হিংস্র ভ্যাম্পায়ার_২,পর্ব-2
লেখিকাঃফারু ইসলাম
___” প্লেন থেকে নেমে আমেরিকা এয়ারপোর্টে চারিদিকে তাকালো নূর
,না কেউকে দেখা যাচ্ছে না তাহলে কি কেউ তাকে নিতে আসে নি?”
__” তিন ঘন্টা এয়ারপোর্টে বসে থাকার পর একজন ড্রাইভার আসলো নূর কে নিতে, আপনি কি নূর ম্যাম? ড্রাইভার বলে উঠলো।”
___” নূর হ্যা বোধক মাথা দুলালো। আমি ড্রাইভার আপনাকে নিতে এসেছি নূর মিষ্টি করে হেঁসে বললো ‘ আংকেল ফুফু আসে নি?”
___ড্রাইভার শান্ত গলায় বললো ‘ না উনারা তো আসে নি আর মা আমাকে ড্রাইভার বলে ডাকো।”
___” কেনো আংকেল বললো কি হয়েছে আচ্ছা আমি তোমাকে ড্রাইভার আংকেল বলে ডাকবো হাসিমুখে বললো নূর।”
__” ড্রাইভার মাথা দুলিয়ে হাসার সাথে সাথে নূর বললো ‘ কিন্তু আমারও একটা আবদার আছে।”
__ড্রাইভার প্রশ্নচোখে নূর কে উদ্দেশ্য করে বললো ‘ হ্যাঁ বলেন ম্যাম?”
__নূর ঠোঁট সরু করে বললো ‘ তুমি আমাকে তুমি করে বলবে আর ম্যাম না আম্মু করে ডাকবে ঠিক আছে?”
__ড্রাইভার অসহায় গলায় বললো ‘ কিন্তু আমি কীভাবে?”
__নূর কপাট রাগ দেখিয়ে বললো ‘ নো! গু গাকরে লাভ নেই, আমি তোমার মেয়ে মত আমাকে আম্মু বলে ডাকবে।”
__ড্রাইভাব মুচকি হেঁসে বললো ‘ আচ্ছা আম্মু।”
__গাড়িতে উঠতে উঠতে নূর বললো ‘ ফুফুরা কেন আসে নি?”
___” ড্রাইভার জানালো মিসেস ফিউ তার পুরো পরিবার নিয়ে একটা পার্টিতে গিয়েছে।”
___” নূর চুপচাপ গাড়িতে বসে আছে অনেক রাত হয়ে গেছে মনে হচ্ছে,গাড়ি কাঁচ দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে নূর।”
___বৃষ্টির মত করে পানি পড়ছে শীত শীত করছে নুরের পাতলা একটি শাল নিয়ে এসেছে সেই কিন্তু এটা এই শীত কাবু করার জন্য যথেষ্ট না কিন্তু কাডিয়ান তো ব্যাগে রেখেছে সেই।”
__হঠাৎ মাঝ রাস্তা গাড়িটা থেমে গেলো। ড্রাইভার আংকেল কোনো কি সমস্যা হয়েছে? নূর এদিকওদিক তাকিয়ে বললো।”
__” মনে হচ্ছে হয়েছে তুমি এখানে বসো আম্মু আমি দেখছি, কিছুখন পর ড্রাইভার এসে বললো ‘ তেল শেষ সামনে একটা শপ আছে আমি সেখানে গিয়ে তেল আনছি তুমি বসে থাকো গাড়িতে।”
__”নূর হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো।”
___”রাস্তার এক পাশে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে নূরের আশে পাশ একদমই জনমানবহীন সাধারণত বাতি জ্বালানো নেই যা আছে সব দূরদূরান্ত।”
__”নূর গাড়ি কাঁচ দিয়ে দেখলো একটা লোক বিয়ার হাতে নোরি নোরি হলিউড গান করতে করতে করতে এগিয়ে আসছে।
হঠাৎ নূর দেখলো কালো কী অদ্ভুত একটা কাপড় পরা লোক হঠাৎ মদ্যপান লোকটার ঘাড় চেপে ধরেছে।”
