে খেতে জবাব দিলো হুম। রিক্তাও আসবে।

ওও।

দাদী কালকে আসবে।

মুসকানের মুখে হাসি ফুটে এলো উত্তেজিত হয়ে বললো সত্যি।

ইমন চোখ তুলতেই মুসকান মুখটা স্বাভাবিক করে নিয়ে বললো না মানে খুব ভালো হবে তাহলে।

শুধু দাদী নয় ইয়ানা,অভ্র, বাবা ও আসবে।
অভ্র ইয়ানার বড় ভাই আর আমার ছোট কাকার ছেলে।

ওও তাহলেতো সবার জন্য অনেক রান্না করতে হবে।
বাজারও করতে হবে অনেক।

ইমন হালকা কেশে পানি খেয়ে নিয়ে ওঠতে ওঠতে বললো সে নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না।
সায়রী আসার আগে যেই আসুক না কেনো দরজা খুলবে না। রুমে বসে পড়াশোনা করবে।
মুসকান ঘাড় কাত করে সম্মতি দিলো।
ইমন উপরে ওঠে গেলো।
মুসকান সব গুছিয়ে নিজের জন্য বাড়া খাবার টা ঢেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে উপরে চলে গেলো।
ইমন বেরিয়ে গেলেই সে খেতে বসবে।
,
দরজার সামনে আসতেই ইমন মুসকানের দিকে তাকালো। মৃদু হেসে বেরিয়ে গেলো।

বড্ড ভালো লাগে তাঁর এই জিনিস টা সে যখন বেরিয়ে যায় মুসকান তখন এভাবেই তাঁর সাথে পায়ে পা মিলিয়ে দরজা অবদি আসে। দুটো বছর একি নিয়মে একি অভ্যেসে চলছে।
এই নিয়ম, এই অভ্যেস গুলোতে দুজনেই যেনো দুজনাতে মিশে গেছে। অবাক লাগে ভীষণ এ বয়সি মেয়েরাও এতো দায়িত্ববান হতে পারে তা মুসকান কে না দেখলে ইমন বুঝতে পারতো না।

মানুষ বলে বড়রা যা বুঝে ছোটরা তা বুঝে না।
বড়রা সব সময় ছোটদের দায়িত্ব নেয়।
কিন্তু মানুষ এটা জানেইনা কিছু কিছু মানুষ আজো পৃথিবীতে আছে যারা বয়সে ছোট হলেও অসীম ক্ষমতা তাদের মাঝে আল্লাহ তায়ালা দিয়ে দিয়েছে।
মুসকান তেমনি একটা মানুষ তেমনি এক নারী।
যে কিনা নিজের অজান্তেই ইমনের দায়িত্ব টা নিয়ে নিয়েছে।
নিজের কাজের জন্য, নিজের একটা থাকার জায়গার জন্য এখানে থাকতে রাজি হলেও প্রত্যাহিক জীবনে ইমনের যাবতীয় কাজ দায়িত্ব সহকারে করতে করতে কখন যে এগুলোতেই নিজের মন,আবেগ সবটা জরিয়ে ফেলেছে মেয়ে টা বুঝতেই পারেনি।
কিশোরী বয়সের প্রথম প্রেমের ফুল তাঁর মনে ফুটেছে কিন্তু আর পাঁচটা সাধারন মেয়ের মতো করে নয়। কারন সে যে সত্যি অনন্য, সাধারণের মাঝেও অসাধারণ তাঁর ব্যাক্তিত্ব। যার মাঝে হাজারো বার মোহিত হতে থাকে ইমন।
,
দাদী আর অভ্র আগেই চলে এলো। ইয়ানার কলেজে অনুষ্ঠান থাকায় সে বিকেলে আসবে।
সায়রী দরজা খুলতেই দাদীকে সালাম দিয়ে ভিতরে ঢুকতে বললো। সুপ্তি দৌড়ে এলো অভ্র মামা অভ্র মামা বলতে বলতে।
অভ্রও এক গাল হেসে হেই প্রিন্সেস বলেই সুপ্তিকে কোলে তুলে নিলো।
সায়রী দাদীকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিলো।
আর বললো কিরে অভ্র আংকেলের সাথে এতোদিন লন্ডনে কেমন কাটালি।
অভ্র বললো বিন্দাস,,, এতো সুন্দরী, সুন্দরী মেয়ে কি আর বলবো, আমার পিছুই ছাড়ে না ওরা।
সায়রী হাসতে হাসতে বললো শয়তানি এখনো ছাড়লিনা। আমার মেয়েটাকে তো পাকা বানিয়ে ফেলবি।
তোমার মেয়ে কাঁচা কবে ছিলো?
সায়রী আর অভ্র টুকটাক কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে। মুসকান কিছু হালকা খাবাড় এনে ট্রি টেবিলে রাখলো।
দাদীর কাছে গিয়ে দাদীকে জরিয়ে ধরলো।
দাদীও মুসকান কে পরম স্নেহে বুকে টেনে নিলো।
কপালে কয়েকটা চুমু খেলো।
অভ্র সায়রীকে ইশারা করে ফিসফিস করে বললো বাংলা সিনেমার মতো এসব কি শুরু হলো।
সায়রী চোখ গরম করে চুপ করতে বললো।
সুপ্তি বললো মামু মুসু আন্টি,,,
অভ্র বললো আন্টি এই বেবি গার্ল কে কেউ আন্টি বলে??
সুপ্তি অভ্রর নাক চেপে বললো আমার থেকে তো বেবী না।
সায়রী বললো মুসকান এ হলো অভ্র ইমনের ছোট ভাই।
মুসকান ওঠে সালাম দিলো।
অভ্র হকচকিয়ে গেলো। মুসকানের নমনীয়তা দেখে।
ভালো লাগার পাশাপাশি অবাক টা একটু বেশীই লেগেছে তাঁর কাছে।
সুপ্তি হাত নাড়াতেই অভ্র চোখ সরিয়ে নিলো। হালকা কেশে বললো ওয়ালাইকুম আসসালাম।
মুসকান চলে গেলো।
সায়রী বললো কি রে কেমন??
অভ্র সুপ্তিকে নামিয়ে দিয়ে বললো অসম্ভব ভালো।
একদম আনকমন যাকে বলে।
হুম ভাবী হিসেবে চলবে,,,
অভ্র আরো হকচকিয়ে গেলো।
এইটুকু মেয়ে ভাবী। এতো কমপক্ষে নয়,দশ বছরের ছোট হবে।
দাদী খেঁকিয়ে ওঠলো। এই হতচ্ছাড়া তাতে কি হয়েছে তোর দাদা সতেরো বছরের বড় ছিলো আমার জানিসনা।
অভ্র যেনো বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে। হালকা কেশে বললো কিসব হচ্ছে সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। এতোবছর পর দাদাভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে। শুনে বেশ ভালো লাগছিলো কিন্তু এসব দেখে কেমন একটা যেনো লাগছে।
সায়রী অভ্রর সামনে এসে বললো চুপ। এসব কি কথা মুসকান শুনতে পারবে তো। ইমন শুনলেও প্রবলেম হবে।
অভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো কেনো মুসকান দাদাভাইয়ের বয়সের ব্যাপারে জানেনা।
আরে ছাগল সব জানে।
তুমি আমায় ছাগল বললে আপু।
আরে হাদারাম ধ্যাত তোকে কিচ্ছু বোঝাতে পারবো না আমি বলেই চলে গেলো।

