হিংস্র ভ্যাম্পায়ার_২,পর্ব-১

হিংস্র ভ্যাম্পায়ার_২,পর্ব-১
লেখিকাঃফারু ইসলাম

__” মা তোমাকে আমি কতবার বলবো তোমার বর আবারও আমাকে নোংরা ভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে নূর খেখিয়ে উঠলো।”

__নিজের হাতের গ্লাসের পানি ঠাস করে নূরের মুখের উপর মেরে দিলো মিসেস রিমি
নূর হতবাক হয়ে মিসেস রিমি দিকে তাকিয়ে রইলো।”

__তোমাকে আমি অনেক বার বলেছি আমার সামনে একদম মিথ্যা বলবে না মিসেস রিমি বলে উঠলো।”

___” নূরের চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে কিন্তু তার মুখে পানির ঝাপটার কারনে তার চোখের পানি বুঝা যাচ্ছে না। নূর ছুটে নিজের রুমে গিয়ে হু হু করে কেঁদে দিলো।”

__ কেনো বাবা তুমি আমাকে এই জাহান্নামে একা পেলে চলে গেলে? কাঁদতে কাঁদতে নূরে ঘুম এসে গেলো বেডে।”

__ ” রাতে হঠাৎ মনে হলে কেউ একজন তার পেটে হাত বুলাচ্ছে নূর মৃদু মৃদু চোখে তাকিয়ে রহিত হাসানকে দেখে চিৎকার দিবার আগে তার মুখ চেপে ধরলো সেই।”

__” নূর নিজের হাত পা ছুটাছুটি করা শুরু করলো রহিত হাসান নূরের জামা অর্ধেক খুলে ফেললে সেই সুযোগে।”

__ ” নূ তার হাতের কাছের টেবিল ঘড়ি টা রহিত হাসানের মাথার মধ্যে মেরে ছুটে রুম থেকে বের হওয়ার সময় দরজা বাইরে থেকে আটকিয়ে দিলো।”

__” মা মা বলে ছুটে মিসেস রিমি রুমে যেতে লাগলো নূর কিন্তু না মিসেস রিমি ঘরে নেই।”

__” নূর খেয়াল করলো রহিত হাসান নোংরা ভাষায় গালি দিচ্ছে আর দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে নূর মিসেস রিমি আলমারি থেকে কিছু টাকা নিয়ে তার পাসপোর্ট নিয়ে বের হয়ে গেলো।”

__” রাত দু’টো নীলের বাসার কলিং বেল কেউ অনবরত বাজাচ্ছে। নীলের মা ঘুম ঘুম চোখে নীলের বাবা মেহবুব সাহেব কে জাগিয়ে বললো ‘ কলিং বেল বাজাতে আছে কে বার বার।”

__” মিসেস হ্যাপি বেগম আর মেহবুব সাহেব দুজনে রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসার আগে নীল নিচে গিয়ে আলরেডি দরজা খুলে ফেললো।”

__” নীলের মা বাবা সিঁড়ি পর্যন্ত এসে হতবাক নূর! নীল দরজা খোলার সাথে সাথে ঝাঁপিয়ে পড়লো নীলের বুকে নূর।”

__” ততোখনে নীলের মা বাবা নিচে নেমে এলো। নূর তুই এতো রাতে এখানে কি করছিস? কিছু কি হয়েছে! উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো নীল।”

__” নূর ফুফিয়ে কাঁদছে নীলের বুকে পড়ে তার কান্না যেনো বিশ্রাম নিচ্ছে না।”

__” মিসেস হ্যাপি আর মেহবুব সাহেব এগিয়ে এসে আশ্চর্য হয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো এতো রাতে এই বাচ্চা মেয়েটা কীভাবে আসলো!”

__” নীল নিজের বুক থেকে নূরের মাথা উঠিয়ে দেখলো চোখ মুখ ফুলে এক ভয়ংকর অবস্থা।”

__” নূর কি হয়েছে আমাকে বল? নীল নূরের মুখে হাত দিয়ে বললো নূর শুধু হিচকি তুৃলছে আর বাচ্চা দের মত ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না করছে।”

__নীল অসহায় দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো ‘ প্লীজ নূর এই ভাবে কাঁদিস না রে জান বল আমায় কি হয়েছে?”