__” নূর হুরমুর করে গাড়ি থেকে বের হয়ে দেখলো কালো কাপড় পরা লোকটি ঐ মদ্যপান লোকটির ঘাড়ে বিশাল বড় কামড় বসিয়ে দিয়েছে ততক্ষণে।”
___” লোকটি আহঃ করে চিৎকার দিয়ে হাত-পা লাফিয়ে কিছুক্ষণ পর নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।”
__” হেই ইউ! তুমি,এটা কি করছো! নূর আশ্চর্য হয়ে লোকটা দিকে ছুটে গিয়ে বললো।”
__” কালো কাপড় পরা লোকটি যখন নূরে দিকে চোখ তুলে তাকালো নূর যেনো সেখানে চিনা পাথরের পুতুল হয়ে গেলো।”
__” তার শরীর বলছে ভাগ এইখান থেকে কিন্তু সেই যেনো এই আবদার ইচ্ছে হওয়ার পরেও রাখতে পাচ্ছে না।”
___” লাল রক্তবর্ণ চোখ চোয়ালে দাঁত বিশাল বড় বড় চপচপ করে মুখ থেকে রক্ত পড়ছে কি ভয়ংকর রুপ।”
___” কালো কাপড় পরা লোকটি মদ্যপান লোকটিকে ছুঁড়ে পেলে দিয়ে নূরের দিকে এগিয়ে গেলো।”
___” নূর তার ঠোঁট নাড়াচ্ছে কিন্তু কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না তার মন বলছে নূর ছিুটে চলে যা এখানে থেকে কিন্তু বরাবরই তার পা তার সাথে দিচ্ছে না।”
___” লোকটি যখনি নূরের ঘাড় চেপে ধরবে কেউ একজন তুফানের বেগে লোকটিকে শূন্য ছুঁড়ে পেলে দিলো।”
__” নূরের এতোক্ষণে যেনো হুস আসলো সেই দৌড়ে গিয়ে মদ্যপান লোকটিকে সাহায্য করতে ব্যস্ত হলো।”
__” হেই, তুমি ঠিক আছো! চোখ খুলো তোমার! নূর লোকটির নাকে হাত দিয়ে দেখে মৃদু চিৎকার বললো ‘ ও মাই গড হি ইজ ডেইট!”
___” কেউ একজন ছুটে এসে নূরকে দেয়ালে সাথে সজোরে চেপে ধরলো নূর হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে লোকটির মুখের দিকে।”
__” লোকটির চেহেরা নূর স্পষ্ট দেখছে না কিন্তু তার চমৎকার চোখ দুটি স্পষ্ট সেই এক দৃষ্টিতে লোকটির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে মুখ টা তার কাছে স্পষ্ট লাগছে না কারন লোকটি কালো পোশাক মুখে কালো মাক্স আবার কালো হুডি পরা।”
___” লোকটি নূর কে উদ্দেশ্য করে দৃঢ় কন্ঠ বললো ‘ হ্যাঁ, হি ইজ ডেইট। এমন জনমানবহীন জায়গায় মানুষের সাহায্য করার ভুল দ্বিতীয় বার করো না। নাহলে তোমার মৃত বডি দেখিও কেউ একজন বলবে ও মাই গড সি ইজ ডেইট!”
