হঠাৎ_হাওয়া,০৮,০৯

#হঠাৎ_হাওয়া,০৮,০৯

(৮)

হিমালয় কিছুক্ষণ ফোনে কথা বলে এসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—যদি কাল নাইটে ফিরে যাই তোদের অসুবিধা হবে?
সবাই হিমালয়ের দিকে তাকালো,কারো মুখ দেখে মনে হচ্ছে না আপত্তি আছে।শুধু কথা উঠে দাড়ালো হিমালয়ের সামনে, হিমালয়ের চোখে চোখ রেখে বললো
—তুই বলেছিলি আগামী চারটা দিন পুরোটা সময় তুই আমাদের সাথে থাকবি।
—আমিই বলেছিলাম তবে চারটা দিন সিলেটেই থাকব এরকম কিছু কি বলেছিলাম?আমাদের সাথে যে মায়াও যে আসবে তা কি জানতাম?এখানে এসে আবিরের বিয়ে হয়ে যাবে তা কি ভেবেছিলাম?এনিওয়ে আমি যেহেতু বলেছিলাম আমি তোদের সাথেই থাকব বাট সেটা ঢাকায় ফিরে। তোদের কারো আপত্তি আছে?
কথা চুপ করে গেলো আর কিছুই বললো। ওদিকে মায়া কেদেই চলেছে, দিহান মায়াকে বারবার থামতে বলছে তাতে মায়ার কান্নার বেগ আরো বেড়ে যাচ্ছে, হিমালয় ভ্রু কুচকে মায়াকে এক ধমক দিয়ে বললো
—চুপ আর একটা বাজে সাউন্ড যেন না শুনি, কি আজকে কি ক্রন্দন দিবস নাকি? এই কয়দিন তো একবারো কাদতে শুনলাম না, সমস্যা কি? এখন কি বাবার ফোন পেয়ে আহ্লাদের ঠ্যালায় কাদতেছো নাকি?
মায়া বড় বড় চোখ করে হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে ভ্যা করে কেদে ফেললো।হিমালয়ের বন্ধুরা সব মিটিমিটি হাসছে শুধু কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে কথা।হিমালয় এবার এগিয়ে গিয়ে মায়ার কবজি ধরে টেনে সেখান থেকে মায়াকে আলাদা নিয়ে এলো।দিহান পিছু পিছু যেতে চাইলে ধ্রুব বাধা দিয়ে বললো,
—বাদ দাও হিমালয় সামলে নেবে।