দাদীকে তাঁর রুমে পৌঁছে দিলো সায়রী। বুয়া অভ্র যে রুমে থাকবে সে রুম পরিষ্কার করছে।
অভ্র সুপ্তিকে চকলেট বক্সগুলো দিয়ে কয়েকটা কিটকাট চকলেট নিয়ে নিচে চলে গেলো।
এদিক সেদিক তাকালো,রান্নাঘরে দেখতে পেয়ে এগিয়ে গিয়ে পিছনে দাঁড়ালো।
বাহ! তুমি রান্নাও পারো।
মুসকান চমকে ওঠলো। অভ্র কে দেখে ইতস্ততভাবে বললো হ্যাঁ পারি।
অভ্রর বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো। আর বললো আমার দুটো বোন একজনও রান্নার র ও জানে না।
মুসকান মৃদু হেসে রান্নায় মনোযোগ দিলো।
অভ্র নিজে থেকেই বেশ গল্পস্বল্প করতে লাগলো।
হঠাৎ ই বলে ওঠলো বাহ তোমার চুলগুলোতো নাইস। বেশ লম্বা। পিচ্চি দের এতো লম্বা চুল বেশ লাগে কিন্তু,,,
মুসকান জোর পূর্বক হাসলো।
অভ্র বললো ওয়াও তোমায় হাসলে তো খুব কিউট লাগে। এই ওয়েট এদিকে তাকাও তো।
মুসকান চমকে গেলো অভ্রের দিকে অবাক চোখে তাকালো।
অভ্র হা হয়ে গেলো ওয়াও গ্রেট। ইউ লুক সো সুইট।
এতো সুন্দর চোখ লাইফে প্রথম দেখছি,,,এই তুমি চোখে কি ইউস করো।