___” নূর কিছু বলার আগে হুডি পরা লোকটি কোন দিকে যেনো বাতাসের বেগে ছুটে চলে গেলো।”
__” নূর বিশাল বড় হা করে ডানে বামে তাকানো শুরু করলো মানুষ টা কই হওয়া হয়ে গেলো আশ্চর্য! খারাপ লোক একটা বলে কি না আমার ডেইট বডি পাবে বিড়বিড় করতে করতে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো নূর।”
___” আম্মু তুমি কই গিয়েছিলে? ড্রাইভার বলে উঠলো চিন্তিত সুরে।”
__” নূর স্বাভাবিক গলায় বললো ‘ এই তো একটু বাইরে হাঁটছিলাম।”
___” ড্রাইভার চারিদিকে ভয়াতুর মুখে তাকিয়ে বললো ‘ এই জায়গা টা একটু নীরব বের হওয়া উচিত হয় নি তোমার আম্মু।”
___” নূর অপরাধ স্বীকার করার গলায় বললো ‘ আমি দুঃখিত ড্রাইভার আংকেল।”
___” নূর বাসায় গিয়ে দেখলো পিনপতন নীরবতা কেউ এখনোও আসেনি, কিন্তু কাজের ছেলেটিকে রেখে গিয়েছে।”
___” বিশাল বড় কাঠের এই দোতলায় বাড়ি মিসেস ফিউর, যে সম্পর্কে তার বড় ফুফু। নূরকে গেস্ট রুমে দরজা খুলে দেওয়া হলো সেই ভিতরে গিয়ে ব্যাগ পেলে চিৎপটাং হয়ে ঘুমিয়ে গেলো।”
___” সকালে উঠে নামাজ আদায় করে নিচে গিয়ে কফি নিজ হাতে বানিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে নূর তার রুমের সাথে রয়েছে চমৎকার বিশাল বড় একটি মনোমুগ্ধকর বারান্দা। আস্তে আস্তে সূর্য মামা এই কুয়াশা ভরা সকাল থেকে মাথা উঁকি দিয়ে বের হচ্ছে।”
___” নূর বেডে গিয়ে আবারও শুয়ে গেলো ফুফুরা উঠতে হয়তো এখনো অনেক দেরি আরো একটি লম্বা ঘুম দিলে খারাপ হবে না।”
___” দরজায় অগুনিত টকটক আওয়াজে নূরের ঘুম ছুটে গেলো। সেই হেলেদুলে উঠে দেখলো মিসেস ফিউ দাঁড়িয়ে আছে মুখে মিষ্টি হাসি।”
___ ” মিসেস পিউ অত্যন্ত দুঃখিত গলায় নূরের মুখে আদুরে স্পর্শ করে বললো ‘ সরি রে সোনা কালকে আমরা একদমই ভুলে গিয়েছিলাম তুই আসবি। অনেক অপেক্ষা করতে হয়েছিল তাইনা?”
___” নূর দারুণ করে হেঁসে বললো ‘ না না তেমন সমস্যা পড়তে হয়নি ফুফু দেখো আমি ঠিক আছি।”
___” নূরের হাত ধরে মিসেস ফিউ ওকে নিচে ডাইনিং হলে নিয়ে গেলো। বিশাল বড় ডাইনিং টেবিলে নূর একা বসে খাবার খাচ্ছে। মিসেস ফিউ তার কোন আমেরিকান বন্ধু সাথে ফোনে উচ্চ স্বরে খি খি করছে।”
___” হঠাৎ পায়ের গটগট হিলের বিশ্রী আওয়াজে নূর সিঁড়ি দিকে তাকালো। হেই নূর ডালিং কেমন আছো? সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে একটি মেয়ে বললো সম্পর্কে সেই নূরের ফুফাতো বোন হেনা।”
___”নূর চমৎকার একটা হাসি দিয়ে জানালো সেই ভালো আছে। হেনা একটা আপেল নিয়ে কটমট করে কামড় দিয়ে মিসেস ফিউ সাথে কথা বলতে লাগলো।”