হিমালয় মায়াকে কর্টেজের অন্যপাশটায় নিয়ে বলল,
—এক্ষুনি থামতে বলেছি কিন্তু, চুপ
মায়ার কোনো ভাবান্তর হলো না
—কি সমস্যা কাদো কেন?
মায়া কাদতে কাদতেই বললো
—আপনি বকেন কেন আমাকে?আপনি জানেন আমার বাবাই কখনোই আমাকে বকে নাই?আপনি সবার সামনে আমায় বকেন!আমার কি প্রেস্টিজ নাই?
হিমালয় হেসে ফেললো,মায়া হিমালয়ের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো,এই লোকটা খুব কম হাসেন অথচ হাসলে কত সুন্দর লাগে তাকে! সে কি জানে!হিমালয় হাসতে হাসতেই বললো
—তোমার বাবা খুব স্মার্ট তাই না?
মায়ার চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো মুহুর্তেই, মায়া সোৎসাহে বললো
—হ্যা খুব স্মার্ট আর খুব ভালো, আপনি বাবাকে কি বললেন?
—তেমন কিছুই না বললাম পরশু দুপুরে আমরা সবাই তোমাদের বাসায় লাঞ্চ করব।
—এই কথা বললেন?!
—হ্যা কেন?
—বাবা জিজ্ঞেস করলো না আপনি কে!?
—করলো তো
—আপনি কি বলেছেন?
—সেটা আমাদের সিক্রেট তোমাকে কেন বলব?
—আমার বাবা সাথে আপনার কিসের সিক্রেট।
হিমালয় হাসলো,
—তাতো বলব না, আর এখন থেকে আর সবার সামনে বকব না।আড়ালে বকব ঠিক আছে?
সরু চোখে তাকিয়ে বললো
—মানে!?
—মানে কি সত্যিই বোঝো নি? বুঝিয়ে বলব?
মায়া কিছুক্ষণ স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,
হিমালয় মায়াকে পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বললো
—শুনেছি কর্টেজের পেছনের দিকটায় অশরীরী না কি যেন দেখা গেছে, তুমি সঙ্গ দিতে চাইলে থেকে যাও।
মায়া দৌড়ে হিমালয়ের আগে সেখান থেকে বেরিয়ে সবার কাছে গিয়ে দাড়ালো।হিমালয়ের মুখ হাসিখুশি মায়ারও।মিষ্টি হয়তো ওদের দেখে কিছু বুঝতে পারলো।আর পুষ্পও, পুষ্প বুঝে একটু হাসলো পরক্ষনেই কথার দিকে তাকিয়ে কি একটা চিন্তায় পড়ে গেলো।কথা হিমালয়ের পাশে গিয়ে দাড়াতে দাড়াতে বললো,
—তোকে খুব খুশি লাগছে মনে হয়।কি ব্যাপার?
—তুই তো আমাকে খুব ভালো বুঝিস তুই বল কি ব্যাপার?
কথা হিমালয়ের দিকে চেয়ে রইলো,কথা সত্যি বুঝতে পারছে না,
—আমি বুঝলাম না তুই বল
—কিছুদিন যাক সবাইকেই বলব।
দিহান মায়ার পাশে এসে দাড়াতে দাড়াতে বললো
—কি ব্যাপার কান্না থেমে গেলো?
—হ্যা।
— কি করে?
—চলতে চলতে তেল শেষ তাই।
—মানে!
মায়া দিহানের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বললো
—এত মানে মানে করেন কেন?
—বুঝলে বুঝপাতা না বুঝলে….
—তেজপাতা?
দিহানের কথা শুনে দুজনেই হেসে ফেললো।হিমালয় ওদের দিকে চিকন চোখে তাকিয়ে রইলো।ধ্রুব আর আবির হয়তো বুঝতে পারলো।মিষ্টির হঠাৎ ভয় হলো যদি দিহান মায়ার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে! আবির আর মিষ্টি দুজনেই চিন্তিত ভঙ্গিতে চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে ফেললো।ধ্রুব দিহান কে ডেকে বললো,
—দিহান ভাই তুমি আমার পাশে এসে বসো, কি এত হাসির কথা বললে আমরাও শুনি।
হিমালয় ধ্রুবর দিকে তাকাতেই ধ্রুব ইশারায় আশ্বস্ত করলো।