মুসকান ভ্রু কুঁচকালো।
অভ্র বললো হেই রেগে গেলে নাকি,,,
মূহুর্তেই মুখটা স্বাভাবিক করে নিয়ে বললো কিছু না।
অভ্র বললো ওয়াও রেইলি ন্যাচারাল,,,
মুসকান কিছু বললো না।
চোখে আবার কে কি ইউস করে। ইনি কি পাগল নাকি,,,নাকি অন্য কোন মতলব আছে। কেমন যেনো ভয়ে শিউরে গেলো। ইভানের বিহেইভ ভাবতেই মুসকান গ্যাসটা নিভিয়ে চলে যেতে নিতেই অভ্র সামনে দাঁড়ালো।
মুসকান ভয়ে ভয়ে তাকাতেই অভ্র বললো কিউটনেসে ভরা মুখটা এমন ন্যাচারাল সৌন্দর্য ভরা মুখ কবে দেখেছি মনে পড়ছে না।
মুসকান বিরক্ত হলো ভীষণ তবে তা প্রকাশ করলো না।
অভ্র বললো ইউ নো বেবী গার্ল,,, আমার মতো এতো স্মার্ট, হ্যান্ডসাম ছেলের থেকে প্রশংসা পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার। আই নো তুমিও মনে মনে ভীষণ খুশি হচ্ছো কিন্তু একটু ভাব নিতে গিয়ে সেটা বুঝতে দিচ্ছো না। আরে ইয়ার বুঝি তো তিনটা গার্লফ্রেন্ড আমার তিনটাকে বুঝতে গিয়ে মেয়েদের বিষয়ে বেশ ধারনা হয়ে গেছে। বলেই একটু ঝুঁকে বললো তবে আমার তিনটার থেকেও তুমি ভীষন কিউট,এক কথায় আনকমন লেডী, একদম ন্যাচারাললল,,,
মুসকান এক ঢোক চিপে ভয়ে ভয়ে পাশ কাটাতে যেতেই অভ্র মুসকানের হাতটা চেপে ধরলো।
ভয়ে মুসকানের আত্মাটা কেঁপে ওঠলো।
কেঁদে দেবে এমন ভাব।
অভ্র মুচকি হেসে বললো সত্যিই বেবী বলেই চকলেট গুলো হাতে ভরে দিয়ে চলে গেলো।
,
অভ্রর ফোনে ফোন আসতেই অভ্র মৃদু হেসে ফোন রিসিভ করলো। হেই দাদাভাই কোথায় তুমি,কখন আসছো?
ওপাশ থেকে কি বললো বোঝা গেলো না।
অভ্র বললো এই আর কি মুসকানের সাথে মজা করছিলাম। মেয়েটা সত্যি ভীষন কিউট আর একদমই ছোট ভাবা যায় এর দেবর হবো আমি।
এবারেও বোঝা গেলো না ওপাশে কি বললো।
অভ্র হোহো করে হেসে বললো কখন আসছো,,,
তারাতারি চলে এসো রাতে ড্রিংকস পার্টি হবে,,,
………….
এই ব্রো রেগে যাও কেনো এমনি বলছিলাম ওসব আমি খাইনা।
,
ইয়ানা এসেছে।ইয়ানা, সুপ্তি, মুসকান বসে লুডু খেলছে সায়রী আর দাদী গল্প করছে।
হুট করে ঝড়ের বেগে অভ্র এসে মুসকানের পাশে বসলো।
মুসকান চমকে গেলো ইতস্ততভাবে সরে বসলো একটু।