__”নূর আঁড়চোখে লক্ষ্য করলো হেনাকে খুবই ক্ষুদ্র একটা পিংক কালারের ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরেছে সেই। নূর আবারও তার খাওয়া মনোযোগী হলো।কারও ড্রেসআপ নিয়ে কথা বলার বাজে অভ্যাস নূরের নেই যার লাইফ সেই তেমনি চালানোর স্বাধীনতা রয়েছে।”
___” ঠিক আছে মম আমি এখন ভার্সিটি যাচ্ছি হেনা বের হতে হতে বললো। তাকে উদ্দেশ্য করে মিসেস ফিউ বললো ‘ হেনা আজ একটু তাড়াতাড়ি বাসায় এসো বিকালে নূর কে একটু ঘুরাতে নিয়ে যেও।”
___” হেনা পিছনে ফিরে নূর কে উদ্দেশ্য করে বললো ‘ তুমি রেডি হয়ে থেকোও আমি তোমাকে ফোন দিবে আসার আগে।”
__” নূর হ্যাঁ বোধক মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলো।”
__”নূর তুই চাইলে তোকে আমরা হেনা ভার্সিটি ভর্তি করিয়ে দিতে পারি ওখানে নীল ও পড়বে মিসেস ফিউ বলে উঠলো।”
__” তোমরা যা ভালে বুঝো ফুফু নূর আস্তে করে বলে উঠলো। তার বাবা নেই মা থেকেও নেই তাই ফুফুরা যা বলবে সেই তাতে সম্মিত আছে।”
___”সারাদিন নূরে রুম সেট করতে করতে গেলো। বিকালের দিকে হেনার ফোন আসে সেই জানালো একটা বিশেষ কাজে সেই আটকি গেছে।আধঘন্টা পর তার এক ড্রেক নামক বন্ধু এসে নিয়ে আসবে নূর কে। গাড়ি হনের আওয়াজে নূর গুটিগুটি পায়ে দরজার দিকে গেলো।”
___” ইয়ায় হেনা আমি তোমার বোন কে পিক করতে এসে..ড্রেকের কথা বন্ধ হয়ে গেলো তার সামনে দাঁড়ানো আছে একটা চমৎকার এশিয়ান মেয়ে। তার চেহেরা দেখে তাকে শুধু এশিয়ান হিসেবে দাবি করা যায় না।
___” মেয়েটি খুবই সুন্দর একটা চকলেট কালার লং কূর্তি পরেছে, তার উপরে কুটি সিস্টেম বোতাম বাদে একটা কাডিয়ান পরেছে,আর একটি প্রিন্ট স্কার্ফ নিয়েছে সাথে। কালো চুল গুলো সুন্দর করে পান্স কিল্প দিয়ে আটকানো হাতে চমৎকার একটা চকলেট কালার ব্যাগ। খুবই সাধারণ সজ্জা মুখে কিন্তু কেনো যেনো তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।”
___” নূর দেখলো খুবই চমৎকার একটি শেতাঙ্গ ছেলে ফোন হাতে দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে চেয়ে। তুমি কি ড্রেক? নূরের কথায় ড্রেক তার গন্তব্যে ফিরে এলো।”
__” ড্রেক মাথা দুলিয়ে বললো ‘ হ্যাঁ মিস! আমি হেনার বন্ধু। নূর তার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট করে হাসলো। সেই হাসির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো ড্রেক পরক্ষণেই গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে স্বাগতম ভঙ্গিতে বললো ‘ কাম বিউটিফুল এশিয়ান।”