__” ঐ_ঐ লোকটা বলে মুখে হাত দিয়ে ফুফিয়ে উঠলো নূর। মিসেস হ্যাপি ছুটে এসে নূরে কে তার বুকে নিয়ে নিলো।”

__” নীলের আর বুঝতে বাকী নেই কি হয়েছে?
সেই চুপচাপ দ্রুত পায়ে নিজের রুমে যেতে লাগলো।”

__” কিছুই হবে না নূর দেখ আমরা আছি তো আর ভয় নেই মিসেস হ্যাপি নূরকে বুকে নিয়ে আদুরী গলায় বলে উঠলো।”

__তুমি ওকে রুমে নিয়ে যাও মুখ টা কেমন শুকিয়ে আছে এখনো মনে হয় কিছু খাইনি কিছু খাইয়ে দাও মি. মেহবুব মিসেস হ্যাপিকে উদ্দেশ্য করে বললো।”

__” সিঁড়ি দিয়ে দপদপ করে নামছে নীল চোখ মুখ তার কঠোর অবস্থা যেনো কোন খুন মাথায় চেপে বসেছে ওর।”

__” মেহবুব সাহেব তাকিয়ে দেখলো নীলের হাতে হকিস্টিক।
নীল নীল কই যাচ্ছিস পাগল হয়ে গেছিস? মেহবুব সাহেব চিৎকার করে বলে উঠলো।”

__” আজ ঐ কুকুরকে আমি মেরে ফেলবো আগের বার বেঁচে গেছে এইবার না নীল ছুটে বের হতে হতে গর্জন করে বললো।”

__” নূর ছুটে এসে নীলের হাত ধরে পেলে বললো ‘ না কোনো দরকার নেই ওরা তোকে আবারও জেলে দিয়ে দিবে আমি চাই না তা।”

__” কি করবি তাহলে আগের বারে মত আবারও তোকে মামি এসে নিয়ে যাবে আমাদের করা মত কিছু থাকবে না নীল চিৎকার করে রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললো।”

__” না এইবার হাজারও মিথ্যা বলে আমাকে নিতে পারবে না এরা নূর শক্ত গলায় বলে উঠলো।”

__” কীভাবে রে মা? এটা কীভাবে সম্ভব! রিমি কে তো তুই চিনস ওর সাথে পারা যায় না মিসেস হ্যাপি দুশ্চিন্তা গলায় বলে উঠলো।”

__” ফুফু এইবার সেই কিছুই করতে পারবে না কারন এইবার আমি এই দেশে থাকবো না নূর গম্ভীর মুখে বলে উঠলো।”

__” নীল চমকে বলে উঠলো তাহলে কই যাবি তুই?”

__” আংকেল মেহবুব তুমি আমাকে বড় ফুফুর বাসায় যাওয়ার ব্যবস্থায় করে দিবে? নূর মেহবুব সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো।”

__” মি. মেহবুব প্রশ্ন চোখে বললো ‘ সত্যি তুমি ওতো দূরে চলে যেতে চাও?”

__” আমার মনে হয় নূর ঠিক বলছে নূর কিছু বলার আগে মিসেস হ্যাপি বলে উঠলো মি. মেহবুব কে উদ্দেশ্য করে।”

__” মি. মেহবুব কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো ‘ আচ্ছা আমি তাহলে সব কিছু ঠিকই করে নিচ্ছি। কালকে রাতের প্লেনের টিকেট বুক করলে কেমন হয়?”

__” নূর শান্ত কন্ঠে বললো ‘ তোমাদের যা ইচ্ছে কিন্তু আমি দ্রুত যেতে চাই এইসব কিছু থেকে।”

__ মি. মেহবুব শান্ত গলায় বললো ‘ তাহলে তুমি কালদিনে হ্যাপি সাথে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করে এসো।”

__ ” নূর মাথা নেড়ে সম্মিত দিলো।”

__বাবা একটা না দুটি টিকেট কাটাও আমি ও যাবো নূরে সাথে
আর এমনে তে আমারও ভার্সিটিতে ভর্তি ডেট চলে এসেছে নীল বলে উঠলো।”

__”মি. মেহবুব নীলের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললো ‘ আচ্ছা আমি দেখছি।”

__নূরকে রুমে নিয়ে গেলো মিসেস হ্যাপি অনেক রাত বেডে গুটিশুটি মেরে ঘুমাচ্ছে নূর জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে নীল।”