তোদের সাথে আমিও জয়েন করি।
ইয়ানা বললো না ভাইয়া তুই চিটিং করিস। তোকে নেবো না।
সুপ্তি বললো না না মামা খেলবে, মামা খেলবে।
মুসকান আরেকটু সরে বললো তোমরা খেলো আমি আসছি বলেই ওঠতে নিতেই অভ্র হাতটা চেপে বসিয়ে দিলো।
হেই ওঠছো কেনো বসো না,,,
মুসকান এবার বুঝি কেঁদেই দিবে। বার বার এভাবে হাত চেপে ধরা জোর করে আজব সব কথা কেমন যেনো লাগছে তাঁর। খুব কষ্টে নিজেকে সামলে চুপ করে বসে রইলো। সবাই খেলাতে মনোযোগি।
,
ইমন বুয়ার কাছে শুনলো সবাই সায়রীর রুমে আছে।
ইমন ফেরার সময় সবসময় মুসকান কে নিচেই পায়।
আজ পেলো না। ভাবলো বোধহয় ওদের সাথে আছে।
সায়রীর রুমে ঢুকতেই চোখ পড়লো অভ্রর হাতে মুসকানের হাত আবদ্ধ জায়গাটায়। মুসকান স্বাভাবিক রয়েছে তবে মুখ দেখে অস্বস্তি স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
ইমন হালকা কেশে ওঠতেই মুসকান হাতটা ঝটকায় ছেড়ে ওঠে বেরিয়ে গেলো। অভ্র হোহো করে হেসে ফেললো। দাদাভাই মেয়েটা ভীষন অদ্ভুত আমি খেলতে বসেছি বলে বার বার ওঠে যাচ্ছিলো তাই জোর করে বসিয়ে রেখেছিলাম।
দাদী বললো তুই ওকে এতো জ্বালাচ্ছিস কেনো?
দাদুভাই পোশাক পাল্টে খেয়ে নাও আমরা সবাই খেয়েছি শুধু মুসকান বাদে।
ইমন হালকা কেশে গম্ভীর গলায় বললো সায়রী রিক্তা কোথায়,,,
ওতো কাল আসবে আজ কি নিয়ে যেনো বিজি। সকাল সকাল এসে পড়বে কাল। আর বাকিরাও আসবে।
ইমন কিছু বললো না। রুম ছেড়ে বেরিয়ে নিচে একবার তাকিয়ে নিজের রুমে পা বাড়ালো।
ইমন পোশাক পাল্টে কালো টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে বাথরুম থেকে বেরুতেই দেখলো মুসকান পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ইমন গিয়ে পানিটা খেয়ে গ্লাসটা হাতে দিতে দিতে বললো গায়ের জোর,মুখের জোর
এতো উইক থাকলে চলবে না। সব মানুষ সমান নয়। ভালো,মন্দ মিশিয়েই মানুষ। ইভান আর অভ্র এক নয়। মনের দিক থেকে অভ্র ভীষন ভালো। মেয়েদের যথেষ্ট রিসপেক্ট করে। খুব ইজি ভাবেই মিশে সবার সাথে। তোমার সাথে ঠিক সেভাবেই মিশছে।
কিন্তু তোমার নিজের দূরত্ব টা বজায় রেখে চলা উচিত। একঘন্টা যাবৎ কারো হাতে তোমার হাত আবদ্ধ থাকবে খারাপ লাগা সত্বেও, অস্বস্তি হওয়া সত্বেও বাধ্য হয়ে সহ্য করতে হবে কেনো,,,
কথাটা এতো জোরে বললো যে ভয়ে মুসকান কেঁপে ওঠলো হাত ফঁসকে গ্লাসটা নিচে পড়ে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।

চলবে………

হৃদপিন্ড
জান্নাতুল নাঈমা
পর্ব-১৩

প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকালো ইমনের দিকে।
ইমন কাঁচের টুকরো গুলোর দিকে একবার চেয়ে মুসকান কে এক হাতে সরিয়ে নিজেও ওর সামনে চলে গেলো। দুকাধে শক্ত করে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বললো এতো ভয় কিসের?
মুসকান চোখ তুলে উপরে তাকালো। ইমন তাঁর থেকে উচ্চতায় এতোই লম্বা যে ঘাড় উঁচু করে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে রইলো। ভয়ে কেমন যেনো কুঁকড়িয়ে গেলো মেয়েটা।
এই মূহুর্তে ইমনকে তাঁর ভীষন ভয়ংকর একজন মানুষ লাগছে। যেনো তাকে এখুনি গিলে খাবে এমন ভয় করছে। এক ঢোক গিলে মিনমিনে স্বরে বললো আমার ভীষন ভয় করে সবাইকে। এই যে এখন আপনাকেও খুব ভয় লাগছে।
মুসকানের সরল মনে বলা কথাটায় কি যেনো ছিলো। রাগটা নিমিষেই কমে গেলো আরেকটু নিজের সাথে চেপে নিয়ে গম্ভীর গলায় বললো ভয় পাওয়া ভালো। কিন্তু সবাইকে ভয় পাওয়া একদমই বাজে স্বভাব।ঠিক যেমন সবাইকে ভালোবাসা যায় না, সবাইকে আপন করে নেওয়া যায় না তেমনই সবাইকে ভয় পাওয়াও উচিত নয়। তাহলে কিছু মানুষ সেই ভয়েরই সুযোগ নিবে।
ইমনের গরম শ্বাস গুলো মুসকানের মুখে পড়ছে অবিরত মুসকানের শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সেই শ্বাস পৌঁছে যাচ্ছে অদ্ভুত অনুভূতিরা তাঁর মন, প্রান জুরে খেলা করে যাচ্ছে।

খুব কষ্টে এক ঢোক গিলে নিয়ে বললো তাহলে আপনাকে ভয় পাই আপনিও কি সেই সুযোগ নিচ্ছেন,,,
প্রশ্ন টা যেনো কেমন ছিলো। মেয়েটা এমন কেনো প্রত্যেকটা কথায় প্রত্যেকটা কাজে আমার সব ওলোট পালোট হয়ে যায়।
একটু ঝুঁকে মুসকানের কপালে কপাল ঠেকালো।মুখের সম্পূর্ণ শ্বাস মুসকানের মুখে পড়তেই মুসকান অদ্ভুত ভাবে শিউরে ওঠে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো।
কপালে কপাল, নাকে নাক ঠেকিয়ে ভারী আওয়াজে বললো ইয়েস সুযোগ আমি নিচ্ছি যেই সুযোগ টা পৃথিবীর আর কেউ নেওয়ার সাহস দেখাতে পারবে না।
আর তুমি পৃথিবীর আর কাউকে এই সাহস দেওয়ার সাহসটুকুও পাবে না ।