ট্রেনের কামরা পুরো জোৎস্নায় মাখামাখি এত্ত গাঢ় জোৎস্না এর আগে মায়া কখনো দেখেনি! মায়া চোখমুখ উজ্জ্বল করে জোৎস্না দেখছে হিমালয় ওর সামনা সামনি বসা হিমালয়ের পাশেই কথা।মিষ্টি পাশ থেকে মায়াকে বলছে,
—মায়া?
—হ্যা বলো,
—ঢাকায় ফিরে তুমি আমার সাথে যোগাযোগ রাখবে তো?
মায়া মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বললো,
—সেটা তখন বোঝা যাবে যখন তুমি আমাকে তোমার বৌভাতে ইনভাইট করবে।
মায়া আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো
—কি আবির ভাই? আপনি আমাকে ইনভাইট করবেন নাকি পূর্ব অপছন্দতার জের ধরে বাদ রাখবেন।
আবির হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে তারপর মায়ার দিকে চেয়ে বললো
—তোমার জন্যে বউ পেলাম আর তুমি বৌভাতে দাওয়াত পাবে না তাই হয় নাকি?
মায়া একটু ভাব নিয়ে বললো
—বাহ! কোথায় বিয়ে করে এতদিনে হানিমুন করে ঘরসংসার করার কথা ছিল আমার! আর আমিই বিয়ের ইনভিটিশনে কোথা থেকে সস্তায় গিফট কিনব সেই টেনশনে অসুস্থহ, হাইরে বদনসিব!
বলেই দাতে জিভ কাটলো মায়া, হিমালয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মায়ার দিকে।তারপর শীতল কন্ঠে বললো
—অসুবিধা নেই আশেপাশে এত ডাক্তার তোমার চিকিৎসার খরচ তো বেচে যাবে।
ধ্রুব একটু গলা খাকারি দিয়ে বললো
—বোঝ না কেন মায়া? তোমার তো এই দুনিয়ার বেস্ট একজন হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে পরিচিত হওয়া বাকি ছিলো।
দিহান কথা কেটে বললো
—সেটা কি তুমি?
ধ্রুব উৎসাহ হারিয়ে বললো
—একটু তো ভাব নিতে দে ভাই।
ওমনি সবাই হেসে ফেললো।পুষ্প হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায় অবস্থা।মায়া পুষ্পকে বললো
— পুষ্প আপু তুমি গান গাও।
—আমি কেন গান গাইব?তার চেয়ে বরং তুই নাচ কর।তুই তো দারুণ নাচিস
ওমনি সবাই আবার হেসে ফেললো।মায়া মুখ গোমড়া করে বললো
—তোমার মন ভালো করার জন্যই তো ওমন করলাম!যার জন্য চুরি করলাম সেই পুলিশ নিয়ে এলো!হুহ ভালো মানুষের আজকাল এক্কেরে দাম নাই।
পুষ্প মিটিমিটি হেসে বললো
—হয়েছে হয়েছে আর ঢং করতে হবে না।
পুষ্প এতক্ষণ নিরবের পাশাপাশি বসেছিলো ঘুরে ওর সামনের সিটে বসে নিরবের চোখে চোখ রাখলো, নিরব একটু ভড়কে গেলো।পুষ্প নিরবের হাত দুটো হাতের মধ্যে নিয়ে একটু হাসলো।
মায়া মুখ ঘুরিয়ে বললো
—দেখো সবাই আমি বললাম গান করতে এই ম্যাডাম রোমান্স শুরু করে দিয়েছে।
হিমালয় মায়াকে বললো
নিরব লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।
—তুমি তো পুষ্পের চেয়েও বাচাল! এত কথা বলো কেন!
পুষ্প রাগী চোখে তাকিয়ে বললো
—আমি বাচাল হিমালয়!?
হিমালয় ওকে অগ্রাহ্য হ
করে বাইরে তাকালো,পুষ্প কটকট করতে করতে বললো,
—অভিশাপ দিলাম আমার চেয়ে বেশি বাচাল মেয়েটাই যেন তোর কপালে জোটে।
কথা অবাক হয়ে তাকালো,হিমালয় জানালার দিক থেকে মায়ার চোখে চোখ রেখে ঠোঁট বাকিয়ে হালকা হাসলো।পুষ্প নিরবের চোখের দিকে তাকিয়ে গান ধরলো….

এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্প করি..

দেখো ওই ঝিলিমিলি চাঁদ,
সারারাত আকাশে সলমা-জরি
এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্প করি।

জাফরানি ওই আলতা ঠোঁটে,
মিষ্টি হাসির গোলাপ ফোটে
মনে হয় বাতাসের ঐ দিলরুবাতে,
সুর মিলিয়ে আলাপ ধরি।
দেখো ওই ঝিলিমিলি চাঁদ,
সারারাত আকাশে সলমা-জরি
এই মন জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্প করি।