__” নূর তাতে মিষ্টি করে হেঁসে গাড়িতে উঠে বসলো সুন্দর করে। ড্রেক নিজের হাত বাড়িয়ে বললো ‘ হেই আই এম ড্রেক ওলচন ইউ?’
___” নূর তার হাত না বাড়িয়ে মুখের হাসি ধরে রেখে চমৎকার আমেরিকান ভাষায় বললো ‘ আই এম নূর রহমান।”
___” ড্রেক চট করে বুঝে গেলো নূর অপরিচিত পুরুষদের সাথে হাত মিলাতে পছন্দ করে না। ড্রেক অস্পষ্ট উচ্চারণে করলো ‘ নির রেহেমান (নূর রহমান) বিউটিফুল নেম।”
___” নূর আরো চমৎকার করে হেঁসে বললো ‘ তুমি আমাকে নূর বলে ডাকতো পারো।ছেলেটি আবারও বললো নীর।নূর মিষ্টি করে হেঁসে বললো ‘ চলবে।”
___” সারারাস্তা ড্রেক আঁড়চোখে বার বার নূরের দিকে তাকাচ্ছিল আর বিড়বিড় করে বলতে লাগলো ‘ নীর।”
__”সারাক্ষণ নূর বাইরে দিকে তাকিয়ে ছিল সত্যি খুবই চমৎকার আমেরিকান শহর কিন্তু তার দেশের মত সবুজ শ্যামল না। তারা খুবই চমৎকার একটি শপিং মলের সামনে থামলো। ড্রেক নূর কে নিয়ে ভিতরে ডুকলো কিছু দূরে হেনা দাঁড়িয়ে একটা ছেলের সাথে কথা বলছে শুধু মাত্র ছেলেটির পিছনের দিক দেখা যাচ্ছে। নূরের কাছে পিছন থেকে ছেলেটিকে ভালোই সুদর্শন লাগছে।ঐখানে হেনা আরো অনেক আমেরিকান বন্ধু ও রয়েছে।”
___”নূর আর ড্রেক সামনে যাওয়ার আগে ছেলেটি অন্য দিকে চলে গেলো। হেনা মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।”
__”হেই হেনা আর ইউ ওকে? নূর বলে শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো।
___” হেনা তার দুঃখ লুকিয়ে হাসিমুখে বললো ‘ নূর আই এম ওকে মিট মাই ফ্রেন্ডস ও ড্রেক ওর সাথে তো পরিচিত হয়েছো নিশ্চয়ই!”
__” নূর হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো।
___হেনা বললো ‘ তাহলে এদের সাথে পরিচিত হোও হিবা,চারলেইস,সুইডি, বোরান আরো অনেকই নাম বললো।সবাই নূর কে নীর বলে ডাকলো তার নূর নাম টি কেউ স্পষ্ট বলতে পারে নি। নূর সবাই সাথে ভদ্রতা মূলক হাই বলে মুচকি হাসলো কিন্তু মেয়ে বাদে কারও সাথে করর্মদন করলো না।”
___হেনা অত্যন্ত বিরক্ত ভঙ্গিতে ফিসফিস বললো ‘ এইসব কি নূর তুই আমার ছেলে বন্ধুদের সাথে করমর্দন কেন করছিস না?”
___নূর স্বাভাবিক গলায় বললো ‘ তুমি ভালো করে জানো আমি অপরিচিত ছেলেদের সাথে হাত মিলানো পছন্দ না।”
___” হেনা গাল ফুলিয়ে বিড়বিড় করে বললো ‘ যত্তসব ক্ষ্যাত, ওকে চল চল শপিং করবো চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে তার বন্ধুদের সাথে আগে উঠে গেলো।”
___” ড্রেক মুগ্ধ নয়নে নূর কে দেখছে আসলে মেয়েটা অসাধারণ। তুমি আসলে একজন প্রকৃত মোসলমান (মুসলিম) ড্রেক চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে নূরের সাথে উঠতে উঠতে বললো।”