তোমায় স্ট্রং হতে হবে মুসকান,,,
তুমি আমার রাজ্যের একমাএ রানী,,,
এতো উইক হলে চলবে না তোমার।
দুনিয়াটা এতো সহজ নয়। এভাবে থাকলে দুনিয়াতে টিকে থাকা তোমার জন্য কষ্টকর হয়ে ওঠবে।
মুসকান চোখ বন্ধ রেখেই বললো আমি এভাবেই বেশ আছি, আপনি যতোদিন আমার পাশে আছেন আমি যতোদিন আপনার সান্যিধ্যে আছি আমার কিছু হবেনা আমি জানি আপনি হতে দিবেন না।
আমি এভাবেই বেশ আছি, আমি আমার স্বভাবের বিরুদ্ধে যেতে পারবো না।
ইমন আরেকটু কঠিন হয়ে বললো তাহলে এটা মাথায় রেখো এই হাত অন্য কোন পুরুষ ছুঁতে পারবে না। এই দেহ অন্য কোন পুরুষ স্পর্শ করতে পারবে না। নিজেকে আমার নামে লিখে দিয়েছো বলা যতটা সহজ নিজেকে আমার জন্য প্রটেক্ট করা ততোটাই কঠিন। পারবে তুমি নিজেকে প্রটেক্ট করতে,,,
মুসকান চোখ দুটো মেললো চোখে পানি স্পষ্ট।
ইমনের চোখে যেনো জ্বল জ্বল করে আগুন জলছে, চোখে তীব্র চন্চ্ঞলতা স্পষ্ট।
মুসকান হালকা মাথা নাড়িয়ে বললো পারবো।

ইমন আরো কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই ফোন বেজে ওঠলো। মুসকান কে ছেড়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফোন রিসিভ করে বেলকুনিতে চলে গেলো।
মুসকান চুপ করে দাঁড়িয়ে সবটা ভাবতে লাগলো।
তাঁর সাথে ঘটে যাওয়া প্রথম থেকে শেষ অবদি ঘটনা গুলো মাথায় নাড়া দিলো খুব করে।
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো আমার সবটা শুধুই ওনার জন্য। যার জন্য আমি আজ এতোটা স্বস্তিপূর্ন জীবন কাটাচ্ছি। যার জন্য আমার জীবনের আলাদা একটা অধ্যায় তৈরী হতে যাচ্ছে । মায়ের পর যেই মানুষ টা সত্যি আমায় নিয়ে ভেবেছে, মায়ের পর যেই মানুষ টাকে নিয়ে আমার হৃদয় ব্যাথিত হয়েছে তাঁর জন্য আমায় এইটুকু করতেই হবে।
আমার সবটা তাঁর নামেই লিখা, হ্যাঁ সবটা।
আমি শুধুই তাঁর,,,
,
রিক্তা সায়রী মিলে মুসকান কে সাজাচ্ছে। যদিও ইমন বলে দিয়েছে এতোসবের প্রয়োজন নেই।
কিন্তু রিক্তা সেটা শুনে নি সে তাঁর মনের মতো করে সাজাচ্ছে মুসকান কে। যেহেতু ইমন চাকচিক্যময় কিছু পছন্দ করে না সেহেতু মুসকানকে তাঁরা তেমন গরজিয়াছ সাজে সাজায়নি।
ইমন কড়া গলায় বলেছিলো যাতে না সাজানো হয়।
রিক্তা মনে মনে এক ঝুড়ি বকে নিলো ইমন কে। বাঙালি নারীর সৌন্দর্যের ভূষণ হচ্ছে শাড়ি। কালো হোক ফর্সা হোক সব নারীকেই শাড়িতে বেশ লাগে। সবসময় শাড়ি পরা সম্ভব হয়ে উঠে না অনেকের।
এই আমরা আজ শাড়ি পড়েছি কার বিয়ে উপলক্ষে ইমন আর মুসকানের তাইতো,,,
সায়রী বললো হুম অবশ্যই দেখছিস না আমার লিটল প্রিন্সেস টাও আজ শাড়ি পড়েছে বলেই সুপ্তির কপালে চুমু খেলো।