__” কেন এমন হচ্ছে তার জান পাখি টার সাথে? দেখবি জান তোর জীবনে সব কষ্ট মুছে যাবে একসময় হাজারও সুখ পাবি তুই বিড়বিড় করে বলে উঠলো নীল।”

__আমেরিকা__

__”ও আল্লাহ এটা একটু বড় হয়ে গিয়েছে মনে হয়! হেনা তার ড্রেস আয়নাতে ভালো করে দেখে টেনে টুনে বললো।”

__সেই খুবই চোখ ধাধানো একটি অতি ক্ষুদ্র একটা সর্ট ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরেছে।কারন তার বাগদত্তা সবচাইতে পছন্দ সর্ট ড্রেসে।

__হেনাদের বাসার নিচে গাড়ী হন নামক শব্দটি চিৎকার করছে দায়িত্ব সহকারে।

__হেনা নিজের ঠোঁটে লিপস্টিক আরো একটু গাঢ় করে, চুল গুলোকে আকষ্মিক ভাবে ছেড়ে দিলো তার বাগদত্তা তার খোলা চুল খুবই পছন্দ করে। একহাত হিল পড়ে কালো অর্ধ নগ্ন কোকটেল ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে নিচে নেমে আসলো হেনা।

___” সামনে চমৎকার গাড়ী নিয়ে গাড়ীতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এরিক গ্লোবাল।”

__” ভার্সিটির সব মেয়ের হার্টবিট আমেরিকার তাদের স্হানীয় জায়গাটির সবচাইতে কোটিপতি ছেলে এরিক গ্লোবাল।”

__” ছ’ফুট উচ্চতার শেতাঙ্গ আমেরিকান সেই। ধবধবে সাদা গায়ের রঙয়ের উপরে খোঁচা খোঁচা ট্রিম করা দাঁড়ি।
চুলগুলো সোনালী এবং সাদা রঙয়ের মিশ্রণ। সিগারেটের অভ্যাসটা নেই তাই গোলাপি ধরণের পুরু ঠোঁট। ওর পুরুষালী দৃঢ় পরিষ্কার কণ্ঠে সব মেয়ের পৃথিবী মনে হয় ওখানেই থমকে দাঁড়ায়।”

__” সবচাইতে সুন্দর ওর চোখ দুটি ব্রাউন কালারের উপরে চমৎকার দুটো চোখ শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে
তার ড্রেসআপের সাথে আমেরিকান কোনো ছেলে পাল্লা দিতে পারেনি আজ পর্যন্ত।”

__হেনা তাকিয়ে রইলো এরিকের সৌন্দর্যের দিকে এই তার বাগদত্তা কতটা ভাগ্যবতী সেই! নিজের ভাগ্যের প্রতি সত্যি অনেক উৎফুল্ল সেই।

___” হেই হেনা সুইটহার্ট! ইউ আর লুকিং টু মাচ সেক্সি বলে এরিক হেনার ঠোঁটে গভীর চুমু খেলো। লজ্জায় হেনা লাল নীল হয়ে গেলো।”

__” কাম সুইটহার্ট এরিক হেনার হাত ধরে তাকে তার গাড়িতে উঠালো। তারপর গাড়ী নিয়ে শাঁ করে চলে গেলো তারা। এরিকের গাড়ী এসে থামলো অতি দামী একটা জাঁকজমকপূর্ণ ক্লাবে।”

___বাংলাদেশ__

__” সকাল বেলা মেহুবুব সাহেব জানালো সেই মাত্র একটাই টিকেট বুক করতে পেরেছে তাই নীলের এখন যাওয়া হবে না আর আজ রাত দশটায় নূরের প্লেন।”

__হঠাৎ নূরের দিকে তাকিয়ে মি. মেহবুব সাহেব বললো ‘ তুমি তো দেখি বেশি শাড়ি নিলে?”

__” নূর ব্যাগ ঠিক করতে করতে বললো ‘ বাবা খুবই পছন্দ করতো মেয়েদের শাড়ি পরা, তাই ঐখানে সুযোগ পেলে আমি এই সুযোগ টা হাত ছাড়া করতে চাইনা আংকেল মেহবুব।”

___” মিসেস হ্যাপি নূরে দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো সত্যি তার ভাইয়ের মত মেয়েটা সাদাসিধে হয়েছে।”