___” নূর শান্ত স্বরে বললো ‘ কোনো তোমার এটা কেনো মনে হলে?”
___” এই যে ছেলেদের সাথে হাত মিলানো পছন্দ করো না ড্রেক বলে উঠলো।”
___” নূর বুঝিয়ে দেওয়ার ভঙ্গি করে বললো ‘ ব্যাপারটা সেটা না ড্রেক আমি প্রকৃত মুসলিম হতে পেরেছি কি না তা আমার জানা নেই। আর অন্য ধর্ম নিয়ে আমার কোনো ঘৃণা যোগ্য আলাদা মতবাদ নেই মানুষটি ভালো নাকি খারাপ তা আমার জন্য মূখ্য বিষয়। কিন্তু কোনো অচেনা মানুষ আমার হাত ধরুক তা আমার একেবারে অপছন্দ।”
___” ড্রেক মুগ্ধ হয়ে বললো ‘ ওয়াও! বলে টেনে বলে উঠলো।”
___” হেনারা অনেকখন শপিং করার পর অনেক রাতে শপিং মল থেকে বের হলো। রাস্তা দাঁড়িয়ে আছে তারা সবাই হেনা তার আরো কয়েকটা বন্ধু কে আসতে দেখে তাদের সাথে আমার শপিং করতে ভিতরে ডুকে গেলো। নূর কে যাওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করলে সেই জানালো সেই এখানেই থাকবে।”
___” ড্রেক ও হঠাৎ বলে উঠলো সেই নীর (নূর) সাথে এখানে থাকবে। হেনা তার কাঁধ ঝাঁকিয়ে ভিতরে ডুকে গেলো।”
___” হঠাৎ নূর রাস্তার অন্য পাশে অনেকটা হাওয়াই মিঠাই জাতীয় খাবার দেখে উৎফুল্ল হয়ে নেচে-কুঁদে উঠলো।”
___” হেই নীর (নূর) তুমি হাসছো কেন ড্রেক বলে উঠলো।”
___” সি হওয়াই মিঠাই এটা অনেক টেস্টি হয়ে থাকে আমার খুবই পছন্দ নূর উল্লাসে বলে উঠলো।”
___” হোয়াট হেওয়াই মীটাই (হওয়াই মিঠাই) অনেক কষ্টে দাঁত ভাঙা শব্দের মত ড্রেক উচ্চারণ করে উঠলো।”
___” হুম হওয়াই মিঠাই তুমি এখানে একটু দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি। ড্রেক কিছু বলার আগে নূর দ্রুত পা চালালো হওয়াই মিঠাই উদ্দেশ্যই।
___” রাস্তার ঔ পাশে যেতে ধরলে ড্রেক দেখলো একটা ট্রাক এলোমেলো ভাবে নূরের দিকে আসছে।সেই ছুটে নূরে দিকে যেতে ধরলো হঠাৎ কালো হুডি পরা কেউ একজন ছুটে এসে নূর কে বুকে নিয়ে সরে গেলো।”
___” ট্রাক টি একটি দোকানের সাথে বারি খেয়ে ধুমধড়ক্কা থেমে গেলো। আর লোকজন ট্রাকের লোকটিকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিলো।”
___” ড্রেক লোকটিকে মারা জন্য গিয়ে দেখলো লোকটি আসলে মদ্যপান করে গাড়ি চালাচ্ছিল। ইউ মদ্যপান বদমাশ ইহুদি বলে ড্রেক লোকটিকে মারতে লাগলো।”
___” কেউ একজনের বুকে সাথে মিশে থরথর করে কাঁপছে নূর। কিছুখন পর নূর শুনলো চমৎকার স্পষ্ট পুরুষালী দৃঢ় কন্ঠে কেউ একজন তাকে বলছে ‘এই সহ দুবার তোমাকে আমি বাঁচালাম।
___” নূর চট করে তার মুখ উঠিয়ে দেখলো সেই চমৎকার ব্রাউন চোখের কালকের লোকটি কিন্তু তার মুখ এখনো অস্পষ্ট। কারন সেই আজকেও একটি কালো মাক্স পরে আছে যার ফলস্বরূপ তার চমৎকার দুটি চোখ দেখা যাচ্ছে।”
___” নূর এক দৃষ্টিতে লোকটির চোখে দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বলার জন্য তার ঠোঁট কাঁপছে। লোকটি একবার নূরের মাদকতা ঠোঁটের দিকে তাকালো। নূর কাঁপা কাঁপা মৃদুস্বরে বললো ‘ হু আর ইউ!”
___” নূরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে লোকটি কোন শব্দবিহীন।”
___” নীর,নীর (নূর) কই তুমি ড্রেক ডাকছে। নূর বামে তাকিয়ে আবার সামনে তাকিয়ে দেখলো লোকটি অদৃশ্য।নূর ডানে বামে তাকিয়ে একটা গলির মধ্যে ডুকতে যাওয়ার আগে ড্রেক চট করে এসে ওর হাত ধরে ফেললো।”
___” নীর (নূর) তুমি যাচ্ছো কই? ঐ দিকটা খুবই অন্ধকার ড্রেক আশ্চর্য গলায় বলে উঠলো। নূর কাঁপা কাঁপা মৃদুস্বরে বললো
‘ ঐ লোকটি কই!”
___” ড্রেক চারিদিকে তাকিয়ে বললো ‘কোন লোক? যে আমাকে আবারও আমার প্রাণ বাঁচিয়েছে নূর কৃতজ্ঞতা চোখে বললো।”
___” হেই নীর (নূর) এখানে কেউ নেই তুমি বাদ দাও চলো আমরা তোমার হেওয়াই মীটাই খাই ড্রেক বললো। নূর চুপ করে মাথা দুলিয়ে ড্রেকের সাথে রওনা হলো।”
___” আমেরিকার একটা সাগরের দ্বীপে এসে তার বিশাল বড় একটা মহলে ডুকলো সেই লোকটি। একটা দরজার লক খুলে রাজকীয়ও একটি রুমে ডুকলো সেই। অতঃপর
চট করে টেনে পেলে দিলো তার মাথার হুডি আর তার মুখের মাক্স।”
___”সেই চিৎকার দিয়ে বললো ‘ জানতে চেয়েছো আমি কে তাইনা!”
__” আমি এরিক গ্লোবাল। দ্যা পিউর ভ্যাম্পায়ার। যার কাজ শুধু রক্ত খাওয়া না প্রতিটি রূপবতী মেয়ের রক্ত খাওয়া আর তাদের বয়স খাওয়া।”
___” এরিক ডানে বামে চোখ বুলিয়ে নিজের মাথায় হাত দিয়ে আবারও চিৎকার করে উঠলো। তার চিৎকারে পুরো মহলে যেনো কেঁপে উঠলো।”
___” ইটস নট পসিবল! এটা সম্ভব না! কখনোও না!এইরকম তো হওয়ার কথা ছিল না! একটা জেগে থাকা ভ্যাম্পায়ারের দেখা স্বপ্ন কখনও পূরন হয় না তাহলে মেয়েটি!”
___” রক্ত বর্ণ চোখে রাগে ফুঁসছে এরিক। তার পুরো রুম জুড়ে একটা নগ্ন মেয়ের ছবি আর্ট করা যেটি সেই বিগত ১৫০ বছর থেকে চোখ বন্ধ করে দেখতে পেতো।”
___” প্রতিটি আর্ট করা ছবিতে যেটি স্পষ্ট একটা চমৎকার এশিয়ান মেয়ে তাকে নগ্ন অবস্থা হাতছানি দিয়ে নিজের দিকে ডাকছে।
___” আজ ১৫০ বছর সেই এই মেয়ে কে দেখছে স্বপ্নে। কিন্তু কাল সেই মেয়েটিকে চোখের সামনে দেখলো আর আজকেও! কীভাবে সম্ভব তা! এরিকের মাথা ফেটে যাচ্ছে ১৫০ বছর আগের চোখ খুলে স্বপ্নে আসা একটা মেয়ে কীভাবে জলজ্যান্ত অবস্থায় সামনে আসতে পারে!”