এই রূপসী রাত আর ঐ রূপালী চাঁদ
বলে জেগে থাকো
এ লগন আর কখনো ফিরে পাবে নাকো।
মখমলের ঐ সুজনি ঘাসে,
বসলে না হয় একটু পাশে
মনেহয় মহুয়ারই আতর মেখে,
তোমার কোলে ঘুমিয়ে পড়ি
দেখো ওই ঝিলিমিলি চাঁদ,
সারারাত আকাশে সলমা-জরি

এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে,
এসো না গল্প করি,
ও.. এসো না গল্প করি…।

সবাই মুগ্ধ হয়ে পুষ্পের গান শুনছিলো, আবির আড়চোখে মিষ্টির দিকে গানের ফাকে বারকয়েক নজর দিলেও মিষ্টি আবিরের থেকে চোখ সরিয়ে ফেলে নি।নিরব এখনো বিস্ময় নিয়ে পুষ্পের দিকে তাকিয়ে আছে, ধ্রুব পুষ্পের দিকে তাকিয়ে বললো
—তুই এত্ত ভালো গান করিস কোনোদিন বলিস নি তো!
—তোরা কোনোদিন জানতে চেয়েছিস?
তারপর মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল
—এবার মায়া বল কেমন লাগলো?
মায়া খুব মিষ্টি একটা হাসি হেসে বললো
—তুমি যে ধরণের গান করেছো তাতে তো আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে।
সবাই মায়ার দিকে অবাক হয়ে তাকাতেই বললো
—আরে শান্ত থাকো, এরকম হয় আমাদের মনে কেউ নেই কোনো ছবি নেই তবুও বিশেষ কিছু মুহুর্তে মানুষ একটা অবয়ব তৈরি করে নেয় সে চায় তার নিজসঙ্গ জীবনে কেউ সঙ্গ দিক।
সবাই মায়ার দিকেই তাকিয়ে আছে মায়া ঠোঁট টিপে হেসে এক হাতে মুখ ঢেকে বললো
—প্লিজ এবার আমি লজ্জা পাচ্ছি কিন্তু!
হিমালয় বিড়বিড় বললো তবে সবাই শুনলো
—তুমি লজ্জাও পাও!
মায়ার তেড়ে কিছু বলতে আসার আগেই হিমালয় পেছনে হ্যালান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।