রিক্তা বললো তো,,,আমরা সবাই যদি সাজগোজ করি শাড়ি পড়ি যার বিয়ে সে সিম্পল ভাবে সালোয়ার পরে কেনো থাকবে যত্তসব রসকষহীন কথাবার্তা।
লোকে কি বলবে যার বিয়ে তাঁর খবড় নেই পাড়াপড়শির ঘুম নেই।
মুসকান চুপ করে আছে কখনো কখনো রিক্তার কথায় মুখ চিপে হেসে ফেলছে। রিক্তা বিষয়টা লক্ষ করে বললো একে শাড়ি না পড়ালে তো স্কুল পড়ুয়া মেয়ে মনে হতো বিয়ের কনে কে স্কুল স্টুডেন্ট মনে হলে কেমন দেখায়।
সুপ্তি বললো মনি, মনি মুসু আন্টি তো কলেজে ভর্তি হবে তাইনা মাম্মা,,,
সায়রী এক গাল হেসে বললো ইয়েস মাম্মা তোমার মুসু আন্টিও বড় হয়ে গেছে।
সুপ্তি খিলখিল করে হেসে ওঠলো। হাত তালি দিয়ে লাফাতে লাফাতে বললো কি মজা মামাইও বড় মুসু আন্টিও বড়।
সুপ্তির কথা শুনে মুসকান লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।
নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। রিক্তা বললো ও বাবা নাক ঘামলে তো মানুষ স্বামীর আদর বেশী পায়।
মুসকান দ্বিগুণ লজ্জায় পড়ে গেলো,,,

ইশ,,,এই আপুটা যেনো কেমন। কিসব বলছে।

মুসকান রুমে চুপচাপ বসে আছে মাঝে মাঝে আয়নায় নিজেকে দেখছে আর লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে যেনো নিজেই চিনতে পারছে না সে।
কেমন যেনো ভারী ভারী লাগছে নিজেকে। এই প্রথম সে শাড়ি পড়েছে। শাড়িতে সত্যি একটা মেয়ের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়। মুসকান এততো লজ্জা পাচ্ছে নিজেকে দেখে যে আয়নার সামনে থেকে সরে গিয়ে বিছানায় বসে মাথা নিচু করে রইলো।
কেমন একটা লাগছে তাঁর বুকের ভিতর কেমন অস্থিরতা শুরু হয়ে গেছে। ধুকপুক, ধুকপুক করছে বুকের ভিতরটা।
,
সায়রী এসব কি হচ্ছে আজকের দিনে তুই এভাবে কাঁদছিস প্লিজ ইয়ার এভাবে কাঁদিস না। সুপ্তি চলে আসবে, আর সুপ্তি ইমনকে বললে ভয়ংকর রিয়েক্ট হবে প্লিজ এভাবে কাঁদিস না দোস্ত।

প্লিজ কিছু সময় আমাকে একা থাকতে দে। তুই তো সবটা জানিস রিক্তা তুই আপাতত আমাকে বোঝ প্লিজ। তুই নিচে যা আমি আসছি।
রিক্তা রেগে বললো কি করবি, আমি চলে গেলে কাঁদবি কার জন্য কাঁদবি, কেনো কাঁদবি আত্মসম্মান নেই তোর মধ্যে, একজন টিচার হয়ে এতোটা আত্মসম্মান হীন কিভাবে হতে পারিস। অসহ্য বলেই বেরিয়ে গেলো। কথাগুলো শুধুমাএ রেগেই বললো রিক্তা যাতে সায়রীর মাঝে জেদ চলে আসে। নিজেকে স্ট্রং রাখতে পারে কোন ভাবে দূর্বল হয়ে না পরে।
,
সমাজে মুখ দেখাবো কি করে আমরা।
আর তুমি তুমিও শেষে ঐ মেয়ে কে মেনে নিচ্ছো।
আমার রিতিশা কোন দিক দিয়ে খারাপ ছিলো,,,
রিতিশার ধারে কাছে ঐ মেয়ে আসতে পারবে।
তোমার ছেলের রুচি এতো নিচ ভাবতে পারছিনা আমি।
কঁচি মেয়ে এতোই ভালো লাগে,,, এই জন্যেই আমার রিতিশাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে সব বোঝা হয়েছে আমার।
এক,দুবছর পর উঠতি যৌবন আসবে ঐ মেয়ের যৌবনে ভরপুর মেয়ের সংস্পর্শ পাওয়ার জন্যই তো তোমার ছেলে ছলে বলে কৌশলে মেয়েটাকে নিজের কাছে রেখেছে ভালো মানুষের মুখোশ পরে।
রিতিশার থেকে নিজের সব চাহিদা মিটিয়ে মেয়েটাকে দূর দূর করে বের করে দিয়েছে।
মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কতো না ঢং কখনো বিয়ে করবো না এই সেই। তোমরা শুধু শুধু এতোবছর আমাকে আর রিতিশাকে দোষারোপ করেছো। এবার বুঝতে পারছো তো তোমার ছেলের আসল রূপ।
রিতিশাই ঠিক ছিলো আজি আমি ওকে ফোন করবো।