__নূরের চোখ মুখে চিন্তার ভাব মিসেস হ্যাপি ভারীস্বরে বললো ‘ কোনো চিন্তা করিস না নূর তোর বড় ফুফু আছে সেইখানে। তোর হেনাপু আছে হ্যাঁ একটু অন্য রকম তাও আমার মন বলছে তুই মানিয়ে নিতে পারবি। তুই একদম চিন্তা করিস না কয়েকদিন পর নীল ও চলে যাবে।”

__নীল চটপট উত্তর দিলো ‘ হ্যাঁ মাই জান কোন চিন্তা নেই! আমি কয়েকদিন পর তোর কাছে চলে আসবো।”

__উত্তরে নূর মিষ্টি করে হাসলো।

__রাত দশটা প্লেনের উঠার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে নূর সবাই কে বিদায় দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলো নূর।

__নীল মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে মিসেস হ্যাপি নীলের মুখে হাত দিয়ে আশ্বাস ভরা কন্ঠে বললো ‘
এতো কেন ভয় পাচ্ছিস তোর ভালোবাসা তোরই থাকবে কয়েকদিন পর তো তুই ও চলে যাবি।”

__” হুম কোনো চিন্তা করো না মাই সান তোমার নূর তোমারি থাকবে মি. মেহবুব হেঁসে বলে উঠলো।”

__নীল হালকা করে হাসলো তার কেন যেনো মনে হচ্ছে এই মেয়েটিকে সেই হারিয়ে ফেলবে।”

__ প্লেনে বসে আছে নূর শুধু মাত্র তার সৎ বাবা নামক ঐ নোংরা মানুষটির জন্য তার আজ দেশ ছাড়তে হচ্ছে।
অন্য দেশ নূরের কখনও পছন্দ ছিলো না তার বাবা সাথে সেই ছোট কালে অনেক যেতো বিভিন্ন দেশে। কিন্তু মন পড়ে থাকতো তার প্রিয় দেশ বাংলাদেশে।

__ বড় হওয়ার পরে শুধু মা পাসপোর্ট করে রেখে দিয়েছিলো কিন্তু যাওয়া হয় নি আমেরিকায়।

___প্লেনে বসে শুধু কান্না পেল নূরের কত সুন্দর কত আপন দেশটা তার ছেড়ে যেতে হচ্ছে! কথায় চলে যাচ্ছে সে? কেমন সেই দেশ?কেমন তার লোকজন?
কেমন সেখানে রাস্তাঘাট সেই তো ভুলে গেছে।

__” আচ্ছা সেখানে কি বৃষ্টির দিনে রাস্তার পাশের দোকানে দাঁড়িয়ে ভিজতে ভিজতে চা খাওয়া যায়? সেখানে কি রাস্তার মোড়ে টকঝাল ফুচকা চটপটি বাদাম ঝালমুড়ি নিয়ে ফেরিওয়ালারা বসে?
আর মেয়েরা ভিড় করে দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করে নোংরা খাবার খায়? ওখানে কি বৈশাখ আর বসন্তের প্রথম দিনে নতুন ঋতুর উৎসবে মেতে উঠে সবাই? উৎসব মুখর অনুযায়ী
লাল সাদা আর হলুদ শাড়ি পাঞ্জাবি পরে ছেলে মেয়েরা দলেদলে বের হয়? রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন রঙয়ের রেশমি চুড়ি নিয়ে বসে থাকে মানুষ? নাকি
বিভিন্ন দেশপ্রেম অনুষ্ঠানে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে থাকে চারিদিক মুখরিত করে?”

___” না কিছু তো হয় না সব কিছু পেলে চলে যাচ্ছে সেই ভিনদেশে। যেখানে পাওয়া যাবে বিচিত্র মানুষ তাদের বিচিত্র চিন্তা ভাবনা।”

___” নুরের আবারও মনে উঠলো ‘ আচ্ছা তাহলে কি ওখানে লাল কৃষ্ণচূড়া আকাশকে রাঙিয়ে দেয়? কি আছে ওখানে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে নূরের।”

___ তার সহ্যকাতর শরীর আর সহ্য করতে না পেরে প্লেনে বসে ঝরঝর করে কেঁদে দিলো সেই, কেন যেতে হচ্ছে তাকে কেন তার জীবন একটু সুন্দর হলো না খুব বেশি কিছু কি সেই জীবনে চেয়েছিল!”

__নূরের পাশের সিটে লোকটি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে চোখ মুখ লাল হয়ে আছে নূরের টপটপ করে চোখে থেকে পানি পড়ছে তার।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here