চলবে….
সামিয়া খান মায়া

#হঠাৎ_হাওয়া (৯)
রুমে আসার পর থেকেই মায়া বেঘোরে ঘুমুচ্ছে বিকেল পর্যন্ত সবাই ওদের বাসাতেই ছিলো হিমালয় শুধু ওর বাবার সাথে সন্ধ্যা পর্যন্ত কথা বলে তারপর উঠেছে।তনয় মায়ার বাবাকে কিচ্ছুই জানায়নি,ট্রেনেই হিমালয়ের তা সন্দেহ হয়েছিল, হিমালয় কোনোভাবে এক ফাকে ছবি তোলার নাম করে মায়ার ফোন নিয়ে সেখান থেকে ওর বাবার নম্বর নিয়ে সবটা জানিয়েছে, আর ও যে রাতেই ফোন খোলা রাখে সেটাও হিমালয়ই জানিয়েছে।মায়া এখনো সেসব কিচ্ছু জানে না ওর ওসব বিষয়ে কথা বলার কোনো আগ্রহও নেই আসার পর থেকে ও যথেষ্ট স্বাভাবিক ব্যাবহার করেছে। রাত ১০ টা নাগাদ মায়ার ফোনে একটা কল আসলো,ঘুমের ঘোরেই মায়া রিসিভ করলো,ঘুমঘুম ভাব নিয়ে মায়া বললো,
—হ্যালো কে?
—আমি দিহান
—পরে কথা বলব, আমি ঘুমাই।
বলেই মায়া ফোন কেটে দিলো।কিছুক্ষণ পর আবার কল আসলো মায়া রিসিভ করে বলল,
—দিহান প্লিজ আমি এখন ঘুমাই পরে আমি তোমাকে ব্যাক করব।
—আমি হিমালয়।
—ওইতো দিহানের জায়গায় হিমালয় লাগিয়ে বুঝে নিন,আমি ঘুমাবো প্লিজ।
মায়া ফোন না কেটে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। হিমালয় মায়ার ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ শুনে বুঝে ফেললো মায়া ঘুমিয়েই পড়েছে।হিমালয় একটু হাসলো। তারপর কল কেটে আবার ব্যাক করলো। মায়া ন্যাকা কান্নার সুরে এবার বলল,
—কি ভাই আপনার সমস্যা কি?আমি ঘুমাইতে চাই বাংলা বোঝেন না?
হিমালয় ধমক দিয়ে বলল,
—হোপ! বলছি না ন্যাকা কান্না কাদবে না ওঠো অনেক ঘুম হয়েছে।
—মহারাজ!
মায়া অবাক হয়ে উঠে বসলো স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তারপর আবার ফোন কানে নিয়ে বলল,
—আপনি আমার ফোন নম্বর কই পেলেন!
—কেন তুমি কি সুপারস্টার নাকি যে ফোন নম্বর পাওয়া যাবে না
—না তা নয় কিন্তু আপনি!
—ওঠো দুপুরে খাওনি এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে আমায় কল ব্যাক করো।
—এখন সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে খাবার দেওয়ার কেউ নেই
—তোমাকে খাবার দিতে হবে তারপর খাবে?
—হ্যা!
হিমালয় ফোন কেটে দিলো মায়া কিছুই বুঝলো না কি হলো। ও বালিশের ওপর উপর হয়ে শুয়ে চোখ বুজে রইলো। কিছুক্ষণ পর আবার রিংটোন বাজতে শুরু করলো ওপাশ থেকে কেউ বললো
—মেইন গেইট খোলো আমি বাইরে।
মায়া কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দৌড়ে বের হলো।ও কল করলেই দারোয়ান কাকা গেট খুলে দিতো কিন্ত সেসব ওর মাথায় নেই ও গেটের সামনে গিয়ে গেইট খুলে দেখলো হিমালয়, মায়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো হিমালয় দ্রুত হেটে গেটের ভেতর ঢুকে পড়লো, মায়া গেট ধরেই দাঁড়িয়ে রইলো, হিমালয় কিছুদূর গিয়ে আবার মায়ার কাছে এসে ওর কবজি ধরে টেনে ভেতরের দিকে নিয়ে গেলো।ডাইনিং রুমে দাঁড়িয়ে মায়াকে বললো
—আলো জ্বালাও।
মায়া ধীর পায়ে হেটে আলো জ্বেলে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো পেছনে ফিরলো না ওর মনে হলো পিছনে ফিরলেই দেখবে হিমালয় নেই সবটা এতক্ষণ স্বপ্নই ছিলো মায়া জড়তা নিয়ে পেছনে ফিরে দেখলো সত্যি সেখানে হিমালয় নেই।হিমালয় রান্নাঘরে ফ্রিজ হাতাচ্ছে,খাবার বের করে ওভেনে ঢুকিয়ে মায়ার সামনে এসে দাড়ালো,এলোমেলো চুল অগোছালো জামাকাপড়ে মায়াকে দেখে হিমালয় মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো, ভাবলেশহীন ভাবে মুখ ফিরিয়ে যেতে যেতে বললো,
—তোমাকে খুব ন্যাচারাল লাগছে। ইউ আর লুকিং প্রিটি
মায়া কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হিমালয়ের পিছু পিছু গেলো।নিজের স্বকীয়তায় ফিরে এসে কোমরে হাত রেখে বললো,
—আপনি এত রাতে এখানে কিভাবে!
—এই ধরো প্রথমে বাসা থেকে হেটে নিচে নামলাম তারপর গাড়ীতে উঠে তোমদের বাসার সামনে আসলাম তারপর হেটে তোমাদের বাড়ির ভেতরে।
মায়া দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো
—আমি সেটা জানতে চাই নি।
হিমালয় প্লেটে খাবার বাড়তে বাড়তে মায়ার দিকে তাকালো ওর একটা কল আসতেই কপাল কুচকে পকেট থেকে ফোন বের করে কানে ধরলো,
—হ্যা কথা বল এত রাতে কোনো দরকার?
—হ্যা,
—যদি খুব ইম্পর্টেন্ট না হয় তাহলে কি কাল সকালে সাক্ষাতে বলবি? আমি একটু ব্যাস্ত আছি
—এত রাতে তুই কিসের ব্যাস্ত?
—আমি একটু বাইরে
—এত রাতে বাইরে কি করিস?
হিমালয় সরাসরি মায়ার চোখের দিকে তাকালো মায়া সেই চোখে চোখ পড়তেই ওর বুক ধক করে উঠলো,
—চাঁদ দেখি।আমি রাখছি।
হিমালয় ফোন কেটে পকেটে রেখে, মায়াকে বললো,
—টেবিলে গিয়ে বসো।