এতোক্ষন যাবৎ কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করে এবার থামলো।
একরামুল চৌধুরী বললেন শেষ,,,
সাজিয়া বেগম যেনো ফুঁসে ওঠলেন।
কোন লাভ নেই, কোন লাভ নেই বাপ ছেলে একি গোয়ালের গরু। সব জানা আছে আমার। বাপ কেনো মা টাও তো ছিলো চরিএহীন।
এবার যেনো ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলো।
একরামুল চৌধুরী বললেন বেরুনোর সময় এই ফালতু বকবক করে কান খাচ্ছো কেনো। আমার ছেলের বিয়ে যার সাথে খুশি তাঁর সাথে হোক তাঁতে তোমার সমস্যা কি।
তাঁর মানে ঐ মেয়েকে তুমি মেনে নিলে।
না মেনে নেওয়ার একটা কারন বলো?
মেয়েটা আমাদের সাথে কোন দিক দিয়ে যায়। চালচুলোহীন মেয়ে তোমার ছেলের বিয়ে কতো বড় বড় ফ্যামিলির মেয়েদের সাথে দিতে পারতে ধারনা আছে তোমার।
একরামুল চৌধুরী দরজার কাছে যেতে যেতে বললেন আমার ছেলে কখনো বিয়ে করবে সেই ধারনাই আমার ছিলো না। যেহেতু করছে এটাই মেনে নেওয়া সকলের জন্য মঙ্গলকর। না মেনে নিলে তাঁর কোন জায় আসবে না বরং ক্ষতি আমার হবে। আমি আমার প্রথম সন্তান থেকে আর দূরে থাকতে পারবো না।
ইমন আমার প্রথম সন্তান, প্রথম বাবা ডাক আমি ওর থেকে শুনেছি সেই ভালোবাসা, সেই অনুভূতি অন্যকারো সাথে ভাগ হবার নয়।

সাজিয়া বেগম বিছানায় বসে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। এই ভালোবাসা ইভান কেনো পায় না এই তাঁর দুঃখ।
,
দিহান ফোন করেছে ইমনের বেষ্ট ফ্রেন্ড যে এখন দেশের বাইরে আছে। দিহান বললো রিতিশার ব্যাপারে মুসকান কে জানিয়েছিস,,,
ইমনের মুখটা কেমন যেনো হয়ে গেলো। চোখ দুটো লালচে বর্ন ধারন করেছে।
দিহান বললো দেখ অতীত যতোই তিক্তময় হোক আমার মনে হয় মুসকান কে জানানো উচিত।
যা শুনলাম মেয়েটার বয়স কম ম্যাচিওর নয়। সব পরে জানতে পারলে সমস্যা হতে পারে। আর তোর পরিবারের কিছু মানুষ যেনো এ বিষয় নিয়ে কখনো সুযোগ না নিতে পারে সেই জন্যে এটা তোর ওকে জানানো উচিত।
ফোন রাখছি,,,
তুই রেগে গেলি নাকি, দেখ রেগে যাওয়াটা স্বাভাবিক আবার অস্বাভাবিকও আমার থেকে তুই ভালো বুঝিস সবটা তবুও আমার যেটা ঠিক মনে হলো সেটাই বললাম।
ইমন বললো রাখছি।
দিহান বললো ওয়েট,কিছুক্ষন নীরবতায় থেকে বললো সে কেমন আছে??
ইমন জানতো শেষে এই একটা প্রশ্ন থাকবেই তাই বললো কি মনে হয়, সে কেমন থাকতে পারে।
দিহান এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন টা রেখে দিলো।
,

সবাই নিচে রয়েছে ইমনের কাছের বন্ধু -বান্ধব রা এসেছে। কয়েকজন মুসকান কে দেখার জন্য পাগল হয়ে গেছে প্রায় তাদের বিগ বস এর বউ বলে কথা,,,
সায়রী বললো ওয়েট কর আমি নিয়ে আসছি আংকেল ও এসে গেছে এবার নিয়ে আসা উচিত।

অভ্র সুপ্তিকে নিয়ে মুসকানের রুমে বসে ওটা সেটা বলছে ক্ষনে ক্ষনে মুসকানের প্রশংসা করে করে মুসকানের কান টা ঝালা পালা করে ছাড়ছে।
মুসকান বিরক্ত হলেও কিছু করার নেই তাঁর এই বাচাল ছেলেটার বকবকানি শুনতেই হচ্ছে। কারন তাঁর বাইরে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। সায়রী ছাড়া সে বাইরে যেতে পারবে না।

ঝড়ের বেগে মুসকানের রুমে ঢুকলো ইমন।
অভ্র কে দেখে বিরক্ত হলো ভীষন।
অভ্র বললো হেই ব্রাদার অস্থির লাগছে,,,
ইমন অভ্রর দিকে চাইতেই অভ্র জ্বিবে কামড় দিয়ে বললো ইয়ে মানে বেশ লাগছে। তোমাদের দুজনকেই অসাধারণ লাগছে নাইস কাপল।
সুপ্তি বললো ওয়াও মামাই মুসু আন্টি আর তোমার তো সেইম সেইম,,,সুপ্তির কথা শুনে ইমনের চোখ মুসকানের দিকে পড়লো।
ইমন খানিকটা হকচকিয়ে গেলো,,,
বুকের ভীতর বয়ে চলা প্রবল রাগ টা যেনো এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো। এই মূহুর্তে তাঁর বুকটা ফ্রিজের মতো ঠান্ডা হয়ে গেলো।