___” আর সব চাইতে বড় কথা এই মেয়েটি যত বার বিপদে পড়ছে এরিকের আগে জানা হয়ে গেছে। হোয়াই বলে চিৎকার করে উঠলো এরিক। তার কাছে সব কিছু এলেমেলো লাগছে। আমি আমার লক্ষ্য থেকে বের হতে পারবো না।”
___” কালকে মেয়েটিকে দেখার পর থেকে এরিকের মাথা কোনো কিছু কাজ করছে না ফলস্বরূপ হেনা সাথে দূর্ব্যবহার করে বসেছিলো।”
___” না না হেনা কে তার পেতে হবে ১৫০ বছরের জেগে স্বপ্নের মেয়ে জন্য সেই তার পাঁচশত বছরের লক্ষ্য নষ্ট করতে পারবে না। এই লক্ষ্য পূরন করতে আমার জন্ম এই মেয়ে যে হক আমার কিছু যায় আসে না এরিক দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠলো।”
___” নূর এরিক কথা ভাবার সময় পাচ্ছে না ড্রেক তাকে বিভিন্ন কথা বলে হাসাচ্ছে। নূর তার দুহাত দিয়ে পুরো মুখ করে হওয়াই মিঠাই খাচ্ছে। ড্রেক নূরের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকে বললো ‘ তুমি কি এইসব রাস্তার পাশের খাওয়ার খুবই পছন্দ করো?”
___” নূর জোরে মাথা দুলিয়ে বললো ‘ জানো ড্রেক আমি খুবই সাধারণ একটা দেশ থেকে আসলেও সেই দেশের সাথে আমি অন্য কিছুর তুলনা করতে পারবো না। ইউ নো ড্রেক আমাদের দেশে
শীতের রাতে একটা ছেঁড়া কাঁথা গায়ে দিয়ে একটা কুপি জ্বালিয়ে পিঠা বিক্রি করতে বসে মানুষ। তার সাথে থাকতো বিভিন্ন রকমের ভর্তা আই মিন চাটনি।আর আমি কি করতাম জানো একসাথে ১০,১২ টা খেয়ে নিতাম নূর খিলখিল করে হাসতে হাসতে বললো।”
___” ড্রেক অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে হেনা আর নূর অনেক আলাদা। হেনা যে একজন ব্যাঙালা দেশি (বাংলাদেশী) এটা বলতে ও সেই লজ্জা বোধ করতো আর নূর সব কিছু কত সহজ করে বলছে।”
___” নূর ড্রেকে একবার একটা কাহিনি বলছো নিজ দেশের আর খিলখিল করে শুধু হাসছে ড্রেক মুচকি হেঁসে নূরের ভূবণ বুলানো হাসি দিকে তাকিয়ে রইলো।”
___” হেনা মল থেকে বের হলে দেখলো এরিক তার জন্য গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছে। সেই এক গাল এসে দৌড়ে এরিকের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।”
___” ওহ্ এরিক আমি জানতাম তুমি আমার উপর রাগ করে থাকতে পারবে না হেনা লাস্য গলায় বলে উঠলো।”
___” ইয়ায় সুইটহার্ট আমি তোমার উপর রাগ করে থাকা সম্ভব না এরিক চতুর হাসি দিয়ে বললো।”
___” ড্রেকের সাথে নূর কে আসতে দেখে হেনা চট করে এরিক কে ছেড়ে দিলো।হেই এরিক হাউ আর ইউ? ড্রেক বলে উঠলো।”
___” এরিকে কিছু বলার জন্য পিছনে ফিরার আগে একটা পরিচিত গলার আওয়াজ শুনে চমকে গেলো।”
___” হেনা এইবার তো চলো অনেক রাত হয়ে গেছে নূরের আওয়াজ শুনে চমকপ্রদ হয়ে এরিক পিছনে তাকালো।সেই অবাক হয়ে একবার নূরের দিকে তাকাচ্ছে আরেক বার হেনা দিকে।”
___” হেনা মিষ্টি করে হেঁসে নূর কে বললো ‘ মিট মাই ফ্রেন্ড এরিক গ্লোবাল অ্যান্ড এরিক সি ইজ নূর মাই কাজিন।”
___” এরিক কপাল কুঁচকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ল কেউ না শুনার মত বিড়বিড় করে বললো ‘ এটাকে বলে ভাগ্য!”
চলবে