হিমালয় মায়ার মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে বললো,
—মায়া আমি খুব একটা আবেগী নই। তোমার মত তো নয়ই।আমি কারো প্রতি দুর্বল নই শুধু একজন বাদে, আমি আমার মা কে খুব ভালোবাসি আমার বাবা খুব ব্যাক্তিত্ববোধ সম্পন্ন একজন মানুষ আমার আইডল মা সম্পূর্ণ তার বিপরীত অনেকটা বোকাসোকা ইমোশনাল ব্লাকমেইল করতে ওস্তাদ, ছোটবেলা থেকে খুব ইচ্ছে ছিলো ডিফেন্সে জব করব মা চাইলো আমি ডাক্তার হই আমি ডাক্তার হলাম, এই যে সবাই মিলে ঘুরতে যাবো সবার প্লান ছিল দেশের বাইরে যাবো শুধু মা বললো আমাকে সে কিছুতেই দেশের বাইরে যেতে দেবেন না আমি সিলেট চলে গেলাম সবাইকে রাজি করে।

মায়া হিমালয়ের দিকে তাকিয়ে আছে একবারো চোখ সরিয়ে নিচ্ছে না, মনোযোগ দিয়ে হিমালয়ের কথা শুনছে,
—তুমি কি শুনছো মায়া?
—হু
—আমি খুব বেশি প্রশংসা করতে পারি না।তুমি খুব উৎফুল্ল একটা মেয়ে, খুব চঞ্চল, তবে তোমার মধ্যে মমতা আছে তুমি তোমার আশেপাশের মানুষগুলো নিয়ে ভালো থাকতে জানো।আমি যে তোমাকে ছাড়া বাচব না এমন না তবে আমার তোমাকে দরকার। আমি তোমার মত মেয়ে দ্বিতীয়টা খুজে পাবো না।ওতো ভনিতা আমি করতে পারবো না আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই
—বলুন
—আমি কি সারাজীবন তোমাকে এভাবে খাবার গরম করে খাওয়াতে পারি?বিয়ে করবে আমায়?
মায়া খাবার মুখে নিয়ে বসে আছে চিবুচ্ছে না।শুধু মুখে নিয়েই যাচ্ছে।চোখ বড়বড় করে মুখ ভর্তি খাবার নিয়ে বসে আছে।হিমালয় হেসে ফেললো।হাত ধুয়ে, মুছে, মায়ার হাতে পানি ধরিয়ে দিয়ে উঠে দাড়িয়ে বললো,
—এখন কিছুই বলতে হবে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো,তোমার তো ঘুম এসেছে তাই না?
হিমালয় ঠোঁট বাকিয়ে হেসে পকেটে হাত ঢুকিয়ে চলে গেলো।ও খুব জানে মায়া আর ঘুমাতে পারবে না।মায়া হিমালয়ের চলে যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে।মুখভর্তি খাবার হিমালয় একবার পেছনে ফিরে মায়ার মুখের দিকে তাকালো ওর খুব হাসি পেলো ও দ্রুত বেরিয়ে গেলো।

চলবে…
সামিয়া খান মায়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here