ব্লাক কাতান শাড়ী গোল্ডেন পাড় ব্ল্যাক ব্লাউজ। বিয়ের কনেকে এইরকম কালার শাড়ি তে এই প্রথম দেখলো সে।
পনেরো,ষোল বয়সী কিশোরী রা শাড়ি পড়লে বোধহয় তাদের আশ্চর্যজনক সৌন্দর্য ঘিরে থাকে।
মুগ্ধময়ী যেনো এবার মুগ্ধতার শেষ সীমানায় পৌঁছে দিয়েছে তাঁকে।
,
মুসকান লজ্জায় মরে যাচ্ছে অস্বস্তি হচ্ছে ভীষণ।
বার বার শাড়ির আঁচল টানছে তো কপালের টিকলি ঠিক করছে, কখনো গলায় পড়া সীতা হাড় টা,ঠিক করছে। চোখে মুখে অন্যরকম সৌন্দর্য ভর করেছে তাঁর প্রকৃতির সকল সৌন্দর্যই যেনো উপরওয়ালা ঢেলে দিয়েছে আজ।

ইমন সেদিকে দৃষ্টি স্থির রেখেই বললো অভ্র সুপ্তিকে নিয়ে নিচে যা। আমার কিছু কাজ আছে।
অভ্র মুচকি হেসে সুপ্তি কে চলে গেলো।
ইমন দ্রুত গিয়ে দরজার সিটকেরী লাগিয়ে পিছন ঘুরলো।
মুসকান এর এবার এতো অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো যে শাড়ির আঁচলটা শক্ত করে চেপে ধরে পা ডাবিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
ইমন ধীরে ধীরে এগুতে লাগলো মুসকান আমতা আমতা করে বললো আপনার কিছু লাগবে,,,
ইমন তাঁর অনেকটা কাছে এসে মুসকানের চোখে গভীর দৃষ্টি রেখে বললো তুমি যদি জানতে পারো আমার জীবনে অন্য কোন নারীর আগমন ঘটেছিলো। আমার জীবনে কালো একটা অধ্যায় ছিলো তুমি কি মানতে পারবে।

তোমার আগে এই হাত অন্য কেউ স্পর্শ করেছে,তোমার আগে এই বুকে অন্য কেউ মাথা রেখেছে সবটা জানার পর তুমি কি তোমার কথা ফিরিয়ে নেবে?
নিজেকে আমার নামে লিখে দেওয়া খাতাটা ছিরে টুকরো টুকরো করে ফেলবে?

মুষ্টি বদ্ধ হাতটা আলগা হয়ে গেলো আঁচলটাও পিছন দিকে ছেড়ে রইলো। মেঝেতে ডাবানো পা দুটো হালকা হয়ে এলো। চোখে মুখে অদ্ভুত বিস্ময় নিয়ে চেয়ে রইলো। বুকের ভিতরটা ভারী হয়ে এলো ভীষন। ধকপুকানি অনুভূতি হঠাৎ ই থেমে গেলো কেমন। নিশ্বাস চলছে কিনা বোঝা দুষ্কর।
কানের মাঝে কেমন শশ শব্দ করতে থাকলো।
সে কি ভুল শুনলো,,,
সামনের মানুষ টা তাঁর পরিচিত সেই মানুষ টাই তো।
পোশাকের ধরনের সাথে মনুষের ধরনও কি পালটে যায়???
চোখ বেয়ে জল গাল গড়িয়ে গলা অবদি পৌঁছে গেলো। শরীর কাঁপছে তাঁর,,,
ইমনের চোখে কোন রাগ নেই,গম্ভীরতা নেই। আর না আছে কোন সুখের রেশ। চেনা মানুষ টাকে আজ এতো অচেনা কেনো মনে হচ্ছে,,,
তার এই ছোট্ট জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিন আজ। আর এই দিনে সব থেকে কাছের গুরুত্বপূর্ণ মানুষ টার থেকে এমন একটা কথা শোনার জন্য সে প্রস্তুত ছিলো না। আর না ছিলো তাঁর কল্পনাতে।

ইমন মৃদু স্বরে ডাকলো মুসকান,,,
মুসকান চমকে ওঠলো। অশ্রুমিশ্রিত চোখে ইমনের দিকে তাকালো।
সেই চোখের দিকে ইমন চোখ রাখতে পারলো না।
পিছন ঘুরে দু হাত মুঠ করে কঠিন স্বরে বললো,,,

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here